Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

মাশরাফি: অধিনায়ক থেকে মহানায়ক

তোপধ্বনি বাজছিল অনেকদিন ধরে। মাশরাফি বিন মুর্তজার আকণ্ঠ নীরবতা ও খেলতে চাওয়ার ইচ্ছার সামনে সুরটা উচ্চকিত হয়নি। বাইরের দুনিয়ায় অবশ্য থেমে থেমে অস্ফূট স্বরে বেজেছে বিদায়ের রাগিনী।

কাউকে নায়ক হওয়ার সুযোগটা দেননি মাশরাফি। টি-টোয়েন্টি’র মতো ওয়ানডে অধিনায়কের পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণাটাও নিজের মতো করেই দিলেন। অনেকটা অনুমিত হলেও ৫ মার্চ সিলেটেই যে ঘোষণা আসছে, তার নিশ্চয়তা ছিল না। এদিন দুপুরে বাংলাদেশের ক্রিকেটের সর্বকালের সেরা অধিনায়ক বলে দিয়েছেন, নেতার আসন থেকে সরে যাচ্ছেন। চায়ের দেশ সিলেট থেকে ক্রিকেট দুনিয়া জানল, অধিনায়ক মাশরাফির প্রস্থানের খবর।

৫ মার্চও (বৃহস্পতিবার) সংবাদ সম্মেলন কক্ষে ঢুকেছিলেন হাসিমুখে। পরিচিত মুখ দেখে হাসি আরও চওড়া হয়ে গেল। মুখের হাসিই বলে দিচ্ছিল, কতটা ফুরফুরে মেজাজে ছিলেন মাশরাফি। কিন্তু চেয়ারে বসার সঙ্গে সঙ্গে ভোল পাল্টালো তার অবয়ব। পোডিয়ামে থাকা দুই মাইক টেনে বলে বসলেন,

‘ধন্যবাদ সবাইকে। আমি একটু কিছু বলতে চাই।’

এরপর লিখিত বক্তব্য পাঠ করা শুরু করেন মাশরাফি। সংবাদকর্মীরা নড়েচড়ে বসতেই দেশের সবচেয়ে সফল অধিনায়কের কন্ঠ থেকে ভেসে এলো,

‘কাল আমার অধিনায়ক হিসেবে শেষ ম্যাচ।’

তারপর সংবাদ সম্মেলন স্থায়ী হয়েছে আরও ৩০ মিনিট। সংবাদ সম্মেলন থেকে বেরিয়ে অনেক সেলফির আবদার মিটিয়েছেন। সেই পর্ব শেষ হতেই মনোযোগী ছাত্রের মতো যোগ দেন অনুশীলনে।

Image Credit: Raton Gomes/BCB

বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে অধিনায়ক মাশরাফির অধ্যায় শেষ হয়েছে জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে সিলেটের মাটিতে। স্মৃতির পাতায় ঠাঁই নেয়া সেই অধ্যায় কতটা বর্ণিল ছিল, রোমন্থনের মাধ্যমেই যা চোখের সামনে ভেসে উঠতে পারে।

এক ম্যাচেই শেষ নেতৃত্বের প্রথম পর্ব

হাবিবুল বাশার সুমনের উত্তরসূরী হিসেবে অধিনায়ক হয়েছিলেন মোহাম্মদ আশরাফুল। ২০০৯ সালে আইসিসি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ভরাডুবির পর নেতৃত্ব হারান আশরাফুল। মূলত নটিংহ্যামে আয়ারল্যান্ডের কাছে হারটাই কাল হয়েছিল আশরাফুলের জন্য। ৬ উইকেটে হারের ওই ম্যাচে ব্যাট হাতে ১৬ বলে অপরাজিত ৩৩ রান করেছিলেন মাশরাফি। পরে বল হাতেও ৩০ রানে ২ উইকেট নিয়েছিলেন তিনি। ওই ম্যাচে বাংলাদেশের সেরা ক্রিকেটারের হাতেই পরে নেতৃত্বের দায়িত্ব তুলে দেয় বিসিবি।

