Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

ক্রিস ওকসের পয়মন্ত মাঠ লর্ডস

প্রত্যেক ক্রিকেটারেরই একটি পয়মন্ত মাঠ কিংবা প্রতিপক্ষ থাকে, যে মাঠে এবং প্রতিপক্ষের বিপক্ষে তিনি অন্যান্য সময়ের চেয়ে ভালো নৈপুণ্য প্রদর্শন করে থাকেন। ইংল্যান্ডের বিশ্বকাপজয়ী পেসার ক্রিস ওকস নিজের পয়মন্ত মাঠ হিসাবে বেছে নিয়েছেন ক্রিকেটের আঁতুড়ঘর লর্ডসকে। সম্প্রতি নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে লর্ডসে বিশ্বকাপের ফাইনালে ৩৭ রানের বিনিময়ে তিন উইকেট শিকার করেছিলেন। যাতে করে ম্যাচের শুরুতেই নিউ জিল্যান্ডের রানের গতি মন্থর করতে সক্ষম হয়েছিল ইংল্যান্ড। ক্রিস ওকস সেমিফাইনালেও দুর্দান্ত বোলিং করে ম্যাচসেরার পুরস্কার জিতেছিলেন। 

ক্রিস ওকস; Image Source: PA Images

ক্রিস ওকস ওয়ানডে ক্রিকেটে দলের নিয়মিত সদস্য হলেও টেস্ট ক্রিকেটে এখনও নিজের জায়গা পাকাপোক্ত করতে পারেননি। ইংল্যান্ডের হয়ে ২০১৩ সালে টেস্ট ক্রিকেটে অভিষেক ঘটার পর এখন পর্যন্ত খেলেছেন ২৮টি টেস্ট ম্যাচে। ২৮ টেস্টে এই বোলিং অলরাউন্ডার ৩০.৫২ ব্যাটিং গড়ে ১,০৯৯ রান করার পাশাপাশি ৩০.৮১ বোলিং গড়ে ৮২ উইকেট শিকার করেছেন।

তার টেস্ট ক্যারিয়ার গড়পড়তা হলেও লর্ডসে খেলতে নামলেই তিনি অন্যরূপ ধারণ করেন। লর্ডসে এখন পর্যন্ত চারটি টেস্ট ম্যাচ খেলে একটি শতক এবং একটি অর্ধশতকের সাহায্যে ৬৮.৫০ ব্যাটিং গড়ে ২৭৪ রান করেছেন। টেস্ট ক্রিকেটে তার একমাত্র শতকটি হাঁকিয়েছেন তিনি লর্ডসে, যার ফলে লর্ডসের অনার্স বোর্ডে নাম উঠে তার। বল হাতেও লর্ডসের অনার্স বোর্ডে নামে লেখান তিনি। এখন পর্যন্ত টেস্ট ক্যারিয়ারে তিনবার ইনিংসে পাঁচ উইকেট এবং একবার ম্যাচে দশ উইকেট শিকার করেছেন, যার সবকটি ম্যাচই ছিল লর্ডসে। লর্ডসে তিনি ৯.৭৫ বোলিং গড়ে ২৪ উইকেট শিকার করেছেন। 

টেস্ট ক্রিকেটে ক্রিস ওকসের ব্যাটিং গড় ৩০.৫২ এবং বোলিং গড় ৩০.৮১। লর্ডসে খেলা চারটি টেস্ট বাদ দিলে টেস্ট ক্রিকেটে তার ব্যাটিং গড় দাঁড়াবে ২৫.৭৮ এবং বোলিং গড় ৩৯.৫৩। লর্ডসে এখন পর্যন্ত মাত্র নয়জন ক্রিকেটার আন্তর্জাতিক টেস্ট ক্রিকেটে শতক হাঁকিয়ে অনার্স বোর্ডে নাম লেখানোর পাশাপাশি ইনিংসে পাঁচ উইকেট শিকার করেও অনার্স বোর্ডে নাম লেখিয়েছেন। নয়জনের মধ্যে একজন ক্রিস ওকস। তিনি মাত্র তিনটি টেস্ট ম্যাচ খেলেই অনার্স বোর্ডের দুই তালিকাতেই নাম লেখান। তার চেয়ে কম ম্যাচে এই কীর্তি গড়েছেন স্যার ইয়ান বোথাম (প্রথম টেস্টে) এবং বিনু মানকড় (দ্বিতীয় টেস্টে)।

