কখনো এমন হয়েছে কি, যে আপনি যেমনটা ভেবেছিলেন, দিনশেষে ঠিক তেমনটাই হয়েছে? অথবা প্রথম দেখাতেই আপনার কাছে যে মানুষটিকে খারাপ বলে মনে হয়েছে, তাকে খুব ভালোভাবে চেনার পর দেখা গেছে সে আসলেই খানিকটা রূঢ় প্রকৃতির? কিংবা যে ছাত্রটিকে আপনি বাসায় গিয়ে পড়ান, প্রথম দিন থেকেই তাকে খানিকটা অমনোযোগী স্বভাবের বলে মনে হলো, এবং আপনি দেখলেন সে সত্যি সত্যিই পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করছে না?
হয়তো এভাবে বারবার আপনার ভবিষ্যদ্বাণী ফলে যাওয়ায় আপনার মনে হয়েছে যে, আপনার মধ্যে মানুষ চেনা কিংবা ফলাফল অনুধাবন করার এক অসাধারণ ক্ষমতা রয়েছে। আমাদের সবার সাথেই এরকমটা কমবেশি হয়ে থাকে, তবে যারা এর কারণে নিজেদের শার্লক হোমস কিংবা ব্যোমকেশ ভাবতে শুরু করে দিয়েছেন, তাদের চিন্তাধারায় খানিকটা জল ঢেলে দেয়া যাক। জেনে নেয়া যাক যে আমরা মাঝেমধ্যে নিজেদের বা অন্য কারো সম্পর্কে যা অনুধাবন করি, তা কেন বাস্তবে পরিণত হয়।
উদাহরণের কথাই ধরা যাক। ধরুন, আপনি বাসায় গিয়ে একই ক্লাসের দুই ভাইকে পড়ান। মনে করুন, প্রথম জনের নাম সুমন আর দ্বিতীয়জনের নাম রাফি। তাদেরকে পড়াতে এসে প্রথমদিনই আপনার মনে হলো, সুমন খুবই চটপটে, পড়াশোনায়ও বেশ ভালো। অন্যদিকে রাফিকে আপনার কাছে খুব একটা সুবিধার মনে হলো না। হয়তো সে সেদিন কোনো প্রশ্নের উত্তর ঠিকমতো বলতে পারেনি, কিংবা আপনার নির্দেশে তার প্রতিক্রিয়াও তেমন একটা দ্রুত ও তৎপর নয়। সেই থেকেই আপনি ভাবতে আরম্ভ করলেন যে, রাফির চেয়ে সুমন অনেক ভালো ছাত্র। সে পরীক্ষায় আশানুরূপ একটা ফলাফল করতে সক্ষম। তবে রাফিকে নিয়ে আপনি সুমনের মতো তেমন একটা আশাবাদী নন।
এতে করে হচ্ছে কী? আপনি নিজের অজান্তেই রাফির চেয়ে সুমনের প্রতি বেশি মনোযোগী হয়ে উঠছেন। সুমনের প্রতি আপনার আকাঙ্ক্ষা অবশ্যই রাফির চেয়ে বেশি। আর সুমনের প্রতি আপনি যে আচরণ করেন, রাফির প্রতি সমান আচরণ করেন না!
এর ফলাফলস্বরূপ, রাফি যদি মেধাবী ছাত্র হয়েও থাকে, আপনার আচরণের প্রভাবে সে ধীরে ধীরে অমনোযোগী হয়ে উঠবে, পড়াশোনায় আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে। আর এতে করে তার পরীক্ষার ফলাফলও বাজে হতে শুরু করবে। অপরদিকে, সুমনের প্রতি আপনি তুলনামূলক যত্নশীল ও আশাবাদী হওয়ায় তার পড়াশোনারও দিন দিন উন্নতি হতে থাকবে। আপনি যে তার প্রতি সহানুভূতিশীল, সেটা বুঝতে পেরে সে নিজে থেকে কর্মোদ্যম হয়ে উঠবে। এতে করে দেখা যাবে যে, সুমন আপনার প্রত্যাশাস্বরূপ রাফির চেয়ে ভালো ফলাফল করতে শুরু করেছে!
