Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

এরলিং ব্রুট হালান্ড: নরওয়েজিয়ান বিস্ময়-বালক

প্রায় হাজারখানেক বছর আগে কাল্পনিক র‍্যাগনার লোথব্রক স্ক্যান্ডিনেভিয়া ছেড়ে ইউরোপে এসেছিলেন স্বর্ণের খোঁজে। সেই অলীক গল্প অনেকেরই জানা। তবে এবার অলীক নয়, নিজের সত্যিকার গল্পেরই রচনার শুরুতে আছেন এরলিং ব্রুট হালান্ড। নিজের শারীরিক শক্তি আর ক্ষীপ্রতার এক দুর্দান্ত সমন্বয়ে ফুটবল মাঠকেই রণক্ষেত্রে রুপান্তরিত করেছেন এই নরওয়েজিয়ান বিস্ময়-বালক। যেন সহস্র বছর আগে ভাইকিংসর মতো উত্তর সমুদ্র পাড়ি দিয়ে বিশ্বজয় করতেই এসেছেন তিনি

এরলিং ব্রুট হালান্ড; Image Credit: Paul Reidy/Diario AS

প্রথমবার যখন তাকে মোল্ডেতে দেখি তখনও ভাবিনি এই ছেলে অল্প কয়েকদিনের মধ্যেই বিশ্বজয় করবে।“, দিনকয়েক আগে নরওয়েজিয়ান বিস্ময়-বালক এরলিং ব্রুট হালান্ডকে নিয়ে বলছিলেন মোল্ডের কোচ রুবেন গ্যাব্রিয়েলসন। বিশ্বজয় করে না ফেললেও ফুটবল বিশ্বে ঠিকই সাড়া ফেলে দিয়েছেন এই স্ট্রাইকার। মার্টিন ওডেগার্ডের আবির্ভাবের পর অনেকটা সময় পরে আরেক নরওয়েজিয়ান বিস্ময়-বালকের আগমন। গ্যাব্রিয়েলসনের মতো অনেকটা দ্রুতই সব শিখে ফেলেছেন এরলিং। তাই তাকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি।

স্ক্যান্ডিনেভিয়া থেকে ইউরোপে আসার সাথে সাথেই কলি থেকে ফুল হয়ে ফোটা এই ফরোয়ার্ডের। দ্রুতগতি ও শরীরের দুর্বার শক্তির ফলে বেশিরভাগ ডিফেন্ডারই তার সামনে অসহায়। লিগে মুড়ি মুড়কির মতো গোল করা যখন ডালভাত বানিয়ে ফেলেছিলেন, তখনই অনেকে আঙুল তুলেছেন বড় মঞ্চে কিছু করতে পারার সামর্থ্য দিয়ে। নিজের চ্যাম্পিয়ন্স লিগের প্রথম ম্যাচেই গেঙ্কের বিরুদ্ধে এক হ্যাটট্রিক করে সবার মুখে কুলুপ এটে দেন এই ফরোয়ার্ড। ২০০৪ সালে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের হয়ে অভিষেকেই ওয়েইন রুনির হ্যাটট্রিকের ১৫ বছর পর কোনো অভিষিক্ত খেলোয়াড়ের হ্যাটট্রিক দেখলো চ্যাম্পিয়ন্স লিগ। ম্যাচের দুই মিনিটের মাথায় দুর্দান্ত এক জোরালো শটে নিজের প্রথম গোলটি করেন তিনি। দ্বিতীয় গোলটিও আসে বা পায়ের সূক্ষ্ম এক ফিনিশিংয়ে। ৩৫ মিনিটের মধ্যেই স্পট কিক থেকে নিজের হ্যাটট্রিক পূর্ণ করেন এই বালক। হ্যাটট্রিকের স্মারক হিসেবে সেদিনের বলসহ এই বালকের ম্যাচবলের সংখ্যা এখন পাঁচ।

গেঙ্কের সাথে হ্যাটট্রিকের পর; Image Credit: AFP

রেড বুল সালজবুর্গের হয়ে এই মৌসুমে এখন পর্যন্ত বলা যায় তাণ্ডবই চালিয়েছেন এই ফরোয়ার্ড। ১৩ ম্যাচ খেলে লিগে তার গোলের সংখ্যা ১৫টি। ১০ ম্যাচে শুরুর একাদশে থেকে এখন পর্যন্ত লিগে খেলেছেন ৯১৫ মিনিট, যার মানে প্রতি ৬১ মিনিটেই একটি করে গোল পেয়েছেন। সাথে রয়েছে ৪টি গোলে সহায়তাও। অস্ট্রিয়ান লিগ বলে যারা ব্যাপারটাকে স্রেফ উড়িয়ে দিচ্ছেন, তাদের জন্য আরো চমকপ্রদ তথ্য হলো চ্যাম্পিয়ন্স লিগে গড়ে আরো অনেক কম সময়েই গোল করেছেন এরলিং। ৫ ম্যাচ খেলে ৮ গোল ও একটি অ্যাসিস্ট। ২৯৯ মিনিটে আট গোল; যার মানে দাঁড়ায় প্রতি ৩৭ মিনিটেই একটি করে গোল পেয়েছেন তিনি। তার চেয়ে অবাক করা তথ্য হলো- এই বালকের বয়স সবেমাত্র ১৯ বছর। অর্থাৎ এরলিংয়ের জন্মও এই শতাব্দীতেই।

