Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

তিন স্পিনার খেলানোর সিদ্ধান্ত কতটা যৌক্তিক?

আজ কেনিংটন ওভালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ম্যাচের মাধ্যমে বিশ্বকাপ অভিযান শুরু হচ্ছে বাংলাদেশের। আসরে বড় কিছু করতে চাইলে প্রথম ম্যাচে জয়ের কোনো বিকল্প নেই তাই ম্যাচটি বাংলাদেশের জন্য ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। অন্যদিকে ইংল্যান্ডের কাছে প্রথম ম্যাচ হেরে কিছুটা কোণঠাসা হয়ে আছে প্রোটিয়ারা, তাই লড়াইয়ে ফিরতে চাইলে তাদের জন্যেও এই ম্যাচে জয় পাওয়াটা ভীষণ জরুরি। এমন একটা ম্যাচে জিততে হলে বাংলাদেশকে নিজেদের সেরাটাই দিতে হবে, তবে সবার আগে নিজেদের সেরা একাদশ নামানোর ব্যাপারটা নিশ্চিত করতে হবে টাইগারদের। 

বড় কিছু করার স্বপ্ন নিয়েই এবার বিশ্বকাপ মিশনে গিয়েছে বাংলাদেশ দল; Image Source: CA

যতটুকু শোনা যাচ্ছে তাতে আজ খুব সম্ভবত তিন স্পিনার নিয়েই মাঠে নামবে বাংলাদেশ। সেক্ষেত্রে রুবেল অথবা সাইফুদ্দিনের মধ্যে যেকোনো একজনকে সাইডবেঞ্চে বসিয়ে মেহেদি হাসান মিরাজকেই আজ নামানো হবে। আরেক স্পিনার হিসেবে বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান তো আছেনই সাথে তৃতীয় স্পিনার হিসেবে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদকে দিয়েই কাজ চালানো যেতো। কিন্তু ইনজুরির কারণে বোলিং করার জন্য এখনো ফিট নয় রিয়াদ, তাই তৃতীয় স্পিনার নেওয়ার জন্য সাব্বির রহমানকে বসিয়ে অফ স্পিনিং অলরাউন্ডার মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতকেই আজ মূল একাদশে রাখা হবে।

এমন সিদ্ধান্ত নেওয়ার মূল কারণ এবারের আসরের উদ্বোধনী ম্যাচ, ওভালে অনুষ্ঠিত সেই ম্যাচে বল গ্রিপ করায় তাহির, মঈন, রশীদ– তিনজন স্পিনারই বেশ সুবিধা পেয়েছিলো। বাংলাদেশ টিম ম্যানেজমেন্টও সেই সুবিধা আদায় করার জন্য এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কেনিংটন ওভালে স্পিনাররা কি সত্যিই বাড়তি সুবিধা পায়? পরিসংখ্যানের হিসাব ঠিক কী বলছে সেটা একবার দেখে নেওয়া যাক। 

বাড়তি স্পিনার খেলানোর জন্য সাইফ বা রুবেল যেকোনো একজনকে বসতে হবে সাইডবেঞ্চে; Image Source: cricbuzz

প্রথমে এই মাঠে অনুষ্ঠিত হওয়া ম্যাচগুলোতে পেসার ও স্পিনারদের পারফরম্যান্সের একটা তুলনামূলক পরিসংখ্যানে চোখ বুলিয়ে নেওয়া যাক। ওভালে এখন পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হওয়া ৪২টি ওয়ানডেতে মোট ১৪৫৪.৪ ওভার করেছে পেসাররা, সেখানে ৩২.৬০ গড়ে উইকেট নিয়েছে ১৯৭টি, স্ট্রাইকরেট ৪৪.৩১। আর ওভারপ্রতি খরচ করেছে ৪.৪১ রান। দেখা যাচ্ছে, এই মাঠে পেসারদের পরিসংখ্যানের ঝুলিটা বেশ সমৃদ্ধই।

অন্যদিকে স্পিনাররা এই মাঠে বল করেছে প্রায় ৪৫৮ ওভার,  সেখানে প্রায় ৩৮ গড়ে তারা উইকেট নিয়েছে মোট ৫৯টি। ওভারপ্রতি খরচ করতে হয়েছে ৪.৮৯ রান আর স্ট্রাইক রেট ৪৬.৫৮।

