টেস্ট ক্রিকেটে একজন বোলারের স্বপ্ন থাকে ম্যাচে দশ উইকেট শিকার করা, এবং একজন ব্যাটসম্যান চায় তার নামের পাশে তিন সংখ্যার রান থাকুক, যার শুরুটা হবে দুই দিয়ে। টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে এখন পর্যন্ত ১৮৯জন ব্যাটসম্যান দ্বিশতক হাঁকিয়েছেন এবং ২১৭জন বোলার ম্যাচে দশ উইকেট শিকারের কৃতিত্ব অর্জন করেছেন। এরমধ্যে মাত্র ছয়জন ক্রিকেটারের দুই তালিকাতেই নাম রয়েছে। তারা তাদের ক্যারিয়ারে দ্বিশতক হাঁকানোর পাশাপাশি ম্যাচে দশ উইকেটও শিকার করেছেন। এই ছয়জনের মধ্যে কয়েকজন ক্রিকেটার রয়েছেন, যারা স্বীকৃত অলরাউন্ডার হিসেবে পরিচিত নন। যেকোনো একটি ডিপার্টমেন্টে পারদর্শিতার কারণে তাদের নামডাক।
টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে দ্বিশতক হাঁকানোর পাশাপাশি এক ম্যাচে দশ উইকেট শিকার করা ক্রিকেটারদের সম্পর্কে জেনে আসা যাক।
ভিনু মানকড় (ভারত)
ভারতের অলরাউন্ডার ভিনু মানকড় ৪৪টি টেস্ট ম্যাচ খেলেছিলেন। তিনি তার টেস্ট ক্যারিয়ারে দু’টি দ্বিশতক হাঁকানোর পাশাপাশি দুইবার ম্যাচে দশ উইকেট শিকার করেছিলেন। তিনিই প্রথম ক্রিকেটার হিসাবে এই ডাবল পূর্ণ করেছিলেন। চেন্নাইতে ১৯৫২ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ১০৮ রানের বিনিময়ে ১২ উইকেট শিকার করেছিলেন বাঁহাতি অর্থোডক্স স্পিনার ভিনু মানকড়। একই বছরের ১৬ অক্টোবর দিল্লীতে পাকিস্তানের বিপক্ষে ১৩১ রানের বিনিময়ে ১৩ উইকেট শিকার করেছিলেন।
ভিনু মানকড় বাঁহাতে বোলিং করলেও ব্যাট করতেন ডান হাতে। ব্যাটসম্যান হিসেবেও তিনি বেশ সফল ছিলেন। টেস্ট ক্রিকেটে তার নামের পাশে পাঁচটি শতক রয়েছে। এর মধ্যে দু’টিকে দ্বিশতকে পরিণত করেছেন তিনি। তার ক্যারিয়ারের প্রথম দ্বিশতক আসে নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে ১৯৫৫ সালের ২ ডিসেম্বর। কিউইদের বিপক্ষে মুম্বাইতে তিনি ২২৩ রানের ইনিংস খেলেছিলেন। এর এক ম্যাচ পর চেন্নাইতে একই প্রতিপক্ষের বিপক্ষে ক্যারিয়ারসেরা ২৩১ রানের ইনিংস খেলেছিলেন মানকড়।
সেসময়কার সেরা অলরাউন্ডারদের একজন ছিলেন ভিনু মানকড়। তিনি ভারতের হয়ে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে ১৯৫৯ সাল পর্যন্ত মোট ৪৪টি টেস্ট ম্যাচ খেলে পাঁচটি শতক এবং ছয়টি অর্ধশতকের সাহায্যে ৩১.৪৭ ব্যাটিং গড়ে ২,১০৯ রান সংগ্রহ করেছিলেন। বল হাতে ৩২.৩২ বোলিং গড়ে ১৬২ উইকেট শিকার করেছিলেন। ইনিংসে পাঁচ উইকেট শিকার করেছেন আটবার এবং ম্যাচে দশ উইকেট শিকার করেছেন দুইবার।
স্যার ইয়ান বোথাম (ইংল্যান্ড)
গত শতকের আশির দশকে ইমরান খান, রিচার্ড হ্যাডলি, কপিল দেব এবং ইয়ান বোথাম ব্যাটে-বলে দুর্দান্ত নৈপুণ্য প্রদর্শন করে ক্রিকেট বিশ্বে নিজেদের নাম স্বর্ণাক্ষরে লিখে রেখেছেন। অলরাউন্ডার হিসাবে চারজনই দলের প্রাণভোমরা ছিলেন। ইয়ান বোথামের সময়কার বাকি তিনজন অলরাউন্ডার তাদের ক্যারিয়ারে বেশ কয়েকবার ম্যাচে দশ উইকেট শিকার করলেও কখনও দ্বিশতক হাঁকাতে পারেননি। একমাত্র তিনিই দ্বিশতক এবং ম্যাচে দশ উইকেট শিকারের কীর্তি গড়েছিলেন।
