‘দ্য গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ’ খ্যাত বিশ্বকাপকে বিদায় দেয়া হয়েছে বছর দেড়েক আগে। এরপর একাধিক মহাদেশীয় টুর্নামেন্ট ফুটবল বিশ্বকে স্বল্প সময়ের জন্য মাতিয়ে রাখলেও ভক্তদের আকাঙ্ক্ষাকে পরিপূর্ণতা দিতে পারেনি। গোটা বিশ্বের ক্ষুধার্ত ফুটবল ভক্তদের মাসব্যাপী মাতিয়ে রাখতে সপ্তাহ, মাস এবং বছর পেরিয়ে চলতি বছরের জুনে আনুষ্ঠানিকভাবে পর্দা উঠতে চলেছে ইউরো খ্যাত ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপ টুর্নামেন্টের। ইউরোপের ঐতিহ্যবাহী শহর রোমের অলিম্পিক স্টেডিয়ামে ১২ জুন উদ্বোধনী ম্যাচের মধ্য দিয়ে শুরু হওয়া এই আসরের সমাপ্তি ঘটবে ১২ জুলাই লন্ডনের ওয়েম্বলিতে ফাইনাল ম্যাচের মধ্য দিয়ে।
২৪টি অংশগ্রহণকারী দেশের প্রতিদ্বন্দ্বিতায় টুর্নামেন্টের ৫১টি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে ১২টি দেশের ১২ শহরে। উল্লেখ্য, বর্তমান চ্যাম্পিয়ন পর্তুগালসহ সবক’টা দেশই বাছাইপর্বের বাধা ডিঙিয়ে এবারের টুর্নামেন্টে কোয়ালিফাই করেছে। আশ্চর্যজনক হলেও সত্য, পূর্ববর্তী ১৫টি আসরের ন্যায় এবারের টুর্নামেন্টে নির্দিষ্ট কোনো দেশ স্বাগতিক হিসেবে অংশগ্রহণ করবে না। স্পেনের বিলবাও থেকে আজারবাইজানের বাকু অবধি ৪,০০০ কিলোমিটার পর্যন্ত সবক’টি দেশের মানুষ খুব সহজে ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপের ম্যাচগুলো উপভোগ করতে পারবেন।
সর্বোপরি এবারের টুর্নামেন্ট নিয়ে ফুটবল ভক্তদের মাঝে আলোচনা-সমালোচনার শেষ নেই। তেমনিভাবে পুরো টুর্নামেন্ট সম্পর্কে জানার আগ্রহও তৈরি হয়েছে অনেকের মাঝে। তারই ধারাবাহিতায় ২০২০ সালের ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপ নিয়ে আমাদের আজকের আলোচনা।
কোয়ালিফাই করা দলগুলো
উয়েফার প্রতিটি সদস্য দেশ এবারের বাছাইপর্বে অংশগ্রহণ করে। অঞ্চলভেদে সময়সূচী নির্ধারণের মধ্য দিয়ে গত নভেম্বরে শেষ হয় টুর্নামেন্টের বাছাইপর্ব। প্লে-অফ রাউন্ডের চার দলকে বাদ রেখেই গত বছরের ৩০ নভেম্বর বুখারেস্টে ২০২০ সালে অনুষ্ঠিতব্য ইউরোপিয়ার চ্যাম্পিয়নশিপের গ্রুপ পর্বের ড্র অনুষ্ঠিত হয়েছিল। ২০ দলকে ৬টি গ্রুপে বিভক্ত করে নির্ধারণ করা হয় টুর্নামেন্টের সময়সূচী। চলতি বছরের মার্চের শেষ সপ্তাহে প্লে-অফ রাউন্ডের সেমিফাইনাল এবং ফাইনাল ম্যাচের মধ্য দিয়ে বাকি চারটি দল সরাসরি ইউরোতে অংশগ্রহণ করবে। প্লে-অফ রাউন্ডে অংশগ্রহণ করবে আরও ১৬টি দল।
- গ্রুপ এ: ইতালি, সুইজারল্যান্ড, তুরস্ক, ওয়েলস
- গ্রুপ বি: বেলজিয়াম, রাশিয়া, ডেনমার্ক, ফিনল্যান্ড
- গ্রুপ সি: ইউক্রেন, নেদারল্যান্ডস, অস্ট্রিয়া, প্লে-অফ ডি/এ
- গ্রুপ ডি: ইংল্যান্ড, ক্রোয়েশিয়া, চেক রিপাবলিক, প্লে-অফ সি
- গ্রুপ ই: স্পেন, পোল্যান্ড, সুইডেন, প্লে-অফ বি
- গ্রুপ এফ: জার্মানি, ফ্রান্স, পর্তুগাল, প্লে-অফ এ/ডি
গ্রুপ পর্বের ম্যাচগুলো আগের আসরের মতোই অনুষ্ঠিত হবে। প্রতিটি গ্রুপের চ্যাম্পিয়ন এবং রানার-আপ দল সরাসরি রাউন্ড অভ সিক্সটিনে কোয়ালিফাই করবে। এছাড়াও, প্রতিটি গ্রুপে তৃতীয় স্থানে থাকা ৪টি দল পয়েন্টের ভিত্তিতে কোয়ালিফাই করবে। উদ্বোধনী ম্যাচে তুরস্ককে আতিথ্য দেবে ইতালি।
কেন একাধিক শহরে এর আয়োজন?
