Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

গরমকালে কেন গরম লাগে, পাখার বাতাসেই বা কেন ঠাণ্ডা লাগে?

মানবদেহের স্বাভাবিক তাপমাত্রা ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে দেহের তাপমাত্রা পরিমাপের বেলায় সাধারণত সেলসিয়াস স্কেল ব্যবহার করা হয় না। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সকলে ফারেনহাইট স্কেল ব্যবহার করে। যেমন- জ্বর পরিমাপের বেলায় এ দেশের প্রায় শতভাগ মানুষই ফারেনহাইট স্কেলে তাপমাত্রা উল্লেখ করে।

ফারেনহাইট স্কেলে মানবদেহের স্বাভাবিক তাপমাত্রা ৯৮ ডিগ্রি ফারেনহাইট। সে তুলনায় পরিবেশের তাপমাত্রা থাকে ৯০ ডিগ্রি ফারেনহাইটেরও কম। কিন্তু তাপমাত্রা ৯০ ডিগ্রিতে চলে আসলে দেহে গরম অনুভূত হতে থাকে।

এখানে একটা অদ্ভুত ব্যাপার ঘটে গেলো না? পরিবেশের তাপমাত্রা যেখানে এমনিতেই শরীরের চেয়ে কম আছে সেখানে কেন গরম লাগবে? এ উত্তর জানতে হলে অনুসন্ধান করে দেখতে হবে শরীরের ভেতরের কিছু কাজের প্রক্রিয়া এবং পদার্থবিদ্যার কিছু নিয়ম।

আমাদের দেহে প্রতিনিয়ত তাপ উৎপন্ন হয়ে চলছে। আমরা প্রতিনিয়ত যে খাবার খাচ্ছি তার একটা বড় অংশ তাপে রূপান্তরিত হয়ে যাচ্ছে। দেহের প্রত্যেকটি কোষের কার্যক্রমের জন্য শক্তির প্রয়োজন হয়। এ শক্তি না হলে মানুষ বেঁচে থাকতে পারত না। সে শক্তি আসে খাবার থেকে। খাবারের উপাদানের সাথে রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে শক্তি উৎপাদনের কাজটি করে অক্সিজেন। সেজন্যই বেঁচে থাকার জন্য অক্সিজেন অপরিহার্য।

এখানে আরো একটি চমৎকার বিষয় ঘটে গেছে। অক্সিজেনের বিক্রিয়া মানেই মোটাদাগে দহন। দেহের ভেতরে বিক্রিয়া হলেও রসায়নের ভাষায় সেখানে জ্বালানো-পোড়ানোর ব্যাপার ঘটে যাচ্ছে। এসব ঘটনায় যথেষ্ট পরিমাণ তাপ উৎপন্ন হচ্ছে। প্রয়োজনের তুলনায় একটু বেশিই হচ্ছে। অতিরিক্ত তাপকে নিয়ন্ত্রণে রাখছে নাইট্রোজেন নামে আরেকটি গ্যাস। এই গ্যাসটি আবার প্রায় নিষ্ক্রিয়। রসায়ন শাস্ত্রের পর্যায় সারণির নিষ্ক্রিয় গ্যাসগুলোর পরপরই এর অবস্থান। অর্থাৎ নিষ্ক্রিয় তালিকার গ্যাসগুলোকে বা দিলে নিষ্ক্রিয়তার দিক থেকে নাইট্রোজেনই সবার আগে। নাইট্রোজেনের এই নিষ্ক্রিয়তা আমাদের দেহের তাপকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে আশীর্বাদের মতো কাজ করে।

দেহের ভেতর প্রতিনিয়তই ঘটে চলছে বিক্রিয়া; Image Source: Livestrong

তবে এতটুকুতেই হয় না। দেহকে আরো নানা উপায়ে তাপ পরিহার করতে হয়। দেহ মূলত প্রতিনিয়তই তাপ পরিহার করে। করাটাই স্বাভাবিক। বায়ুর তাপমাত্রার চেয়ে দেহের তাপমাত্রা যেহেতু বেশি, তাই বেশি তাপমাত্রা থেকে কম তাপমাত্রায় তাপ পরিহার হওয়াটাই স্বাভাবিক। পরিবহন, পরিচলন, বিকিরণ এবং স্বতঃবাষ্পীভবন এই চার পদ্ধতিতেই দেহ তাপ পরিহার করে।

