Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

কপিল, হ্যাডলি, বোথাম, ইমরান- কে সেরা অলরাউন্ডার?

‘অলরাউন্ডার’ ক্রিকেট খেলার দুর্লভ গুণাবলীগুলোর একটি। সচরাচর যেসব খেলোয়াড় ব্যাটিং এবং বোলিং দুই ক্ষেত্রেই দলে ভূমিকা রাখতে পারেন, তাদেরকেই অলরাউন্ডার বলা হয়ে থাকে। দলে একজন অলরাউন্ডারের উপস্থিতি সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে বাছাই করার সুযোগ এবং বৈচিত্র্য বাড়িয়ে দেয়।

ইতিহাস বিখ্যাত অলরাউন্ডাররা- রিচার্ড হ্যাডলি, ক্লাইভ রাইস, কপিল দেব ও ইয়ান বোথাম, সাথে ম্যালকম মার্শাল; Source: ESPNcricinfo

ক্রিকেটে যুগে যুগে গ্যারি সোবার্স, জ্যাক ক্যালিস কিংবা সমসাময়িক সাকিব আল হাসানের মতো অনেক অলরাউন্ডার এসেছেন। তবে ৮০/৯০ এর দশকে ক্রিকেট বিশ্বকে আলোকিত করে এসেছিলেন চারজন কিংবদন্তী অলরাউন্ডার– কপিল দেব, ইয়ান বোথাম, রিচার্ড হ্যাডলি এবং ইমরান খান।

এদের প্রত্যেকেই তাদের দলের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিলেন, পাশাপাশি ক্রিকেট ইতিহাসেরও নিজেদের অবস্থান পাকাপোক্ত করেছেন। আজকের লেখায় শুরুতে খুব সংক্ষিপ্তভাবে তাদের প্রত্যেকের সম্পর্কে অল্প করে কিছু কথা বলা হবে, এরপর তাদের খেলোয়াড়ি জীবনের তুলনামূলক বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করা হবে।

কপিল দেব

২০০২ সালের কথা। উইজডেন থেকে উদ্যোগ নেওয়া হলো গত শতাব্দীর সেরা ভারতীয় ক্রিকেটার নির্বাচন করার। কাজটা খুব সহজ ছিল না। যুগে যুগে ভারতে তারকা ক্রিকেটার কম আসেনি। এরপরেও সংক্ষিপ্ত তালিকায় ১৬ জনের নাম নিয়ে আসা হলো, যার মাঝে সুনীল গাভাস্কার, আজহারউদ্দিন, অনিল কুম্বলে, বিশান সিং বেদি, বিজয় হাজারে এবং শচীন টেন্ডুলকারের নামও ছিল।

১৬ জনের তালিকা থেকে শেষ পর্যন্ত নামিয়ে তিন জনের তালিকায় নিয়ে আসার পর দেখা গেল, তিনজনই যথেষ্ট বড় মাপের খেলোয়াড়; শচীন, গাভাস্কার এবং কপিল। শেষ পর্যন্ত পুরস্কারটি জিতে নিলেন কপিল।

কপিল দেব; Source: ESPNcricinfo

প্রশ্ন হচ্ছে, পরিসংখ্যানে বাকি দুজনের চেয়ে অনেকখানি পেছনে থেকেও ঠিক কোন কারণে কপিল দেব পুরস্কারটা জিতে নিলেন?

পারফর্মেন্সের পাশাপাশি দলে নিজের প্রভাবের বিষয়টাও তখন কাজ করেছিল। সেই সময় ভারত আজকের মতো এত শক্তিশালী দল ছিল না। কপিলের নেতৃত্বেই ১৯৮৬ সালে ভারত ইংল্যান্ডের মাঠে ২-০ ব্যবধানে টেস্ট সিরিজ জিতে নেয়। এছাড়া ১৯৮০-৮১ মৌসুমে অস্ট্রেলিয়ার মাঠে তার ২৮ রানে ৫ উইকেট নেওয়ার ফলেই অস্ট্রেলিয়া মাত্র ৮৩ রানে অলআউট হয় এবং ভারত সিরিজ ড্র করতে সমর্থ হয়। সেটি ছিল অস্ট্রেলিয়ার মাঠে ভারতের প্রথম কোনো সিরিজ ড্র করতে পারা। এরপরে আজ পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়ার মাঠে ভারত কখনো টেস্ট সিরিজ জিতে আসতে পারেনি।

