Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

আন্দ্রেস ইনিয়েস্তা: যার পায়ে বল থাকলে থমকে যেত সময়

২০০৯ সালের চ্যাম্পিয়নস লিগের সেমিফাইনাল। স্ট্যামফোর্ড ব্রিজে বার্সেলোনা ও চেলসির মধ্যকার দ্বিতীয় লেগের খেলা চলছে। প্রথম লেগে ক্যাম্প ন্যুতে ০-০ গোলে ড্র করে এসেছে চেলসি। স্ট্যামফোর্ড ব্রিজে চেলসি প্রথম গোলটি করে ১-০ গোলে এগিয়ে গেলে বার্সেলোনার ফাইনাল স্বপ্নে ভাটা পড়ে। শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত কোনো অ্যাওয়ে শোধ না করতে পারায় বার্সেলোনা যখন সকল আশা-ভরসা হারিয়ে নির্বাক, ঠিক তখনই আবির্ভাব হয় একজন জাদুকরের। ৯২ তম মিনিটে ডিবক্সের বাইরে লিওনেল মেসির বাড়ানো পাস থেকে বুলেট গতিতে শটে পিওতর চেককে পরাস্ত করে তিনি বার্সেলোনাকে এনে দেন কাঙ্ক্ষিত অ্যাওয়ে গোল। ১-১ গোলে সমতায় ম্যাচ শেষ হলে ঐ অ্যাওয়ে গোল নির্ধারিত করে দেয় বার্সেলোনার ফাইনাল। সেবার বার্সেলোনা ফাইনালে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডকে হারিয়ে ঠিকই চ্যাম্পিয়নস লিগ শিরোপা জিতেছিলো। কিন্ত স্ট্যামফোর্ড ব্রিজে ৯২ মিনিটে আন্দ্রেস ইনিয়েস্তা নামক জাদুকরের আর্বিভাব না হলে যে বার্সেলোনার ফাইনালেই পৌঁছানো হতো না!

স্ট্যামফোর্ড ব্রিজে বার্সেলোনার ত্রাতা হয়ে আবির্ভাব হয়েছিলো ইনিয়েস্তার; Source: Bibek Bimali

১৯৮৪ সালের ১১ মে স্পেনের খুব ছোট্ট একটি শহর ফুয়েন্তেলবিয়াতে ইনিয়েস্তা জন্মগ্রহণ করেন। ছোটবেলা থেকে তিনি ফুটবল খেলার প্রতি এতটা মোহগ্রস্থ হয়ে পড়েন যে সকাল-সন্ধ্যা তার সময় কাটতো ফুটবলের সাথে। খেলোয়াড়ি জীবন শুরু হয় স্থানীয় ক্লাব আলবেসেন্তে বালোম্পায়ের জুনিয়র টিমের হয়ে। ছোটবেলায় থেকে তিনি এতটাই ভালো খেলতেন যে সবাই চাইত তার দলে খেলতে। কারণ ইনিয়েস্তা যেখানে খেলবেন সে দল কখনো হারবে না, এটা যেন নির্ধারিত।

আলবেসেন্তে বালোম্পায়ের ‘এ’ দলে খেলার সময় লা মাসিয়ার নজরে পড়ে যান তিনি। ইনিয়েস্তা দ্বিতীয়বার ভাবেননি, ঘরকুনো ছোট্ট ছেলেটা ঠিকই লা মাসিয়ার হয়ে খেলতে শুরু করে। পরবর্তীতে এই লা মাসিয়া হয়ে যায় তার বসতবাড়ি। বার্সেলোনাকে বুকে ধারণ করে ইনিয়েস্তা  কাটিয়ে দিলেন দীর্ঘ ২২ বছর। লা মাসিয়াতে নিজেকে প্রমাণ করার পর কয়েকটি প্রশ্ন উঠে এলো। পরিবার ছাড়া যে সবসময়ই দুর্বল মনে করে এবং ছোটোখাট দৈহিক গড়নের ইনিয়েস্তা কি পারবে ফিজিক্যাল ফুটবলের সাথে খাপ খাওয়াতে? এসব প্রশ্নের মুখে লুই ফন গাল ইনিয়েস্তাকে বার্সেলোনা মূল দলে অভিষেক করালেন। পরবর্তীতে ৫ ফুট ৭ ইঞ্চি উচ্চতার ইনিয়েস্তা সকল সমালোচনার মোক্ষম জবাব দিয়ে হয়ে উঠলেন গত অর্ধযুগের সেরা মিডফিল্ডার।

