Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

মারাকানায় স্বপ্নভঙ্গ, মারাকানাতেই স্বপ্নজয়!

শেষ মুহূর্তের বাঁশি বেজে গেছে, লিওনেল মেসি হাঁটু গেড়ে বসে পড়েছেন কান্নায়। দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশের শ্রেষ্ঠত্বের এই ট্রফিতে লিওর কান্নাভেজা চোখ কিন্তু ফুটবল এবারই প্রথম দেখেনি, কান্নায় ভেঙে পড়া লিওর চোখের জলের ছাপ মারাকানার জন্যেও কিন্তু নতুন ছিল না মোটেও। তবুও এই কান্নার অর্থ ভিন্ন, এই কান্নার উপলক্ষ্যও ভিন্ন। গুনে গুনে কম তো নয়, দীর্ঘ আটাশ বছর পর আকাশি-নীল জার্সিরা আন্তর্জাতিক কোনো শিরোপার স্বাদ পেয়েছে। লিও পেয়েছেন নিজের আকাঙ্খিত সেই ট্রফি, সেই শ্রেষ্ঠত্বের স্বাদ।

অথচ এই টুর্নামেন্টটা আর এই রাত কিন্তু আকাশি-নীলদের জন্যে সহজ কিছু ছিল না। লিওনেল মেসিকে তাই রদ্রিগো ডি পল আর এমিলিয়ানো মার্টিনেজরা যখন আকাশে তুলে উৎসবে নাচছেন, মারাকানার আকাশে তাকিয়ে লিও কি অতীতে ফিরে গিয়েছিলেন?

মারাকানার সেই রাত

সেই ২০১৪ সালের কথা, আলেসান্দ্রো সাবেয়ার অধীনে দীর্ঘ সময় পর বড় কোনো টুর্নামেন্টের ফাইনালে উঠেছিল আলবিসেলেস্তারা। ইচ্ছে ছিল, সপ্তর্ষীমণ্ডলের সমস্ত নক্ষত্রকে পুঁজি করে প্রতিজ্ঞা ছিল সেবার, এবার অন্তত শিরোপার গেরো কাটাবে লিওরা। লিওরও কি তাই ইচ্ছে ছিল না? জার্মানির সাথে নীল অ্যাওয়ে জার্সিতে সেই ম্যাচে মাঠে নামার আগে লিও যখন জাতীয় সংগীত গাইতে নামছিলেন, প্রবল আরাধ্য সেই ট্রফিতে একটাবার ঠোঁট ছোঁয়ানোর জন্যে লিওর ভেতরের যে আকাঙ্ক্ষা, সেটার অনুরণন কি কোনোভাবেই কীবোর্ডের অক্ষরে সম্ভব?

আচ্ছা, বার্সা সতীর্থ জাভি-ইনিয়েস্তাকে কি সত্যিই মেসি জিজ্ঞেস করেছিলেন, দেশের হয়ে একটা ট্রফি জেতার স্বাদ কেমন? সে তিনি জিজ্ঞেস করুন আর না করুন, মারাকানাতে সেই রাতে লিওর এই প্রশ্নের উত্তর জানা হয়নি, জানা হয়নি দেশের হয়ে জেতা কোনো ট্রফিতে ঠোঁট ছোঁয়ানোর স্বাদ কতটা তৃপ্তির হতে পারে। আর তাই মাশ্চেরানো, আগুয়েরো আর ডি মারিয়ার কান্নাভেজা চোখ ফাঁকি দিয়ে ক্যামেরা যখন লিওকে খুঁজে নিচ্ছে, তখন আমরা দেখতে পেলাম লিওর ট্রফির দিকে হাহাকারের মতো তাকিয়ে থাকা সেই আইকনিক ছবিটা। গোল্ডেন বল হাতে মেসি ফিরে আসছেন, থেমে গিয়ে একটাবার তাকিয়ে দেখলেন সেই বিশ্বকাপটার দিকে… যেটা আর লিওর ছোঁয়া হলো না! 

