Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

বার্সেলোনা বনাম রিয়াল মাদ্রিদ: এল ক্ল্যাসিকোর ট্যাকটিক্যাল ব্যবচ্ছেদ

‘কোপা দেল রে’-র প্রথম সেমিফাইনালে মাঠে নামার আগে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী বার্সেলোনার থেকে সবদিক থেকেই এগিয়ে ছিল রিয়াল মাদ্রিদ। একে তো নিজেদের হোম ভেন্যু সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে খেলা; পাশাপাশি বার্সেলোনার মূল একাদশের খেলোয়াড়দের মধ্যে লেভানডফস্কি-দেম্বেলে-পেদ্রি-ক্রিস্টেনসেন সবাই ইনজুরির জন্য মাঠের বাইরে। তাই খেলা শুরুর আগে রিয়াল মাদ্রিদকেই ফেভারিট ভাবছিলেন খোদ বার্সেলোনার কোচ জাভি হার্নান্দেজও!

মাঠের খেলাতেও রিয়াল মাদ্রিদ সেটার প্রমাণ রাখার চেষ্টা করেছে ম্যাচের শুরু থেকে একদম শেষ পর্যন্ত। কিন্তু বার্সেলোনার জমাট রক্ষণকে অতিক্রম করার কোনো রাস্তা খুঁজে বের করতে পারেননি মাদ্রিদ কোচ কার্লো আনচেলত্তি।  ম্যাচের প্রথমার্ধে এডার মিলিতাওয়ের আত্মঘাতী গোলটাই ম্যাচের একমাত্র গোল হয়ে রইলো। অর্থাৎ কোপা দেল রে’র ফাইনালে যেতে হলে ন্যু ক্যাম্পে বার্সেলোনাকে হারাতেই হবে কার্লো আনচেলত্তির শিষ্যদের।

Image credit: Getty Images

পুরো ম্যাচজুড়ে লক্ষ্য বরাবর একটাও শট নিতে পারেনি রিয়াল মাদ্রিদ। তাদের ১৩টি শটের সবগুলোই হয় বাইরে দিয়ে গিয়েছে, অথবা বার্সেলোনার ডিফেন্ডারদের কাছে প্রতিহত হয়েছে। একের পর এক মুহূর্মুহূ আক্রমণ করে গেলেও কাঙ্ক্ষিত গোলের দেখা পায়নি রিয়াল মাদ্রিদ। এতগুলো আক্রমণ করেও কেন গোল করতে ব্যর্থ হলো রিয়াল মাদ্রিদ? কোন কৌশলেই বা জাভি প্রতিহত করে দিলেন মাদ্রিদের একের পর এক আক্রমণ? আজ আমরা আলোচনা করবো সেসব নিয়েই।

Image credit: Getty Images

এই ম্যাচে জাভি ভিনিসিয়াস জুনিয়রকে আটকানোর জন্য আরাউহোকে রাইটব্যাক পজিশনে খেলান। আরাউহো প্রথাগত সেন্টারব্যাক হওয়ায় তিনি খুব একটা আক্রমণে উঠেননি, বরং থার্ড সেন্টারব্যাকের মতো কুন্দে-আলোন্সোর পাশেই থেকেছেন। বার্সেলোনার বিল্ডআপের শুরুতেই করিম বেনজেমা এবং ভালভার্দে মিলে বার্সেলোনার দুই সেন্টারব্যাককে প্রেস করতে শুরু করেন; মাদ্রিদের বাকি ফুটবলাররাও তখন তাদের আশেপাশে থাকা বার্সেলোনার ফুটবলারদের ম্যান মার্ক করে রাখেন। যে কারণে বার্সেলোনার ফুটবলারদের নিচ থেকে বিল্ডআপ করতে বেশ সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়।

Image credit: Author

বার্সেলোনা গত বেশ কয়েকটি ম্যাচ ধরেই ৪-৪-২ ফর্মেশনে খেলছে যেখানে দুই পিভট বুসকেটস-কেসির উপরে ডি ইয়ং এবং গাভি মিলে বক্স আকৃতির মাঝমাঠ তৈরী করছেন। গাভি কাগজে-কলমে লেফট উইঙ্গার পজিশনে খেললেও তিনি প্রতিনিয়ত লেফট হাফস্পেসে সরে এসে প্রতিপক্ষের রাইটব্যাককে নিজের দিকে টেনে আনতেন। ফলে বার্সেলোনার লেফটব্যাক বালদের সামনে পুরো লেফট উইং উন্মুক্ত হয়ে যেতো, বালদে তার স্পিড এবং ড্রিবলিং সামর্থ্য দিয়ে প্রতিপক্ষ রক্ষণভাগকে বিপদে ফেলতেন। 