ক্যারিয়ারের শুরুর সময়; Source: Sports360

পজিশনাল মিডফিল্ডার

শারীরিকভাবে ইনিয়েস্তা কখনোই শক্তিশালী  ছিলেন না। আসলে ফুটবল খেলতে তার কখনো শক্তি প্রয়োগ করার প্রয়োজন হতো না। প্রথম থেকেই ইনিয়েস্তা পরিশ্রমী, টেকনিক্যালি দক্ষতা ও বুদ্ধিমত্তার ফুটবলের অনুসারী। একবার দেল বস্ক তার সম্পর্কে বলেছিলেন, “মাঠে ইনিয়েস্তা শক্তিগত দিক থেকে এতটাই নিস্ফল যে তাকে আপনি কখনো ঘামতে দেখবেন না।

রাইকার্ডের আমলে বার্সেলোনায় ইনিয়েস্তা সেন্ট্রাল মিডফিল্ডার পজিশনে খেলতেন। জাভি অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার পজিশনে থেকে আক্রমণ এবং রক্ষণ উভয়ই দেখভাল করতেন। কিন্ত ইনিয়েস্তার ভূমিকা ছিলো মধ্যমাঠে সীমাবদ্ধ। পেপ গার্দিওলা বার্সেলোনার দায়িত্ব নেবার পর ইনিয়েস্তার পজিশন পরিবর্তন হয়। সেন্টাল মিডফিল্ডার থেকে সেন্ট্রাল অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার বনে গিয়ে জাভির সাথে তৈরি করলেন ইতিহাসের সেরা মিডফিল্ডার জুটি। গার্দিওলার বার্সেলোনার পেছনে অন্যতম কারণ ছিলেন জাভি ও ইনিয়েস্তা এবং তাদের বোঝাপড়া। পরবর্তীতে ইনিয়েস্তাকে আরো ভালোভাবে আক্রমণে ব্যবহার করার জন্য পেপ গার্দিওলা তাকে বামপাশে খেলাতে শুরু করেন। দু’পাশে জাভি ও ইনিয়েস্তার মতো বিশ্বমানের মিডফিল্ডার থাকায় ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠা বার্সেলোনাকে রুখতে বরাবরই প্রতিপক্ষকে ভুগতে হয়েছে।

