২০০৬ সালে বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো টেস্ট খেলতে আসে অস্ট্রেলিয়া। এর আগে ২০০৩ সালে বাংলাদেশের বিপক্ষে নিজেদের মাটিতে দুটি টেস্ট ম্যাচ খেলেছিল তারা। দুই ম্যাচেই বাংলাদেশকে ইনিংস ব্যবধানে হারিয়েছিল অস্ট্রেলিয়া। বাংলাদেশের মাটিতে প্রথমবারের মতো খেলার আগের বছর ২০০৫ সালে একদিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচে হারের স্বাদ পেয়েছিল বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা। হারের ক্ষত তখনো মুছেনি। তাই কোনো প্রকার ঝুঁকি না নিয়ে পূর্ণশক্তির দলে নিয়েই বাংলাদেশ সফরে আসে অস্ট্রেলিয়া। বিশ্বসেরা লেগ স্পিনার শেন ওয়ার্নের পাশাপাশি দ্বিতীয় স্পিনার হিসাবে দলে ছিলেন স্টুয়ার্ট ম্যাকগেইল। পেস অ্যাটাকও যথেষ্ট শক্তিশালী ছিল সফরকারীদের।
ফতুল্লাতে সিরিজের প্রথম টেস্টে টসে জিতে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ। ওপেনিংয়ে ব্যাট করতে নামেন শাহরিয়ার নাফিস এবং জাভেদ ওমর। শুরু থেকেই দুই ওপেনার অজি বোলারদের উপর চড়াও হন। ওয়ানডে মেজাজে খেলে উদ্বোধনী উইকেট জুটিতে তুলে নেন ৫১ রান।
লেখার মূল বিষয় ফতুল্লা টেস্টে অল্পের জন্য অস্ট্রেলিয়া বধ করতে না পারা কিংবা অস্ট্রেলিয়া বনাম বাংলাদেশের দ্বিপাক্ষিক টেস্ট সিরিজ নিয়ে নয়। দুই ওপেনারের একজন শাহরিয়ার নাফিসকে নিয়েই আজকের লেখা। ফতুল্লা টেস্টে শাহরিয়ার নাফিস প্রথম সেশনে ব্রেট লি, স্টুয়ার্ট ক্লার্ক এবং গিলেস্পিদের পেস অ্যাটাক ভালোভাবেই সামাল দেন। ম্যাচের সময় বাড়ার সাথে সাথে অ্যাটাকে আসেন শেন ওয়ার্ন এবং ম্যাকগেইল। অকুতোভয় নাফিস মাঠের চারদিকেই সাবলীলভাবে খেলে যাচ্ছেন। সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়ে ফতুল্লা টেস্টের প্রথম ইনিংসে ১৮৯ বলে ১৯টি চারের মারে করলেন ১৩৮ রান। অধিনায়ক হাবিবুল বাশারকে সাথে নিয়ে দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে যোগ করেছিলেন ১৮৭ রান। একপর্যায়ে বাংলাদেশের সংগ্রহ ছিল ১ উইকেটে ২৩৮ রান।
দুর্দান্ত ছন্দে থাকা শেন ওয়ার্নকে সাদামাটা বোলার বানিয়ে তুলোধুনো করছিলেন শাহরিয়ার নাফিস। ২০০৫ সালে ৯৬ উইকেট নিয়ে বিশ্বরেকর্ড গড়া ওয়ার্ন প্রথম ইনিংসে ২০ ওভারে ১১২ রান দিয়ে ছিলেন উইকেট শূন্য। দ্বিতীয় স্পিনার স্টুয়ার্ট ম্যাকগেইল দলে না থাকলে আরো বড় বিপদে পড়তে পারত অস্ট্রেলিয়া। ওয়ার্ন দলে থাকলে ম্যাকগেইলকে বেশিরভাগ সময়ই সাইড বেঞ্চে বসে কাটিয়ে দিতে হতো। ফতুল্লা টেস্টে সুযোগ পেয়েই দুই হাতে লুফে নিলেন তিনি। বড় সংগ্রহের দিকে এগুতে থাকা বাংলাদেশকে ৪২৭ রানেই বেঁধে রাখেন ম্যাকগেইল। প্রথম ইনিংসে ১০৮ রানের বিনিময়ে শিকার করেছিলেন ৮ উইকেট।
ফতুল্লা টেস্টে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদেরকে টেস্টে হারানোর বড় সুযোগ ছিল বাংলাদেশের। কিন্তু দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটসম্যানদের ব্যাটিং ব্যর্থতা এবং অ্যাডাম গিলক্রিস্ট ও রিকি পন্টিংয়ের ভিন্ন দুই ইনিংসে দুটি অতিমানবীয় স্কোরের কল্যাণে ৩ উইকেটের জয় তুলে নিয়েছিল অজিরা। বাংলাদেশ দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়লেও শাহরিয়ার নাফিস ৩৩ রান করে দলের টপ স্কোরার ছিলেন। পুরো টেস্ট জুড়েই তার ব্যাটিং প্রতিভায় মুগ্ধ হয়েছিল সবাই।