ইয়ান বোথাম টেস্ট ক্রিকেটে ১৪টি শতক হাঁকিয়েছেন, এর মধ্যে একটি ছিল দ্বিশতক। ১৯৮২ সালে ৮ জুলাই ভারতের বিপক্ষে দ্য ওভালে ২২৬ বলে ১৯টি চার এবং চারটি ছয়ের মারে ২০৮ রানের ইনিংস খেলেছিলেন, যা টেস্ট ক্রিকেটে তার একমাত্র ডাবল সেঞ্চুরি। তিনি বল হাতে ম্যাচে দশ উইকেট শিকার করেছেন চারবার। সর্বপ্রথম ১৯৭৮ সালের ২৪শে আগস্ট নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে তিনি ম্যাচে দশ উইকেট শিকার করেছিলেন। ম্যাচে তিনি ১৪০ রানের বিনিময়ে ১১ উইকেট পেয়েছিলেন। এরপর ১৯৭৯ সালের ১৪ ডিসেম্বর অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে পার্থে ১৭৬ রানের বিনিময়ে ১১ উইকেট শিকার করেছিলেন। এর দুই ম্যাচ পর ভারতের বিপক্ষে ১৯৮০ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি মুম্বাইতে ভারতের বিপক্ষে ১০৬ রানের বিনিময়ে ১৩ উইকেট শিকার করেছিলেন, যা তার ক্যারিয়ারসেরা বোলিং বিশ্লেষণ। তার ক্যারিয়ারের চতুর্থ এবং শেষবারের মতো ম্যাচে দশ উইকেট শিকার করেন ১৯৮১ সালের ২৭শে আগস্ট। দ্য ওভালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ২৫৩ রানের বিনিময়ে দশ উইকেট শিকার করেছিলেন তিনি।
ইয়ান বোথাম তার বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারে ১০২টি টেস্ট ম্যাচ খেলেছেন। ১০২ ম্যাচে ১৪টি শতক এবং ২২টি অর্ধশতকের সাহায্যে ৩৩.৫৪ ব্যাটিং গড়ে ৫,২০০ রান করেছিলেন। বল হাতেও তিনি ইংল্যান্ডের সেরা বোলার ছিলেন কয়েক যুগ ধরে। জেমস অ্যান্ডারসন এবং স্টুয়ার্ট ব্রড তাকে টপকানোর আগে ৩৮৩ উইকেট নিয়ে তিনিই ইংল্যান্ডের সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি ছিলেন। ইনিংসে ২৭ বার পাঁচ উইকেট এবং চারবার ম্যাচে দশ উইকেট তুলে নিয়ে ২৮.৪০ বোলিং গড়ে ৩৮৩ উইকেট শিকার করেছিলেন।
অ্যালান বোর্ডার (অস্ট্রেলিয়া)
এই তালিকায় সবচেয়ে আশ্চর্যজনক অন্তর্ভুক্তি হলো অস্ট্রেলিয়ার বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক অ্যালান বোর্ডারের নাম। স্পেশালিষ্ট এই ব্যাটসম্যান অস্ট্রেলিয়ার হয়ে টেস্ট ক্রিকেটে ২৭টি শতক হাঁকিয়েছেন, উইকেট শিকার করেছেন মাত্র ৩৯টি। যার মধ্যে এক ম্যাচেই শিকার করেছেন ১১ উইকেট। শক্তিশালী ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ঐ ম্যাচে ব্যাটে-বলে দুর্দান্ত নৈপুণ্য প্রদর্শন করে অস্ট্রেলিয়াকে জয় এনে দিয়েছিলেন তিনি।
১৯৮৯ সালের ২৬শে জানুয়ারি, সিডনিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজের চতুর্থ টেস্টে মাঠে নেমেছিল অস্ট্রেলিয়া। প্রথমে ব্যাট করা ওয়েস্ট ইন্ডিজের একপর্যায়ে রান সংখ্যা ছিলো এক উইকেট ১৪৪। সেখান থেকে ক্যারিবিয়ানদের ২২৪ রানে গুটিয়ে দেওয়ার কৃতিত্ব বোর্ডারের। তিনি মাত্র ৪৬ রানের বিনিময়ে সাত উইকেট শিকার করেছিলেন। দ্বিতীয় ইনিংসেও তিনি ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্যাটসম্যানদের সামনের আতঙ্ক হয়ে দাঁড়ায়। দ্বিতীয় ইনিংসে ৫০ রানে চার উইকেটসহ ম্যাচে ৯৬ রানের বিনিময়ে ১১ উইকেট শিকার করেছিলেন। ব্যাট হাতেও অস্ট্রেলিয়ার সাত উইকেটের জয়ে অবদান রেখেছিলেন তিনি। প্রথম ইনিংসে ৭৫ রানের ইনিংস খেলার পর দ্বিতীয় ইনিংসে অপরাজিত ১৬ রান করে দলকে জয়ের বন্দরে পৌঁছান।