ইনিয়েস্তা শুধু একজন খেলোয়াড় নন, মাঝমাঠের শিল্পীও বটে; Source: Goal.com

ভিসেন্তে দেল বক্স ইনিয়েস্তাকে ফলস নাইন পজিশনে বিশ্বকাপে ব্যবহার করেছেন। কিছু ম্যাচে তিনি ছিলেন নম্বর ১০ এর ভূমিকায়। মিডফিল্ডার থেকে একদম ভিন্ন এক পজিশনেও ইনিয়েস্তা সফল। শুধু সফল বললে ভুল হবে, তার এ যথাযথ পজিশন পরিবর্তনের কারণে স্পেন সেবার পেয়েছিলো বিশ্বকাপ শিরোপা। লুইস এনরিকের বার্সেলোনাতেও তিনি পেয়েছিলেন নতুন দায়িত্ব। রক্ষণে ভিন্নতা আনতে ইনিয়েস্তাকে ফিরে যেতে হয়েছিলো সেন্ট্রাল মিডফিল্ডার পজিশনে। তবে সার্জিও বুসকেটস থাকার কারণে তার নতুন দায়িত্ব হলো বামপাশে আলবা ও নেইমারের সাথে বোঝাপড়া সৃষ্টি করে আক্রমণে সহায়তা করা এবং প্রয়োজনে বুসকেটসের অবস্থানে এসে রক্ষণ পাহারা দেয়া। এনরিকের বার্সেলোনায় তার দায়িত্ব অনেকটা অস্বাভাবিক হয়ে গেলেও ইনিয়েস্তা দমে যাননি। ফুটবল বিশ্ব দেখলো ইনিয়েস্তার বক্স টু বক্স অ্যাটাকিং সক্ষমতার রূপ। পুরো ক্যারিয়ার জুড়ে কয়েকটি ভিন্ন ভিন্ন পজিশনে খেলতে হয়েছে তাকে। এবং সবথেকে অবাক করার বিষয় হলো, সব পজিশনেই তিনি ছিলেন সমানভাবে সফল।

শুধু বার্সেলোনা নয়, আসন্ন বিশ্বকাপেও স্পেন ভরসা রাখবে ৩৪ বছর বয়সী ইনিয়েস্তার উপর; Source : Getty Images

ইনিয়েস্তা যেখানে সেরা

পাস ক্রিয়েট। কথাটা ফুটবলে অনেক সহজ। পরিপূর্ণ একটি পাস সবাই দিতে পারে। কিন্ত পাসের শিল্প প্রদর্শন করতে পারে ক’জন? এখানেই ইনিয়েস্তার সার্থকতা।

পাস দেওয়ার বিষয়কে তিনি নিয়ে গেছেন শৈল্পিক পর্যায়ে। ইনিয়েস্তা একসময়ের সতীর্থ জাভি হার্নান্দেস ফুটবলের অন্যতম সেরা মিডফিল্ডার। জাভির দেওয়া পাসগুলো খেলোয়াড়দের মধ্যে শূন্যস্থান তৈরি করতো। আর ইনিয়েস্তার পাসের পাশাপাশি তার বুদ্ধিদীপ্ত স্কিলের জন্য খেলোয়াড়দের মধ্যে শূন্যস্থান তৈরি হতো। ইনিয়েস্তাকে রুখে দেবার জন্য অনেক সময় কয়েকজন খেলোয়াড় একসাথে চেষ্টা করতে থাকতেন। কিন্ত সেই তিন বা চারজন খেলোয়াড়ের মাঝ থেকে ছিটকে বের হয়ে আসার মতো দুর্দমনীয় সক্ষমতা তার ছিলো।

তার সলো রান, চোখ ধাঁধানো পাস, ড্রিবল, ডি বক্সের বাইরে থেকে জোরালো শট এবং অবশ্যই দলকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেবার গুণাবলী সবাইকে মুগ্ধ করতে বাধ্য। ইনিয়েস্তার আইকন ছিলেন গার্দিওলা এবং লাউড্রপ। গার্দিওয়ালাকে পছন্দ করতেন, কারণ তখন তিনি ছিলে দলের অধিনায়ক এবং গার্দিওলাকে সবসময় খুব কাছ থেকে দেখেছেন তিনি। আর ইনিয়েস্তা লাউড্রপের খেলার ধরণ অনুকরণ করার চেস্টা করতেন। লাউড্রপের বিখ্যাত সিগনেচার মুভ ‘লা ক্রোকিউয়েটা’ নিজের মতো করে আয়ত্ত করে ফেলেছিলেন তিনি।