তবে এগুলোর চেয়েও কপিলকে এগিয়ে দিয়েছিল ১৯৮৩ সালের বিশ্বকাপ জয়। দুর্বল একটি দল নিয়ে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি, কপিলের একটি ইনিংসের কারণেই দলের সবার মাঝে বিশ্বাসটা এসেছিল যে, বড় মঞ্চে তারা কিছু করতে পারে। সেই ইনিংসটি নিয়ে কিছু বলা যাক।

দুর্বল একটি দল নিয়ে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি; Source: Chris Cole/Allsport UK

সেটি গ্রুপের একটি ম্যাচ ছিল, প্রতিপক্ষও জিম্বাবুয়ের মতো দুর্বল দল। নকআউট পর্বের ম্যাচ না হওয়া সত্ত্বেও কেন এতটা গুরুত্বপূর্ণ ছিল সেটি? কারণ, সেই ম্যাচটি হেরে গেলে ভারত গ্রুপ পর্ব থেকেই বাদ পড়ে যেত। এই অবস্থায় কপিল উইকেটে এসেছিলেন ১৭ রানে ৫ উইকেট পড়ার পর। ৭৮ রানে ৭ উইকেট পড়ার পরে মদন লালকে নিয়ে ৬২ রানের একটি জুটি করেন তিনি, যেখানে মদন লালের অবদান ছিল ১৭ রান। এরপর কিরমানিকে নিয়ে ১২৬ রানের জুটিতেও কিরমানির অবদান ছিল মাত্র ২৪ রান। প্রায় হেরে যাওয়া ম্যাচে কপিল করেন অপরাজিত ১৭৫ রান। এই ইনিংসটি গত শতাব্দীর সেরা ওয়ানডে ইনিংসের তালিকায় ৪ নম্বরে আছে।

এছাড়া ফাইনালে যখন ওয়েস্ট ইন্ডিজ নিশ্চিত জয়ের মুখোমুখি, ঠিক সেই সময়েই ভিভ রিচার্ডসের একটি অবিশ্বাস্য ক্যাচ ধরে ভারতীয় দলের ভেতর বিশ্বাসটা ফিরিয়ে নিয়ে আসেন কপিল। এগুলো ছাড়াও কপিল দেব টেস্ট ইতিহাসের একমাত্র ক্রিকেটার, যিনি একইসাথে ব্যাটিংয়ে ৪,০০০ রান আর বোলিংয়ে ৪০০ উইকেট শিকারের অনবদ্য অর্জন করতে সক্ষম হয়েছেন। তিনিই একমাত্র অধিনায়ক, যিনি এক ইনিংসে ৯ উইকেট নেওয়ার কৃতিত্ব অর্জন করেছেন।

ইয়ান বোথাম

ইংল্যান্ড দল তখন কোণঠাসা। অ্যাশেজে ২ টেস্ট শেষে ১-০ তে পিছিয়ে তারা। কিন্তু এর চেয়েও বেশি কোণঠাসা ছিলেন আরেকজন মানুষ, তিনি তখন ইংল্যান্ডের অধিনায়ক। অধিনায়কত্ব পাওয়ার পর অভিষেকেই খেলেছিলেন ৫৭ রানের একটি ইনিংস, এর পরের ২০টি ইনিংসে আর কোনো ৫০+ রান নেই। এ সময়ের মাঝে বোলিংয়ে ইনিংসে একবারও ৫ উইকেট পাননি। হতাশায় ভুগছিলেন ১২ টেস্টে ১৩.১৪ গড়ে ২৭৬ রান আর মাত্র ৩৫টি উইকেট নেওয়া একসময়ের সুপারম্যান বোথাম। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে দুই ইনিংসেই শূন্য রানে আউট হবার পর বোথাম ক্ষোভে অধিনায়কত্ব ছেড়ে দিলেন।