বাঁহাতি মিডল-অর্ডার ব্যাটসম্যান অ্যালান বোর্ডার অস্ট্রেলিয়ার হয়ে ১৫৬টি টেস্ট ম্যাচ খেলে ২৭টি শতক এবং ৬৩ অর্ধশতকের সাহায্যে ৫০.৫৬ ব্যাটিং গড়ে ১১,১৭৪ রান সংগ্রহ করেছিলেন। তার ২৭টি শতকের মধ্যে দু’টি দ্বিশত রানের ইনিংস রয়েছে। মিডল-অর্ডার ব্যাটসম্যান হিসাবে না খেললে সংখ্যাটা আরও বাড়তে পারতো। তার দুইটি দ্বিশত রানের ইনিংসের মধ্যে প্রথমটি এসেছে প্রতিবেশী নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে। ড্র হওয়া অ্যাডিলেড টেস্টে তিনি ২০৫ রানের ইনিংস খেলেছিলেন। এরপর দ্বিতীয় দ্বিশতকটি হাঁকান চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ইংল্যান্ডের বিপক্ষে। লিডস টেস্টে পাক্কা ২০০ রানে অপরাজিত ছিলেন তিনি, যার কল্যাণে শেষ পর্যন্ত ইনিংস ব্যবধানে জয় পেয়েছিল অস্ট্রেলিয়া।
অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটিং লাইনআপের বিশ্বস্ত এই ব্যাটসম্যান বল হাতে নিয়মিত না হলেও ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ম্যাচে ১১ উইকেট শিকার করে টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে ক্যারিয়ারে দ্বিশত রানের ইনিংস খেলার পাশাপাশি ম্যাচে দশ উইকেট শিকার করা ক্রিকেটারদের সংক্ষিপ্ত তালিকাতে নাম লেখিয়েছেন।
ওয়াসিম আকরাম (পাকিস্তান)
ক্রিকেটের ইতিহাসে এখন পর্যন্ত সেরা পেসার কে? এমন প্রশ্নের উত্তরে ওয়াসিম আকরামের নাম উপরের দিকেই থাকবে। আর যদি প্রশ্ন করা হয়, সেরা বাঁহাতি পেসার কে? তাহলে ওয়াসিম আকরামের নাম তালিকার প্রথমেই থাকবে। পাকিস্তানের এই কিংবদন্তি বোলার টেস্ট ক্রিকেটে ৪১৪টি এবং ওয়ানডেতে ৫০২ উইকেট শিকার করেছেন। ব্যাটসম্যান হিসাবেও সব্যসাচী ওয়াসিম আকরাম বোলিংয়ের পাশাপাশি ব্যাট হাতেও দলের প্রয়োজনে প্রতিরোধ গড়তেন। টেস্ট ক্রিকেটে তার নামের পাশে রয়েছে তিনটি শতক, এর মধ্যে একটি অপরাজিত ২৫৭ রানের ইনিংস।
স্পেশালিষ্ট অলরাউন্ডার হিসাবে তার নামডাক না থাকলেও বোলিং অলরাউন্ডার হিসাবে বেশ কার্যকরী ছিলেন ওয়াসিম আকরাম। টেল-এন্ডারে নেমে সেদিন জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সাকলাইন মুশতাকের সহায়তায় ক্যারিয়ারের একমাত্র দ্বিশতকও তুলে নেন।
১৯৯৬ সালের ১৭ অক্টোবর, পাকিস্তানের বিপক্ষে টসে জিতে প্রথমে ব্যাট করে ৩৭৫ রান সংগ্রহ করেছিল জিম্বাবুয়ে। জবাবে পাকিস্তান ১৮৩ রান তুলতেই ছয় উইকেট হারিয়ে বসে। সেখান থেকে দলকে টেনে তুলেন ওয়াসিম আকরাম। ৮ম ব্যাটসম্যান হিসাবে ক্রিজে নেমে ৩৬৩ বলে ২২টি চার এবং ১২টি ছয়ের মারে অপরাজিত ২৫৭ রানের ইনিংস খেলে দলকে ৫৫৩ রানের সংগ্রহ এনে দেন তিনি। শেষ পর্যন্ত ম্যাচটি অমীমাংসিতভাবে শেষ হয়েছিলো।