শাহরিয়ার নাফিসের ওডিআই ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে ২১শে জুন ২০০৫ সালে। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে নিজের অভিষেক ম্যাচে ১০ রান করে ফিরে গেলেও পরের ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে নিজের সামর্থ্যের প্রমাণ দেন, ৫৭ বলে খেলেন ৪৭ রানের ইনিংস। ওডিআইতে নিজের প্রথম অর্ধশতকও তুলে নেন অজিদের বিপক্ষে। ক্যারিয়ারের চতুর্থ এবং অজিদের বিপক্ষে দ্বিতীয় একদিনের ম্যাচে ১১৬ বলে করেন ৭৫ রান। নিরপেক্ষ ভেন্যু ক্যান্টারবেরিতে ঐ ম্যাচে শাহরিয়ার নাফিসের ৭৫ রান এবং খালেদ মাসুদের ৭১* রানের উপর ভর করে বাংলাদেশ ২৫০ রান সংগ্রহ করেছিল। জবাবে রিকি পন্টিংয়ের ৬৬ এবং মাইকেল ক্লার্কের অপরাজিত ৮০* রানের উপর ভর করে ৬ উইকেট হাতে রেখে জয় তুলে নেয় অজিরা। মাইকেল ক্লার্ক ম্যাচজয়ী অপরাজিত ৮০* রানের ইনিংস খেললেও ঐদিন ম্যাচ সেরার পুরস্কার উঠে শাহরিয়ার নাফিসের হাতে।
২০০৫ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বাংলাদেশের ৪৩তম ক্রিকেটার টেস্ট এবং একই বছর ইংল্যান্ডের বিপক্ষে বাংলাদেশের ৭৬তম ক্রিকেটার হিসাবে ওয়ানডে ক্রিকেটে যাত্রা শুরু করেন শাহরিয়ার নাফিস। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের অভিষেক বছরে ৭টি ওডিআই ম্যাচে দুটি অর্ধশতকের সাহায্যে ২৫৪ রান করে বুঝিয়ে দেন হারিয়ে যেতে আসেননি তিনি। ২০০৬ সালটা কাটিয়েছেন স্বপ্নের মতো। তখনো বাংলাদেশ সমীহ পাওয়ার মতো দল হয়ে উঠতে পারেনি। জিম্বাবুয়ে, কেনিয়া তখনো বাংলাদেশের সাথে সমানে-সমানে লড়াই করতো এবং বড় দলের বিপক্ষে জয় পেলে ক্রিকেট বিশ্ব সেই জয়কে দুর্ঘটনা হিসাবে দেখতো।
শাহরিয়ার নাফিস একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রথম সেঞ্চুরি হাঁকান জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে হারারেতে। ঐ ম্যাচে বাংলাদেশের হয়ে প্রথম ওডিআই ম্যাচ খেলেন সাকিব আল হাসান এবং মুশফিকুর রহিম। জিম্বাবুয়ের দেওয়া ১৯৮ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে শাহরিয়ার নাফিসের অপরাজিত ১১৮ রানের উপর ভর করে সহজ জয় পেয়েছিল বাংলাদেশ। তখন জিম্বাবুয়েকে হারানো ততটা সহজ ছিল না। ঐ ম্যাচের আগে বাংলাদেশ ৫ ম্যাচের সিরিজে ৩-১ এ পিছিয়ে ছিল।
শাহরিয়ার নাফিস ওডিআইতে প্রথম সেঞ্চুরি হাঁকানোর আগেও বেশ কয়েকটি মাঝারি মানের ইনিংস খেলেছিলেন। কিন্তু বড় ইনিংস খেলতে পারেননি। সেঞ্চুরির পর ধারাবাহিকভাবে রান পেতে থাকেন তিনি। ২০০৬ সালে অনুষ্ঠিত চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে তাকে সহ-অধিনায়ক ঘোষণা করেছিল বাংলাদেশ। সবকিছুই ঠিকঠাক মতো এগুচ্ছিল। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত ক্রিজে থেকে ১২৩* রানের ইনিংস খেলে বাংলাদেশকে বড় জয় তুলে নিতে প্রধান ভূমিকা পালন করেছিলেন নাফিস।
চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির পর জিম্বাবুয়ে বাংলাদেশ সফরে আসে। খুলনাতে সিরিজের প্রথম ম্যাচেই জিম্বাবুয়ে বিপক্ষে ১০৫* রানের ইনিংস খেলেন নাফিস। সেইসাথে বাংলাদেশের প্রথম ব্যাটসম্যান হিসাবে ব্যাক টু ব্যাক দুটি শতক হাঁকানোর কৃতিত্ব গড়েন। ২০০৬ সালে শাহরিয়ার নাফিস ছিলেন অপ্রতিরোধ্য। ঐ বছর তিনি ২৮টি একদিনের ম্যাচে ৪১.৩২ ব্যাটিং গড়ে ১০৩৩ রান করেছিলেন। বাংলাদেশের কোনো ব্যাটসম্যান এর আগে এক পঞ্জিকাবর্ষে সহস্রাধিক রান করতে পারেননি। এমনকি এখন পর্যন্ত আর কোনো ব্যাটসম্যান নাফিসের পাশে নাম লেখাতে পারেননি।
২০০৬ সালের অনবদ্য নৈপুণ্যের কারণে সে বছর আইসিসির সেরা উদীয়মান ক্রিকেটারের সংক্ষিপ্ত তালিকাতে এসেছিলেন। এছাড়া বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড থেকে বর্ষসেরা ক্রিকেটার এবং বর্ষসেরা ব্যাটসম্যানের অ্যাওয়ার্ড জিতেছিলেন। সেবারে গ্রামীণফোন-প্রথম আলো বর্ষসেরা ক্রীড়াব্যক্তিত্ব নির্বাচিত হন নাফিস। ২০০৬ সালে বাংলাদেশ প্রথম আন্তর্জাতিক টি-টুয়েন্টি ম্যাচ খেলে। সেই ম্যাচে বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দেন শাহরিয়ার নাফিস। তার নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ প্রথম আন্তর্জাতিক টি-টুয়েন্টি ম্যাচ জয়লাভ করে।
২০০৬ সাল যেখানে শেষ করেছেন ২০০৭ সালে সেখান থেকেই শুরু করেন। বিশ্বকাপের আগে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সেন্ট জোন্সে ওডিআই ক্যারিয়ারের চতুর্থ সেঞ্চুরি হাঁকান বারমুডার বিপক্ষে। কিন্তু বিশ্বকাপে ছিলেন নিষ্প্রভ, ৬ ম্যাচে তার ব্যাট থেকে এসেছিল মাত্র ৩১ রান। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রথম বছরে ভালো খেলা ক্রিকেটারদের সবচেয়ে বড় পরীক্ষা ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় বছরটি। এমন অনেক ক্রিকেটার আছে ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় বছরে এসে আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলেছেন। যার প্রভাব তাদের মাঠের পার্ফরমেন্সেও প্রতিফলিত হয়।
শাহরিয়ার নাফিস একদিক থেকে নিজেকে অভাগা ভাবতেই পারেন। ২০০৬ সালে দুর্দান্ত পার্ফরমেন্স এবং দেশের প্রথম টি-টুয়েন্টি ম্যাচে অধিনায়ক থাকার পরেও তাকে ২০০৭ সালে প্রথম টি-টুয়েন্টি বিশ্বকাপে ৩০ জনের প্রাথমিক দলেও রাখা হয়নি। খুব অল্পতেই তার উপর থেকে বিশ্বাস হারিয়ে ফেলেছিলেন নির্বাচকরা। সেই থেকে শুরু। দেশসেরা ব্যাটসম্যান হওয়ার পরের বছর থেকেই তাকে কয়েক ম্যাচ খারাপ খেললেই সাইড বেঞ্চে বসে কাটিয়ে দিতে হয়।