আলচেলত্তি জাভির এই কৌশল সম্পর্কে বেশ ভালোভাবেই অবগত ছিলেন। তাই তিনি বালদেকে প্রতিহত করতে মাদ্রিদের রাইটব্যাক কার্ভাহালকে উপরে উঠে বালদেকে প্রেস করার লাইসেন্স দেন। এজন্য বিল্ডআপের সময় বালদে বল রিসিভ করার সাথে সাথেই কার্ভাহাল তাকে প্রেস করতে উপরে উঠে আসছিলেন। বালদের পক্ষে তার শক্তিশালী বাম পায়ে হাফস্পেসে থাকা কেসির সাথে পাসিং অপশন তৈরি করা কঠিন হয়ে যাচ্ছিল। এজন্য বালদেকে বারবার ব্যাকপাস খেলতে হচ্ছিল, যে কারণে বার্সেলোনা আরো বেশি চাপের মুখে পড়ছিল।

বালদে বল রিসিভ করে বেশি সময় নেওয়ায় কেসিকে পাস বাড়াতে ব্যর্থ হন; Image credit: Author

এই সমস্যা সমাধানে জাভি কেসিকে একদম ওয়াইড এরিয়ায় নিয়ে আসেন, যাতে কেসি বল রিসিভ করে হাফ টার্ন করে ফেরান বা গাভির সাথে ওয়ান-টু পাস খেলে আক্রমণে উঠে যেতে পারেন। কিন্তু কেসির দুর্বল বল রিসিভিং এবং ক্রমাগত হেভি টাচের কারণে এই কৌশলও ব্যর্থ হয়ে পড়ে।

Image credit: Author

উপরের উদাহরণে কেসি বল রিসিভ করে কুইক হাফ টার্ন করে ফেরানের উদ্দেশ্য পাস বাড়ান। এসময় বালদে থার্ড ম্যান হিসাবে হাফস্পেস ধরে রান নেন। কিন্তু কেসির দুর্বল পাসের কারণে ফেরানের বল রিসিভ করতেই অনেকটা সময় লেগে যায়। যে কারণে থ্রি-ভার্সেস-টু পরিস্থিতি তৈরি করে লেফট উইং ধরে আক্রমণে উঠার সুযোগ হাতছাড়া হয়ে যায়।

কার্ভাহাল বালদেকে প্রেস করতে উপরে উঠে আসায় গাভিকে মার্ক করে মিলিতাওকে বারবার মিডফিল্ডে উঠে আসতে হচ্ছিল। এতে করে ফেরান তোরেসের সামনে অনেকটা ফাঁকা জায়গা তৈরি হচ্ছিল। কিন্তু বার্সেলোনার মিডফিল্ডাররা দ্রুতগতিতে পাস না বাড়াতে পারায় ফেরানের রানগুলো থেকে তেমন কোনো ভালো আক্রমণ গড়ে ওঠেনি।

Image credit: Author

আলোন্সোর লং বল গাভি ওয়ান টাচ ফ্লিক অন করলে ফেরানের সামনে অনেকটা ফাঁকা জায়গা তৈরি হয়।

এবার আসা যাক রিয়াল মাদ্রিদের বিল্ডআপের ধরন নিয়ে। বার্সেলোনা বল পায়ে অনেকটা ছন্নছাড়া পারফর্ম করলেও রিয়াল মাদ্রিদ বল পজেশন থাকা অবস্থায় বেশ গোছানো আক্রমণ সাজিয়েছে। তাদের বেশিরভাগ আক্রমণই ছিল মাঠের বাম পাশ নির্ভর।

রিয়াল মাদ্রিদের বিল্ডআপের সময়ও বার্সেলোনা ম্যান-টু-ম্যান প্রেস করে মাদ্রিদের খেলোয়াড়দেরকে বল নিয়ে উপরে উঠতে বাধা দেয়। ভিনিসিয়াসকে মার্ক করার জন্য রাফিনহা প্রায়ই তার পজিশন ছেড়ে অনেকটা নিচে আরাউহোর কাছাকাছি অবস্থান করছিলেন, যে কারণে মাদ্রিদের লেফটব্যাক নাচো অনেকটা উপরে উঠে বল রিসিভ করার সুযোগ পাচ্ছিলেন। 