ইয়ান বোথাম; Source: Ben Radford /Allsport UK

ঘটনাটি কাকতালীয় কিনা সেটি জানা যায়নি, তবে অধিনায়কত্ব ছেড়ে দেবার পরের টেস্টেই পাওয়া গেল সেই দুর্দান্ত বোথামকে। বোলিংয়ে পেলেন ৯৫ রানে ৬ উইকেট, ব্যাটিংয়ে ৫০ আর অপরাজিত ১৪৯ রান। কিন্তু শুধুমাত্র সংখ্যা দিয়ে বিবেচনা করলে আপনি এর মাহাত্ম্য বুঝতে পারবেন না।

বোথামের ৬ উইকেট পাওয়ার পরেও অস্ট্রেলিয়া প্রথমে ব্যাটিং করে ৪০১ রান তোলে। ইংল্যান্ড ব্যাটিংয়ে নেমে ১৭৪ রানেই অলআউট হয়ে যায়, তবে বোথাম কিছুটা ঝলক দেখান। ৫৪ বলে ৫০ রানের ইনিংসে ৮টি চারের মার সবার মনে আশা জাগায়, হয়তো বোথাম আবার আসছেন ফর্মে। ফলো-অনে পড়া ইংল্যান্ড ব্যাটিংয়ে নেমে আবার বিপর্যয়ে পড়ে। ১০৫ রানেই ৫ উইকেট পড়ার পর মাঠে নামেন বোথাম। ১৩৫ রানেই আরো ২ উইকেট পড়ে যাওয়ার পর বোথাম শুরু করেন তার ম্যাজিক। ১৪৮ বলে অপরাজিত ১৪৯ রানের ইনিংসের কারণেই অস্ট্রেলিয়াকে ১৩০ রানের একটি মামুলি টার্গেট দিতে পারে ইংল্যান্ড। তবে বোথাম ম্যাজিকে হয়তো অস্ট্রেলিয়ানদের চোখ ধাঁধিয়ে গিয়েছিল। এই কারণে ১৮ রানে সেই ম্যাচটি হেরে যায় অস্ট্রেলিয়া।

ইংল্যান্ডের সর্বকালের সেরা অলরাউন্ডার তিনি; Source: The Cricket Monthly

গত শতাব্দীর সেরা টেস্ট ব্যাটিং পারফর্মেন্সের তালিকায় বোথামের এই ইনিংসটি আছে ৪ নম্বরে। সেই ম্যাচটির সাথে সাথে পরবর্তীতে সিরিজটিও জিতে নেয় ইংল্যান্ড। সিরিজটি বোথামের সিরিজ নামেই পরিচিত হয়ে যায়।

ক্রিকেট ইতিহাসে অনেক অলরাউন্ডারই যুগে যুগে এসেছেন। তবে খুব কম অলরাউন্ডারই শুধু ব্যাটিং অথবা শুধু বোলিং দিয়ে দলে জায়গা পাওয়ার দাবি রাখতে পেরেছেন। বোথাম ছিলেন সেই স্বল্প সংখ্যক অলরাউন্ডারদের মাঝে একজন।

টেস্ট ইতিহাসে এই পর্যন্ত এক ম্যাচে ১০ উইকেট আর শত রান করার কৃতিত্ব আছে মাত্র ৪ জনের, বোথাম তাদের মাঝে একজন। ক্রিকেটে এক ম্যাচে শত রান এবং অন্তত এক ইনিংসে ৫ উইকেট পাওয়ার রেকর্ড আছে ৩২টি। একমাত্র ক্রিকেটার হিসেবে বোথাম পাঁচবার এই কাজটি করতে পেরেছেন। আর কোনো ক্রিকেটার দু’বারের বেশি এই কাজটি করতে পারেননি। ইংল্যান্ডের সর্বকালের সেরা অলরাউন্ডার হিসেবে বিবেচিত এই ক্রিকেটার বিশ্ব ক্রিকেটের ইতিহাসেও অলরাউন্ডারের তালিকায় উপরের কাতারেই থাকেন।

