Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

লিসবন বৈঠক: যেভাবে মরিনহোর বদলে বার্সেলোনা কোচের দায়িত্ব পান গার্দিওলা

সালটা ২০০৮। এক যুগ পর বার্সাকে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ এনে দেয়া কোচ ফ্রাঙ্ক রাইকার্ডের অবস্থা বেশি ভাল না। রিয়াল মাদ্রিদের কাছে দল সদ্য লিগ হেরেছে, চ্যাম্পিয়ন্স লিগেও সাফল্য আসেনি, তারকা রোনালদিনহোর মাঠ বা মাঠের বাইরের সময়টাও বার্সাকে বিপাকে ফেলছে। তৎকালীন সভাপতি লাপোর্তা আর দুই উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা মার্ক ইঙ্গলা ও টক্সিকি বেজিরিস্টেইন তখন রাইকার্ডের বিকল্প খোঁজায় ব্যস্ত। সেরা বিকল্প যে তখন কর্মহীন! হ্যাঁ, হোসে মরিনহো। পোর্তোকে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জিতিয়ে চেলসিতে এসে ৫০ বছর পর টানা দুটো লিগ এনে দেয়া হোসে সদ্য চেলসি থেকে বরখাস্ত হয়েছেন। সেই সময়ে মরিনহোর চেয়ে ভাল বিকল্প আর কে হতে পারে? এদিকে কর্মকর্তারা সাবেক বার্সা ক্যাপ্টেন, তৎকালীন যুবদলের কোচ পেপ গার্দিওলাকেও ভাবনায় রেখেছেন। কিন্তু অবশ্যই সেরা বিকল্পের সাথে অখ্যাত পেপকে তুলনা করে বাজিয়ে দেখা দরকার- এমন ধারণা থেকেই লিসবনে গোপন এক বৈঠকে বসেন বার্সা কর্তারা মরিনহোর সাথেই। এ বৈঠকটিই নির্ধারণ করে দেয় পরবর্তী অর্ধযুগে বার্সা, রিয়াল ও ইন্টার মিলান ক্লাব তিনটির ইতিহাস!

২০০৮ এর প্রেক্ষাপটে মরিনহো ও গার্দিওলা

মরিনহো যখন বার্সায় সহকারী কোচ ছিলেন পেপ তখন অধিনায়ক; Image Source:fourfourtwo.com

২০০৮ এ ফুটবল বিশ্বে সবচেয়ে ‘হটকেক’ কোচ হোসে মরিনহো। সবার ধারণার বাইরে গিয়ে পোর্তোকে ট্রেবল জিতিয়ে তাঁর উত্থান। এরপর উচ্চাভিলাষী চেলসি মালিকের সাধ মিটিয়ে অর্ধশতাব্দী পর চেলসিকে লিগ এনে দেন। প্রায় মধ্যসারির এক চেলসিকে বানিয়ে তোলেন এক জায়ান্ট হিসেবে। ফার্গুসন, বেনিতেজ, ওয়েঙ্গারদের সাথে যুঝে টানা দুই লিগ এনে দেয়ার পরও এক মৌসুমের বাজে ফলাফল আর চ্যাম্পিয়ন্স লিগের অধরা স্বপ্নের কারণে আব্রাহামোভিচের খড়্গ নেমে আসে তাঁর উপর। ফলে সেই সময় মরিনহোর হাতে কোনো দলের দায়িত্ব ছিল না।

অন্যদিকে পেপ গার্দিওলা বার্সা একাডেমি থেকে উঠে আসা খেলোয়াড়। মাঝমাঠের এই কান্ডারী ছিলেন ইয়োহান ক্রুয়েফের তিকিতাকার সাফল্যের আসল অস্ত্র। ক্রুয়েফের ভাষ্যে, এই ‘সেরা ছাত্র’ এর হাত ধরেই বার্সার প্রথম চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জয়, তথা প্রথম স্বর্ণযুগ। তাঁর জন্ম থেকে ধরে ক্যারিয়ার সবটাই বার্সাময়। খেলোয়াড়ি ক্যারিয়ারের শেষে দায়িত্ব পান বার্সা যুবদলের। প্রথম মৌসুমেই এনে দেন শিরোপা। শিরোপা বড় কথা না, যুবদল খেলতে থাকে সেই ধাঁচে, যে ধাঁচে ২০০৮-১২ তে পেপ পরবর্তীতে বিশ্বশাসন করেন। পেপ ও মরিনহো দুজনই বার্সায় একসাথে ছিলেন ভ্যান গালের সময়ে। পেপ তখন তারকা খেলোয়াড় আর হোসে ভ্যান গালের সহকারী কোচ। ফলে দুজনই কমবেশি বার্সাকে জানতেন।

লিসবন বৈঠক

মরিনহো-গার্দিওলার দ্বৈরথ রসদ যুগিয়ে আসছে একযুগের বেশি সময় ধরে; Image Source:Sky Sports