ওই বছর ৯ জুলাই ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে প্রথম টেস্ট দিয়ে অধিনায়ক হিসেবে মাশরাফির যাত্রা শুরু হয়। দুর্ভাগ্যক্রমে বোলিংয়ে নেমেই ইনজুরিতে পড়েন তিনি। নেতৃত্বের প্রথম পর্ব সেখানেই শেষ হয়। যদিও খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে ওই টেস্টে ব্যাটিংয়ে নেমেছিলেন। এবং বাংলাদেশ ম্যাচটা জিতেছিল খর্বশক্তির ক্যারিবিয়ানদের বিরুদ্ধে।

ইংল্যান্ড জয় ও সাত ম্যাচের দ্বিতীয় পর্ব

মাশরাফির ইনজুরিতে ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক ছিলেন সাকিব আল হাসান। ইনজুরি কাটিয়ে ফিরে আবারও নেতৃত্বে আসেন মাশরাফি। দ্বিতীয় পর্বটা স্থায়ী হয়েছিল মাত্র ৭ ম্যাচ, যার শেষটা হয়েছিল সেই ইনজুরির করাল গ্রাসেই।

এই পর্বেও মাশরাফির অধিনায়কত্বের ‘মুন্সিয়ানা’ চাউর হয়নি বাংলার ক্রিকেটে। তবে ঠিকই বলার মতো অর্জন ছিল। ওয়ানডে ক্রিকেটে প্রথমবার ইংল্যান্ডকে হারানোর স্বাদ পেয়েছিল বাংলাদেশ তার নেতৃত্বের দ্বিতীয় পর্বে। ১০ জুলাই, ২০১০ সালে ব্রিস্টলে ইংল্যান্ডকে ৫ রানে পরাজিত করে টাইগাররা। পরে আয়ারল্যান্ড, নেদারল্যান্ডসের সঙ্গে সিরিজ শেষে দেশে ফিরে দল।

Image Credit: Raton Gomes/BCB

ওই বছর অক্টোবরে নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে হোম সিরিজের প্রথম ওয়ানডে ম্যাচে আবারও চোটে পড়েন মাশরাফি। যদিও সেবার তার নেতৃত্বে যতিচিহ্নটা পড়ে ২০১১ বিশ্বকাপের ঠিক আগে। বিকেএসপিতে ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের ম্যাচে রান নিতে গিয়ে পড়ে যান নড়াইল এক্সপ্রেস। তাতেই ছিটকে পড়েন বিশ্বকাপ থেকে। অনেক আলোচনা-শোরগোলের পরও দেশের মাটিতে বিশ্বকাপ খেলতে পারেননি। তখনই শেষ হয় অধিনায়ক মাশরাফির দ্বিতীয় পর্ব।

তৃতীয় পর্ব: অধিনায়ক থেকে মহানায়ক

মাশরাফির ক্যারিয়ার শেষের ছবিটা তখন অনেকের চোখে ভাসছিল। বাংলাদেশ দলও তখন দুর্বিপাকে। ২০১৪ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ধুঁকতে বাংলাদেশকে টেনে তুলতে মাশরাফির হাত ধরে বিসিবি। ওই বছর ফেব্রুয়ারিতে হুট করেই মুশফিককে সরিয়ে টি-টোয়েন্টি দলের নেতৃত্ব দেয়া হয় তার কাঁধে, এমনকি তৎকালীন সময়ে টি-টোয়েন্টি দলের সহঅধিনায়ক তামিমকে সুযোগ না দিয়েই। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে চট্টগ্রামে দু’টি ম্যাচ হারলেও দলের ভেতরের বয়ে চলা ঝড় থামিয়ে মাঠে একাত্ম হওয়ার নজির দেখিয়েছিলেন অধিনায়ক মাশরাফি। তারপর কিছুটা বিরতি ছিল।

