![](https://assets.roar.media/assets/8CCNVy3X4g03ly9w_freedom-roar.jpg?w=1200)
ঢাকার একটি হাইস্কুলে পড়ে শৈলী। স্কুল চলাকালীন একদিন পিরিয়ড হওয়ার পর বন্ধুদের কারও কাছে স্যানিটারি ন্যাপকিন পায়নি সে। সংকোচের কারণে যেতে পারেনি শিক্ষকদের কাছেও। ফলাফল: সব ক্লাস শেষে জামায় দাগ নিয়ে ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে বাড়ি ফেরা। এই ঘটনার পর প্রতিমাসে নির্দিষ্ট দিনগুলো আসলেই চিন্তিত হয়ে যায় শৈলী। পিরিয়ডের দুশ্চিন্তায় পড়াশোনায় অমনোযোগী হওয়া সহ স্বাভাবিক কাজকর্ম বাধাগ্রস্ত হতে থাকে তার।
শৈলীর মতো বাংলাদেশের বেশিরভাগ নারী শিক্ষার্থী ও কর্মজীবী নারী প্রতিমাসে পিরিয়ড নিয়ে এরকম সমস্যার সম্মুখীন হয়। প্রতি মাসের একটি সময়ে নির্দিষ্ট হরমোনের প্রভাবে জরায়ুর স্বাভাবিক পরিবর্তনের ফলে রক্ত ও জরায়ু নিঃসৃত অপ্রয়োজনীয় অংশ শরীর থেকে বেরিয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়াই পরিচিত পিরিয়ড হিসেবে। একজন সুস্থ স্বাভাবিক নারীর জীবনে নির্দিষ্ট বয়স পর্যন্ত এই প্রক্রিয়া চলতে থাকে। অথচ অর্ধেক জনসমষ্টির জীবনের নিয়মিত এই প্রক্রিয়া নিয়ে এখনও পর্যন্ত প্রয়োজনীয় সচেতনতা ও সুবিধাজনক পরিবেশ নেই দেশজুড়ে।
![](https://assets.roar.media/assets/SCKKvqCUhE4w5Xzw_1.png)
পিরিয়ডকালীন সচেতনতার ধারণায় প্রথমেই আসে মেনস্ট্রুয়াল হাইজিনের কথা। এই সময়ে নারীদের দরকার অতিরিক্ত সতর্কতা ও পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা। আমাদের দেশে এখনও অনেক নারী পিরিয়ডে পুরনো কাপড় ব্যবহার করেন। এসব কাপড় অনেক সময় ঠিকমতো পরিষ্কার না করেই ব্যবহার করা হয়। ফলে তা থেকে নানা ধরনের জীবাণু ও রোগের বিস্তারের ঝুঁকি থেকে যায়। আবার কাপড়ের শোষণক্ষমতা খুব বেশি না হওয়ায় লিকেজ হয়ে জামায় দাগও লেগে যেতে পারে।
অস্বাস্থ্যকর কাপড়ের বদলে স্যানিটারি ন্যাপকিনের ব্যবহার নারীর পিরিয়ডকালীন স্বাস্থ্যঝুঁকি অনেকটাই কমিয়ে দিতে পারে। স্যানিটারি ন্যাপকিন উন্নত প্রযুক্তিতে জীবাণুমুক্ত করে তৈরি করা হয়। পরিচ্ছন্ন প্যাকেজিংয়ের কারণে এটি স্বাস্থ্যকর উপায়ে সংরক্ষিত থাকে। সাধারণ কাপড়ের চেয়ে স্যানিটারি ন্যাপকিনের শোষণক্ষমতাও বেশি হয়। ফলে লিকেজ হয়ে কাপড়ে দাগ লাগার ভয়ও থাকে না।