লাউড্রপের লা ক্রোকিউয়েটা যেন নিজের রঙে এঁকেছিলেন; Source: AFP

ফুটবলের সেরা স্কিল কোনটিকে ধরা হয়? সলো রান, ড্রিবলিংসহ অনেক ধরনের স্কিলের নাম বলা হলেও ম্যাচ পড়তে পারবার মতো ক্ষমতা ক’জনের থাকে! তার জেনারেশনে যতজন বিশ্বখ্যাত মিডফিল্ডার ছিলো তাদের মাঝে সেরা গেম রিডার অবশ্যই আন্দ্রেস ইনিয়েস্তা। পেপ গার্দিওলা তো বলেই দিয়েছিলেন, “ইনিয়েস্তা আমার চেয়ে ভালো গেম রিড করতে পারে।” ম্যাচের ভাগ্য বোঝার ক্ষমতা থাকার সৌভাগ্য সবার হয় না, ম্যাচ চলাকালীন সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া বিভীষিকা হয়ে দাঁড়ায়। কোন সময় পায়ের স্কিল ব্যবহার করতে হবে এবং কখন মস্তিষ্কের স্কিল প্রয়োগ করতে হবে, এসব বিষয়ে সর্বোচ্চ দক্ষতার অধিকারী হবার কারণে ইনিয়েস্তা আজকে সেরাদের সেরার কাতারে। শুরু সেরাদের কাতারে নয়, স্কিলফুল এ ম্যাজিশিয়ানকে বর্তমানে অনেক তরুণ প্রতিভাবান মিডফিল্ডার অনুপ্রেরণা হিসেবেই মানেন।

জাভির পর তিনিই বার্সাকে নেতৃত্ব দিয়ে গেছেন; Source: Getty Images

হার না মানা বীর, আত্মবিশ্বাসী যোদ্ধা

২০১০ বিশ্বকাপ। ২০১০ সালটি হয়তো তার জীবনে সবথেকে হৃদয়বিদারক বছর হয়ে থাকবে। বিশ্বকাপ শুরুর ১৩ মাস আগে তিনি ভয়াবহ উরুর ইনজুরিতে আক্রান্ত হন। ভয়াবহ এ ইনজুরি থেকে ফিরে এসে পরবর্তীতে আবারো চারবার ঐ পুরনো ইনজুরিতে আক্রান্ত হন। সর্বশেষ উরুর ইনজুরি তাকে হানা দিয়েছিলো বিশ্বকাপ শুরুর মাত্র দুই মাস আগে।

স্ট্রেচারে করে যখন মাঠ ত্যাগ করছিলেন, চোখের কোনায় জমে থাকা পানি বুঝিয়ে দিচ্ছিলো তার মনে কেমন ঝড় চলছে। এ ইনজুরির পর ইনিয়েস্তা ঐ সিজনে আর মাত্র মাঠে নেমেছিলেন মাত্র চার মিনিটের জন্য। একে তো বিশ্বকাপের আগে পুরো সিজন কাটালেন ইনজুরিতে জর্জরিত হয়ে, তার উপরে পেলেন না খেলার জন্য পর্যাপ্ত সময়। বিশ্বকাপের মতো মঞ্চে এরকম খেলোয়াড়ের সুযোগ পাওয়া অনিশ্চিত হয়ে যায়। তাই বিশ্বকাপে খেলার স্বপ্ন আস্তে আস্তে শেষ হয়ে যাচ্ছে এটা বুঝে যেন ইনিয়েস্তা আরো ভেঙে পড়লেন। এত বছর ধরে গড়ে তোলা আত্মবিশ্বাস কয়েক সপ্তাহের মাঝে হারিয়ে ফেললেন। ইনিয়েস্তার ব্যাপারে ফিজিও এমিলি রাইকার্ট বলেছিলেন, “ইনিয়েস্তার ইনজুরির বিষয়টা এমন ভয়ানক হয়ে গিয়েছিল যে, সে ভেবেছিলো এ অবস্থা থেকে কখনো ফিরে আসতে পারবে না। সে আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলছিলো। আমি লক্ষ্য করছিলাম, হতাশা তাকে গ্রাস করছে।