রিচার্ড হ্যাডলি

টেস্ট ক্রিকেটে একজন ফাস্ট বোলারের জন্য ইনিংসে ৫ উইকেট কিংবা ম্যাচে ১০ উইকেট পাওয়াটা স্পিনারদের তুলনায় কিছুটা কষ্টকর। কারণ একটি টেস্ট ম্যাচে স্বাভাবিকভাবেই একজন ফাস্ট বোলারের চেয়ে একজন স্পিনার বেশি সংখ্যক বল করতে পারেন। এই কারণেই টেস্ট ক্রিকেটের সবচেয়ে বেশি উইকেটধারী ফাস্ট বোলার গ্লেন ম্যাকগ্রা ক্যারিয়ারে ১২৪টি টেস্ট খেলে ১০ উইকেট পেয়েছেন মাত্র ৩ বার। আর কোর্টনি ওয়ালশ ১৩২ ম্যাচের ক্যারিয়ারে সেটি পেয়েছেন মাত্র ৩ বার।

রিচার্ড হ্যাডলি; Source: ICMI Speakers Bureau

টেস্ট ইতিহাসে ফাস্ট বোলারদের মাঝে ম্যাচে সবচেয়ে বেশি ১০ উইকেট আর ইনিংসে ৫ উইকেট পাওয়ার রেকর্ড একজনেরই। তিনি হচ্ছেন স্যার রিচার্ড হ্যাডলি। মাত্র ৮৬টি টেস্ট খেলে তিনি ৫ উইকেট পেয়েছেন ৩৬ বার আর ১০ উইকেট পেয়েছেন ৯ বার! গত শতাব্দীর সেরা টেস্ট বোলারের তালিকায় তার অবস্থান ছিল ২ নম্বরে।

গ্লেন ম্যাকগ্রার বোলিং তো ইদানিং প্রজন্মের অনেকেরই দেখা হয়েছে। তাহলে ভাবুন, হ্যাডলি কী ছিলেন। গ্লেন ম্যাকগ্রার (৫১.৯) চেয়ে স্ট্রাইক রেটও তার (৫০.৮) ভালো ছিল। তিনি নিউজিল্যান্ড ইতিহাসের সর্বকালের সেরা ক্রিকেটার হিসেবে বিবেচিত হন।

দল হিসেবে নিউজিল্যান্ড তুলনামূলকভাবে একটু দুর্বল ছিল, তবে হ্যাডলি তাদের শিখিয়েছিলেন কীভাবে লড়াই করে জয়ী হতে হয়। তার অভিষেকের পরেই নিউজিল্যান্ড টেস্ট জয় পেতে শুরু করে। ১৯৭৭/৭৮ মৌসুমে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৪৮ তম ম্যাচে জয় পায় নিউজিল্যান্ড, সেই ম্যাচে হ্যাডলি ১০ উইকেট পান। এছাড়া ক্যারিয়ারের ৮৬টি টেস্টে তিনি ২২টি জয় পান। মাত্র ৩৩টি সিরিজ খেলে তিনি ৮ বার সিরিজ সেরা হন। তার সাথে আছেন ইমরান খান (২৮ সিরিজে ৮ বার), উপরে আছেন জ্যাক ক্যালিস (৬১ সিরিজে ৯ বার) আর মুরালিধরন (৬১ সিরিজে ১১ বার)।

নিউজিল্যান্ড ইতিহাসের সর্বকালের সেরা ক্রিকেটার তিনি; Source: 365 Days Cricket – blogger