নিজের বিখ্যাত উদযাপনে হালান্ড; Image Credit: Tom Caldon/Getty Image

শুরুর দিকটা এতটা মসৃণ ছিল না মোটেও। বরং অনেক দুর্গম পথ পাড়ি দিয়েই এখানে এসে পৌঁছাতে হয়েছে তাকে। অখ্যাত ফুটবলার বাবা আলফি ইঞ্জে হালান্ড ছোটবেলা থেকেই ছেলেকে ফুটবলে উৎসাহিত করে এসেছেন। সেই থেকে এরলিং নিজের শৈশবের ক্লাব ব্রাইনের হয়ে ক্যারিয়ার শুরু করেন তিনি। ক্লাবটি ছিলো নরওয়ের দ্বিতীয় বিভাগের দল। সেখানে টানা ১৬ ম্যাচে গোলহীন থেকে ভাগ্য বদলাতে ট্রায়াল দিতে আসেন জার্মান ক্লাব হফেনহাইমে। সেখানেও ব্যর্থ হন এই বালক। মাত্র ১৬ বছর বয়সী বালকের জন্য সেটি একটি কঠিন অধ্যায়ও ছিলো। তবে ভাগ্যের সহায় যে ক্লাব মোল্ডেতে সুযোগ পান তিনি। সেই সময় মোল্ডের দায়িত্বে ছিলেন বর্তমান ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড কোচ ওলে গানার সুলশার। সুলশারের হাত ধরেই বদলে যাওয়া শুরু এরলিং ব্রুট হালান্ডের। প্রথম মৌসুমে সুলশারের অধীনে ২০ ম্যাচে মাত্র ৪ গোল করলেও; দ্বিতীয় মৌসুমেও তার চেয়ে গোল করলেন চারগুণ বেশি। সেই মৌসুমেই গোলমুখে নিজের ক্ষুধার কথা জানান দেন এরলিং।

ওলে গানার সুলশারের সাথে হালান্ড; Image Credit: Daniel Sandford/Talksport

সেই মৌসুমেই বড় বড় ক্লাবগুলোর নজরে পড়েন এই ফুটবলার। ২০১৮ সালে নরওয়েজিয়ান লিগের তৎকালীন লিগ চ্যাম্পিয়ন ব্র্যানের বিপক্ষে প্রথম ২১ মিনিটেই চার গোলে করেন তিনি। ওই ম্যাচের আগপর্যন্তও ব্র্যান ছিলো পরাজয়হীন। ১৮ বছরের এক বালকের বল নিয়ে প্রতিপক্ষকে ছেলেখেলা করা মাঠে বসেই দেখলেন ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের একদল স্কাউট। তবে সুলশারের অধীনে থাকা হালান্ড সেই বছর বেশ কয়েকটি ক্লাবেরই প্রস্তাব ফিরিয়ে দেন। বরং পুরো মৌসুম মোল্ডেই থাকার সিদ্ধান্ত নেন তিনি।

পরের মৌসুমে জুভেন্টাস, বেয়ার লেভারকুসেনসহ ইউরোপের অনেক বড় ক্লাব তাকে দলে ভেড়ানোর জন্য চেষ্টা করলে এরলিং ব্রুট বেছে নেন অস্ট্রিয়ান ক্লাব রেড বুল সালজবার্গকেই। নিজের ভবিষ্যত ও মাঠে খেলার সুযোগ পাওয়ার কথা বিবেচনা করেই হাই প্রোফাইল ক্লাবে না গিয়ে একটু মাঝারি মানের ক্লাব বেছে নেন। একদিক দিয়ে সুবিধা হলো যে চ্যাম্পিয়ন্স লিগেও এই অস্ট্রিয়ান ক্লাবের জায়গা করে নেওয়া। নিজের এই সিদ্ধান্তের জন্য এরলিং বলেন যে, “জুভেন্টাসের আগ্রহে আমি সত্যিই অনেক খুশি। কিন্তু এই মূহুর্তে জুভেন্টাসের মতো ক্লাবে যাওয়া মানে বেশি তাড়াহুড়া করে ফেলা। রেড বুলই আমার জন্য বর্তমানে সঠিক ক্লাব। নিজেকে মেলে ধরা ও যথেষ্ট খেলার সুযোগ পাওয়ার জন্যই আমার এই সিদ্ধান্ত।