যখন কোনো কিছুর উপর বসে থাকি কিংবা গা এলিয়ে দাঁড়িয়ে থাকি, তাহলে দেহ থেকে ঐ বস্তুর মাঝে তাপ যায়। এটা হয় পরিবহন পদ্ধতিতে। অন্যদিকে পাশ দিয়ে যদি বাতাস বয়ে যায় কিংবা পানি বয়ে যায়, তাহলে পরিচলন পদ্ধতিতে তাপ পরিহার করে। কোনো বস্তুর সাথে যদি লেগে না থাকি, পাশ দিয়ে যদি বাতাসের কিংবা পানির কোনো প্রবাহ না থাকে তাহলেও দেহ থেকে তাপ চলে যায় বায়ুর মধ্যে। এই কাজটি ঘটে বিকিরণ পদ্ধতিতে।

Image: Created by Author

অন্যদিকে বায়ু খুব একটা ভালো মানের পরিবাহক নয়। এর মধ্য দিয়ে তাপ তেমন চলাচল করতে পারে না। এমতাবস্থায় কোনো ব্যক্তি কোথাও দাঁড়ালে তার আশেপাশের বায়ুগুলো তাপ গ্রহণ করে উত্তপ্ত হয়ে যায়। অর্থাৎ দেহের তাপমাত্রার সমান হয়ে যায়।

এক বস্তু থেকে আরেক বস্তুর মাঝে তাপ চলাচলের শর্ত হলো তাদের মাঝে তাপমাত্রার পার্থক্য থাকতে হবে। এদের মাঝে কোনো একটির মাঝে বেশি তাপমাত্রা এবং অন্য কোনো একটির মাঝে কম তাপমাত্রা থাকতেই হবে। উভয়ের তাপমাত্রা সমান সমান হয়ে গেলে কোনোভাবেই তাপের প্রবাহ ঘটবে না।

দেহের তাপমাত্রা এবং বায়ুর তাপমাত্রা যখন সমান হয়ে যায় তখন দেহ থেকে আর তাপ বের হতে পারে না। একদিনে বায়ু তাপের কুপরিবাহী হওয়ায় তাপগুলোকে পাশের বায়ুতে পাঠিয়ে দিতে পারছে না, অন্যদিকে দেহের ভেতরেও রাসায়নিক বিক্রিয়ার কারণে অবিরাম তৈরি হচ্ছে তাপ। সে তাপ আটকা পড়ে আছে দেহ এবং দেহের আশেপাশের অঞ্চল জুড়ে থাকা বায়ুর মধ্যে। সে কারণে গরম লাগাটাই স্বাভাবিক।

অন্যদিকে যদি বাতাসের চলাচল থাকতো, তাহলে গরমের এই অস্বস্তিকর অবস্থাটির জন্ম হতো না। চলাচল থাকলে শরীরের আশেপাশের বায়ুগুলো অন্য বায়ুর চাপে সরে যেত। ফলে গরম স্থায়ী হবার আগেই নতুন বাতাস এসে স্থান করে নিতো। প্রতিনিয়ত বায়ু চলাচলের কারণে পুরোটা সময় জুড়েই থাকবে স্বস্তি।

ইলেকট্রিক ফ্যান কিংবা হাতপাখা মূলত এই কাজটিই করে। আবদ্ধ কক্ষের ভেতরে বায়ু চলাচল তেমন থাকে না, যার কারণে শরীরের আশেপাশের বায়ুগুলো দেহের তাপমাত্রার সমান হয়ে যায়। পাখার কাজ হলো কক্ষের বাতাসগুলোকে নাড়িয়ে চাড়িয়ে একটা কৃত্রিম প্রবাহ বজায় রাখা, যেন শরীরের আশেপাশে বেশি তাপমাত্রার বায়ু আটকে থাকতে না পারে।