গোৎজের গোলে স্বপ্নভঙ্গ হয় আর্জেন্টিনার
গোৎজের গোলে স্বপ্নভঙ্গ হয় আর্জেন্টিনার; Image Credit: Getty Images

মারাকানার সেই রাত পেরিয়ে গেছে। লিওনেল মেসি সর্বকালের সেরা কি না এই বিতর্কও ক্রমেই তাঁতিয়ে উঠছে। ক্লাব ফুটবলে তার দোর্দণ্ড রাজত্ব, ব্যক্তিগত শ্রেষ্ঠত্বের মাপকাঠি ব্যালন ডি’অরও তিনি জিতেছেন বেশ কয়েকবার। কিন্তু মাতৃভূমির প্রতি, রোজারিওর ধুলাবালির প্রতি জমে থাকা ঋণটা যে রয়েই গেল! মারাকানাতে শূন্য চোখে তাকিয়ে থাকা মেসির চোখ তাই পাখির চোখ করলেন এর পরের বছরের কোপা আমেরিকাকে। সেই যে ১৯৯৩ সালে মেক্সিকোকে ২-১ গোলে হারিয়ে মহাজাগতিক শ্রেষ্ঠত্বের সেই ট্রফিটা উঁচিয়ে ধরেছিল আর্জেন্টিনা, এরপর তো আর কখনোই পারেনি বহু আকাঙ্ক্ষিত এই ট্রফিকে বুয়েনোস এইরেসের বিমানবন্দরে নামিয়ে আনতে। 

সান্তিয়াগোর ব্যার্থতা

কোপা আমেরিকার ২০১৫ এর আসরটাও মেসিদের জন্যে ছিল হারানো শিরোপা পুনরোদ্ধারের মিশন। জেরার্ডো মার্টিনোর অধীনে লিওর সেই দলটা সেবার ফাইনালেও উঠে গেছিল। তবে সেই আসরে আর্জেন্টিনার মতো ট্রফির দিকে চাতক পাখির মতো চেয়ে ছিল আরেকটা দেশও – চিলি। সেই টুর্নামেন্টের আগে ১০০ বছরের মধ্যে যে তারা কোনো ট্রফি জেতেনি! আর তাই সান্তিয়াগোতে যখন চিলি আর আর্জেন্টিনা ফাইনাল খেলতে নামছে, দুই দলের জন্যেই সেই ফাইনাল ছিল বিশেষ কিছু।

কিন্তু নাহ, ফুটবল ঈশ্বর এবারও লিওকে ফিরিয়ে দিলেন খালি হাতেই। সব মিলিয়ে নির্ধারিত সময়ের পর অতিরিক্ত ৯০ মিনিটও যখন গোলশূন্য ড্র হল, খেলা গড়াল টাইব্রেকারে। আর সেই টাইব্রেকার যেন গলার কাঁটা হয়ে গেল আকাশি-নীলদের জন্যে। এভার বানেগা আর গঞ্জালো হিগুয়াইনের পেনাল্টি মিসের পর অ্যালেক্সিস সানচেজ যখন কফিনে শেষ পেরেকটা ঠুকে দিয়ে জার্সিটা চর্কিপাক ঘোরাতে ঘোরাতে ছুটে যাচ্ছেন সতীর্থদের দিকে, গায়ে চ্যাম্পিয়ন লেখা লাল জার্সিটা পরে অভিবাদন জানাচ্ছেন নিজের দেশের কানায় কানায় পূর্ণ গ্যালারিকে, ক্যামেরা খুঁজে নিল আকাশী-নীলদের।

শেষ পেনাল্টিতে লক্ষ্যভেদের পরই উন্মত্ত উদযাপনে মেতে ওঠেন সানচেজ; Image Credit: Getty Images

শূন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকা আরেকবার। বিশ্বকাপের পর এবারও টুর্নামেন্টসেরা খেলোয়াড় হয়েছেন, কিন্তু পরপর বিশ্বকাপ আর মহাজাগতিক টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড় হওয়ার পরও লিওর ঠোঁটে হাসি নেই। নিজের মেডেলটা নিতে যখন তিনি সারিতে দাঁড়িয়ে পড়েছেন, তখন আলবিসেলেস্তে ভক্তদের হৃদয়ের রক্তক্ষরণ আরো বাড়িয়ে দিল মাশ্চেরানোর সেই দৃশ্যটা। ট্রফির পাশ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন, দূরত্ব কতটুকুই বা হবে? ইঞ্চিখানেক? তবুও সেই ট্রফিটা ছোঁয়ার এখতিয়ার নেই মাশ্চেরানোর। অল্প অল্প পায়ে হাঁটতে হাঁটতে তিনি এগিয়ে যাচ্ছেন, আড়চোখে দেখে নিচ্ছেন ট্রফিটাকে, কপালটা কিঞ্চিত ভাঁজ হয়ে আছে উপরের দিকে। শুধু লিওই নয় – একটা ট্রফি তো মাশ্চেরানোরও প্রাপ্য ছিল! 