অর্থাৎ পরিসংখ্যানের খাতায় একটা দিক কিন্তু স্পষ্ট, উদ্বোধনী ম্যাচে স্পিনাররা সুবিধা পেলেও সমগ্র ইতিহাস হিসাবে আনলে সবদিক থেকেই এই মাঠে স্পিনারদের তুলনায় পেসাররা বেশি সুবিধা পেয়েছে। পেসারদের তুলনায় উইকেটপ্রতি ৫ রান বেশি খরচ করতে হয়েছে স্পিনারদের। তাছাড়া স্পিনারদের দলে নেওয়ার অন্যতম মূল কারণ বিপক্ষ দলের রানের গতি স্লথ করে দেওয়া কিন্তু সেখানেও স্পিনারদের তুলনায় ওভারপ্রতি প্রায় ০.৫ রান কম খরচ করেছে পেসাররা। 

পরিসংখ্যানের হিসাব উল্টে মিরাজ কি পারবেন ম্যানেজমেন্টের সিদ্ধান্তকে যৌক্তিক প্রমাণিত করতে? Image Source: Ittefaq

অর্থাৎ দেখা যাচ্ছে যে, তিন স্পিনার নিয়ে খেলতে নামাটা কিন্তু এই মাঠের ইতিহাস দেখে মোটেও যৌক্তিক কোনো সিদ্ধান্ত মনে হচ্ছে না। পরিসংখ্যানের খাতায় আবারো ফিরে যাওয়া যাক, ২০১৭ সালের চ্যাম্পিয়ন্স লিগে এই মাঠেই মুখোমুখি হয়েছিলো ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকা যেখানে প্রোটিয়াদের বিপক্ষে বেশ সহজ জয় নিয়ে মাঠ ছেড়েছিলো ভারত। সেই ম্যাচে ভারতীয় পেসার আর স্পিনারদের পারফরম্যান্স কেমন ছিল?

সেই ম্যাচে ভারতের দুই স্পিনার অশ্বিন ও জাদেজা মিলে বল করেছিলো মোট ১৯ ওভার, যেখানে ৪১ গড়ে তারা মোট উইকেট নিয়েছিলেন দুইটি। দুইজনের গড় ইকোনমি রেট ছিল ৪.৩১ রান। অন্যদিকে সেই ম্যাচে ভারতের তিন পেসার ভুবনেশ্বর কুমার, জাসপ্রিত বুমরাহ ও হার্দিক পান্ডিয়া বল করেছিলো ২৫.৩ ওভার, সেখানে ২০.৫ গড়ে তারা উইকেট নিয়েছিলেন ৫ টি। এই তিনজন ওভারপ্রতি সেদিন খরচ করেছিলেন ৪.০৩ রান। অর্থাৎ দেখা যাচ্ছে দুই বছর আগে অনুষ্ঠিত সেই ম্যাচে ভারতের স্পিনারদের তুলনায় পেসাররা সবদিক থেকেই বেশি উজ্বল ছিলেন, এমনকি সেই ম্যাচের সেরা খেলোয়াড় ছিলেন জাসপ্রিত বুমরাহর মতো একজন পেসার। 

প্রোটিয়াদের বিপক্ষে সেই ম্যাচে নায়ক কিন্তু ছিলেন বুমরাহর মতো একজন পেসার; Image Source: Scroll.in

সেই চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনালেই একে অপরের মুখোমুখি হয়েছিলো দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারত ও পাকিস্তান। সেই ম্যাচের পরিসংখ্যানও একবার দেখে নেওয়া যাক। সেই ফাইনালে ভারতের তিন স্পিনার রবিচন্দ্রন অশ্বিন, রবীন্দ্র জাদেজা ও কেদার যাদব মিলে বল করেছিলেন মোট ২১ ওভার, সেখানে তাদের ওভারপ্রতি খরচ হয়েছিলো ৭.৮ রান। অন্যদিকে ভুবনেশ্বর কুমার, জাসপ্রিত বুমরাহ ও হার্দিক পান্ডিয়া এই তিনজন মিলে সেদিন বল করেছিলেন ২৯ ওভার, ওভারপ্রতি তাদের গড় খরচ হয়েছিলো ৫.৬৮ রান। পেসাররা নিয়েছিলেন দুই উইকেট, স্পিনাররা একটি।