হাতপাখা কিংবা ইলেকট্রিক ফ্যান মূলত বায়ুগুলোকে নেড়েচেড়ে দেয়; Source: PinArt

গরমের সময় মানুষ ঘামে। এর পেছনেও দেহের পদার্থবিজ্ঞান সংক্রান্ত একটি উদ্দেশ্য আছে। হাজার হাজার বছর ধরে পৃথিবীর পরিবেশে থাকতে থাকতে মনুষ্য প্রজাতি এই কৌশলটি অর্জন করেছে। আশেপাশের বায়ু যখন উত্তপ্ত হয়ে যায় কিংবা অন্য কোনো উপায়ে যখন দেহে গরম লাগে তখন দেহ ঘামতে থাকে। দেহ ঘাম ঝরায় মূলত অধিক তাপমাত্রা থেকে নিজেকে সুরক্ষা দেবার জন্য।

ত্বক থেকে ঘামগুলো বিশেষ এক পদ্ধতিতে বায়ুর সাথে মিশে যায়। পানির স্ফুটনাঙ্ক ১০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। পানি বাষ্পীভূত হতে যে ন্যূনতম শক্তি দরকার তা পাওয়া যায় ১০০ ডিগ্রিতে উন্নীত হলে। কিন্তু এ পরিমাণ তাপমাত্রায় উন্নীত না হয়েই ঘামের পানিগুলো বাষ্প হয়ে যাচ্ছে। তার মানে ভেতরে ভেতরে কিছু না কিছু একটা হচ্ছে। এখানে মূলত পানির হিসেবে পানি ঠিকই তার প্রয়োজনীয় শক্তি নিচ্ছে। বাষ্পীভূত হবার সময় দেহ থেকে কিছু পরিমাণ তাপ নিয়ে বাষ্পীভূত হয়। দেহ থেকে তাপ নিয়ে বাষ্প হচ্ছে মানে হলো দেহের তাপ ও তাপমাত্রা কমছে। ফলে গরম থেকে কিছুটা রক্ষা পাচ্ছে শরীর।

গরমে অনেককেই দেখা যায় রক্তবর্ণের হয়ে গেছে। এখানেও মূলত দেহ কাজে লাগাচ্ছে পদার্থবিজ্ঞানকে। দেহ যখন অনুভব করে পুরো পরিবেশ গরম হয়ে আছে তখন ত্বকের অঞ্চলের রক্তনালীতে রক্ত চলাচল বাড়িয়ে দেয়। ফলে সেখান থেকে বিকিরণ পদ্ধতিতে অধিক পরিমাণ তাপ দেহ থেকে বাইরে ছেড়ে দিতে পারে। ত্বকের আশেপাশের অঞ্চলে রক্তের এমন অতিরিক্ত চলাচলের কারণেই মূলত গরমের সময় কারো কারো ত্বক লাল হয়ে যায়

গরমে লাল হয়ে যায় ত্বক; Source: top10homeremedies.com

তবে শরীরে গরম অনুভূত হবার জটিলতা সবক্ষেত্রে হয় না। পরিবেশের তাপমাত্রার সাথে শরীরের তাপমাত্রার যখন বড় রকমের পার্থক্য থাকে তখন শরীরকে এমন পরিস্থিতিতে পড়তে হয় না। যেমন- শীতকালে কোনোকিছু প্রবাহমান না থাকলেও গরম লাগবে না।

এদিকে মানুষ উষ্ণ রক্তবিশিষ্ট প্রাণী। এর মানে হলো পরিবেশের তাপমাত্রা যতই উঠা-নামা করুক, দেহের তাপমাত্রা কমবে না। পরিবেশের সাথে দেহের তাপমাত্রার বাড়া কমার কোনো সম্পর্ক নেই। যেহেতু শীতকালেও মানুষের দেহ উষ্ণই থাকে তাই শীতের নিজেকে খাপ খাইয়ে নেবার ঘটনা ঘটে না। দরকারের চেয়েও বেশি পরিমাণ তাপ হারায়, যার কারণে শীত লাগে। সেজন্য সে পরিস্থিতিতে তাপকে আটকে রাখতে হয়। তাপ আটকে রাখার কাজটি করে বিভিন্ন শীতের কাপড়।