গত বছর ভারতের বিপক্ষে লর্ডসে শতক হাঁকিয়েছিলেন ওকস; Image Source: Getty Images

ক্রিস ওকস লর্ডসে শতক হাঁকানোর পাশাপাশি ইনিংসে পাঁচ উইকেট এবং ম্যাচে দশ উইকেট শিকার করেছেন। তিনি ছাড়া লর্ডসে এই কীর্তি গড়েছেন স্যার গ্যাবি অ্যালেন, স্যার ইয়ান বোথাম, কেইথ মিলার এবং স্টুয়ার্ট ব্রড। লর্ডসে রেকর্ডের অন্যান্য তালিকায় ওকসের সাথে আরও কয়েকজন ক্রিকেটারের নাম থাকলেও একটি রেকর্ডে তার পাশে নেই আর কোনো ক্রিকেটার। লর্ডসে তিনিই একমাত্র ক্রিকেটার যার ব্যাটিং গড় পঞ্চাশের বেশি (৬৮.৫০) এবং বোলিং গড় দশের কম (৯.৭৫)। শুধুমাত্র লর্ডসে না, যেকোনো ভেন্যুতে এমন কীর্তি আর কোনো ক্রিকেটারের নেই।

পয়মন্ত লর্ডসে ক্রিস ওকসের নৈপুণ্য 

ক্রিস ওকস এখন পর্যন্ত লর্ডসে চারটি টেস্ট ম্যাচ খেলেছে, যার মধ্যে প্রথম ম্যাচ বাদ দিলে পরবর্তী তিন ম্যাচের প্রত্যেক ম্যাচে লর্ডসের অনার্স বোর্ডে নিজের নাম লিখিয়েছেন। লর্ডসে তার খেলা ম্যাচগুলো সম্পর্কে জেনে আসা যাক।

ইংল্যান্ড বনাম শ্রীলঙ্কা, ২০১৬ 

টেস্ট ক্যারিয়ারের প্রথম অর্ধশতক হাঁকান লর্ডসে; Image Source: Getty Images

ক্রিস ওকস লর্ডসে নিজের প্রথম টেস্ট ম্যাচ খেলেন ২০১৬ সালের ৯ জুন। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজের প্রথম দুই টেস্টে জয়ের পর লর্ডসে তৃতীয় টেস্টে মাঠে নামে ইংল্যান্ড। টসে জিতে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে ইংল্যান্ড একপর্যায়ে ২২৭ রানে ছয় উইকেট হারায়। সেখান থেকে সপ্তম উইকেট জুটিতে ১৪৪ রান যোগ করে জনি বেয়ারস্টো এবং ক্রিস ওকস। ওকস টেস্ট ক্যারিয়ারের প্রথম অর্ধশতক হাঁকিয়ে ৬৬ রান করে ফিরে গেলেও বেয়ারস্টো অপরাজিত ছিলেন ১৬৭ রানে। ফলে ইংল্যান্ড প্রথম ইনিংসে ৪১৬ রান সংগ্রহ করে।

জবাবে শ্রীলঙ্কা নিজেদের প্রথম ইনিংসে ২৮৮ রান করতে সক্ষম হয়। ক্রিস ওকস ও স্টিভেন ফিন তিনটি করে এবং ব্রড ও অ্যান্ডারসন দুটি করে উইকেট শিকার করেন। ইংল্যান্ড নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংসে সাত উইকেটে ২৩৩ রান করার পর ইনিংস ঘোষণা করলে জয়ের জন্য শ্রীলঙ্কার প্রয়োজন পড়ে ৩৬২ রানের। বৃষ্টির কারণে ম্যাচের শেষদিনে মাত্র ১২.২ ওভার মাঠে গড়ালে ম্যাচ ড্র হয়।

ইংল্যান্ড বনাম পাকিস্তান, ২০১৬ 

চার ম্যাচ টেস্ট সিরিজের প্রথম ম্যাচে লর্ডসে মুখোমুখি হয় পাকিস্তান এবং ইংল্যান্ড। টসে জিতে প্রথমে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেওয়া পাকিস্তানের প্রথম ইনিংস থামে ৩৩৯ রানে। ১১৪ রানের দুর্দান্ত ইনিংস খেলে দলকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন অধিনায়ক মিসবাহ-উল হক। পাকিস্তানের রান সংখ্যা আরও বেশি হতে পারতো, যদি না তৃতীয় পেসার হিসাবে বল করতে আসা ক্রিস ওকস ২৪ ওভারে মাত্র ৭০ রান খরচায় ছয় উইকেট না শিকার করতেন।