মরিনহোর বাগ্নিতা নিয়ে কখনোই কোনো সন্দেহ ছিল না, ছিলো না তাঁর কোচিং জ্ঞান নিয়েও। লিসবন বৈঠকে মরিনহো মিনিট পনেরব্যাপী এক পাওয়ারপয়েন্ট স্লাইডে তাঁর যাবতীয় পরিকল্পনা উপস্থাপনা করেন। ইঙ্গলা মুগ্ধ হয়ে যান। তিনি পরবর্তীতে বলেন, “হোসে দূর থেকে ক্লাবের সবই পর্যবেক্ষণ করছিলেন। বার্সার প্রতিটা ত্রুটি ও দূর্বলতার উপর ভিত্তি করে যে উপস্থাপনাটা দেন আসলেই তা অসাধারণ। আমরা ফুটবল নিয়ে কথা বলতে লাগলাম।” বৈঠকটা ছিল অন্য ধাঁচের। সবাই প্রথম আলাদাভাবে কথা বলেন, এরপর তিনজন একসাথে। ইঙ্গলা প্রথমেই মরিনহোয় মজে যান।

একটু পর তিক্সি আসেন। তিক্সিকেও জোসের বাগ্মিতা মুগ্ধ করলো। কিন্তু তাঁর হাতে ৯টি পয়েন্ট ছিল, যা একজন বার্সা কোচের থাকা লাগতই। তিক্সির মনে হলো, হোসের সবই আছে, ৬ নম্বরটি বাদে। কী ছিল সেটি? সেটি ছিল- কোচকে ক্লাবের প্রতীক হতে হবে তাঁর আচরণে ও চলনে। সেই নিয়েই হঠাৎ মরিনহোকে প্রশ্ন করলেন, “হোসে, আপনার সব ঠিক। কিন্তু বার্সার মতো ক্লাবে যেখানে সপ্তাহে তিনটা ম্যাচ থাকে, প্রতি সপ্তাহে তিন ঘন্টা করে মিডিয়ার সামনে কনফারেন্স রুমে আপনি কি আপনার অভ্যাস (চেলসিতে থাকাকালীন মিডিয়াঘটিত বিতর্কগুলোকে উদ্দেশ্য করে) বদলে আমাদের প্রতীক হয়ে উঠতে পারবেন?

হোসে উত্তর দেন, “না, আমি নিজেকে বদলাতে পারবো না। সম্মান রেখেই বলছি, ভ্যান গালকে দেখুন। প্রথম দফায় তিন বছরে বার্সাকে টানা দুবার লিগ ও কাপ জেতান, যখন তিনি একগুয়ে ছিলেন। এর পরে দ্বিতীয় দফায় আপনারা তাকে আনলেন এমন শর্ত দিয়ে। তিনি কোচ না, ‘প্রেয়সী’ হয়ে এলেন আর ছয় মাসেই বরখাস্ত। আমি নিজের মতোই থাকবো।

কেবল এই কথাতেই তিক্সির ধারণা বদলে যায়। ইঙ্গলাও বিগড়ে যান। আরেকটু কথাবার্তার পরে বৈঠক শেষ হয়। এয়ারপোর্টে এসে ইঙ্গলা ও তিক্সি নিজেরা কথা বলতে থাকেন এই বিষয় নিয়ে। ইঙ্গলার কথায়, “একটা ব্যাপার মাথায় এল যে, জোসে ৯০ ভাগ কথাই নিজে বলছিলেন, আমাদের কথা শোনার ফুসরত ছিল না। আসলে তিনি নিজেই একটা দলের ‘নাম্বার ওয়ান’ থাকতে চান। বার্সায় এই মূল্যবোধ খাটে না।

তারা এসেই স্পোর্টিং হেড সোরিয়ানোর কাছে যান। তিক্সি সরাসরিই বলে, “আমি নিশ্চিত, হোসে বার্সায় সফল হবেন। তাঁর কাছে আমাদের সব ত্রুটি নিয়ে তথ্য ও সমাধানের পরিকল্পনা আছে। সমস্যা হলো, তিনি তাঁর মিডিয়ার সাথে স্টাইল বদলাবেন না। এটাই ভাবার বিষয়।” সোরিয়ানো সব শুনলেন।

সভাপতি লাপোর্তার ভাষ্যে বাকিটুকু

সময়ের পরিক্রমায় মরিনহোর স্থান হয় রিয়াল মাদ্রিদে; Image Source:Palbrosinfotainment.com

সময়টা কঠিন ছিল, কারণ অনেক বোর্ড সদস্যই মরিনহোকে পছন্দ করতেন। তিক্সি আর ইঙ্গলাও দ্বিধাগ্রস্ত ছিলেন। পাঁচজন বোর্ড সদস্য সরাসরি হোসেকে এই বলে সমর্থন করলেন যে, আমাদের এখন ভাল ফলাফল দিতে পারে এমন কোচ দরকার, আর মরিনহো এমনই একজন। এছাড়া রিয়ালের সাথেও মরিনহোর ইতিহাস খারাপ। সেটাও আমাদের জন্য ভাল। এমনকি আমাদের জাভি ও ভিক্টর ভালদেসেরও মরিনহোকে নিয়োগ নিয়ে কোনো সমস্যা ছিল না, উল্টো তারাও এর পক্ষে ছিলেন!