বিশ্বকাপের পর শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডেতে ৩৩ রান করার পর দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ৬ রান করে আউট হওয়ার কারণে তাকে পরের ম্যাচে বাদ দেওয়া হয়। প্রেক্ষাপট ক্রমশ ঘোলাটে হতে শুরু করে। ২০০৮ সালে বাংলাদেশ সফরে আসে পাকিস্তান। শাহরিয়ার নাফিস প্রথম ম্যাচে রান না পাওয়ার কারণে তাকে পুরোটা সিরিজ মাঠের বাহিরে রাখা হয়। কিন্তু ঐ বছর আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে নিজেদের সর্বশেষ হোম সিরিজেও শাহরিয়ার নাফিস ৯০*, ৬০ এবং ৫৪ রানের ইনিংস খেলেছিলেন। এখানেই শেষ নয়। একই বছর ভারতও বাংলাদেশ সফরে আসে। ঐ সিরিজেও নাফিসকে মাত্র ১টি ওডিআই খেলার সুযোগ দেওয়া হয়।
মাত্র এক বছরের ব্যবধানে তাকে কয়েক ম্যাচ খেলিয়েই বাদ দেওয়ার কারণে ভেতর ভেতর একটা ক্ষোভ কাজ করে। সেখান থেকে নিজেকে প্রমাণ করার জন্য খুঁজছিলেন একটা প্লাটফর্ম। শেষ পর্যন্ত বেছে নেন ইন্ডিয়ান ক্রিকেট লীগকে। এই টুর্নামেন্ট নিয়ে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের সাথে ঝামেলা ছিল, তাই বিসিসিআই এই টুর্নামেন্টকে স্বীকৃতি দেয়নি। শুধুমাত্র শাহরিয়ার নাফিস নন, হাবিবুল বাশারের নেতৃত্বে বাংলাদেশ থেকে একটি দল যায় সেখানে। এছাড়াও বিশ্বনন্দিত অনেক ক্রিকেটার ঐ টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণ করেছিলেন। আইসিএলে ঠিকই নিজেকে প্রমাণ করতে পেরেছিলেন শাহরিয়ার নাফিস। ১০ ম্যাচ খেলে ৪২.৬২ ব্যাটিং গড়ে করেছিলেন ৩৪১ রান।
পরে বিসিসিআই এবং আইসিসি এই টুর্নামেন্টকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডও ঐখানে যাওয়া সব ক্রিকেটারকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। পরে অবশ্য তাদের নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়। শাহরিয়ার নাফিসরা যখন আইসিএল খেলতে যান তখন সেটা নিষিদ্ধ ছিলনা। ঐ টুর্নামেন্টের সাথে জড়িত ছিলেন ভারতের বিশ্বকাপ জেতানো নায়ক কপিল দেবের মতো সাবেক ক্রিকেটাররা। শাহরিয়ার নাফিস পুনরায় জাতীয় দলে ফিরে আসলেও ইনজুরি, অফ ফর্মের কারণে দলে থিতু হতে পারেননি। ২০১১ বিশ্বকাপে ২ ম্যাচ খেলার সুযোগ পেয়েছিলেন। একম্যাচে ৩৭ এবং আরেক ম্যাচে ৫ রান করেছিলেন।
বিশ্বকাপ শেষে অস্ট্রেলিয়া বাংলাদেশ সফরে আসে। সিরিজের তিনটে ম্যাচেই শাহরিয়ার নাফিস খেলেন। প্রথম ম্যাচে শূন্য রানে ফিরে গেলেও পরের দুই ম্যাচে করেন ৬০ এবং ৫৬ রান। ঐ বছর টানা ৬টি ওয়ানডেতে ব্যর্থ হওয়ার পর তাকে আর ওয়ানডে খেলার সুযোগ দেওয়া হয়নি।
টেস্ট ক্রিকেটেও ছিলেন আসা-যাওয়ার মধ্যে। ২০১১ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে ঢাকা টেস্টে ৯৭ রান করার পর নিজের শেষ ৬ টেস্ট ইনিংসের সবকটিতে উইকেটে সেট হয়ে আউট হয়েছেন। এই ইনিংসগুলোতে যথাক্রমে ৩১, ২৩, ২৬, ২১, ২৯ এবং ১১ রান করেছিলেন। টেস্ট দলেও তাকে নিয়মিত রাখা হয়নি। ২০১৩ সালে হারারেতে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে শেষ টেস্ট ম্যাচ খেলেছিলেন।