সবশেষে আপনি আবিষ্কার করবেন তাদের দুজনের প্রতি আপনার ধারণাই ঠিক ছিল। রাফির চেয়ে সুমন তুলনামূলক ভালো ছাত্র এবং এই ধারণা তাদের প্রতি আপনার পূর্ব ধারণাকে জোরদার করবে। আর আপনিও তাদের প্রতি আপনার পূর্বের আচরণ বজায় রাখবেন, এবং এ বিষয়টি পর্যায়ক্রমে চলতেই থাকবে।
একবার ভেবে দেখুন তো, দুজন ছাত্রের প্রতি আপনার এই দুরকম ধারণা কিভাবে তাদের ভবিষ্যতকে প্রভাবিত করছে! এই ব্যাপারটি সবসময় অপরিবর্তনীয় থাকবে, কারণ দুজন ছাত্রের প্রতি আপনার দৃষ্টিভঙ্গি কখনো বদলাবে না আর তাই তাদের কাজের ফলাফলও কখনো বদলাবে না। মনে হবে যে, বিষয়টি একটি চক্রের মধ্যে আটকে গেছে আর এই চক্র থেকে আপনি আর আপনার ছাত্ররা সহজে বের হতে পারবেন না!
মনোবিজ্ঞানের ভাষায় এই চক্রটিকে বলা হয় ‘পিগম্যালিয়ন ইফেক্ট’ বা ‘রোজেনথাল ইফেক্ট’। আর যে চক্রটিতে আপনারা আটকে গেছেন তাকে বলা হয় ‘পিগম্যালিয়ন সার্কেল’। এই পিগম্যালিয়ন সার্কেলের মোট ৪ টি ধাপ রয়েছে, যে চারটি ধাপের মধ্যেই চক্রটি ঘুরতে থাকে।
- ধাপ ১: অন্য কারো সম্পর্কে আপনার ধারণা তার প্রতি আপনার আচরণকে প্রভাবিত করে।
- ধাপ ২: তার প্রতি আপনার আচরণ তার নিজের প্রতি নিজের ধারণাকে প্রভাবিত করে।
- ধাপ ৩: তার নিজের প্রতি নিজের ধারণাই বা তার কর্ম ও এর ফলাফলকে প্রভাবিত করে।
- ধাপ ৪: তার কর্ম ও এর ফলাফল তার প্রতি আপনার ধারণাকে আরও জোরদার করে।
তাহলে দেখা যাচ্ছে যে, কারো সম্বন্ধে আপনার ধারণা ফলে যাওয়ার ব্যাপারটা আপনার কোনো বিশেষ ক্ষমতার বহিঃপ্রকাশ নয়, বরং আপনার নিজের কাজেরই একটি ফলাফল! এ ব্যাপারটি যে শুধুমাত্র অন্য কারো ক্ষেত্রে ঘটতে পারে তা নয়, আপনার নিজের সাথেও কিন্তু এমনটা ঘটতে পারে। আত্মবিশ্বাস যে আমাদের কাজে অনেক বড় প্রভাব ফেলতে পারে, সেটা আমরা সকলেই জানি। আপনি যদি আগে থেকেই ভেবে বসে থাকেন, যে আপনি কোনো একটি কাজ করতে অপারগ, তাহলে দেখবেন যে সত্যি সত্যি কাজটি আপনাকে দিয়ে হচ্ছে না। আপনার তখন আরো বেশি করে মনে হতে থাকবে যে কাজটি আপনার পক্ষে করা সম্ভব নয়!