ফুটবল-দেবতা টানা দুইবার শূন্য হাতে ফিরিয়ে দিলেন লিওকে, ফিরিয়ে দিলেন আর্জেন্টিনাকে। লিওর স্বপ্ন ছোঁয়ার দিনটা যেন আর আসে না। এই যে ব্যক্তিগত অর্জন, এই যে প্রতি টুর্নামেন্টের শেষেই নিজস্ব স্বীকৃতির বরণমাল্য… লিও তো এসব চাননি। লিওর চাওয়া ছিল শুধু একটা আন্তর্জাতিক ট্রফি। তিনি বলেছিলেন, এই একটা আন্তর্জাতিক ট্রফির জন্যে তিনি নিজের ক্যারিয়ারের সব অর্জনও দিয়ে দিতে রাজি আছেন। কিন্তু লিও রাজি হলে কী হবে, নিয়তি যে তার দিয়ে তাকিয়ে ক্রুর হেসে চলেছে! 

লিওনেল তবু হাল ছেড়ে দেননি। ছোটবেলাতে ফুটবল খেলাই যার জন্যে অসম্ভব হয়ে যাচ্ছিল, তিনি একটা ট্রফির সন্ধানে হাল ছেড়ে দেবেন, তা-ই বা কী করে হয়? সান্তিয়াগোর সেই রাতে লিও যখন তাই আকাশের দিকে তাকিয়ে শূন্য চোখে দেখছিলেন, যে আকাশ হয়ে আছে লিওর প্রতিটা গোলের সাক্ষী, সেই আকাশকে কি লিও বলেছিলেন, “আমি আবার ফিরে আসব”?

শতবর্ষী কোপা আমেরিকায়

কোপা আমেরিকার এরপরের আসরটা ছিল আমেরিকাতে, কোপা আমেরিকার শতবর্ষ আয়োজন। বেশ বড়সড় আয়োজনের সেই টুর্নামেন্টে আর্জেন্টিনা এবার গেল ফেভারিটের তকমা গায়ে মেখেই। এমনিতেই পরপর দুটো ফাইনাল খেলে তারা তখন এমনিতেই ফেভারিট, তার ওপর জেরার্ডো মার্টিনোর সেই দলে একইসাথে আছেন ‘ফ্যাবুলাস ফোর’ –  ডি মারিয়া, হিগুয়াইন, আগুয়েরো আর মেসি! 

আর আমেরিকায় অনুষ্ঠিত কোপা আমেরিকার এবারের আসরেও মেসিরা যখন ফাইনালে উঠে গেলেন, তখন আলবিসেলেস্তে সমর্থকদের মনে হচ্ছিল – অন্তত এবার? এবারও সেই এক বছর আগের চিত্রনাট্য, টাইব্রেকারের আগে গোলশূন্য ড্র, মেটলাইফ স্টেডিয়ামে খেলা দেখতে আসা হাজার হাজার আকাশী-নীল জার্সি তখন একমনে প্রার্থনা করে চলেছে – এবার অন্তত স্বপ্নভঙ্গ না হোক! 

দানে দানে তিন দান; টানা তিন ফাইনালে উঠেছে আর্জেন্টিনা। দুটোতে ফিরতে হয়েছে স্বপ্নভঙ্গের বেদনা নিয়ে। লিওর সেই ট্রফির দিকে তাকিয়ে থাকা, মাশ্চেরানোর সেই আড়চোখের চাহনি আলবিসেলেস্তেদের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ করিয়ে দেয় একটি বছর পরও। আর একটা ফাইনালের ক্ষত সয়ে নেওয়ার জন্যে প্রস্তুতি, নাকি এতগুলো বছরের সেই অপেক্ষার অবসান?  

হাতের লক্ষ্মী পায়ে নাকি ঠেলতে নেই। এত বছরের স্বপ্ন, এত সাধনা, এত অপেক্ষা – সবকিছুর সমাপ্তি যখন হাত বাড়ানো দূরত্বে, মেসি পারলেন না। আরেকটা টাইব্রেকার গলায় কাঁটা হয়ে রইল। এবার নিজেকে তিনি কীভাবে ক্ষমা করবেন? পেনাল্টি শুটআউটে গিয়ে বলটা যখন বারের ওপর দিয়ে পাঠিয়ে দিলেন, মেসি ততক্ষণে নিশ্চিত বুঝতে পেরেছেন, ভাগ্যে কী লেখা আছে। মেসি মিস করেছেন, এরপর মিস করেছেন লুকাস বিলিয়া; আন্তর্জাতিক শিরোপাটা আবারও অধরাই রয়ে গেল। আর মেসি নিজেই এবার কাঠগড়ায়! 