তবে এই কীর্তিতেও হ্যাডলি অন্যদের চেয়ে একটু এগিয়ে। কারণ বাকি সবার চেয়ে তার দলটাই বেশি দুর্বল ছিল। এছাড়া টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে প্রথম বোলার হিসেবে তিনি ৪০০ উইকেট অর্জন করেন।

ইমরান খান

প্রথমে একটি ম্যাচের গল্প বলা যাক। ম্যাচের শেষ ওভারে রান দরকার ৪, বোলিংয়ে আসলেন ভিভ রিচার্ডস। আকরাম রাজা ১৯ রান করে অপরাজিত, কিন্তু প্রথম দুই বলে রানই নিতে পারলেন না। ৪ বলে ৪ রান দরকার, এই অবস্থায় ইমরান খান ইচ্ছেকৃতভাবে আকরাম রাজাকে রান আউট করালেন। তখন ব্যাট করতে নামার কথা আব্দুল কাদিরের, কিন্তু ড্রেসিং রুমের দিকে ইমরান খান ইশারা করে দেখালেন বাঁহাতি ব্যাটসম্যান নামানোর জন্য। ইমরানের ইশারায় নামলেন ওয়াসিম আকরাম। ইমরান ১ রান নিয়ে স্ট্রাইক দিলেন ওয়াসিমকে, প্রয়োজন তখন ২ বলে ৩ রান। ওয়াসিম প্রথম বলেই ৬ মারলেন, ১ বল হাতে রেখে নেহেরু কাপ চ্যাম্পিয়ন হলো পাকিস্তান।

ইমরান খান; Source: The Cricket Monthly

ইমরান কীভাবে বুঝেছিলেন, শেষ ওভারে বাঁহাতি ব্যাটসম্যানই বাজিমাত করতে পারবে? এই দূরদর্শিতার জন্যই ব্যাপকভাবে প্রশংসিত ছিলেন ইমরান খান। তিনি ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন ফাস্ট বোলার হিসেবে। গতির সাথে রিভার্স সুইংয়ের সমন্বয়ে সবার কাছে ভীতিকর বোলার হিসেবেও পরিচিত ছিলেন। একসময় মাত্র ৫০ ম্যাচে ২৩৫টি টেস্ট উইকেট পান

১৯৮২/৮৩ মৌসুমে ভারতের বিপক্ষে ৬ ম্যাচে ১৩.৯৫ গড়ে ৪০টি উইকেট নিয়ে সিরিজ জেতান। তার পরে আর কোনো পেসারের পক্ষে সিরিজে ৪০টি উইকেট নেওয়া সম্ভব হয়নি। সেই সিরিজেই ইনজুরির জন্য দুই বছর বোলিং বন্ধ করতে হয়েছিল তাকে। অন্য কোনো খেলোয়াড় হলে হয়তো খেলাই বন্ধ করে দিতেন, কিন্তু ইমরান খান ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলার চিন্তা করলেন। পরের ম্যাচেই অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ৮৩ আর অপরাজিত ৭২ রানের দুটি ইনিংস খেলে ম্যাচ ড্র করালেন। ব্যাটিং নিয়ে সিরিয়াস হওয়ার আগে ৪৯ ম্যাচে ২৯.৮৯ গড়ে রান করেছিলেন ১,৮৫৩। আর ব্যাটিংয়ে মনোযোগ দেবার পর ৫৩ ইনিংসে করেছিলেন ৫০.১০ গড়ে ১,৯৫৪  রান। আর কোনো খেলোয়াড়ের পক্ষে কি এমনটা সম্ভব? ওয়াসিম আকরাম যদি বোলিং বাদ দিতেন, তাহলে কি শুধু ব্যাটিং নিয়ে তার পক্ষে দলে থাকা সম্ভব হতো? কিংবা জ্যাক ক্যালিসের পক্ষে ব্যাটিং বাদ দিয়ে শুধু বোলার হওয়া?