জাতীয় দলে আসা-যাওয়ার মধ্যে থাকলেও দেশের প্রথম বিগ বাজেটের টুর্নামেন্ট বিপিএলে তাকে বরিশাল অঞ্চলের আইকন ক্রিকেটার হিসাবে নির্ধারণ করা হয়। বিপিএলের দ্বিতীয় আসরে প্রথম বাংলাদেশি ব্যাটসম্যান হিসাবে সেঞ্চুরি করেন শাহরিয়ার নাফিস। খুলনার হয়ে রাজশাহীর বিপক্ষে খেলেন ১০২* রানের ইনিংস। বিপিএলের বেশ কয়েকটি রেকর্ডের সাথে শাহরিয়ার নাফিসের নাম জড়িয়ে আছে। লু ভিনসেন্টকে সাথে নিয়ে উদ্বোধনী উইকেট জুটিতে ১৯৭* রান, ডেভিড মালানের সাথে দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে ১৫০ রান এবং সাব্বির রহমানের সাথে তৃতীয় উইকেট জুটিতে ১২৪ রান যোগ করেছেন বিপিএলে। বিপিএলে প্রথম, দ্বিতীয় এবং তৃতীয় উইকেট জুটিতে এগুলো সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড।
জাতীয় দলের বাহিরে থাকলেও বর্তমানে পার করছেন ক্যারিয়ারের সেরা সময়। ঘরোয়া ক্রিকেটে লীগে রানের ফোয়ারা ছোটাচ্ছেন। ২০১৫ সালে প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে ৭১.২৫ ব্যাটিং গড়ে করেছিলেন ১,৭১০ রান। চলতি বছরেও এখন পর্যন্ত ৬৭.১১ ব্যাটিং গড়ে করেছেন ৬০৪ রান।
পরিসংখ্যানে শাহরিয়ার নাফিস
শাহরিয়ার নাফিস এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের হয়ে ৭৫টি আন্তর্জাতিক একদিনের ম্যাচ খেলে ৩১.৪৪ ব্যাটিং গড়ে করেছেন ২,২০১ রান। এইবার আসা যাক একটা মজার পরিসংখ্যানে। শাহরিয়ার নাফিস বাংলাদেশের হয়ে যে ৭৫টি একদিনের ম্যাচ খেলেছেন সেখানে বাংলাদেশ ৩৯টি ম্যাচে টসে জিতেছে এবং ৩৬টি তে টসে হেরেছে। প্রতিপক্ষ দল যে ৩৬টি ম্যাচে টসে জিতেছে সেই ৩৬ ম্যাচে শাহরিয়ার নাফিস ৩৯.২৫ ব্যাটিং গড়ে ১,২১৭ রান করেছেন। তার ওডিআই ক্যারিয়ারের সবকটি সেঞ্চুরি এসেছে বাংলাদেশ যেসব ম্যাচে টসে হেরেছিল সেগুলোতে!
শাহরিয়ার নাফিসের খেলা ৭৫টি একদিনের ম্যাচের মধ্যে বাংলাদেশ ৩৪টি ওডিআইতে জয় পেয়েছিল। সেই ৩৪ ম্যাচে নাফিস ৪৮.৯৩ ব্যাটিং গড়ে ১,৪১৯ রান করেছিলেন।
শাহরিয়ার নাফিস নিজের শেষ লিস্ট-এ ম্যাচে রুপগঞ্জের বিপক্ষে ৩১ রান করার পথে লিস্ট-এ ক্রিকেটে ৪ হাজার রানের মাইলফলক অতিক্রম করেন। এখন পর্যন্ত ১৪৫টি লিস্ট-এ ম্যাচে ২৯.৫৭ ব্যাটিং গড়ে ৪,০২২ রান করেছেন।
নাফিসের টেস্ট ক্রিকেটে উল্লেখযোগ্য অর্জনের মধ্যে একটি হলো, বাংলাদেশের একমাত্র ব্যাটসম্যান হিসাবে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে শতক হাঁকানো। বাংলাদেশের হয়ে ২০১৩ সালে সর্বশেষ টেস্ট ম্যাচ খেলা নাফিস ২৪টি টেস্টে ২৬.৩৯ ব্যাটিং গড়ে ১,২৬৭ রান করেছেন।
প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটেও নিজের শেষ ইনিংসে ২০৭* রানের ইনিংস খেলার পথে ৭ হাজার রানের মাইলফলক অতিক্রম করেন। এখন পর্যন্ত ১০২ ম্যাচে ৪০.০২ ব্যাটিং গড়ে ৭,০৪৪ রান করেছেন। প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে ১৩টি শতক এবং ৪১টি অর্ধশতক হাঁকিয়েছেন।
১৯৮৫ সালের পহেলা মে তে জন্মগ্রহণ করা শাহরিয়ার নাফিসের বর্তমান বয়স ৩২ বছর। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে যা ক্যারিয়ারের শেষ পর্যায়। কিন্তু বিশ্ব ক্রিকেটে ৩২ বছরের পরেও অনেক ব্যাটসম্যান মাঠ কাঁপিয়ে গেছেন। শাহরিয়ার নাফিস এখনও ধৈর্য নিয়ে খেলে যাচ্ছেন, দারুণ পার্ফরমেন্স দিয়ে আবারও জাতীয় দলে খেলার সুযোগের অপেক্ষায় আছেন।