Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

বিখ্যাত খেলোয়াড়দের বিশ্বকাপে আলোচিত পেনাল্টি মিস

কোনভাবে গোল দেওয়া সবচেয়ে সহজ – এই প্রশ্ন করলে যে মানুষ কি না ফুটবল একদমই কম বোঝে তারও উত্তর হবে, ‘পেনাল্টি থেকে’। স্ট্রাইকারের কাছে গোল দেওয়ার জন্য সবচেয়ে প্রয়োজনীয় যে জিনিসটা দরকার হয়, সেটা হচ্ছে সময়। স্বাভাবিক অবস্থায় মুহুর্তের মধ্যেই বল রিসিভ করে খুব দ্রুত নিয়ন্ত্রণ করে গোলমুখে শট নিতে হয় তাকে। সে যেন এই সময় কিংবা জায়গাটা না পায়, সেজন্যেই ডিফেন্ডাররা বসে থাকে গোল পোস্টের সামনে। পেনাল্টিতে এত বাধার মুখোমুখি হতে হয় না তাকে, বিশাল বারের সামনে শুধুমাত্র গোলকিপার একা। এরপরও যদি কেউ গোল মিস করে, তখন সেটাকে দুর্ভাগ্য বলেই মনে করা হয়। অবশ্য মাঝে মাঝে চাপ সহ্য করতে না পারার বিষয়টাকেও সামনে নিয়ে আসা হয়।

বিশ্বকাপের মতো আসরে অনেক বিখ্যাত খেলোয়াড়ই পেনাল্টি থেকে গোল করতে না পেরে সমালোচিত হয়েছেন। ম্যারাডোনা, জিকো, সক্রেটিস, প্লাতিনির মতো কিংবদন্তীর সাথে সাথে হাল আমলের মেসি-রোনালদোর ঝুলিতেও আছে পেনাল্টি মিস করার কীর্তি (!)। কোনো কোনো পেনাল্টি মিস দলকে ফেলে দিয়েছে সংকটময় মূহুর্তে, আবার কোনো কোনো পেনাল্টি মিস হয়তো খুব বেশি ঝামেলায় ফেলেনি। এমনই কিছু পেনাল্টি মিসের ঘটনা নিয়ে আজকের আয়োজন।

ডেভিড ত্রেজেগে – ইতালির বিপক্ষে ২০০৬ বিশ্বকাপ ফাইনাল

অনেক নাটকীয় ছিল ম্যাচটা। বাছাইপর্বে খাবি খেতে থাকা ফ্রান্সকে মূল পর্বে নিয়ে এসেছিলেন অবসর ভেঙে ফিরে আসা জিনেদিন জিদান। মূল পর্বেও যখন ফ্রান্স ধুঁকছিলো, তখন জিদানের অতিমানবীয় পারফরম্যান্সেই ফ্রান্স ফাইনালে ওঠে। ফাইনালে প্রথম গোলটা জিদানই করেন। কিন্তু অতি দ্রুত ইতালি গোল পরিশোধ করে ফেললে ম্যাচটা এগোয় টাইব্রেকারের দিকে।

অতিরিক্ত সময়েই ঘটে দুর্ঘটনা, মাথা গরম করে জিদান আঘাত করে বসেন মার্কো মাতেরাজ্জির বুকে। ব্যস, লাল কার্ড দেখে জিদান মাঠের বাইরে চলে যাওয়ার পর থেকে ফেভারিট ইতালিই। ম্যাচটা টাইব্রেকারে যাওয়ার পরেও ফ্রান্স ফেভারিট। ইতালি তখন পর্যন্ত বিশ্বকাপে টাইব্রেকারে কোন ম্যাচ জিতেনি। কিন্তু সুযোগটা পেয়ে গেলো ত্রেজেগের কল্যাণে। ক্লাব পর্যায়ে মাঠ মাতানো এবং খুব দক্ষ স্ট্রাইকার হিসেবে পরিচিত ত্রেজেগে দলের পক্ষে দ্বিতীয় পেনাল্টিটা নিতে গিয়েই মিস করে ফেললেন। না, গোলকিপার তার শট আটকাতে পারেননি। ধোঁকা খেয়ে শটের অপর দিকে ডাইভ দিলেও বলটা আতকে যায় ক্রসবারে।

