Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

ইউরো ২০২০: যা হলো গত তিন দিনে || পর্ব ১

কাঁদছেন সতীর্থরা, খেলাও ততক্ষণে বন্ধ। কী হবে এসব খেলা দিয়ে? জীবনের কাছে হঠাৎ ফিকে হয়ে এসেছে বাকি সবকিছুই। ক্রিস্টিয়ান এরিকসেন যে হঠাৎ লুটিয়ে পড়েছেন মাটিতে! পুরো মাঠে তখন হুলস্থূল অবস্থা; অধিনায়ক সিমোন কায়ের প্রাণপণ চেষ্টা করছেন এরিকসেনের শ্বাসপ্রশ্বাস স্বাভাবিক রাখার, প্যারামেডিক দল চালাচ্ছে দফায় দফায় ‘কার্ডিয়াক রিসাসিটেশন’। ততক্ষণে ডেনমার্ক দল এরিকসেনকে ঘিরে দাঁড়িয়েছে, তৈরি করেছে মানবদেয়াল; আড়ালে তখনও চলছে সিপিআর। হঠাৎ গ্যালারিতে গেল ক্যামেরা। ডেনমার্কের সমর্থক বলুন কিংবা ফিনল্যান্ডের, সবার মুখে রাজ্যের অন্ধকার, কেউ কেউ ঘটনার আকস্মিকতায় বিহ্বল হয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। আর এরিকসেনের স্ত্রী সাবরিনা নেমে এসেছেন মাঠে, সন্দিগ্ধ চোখে খুঁজছেন একটু আশ্রয়। এগিয়ে এলেন ক্যাসপার স্মাইকেল; জানালেন, এরিকসেনের শ্বসনক্রিয়া এখনও সচল। সাবরিনা এবার আর ধরে রাখতে পারলেন না নিজেকে, ভেঙে পড়লেন কান্নায়। এগিয়ে এলেন সিমোন কায়েরও, জড়িয়ে ধরে দিলেন সান্ত্বনা। এতটা হৃদয়বিদারক দৃশ্য শেষ কবে দেখেছে ফুটবল?

এমনিতেই কোভিড নিয়ে দোলাচলে থাকা ইউরো শুরুর রেশ কাটতে না কাটতেই এরিকসন কাহিনীতে বেশ বড় ধাক্কা লাগলো। এরিকসনের এই ঘটনা ছাড়াও ইউরোর তিনদিনে বিশ্ব দেখেছে বেশ কিছু আবেগের বিস্ফোরণ, রেকর্ড, অঘটন, প্রত্যাশিত ফল ও চমক। সেইসব নিয়েই আজকের এই আয়োজন।

ডেমিরালের গোল

ডেমিরালের আত্মঘাতী গোল করার মুহূর্ত; Image Source : Goal.com/Getty Image

২০১৪ বিশ্বকাপে মার্সেলোর কথা নিশ্চয়ই মনে আছে? পাঠক হয়তো ভাবছেন, ইউরোর সাথে মার্সেলোর যোগসাজশ কোথায়? যোগসাজশ ওই মেরিহ ডেমিরালই। টুর্নামেন্টের প্রথম গোলটি বরাবরই গুরুত্বপূর্ণ ও ঐতিহাসিক। সেইদিক থেকে ২০১৪ বিশ্বকাপ আর ২০২০ ইউরো যেন মিলে গেল এক বিন্দুতে। ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে মার্সেলোর মতো ডেমিরালের আত্মঘাতী গোলই হয়ে থাকল টুর্নামেন্টের প্রথম গোল।

তবে ব্রাজিল পরবর্তীতে সে ম্যাচে তিন গোল করে ক্রোয়েশিয়াকে হারালেও তুরস্কের ভাগ্য এতটা সুপ্রসন্ন হয়নি। প্রথম ম্যাচেই ইতালির কাছে ৩-০ গোলে হেরে গিয়ে ব্যাকফুটে থেকেই ইউরো শুরু করল এ আসরের ‘ডার্ক হর্স’ তুরস্ক।

ইতালির রেকর্ড

ইতালির দুই গোলদাতা ইম্মোবিলে ও ইনসিনিয়ে; Image Source : AFP

শেষ বড় দুইটি টুর্নামেন্ট খেলা হয়নি ইতালির। অথচ প্রথম ম্যাচ দেখে কে বলবে, ৭ বছর পর বড় কোনো টুর্নামেন্ট খেলতে নামল ইতালি!