ইতিহাসের প্রথম ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপ অনুষ্ঠিত হয় ঠিক ৬০ বছর আগে। ১৯৬০ সালে ফ্রান্সে অনুষ্ঠিত ঐ টুর্নামেন্টের শিরোপা জেতে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন। ৬০ বছরপূর্তিকে স্মরণীয় করে রাখতে ইউরোপের ১২টি দেশের ১২টি শহরে এবারের টুর্নামেন্টের আয়োজন করার ব্যাপারে বিবৃতি দিয়েছে উয়েফা। কিন্তু ক্রীড়া সাংবাদিক এবং বিশ্লেষকরা বলছেন ভিন্ন কথা। তাদের মতে, ইউরোপে চলমান অর্থনৈতিক অবস্থায় কোনো দেশের পক্ষে একা টুর্নামেন্টের ব্যয়ভার বহন করা সম্ভব নয়। তবে বাস্তবতা বলে, অসম্ভবও ছিল না কোনো দেশের পক্ষে।
২০১৬ সালে ফ্রান্স আয়োজন করলেও পরবর্তী আসর নিয়ে দেশগুলোর মধ্যে অনাগ্রহ দেখা দিলে নতুন করে সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয় উয়েফা। ২০১২ সাল অপেক্ষা ২০১৬ সালের আসরের রাজস্ব ৩৪% বেড়ে দাঁড়িয়েছিল ১.৯৩ বিলিয়নে। উয়েফার তথ্যমতে, ২০২০ সালের ইউরো আয়োজনে একমাত্র দেশ হিসেবে একক আগ্রহ দেখিয়েছিল তুরস্ক। এছাড়াও আয়ারল্যান্ড, স্কটল্যান্ড ও ওয়েলস যৌথভাবে আয়োজন করার প্রস্তাব দেয়। সর্বশেষ জর্জিয়া ও আজারবাইজান আগ্রহ দেখায়। যদিও উয়েফা নিজেদের রাজস্ব বৃদ্ধির জন্য অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ কোনো দেশের আগ্রহ কামনা করছিল। কিন্তু শেষপর্যন্ত তেমন কোনো দেশই সাড়া দেয়নি। আর এই কারণেই সংস্থাটি ১৬তম ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপের আসরটিকে ভিন্ন ভিন্ন শহরে আয়োজন করার মতো সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে ধারণা করছেন ফুটবল বিশ্লেষকেরা।
ভেন্যুসমূহ
বিবিসির তথ্যমতে, টুর্নামেন্টকে কেন্দ্র করে নতুন কোনো স্টেডিয়াম নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয়নি। সবক’টা শহরের ঐতিহাসিক স্টেডিয়ামগুলোকেই ভেন্যু হিসেবে ব্যবহার করতে যাচ্ছে উয়েফা। তবে হাঙ্গেরির বুদাপেস্টে নবনির্মিত পুস্কাস অ্যারেনা গত বছরের শেষদিকে উদ্বোধন করা হয়েছিল। এই স্টেডিয়ামটির নির্মাণ প্রসঙ্গে ইউরো ২০২০ এর সম্পৃক্ততা উল্লেখ করেনি উয়েফা। নিচে সবক’টা ভেন্যুর নাম ও দর্শক ধারণক্ষমতা উল্লেখ করা হলো।
১. বাকু অলিম্পিক স্টেডিয়াম
আজারবাইজানের রাজধানী বাকুতে অবস্থিত এই স্টেডিয়ামে আন্তর্জাতিক ম্যাচে দর্শক ধারণক্ষমতা ৬৯,০০০। ২০২০ সালের ইউরোতে তৃতীয় সর্বোচ্চ দর্শক ধারণক্ষমতা সম্পন্ন স্টেডিয়াম এটি। গ্রুপ পর্বের ৩ ম্যাচ সহ ১টি কোয়ার্টার ফাইনাল ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে সেখানে। গত বছর ইউরোপা লিগের ফাইনাল ম্যাচটিও অনুষ্ঠিত হয়েছিল বাকুর ঐতিহাসিক এই অলিম্পিক স্টেডিয়ামে।
২. অ্যারেনা ন্যাশনালিয়া