ইতালি আর ভুল করেনি, ঠান্ডা মাথায় পরের গোলগুলো দিয়ে চতুর্থবারের মতো জিতে নেয় বিশ্বকাপ। ইতালি বনাম ফ্রান্স ম্যাচের সেই টাইব্রেকারের ভিডিও দেখে নিতে পারেন এখানে। 

মিশেল প্লাতিনি – ব্রাজিলের বিপক্ষে ১৯৮৬ বিশ্বকাপ কোয়ার্টার ফাইনাল

ব্রাজিল দলে ছিলেন জিকো-সক্রেটিসের মতো কিংবদন্তী, সাথে নাপোলিতে ম্যারাডোনার অন্যতম সহযাত্রী ক্যারেকা। ক্যারেকার গোলেই ব্রাজিলের এগিয়ে যাওয়ার পর সমতায় ফেরে প্লাতিনির গোলে। নির্ধারিত সময় আর অতিরিক্ত সময় শেষে ম্যাচটা গড়ালো টাইব্রেকারে। ফ্রান্সের পক্ষে চতুর্থ পেনাল্টিটা নিয়ে মিস করেন প্লাতিনি। তবে ব্রাজিল দলেও সক্রেটিস এবং সিজার পেনাল্টি মিস করাতে সেই যাত্রা বেঁচে যায় ফ্রান্স এবং প্লাতিনি।

প্লাতিনির মিসটার মূল্য চরম হতে পারতো; Image Source: FIFA.com

জিকো – ফ্রান্সের বিপক্ষে ১৯৮৬ বিশ্বকাপ কোয়ার্টার ফাইনাল

প্লাতিনি যে ম্যাচটাতে টাইব্রেকার মিস করেছিলেন, সেই ম্যাচটা হয়তো টাইব্রেকার পর্যন্ত যেতোই না। সেই ম্যাচে জিকো প্রথম একাদশে ছিলেন না। ১-১ গোলে সমতায় থাকা ম্যাচটাতে ব্রাজিলের জয়ের জন্য খানিকটা অনুপ্রেরণা প্রয়োজন ছিল। জিকো মাঠে নামার পর ব্রাজিলিয়ানরা সেটা পেলো। খুব দ্রুতই জিকো একটা পেনাল্টি আদায় করে নিলেন, কিন্তু তার শট আটকে দিল ফ্রান্সের গোলরক্ষক। ম্যাচটা চলে গেলো টাইব্রেকারে এবং ব্রাজিলকে হারিয়ে সেমিফাইনাল খেললো ফ্রান্স। টাইব্রেকারে পেনাল্টি মিস করেন আরেক লিজেন্ড সক্রেটিস। 

জিকো এবং সক্রেটিসের মতো লিজেন্ড একই ম্যাচে করেছিলেন পেনাল্টি মিস; Image Source: Who Ate all the Pies

আসামোয়া জিয়ান – উরুগুয়ের বিপক্ষে ২০১০ বিশ্বকাপ কোয়ার্টার ফাইনাল

ঘানার এই খেলোয়াড় ২০১০ বিশ্বকাপে করেছিলেন তিনটি গোল, যার ২টিই পেনাল্টি থেকে। ১-১ গোলে সমতায় থাকা ম্যাচটা ১২০তম মিনিটের পরও যোগ হওয়া সময়ে ঘানা প্রায় জিতেই যাচ্ছিল, কিন্তু নিশ্চিত গোল হতে যাওয়া বলটা হাত দিয়ে ঠেকিয়ে দেন লুইস সুয়ারেজ। লাল কার্ড দিয়ে সুয়ারেজকে বের করে দিয়ে ঘানাকে দেওয়া হয় পেনাল্টি। ‘জিয়ান কখনোই পেনাল্টি মিস করেননি’, এই রেকর্ডের কথা মাথায় রেখে শটটা মারতে দেওয়া হয় তাকেই। কিন্তু শটটা বারপোস্টে লেগে ফিরে আসে। পরবর্তীতে ম্যাচটা টাইব্রেকারে যায়। সেখানে জিয়ান গোল করলেও তার সতীর্থরা দুটো পেনাল্টি মিস করেন, ঘানাও ম্যাচটা হেরে বাদ পড়ে যায় কোয়ার্টার ফাইনাল থেকেই।