পাকিস্তানের প্রথম ইনিংসের জবাবে ব্যাট করতে নেমে ইয়াসির শাহর বোলিং তোপের মুখে পড়েছিল ইংল্যান্ড। ইয়াসির ৭২ রানের বিনিময়ে ছয় উইকেট শিকার করলে ইংল্যান্ড ২৭২ রানে গুটিয়ে যায়। বোলিংয়ের পাশাপাশি ব্যাট হাতেও অবদান রেখেছিলেন ক্রিস ওকস। শেষপর্যন্ত ৩৫ রানে অপরাজিত থেকে রানের ব্যবধান কমিয়েছিলেন তিনি।

পাকিস্তানের বিপক্ষে প্রথম ইনিংসে পাঁচ উইকেট শিকার করে অনার্স বোর্ডে নাম লেখান ওকস; Image Source: Getty Images

প্রথম ইনিংসের মতো দ্বিতীয় ইনিংসেও পাকিস্তানের রানের চাকা টেনে ধরেন ওকস। চতুর্থ পেসার হিসাবে বল করতে এসে ১৮ ওভারে মাত্র ৩২ রান খরচায় পাঁচ উইকেট শিকার করেছিলেন। পাকিস্তান একপর্যায়ে ছয় উইকেটে ২০৮ রান থেকে ২১৫ রানে সবকটি উইকেট হারায় তার বোলিং তোপের মুখে পড়ে। অবশ্য তার অসাধারণ বোলিংয়ের পরেও লর্ডস টেস্টে জয়ের মুখ দেখেনি ইংল্যান্ড। প্রথম ইনিংসের লিডসহ পাকিস্তান ২৮৩ রানের টার্গেট দিলে ২০৭ রানে গুটিয়ে যায় তারা। দ্বিতীয় ইনিংসেও ব্যাট হাতে প্রতিরোধ গড়েছিলেন ওকস। তিনি ১০৮ বলে ২৩ রান করে শেষপর্যন্ত লড়াই চালিয়ে গিয়েছিলেন।

দ্বিতীয় ইনিংসেও পাঁচ উইকেট শিকার করেছিলেন ওকস; Image Source: Getty Images

ইংল্যান্ড বনাম ভারত, ২০১৮ 

লর্ডসে পাকিস্তানের বিপক্ষে প্রথম ইনিংসে ছয়টি এবং দ্বিতীয় ইনিংসে পাঁচ উইকেট শিকার করে অনার্স বোর্ডে নাম লিখিয়েছিলেন ক্রিস ওকস। এরপর ভারতের বিপক্ষে ২০১৮ সালের ১০ আগস্ট অনুষ্ঠিত লর্ডস টেস্টে শতক হাঁকিয়ে অনার্স বোর্ডে নাম লেখান তিনি। সেই সাথে নবম ক্রিকেটার হিসাবে অনার্স বোর্ডে দুই তালিকাতেই জায়গা করে নেওয়ার কীর্তি গড়েন তিনি। ভারতের বিপক্ষে লর্ডসে টসে জিতে প্রথমে ফিল্ডিং করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল ইংল্যান্ড। ব্যাটিংয়ের আমন্ত্রণ পেয়ে জেমস অ্যান্ডারসন ও ক্রিস ওকসদের বোলিং তোপের মুখে পড়ে মাত্র ১০৭ রানে গুটিয়ে যায় ভারত। অ্যান্ডারসন পাঁচটি এবং ওকস দুই উইকেট শিকার করেন।

অনবদ্য শতক হাঁকানোর পর উদযাপন করছেন ওকস; Image Source: Getty Images

ভারতের ১০৭ রানের জবাবে ইংল্যান্ডের শুরুটাও খুব একটা ভালো হয়নি। তারা ১৩১ রান তুলতে পাঁচ উইকেট হারিয়ে বসে। তারপর ৬ষ্ঠ উইকেট জুটিতে দলের হাল ধরেন জনি বেয়ারস্টো এবং সাত নাম্বারে ব্যাট করতে নামা ক্রিস ওকস। বেয়ারস্টো ৯৩ রান করে ফিরে গেলে তাদের ১৮৯ রানের জুটি ভাঙে। তার বিদায়ের পরেও দলকে বড় লিড এনে দিতে ভুল করেননি ওকস। ক্যারিয়ারের প্রথম টেস্ট শতক হাঁকিয়ে ১৩৭ রানে অপরাজিত ছিলেন। শেষপর্যন্ত ইংল্যান্ড সাত উইকেটে ৩৯৬ রান করে ইনিংস ঘোষণা করে।