গত কয়েকবছরে স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহারের হার তুলনামূলক বেড়েছে। স্যানিটারি ন্যাপকিনের সহজলভ্যতা বৃদ্ধি পাওয়া এর একটি কারণ। পাশাপাশি এটি ব্যবহারের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা নিয়ে প্রচারণা বৃদ্ধি পাওয়ায় মানুষের সচেতনতাও বেড়েছে। কিন্তু শুধু স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহারের হার বাড়লেই তো হবে না। ব্যবহারের সঠিক নিয়মও মানতে হবে। যেকোনো স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহারের চার-পাঁচ ঘণ্টার মধ্যেই সেটি পরিবর্তন করতে হয়। সাধারণত পিরিয়ডের প্রথম দুই থেকে তিন দিন রক্তের প্রবাহ বেশি থাকায় শুরুতে ন্যাপকিন তাড়াতাড়ি পরিবর্তন করলেও পরবর্তী দিনগুলোতে একই ন্যাপকিন অনেকক্ষণ ধরে পরে থাকেন অনেকেই। ফলে জীবাণু সংক্রমণের হার বেড়ে যায়। জীবাণুর সংক্রমণের ফলে তলপেটে ব্যথা, অনিয়মিত রক্তস্রাব, কয়েক দিন পরপরই যোনিপথে রক্তক্ষরণ, প্রস্রাবে সংক্রমণ এমনকি বন্ধ্যাত্বের মতো সমস্যাও হতে পারে। নারীদের জরায়ুর মুখে ক্যান্সারের বৃদ্ধি পাওয়ার অন্যতম কারণও কিন্তু দীর্ঘসময় এক স্যানিটারি ন্যাপকিন পড়ে থাকা।
![](https://assets.roar.media/assets/dNOgoA9XPm0iz3it_2.jpg)
আজকাল শিক্ষিত অনেক নারীই পিরিয়ডকালীন পরিচ্ছন্নতার বিষয়ে সচেতন। তারা স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহারের যথাযথ নিয়মও জানেন। কিন্তু সে নিয়ম মেনে চলার মতো পরিবেশের অভাবে প্রতিনিয়তই বিভিন্ন দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন। প্রথমত বাংলাদেশের অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই স্বাস্থ্যসম্মত ও পরিচ্ছন্ন টয়লেটের ব্যবস্থা নেই। পিরিয়ড চলাকালীন এসব অস্বাস্থ্যকর টয়লেট ব্যবহার আরও দুঃসাধ্য হয়ে উঠে। ফলে এইসময়ে নারীদের যতক্ষণ বাসার বাইরে থাকতে হয় বাধ্য হয়েই একটি স্যানিটারি ন্যাপকিন অনেকক্ষণ ব্যবহার করতে হয়। একই অবস্থা নারীদের কর্মস্থলেও দেখা যায়। সুবিধাজনক ও পরিচ্ছন্ন টয়লেটে অভাবে মেন্সট্রুয়াল হাইজিন বজায় রাখা অনেক কঠিন হয়ে পড়ে।
আর উন্নত অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও কর্মক্ষেত্রে স্বাস্থ্যসম্মত টয়লেটের ব্যবস্থা থাকলেও সেখানে জরুরি স্যানিটারি ন্যাপকিনের সরবরাহের কোনো ব্যবস্থা থাকে না। ফলে স্যানিটারি ন্যাপকিনের প্রয়োজন হলেও তা হাতের নাগালে পাওয়া যায় না অনেক সময়। আবার প্রচলিত সামাজিক ট্যাবুর কারণে নারী তার সহপাঠী বা সহকর্মীদের কাছে এটা নিয়ে সাহায্য চাইতেও সংকোচ করতে পারে। এসব কারণে প্রায়ই ভীষণ সমস্যায় পড়তে হয় নারীদের।
![](https://assets.roar.media/assets/qcsoq6JQBEVE5AnC_3.png)