ওয়াসিম আকরাম ১০৪ টেস্ট ৪১৪ উইকেট শিকার করেছিলেন। এর মধ্যে ২৫ বার ইনিংসে পাঁচ উইকেট এবং পাঁচবার ম্যাচে দশ উইকেট শিকার করেছেন। ক্যারিয়ারে প্রথমবারের মতো ম্যাচে দশ উইকেট শিকার করেছিলেন নিজের দ্বিতীয় টেস্ট ম্যাচেই। ১৯৮৫ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি, ১৯ বছর বয়সী ওয়াসিম আকরাম নিজের দ্বিতীয় টেস্ট ম্যাচে স্বাগতিক নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে মাত্র ১২৮ রানের বিনিময়ে দশ উইকেট শিকার করেছিলেন। তিনি পাঁচবারের মধ্যে চারবার উপমহাদেশের বাহিরের দেশগুলোতে ম্যাচে দশ উইকেট শিকার করেছেন। নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়েলিংটন এবং ডানেডিনে, অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে মেলবোর্নে এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সেন্ট জোন্সে ম্যাচে দশ উইকেট শিকার করেছিলেন।
সাকিব আল হাসান (বাংলাদেশ)
গত এক যুগ ধরে ব্যাটে-বলে বাংলাদেশের প্রধান ভরসা সাকিব আল হাসান। তিনি একই সময়ে ক্রিকেটের তিন ফরম্যাটে বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার হিসেবে রাজত্ব করেছেন বহুদিন। ইতঃমধ্যে অনেক কিংবদন্তি অলরাউন্ডারদের রেকর্ডে ভাগ বসিয়েছেন তিনি, যার মধ্যে একটি হলো টেস্ট ক্যারিয়ারে দ্বিশতক হাঁকানোর পাশাপাশি ম্যাচে দশ উইকেট শিকার করা। এই তালিকাতে বেশ কয়েকজন আনকোরা অলরাউন্ডারের নাম রয়েছে। অনেক কিংবদন্তি অলরাউন্ডারও এই তালিকায় নিজেদের নাম লেখাতে পারেননি। কিন্তু সাকিব আল হাসান অন্য সব রেকর্ডের মতো এই রেকর্ডেও ভাগ বসিয়েছেন।
সাকিব আল হাসান টেস্ট ক্যারিয়ারে প্রথমবারের মতো ম্যাচে দশ উইকেট শিকার করেছিলেন ২০১৪ সালের ৩রা নভেম্বর। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে খুলনাতে ১২৪ রানের বিনিময়ে দশ উইকেট শিকার করেছিলেন। এরপর ক্যারিয়ারের প্রথম এবং একমাত্র দ্বিশতক হাঁকিয়েছিলেন ২০১৭ সালে নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে। ওয়েলিংটনে ২০১৭ সালের ১২ জানুয়ারি শুরু হওয়া টেস্ট ম্যাচের প্রথম ইনিংসে ২৭৬ বলে ৩১টি চারের মারে ২১৭ রানের ইনিংস খেলেছিলেন তিনি।
নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে দ্বিশতক হাঁকানোর পর সাকিব আল হাসান অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ঢাকাতে ১৫৩ রানের বিনিময়ে দশ উইকেট শিকার করেছিলেন। তিনি যে দুই ম্যাচে দশ উইকেট শিকার করেছেন, ঐ দুই ম্যাচেই জয় পেয়েছিল বাংলাদেশ। কিন্তু দ্বিশতক করেও নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে দলের হার এড়াতে পারেননি। ব্যাট-বলে সমানভাবে দলের হয়ে অবদান রাখা এই অলরাউন্ডার এখন পর্যন্ত ৫৫টি টেস্টে ৩৯.৬৫ ব্যাটিং গড়ে ৩,৮০৭ রান করেছেন, এবং বল হাতে ২০৫ উইকেট তুলে নিয়েছেন।
জেসন হোল্ডার (ওয়েস্ট ইন্ডিজ)
