Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

তবুও ‘হাথুরুবল’ চলুক!

বলটা লিটন দাস পয়েন্টে খেলতেই চাননি। আর পাঁচটা দিনে সম্ভবত খেলতেনই না অত বাইরের বলটা। তবে, যেদিনকার কথা হচ্ছে, সেদিন বলটা গেল পয়েন্টে দাঁড়ানো ফিল্ডারের কাছেই। একদম হাতের মুঠোয়, কারণ বলটা লিটন এই দিনে উড়িয়েই খেলতে চেয়েছেন।

শুধু লিটন নন, পাওয়ারপ্লে চলাকালীন বাউন্ডারিতে তো মাত্র দুজন ক্রিকেটারই থাকার সুযোগ পান, খুঁজে খুঁজে যেন ওই ফিল্ডারদেরই বের করলেন নাজমুল হোসেন শান্ত-রনি তালুকদাররা। ছক্কা মারতে গিয়ে বাউন্ডারিতে ক্যাচের শিকার, দুজনই।

ধরে নেওয়া স্বাভাবিক, ওপেনারদের সাথে তিনে নামা ব্যাটারকেও হারিয়ে বাংলাদেশ কুঁকড়ে যাবে। এতদিন তো তেমনটাই গিয়েছে। এই দিনে পাঁচে নামা তাওহীদ হৃদয় আক্রমণে যেতে সময় নিলেন দুই বল। প্যাভিলিয়নে ফিরলেন ১০ নম্বর বলে, ছয়ের খোঁজে নেমে।

লিটন এদিন ফিরলেন অল্পতেই। Image credit: AFP/Getty Images

প্রশ্ন তোলা সম্ভব, বাংলাদেশ কেন পাওয়ারপ্লেতে ৪ উইকেট হারিয়েও বিকল্প রাস্তা বাছল না? ৪১ রানে ৫ উইকেট নেই, তখন কি উচিত ছিল না পুরো ২০ ওভার খেলে আসার চিন্তাকেই প্রাধান্য দেওয়া? উত্তরটা ম্যাচ শেষে সাকিব দিয়েছেন স্পষ্ট, উচিত ছিল না। পরে সংবাদ সম্মেলনে যার অনুরণন শোনা গেছে তাসকিন আহমেদের কণ্ঠেও

‘আমরা যদি ভবিষ্যতে টি-টোয়েন্টিতে ভালো করতে চাই, আমাদের (এই) ইনটেন্ট থাকতে হবে। বোলার, ব্যাটসম্যান সবাইকেই আগ্রাসী মানসিকতা নিয়ে এগোতে হবে। কিছু কিছু দিন হয়তো এ রকম ইনটেন্ট দেখাতে গিয়ে ধ্বস নামবে। এটাও আমরা মেনে নিয়ে এগোব।’

– তাসকিন আহমেদ
সিরিজটা দুর্দান্ত কেটেছে তাসকিনের। Image credit: BCB

ইন্টেন্ট, ইমপ্যাক্ট, মানসিকতার বদল –  শব্দগুলো বাংলাদেশের দর্শকেরা শুনেছেন বহুবারই। তবুও নতুন শুরুর প্রত্যাশাটা ঘোষণাতেই মিলিয়ে গেছে প্রতিবার, দর্শকেরাও সেই একঘেয়ে ক্রিকেট দেখে দেখে হয়েছেন ত্যক্ত-বিরক্ত। গায়ে অসুরের শক্তি কখনোই বাংলাদেশি ব্যাটারদের বল-ভরসার জায়গা ছিল না। বলে-কয়ে তারা যে বাউন্ডারি পার করবেন, এমন প্রত্যাশা রাখাটা যে বোকামি, জাতীয় দলের অনেক ক্রিকেটার অনেকবারই আকারে-ইঙ্গিতে বুঝিয়েছেন সেটা। কথাটাকে নির্মম সত্যি মানলেও এর পিঠে প্রশ্ন থাকে। টি-টোয়েন্টিতে জিততে যেহেতু রান করতেই হবে, বাংলাদেশ রানটা করবে কখন?