২০১৬ কোপা আমেরিকার ফাইনালে পেনাল্টি মিসের পর হতাশায় ভেঙ্গে পড়েন মেসি; Image Credit: Getty Images

এমনিতেই আর্জেন্টিনার লিগে না খেললে আর্জেন্টাইনরা সহজে কাউকে হৃদয়ে ঠাঁই দেয় না, সেখানে মেসি তো সেই ছোট্ট বয়স থেকেই পড়ে আছেন বার্সেলোনাতে। মেসিকে তাই সব আর্জেন্টাইনই আপন করে নিতে পেরেছিলেন, এমনটা নয়। সে হিসেবে মেসির পেনাল্টি মিস তাই মেসিকে আরো ক্ষতবিক্ষত করে দিল, বিদ্ধ করল দুঃসহ সমালোচনায়। মেটলাইফ স্টেডিয়ামের গোলবারে হাত রেখে রাদারফোর্ডে তাই মেসি যখন কান্নায় ভিজে যাচ্ছেন, আকাশি-নীলদের জন্যে তখন অপেক্ষা করছে তার চেয়েও ভয়াবহ দুঃসংবাদ – আন্তর্জাতিক ফুটবল ছেড়ে দেবেন লিও! 

আর্জেন্টিনার ২০১৪ বিশ্বকাপের একটা কথা বলে নিই। ইরানের সাথে প্রথম ম্যাচে গোল করে মেসি যখন বুনো উল্লাসে মেতে উঠছেন, কমেন্ট্রিতে তখন বলা হচ্ছে, বার্সার হয়ে একটা ট্রফি জিতলেও মেসি এমন করে উদযাপন করেন না, যেমনটা আন্তর্জাতিক ম্যাচে আর্জেন্টিনার হয়ে একটা গোল করার পর করলেন মেসি। নিজের দেশের প্রতি এতই গভীর মমত্ববোধ যে তার চোখে গোটা আর্জেন্টিনার মানুষ স্বপ্ন দেখেছিল আন্তর্জাতিক শিরোপাখরা কাটানোর; দুর্নীতি আর ঋণের দায়ে পড়ে থাকা এফএর ক্যাবিনেটে অনেক অনেক দিন পর একটা ট্রফি এনে রেখে দেওয়ার। বহুদিন যে হয়ে গেছে, ক্যাবিনেটটা কোনো ট্রফির ছোঁয়া পায়নি। আর সেই লিও যখন বিদায় বলে দিলেন, তার চোখে দেখা সব স্বপ্নও কি শেষ হয়ে গেল না?

নাহ, হয়নি। আকাশি-নীল জার্সিতে মেসি ফিরে এসেছিলেন। খেলে ফেলেছিলেন আরেকটা বিশ্বকাপ, বিদায় নিয়েছিলেন আরেকটা কোপা আমেরিকা থেকে। বড় আসরের নকআউট স্টেজ থেকে বিদায় নেওয়া তখন আকাশি-নীল জার্সির ভক্তবৃন্দের জন্যে অফিস-ওয়ার্ক হয়ে যাওয়ার  কথা। কিন্তু ঐ যে, একেকটা টুর্নামেন্ট আসে, আর বারবার মনে হয়, সেই তিরানব্বইতে যে স্বাদ শেষবারের মতো নেওয়া হয়েছিল, গোটা আর্জেন্টিনা যে স্বাদ ভুলতে বসেছে, আকাশি-নীল ভক্তদের এই প্রজন্ম যে মুহূর্ত কখনো চোখে দেখেনি, সেই স্বাদ, সেই মুহূর্ত এবার অন্তত ধরা দেবে। এবার অন্তত আন্তর্জাতিক শিরোপা খুঁজে নেবে নিজের কাঙ্ক্ষিত হাত, খুঁজে নেবে আর্জেন্টাইন রাজকুমারের কার্পালস, সিসাময়েড আর মেটাকার্পালস!

কিন্তু নাহ, সেই আশা আর পূরণ হয় না। জেরার্ডো মার্টিনো হাল ছেড়ে দিয়েছেন, হোর্হে সাম্পাওলির মতো কোচ বিদায় নিয়েছেন খালি হাতে। আর্জেন্টিনা অগত্যা দ্বারস্থ হয়েছিল অখ্যাত লিওনেল স্কালোনির কাছে! পারবেন তো তিনি? 