পিগম্যালিয়ন ইফেক্টের ব্যাপারটি অনেকটাই স্ব-নিয়ন্ত্রিত। কেউ কখনো এই চক্রের মধ্যে ঢুকে গেলেও মোটেই টের পাবে না যে সে নিজে থেকেই কোনো একটা ঘটনার ফলাফলকে নিয়ন্ত্রণ করছে।মানুষের চরিত্রের মধ্যে লুকিয়ে থাকা এই মজার বিষয়টি প্রথম নজরে আসে জার্মান বংশোদ্ভূত আমেরিকান সাইকোলজিস্ট রবার্ট রোজেনথাল -এর। তিনি বিষয়টি নিয়ে একটু খুঁটিয়ে দেখতে হার্ভার্ডে একটি গবেষণা করেন। তিনি দুজন স্বেচ্ছাসেবককে সমান সংখ্যক কিছু ইঁদুর দিয়ে তাদেরকে প্রশিক্ষণ দিতে বলেন। তবে তিনি তাদের একজনকে বলে দেন যে, তার ইঁদুরগুলো বেশ চটপটে এবং পরিশ্রমী। আর অন্যজনকে বলেন যে, তার ইঁদুরগুলো অলস এবং খুব একটা সক্রিয় নয়। আসলে প্রকৃতপক্ষে তাদের দুজনের ইঁদুরের মধ্যে কোনো তফাৎ ছিল না। তবে তাদের দুজনকে ইঁদুর সম্পর্কে দুরকম তথ্য দেয়ায় তাদের দুজনেরই নিজেদের ইঁদুর সম্পর্কে দুরকম মনোভাব তৈরি হয়। একজন ভাবতে থাকে তার ইঁদুরগুলো সত্যিই অনেক সক্রিয় এবং তুলনামূলক ভালো ফলাফল করবে। আর অপরজন ভাবতে থাকে যে, তার ইঁদুরগুলোকে প্রশিক্ষণ দিয়ে তেমন কোনো উন্নতি হবে না। তাদের এই ভাবনা যে তাদের কাজে প্রভাব ফেলছে, সেটা তারা টেরই পাচ্ছে না। তাদের ভাবনা তাদের অবচেতন মনের অন্তরালেই তাদের দুজনের কাজকে দু-রকমভাবে প্রভাবিত করছে।
দুজনের ইঁদুরকে প্রশিক্ষিত করার পর রোজেনথাল ইঁদুরগুলোকে পরীক্ষা করে দেখলেন। তিনি লক্ষ্য করলেন যে, তার অনুমানই সঠিক। যার ইঁদুর সম্পর্কে ইতিবাচক তথ্য দেয়া হয়েছিল, তার ইঁদুরগুলো খুব ভালো ফলাফল করেছে। আর যার ইঁদুরগুলো সম্পর্কে নেতিবাচক তথ্য দেয়া হয়েছিল, তার ইঁদুরগুলো তুলনামূলক বাজে ফলাফল করেছে।
রোজেনথাল পরবর্তীতে ১৯৬৮ সালে ক্যালিফোর্নিয়ার একটি স্কুলের শিক্ষার্থীদের মধ্যেও একই ধরনের একটি গবেষণা করলেন। এই এক্সপেরিমেন্টটিতে তার সহযোগী ছিলেন স্যান ফ্র্যানসিসকোর একটি স্কুলের প্রধান-শিক্ষক লেনোর জ্যাকবসন , তাই এক্সপেরিমেন্টটিকে ‘রোজেনথাল-জ্যাকবসন এক্সপেরিমেন্ট‘ নামেও ডাকা হয়।
এই এক্সপেরিমেন্টে প্রথমেই স্কুলের সকল শিক্ষার্থীদের IQ (Intelligence Quotient) পরীক্ষা করা হয়। এতে স্কুলের সকল শিক্ষার্থীর IQ’র একটি রেকর্ড পাওয়া যায়। তবে সেই বিষয়টি স্কুলের শিক্ষকদের জানানো হয় না। তাদের কিছু নির্দিষ্ট সংখ্যক শিক্ষার্থীদের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়া হয় এবং বলা হয় যে তারা স্কুলের অন্যান্য শিক্ষার্থীদের তুলনায় অনেক মেধাবী। স্কুলের শিক্ষার্থীরা ছিল নতুন, তাই শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের বুদ্ধিমত্তা সম্পর্কে আগে থেকে কিছু জানতেন না।