অবশ্য মানচিনির অধীনে দুর্দান্ত ইতালি যে এই ইউরোতে ভালো করতেই চলেছে, তা অনুমিতই ছিল। তাই বলে এত দুর্দান্ত ইতালিকে দেখে নিশ্চয়ই চমকে গিয়েছে বাকি ‘জায়ান্ট’ দলগুলোও। তুরস্ক দল হিসেবে হেলাফেলার নয় একেবারেই, সম্প্রতি ‘ডাচ’দেরও ৪-২ গোলে হারিয়ে এসেছে ‘টার্কি বাহিনী’। তবে খেলার মাঠে নামার পর থেকেই যেন বিস্তর ফারাক দুই দলের মাঝে। প্রথমার্ধে ভালো খেলেও গোল আদায় করতে পারেনি ইতালি। বেশ কয়েকবার পেনাল্টির আবেদন করলেও রেফারি থেকে সাড়া মেলেনি।

তবে দ্বিতীয়ার্ধে আজ্জুরিরা সেসব কড়ায়-গণ্ডায় তুলে নেয়। ডেমিরালের আত্মঘাতী গোলের পর বল জালে জড়ান ইম্মোবিলে ও ইনসিনিয়ে দুইজনই। তাতেই ইতালির রেকর্ড বুকে নাম উঠে যায় ম্যাচটি। এই প্রথম ইউরোর কোনো ম্যাচে প্রতিপক্ষকে তিন গোল করতে সক্ষম হয় ইতালি। তবে ইনসিনিয়ে কিংবা ইম্মোবিলে নন, কোনো গোল কিংবা অ্যাসিস্ট ছাড়াই ম্যান অফ দ্য ম্যাচ হন পুরো ম্যাচে দুর্দান্ত খেলা লেফটব্যাক স্পিনাৎজোলা।

ফুটবল, ইউ বিউটি! 

ফিনল্যান্ড ম্যাচে ক্রিস্টিয়ান এরিকসেন; Image Source : Goal.com/Getty Image

ম্যাচের তখন ৪০ মিনিট। ফিনল্যান্ডের ডি-বক্সের পাশে থ্রো-ইন পায় ড্যানিশ বাহিনী। সেই সময়ই ঘটল হৃদয়বিদারক ঘটনাটা। বলা নেই, কওয়া নেই, হুট করেই মাটিতে পড়ে গেলেন ক্রিস্টিয়ান এরিকসেন। প্রাথমিক চিকিৎসা শুরু হলো, ডেনমার্কের খেলোয়াড়েরা ভাইকিং ওয়াল গড়লেন ক্যামেরা থেকে নিষ্কৃতি পাওয়ার খাতিরে। তবুও এক পাশ রয়ে যাচ্ছিল উন্মুক্ত। এগিয়ে এলেন ফিনিশ সমর্থকেরা, বাড়িয়ে দিলেন দুটো ফিনিশ পতাকা। সেটা তাঁবুর মতো করে জড়িয়েই চলতে থাকলো সিপিআর, রিসাসিটেশন, ডিফিব্রিলেটর। কিছুটা থিতু হতেই দ্রুতই এরিকসেনকে নেওয়া হলো হাসপাতালে।  

মাঠে খেলোয়াড়দের বিহ্বলতা এখনও কাটেনি, সমর্থকরাও ভেঙে পড়েছেন। মাঠটা তখন একেবারে ফাঁকা। ততক্ষণে মাঠে ফুটবল থেকেও বড় হয়ে উঠেছে একটাই প্রার্থনা – ফিরে আসুন ক্রিস্টিয়ান এরিকসেন! হঠাৎ ফিনিশ গ্যালারি থেকে ভেসে এলো চ্যান্ট, “ক্রিস্টিয়ান!” ড্যানিশ গ্যালারি থেকেও ভেসে এলো প্রত্যুত্তর, “এরিকসেন!” এমনটা চলতে থাকলো বেশ কিছুক্ষণ। 

খেলা বন্ধ হলেও মাঠ ছাড়েননি দর্শকরা, অপেক্ষারত ছিলেন একটি সংবাদের জন্য। অবশেষে এলো সেই সংবাদ; এএফপি জানাচ্ছে, পুরো স্টেডিয়াম ফেটে পড়েছিল করতালি আর উল্লাসধ্বনিতে, যখন ঘোষণা করা হলো এরিকসেন এই মুহূর্তে শঙ্কামুক্ত। কী দুর্ভাগ্যজনক এক রাতে কী অসম্ভব সুন্দর কিছু ঘটনা!