অবশেষে স্বপ্নজয়

আর্জেন্টিনার জন্যে কোপা আমেরিকা জয়ের সবচাইতে বড় সুযোগ বলা হচ্ছিল এবারের আসরটাকেই, কেননা এবারের আসরটা যে হওয়ার কথা ছিল খোদ আর্জেন্টিনাতেই। চেনা মাঠ আর চেনা পরিবেশের গন্ধে এবার অন্তত নিজেদের শিরোপার গেরোটা খুলবে আর্জেন্টিনা তাই ভাবা হচ্ছিল বারবার। কিন্তু পাশার দান উল্টে গেল মহামারীর আগমনে। আর্জেন্টিনা থেকে কোপা আমেরিকা স্থানান্তর হয়ে গেল আর্জেন্টিনারই শতবর্ষী রাইভাল ব্রাজিলের দেশে। গোড়াতেই গলদ… তবে কি এবারও হলো না?

সৃষ্টিকর্তা যখন দেন, তখন নাকি সবটা উজাড় করেই দেন। মেসির জন্যে উৎসবের মঞ্চটাও এভাবেই প্রস্তুত করে রেখেছিল প্রকৃতি। নিজের দেশকে একটা বহুজাতিক ট্রফি জেতাতে যে মানুষটা নিজের তাবৎ জীবনের সব ব্যাক্তিগত অর্জনকে দিয়ে দিতে রাজি ছিল, যে মানুষটার জন্যে রদ্রিগো ডি পলরা যুদ্ধে যেতে রাজি ছিলেন, সতীর্থ ডি মারিয়া যাকে কথা দিয়েছিলেন একটা ট্রফি আর্জেন্টিনা জিতবে তার জন্যে – তার উদযাপনে রঙ না মিশে থাকলে আর কীভাবে হবে?

আর তাই, গ্রুপস্টেজ-কোয়ার্টার ফাইনাল-সেমিফাইনাল পেরিয়ে আর্জেন্টিনা যখন আবারও পৌছে গেল কোপা আমেরিকার ফাইনালে। তখনও বারবার মনের কোণে আলবিসেলেস্তেদের উঁকি দিচ্ছে একটাই প্রশ্ন – এবার হবে তো?

পথ আর্জেন্টিনার জন্যে এতটা সহজ ছিল না। নিজেদের মাটিতে ব্রাজিল অসম্ভব কঠিন প্রতিপক্ষ, এ কথা কারো অজানা নয়; তার ওপর তারাই ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন। এ ফাইনাল তাই যতটা ব্রাজিলের জন্যে ছিল, আর্জেন্টিনার জন্যে ছিল তার চাইতেও বিশেষ কিছু। কম তো হলো না, ক্যালেন্ডারের পাতা ওল্টাতে ওল্টাতে কেটে গেছে আটাশটা বছর। একটা দলকে আর কতদিন অপেক্ষায় থাকতে হবে একটা ট্রফির জন্যে? 

অবশেষে বহু আরাধ্য ট্রফিটা ছুঁতে পেরেছেন মেসি এবং তার দল; Image Credit: Getty Images

নাহ, এবার আর অতটা শক্ত ইচ্ছে কেউ পুষে রাখেনি। এমনিতেই খেলা ব্রাজিলের মারাকানাতে, প্রতিপক্ষ আবার খোদ ব্রাজিলই। তবে কীভাবে যেন মেসির জন্যে মঞ্চটা আগে থেকেই প্রস্তুত করে রাখা ছিল! আর সেই মঞ্চ সাজানোর দায়িত্ব নিলেন কে? আনহেল ডি মারিয়া, আঠারোর বিশ্বকাপের পর অনেকে যার আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের শেষ দেখে ফেলেছিলেন! 

আর তাই যখন ফাইনালের শেষ বাঁশি বেজে উঠল, হ্যামস্ট্রিংয়ের ইনজুরি নিয়ে টানা দুই ম্যাচ খেলে ফেলা মেসি যখন হাঁটু গেড়ে বসে কেঁদে ফেলেছেন। পুরো মাঠজুড়ে ছড়িয়ে থাকা আকাশি-নীল জার্সির সব খেলোয়াড়েরা তাদের অধিনায়কের দিকে ছুটে আসছে, মারাকানাতে তখন দায়মুক্তির পালা। ঈশ্বর নিজের দায় মেসিকে বুঝিয়ে দিয়েছেন, মেসি জন্মভূমির প্রতি নিজের দায় শোধ করেছেন। সেটাও কীভাবে? সেই মারাকানাতে, নিজেদের প্রবল প্রতিপক্ষের সাথে! 

This article is in Bangla language. This article is on Argentina's journey from 2014 to 2021. Necessary hyperlinks and images are attached inside.

Featured image © Getty Images.

Related Articles