দূরদর্শিতার জন্যই ব্যাপকভাবে প্রশংসিত ছিলেন তিনি; Source: ESPNcricinfo

তবে ক্রিকেট বিশ্ব কিন্তু অলরাউন্ডার ইমরান খানকেও সেভাবে মনে রাখেনি। মনে রেখেছে অধিনায়ক ইমরানকে। ভাঙাচোরা একটি দল নিয়ে ১৯৯২ বিশ্বকাপ জিতিয়েছেন। খেলোয়াড় চেনার ক্ষেত্রে তিনি ছিলেন পাকা জহুরির মতো। ওয়াকার, মুশতাক, ইনজামাম, আকিব, সাঈদ আনোয়ার, মইন খানের মতো খেলোয়াড়দেরকে তিনি তুলে এনেছিলেন। ইমরানের চেয়ে ভালো বোলার পাকিস্তানে ছিল, ভালো ব্যাটসম্যান তো অবশ্যই ছিল। অলরাউন্ডার হিসেবেও আব্দুর রাজ্জাক কিংবা শহীদ আফ্রিদি একেবারে ফেলনা নন। কিন্তু পাকিস্তানের সর্বকালের সেরা ক্রিকেটার নির্বাচন করলে ইমরান অনেকের চেয়ে বেশ ভালোভাবেই এগিয়ে থাকবেন।

একনজরে প্রত্যেকের টেস্ট ক্যারিয়ার

দলের পক্ষে তাদের অবদান

তুলনামূলক বিশ্লেষণ

তুলনামূলক বিশ্লেষণটি কয়েকটি ভাগে করা হবে। একে একে শুরু করা যাক।

একে অপরের বিপক্ষে ব্যাটিং রেকর্ড

  • একমাত্র ইমরান খানেরই তিনজন অলরাউন্ডারের বিপক্ষে ৫০+ গড় আছে।
  • বোথাম একমাত্র অলরাউন্ডার যার কিনা অন্তত একজন অলরাউন্ডারের বিপক্ষে ডাবল সেঞ্চুরি আছে।

একে অন্যের বিপক্ষে বোলিং রেকর্ড

  • গড়, স্ট্রাইকিং রেট এবং ইকোনোমি রেট তিন ধরনের ক্যাটাগরিতেই একমাত্র হ্যাডলির বিপক্ষে স্ট্রাইক রেট বাদে সব কিছুতেই ইমরান খান জয়ী।

একজন অলরাউন্ডারের পুরো টেস্ট স্ট্যাটাস, বাকি তিনজনের বিপক্ষে


  • ইমরানের ব্যাটিং গড় সবচেয়ে বেশি।
  • ইমরানের উইকেট সবচেয়ে বেশি।
  • ইমরানের বোলিং গড়, বোলিং ইকোনমি এবং বোলিং স্ট্রাইক রেট সবচেয়ে ভালো।

একজন অলরাউন্ডারের বিপক্ষে বাকি তিনজনের সম্মিলিত টেস্ট ক্যারিয়ার


  • ব্যাটিং গড়ের বিবেচনায় ইমরানের বিপক্ষে বাকি তিনজনের ব্যাটিং গড় সবচেয়ে খারাপ।
  • বাকি তিনজনের তুলনায় ইমরানের বিপক্ষে এই তিনজনের বোলিং গড়ও খারাপ।
  • একমাত্র ইমরানের বিপক্ষেই এই তিন অলরাউন্ডারের কোনো সেঞ্চুরি নেই।

পরিসংখ্যান দিয়ে আসলে সব কিছু বোঝা যায় না। তবুও মানুষ বিচার করার সময় পরিসংখ্যানের আশ্রয় নেয়। পরিসংখ্যান যা-ই বলুক না কেন, এই চারজন গ্রেট যার যার দলকে নিজেদের পারফর্মেন্স দিয়ে সবসময়েই আলোকিত করে গেছেন এবং অসংখ্য তরুণ খেলোয়াড়ের রোল মডেলে পরিণত হয়েছেন। তাদের কীর্তি দিয়েই তারা ক্রিকেট ইতিহাসে কিংবদন্তী হয়ে থাকবেন।

ফিচার ইমেজ: Pinterest

Related Articles