যেহেতু বৃত্তের বাইরে মাত্র দু’জন ফিল্ডার দাঁড়াচ্ছেন, সুযোগটা পাওয়ারপ্লেতেই হওয়ার কথা সবচেয়ে বেশি। কিন্তু এই সুযোগটা নিতেও গড়িমসি ছিল বাংলাদেশের। ২০২২ সাল পর্যন্ত যদি হিসাব করা হয়, বাংলাদেশ পাওয়ারপ্লেতে রান তুলত ওভারপ্রতি ৭.১৮ করে। এমন ধীরস্থিরতা যে উৎসবের খুব একটা উপলক্ষ আনেনি, তার প্রমাণ জয়-পরাজয়ের খতিয়ানেই।

সাকিব আক্রমণেই বিশ্বাসী। Image credit: Getty Images

‘এবার ভিন্ন কিছু হোক’ – প্রতিশ্রুতি মিলেছিল ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজেই। রনি তালুকদার আর লিটন দাসকে নিয়ে শুরু হওয়া বাংলাদেশের ওপেনিং জুটি আক্রমণাত্মক হতে চেয়েছিল শুরু থেকেই। তিন ম্যাচের দু’টিতেই পাওয়ারপ্লেতে উঠেছিল প্রায় ৫০-এর মতো রান, মিরপুরের ধীরগতির উইকেট বিবেচনায় যা অনবদ্য। 

আয়ারল্যান্ড সিরিজে দেখা গেল, ভালো উইকেট পেলে ৫০ রানেই আটকে থাকতে চান না দুজন। প্রথম ম্যাচেই পাওয়ারপ্লেতে নিজেদের রেকর্ড সংগ্রহ গড়ল বাংলাদেশ। দ্বিতীয় ম্যাচে বৃষ্টির কারণে পাওয়ারপ্লের দৈর্ঘ্য কমে এসেছিল বলে রেকর্ড হয়নি, নয়তো সেদিনও প্রথম ৬ ওভারে আরেকবার ৮০ পেরিয়েছিল স্কোর। 

এতদিনের আউড়ে চলা ‘ইনিংস গড়ে আক্রমণ’ নীতিটাকেও বাংলাদেশ বুড়ো আঙুল দেখানো শুরু করেছে এখন। লিটন দাস অবশ্য বলবেন, দ্রুতগতির সূচনা তিনি বরাবরই এনে দিতেন, কমপক্ষে ৭০০ বল খেলেছেন এমন ব্যাটারদের মধ্যে স্ট্রাইকরেটের হিসাবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তিনিই তো শ্রেষ্ঠ। তবে এতদিন লিটনের আক্রমণটা ছিল একপাক্ষিক, অপরপ্রান্ত থেকে যোগ্য সঙ্গত পেতেন না বেশিরভাগ দিনই। অবশেষে যেন সেই আক্ষেপটাও ঘুচল ‘২৩-এ পা দিয়ে। লিটনের ‘পার্টনার’ করা হলো রনি তালুকদারকে, যিনি ক্রিকেট বলটাকে পেটানোর বস্তু হিসাবেই দেখেন।

রনির সঙ্গে লিটন, এই জুটিটাই তো বাংলাদেশ খুঁজছিল। Image credit: AFP/Getty Images

গতিময় শুরু করতে পছন্দ করেন রনি, সেটা বোঝা গিয়েছিল বিপিএলেই। এ বছরের বিপিএলে পাওয়ারপ্লেতে ব্যাট করেছেন ১২৪ স্ট্রাইকরেটে, লিটন দাস আর এনামুল হক বিজয়কে বাইরে রাখলে বাংলাদেশিদের মধ্যে সংখ্যাটা সবচেয়ে বেশি। এনামুল কিংবা লিটনের চেয়ে পাওয়ারপ্লেতে উইকেটও দিয়েছেন কম, ৬১ গড় তারই প্রমাণ। এবার এমন আক্রমণাত্মক ব্যাটারের উপযুক্ত দায়িত্বটাই বুঝিয়ে দিয়েছে বাংলাদেশের টিম ম্যানেজমেন্ট, ‘পাওয়ারপ্লেটা কাজে লাগিয়ে আসো।’

ইংল্যান্ড সিরিজে কিছুটা আভাস পাওয়া গিয়েছিল, তবে তার প্রতিশ্রুতির পরিপূর্ণ ঝলকটা বোধ হয় দেখা গেল আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষেই। প্রথম ম্যাচে ৩৮ বলে ৬৭ রান করে ম্যাচসেরা। দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে সব পক্ষে যায়নি তার, রনি যে বলগুলো খেলেছেন, তাতে নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারেননি প্রায় ৫০ শতাংশ বলেই। তবুও রানের চাকা থামতে দেননি। প্রথম ১০ বলে ১৭ রান তুলে পরের ১০ বলে তুলেছেন ২৪ রান। ২২তম বলে আউট না হয়ে রনি যদি সেদিন ১১ বলেও প্যাভিলিয়নে ফিরতেন, তারপরও লিখতে হতো, ‘রনি ম্যাচে ইতিবাচক প্রভাব রেখে ফিরেছেন।’