ব্যাঙ শীতল রক্তবিশিষ্ট প্রাণী। পরিবেশের তাপমাত্রার সাথে ব্যাঙেরও তাপমাত্রার পরিবর্তন হয়। অতীব শীতে ব্যাঙের শরীর খুব শীতল হয়ে যায় বলে সে সময় স্বাভাবিক কর্মকাণ্ড করতে পারে না। ফলে সমস্ত শীতকালটা তাদেরকে শীতনিদ্রায় কাটিয়ে দিতে হয়; Source: Shutterstock/Science Friday

মাঝেমধ্যে খুব বেশি পরিশ্রম করলে কেউ কেউ শীতকালেও ঘামে। এক্ষেত্রে শরীর অধিক কাজ করে বলে শরীরের ভেতরে অধিক বিক্রিয়া হয় এবং অধিক তাপ উৎপন্ন হয়। এতই বেশি উৎপন্ন হয় যে, তা শীতল পরিবেশের তাপের টানকেও হার মানিয়ে দেয়। ফলাফলস্বরূপ সেখান থেকে শীতকালেই ঝড়তে শুরু করে ঘাম।

কিছু কিছু এলাকায় মাঝেমধ্যে অল্প গরমেই প্রচুর অস্বস্তি লাগে। এরকম এলাকাগুলো বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সমুদ্র তীরবর্তী অঞ্চলে হয়ে থাকে। এই এলাকাগুলোতে বায়ুমণ্ডল জলীয় বাষ্পে ভরা থাকে। এই বাষ্পগুলো আসে সমুদ্রের অফুরন্ত পানি থেকে। ফলে হয় কি, দেহ থেকে ঘাম আর বাষ্পীভূত হতে পারে না। কারণ বায়ু এমনিতেই জলীয় বাষ্প ধারণ করে আছে। নতুন করে আর বাষ্প ধারণ করতে পারছে না। ফলে দেহ থেকে তাপও বের হচ্ছে না, যার কারণে খুব অস্বস্তি লাগে।

একই ব্যাপার ঘটে বৃষ্টির মুহূর্তে। অনেকেই হয়তো খেয়াল করে থাকবেন বৃষ্টির সময় ভ্যাপসা একটা গরম লাগে। কারণ সে সময় বৃষ্টির পানি থেকে সৃষ্ট পানির কণা দ্বারা বায়ু পূর্ণ হয়ে আছে। দেহ থেকে নতুন করে আর বাষ্প নিতে পারছে না। ফলে বৃষ্টির মতো পরিবেশেও দেহে গরম আটকা পড়ে আছে, যার কারণে সে সময় বেশ অস্বস্তি লাগে।

Source: SwimSwam

এই বেলায় একটি জিজ্ঞাসা করতেই হয়। বাতাসের তাপমাত্রা এবং পুকুরের পানির তাপমাত্রা মূলত একই থাকে। কিন্তু এক হওয়া সত্ত্বেও বাতাসের চেয়ে পানিকে বেশি শীতল বলে মনে হয়। কেন এমনটা মনে হয়? এর কারণ তাপের পরিবহণ ও তাপের ধারণ ক্ষমতা। বাতাসের তুলনায় পানির তাপ ধারণ ক্ষমতা বেশি এবং পরিবহণ ক্ষমতাও বেশি। ফলে কেউ পানিতে নামলে তার দেহ থেকে তুলনামূলকভাবে দ্রুত হারে তাপ স্থানান্তরিত হতে থাকে। দেহ দ্রুত তাপ হারাচ্ছে মানে অল্প সময়ে বেশি শীতল হচ্ছে। ফলে বাতাসের চেয়ে পানিতে বেশি শীতল অনুভূত হওয়াটাই স্বাভাবিক।

Featured Image: Airbnb

Related Articles