আগস্টে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে হোয়াইটওয়াশ হওয়া, চারদিকে মুশফিকের নেতৃত্বের সমালোচনা, পরাজয়ের মিছিল যেন টালমাটাল করে তুলে দেশের ক্রিকেটকে। খাদের কিনারে চলে যাওয়া দলকে টেনে তুলতে আবারও মাশরাফির দ্বারস্থ হয় বিসিবি। নভেম্বরে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে হোম সিরিজ দিয়ে ওয়ানডের অধিনায়কত্বেও ফেরেন ‘নড়াইল এক্সপ্রেস’। জিম্বাবুয়েকে হোয়াইটওয়াশ করেই নতুন দিগন্তে পথ চলার শুরু।

Image Credit: Raton Gomes/BCB

ততদিনে দলকে সামলানো, সতীর্থদের জাগিয়ে তোলা, তাদের সেরাটা বের করে আনা, সবার প্রেরণার উৎস হিসেবে বেশ পরিচিতি পেয়ে গেছেন মাশরাফি।

২০১৫ বিশ্বকাপ ও সোনালী অধ্যায়

২০১৫ বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়া-নিউ জিল্যান্ডের বিরুদ্ধ কন্ডিশনে লড়তে হয়েছে। তারপরও ইংল্যান্ডকে অসীম হতাশায় ডুবিয়ে প্রথমবার কোয়ার্টার ফাইনালে খেলে বাংলাদেশ। আর বিশ্বকাপের পর নতুন উচ্চতায় নিয়ে যান দেশের ক্রিকেটকে। দেশের মাটিতে একের পর এক দৈত্য বধের গল্প লিখতে শুরু করে টাইগাররা। ২০১৫ সালের এপ্রিলে পাকিস্তানকে উড়িয়ে দিয়ে শুরু সোনালী সেই অধ্যায়। ওয়াকার ইউনিসের শিষ্যদের ওয়ানডেতে হোয়াইটওয়াশ, পরে টি-টোয়েন্টিতেও দাপটের সঙ্গে হারায় বাংলাদেশ। পাকিস্তান পাত্তাই পায়নি স্বাগতিকদের কাছে। পাকিস্তানকে ভূপাতিত করার পরও থামেনি অগ্রযাত্রা।

জুনে পরাক্রমশালী ভারতকে মাটিতে নামিয়ে আনে মাশরাফির দল। মহেন্দ্র সিং ধোনির ভারতকে ২-১ এ ওয়ানডে সিরিজ হারায় বাংলাদেশ। এই সিরিজেই ‘কাটার মাস্টার’ খ্যাত মুস্তাফিজ সগৌরবে আবির্ভাব বাণী শুনান। কোচ হাথুরুসিংহে, নির্বাচকদের বাধা সত্ত্বেও ভারতের বিরুদ্ধে প্রথম ওয়ানডেতে মুস্তাফিজকে খেলান মাশরাফি। ভারতীয় ব্যাটিং লাইনআপকে নাকানি-চুবানি খাইয়ে মাত করেন এই বাঁহাতি পেসার। ভারতকে সিরিজ হারানোর পর ওয়ানডেতে বাংলাদেশের উত্থান প্রতিষ্ঠা পায় বিশ্ব মিডিয়ায়। অধিনায়ক মাশরাফিও মহানায়কের আসনে আসীন হতে শুরু করেন।

Image Credit: Raton Gomes/BCB

তার নেতৃত্বের রসায়ন, ক্রিকেটার হিসেবে ত্যাগ-তিতিক্ষা, সাত অস্ত্রোপচারের পরও বল হাতে দুর্নিবার চেষ্টা, দেশকে সাফল্যের রথে চড়ানোর গল্প চড়াতে থাকে সর্বত্র।
জুলাইয়ে শক্তিশালী দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারের তিক্ততা উপহার দেয় বাংলাদেশ। পিছিয়ে পড়ার পরও নড়াইল এক্সপ্রেসের নেতৃত্বে ২-১ এ ওয়ানডে সিরিজ জিতে লাল-সবুজের দল। ওই বছর নভেম্বরে আবারও জিম্বাবুয়েকে ধবলধোলাই করে বাংলাদেশ। আইসিসির ওয়ানডে র‌্যাংকিংয়ে উত্তরণ ঘটে বাংলাদেশের। সাত নম্বরে উঠে আসে দল। ২০১৯ বিশ্বকাপ, ২০১৭ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি খেলা নিশ্চিত হয় টাইগারদের।