৫৪,০০০ দর্শক ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন এই স্টেডিয়ামটি রোমানিয়ার রাজধানী বুখারেস্টে অবস্থিত। দেশটির জাতীয় স্টেডিয়ামও এটি। আসন্ন ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপের গ্রুপ পর্বের ৩টি ও রাউন্ড অব সিক্সটিনের ১টি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে সেখানে। এছাড়াও ২০১২ সালে অ্যাথলেটিকো মাদ্রিদ এবং অ্যাথলেটিকো বিলবাওয়ের মধ্যকার ইউরোপা লিগের ফাইনাল ম্যাচটি অনুষ্ঠিত হয়েছিল এই অ্যারেনা ন্যাশনালিয়াতে।
৩. করেস্তভস্কি স্টেডিয়াম
রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবার্গের করেস্তভস্কি স্টেডিয়ামের দর্শক ধারণক্ষমতা ৬১,০০০। এবারের ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপের গ্রুপ পর্বের ৩টি ও ১টি কোয়ার্টার ফাইনাল ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে এই স্টেডিয়ামে। ২০১৮ সালে বিশ্বকাপের সেমিফাইনালসহ মোট ৭টি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়েছিল সেখানে।
৪. পুস্কাস অ্যারেনা
একমাত্র নবনির্মিত স্টেডিয়াম হিসেবে ম্যাচ আয়োজনের জন্য প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে পুস্কাস অ্যারেনা। হাঙ্গেরির রাজধানী বুদাপেস্টে অবস্থিত এই স্টেডিয়ামের দর্শক ধারণক্ষমতা ৬৮,০০০, যা টুর্নামেন্টের চতুর্থ সর্বোচ্চ। গ্রুপ পর্বের ৩টি ম্যাচ সহ রাউন্ড অভ সিক্সটিনের ১টি ম্যাচও অনুষ্ঠিত হবে কিংবদন্তি পুস্কাসের নামানুসারে নামকরণকৃত এই স্টেডিয়ামে।
৫. এস্তাদিও অলিম্পিকো
ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপের পর্দা উঠবে রোমের অলিম্পিক স্টেডিয়ামে। প্রথম ম্যাচ সহ গ্রুপ পর্বের সর্বমোট ৩টি ও কোয়ার্টার ফাইনালের ১টি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে সেখানে। ৬৮,০০০ দর্শক ধারণক্ষমতা সম্পন্ন স্টেডিয়ামটিতে ১৯৯০ সালের বিশ্বকাপের ফাইনাল ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এছাড়াও, ২০০৯ সালে উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনাল ম্যাচটিও অনুষ্ঠিত হয় এস্তাদিও অলিম্পিকোতে।
৬. অ্যালিয়েঞ্জ অ্যারেনা
আসন্ন ইউরোর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দর্শক ধারণক্ষমতা সম্পন্ন স্টেডিয়াম মিউনিখের অ্যালিয়েঞ্জ অ্যারেনা। ৭০,০০০ দর্শক ধারণক্ষম স্টেডিয়ামটিতে গ্রুপ পর্বের ৩ ম্যাচ সহ কোয়ার্টার ফাইনালের ১টি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে।
৭. পার্কেন স্টেডিয়াম