তারা ধরে নিলেন যে, আসলেই সেই নির্দিষ্ট সংখ্যক শিক্ষার্থীরা অন্যান্য শিক্ষার্থীদের তুলনায় বেশি মেধাবী। স্কুলের শিক্ষা-কার্যক্রম শুরু করা হলো। বছর শেষে আবারো সকল শিক্ষার্থীর IQ পরীক্ষা করা হলো। রোজেনথাল ও জ্যাকবসন যেমনটা ভেবেছিলেন, তেমনটাই হলো। এবার পিগম্যালিয়ন ইফেক্টের প্রভাব লক্ষ্য করা গেলো শিক্ষার্থীদের মধ্যে। বছরের শুরুতে যে শিক্ষার্থীদের সম্পর্কে শিক্ষকদের ইতিবাচক তথ্য দেয়া হয়েছিল, তারা অন্য শিক্ষার্থীদের তুলনায় ভালো ফলাফল করলো, যদিও বছরের শুরুতে তাদের IQ’র ফলাফল তেমন বিশেষ কিছু ছিল না।
এবার আসি বাস্তব জীবনে পিগম্যালিয়ন ইফেক্ট নিয়ে আলোচনায়। রোজেনথাল ও জ্যাকবসনের গবেষণায় বাস্তব জীবনে পিগম্যালিয়ন ইফেক্ট হিসেবে শিক্ষা-ব্যবস্থার কথাই বারবার উঠে এসেছে। ওপরে যে গবেষণার কথা বলা হয়েছে, সেটিও ছিল শিক্ষাব্যবস্থাকে ঘিরেই। তবে শুধু ক্যালিফোর্নিয়ার ওই স্কুলটির জন্যে নয়, পৃথিবীর যেকোনো স্কুলের জন্যেই ওপরের ব্যাপারটা সত্য। একজন শিক্ষক হয়তো ক্লাসে ঢুকেই তার প্রতিবেশীর ছেলের সাথে কুশল বিনিময় করলেন। কিংবা ক্লাসের ফার্স্টবয়ের সাথে পরিচয় থাকায় তিনি হয়তো তাকেই বারবার পড়া জিজ্ঞেস করলেন। খুব সামান্য মনে হলেও এধরনের ব্যাপারগুলোই একটি ক্লাসে পিগম্যালিয়ন সার্কেল সৃষ্টির পেছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তবে শিক্ষকরা যে ইচ্ছে করে শিক্ষার্থীদের প্রতি বৈষম্যমূলক ধারণা পোষণ করেন তা নয়। শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর অবচেতনেই ব্যাপারটি ঘটে যায়, কেউ টেরই পায় না। ফলাফলস্বরূপ, কিছু শিক্ষার্থী সবসময়ই সবার সুনজরে থাকে এবং কিছু শিক্ষার্থীর ভাগ্যে তা কখনোই জোটে না।
একজন ছাত্র যদি তার শিক্ষক, বন্ধুবান্ধব কিংবা মা-বাবার কাছ থেকে এমন আচরণ পায়, যাতে তার মনে হয় যে সে পড়াশোনা করে জীবনে অনেকদূর যেতে পারবে, তাহলে অবশ্যই সে তার পড়াশোনায় আরো উন্নতি করতে চাইবে। তার প্রতি তার আশেপাশের মানুষের এই ইতিবাচক আচরণ আসে তার প্রতি সেই মানুষদের ইতিবাচক ধারণা থেকে।
তবে যদি কোনো ছাত্রের বাবা-মা কিংবা শিক্ষকরা কোনো কারণে ভাবেন যে, তাকে দিয়ে তেমন কিছু একটা হবে না; তবে তারা সে ছাত্রটির পেছনে যতই লেগে থাকুন না কেন, ছাত্রটি কোনোদিনই উন্নতির ছোঁয়া পাবে না। আমাদের দেশের হাজার হাজার শিক্ষার্থীর সফলতার গল্পের পেছনে যেমন তাদের চারপাশের মানুষদের অবদান রয়েছে, তেমনি হাজার হাজার শিক্ষার্থীর অকালে ঝরে পড়ার দায়ও কিন্তু তার সমাজ অগ্রাহ্য করতে পারে না!