“কেউ কেউ মনে করেন, ফুটবল বোধহয় জীবন-মরণ কোনো ব্যাপার। আমার কাছে এটা ভালো লাগে না। হলফ করে বলতে পারি তাদেরকে, ফুটবল এর থেকেও বড় কিছু।”

কথাটা বিল শ্যাঙ্কলি বলেছিলেন বহু বছর আগে। এই রাতটা আরেকবার মনে করালো, এমন ‘লার্জার দ্যান লাইফ’ এক্সপেরিয়েন্সটা ফুটবল থেকে ভালো আর কোন খেলাই বা দিতে পারে! 

ফিনল্যান্ডের চমক

গোলের পরও উদযাপন নেই ফিনল্যান্ডের; Image Source : The Athletic

এরিকসন ঘটনায় ফিনল্যান্ড-ডেনমার্ক ম্যাচটি বেশ কিছুক্ষন স্থগিত থাকে। পরবর্তীতে এরিকসেনের জ্ঞান ফিরলে ফেসটাইমের মাধ্যমে ডেনমার্ক দলকে এরিকসেন আশ্বস্ত করলে দুই দল ও অফিশিয়ালরা মিলে ম্যাচটি চালিয়ে যাওয়ার পক্ষে রায় দেয়; পুনরায় ম্যাচটি শুরু হয়। তবে তার আগ পর্যন্ত দুর্দান্ত খেলতে থাকা ডেনমার্ক ততক্ষণে মনোবলের অভাবে খেই হারিয়ে ফেলেছে। ফলাফল, ৫৯ মিনিটে গোল করে বসেন ফিনল্যান্ডের জোয়েল পোহিয়ানপালো। তার গোলটিই ফিনল্যান্ডের ইতিহাসে বড় টুর্নামেন্টে সর্বপ্রথম কোনো গোল। অথচ এমন ঐতিহাসিক গোলের পর এতটুকুও উদযাপনের চেষ্টা করেনি ফিনিশরা, সেই এরিকসেনের জন্যই। 

অধিনায়ক সিমোন কায়েরও আর পেরে উঠছিলেন না। কঠিন সময়টুকু শক্ত হাতে সামাল দিলেও মাঠে তার মানসিক বিপর্যস্ততা ছিল স্পষ্ট। কোচ ক্যাসপার হিউলমান্ডও সেটা বুঝতে পেরে তুলে নিলেন সিমোনকে। পরবর্তীতে ডেনমার্ক পেনাল্টি পেলেও স্পটকিক থেকে গোল করতে ব্যর্থ হন পিয়েরে এমিল হইবিয়ের। তাতে করেই ফিনল্যান্ডের জয় নিশ্চিত হয়। তবে ফলাফল ছাপিয়ে এই ম্যাচটা শুধুই এরিকসেনের। 

নর্থ মেসিডোনিয়ার ইতিহাস

মেসিডোনিয়ার হয়ে ইউরোতে প্রথম গোলের পর পানডেভ; Image Source : Fifa.com

মাত্র চার বছর আগেও ফিফা র‍্যাংকিংয়ে নর্থ মেসিডোনিয়ার অবস্থান ছিল ১৬৬। বর্তমানে তারা আছে ৬২ নাম্বারে। প্রথমবারের মতো ইউরোর মঞ্চে খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছে দলটি। মাত্র ২১ লাখ জনসংখ্যার দেশটির হয়ে ইউরোতে প্রথমবারের মতো গোল করেন গোরান পানডেভ। ৩৭ বছর বয়সী পানডেভের গোলে সমতায় ফিরলেও অবশ্য শেষ রক্ষা হয়নি দলটির, অস্ট্রিয়ার সাথে তারা ম্যাচটি হেরে যায় ৩-১ গোলে। ডেভিড আলাবার দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের সুবাদে জয় দিয়েই ইউরো শুরু করে অস্ট্রিয়া। অবশ্য তাতে করেও মেসিডোনিয়ার নতুন করে লেখা ইতিহাস ব্রাত্য হয়ে পড়ে না।

লুকাকুর জোড়া গোল এবং “ক্রিস, আই লাভ ইউ!” 