ডেনমার্কের রাজধানী কোপেনহেগেনে অবস্থিত পার্কেন স্টেডিয়ামটি এবারের টুর্নামেন্টের সবচেয়ে কম দর্শক ধারণক্ষম স্টেডিয়াম। ৩৮,০০০ দর্শক ধারণক্ষমতা সম্পন্ন এই স্টেডিয়ামে গ্রুপ পর্বের ৩ ম্যাচ সহ কোয়ার্টার ফাইনালের ১টি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে। শতবর্ষী স্টেডিয়ামটিতে ১৯৯৪ সালের ইউরোপিয়ান কাপের ফাইনাল ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়েছিল।
৮. ইয়োহান ক্রুয়েফ অ্যারেনা
৫৪,০০০ দর্শক ধারণক্ষম ক্রুয়েফ অ্যারেনা নেদারল্যান্ডসের আমস্টারডামে অবস্থিত। ফুটবল ক্লাব আয়াক্সের হোম গ্রাউন্ড হিসেবে বিখ্যাত এই স্টেডিয়ামে এবারের ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপের ৩টি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে।
৯. সান ম্যামেস
স্পেনের বস্ক অঙ্গরাজ্যের ক্লাব অ্যাটলেটিক বিলবাওয়ের হোম গ্রাউন্ড হিসেবে বিখ্যাত সান ম্যামেস স্টেডিয়ামটির দর্শক ধারণক্ষমতা ৫৩,০০০। গ্রুপ পর্বের ৩ ম্যাচ ও রাউন্ড অব সিক্সটিনের ১ ম্যাচ সহ সর্বমোট ৪টি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে সেখানে।
১০. ওয়েম্বলি স্টেডিয়াম
লন্ডনের ঐতিহাসিক ওয়েম্বলি স্টেডিয়ামে এবারের ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনাল, সেমিফাইনালসহ সর্বমোট ৭টি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে। ঐ হিসেবে এটিকে টুর্নামেন্টের প্রধান ভেন্যু হিসেবে উল্লেখ করেছে উয়েফা।
১১. ডাবলিন অ্যারেনা
আয়ারল্যান্ডের ডাবলিনের ৫১,০০০ দর্শক ধারণক্ষম ডাবলিন অ্যারেনাতে টুর্নামেন্টের গ্রুপ পর্বের ৩ ম্যাচ ও রাউন্ড অব সিক্সটিনের ১টি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে। প্লে-অফ পর্ব টপকাতে পারলে স্বাগতিক হিসেবে এই স্টেডিয়ামে গ্রুপ পর্বের ২টি ম্যাচ খেলতে পারবে রিপাবলিক অভ আয়ারল্যান্ড।
১২. হ্যাম্পডেন পার্ক
স্কটল্যান্ডের গ্লাসগোতে অবস্থিত হ্যাম্পডেন পার্ক স্টেডিয়ামটির দর্শক ধারণক্ষমতা ৫১,০০০। গ্রুপ পর্বের ৩ ম্যাচ সহ রাউন্ড অভ সিক্সটিনের ১টি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে সেখানে। শতবর্ষী এই স্টেডিয়ামটি ১৯০৩ সালে উদ্বোধন করা হয়।
সমর্থকদের জন্য বড় পর্দায় ম্যাচ উপভোগের নিশ্চয়তা
প্রযুক্তি নির্ভর বিশ্বের সঙ্গে তাল মেলাতে গিয়ে গত ২ দশকে ফিফা ও উয়েফা আয়োজক দেশগুলোতে স্টেডিয়ামের বাইরে ম্যাচ উপভোগ করার জন্য কয়েকটি বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। আয়োজক দেশে স্টেডিয়ামের বাইরের নিকটবর্তী নির্দিষ্ট স্থানে বড় পর্দায় ম্যাচ উপভোগের ব্যবস্থাটি উল্লেখযোগ্য। গত বিশ্বকাপে মস্কোর রেড স্কয়ারে উন্মুক্তভাবে ম্যাচ উপভোগের ব্যবস্থা করে দিয়েছিল ফিফা। তবে দর্শকদের জন্য এযাবতকালে সবচেয়ে বড় পরিসরে ম্যাচ উপভোগের ব্যবস্থা করা হয় প্যারিসে। ২০১৬ সালের ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপের ম্যাচে ৯২,০০০ মানুষ একসঙ্গে ম্যাচ উপভোগ করতে পারতো সেখানে।