এবার আসা যাক পাকিস্তানের বোলাররা ওভালের সেই ম্যাচে কেমন পারফর্ম করেছিলো সেই প্রেক্ষাপটে। পাকিস্তানের তিন পেসার মোহাম্মদ আমির, জুনাইদ খান ও হাসান আলি সেই ম্যাচে রীতিমতো আগুন ঝরিয়েছিলেন, তিনজন মিলে মোট ১৮.৫ ওভার করে তুলে নিয়েছিলেন ৭ উইকেট। ওভারপ্রতি তাদের খরচ করতে হয়েছিলো ৩ এর চেয়েও কম! অন্যদিকে পাকিস্তান সেই ম্যাচে স্পিনার হিসেবে মোহাম্মদ হাফিজ, ফখর জামান, ইমাদ ওয়াসিম ও শাদাব খানকে ব্যবহার করেছিলো, এই চারজন মিলে সেদিন মোট বল করেছিলো ১২ ওভার। সেখানে তাদের ওভারপ্রতি খরচ হয়েছিলো ৮.৪১ রান! উইকেট নিয়েছিলেন মোটে দুইটি।

অর্থাৎ সামগ্রিক ইতিহাস বা সাম্প্রতিক ম্যাচ – কোনোটির মাধ্যমেই তিন স্পিনার খেলানোর সিদ্ধান্তের যৌক্তিকতা ঠিক খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। খুব বেশিদূর যাওয়ারও প্রয়োজন নেই, কার্ডিফে প্রস্তুতি ম্যাচে পেসাররা ভালো শুরু এনে দেওয়ার পরেও স্পিনাররা যেভাবে বেদম মার খেল সেটাও কি ভুলে যাওয়ার কোনো উপায় আছে? ইংল্যান্ডের স্বাভাবিক পরিস্থিতিই অনেকটা এমন, এখানে খেলার শুরুতে নতুন বলে পেসাররা কিছুটা সুবিধা পাবেন। তাছাড়া ইংল্যান্ডের আবহাওয়া আর নারীর মন– এই দুটি নিয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়তো অন্যতম দুরূহ কাজ। তাই যদি কিছুটা মেঘলা আবহাওয়া থাকে সেক্ষেত্রেও পেসাররা অতিরিক্ত সুবিধা পাবে। 

তাসকিন ইস্যুতে নির্বাচকদের সিদ্ধান্ত নিয়ে জল কম ঘোলা হয়নি; Image Source: Afaae

এসব ক্ষেত্রে আলাদা সুবিধা আদায় করে নেওয়ার জন্য দরকার হয় একজন রিস্ট স্পিনারের, আমরা জানি এই রিস্ট স্পিনারদের টার্ন আদায় করে নেওয়ার জন্য খুব বেশি পিচের মুখাপেক্ষী হতে হয় না, ফ্ল্যাট পিচেও তারা টার্ন আদায় করতে সক্ষম। কিন্তু দুর্ভাগ্য, বাংলাদেশে তো তেমন কোনো রিস্ট স্পিনারও নেই। সাকিব আল হাসান, মেহেদি হাসান মিরাজ, মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত– তিনজনই প্রথাগত ফিঙ্গার স্পিনার।

পিচে কোনো সহায়তা না পেলে এই তিনজনের অবস্থা কেমন হতে পারে তার প্রমাণ সর্বশেষ প্রস্তুতি ম্যাচ। তাই সাম্প্রতিক ফর্ম বিবেচনা করে মাশরাফি আর মুস্তাফিজের সাথে সাইফুদ্দিন ও রুবেল উভয়কে খেলানোটাই কি যৌক্তিক সিদ্ধান্ত হতো না? টিম ম্যানেজমেন্ট হয়তো উদ্বোধনী ম্যাচে স্পিনারদের সাফল্যের সাথে দক্ষিণ আফ্রিকার স্পিনে দূর্বলতার ব্যাপারটা কাজে লাগাতে চাইছে কিন্তু সত্যিই যদি পিচ প্রথম ম্যাচের মতো কিছুটা স্লো না হয় তবে সেই পরিকল্পনা কি কাজে লাগবে?

এমনিতেই তাসকিন আহমেদের বদলে আবু জায়েদ রাহিকে নিয়ে বিশ্বকাপ শুরুর আগে অনেক বিতর্কে জন্ম দিয়েছে টাইগার ম্যানেজমেন্ট। তার উপর বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচে তিন স্পিনার খেলানোর সিদ্ধান্ত যদি বুমেরাং হয়ে ফিরে আসে, তবে বিতর্কের আগুন আবারো জ্বলে উঠবে। পরিসংখ্যানের খাতা যা-ই বলুক না কেনো, সবকিছুকে পিছনে ফেলে টাইগাররা এই ম্যাচে জ্বলে উঠে সুন্দর একটা সূচনা উপহার দিতে সক্ষম হবে সেটাই আমাদের প্রত্যাশা।    

This article is in Bangla language. It's an analysis about the the logicality of going with three spinners against South Africa. For references please check the hyperlinks inside the article.

Featured Image: The Daily Star

Related Articles