বিশ্বকাপের আগে যুদ্ধ করেছেন ইনজুরির সাথে; Source: AO Sports

কিন্ত স্পেন কোচ ভিসেন্তে দেল বক্স ইনিয়েস্তার ফিটনেস ও ফিজিওদের রিপোর্ট যেন পাত্তা দিলেন না। ইনিয়েস্তাকে সাথে নিয়েই উড়ে চললেন সাউথ আফ্রিকায়। ভিসেন্তে দেল বক্সের আস্থা আর এমিলি রাইকার্টের দেওয়া একটি ভিডিও ক্লিপ দেখে ইনিয়েস্তা মানসিকভাবে ফিরে আসতে শুরু করেন। হেরে যাবার পর পুনরায় চেষ্টা চালিয়ে গিয়ে শেষমেশ বিজয়ীর বেশে ফিরে এসেছে এমন কয়েকজনকে নিয়ে ভিডিও বানিয়ে রাইকার্ট দেখতে দিয়েছিলেন ইনিয়েস্তাকে।

রাইকার্টের পরিকল্পনা সার্থক হয়েছিলো। এ ভিডিও তাকে আত্মবিশ্বাস জুগিয়েছে, মানসিক দুঃখ ও হতাশা থেকে বের হয়ে আসতে সাহায্য করেছে। ইনিয়েস্তা হার মানেননি। ইনজুরিতে জর্জরিত হয়েও ২০১০ বিশ্বকাপে তিনি গিয়েছিলেন বীরের বেশে। ইকার ক্যাসিয়াস গোল ঠেকিয়ে আর আন্দ্রেস ইনিয়েস্তা গোল করিয়ে স্পেনকে নিয়ে গেলেন ফাইনালে। তবে বীর যোদ্ধার গল্পগাঁথা যে আরো বাকি। নেদারল্যান্ডের বিপক্ষে ১১৩ মিনিটে সেস্ক ফ্যাব্রিগাসের পাস থেকে গোল করে এনে দিয়েছিলেন স্পেনের স্বপ্নের বিশ্বকাপ। হারানো আত্মবিশ্বাস খুঁজে, ইনজুরিকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে ইনিয়েস্তা বীর যোদ্ধার বেশে যদি না ফিরতেন, এমন রূপকথা কি তাহলে লেখা হতো!

বিশ্বকাপে জয় নির্ধারণী গোলের পর; Source: Sporting Time

সাফল্য ও শিরোপা

দলীয় এমন কোনো শিরোপা নেই যা ইনিয়েস্তা জেতেননি। জাতীয় দলের সাথে ইউরো জিতেছেন দুবার। স্বপ্নের বিশ্বকাপও স্পর্শ করা হয়েছে। ২০০৮-০৯ মৌসুমে পেপ গার্দিওয়ালার বার্সেলোনার হয়ে এক মৌসুমে সর্বোচ্চ ৬টি শিরোপা জিতেছেন। লুইস এনরিকের আমলেও জিতেছেন ট্রেবল। ২২ বছরের বার্সেলোনা ক্যারিয়ারে শিরোপার কোনো কমতি নেই। লা লিগা জিতেছেন ৯ বার, চ্যাম্পিয়নস লিগ শিরোপাও তার ঝুলিতে আছে চার চারটি।

২০০৭ সালে স্পেন দলে অভিষেক হলেও মাত্র এক বছরের মাথায় তিনি হয়েছিলেন দলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সদস্য। ২০০৮ ইউরোতে ইনিয়েস্তা ও জাভি ছিলেন মাঝমাঠের ভরসা। ফাইনালে পুরো ৯০ মিনিট খেলে দলকে শুধু শিরোপাই এনে দেননি, ইউরো ফাইনালে তিনি ছিলেন ম্যান অফ দ্য ম্যাচ।