নাপোলির সাথে গোলের পর হালান্ড; Image Credit: AFP

নিজের বাবা ও এজেন্ট মিনো রাইওলা এই সিদ্ধান্ত নিনে সাহায্য করেছেন। লোভনীয় সব প্রস্তাব ফেলে রেড বুল সালজবার্গে যাওয়া যে ভুল ছিলো না তা ইতিমধ্যেই প্রমাণ করেছেন এরলিং ব্রুট হালান্ড। তবে এরলিং নিজের অখ্যাত ফুটবলার বাবাকে ছাড়িয়ে যাওয়ার আগে বড় ক্লাবে নাম লেখানোর ইচ্ছা নেই বলেই জানান। এই বছরের শুরুর দিকে এরলিং বলেন যে, “আমার বাবা তার ক্যারিয়ারে ১৮১ লিগ ম্যাচ খেলেছেন। আমার সর্বপ্রথম কাজ হচ্ছে আমার বাবাকে ছাড়িয়ে যাওয়া। তবে একটি দিক দিয়ে তাকে আমি ছুঁতে পেরেছি। তিনি সবসময় বলতেন আমি এনফিল্ডে গোল করেছি। আগে তুমি সেটি করে দেখাও। ইতিমধ্যে আমি সেটিও করে ফেলেছি।” চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ম্যাচে এনফিল্ডে গিয়ে গোল পেয়ে নিজের সবচেয়ে বড় ফ্যান বাবার মুখেরও কুলুপ এটে দেন এই বিস্ময়-বালক। বাবা খেলেছিলেন লিডসের হয়ে। তাই হালান্ডয়েরও ইচ্ছে প্রিমিয়ার লিগেই নাম লেখানোর। ভবিষ্যতে তাই নিজেকে প্রিমিয়ার লিগের বড় কোনো ক্লাবের জার্সি গায়ে দেখতে চান তিনি।

অন্যদিকে দেশের হয়ে খেলার সৌভাগ্য ইতিমধ্যেই হয়ে গেছে এই বালকের। দেশের মানুষের চোখের মণিতে পরিণত হন কিছুদিন আগে হয়ে যাওয়া অনুর্ধ্ব ২০ বিশ্বকাপেই। নরওয়ে বেশিদূর না যেতে পারলেও নিজের ক্যারিশমা ঠিকই দেখিয়েছেন তিনি। সর্বোচ্চ ১০ গোল করে গোল্ডেন বুট জিতে বুঝিয়ে দিয়েছেন ভবিষ্যতের রত্নই হতে যাচ্ছেন তিনি। হন্ডুরাসের সাথে ১ ম্যাচেই করেছেন রেকর্ড ৯ গোল। তাই নরওয়ে গ্রুপ পর্বের বাধা না পেরোতে পারলেও গোল্ডেন বুট ওঠে তার হাতেই। জাতীয় দলের দরজাও তাই খুলে গেছে তার জন্য দ্রুতই। ২৮ আগস্ট নরওয়ে কোচ ইউরো বাছাইপর্বের জন্য মাল্টা ও সুইডেনের বিপক্ষে ম্যাচের আগে দলে নেন তাকে। অবশেষে ৫ সেপ্টেম্বর মাল্টার বিপক্ষে দেশের জার্সি গায়েও অভিষেক হয়ে যায় এই নরওয়েজিয়ানের।

নরওয়ের হয়েও অভিষেক হয়ে গেছে হালান্ডের; Image Credit: Youtube

ব্রাজিলের ফাভেলা, আর্জেন্টিনার সরু রাস্তা কিংবা স্পেন জার্মানির কোনো একাডেমি থেকে নয়, বরং পশ্চিম নরওয়ের সমুদ্রের তীর ঘেষা জেলে পাড়া থেকে উঠে আসা এরলিং ব্রুট হালান্ডের দ্যুতি ইতিমধ্যেই ছড়িয়ে পড়েছে পুরো ইউরোপেই। চ্যাম্পিয়ন্স লিগ অভিষেকেই হ্যাটট্রিক যেকোনো খেলোয়াড়ের জন্যই স্বপ্ন হতে পারে, তবে এই নরওয়েজিয়ান বিস্ময়-বালকের জন্য তা শুধুমাত্র সামনের দিকে যাওয়ার একটি দরজা খুলে যাওয়া। হয়তো কয়েক বছর পরেই র‍্যাগনার লোথব্রকের মতো এরলিং ব্রুট হালান্ডের গল্পও শোনা যাবে সবার মুখে মুখে।

খেলাধুলার চমৎকার সব বিষয়ে রোর বাংলায় লিখতে আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন এই লিঙ্কেঃ roar.media/contribute/

ফুটবল সম্পর্কে আরও জানতে পড়তে পারেন এই বইগুলো:

১) মুক্তিযুদ্ধে ফুটবল
২) বিশ্বকাপ ফুটবল ও ফুটবলার

This Bangla article is about the rising star erling braut haland of norway. Necessary references are hyperlinked in the below.

Feature Image: Josh Butler/These Football times

Related Articles