ব্যাঙ্গালোরে অশ্রুস্নাত মাশরাফি

২০১৬ সালে ঘরের মাঠে সবাইকে চমকে দিয়ে এশিয়া কাপের ফাইনালে উঠে আসে মাশরাফি বাহিনী। ফাইনালে ভারতের কাছে হেরে যাওয়ায় ট্রফি নাগাল পায়নি বাংলাদেশ। তবে ঠিকই প্রশংসাধন্য হয়েছিল দল, জাতটা তুলে ধরেছিল ঠিকই। ভারতে অনুষ্ঠিত ২০১৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও নেতৃত্ব দেন ডানহাতি এই পেসার। ধর্মশালায় আয়ারল্যান্ড, ওমানকে হারিয়ে প্রথম রাউন্ড পেরিয়ে দ্বিতীয় রাউন্ডে আসে বাংলাদেশ।

বোলিং অ্যাকশনের ত্রুটি ধরা পড়ায় টুর্নামেন্টের মাঝপথে ছিটকে পড়েন তাসকিন আহমেদ ও আরাফাত সানি। সতীর্থদের এমন বিদায় মানতে পারেননি মাশরাফি, বিশেষ করে তাসকিনের। ব্যাঙ্গালোরের চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামে ম্যাচপূর্ব সংবাদ সম্মেলনে তার অশ্রুসজল চোখ ক্রিকেট দুনিয়ার ভেতরটা নাড়িয়েছে। অধিনায়ক হিসেবে দলের খেলোয়াড়দের জন্য এই আবেগ থেকে মোহিত সবাই। মাশরাফি-বন্দনা ছড়িয়েছে উপমহাদেশের পত্রপত্রিকায়। সেই ব্যাঙ্গালোরেই আবার বাংলাদেশের হৃদয় এফোঁড়-ওফোঁড় হয়েছিল ভারতের কাছে ১ রানে হেরে। দ্বিতীয় পর্বে সব ম্যাচ হেরে বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নেয় বাংলাদেশ।

টানা ছয় ওয়ানডে সিরিজ জয়

বিশ্বকাপের পর সেপ্টেম্বরে আফগানিস্তানকেও ঘরের মাঠে ওয়ানডে সিরিজে ২-১ ব্যবধানে হারায় টাইগাররা। তাতেই দেশের মাটিতে টানা ছয় ওয়ানডে সিরিজ জয়ের রেকর্ড গড়ে বাংলাদেশ। অর্জনের এই তালিকাটা দীর্ঘ হতে পারতো আরও। পরের মাসেই ইংল্যান্ডের কাছে ওয়ানডে সিরিজ হারায় টানা সাত সিরিজ জয় হয়নি।

এর মাঝে ক্রিকেটারদের ঘরের ঝামেলা সমাধান, বিপদে পাশে দাঁড়ানোর ঘটনায় মাশরাফির অবদান গণমাধ্যমে আসে। থানা অব্দি ছুটতে হয়েছে সতীর্থদের জন্য। কোচদের সঙ্গে ক্রিকেটারদের দূরত্ব কমানো, ফর্মহীনতার মাঝেও সমর্থন দেয়া, বড় ক্রিকেটার হতে স্বপ্ন দেখানো, নানা ঝড়-ঝাপটা থেকে সতীর্থদের রক্ষার ক্ষেত্রেও নিজের দক্ষতা প্রমাণ করেন তিনি। বাংলাদেশ দলটাকে একটা ‘পরিবার’ রূপে গড়ে তোলেন তিনি।