এই জায়গায় জাভির একটি কথা বলে রাখা যাক, “ভ্যান গালের সহকারী হিসেবে হোসে প্রায়ই আমাদের ট্রেনিং করাতেন। তাঁর পদ্ধতি ছিল আলাদা আর আমরা তা পছন্দ করতাম।” স্মৃতিচারণ করলেন ভালদেসও, “একদিন মূল দল থেকে একজন এলেন আমাদের যুবদলের মাঠে ট্রেনিং করাতে। তাঁর কথাবার্তা থেকে ধরে পদ্ধতি সব ছিল আলাদা। বিশ্বাস করুন, তাঁর ফুটবলীয় ধারণা ক্লাবের সাথে মিলতো।

কোচ নিয়ে টালমাটাল এক বোর্ডের জন্য ত্রাতা হয়ে এলেন বার্সা ইতিহাসের সবচেয়ে প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব ইয়োহান ক্রুয়েফ। সব শুনে সরাসরি তিনি বললেন, “একবাক্যে বলছি, কোনো চিন্তা না করে পেপকে দায়িত্বটা দিয়ে দাও। ওকে আমি চিনি, ও-ই আমাদের যোগ্য লোক।” ইতিহাসের দিক ঘুরিয়ে দেয়া এই দুই লাইনের পর ক্রুয়েফের অন্ধভক্ত প্রেসিডেন্ট লাপোর্তা আর দ্বিতীয়বার ভাবেননি। ক্রুয়েফকে বললেন, “আপনিই আপনার ছাত্রকে সুখবরটা দিন।

ক্রুয়েফ যখন পেপ গার্দিওলাকে সংবাদটা দেন, তিনি বিশ্বাস করতে পারেননি। ভেবেছিলেন কয়েক ম্যাচ বাজে ফলের জন্য হয়তো তাকে যুবদল থেকে সরানো হবে! তিনি উল্টো জিজ্ঞাসা করেন, “কেন আমার যুবদল কি এতই খারাপ করছে, বস?” তিক্সি সবটা বলার পর তাকে পেপ বলেন, “আপনাদের জন্য মরিনহোই তো সেরা বিকল্প ছিলেন, শিরোপার নিশ্চয়তা দিতেন!” তিক্সি উত্তর দেন, “জিততে তো সবাই পারে কিন্তু পরাজয়ে যে বিনীত থাকে- এমন কাওকে চাই আমরা। তুমি এই সংস্কৃতির লোক, পেপ।” বাদ পড়ে যান মরিনহো।

ইতিহাসের গতিপথ

বারবার মাঠে ও বাইরে তর্কে মত্ত হয়েছেন পেপ ও হোসে; Image Source:Off The Ball

লিগে আধিপত্য করতে থাকা রিয়াল মাদ্রিদ এক অন্ধকার যুগে প্রবেশ করে বার্সার আধিপত্যের কারণে, যার আসল কারণ ছিল পেপ গার্দিওলা। ওদিকে বার্সার দায়িত্ব না পেয়ে মরিনহো নিয়ে নেন ইন্টার মিলানের চাকরি। সেই থেকে বার্সার সাথে তাঁর শত্রুতা পৌছে যায় চরমে। ইন্টারকে নিয়ে যেবার চ্যাম্পিয়ন্স লিগ সহ ট্রেবল জেতেন, সেবার বার্সাকে হারিয়েই ফাইনালে উঠেন মরিনহো। অন্যদিকে ধুঁকতে থাকা রিয়ালকে উদ্ধার করতে রিয়াল সভাপতি মরিনহোকে রিয়ালে নিয়ে আসেন। পুরো না পারলেও প্রথম গার্দিওলা সাম্রাজ্যকে পরাস্ত করতে সক্ষম হন এই মরিনহোই। লিসবন বৈঠকে সেদিন ৬ নম্বর পয়েন্টের উত্তরটা অন্যভাবে দিলে হয়তো ইতিহাসের গতিও অন্যরকম হতে পারতো।

Pep Guardiola is a former Barca Captain and Coach where Jose Mourinho is a legendary coach who was successfull with Real Madrid, Chelsea, Inter Milan and Porto. This Bangla article is based on the process how Barca approached Jose first but handed Pep the Barca-job.

Feature Image: 101 Great Goals

Related Articles