একাধিক শহরে আয়োজন করার পরিপ্রেক্ষিতে এবারের টুর্নামেন্টে স্টেডিয়ামের বাইরে বড় পর্দায় ম্যাচ উপভোগের ব্যবস্থা করা হবে কি না তা নিয়ে বড়সড় শঙ্কা তৈরি হয়েছিল। পরবর্তীতে উয়েফা সবগুলো স্টেডিয়ামের বাইরে কিংবা শহরের নিকটবর্তী স্থানে বড় পর্দায় ম্যাচ দেখার ব্যবস্থা করবে বলে প্রতিশ্রুতি দেয়। সর্বশেষ তথ্যমতে, মিউনিখের পুরোনো অলিম্পিক স্টেডিয়ামে বড় পর্দায় ম্যাচ দেখার সুযোগ পাবেন দর্শকরা। বুদাপেস্ট শহর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে বিখ্যাত হিরোইস স্কয়ারে তারাও ম্যাচ দেখার ব্যবস্থা করবে।
পরিবেশের উপর প্রভাব
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে চলমান সংকটে বিশ্বব্যাপী যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া লক্ষ্যণীয় তা ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপে প্রভাব ফেলতে পারে। মূলত সমর্থকদের ভ্রমণের ক্ষেত্রে এটি বেশি প্রভাব ফেলবে বলে ধারণা পরিবেশবিদদের।
ইউরোপের আকাশসীমায় বিমানে চলাচলকে অনিরাপদ আখ্যা দিয়ে আয়াক্স কর্তৃপক্ষ মৌসুমের শুরুতেই অ্যাওয়ে ম্যাচগুলোতে ট্রেনে যাতায়াতের ঘোষণা দেয়। সেক্ষেত্রে খেলোয়াড়, কর্মকর্তা, কর্মচারী, কোচিং স্টাফ ও সংবাদকর্মীদের আকাশপথের যাতায়াত কতটুকু নিরাপদ তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে সচেতন মহল।
ইতোমধ্যে উয়েফাও এই ব্যাপারে নিজের যুক্তি উপস্থাপন করেছে। আয়োজক শহরগুলোর মাঝে নিরাপদ দূরত্ব রাখা হয়েছে উল্লেখ করে বিবৃতি দিয়েছে সংস্থাটি। যেমন- মিউনিখ থেকে গ্লাসগোর মাঝে মূল দূরত্ব ৪০০ কিলোমিটার। তবে যাতায়াত সমস্যার সমাধান করার জন্য অংশগ্রহণকারী দেশগুলোর গ্রুপ পর্বের ম্যাচ কাছাকাছি ভেন্যুতেই রাখা হয়েছে। দর্শকদের এমন ব্যাপক ভ্রমণের কারণে সৃষ্ট কার্বন সীমিত রাখার জন্য উয়েফা প্রতিটি আয়োজক শহরে ৫০,০০০টি করে গাছ লাগানোর কার্যক্রম শুরু করেছে। সংস্থাটির দাবি এর মধ্য দিয়ে ৪০৫,০০০ টন অতিরিক্ত কার্বনের প্রভাব মোকাবিলা করা সম্ভব হবে। এই প্রসঙ্গে উয়েফার সভাপতি আলেকসান্দার সেফিরিন বলেন,
আয়োজনের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত ব্যয় কমানোর জন্য আমরা এমন উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। কিন্তু এতে সৃষ্টি কার্বন নিঃসরণ যাতে ইউরোপিয়ান নাগরিকসহ বিশ্ব জলবায়ুর উপর প্রভাব ফেলতে না পারে সেই দায়দায়িত্বও উয়েফার। আমরা এই ব্যাপারটি গুরুত্ব সহকারে দেখছি।
প্রাইজমানি