Image Credit: Raton Gomes/BCB

টি-টোয়েন্টিকে গুডবাই

তিল তিল করে গড়ে তোলা দলটার সঙ্গে প্রথমবার সম্পর্কচ্ছেদ হয় তার ২০১৭ সালে শ্রীলঙ্কা সফরে। ওয়ানডে সিরিজ ড্র করার পর টি-টোয়েন্টি সিরিজের আগে মাশরাফির উপর আসে বোর্ডের চাপ। বোর্ডকে দিয়ে সেই চাপটা দিয়েছেন তখনকার হেড কোচ হাথুরুসিংহে। নেতৃত্ব ছাড়তে বললেও এপ্রিলে রাবণের দেশেই টি-টোয়েন্টিকে বিদায় বলে দেন মাশরাফি। ক্রিকেটের ক্ষুদে ফরম্যাট থেকে অবসর নেন। কলম্বোতে টিম হোটেলে পড়েছিল কান্নার রোল। জয়ে অধিনায়ককে বিদায় জানিয়েছিল দল।

জুনে ইংল্যান্ডের মাটিতে আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে নতুন ইতিহাস গড়ে বাংলাদেশ। এবারও সামনে থেকে নেতৃত্ব দেন ডানহাতি এই পেসার। বৃষ্টির বদান্যতা ও সাকিব-মাহমুদউল্লাহর জোড়া সেঞ্চুরিতে নিউ জিল্যান্ডকে হারিয়ে সেমিফাইনালে পা রাখে বাংলাদেশ। প্রথমবার সেমিতে উঠলেও ভারতের কাছে হেরে চ্যাম্পিয়নস ট্রফি থেকে বিদায় নেয় মাশরাফির দল।

২০১৮ সালের শুরুতে দেশের মাটিতে ত্রিদেশীয় ওয়ানডে সিরিজে দারুণ শুরু পেয়েছিল বাংলাদেশ। ফাইনালে দুর্ভাগ্যক্রমে সাকিব ইনজুরিতে পড়লে হতাশ হয়ে পড়ে টাইগার শিবির। পরে ফাইনালে ব্যাটিংয়ে গোটা দল ভেঙে পড়ায় ট্রফি জয়ের স্বাদ থেকে বঞ্চিত হয় বাংলাদেশ। জুলাইয়ে ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জে ওয়ানডে সিরিজ জিতে মাশরাফি বাহিনী। টেস্টে বিধ্বস্ত হলেও ওয়ানডেতে ২-১ এ সিরিজ জিতে নেয় বাংলাদেশ।

Image Credit: Raton Gomes/BCB

এশিয়ার সেরা অধিনায়ক মাশরাফি

সেপ্টেম্বরে আরব আমিরাতের মরুর বুকে এশিয়া কাপে আবারও শির উঁচু করে দাঁড়ায় টাইগাররা। ইনজুরির কারণে তামিম, সাকিব ছিটকে পড়েন টুর্নামেন্ট থেকে। জোড়াতালির দলটা নিয়েই ফাইনালে উঠে আসেন মাশরাফি। ফাইনালে আবারও ভারতের দেয়ালে প্রতিহত হয় বাংলাদেশের ট্রফির স্বপ্ন। শেষ ওভারে ম্যাচ হেরে শূন্য হাতে ফেরে বাংলাদেশ দল। ফাইনাল হারলেও টুর্নামেন্ট সেরা অধিনায়কের স্বীকৃতি পেয়েছিলেন মাশরাফি। রমিজ রাজা, শোয়েব আখতাররা বলেছিলেন, এখন এশিয়ার সেরা অধিনায়ক বাংলাদেশের কাপ্তানই। ‘ক্যাপ্টেন অব এশিয়া কাপ’র তকমাও পেয়েছিলেন তিনি।

ওই বছরের শেষ দিকে হোম সিরিজে ওয়ানডেতে জিম্বাবুয়ে ও ওয়েস্ট ইন্ডিজকে পরাজিত করে মাশরাফির দল।