রবার্তো ব্যাজিও – ব্রাজিলের বিপক্ষে ১৯৯৪ বিশ্বকাপ ফাইনাল  

ধুঁকতে থাকা ইতালিকে তিনিই টেনে নিয়ে এসেছিলেন ফাইনালে। গ্রুপপর্বে কোনো গোল পাননি, ইতালিও তৃতীয় হয়ে কোনোক্রমে দ্বিতীয় পর্বে উঠলো। নকআউট পর্বে ব্যাজিও-ম্যাজিকেই মূলত ফাইনালে উঠলো ইতালি। ফাইনাল ম্যাচে দুই দলই অতিরিক্ত সাবধানী থাকায় ম্যাচটা চলে গেলো টাইব্রেকারে। বারেসি আর মাসারো পেনাল্টি মিস করার পর ব্যাজিওর সামনে সমীকরণ ছিল এমন যে ম্যাচে টিকে থাকতে হলে ব্যাজিওকে গোল করতেই হবে এবং ব্রাজিলকেও শেষ পেনাল্টিটা মিস করতে হবে। ব্যাজিও বলটা বাইরে পাঠিয়ে দেওয়ায় ব্রাজিলের আর শেষ পেনাল্টি শট মারার প্রয়োজন হয়নি। ব্যাজিও গোল করার পরেও হয়তো ইতালি হারতো, তবে আগের বছরের ব্যালন ডি’অর জয়ী এবং সেই বিশ্বকাপের দ্বিতীয় সেরা খেলোয়াড়ের কাছ থেকে এরকম মূহুর্তে এমন মিস হয়তো কেউই আশা করেনি।

১৯৯০ বিশ্বকাপে সেমিফাইনালে আর্জেন্টিনার বিপক্ষে এবং ১৯৯৮ বিশ্বকাপে কোয়ার্টার ফাইনালে ফ্রান্সের বিপক্ষে টাইব্রেকারে গোল করার পরও ইতালি হেরেছিলো। এছাড়া ১৯৯৮ বিশ্বকাপে চিলির বিপক্ষে গ্রুপপর্বের প্রথম ম্যাচেও পেনাল্টি থেকে ব্যাজিও গোল করেন। তবে এসবের কোনো কিছুই ব্যাজিওকে স্মরণীয় করে রাখেনি। মানুষ এখনও স্মরণ করে ১৯৯৪ সালের মিসটাকেই, খলনায়ক না হলেও ট্র্যাজিক হিরো হিসেবেই মানুষের মনে বেঁচে আছেন ব্যাজিও।

জেরার্ড ও ল্যাম্পার্ড – পর্তুগালের বিপক্ষে ২০০৬ বিশ্বকাপ কোয়ার্টার ফাইনাল

ইংল্যান্ডের সেই বিশ্বকাপের স্কোয়াডটা দুর্দান্ত ছিল। বেকহাম, ল্যাম্পার্ড, জেরার্ড, রুনির মতো খেলোয়াড় নিয়ে গড়া দলটাকে সোনালী প্রজন্ম বলাই যায়। অন্যদিকে, পর্তুগালের স্কোয়াডটাও ছিল সোনালী প্রজন্ম। তবে নির্ধারিত সময় এবং অতিরিক্ত সময়ে গোলশূন্য ম্যাচটি গড়ায় টাইব্রেকারে। তাতে ইংল্যান্ডের পক্ষে মিস করেন ল্যাম্পার্ড এবং জেরার্ডের মতো দুই লিজেন্ড, ইংল্যান্ডও বাদ পড়ে কোয়ার্টার থেকে।

ইংল্যান্ডের কিছু না পাওয়ার জন্য জেরার্ড এবং ল্যাম্পার্ডরাও দায়ী; Image Source: The Independent

দিয়াগো ম্যারাডোনা – যুগোস্লাভিয়ার বিপক্ষে ১৯৯০ বিশ্বকাপ কোয়ার্টার ফাইনাল

অতিরিক্ত রক্ষণাত্মক খেলে ম্যাচটা টাইব্রেকারে নিয়ে জেতাটাই ছিল ১৯৯০ বিশ্বকাপের আর্জেন্টিনার লক্ষ্য। এতটাই রক্ষণাত্মক খেলেছিলো তারা যে বিশ্বকাপে ফাইনাল খেলা দলগুলোর মাঝে সবচেয়ে কম গোল করার রেকর্ড তাদের। ৭ ম্যাচে তারা করতে পেরেছিলো মাত্র ৫ গোল। কোয়ার্টার ফাইনালে যুগোস্লাভিয়ার বিপক্ষেও গোলহীন ম্যাচটা টাইব্রেকারে যায়। 