‘হাথুরুবল’ চলুক! Image Credit: BCB

রান-গড়ের হিসাব ছুড়ে ফেলে বাংলাদেশ তাই এখন ছুটছে পজিটিভ ইমপ্যাক্টের সন্ধানে। ইনিংসের শেষ দিকে ‘পাওয়ার ক্রিকেট’ খেলার মতো ক্রিকেটার পাওয়া যায়নি এখনো, তবে পাওয়ারপ্লে’র পরেও আক্রমণাত্মক ক্রিকেট চালু রাখা গিয়েছে বলে ম্যাচ জেতার ভিত্তি তৈরি হয়ে যাচ্ছে ইনিংস ডেথ ওভারে গড়ানোর আগেই। বাংলাদেশ ট্র‍্যাঞ্জিশনাল ফেজের নিয়ন্ত্রণ নিতে শুরু করেছে গত ইংল্যান্ড সিরিজ থেকেই, এ নিয়ে সবিস্তারে লেখাও হয়েছে এখানে। যুগের যা নীতি, তাতে কোচ ভিন্ন কোনো দর্শনের খোঁজ দিলেই দলের খেলার ধরনটা পেয়ে যাচ্ছে কোনো না কোনো নাম। হাথুরুসিংহের আগমনের সঙ্গে বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের পালাবদল যেমন করে মিলে গেল – ইনিংসের কোনো একটা নির্দিষ্ট পর্যায়ে রান বাড়ানোর ওপর নির্ভর না করে রান রেট বাড়ানোর চেষ্টা থাকছে সব সময়ই – তাতে এই ব্র‍্যান্ডটা ‘হাথুরুবল’ নামেও চলতে পারে বাজারে।

ক্রিকেটাররাও জানেন, এই ‘হাথুরুবল’ প্রতিদিন খেলতে গেলে আউট হবার ঝুঁকি বাড়বে, একে অস্বীকার করা যাবে না কোনোভাবেই। এক সূর্যকুমার যাদব ব্যতিক্রম, নয়তো স্ট্রাইকরেটের উঁচুতলায় বাস করা সব ব্যাটারই আক্রমণ করতে গিয়ে বিসর্জন দিয়েছেন গড়কে। আর বাংলাদেশের শিক্ষার কেবলই যেহেতু শুরু, হোঁচট খাওয়াটা খুবই স্বাভাবিক। শুধু আন্তর্জাতিক ক্রিকেট তো নয়, ঘরোয়া ক্রিকেটেও এমন ব্যাট চালানোর লাইসেন্স এর আগে কে দিয়েছিল তাদের!

আক্রমণ করেই বড় হয়েছে সবাই। Image credit: ICC

অতর্কিতে এই হোঁচট খাওয়াটা যদি মেনে নেওয়া যায়, সুদিনের স্বপ্ন বাংলাদেশ করতেই পারে। পক্ষে সাক্ষ্য দেবে ইতিহাস। ২০১৮ সালের কথা, নিউজিল্যান্ডে খেলতে গিয়েছে ইংল্যান্ড। ডানেডিনে চতুর্থ ওয়ানডেতে সাড়ে ১২ ওভার বাকি থাকতে ১ উইকেট হারিয়ে ইংলিশদের সংগ্রহ ছিল ২৬৭ রান। পরের গল্পটা ধ্বসের। ধুমধাড়াক্কা মেরে খেলতে গিয়ে পরের ৮ উইকেট হারিয়েছিল ৪৩ রানে। শেষ পর্যন্ত ৩৩৫ করলেও কিউইরা লক্ষ্য টপকে গিয়েছিল ৩ বল বাকি থাকতেই।

ম্যাচ শেষে ইংল্যান্ডের ড্রেসিংরুমে কোচ প্রশ্ন করেছিলেন, ব্যাটিং নিয়ে তাদের আরেকটু ‘রয়েসয়ে চলো’ নীতিতে যাওয়া উচিত কি না। প্রশ্ন শেষ হতে দেরি, এর আগেই জস বাটলার উঠে দাঁড়িয়ে বলেছিলেন, ‘একদমই না। আমরা এভাবেই খেলতে চাই।’

ওভাবে খেলেই কী করেছিল তারা, ২০১৯ বিশ্বকাপের উত্তরপত্রে এর বিশদ বিবরণ আছে।

This article is in Bangla language. This article is an analysis on recently concluded Bangladesh vs Ireland T-20 series. Necessary hyperlinks and images are attached inside.

Featured image © AFP/Getty Images

Related Articles