এরিকসনকে গোল উৎসর্গ করলেন লুকাকু; Image Source : Goal.com/Getty Image

শিরোপার দৌড়ে এই মুহূর্তে সব থেকে এগিয়ে থাকা দলগুলোর মধ্যে বেলজিয়াম একটি। আর গোল্ডেন বুটের লড়াইয়ে যে ক’জন বাজির ঘোড়া আছেন, তাদের মধ্যে অন্যতম রোমেলু লুকাকু। সেটি যে ভুল নয়, তা মাঠেই প্রমাণ করলেন সময়ের অন্যতম সেরা এই স্ট্রাইকার। বেলজিয়ান স্ট্রাইকারের জোড়া গোলের সুবাদেই ৩-০ গোলে রাশিয়াকে হারিয়ে শুভ সূচনা করেছে বেলজিয়াম। এই ম্যাচেও প্রচ্ছন্নভাবে ছিলেন ক্রিস্টিয়ান এরিকসেন। তিনি ছিলেন, কারণ তাকেই গোল উৎসর্গ করেছেন লুকাকু। 

ম্যাচের তখন সবে ১০ মিনিট। রাশিয়ার বিপক্ষে প্রথমবার গোলমুখ খুললেন লুকাকু। গোল করার পর দ্রুতই খুঁজে নিলেন ক্যামেরা, ছুটে গেলেন সাথে সাথেই। এরপর ক্যামেরাটা ধরে বললেন, 

“ক্রিস! ক্রিস! আই লাভ ইউ!” 

এই জোড়া গোলের মধ্য দিয়ে লুকাকুর গোল্ডেন বুট পাওয়ার সম্ভাবনাও বেশ বেড়ে গেল। অবশ্য বিগত কয়েক বছর ধরেই বেলজিয়ামের জার্সি গায়ে নিয়মিতই পারফরম্যান্স করে আসছেন তিনি। বেলজিয়ামের হয়ে ৯৪ ম্যাচে করে ফেলেছেন ৬২ গোল। বর্তমানে ইউরোতে খেলছেন এ্মন খেলোয়াড়দের মধ্যে আন্তর্জাতিক গোলসংখ্যায় শুধুমাত্র লেওয়ানডস্কি আর রোনালদোই এগিয়ে আছেন লুকাকু থেকে। বলা বাহুল্য, বেলজিয়ামের ইতিহাসে সর্বোচ্চ গোলদাতাও তিনিই। এই ইউরোতে লুকাকু নিশ্চয়ই চাইবেন সে গোলসংখ্যা যতটা সম্ভব বাড়িয়ে নিতে। 

ইংল্যান্ডের প্রতিশোধ

গোলের পর স্টার্লিং; Image Source : The Athletic

গত বিশ্বকাপ ঘরে আনার স্বপ্ন ইংলিশরা জলাঞ্জলি দিয়েছিল ক্রোয়েশিয়ার কাছে সেমিফাইনালে হেরে। তার তিন বছর পর ইংলিশদের আরো একটি বড় টুর্নামেন্ট শুরু হলো সেই ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষেই। দেখার বিষয় ছিল, থ্রি লায়ন্স সেই হারের ‘বদলা’ নিতে পারে কি না। স্কোরশিটের ফলাফল অনুসারে সেই ‘প্রতিশোধ’ ইংল্যান্ড নিয়েছে বটে, তবে মাঠের খেলা নিয়ে প্রশ্নও উঠেছে বড়সড় করেই। দুর্দান্ত এক দল নিয়েও তেমন ভালো যে খেলতে পারেনি সাউথগেটের শিষ্যরা! তবে স্বস্তির বিষয়, স্টার্লিংয়ের ৫৭ মিনিটের গোলে পূর্ণ তিন পয়েন্ট নিয়েই শেষ পর্যন্ত মাঠ ছেড়েছে ইংল্যান্ড।

তবে এমন হতাশামূলক খেলা দিয়ে ইংল্যান্ড শেষ পর্যন্ত শিরোপার দোরগোড়ায় পৌঁছাতে পারবে কি না, সেটা নিয়ে সংশয় থেকেই যায়। অন্যদিকে, রাশিয়া বিশ্বকাপের ফর্ম ইউরোতে টেনে আনতে পুরোপুরি ব্যর্থ হলো ক্রোয়েশিয়া। স্লাৎকো দালিচের শিষ্যদের চোখ তাই পরবর্তী ম্যাচের দিকেই।

This article is in Bangla language. It is about the first three days highlights. Necessary information are hyperlinked in the article. 

Feature Image: cambridgeshirefa

Background Image: UEFA

Related Articles