বিশ্বকাপের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বরাবরই বেড়েছে ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপের প্রাইজমানির পরিমাণ। ১৯৯২ সালের আসরে মোট প্রাইজমানি ছিলো ২৮ মিলিয়ন ইউরো। যদিও সেবার উয়েফার রাজস্বের পরিমাণ ছিলো ৪১ মিলিয়ন ইউরো। এভাবে প্রতিবারের আয়োজনে প্রাইজামিন এবং রাজস্ব উভয় বেড়ে চলেছে। প্রাইজমানির অর্থ টুর্নামেন্ট শেষে চ্যাম্পিয়ন, রানার্স-আপসহ দলগুলোর অবস্থান অনুসারে বণ্টন করা হয়। ২০১৬ সালের ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা জয়ী দল পেয়েছিল ২৫.৫ মিলিয়ন ইউরো। সবক’টা খাত মিলিয়ে সেবারের সর্বমোট ব্যয়িকৃত অর্থের পরিমাণ ছিলো ৩০১ মিলিয়ন ইউরো।
ফোর্বসের প্রকাশিত তথ্যমতে এবারের টুর্নামেন্টের মোট প্রাইজমানি ধরা হয়েছে ৩৭১ মিলিয়ন ইউরো। বাছাইপর্বে উত্তীর্ণ হওয়ার সুবাদে প্রতিটি দলকে ৯.২৫ মিলিয়ন ইউরো করে পরিশোধ করা হবে। গ্রুপ পর্বের একেকটি ম্যাচে জয়ী দল পাবে ১.৫ মিলিয়ন ইউরো। এছাড়াও ড্র করলে ঐ একই অর্থ উভয় দল ভাগাভাগি করে নিতে পারবে। রাউন্ড অব সিক্সটিনে কোয়ালিফাই করা প্রতিটি দলের অর্থ পুরস্কার নির্ধারণ করা হয়েছে ২ মিলিয়ন ইউরো। কোয়ার্টার ফাইনালে উত্তীর্ণ প্রতিটি দল পাবে ৩.২৫ মিলিয়ন ইউরো করে। সেমিফাইনালিস্ট দলগুলোর প্রাইজমানি নির্ধারণ করা হয়েছে দলপ্রতি ৫ মিলিয়ন ইউরো করে। এছাড়াও ফোর্বসের তথ্যমতে চ্যাম্পিয়ন ও রানার্স-আপ দলের প্রাইজমানি নির্ধারণ করা হয়েছে যথাক্রমে ১০ ও ৭ মিলিয়ন ইউরো।
টিকিটের দাম
ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপের জন্য বরাদ্দকৃত টিকিটের পরিমাণ ১.৫ মিলিয়ন। টিকিটের জন্য ইতোমধ্যেই ১৯.৩ মিলিয়ন আবেদন জমা পড়েছে বলে নিশ্চিত করেছে উয়েফা। এছাড়াও ওয়েম্বলিতে অনুষ্ঠিতব্য ফাইনাল ম্যাচের জন্য ১.৯ মিলিয়ন আবেদন জমা পড়েছে বলেও নিশ্চিত করেছে সংস্থাটি। এর পরিমাণ স্টেডিয়ামটির দর্শক ধারণক্ষমতার চেয়ে ২২ গুণ বেশি। তবে সেক্ষেত্রে উয়েফার ‘ফ্যানস ফার্স্ট’ পোগ্রামের কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করলে টিকিট পাওয়ার ক্ষেত্রে সুবিধা হবে বলেও জানিয়েছে সংস্থাটি।
এখন অবধি ৫১ ম্যাচের মধ্যে ৪৪টি ম্যাচের টিকিট বিক্রির জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে। প্রতিটি টিকিটের মূল্য ৫০ ইউরো ধার্য করা হয়েছে। তবে ফাইনাল ম্যাচের সর্বনিম্ন দামের টিকিটের মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৯৫ ইউরো। এছাড়াও ফাইনালের সর্বোচ্চ দামের টিকিটের মূল্য ৯৪৫ ইউরো। টিকিটের দামের প্রসঙ্গে দর্শকদের পক্ষ থেকে কোনোপ্রকার মন্তব্য পাওয়া যায়নি। বরঞ্চ দাম যেমনই হোক বিশ্বকাপের পর ফুটবল দুনিয়ার সবচেয়ে জনপ্রিয় এই টুর্নামেন্টের জনপ্রিয়তা এবং দর্শক অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে যাবে বলেও আশাবাদী উয়েফা।