দ্বিতীয় ইনিংসে ২৮৯ রানে পিছিয়ে থেকে ব্যাট করতে নেমে আবারও অ্যান্ডারসন, ব্রডদের বোলিং তোপের মুখে পড়ে ১৩০ রানে গুটিয়ে যায় ভারতের দ্বিতীয় ইনিংস। ব্যাট হাতে অপরাজিত ১৩৭ রানের ইনিংস খেলার পাশাপাশি দুই ইনিংসে দুটি করে মোট চার উইকেট শিকার করে দলের ইনিংস ও ১৫৯ রানের জয়ে বড় অবদান রাখার সুবাদে ম্যাচসেরার পুরস্কার জেতেন ক্রিস ওকস।

ইংল্যান্ড বনাম আয়ারল্যান্ড

প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপের শিরোপা ঘরে তোলার পর লর্ডসে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে একমাত্র টেস্ট খেলতে মাঠে নামে ইংল্যান্ড। টেস্ট ক্রিকেটের নবাগত দল আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে টসে জিতে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেয় ইংল্যান্ড। তাদের ব্যাটিংয়ে স্পষ্ট ছিল যে, এখনও বিশ্বকাপের আমেজ কাটেনি তাদের। তাই তো মাত্র ২৩.৪ ওভারে ৮৫ রানে গুটিয়ে যায় তারা। ক্রিস ওকস শূন্য রান করে সাজঘরে ফিরেছিলেন। জবাবে আয়ারল্যান্ড নিজেদের ইনিংস ভালোভাবে শুরু করার পরেও ২০৭ রানে সবকটি উইকেট হারায়। ইংল্যান্ডের তিন পেসার স্টুয়ার্ট ব্রড, স্যাম কারেন এবং ওলি স্টোন তিনটি করে উইকেট শিকার করলেও ওকস ছিলেন উইকেটশূন্য।

মাত্র ১৭ রানের বিনিময়ে ছয় উইকেট শিকার করেছেন ওকস; Image Source: Getty Images

ক্রিস ওকস নিজের পয়মন্ত লর্ডসে ম্যাচের প্রথম ইনিংসে নিষ্প্রভ থাকার পর জ্বলে ওঠেন দ্বিতীয় ইনিংসে। নাইটওয়াচম্যান জ্যাক লিচের ৯২ রান এবং জেসন রয়ের ৭২ রানের ইনিংসের কল্যাণে ইংল্যান্ড দ্বিতীয় ইনিংসে ৩০৩ রান সংগ্রহ করে জয়ের জন্য আয়ারল্যান্ডকে ১৮২ রানের টার্গেট দেয়।

এই মামুলি লক্ষ্যকে আয়ারল্যান্ডের জন্য পাহাড়সম করে তোলেন ক্রিস ওকস এবং স্টুয়ার্ট ব্রড। তারা ১৫.৪ ওভারে মাত্র ৩৮ রানে আয়ারল্যান্ডের সবকটি উইকেট তুলে নেন। ওকস লর্ডসে তৃতীয়বারের মতো ইনিংসে পাঁচ উইকেট শিকার করেন। তিনি ৭.৪ ওভারে মাত্র ১৭ রানের বিনিময়ে ছয় উইকেট শিকার করেছেন। লর্ডসে তার চেয়ে বেশিবার ইনিংসে পাঁচ উইকেট শিকার করেছেন শুধুমাত্র চারজন বোলার। টেস্ট দলে এখনও নিজের জায়গা পাকাপোক্ত করতে না পারলেও লর্ডসে খেলা হলে তার নাম সবার আগে আলোচনায় উঠে আসবে। তার প্রিয় মাঠ বলে কথা।

This article is in Bangla language. It is about the Chris Woakes Test Performance at Lord's. For references please check the hyperlinks inside the article.

Featured Image: Getty Images

Related Articles