পিগম্যালিয়ন ইফেক্টের আরেকটি ক্ষেত্র হচ্ছে নেতৃত্ব। একজন নেতা সবসময়ই ভেবে থাকেন যে, তার অনুসারীদের সম্পর্কে তার একটি স্বচ্ছ ধারণা রয়েছে। তাই তিনি তার অনুসারীদের মধ্যে কাকে নিয়ে খানিকটা সন্দিহান কিংবা কাকে তিনি তার যোগ্য উত্তরসূরি ভাবেন, সে বিষয়টাও তিনি নিজের মনের অজান্তেই ঠিক করে রাখেন। আর এর প্রভাব পড়ে অনুসারীদের কর্ম ও তার ফলাফলের উপর।
এছাড়াও আমাদের চারপাশে পিগম্যালিয়ন ইফেক্টের আরও অনেক উদাহরণ রয়েছে। ব্যক্তিগত পছন্দ, কোনো বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা, চারিত্রিক অন্তর্মুখিতা, মানসিক বয়স- এরকম নানান বিষয়ের পেছনে পিগম্যালিয়ন ইফেক্ট কলকাঠি নাড়ছে। আমরা চাইলেই যে সবসময় পিগম্যালিয়ন ইফেক্ট এড়িয়ে যেতে পারি তা নয়, তবে পিগম্যালিয়ন ইফেক্টের কথাটি মাথায় রাখলে বা অন্যের আচরণিক বহিঃপ্রকাশ দ্বারা ধারণা পোষণ বা প্রভাবিত হওয়া থেকে বিরত থাকতে পারলে বিষয়টি অনেকটাই আমাদের নিয়ন্ত্রণে এসে যাবে।
‘পিগম্যালিয়ন ইফেক্ট’ নিয়ে এত আলোচনার পর এর নামের সার্থকতা নিয়ে কিছু না বললেই নয়। রোমান কবি ‘ওভিদ‘ এর ‘মেটামরফোসিস‘ গ্রন্থ থেকে পাওয়া যায় একটি রোমান পৌরাণিক উপাখ্যান। রোমান মিথ অনুসারে, সাইপ্রাস নামক একটি দ্বীপে বসবাস করতো এক যুবক ভাস্কর ‘পিগম্যালিয়ন‘। নারীদের প্রতি তার ছিল প্রবল বিতৃষ্ণা। এই বিতৃষ্ণার কারণ ছিল সাইপ্রাস দ্বীপেরই ‘প্রোপিওটিডাস‘ নামে পরিচিত কিছু রমণী, যারা ভালোবাসার দেবী ‘ভেনাস‘কে (গ্রীক মিথলজি অনুসারে ‘আফ্রোদিতি’) অমান্য করেছিলো। নারীদের প্রতি বিদ্বেষ থাকার কারণে যুবক পিগম্যালিয়ন কখনো বিয়েও করেননি। তবে তিনি একদিন স্থির করলেন,একটি নারীমূর্তি তৈরী করবেন। সে অনুসারে কাজ শুরুও করলেন, তবে মূর্তিটি তৈরী করার সময় থেকেই এক অভাবনীয় জিনিস ঘটতে লাগলো। নারী-বিদ্বেষী পিগম্যালিয়ন নিজের তৈরী মূর্তিটির প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়তে লাগলেন। মূর্তি বানানোর কাজ সম্পূর্ণরূপে শেষ হওয়ার সময়ের মধ্যেই তিনি গভীরভাবে প্রেমে পড়ে গেলেন সেই অসাধারণ সুন্দর নারীমূর্তিটির।
তবে বিধি বাম! শত হোক, মূর্তি তো আর মানুষ নয়, তাই এর কাছ থেকে নিজের ভালোবাসার যথাযথ প্রতিক্রিয়া না পেয়ে চরম হতাশার মধ্যে দিন কাটতে লাগলো পিগম্যালিয়নের। তবু পিগম্যালিয়নের ধারণা ছিল, মূর্তি হোক, তাতে কী হয়েছে? একদিন ঠিকই সে তার ভালোবাসার প্রতিক্রিয়া জানাবে।
সে আশা থেকেই পিগম্যালিয়ন দেবী ভেনাসে কাছে প্রার্থনা জানালেন মূর্তিটিকে জীবন্ত করে দেয়ার। দেবী ভেনাস তার সেই কথা রাখলেন। পিগম্যালিয়নের বানানো জড়-মূর্তি পরিণত হলো এক সুন্দরী রমণীতে, পিগম্যালিয়ন পরে যার নাম রেখেছিলেন ‘গ্যালাতিয়া’। গল্পটি আমাদের বলে যে, পিগম্যালিয়নের জোর ধারণা অলীক হওয়া সত্ত্বেও বাস্তবে পরিণত হয়েছিল।
তবে মানুষের কোনো দৃঢ় ধারণা কি অলীক হওয়া সত্ত্বেও সত্যি সত্যি ঘটে যেতে পারে? সে এক রহস্য বটে !