বার্সেলোনার হেক্সা জয়ী দলের সদস্য হলেও ২০০৮-০৯ মৌসুমে ক্লাবের হয়ে ইনজুরির কারণে সেভাবে মেলে ধরতে পারেননি নিজেকে। কিন্ত পরের বছর ইনজুরিকে হার মানিয়ে ২০১০ বিশ্বকাপের রূপকথা তো সবার জানা। সেবারও ফাইনালে তিনি হয়েছিলেন ম্যান অফ দ্য ম্যাচ। ২০১২ ইউরোতেও তিনি প্রতিপক্ষকে নাচিয়ে ছেড়েছিলেন। সেবার স্পেনের করা প্রতিটি গোলে ইনিয়েস্তার প্রত্যক্ষ অবদান ছিলো। বার্সেলোনার হয়ে ২০১৫ সালে আবারো ট্রেবল জিততে তার বড় ভূমিকা ছিলো। উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনালে জুভেন্টাসের মতো শক্তিশালী প্রতিপক্ষ আর নিজ দলে মেসি, নেইমার, সুয়ারেজদের মতো নামিদামি খেলোয়াড় থাকার পরও সকল আলো কেড়ে নিয়েছিলেন তিনি। এবং যথারীতি ২০১৫ উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনালেও হয়েছিলেন ম্যান অফ দ্য ম্যাচ।

অনেকের মতে ২০১০ ব্যালন ডি অর মেসির নয়, ইনিয়েস্তার প্রাপ্য ছিলো; Source: fcbarcelona.com

আন্দ্রেস ইনিয়েস্তা সম্পর্কে তার জাতীয় দলের সতীর্থ ফার্নান্দো তোরেস বলেছিলেন, “যখন ইনিয়েস্তার কাছে বল থাকে, মনে হয় যেন সবকিছু থেমে গেছে।” কথাটা তোরেস মোটেও খারাপ বলেননি। ইনিয়েস্তার পায়ের কারুকাজ সবাই অবাক দৃষ্টিতে দেখতো। বার্সেলোনা ও স্পেনের হয়ে সফল সময় পার করে আসলেও ব্যক্তিগত তেমন অর্জন নেই ইনিয়েস্তার। ব্যক্তিগত সাফল্যে মেসি ও রোনালদোর অতিমানবীয় পারফর্মেন্সের ভিড়ে তিনি তেমন আলো কাড়তে পারেননি।

বার্সেলোনায় দীর্ঘ ২২ বছর কাটানোর পরে তিনি অনুভব করতে পারলেন মেঘে মেঘে যে অনেক বেলা হয়ে গেছে। বয়সটা হয়েও গেছে ৩৪। তবে বয়সের ছাপ থাকলেও ইনিয়েস্তা নিভে যাননি। এখনো মেসির সাথে তার টেলিপ্যাথিক যোগাযোগ লক্ষ্য করা যায়, এখনো বার্সেলোনার মিডফিল্ডের বামপাশের ভরসা তিনি। তবে সারাজীবন বার্সেলোনাতে নয়। ফর্ম থাকতে থাকতে কাতালানদের কাছে রঙিন স্মৃতি রেখে বিদায় নিতে চান সময়ের সেরা এ মিডফিল্ডার। সেজন্যই সংবাদ সম্মেলনে অশ্রুসজল চোখে জানিয়েছেন এ মৌসুম শেষে বার্সেলোনা ছাড়ছেন তিনি। বার্সেলোনা ছেড়ে তিনি ইউরোপের কোনো ক্লাবে যোগ দেবেন না, কারণ বার্সেলোনার বিপক্ষে তিনি কীভাবে খেলবেন!

রাশিয়া বিশ্বকাপের পর অবসর নেবেন জাতীয় দল থেকে, হয়ত তারপরে ক্লাব ফুটবল থেকে অবসর নিয়ে ফুটবলকে বিদায় জানিয়ে দেবেন। বর্নাঢ্য একটি ক্যারিয়ার শেষে ফুটবলের ইতিহাসের পাতায় ইনিয়েস্তা অবশ্যই বেঁচে থাকবেন কিংবদন্তি হয়ে। আর কাতালানদের কাছে তিনি আজীবন থাকবেন সম্মোহনকারী এক জাদুকর হয়ে।

Featured photo: Barca Blaugranes Archives

Related Articles