বল পায়ে থাকা অবস্থায় ভালভার্দে তার পজিশন ছেড়ে মিডফিল্ডে নেমে ‘নিউমেরিক্যাল সুপেরিওরিটি’ তৈরি করেছেন, যে কারণে ক্রুস বল রিসিভ করার সময় তার সামনে অনেকটা ফাঁকা জায়গা তৈরি হচ্ছিল। 

নাচো বল রিসিভ করলেই রাফিনহা অনেকটা বাধ্য হয়ে তাকে প্রেস করতে উপরে উঠে আসছিলেন; যে কারণে তখন ভিনিসিয়াস আরাউহোর বিপক্ষে ওয়ান-ভার্সেস-ওয়ান ব্যাটেলে মুখোমুখি হচ্ছিলেন। ভিনির সাথে ওয়ান-অন-ওয়ান লড়াইয়ে আরাউহো ছিলেন দুর্দান্ত; পুরো ম্যাচে একবারের জন্যও ভিনিকে তাকে পরাস্ত করে আক্রমণে উঠার সুযোগ দেননি। 

ভিনিসিয়াস তার ডান পায়ে শক্তিশালী। তাই তিনি সাধারণত লেফট উইং থেকে বল পায়ে হাফস্পেস ধরে ভেতরে ঢুকে পড়তে চেষ্টা করেন, অথবা সে সুযোগ না পেলে উইং ধরেই রান নিয়ে তার মার্কারকে পরাস্ত করে পরে বক্সে প্রবেশ করেন। এজন্য ভিনি বল রিসিভ করার সাথে সাথেই আরাউহো তাকে আটঁসাটঁভাবে মার্ক করেছেন; তাকে আউটসাইড এরিয়া দিয়ে রান নেওয়ার সুযোগ দিয়েছেন প্রতিবার, কিন্তু ইনসাইডে কাটইন করতে দেননি। এ কারণে ভিনি বারবার উইং ধরে রান নিয়েও আরাউহোকে তার গতি দিয়ে পরাস্ত করতে পারেননি। ফলে তার দুর্বল বাম পা দিয়ে উদ্দেশ্যহীন ক্রস করতে হয়েছে।

Image credit: Author

এখানে ভিনি বল রিসিভ করার সাথে সাথেই আরাউহো তাকে মার্ক করে ফেলেন। আরাউহো তার ইনসাইড এরিয়া ব্লক করে রাখলেও ওয়াইড এরিয়া দিয়ে ভিনিকে রান নেওয়ার সুযোগ দেন।

Image credit: Author

ভিনি টাচলাইন ধরে বক্সের দিকে দ্রুতগতিতে আরাউহোকে পরাস্ত করার চেষ্টা করলেও ব্যর্থ হন। ফলে বাধ্য হয়ে তার দুর্বল বামপায়ে বক্সে ক্রস করেন, যেটা সরাসরি স্টেগানের হাতে এসে পড়ে।

ভিনিসিয়াসের আক্রমণে উঠার আরেকটি মাধ্যম হচ্ছে বেনজেমার সাথে ওয়ান-টু পাসের মাধ্যমে প্রতিপক্ষের রক্ষণভাগকে পরাস্ত করে আক্রমণে ঢুকে যাওয়া। এজন্য বেনজেমা ভিনির সাথে পাস আদানপ্রদানের জন্য যথারীতি সেন্টার এরিয়া ছেড়ে লেফট হাফস্পেসের দিকে সড়ে আসছিলেন। কিন্তু জাভি বুসকেটস কিংবা ডি ইয়ংকে দিয়ে ভিনি-বেনজেমার মধ্যকার পাসিং চ্যানেল ব্লক করে রেখেছেন, যে কারণে এভাবেও রিয়াল মাদ্রিদ আক্রমণে ওঠার সুযোগ পায়নি। 

ডি ইয়ং ভিনিসিয়াস এবং বেনজামার মধ্যকার পাসিং চ্যানেল ব্লক করে রেখেছেন; Image credit: Author