ম্যারাডোনার পেনাল্টি মিসের পরেও বড় ধরনের মূল্য দিতে হয়নি; Image Source: These Football Times

ম্যারাডোনা যখন শট করতে আসেন তখন যুগোস্লাভিয়া একটা পেনাল্টি মিস করে বসে আছে। কিন্তু ম্যারাডোনার দুর্বল শট আটকে দিয়ে যুগোস্লাভিয়া ম্যাচে ফিরে আসে। তবে পরবর্তীতে যুগোস্লাভিয়ার আরো দুটো পেনাল্টি শট আটকে দিয়ে ম্যাচটা জিতে নেয় আর্জেন্টিনাই।

 

লিওনেল মেসি – আইসল্যান্ডের বিপক্ষে ২০১৮ বিশ্বকাপ গ্রুপ পর্ব

ম্যাচটা আর্জেন্টিনা ভালোই খেলছিলো। আগুয়েরার গোলে প্রথমে এগিয়ে যায় আর্জেন্টিনাই। তবে আইসল্যান্ডও মাত্র ৪ মিনিটের মধ্যেই গোল ফেরত দিয়ে দ্রুতই ম্যাচে ফিরে আসে। দ্বিতীয়ার্ধে আর্জেন্টিনা পেনাল্টি পেলে মেসির সামনে সুযোগ আসে দলকে এগিয়ে নেওয়ার। কিন্তু মেসির শট ঠেকিয়ে দেন আইসল্যান্ডের গোলরক্ষক। গ্রুপের সবচেয়ে দুর্বল দলের সাথে ম্যাচটা ড্র হলে আর্জেন্টিনা বিপদে পড়ে যায়। পরবর্তীতে ক্রোয়েশিয়ার সাথে ম্যাচটা হেরে গেলেও নাইজেরিয়ার সাথে জিতে দ্বিতীয় পর্বে ওঠাতে খুব বেশি মূল্য দিতে হয়নি আর্জেন্টিনাকে। 

ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো – ইরানের বিপক্ষে ২০১৮ বিশ্বকাপ গ্রুপ পর্ব

টুর্নামেন্টের শুরুটা খুব দুর্দান্তভাবে হয়েছিলো ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর। স্পেনের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচেই তার হ্যাটট্রিকের সৌজন্যে ড্র করে পর্তুগাল। পরের ম্যাচে রোনালদোর একমাত্র গোলেই মরক্কোর সাথে ১-০ ব্যবধানে জয় পায় তার দল। শেষ ম্যাচে ইরানের বিপক্ষে ড্র করলেই দ্বিতীয় পর্ব, এমন সমীকরণ নিয়ে মাঠে নেমে রিকার্ডো কোয়ারেজমার গোলে এগিয়ে যায় পর্তুগাল। দ্বিতীয়ার্ধে পর্তুগাল পেনাল্টি পেলে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর সামনে সুযোগ আসে দলকে এগিয়ে নেওয়ার। 

মেসি-রোনালদোর পেনাল্টি মিস প্রমাণ করে যে তারাও মানুষ; Image Source: Sports Illustrated

কিন্তু রোনালদোর ডানদিকে নেওয়া নিচু শট আটকে দেন ইরানের গোলরক্ষক। পরবর্তীতে অতিরিক্ত সময়ে (৯২+ মিনিটে) ইরান পেনাল্টি থেকে গোল দিলে পর্তুগাল হকচকিয়ে যায়। অতিরিক্ত সময় শেষ হবার মাত্র ১০ সেকেন্ড আগে ইরানের একটা শট অল্পের জন্য বারের বাইরে দিয়ে চলে যায়। সেটা গোল হয়ে গেলে পর্তুগালকে গ্রুপপর্ব থেকেই ফেরত যেতে হতো, আর ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোকে পুড়তে হতো পেনাল্টি মিসের আক্ষেপে।

ফিচার ইমেজ: ESPN.com

Related Articles