ক্যারিয়ারের শুরুতে স্পেশালিস্ট বোলার হিসাবে খেলতেন জেসন হোল্ডার। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে নিয়মিত ব্যাট হাতে রানের দেখা পাচ্ছেন তিনি। ইতঃমধ্যে টেস্ট ক্রিকেটে তিনটি শতক হাঁকিয়ে ফেলেছেন দীর্ঘদেহীর এই ক্রিকেটার, যার মধ্যে সর্বশেষ শতকটিকে দ্বিশতকে পরিণত করেছেন হোল্ডার। বর্তমানে বিশ্বের সেরা টেস্ট অলরাউন্ডার জেসন হোল্ডার যে পরিস্থিতিতে দ্বিশতক হাঁকিয়েছেন, সেটা অনেকেরই কল্পনাতীত ছিলো।
২০১৯ সালের ২৩শে জানুয়ারি, ব্রিজটাউনে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তিন ম্যাচের টেস্ট সিরিজের প্রথম ম্যাচের দ্বিতীয় ইনিংসে হোল্ডার অপরাজিত ২০২ রানের ইনিংস খেলেছিলেন। টসে জিতে ব্যাট করতে নামা ওয়েস্ট ইন্ডিজ ম্যাচের প্রথম ইনিংসে ২৮৯ রান সংগ্রহ করেছিলো। জবাবে ক্যারিবিয়ান পেসারদের তোপের মুখে পড়ে মাত্র ৭৭ রানে অল আউট হয়ে ফলো-অনে পড়ে ইংল্যান্ড। তবে ইংল্যান্ডকে ফলো-অনের লজ্জা না দিয়ে দ্বিতীয়বার ব্যাট করতে নামার সিদ্ধান্ত নেন জেসন হোল্ডার। এই পিচে ব্যাট করা যে এত সহজ নয়, সেটা আরও পাকাপোক্ত হয় ওয়েস্ট ইন্ডিজ দ্বিতীয় ইনিংসে ১২০ রান তুলতেই ছয় উইকেট হারালে। টপ-অর্ডারের ছয় ব্যাটসম্যান সাজঘরে ফিরে গেলে ব্যাট করতে নামেন হোল্ডার। তারপর থেকে তিনি এমনভাবে ব্যাট করেছিলেন, যা দেখে মনে হয়েছিলো এটি বুঝি ব্যাটিং স্বর্গ। কে বলবে, এই পিচেই কিছুক্ষণ আগে ইংল্যান্ড ৭৭ রানে গুটিয়ে গিয়েছিলো!
জেসন হোল্ডার ব্যাট হাতে মাঠে নামার পর অপর প্রান্তে থাকা উইকেটরক্ষক-ব্যাটসম্যান ডাওরিচের আত্মবিশ্বাসও বেড়ে যায়। এই দুইজন ৭ম উইকেট জুটিতে অবিচ্ছিন্ন ২৯৫ রানের জুটি গড়েছিলেন। এর মধ্যে জেসন হোল্ডার একাই করেন ২০২ রান। তিনি মাত্র ২২৯ বলে ২৩টি চার এবং আটটি ছয়ের মারে অপরাজিত ২০২ রানের ইনিংস খেলেছিলেন। ডাওরিচ অপরাজিত ছিলেন ১১৬ রানে। ইংল্যান্ড প্রথম ইনিংসে ৭৭ রানে সবক’টি উইকেট হারানোর পরই ম্যাচের ফলাফল অনুমেয় ছিলো। হোল্ডার-ডাওরিচের জুটি ইংল্যান্ডকে লজ্জায় ডুবিয়ে ৩৮১ রানের বিশাল জয় এনে দেন ওয়েস্ট ইন্ডিজকে।
ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট ক্রিকেটে দ্বিশতক হাঁকানোর পাঁচ মাস আগেই বাংলাদেশের বিপক্ষে ম্যাচে দশ উইকেট শিকার করেছিলেন জেসন হোল্ডার। ২০১৮ সালের ১২ জুলাই কিংস্টন টেস্টে বাংলাদেশের বিপক্ষে মাত্র ১০৩ রানের বিনিময়ে ১১ উইকেট শিকার করেছিলেন তিনি। ক্যারিয়ার শুরুতে তার টেস্ট দলে অন্তর্ভুক্তি নিয়ে অনেক প্রশ্ন উঠেছিল। অধিনায়ক হওয়ার পর যখন ইংল্যান্ড সফরে গিয়েছিলেন, সেখানেও ইংল্যান্ডের বিশ্লেষকরা তাকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করেছিল। শেষ পর্যন্ত জবাবটা তিনি ব্যাটে-বলেই দিলেন। বর্তমানে তিনি বিশ্বসেরা টেস্ট অলরাউন্ডার। টেস্ট ক্যারিয়ারে দ্বিশতক হাঁকানোর পাশাপাশি ম্যাচে দশ উইকেট শিকার করা ক্রিকেটারদের সংক্ষিপ্ত তালিকাতেও তিনি নাম লেখিয়েছেন।