তবে আশার কথা হলো পিরিয়ডকালীন বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে এখন সমাজের অনেক ক্ষেত্রেই আলোচনা হচ্ছে। দেশের অর্ধেক জনগোষ্ঠীর স্বাভাবিক রুটিনে পরিণত হওয়া দুর্ভোগ কমিয়ে তাদের অগ্রযাত্রায় সহায়তা করতে নেওয়া হচ্ছে নানা ধরনের উদ্যোগ। এমনই একটি যুগান্তকারী উদ্যোগ স্যানিটারি ন্যাপকিন ভেন্ডিং মেশিন নেটওয়ার্ক স্থাপন।
ফ্রিডম স্যানিটারি ন্যাপকিন এর উদ্যোগে সম্প্রতি ঢাকার বিভিন্ন পয়েন্টে বসানো হয়েছে স্যানিটারি ন্যাপকিন ভেন্ডিং মেশিন। ফ্রিডম হাইজিন কর্নার নামের এই পয়েন্টগুলোর ভেন্ডিং মেশিনে টাকার বিনিময়ে স্যানিটারি ন্যাপকিন সংগ্রহ করতে পারবেন যে কেউ।
![](https://assets.roar.media/assets/tUdNUUrDHOF5poOn_3.jpg)
জরুরি পরিস্থিতিতে স্যানিটারি ন্যাপকিনের জন্য ছোটাছুটির অস্বস্তির পরিবর্তে হাতের নাগালে স্বল্প মূল্যে ন্যাপকিন পাওয়ায় স্বাস্থ্য সুরক্ষায় অগ্রসর হচ্ছে মেয়েরা। স্যানিটারি ন্যাপকিনের মতো প্রয়োজনীয় জিনিস এখনও আমাদের দেশে ট্যাবুর বিষয় হয়ে থাকার কারণে অনেক নারীই এখনও দোকান থেকে ন্যাপকিন কিনতে সংকোচ বোধ করেন। তাদের জন্য এমন স্যানিটারি ন্যাপকিন ভেন্ডিং মেশিনের প্রবর্তন নিশ্চয়ই স্বস্তিদায়ক ঘটনা।
ফ্রিডম স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্র্যান্ড সবসময়ই মেয়েদের পিরিডিয়কালীন স্বাস্থ্যসুরক্ষার ব্যাপারে সচেতনতা বৃদ্ধিতে কাজ করে যাচ্ছে। এ উদ্দেশ্যে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় এবং গার্মেন্টস-এ নিয়মিত ভাবে সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালিত হয়। দেশের প্রথম স্যানিটারি ন্যাপকিন ভেন্ডিং মেশিন নেটওয়ার্ক স্থাপনের মাধ্যমে এ যাত্রায় আরও যুগান্তকারী পদক্ষেপ নিয়েছে তারা।
![](https://assets.roar.media/assets/f0Mi7Apsb7MkxOVB_4.jpg)
ভবিষ্যতে দেশজুড়ে নারীদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও কর্মস্থলে স্যানিটারি ন্যাপকিন ভেন্ডিং মেশিন স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে প্রতিষ্ঠানটির। প্রত্যেক নারীর কাছে সুলভমূল্যের স্যানিটারি ন্যাপকিন সহজলভ্য করে তুলতে কাজ করে যাওয়াই তাদের উদ্দেশ্য। উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় সকল নাগরিককে সমান অংশীদারি করতে পিরিয়ডকালীন স্বাস্থ্যরক্ষায় সরকারি পদক্ষেপ গ্রহণ করাও জরুরি। ফ্রিডমের মতো সচেতনতামূলক কার্যক্রম বৃদ্ধি করার মাধ্যমে সমাজে পিরিয়ড বিষয়ক প্রচলিত কুসংস্কারও দূর করা সম্ভব। ফলে নারীরা স্বাধীনভাবে জীবনযাপন করে সমাজ কল্যাণে আরো অবদান রাখতে সক্ষম হবে, একথা নিশ্চিতভাবেই বলা যায়।