ম্যাচের সময় যত গড়িয়েছে, বার্সেলোনা ততই খেলার দখল রিয়াল মাদ্রিদের হাতে ছেড়ে দিয়ে নিজেদের রক্ষণের দিকে মনোযোগ দিয়েছে। বার্সেলোনা কালকে কতটা রক্ষণাত্মক খেলেছে সেটা বোঝানোর জন্য একটি উদাহরণই যথেষ্ট। এ মৌসুমে বার্সেলোনার প্রতি ডিফেন্সিভ অ্যাকশনের বিপরীতে প্রতিপক্ষ গড়ে ৭.৭৭টি পাস খেলার সুযোগ পেয়েছে। অথচ গত ম্যাচে তারা রিয়াল মাদ্রিদকে প্রতিটি ডিফেন্সিভ অ্যাকশনের বিপরীতে ১৮.২৯টি পাস খেলার সুযোগ দিয়েছে। এতে করেই প্রমাণ হয় বার্সেলোনা নিজেদের আটঁসাটঁ রক্ষণ সামলানোর দিকে আসলে কতোটা মনোযোগী ছিল।

বার্সেলোনার এই আটঁসাটঁ রক্ষণকে ভাঙতে হলে রিয়াল মাদ্রিদের সামনে দু’টি উপায় ছিল, হয় মিডফিল্ড থেকে ড্রিবলিং করে বার্সেলোনার একাধিক খেলোয়াড়কে পরাস্ত করে বক্সে ঢুকে পড়ার চেষ্টা করা, অথবা মিডফিল্ডের ন্যারো পজিশনেই নিজেদের মধ্যে বল আদানপ্রদান করে বার্সেলোনার ডিফেন্ডিং লাইনকে বিভ্রান্ত করে স্পেস ক্রিয়েটের চেষ্টা করা। ড্রিবলিংয়ের জন্য মাদ্রিদ ভিনিসিয়াসের দিকেই তাকিয়ে ছিল,কিন্তু তিনি বারবারই আরাউহোর কাছে পরাস্ত হয়েছেন। বার্সেলোনার আটঁসাটঁ রক্ষণের সামনে ক্রমাগত পাস খেলে ডিফেন্স আনলক করার মতো খেলোয়াড় মাদ্রিদে একজনই ছিলেন, লুকা মদ্রিচ। কিন্তু তিনিও এ ম্যাচে নিজের ছায়া হয়ে ছিলেন। ভালভার্দে মাঝেমধ্যেই বিটুইন-দ্য-লাইনে এসে বক্সে পাস বাড়াতে চেষ্টা করেছেন, কিন্তু তিনি মদ্রিচের মতো অতটা শার্প ক্রিয়েটর নন; যে কারণে মাদ্রিদ বার্সেলোনার ডিফেন্সিভ থার্ডে ডায়নামিজম দেখাতে পারেনি। ফলস্বরূপ পুরো ম্যাচে একটি অন টার্গেট শট নিতেও তারা ব্যর্থ হয়েছে।

Image credit: Getty Images

বার্সেলোনা যেভাবে কোপা দেল রে সেমিফাইনালে প্রথম লেগের ম্যাচটা জিতেছে, তাদের সাধারণত এরকম কৌশলে খেলতে দেখা যায় না। জাভির শির্ষ্যরা ম্যাচজুড়ে মাত্র ৪১ শতাংশ সময় বলের দখল রাখতে পেরেছেন, যা কি না বার্সেলোনার মতো দলের ক্ষেত্রে বেমানানই। কিন্তু পেদ্রি-দেম্বেলের মতো দলের মূল দুই ক্রিয়েটর ছাড়া খেলতে নামায় জাভির হাতে নিজের খেলার দর্শন পাল্টানো ছাড়া আর কোনো উপায়ও ছিল না।

জাভি নিজের খেলার ধরন পাল্টে আনচেলত্তিকে কতটা চমকে দিতে পেরেছেন, সেটা ম্যাচের ফলাফলই বলে দিচ্ছে। এখন ফিরতি ম্যাচে আনচেলত্তি কোন কৌশলে জাভিকে হারানোর চেষ্টা করেন, সেটা এখন সময়ই বলে দেবে।

This article is in Bangla language. The article is about the match analysis between Barcelona and Real Madrid in the Copa Del Rey semi final.

Featured image: Reuters

Related Articles