অতঃপর ট্রফির আক্ষেপমোচন

নতুন বছরের (২০১৯) শুরুতে নিউ জিল্যান্ড সফরে অতীতের মতোই হারের মিছিলে ছিল দল। বিশ্বকাপের আগে আয়ারল্যান্ডে বহুজাতিক সিরিজের ট্রফি জয়ের আক্ষেপ ঘুচে যায় বাংলাদেশের। মাশরাফির নেতৃত্বে নতুন ইতিহাস গড়ে টাইগাররা। আয়ারল্যান্ড, ওয়েস্ট ইন্ডিজকে নিয়ে খেলা ত্রিদেশীয় সিরিজের শিরোপা জিতে বাংলাদেশ। ১৭ মে ডাবলিনের মালাহাইডে বৃষ্টি বিঘ্নিত ফাইনালে মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতের বিস্ফোরক ব্যাটিংয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে বৃষ্টি আইনে ৫ উইকেটে পরাজিত করে প্রথমবার ট্রফি জয়ের স্বাদ পায় বাংলাদেশ। পূর্ণতা পায় মাশরাফি, মুশফিকদের ক্যারিয়ার।

হতাশার বিশ্বকাপ ও বিবর্ণ বোলার মাশরাফি

অধরা ট্রফি জয়ের আবেশ ও অনেক উচ্চাশা নিয়ে বিশ্বকাপে যায় টাইগাররা। ওভালে দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে উড়ন্ত শুরু পায় বাংলাদেশ। হাতের মুঠোয় থাকা পরের ম্যাচটি নিউ জিল্যান্ডের কাছে হেরে যায়। এই দুই ম্যাচে বোলিংয়ের কোটা পূরণ করতে না পারা, উইকেটশূন্য থাকা মাশরাফিকে নিয়ে শুরু হয় সমালোচনার ঝড়। ওয়েস্ট ইন্ডিজ, আফগানিস্তানকে হারিয়ে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলা বাংলাদেশের সেমির স্বপ্ন পূরণ হয়নি সাকিবের অতিমানবীয় পারফরম্যান্সের পরও। উইকেট খরায় ভোগা ডানহাতি পেসার মাশরাফির অবসর নিয়ে তখনই শোরগোল শুরু হয়। আট ম্যাচে উইকেট পেয়েছিলেন মাত্র একটি। ক্যাপ্টেন কোটায় খেলার তীর্যক কথাও হজম করতে হয়েছে তখন। প্রশ্নবাণে জর্জরিত হলেও অবসর প্রসঙ্গ তুলে রেখেছিলেন দেশের ইতিহাসের সেরা অধিনায়ক। বিশ্বকাপের পর শ্রীলঙ্কায় যেতে পারেননি ইনজুরিতে পড়ে। তারপর কয়েক মাস ক্রিকেট থেকেই দূরে ছিলেন। বিপিএল দিয়ে মাঠে ফেরার পর তার পিছু ছাড়ছিল না অবসর প্রসঙ্গ। কেন্দ্রীয় চুক্তি থেকে নিজেকে সরিয়ে নেন। অনেক নাটকের পর জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে হোম সিরিজে খেলতে নামেন।

Image Credit: Raton Gomes/BCB

টানা দুই ম্যাচ জিতে সিরিজ নিশ্চিত করার পর বোর্ড তাকে অধিনায়ক পদে আরও কয়েক মাসের জন্য স্থায়ী করার চিন্তা করছিল। ঠিক এমন সময়ে অধিনায়কত্বকেই বিদায় বলে দিলেন মাশরাফি। তবে ডানহাতি পেসার মাশরাফির অধ্যায়টা দীর্ঘায়িত করতে চান তিনি। এখন সময়ই বলে দেবে, হুট করে বিদায় বলা ৩৬ বছর বয়সী এই পেসারকে সাধারণ খেলোয়াড় হিসেবে বিসিবি আর লালন করবে কি না।

মাশরাফি সম্বন্ধে আরো জানতে পড়তে পারেন বই। অনলাইনে কিনতে চাইলে ক্লিক করতে পারেন নিচের লিংকে- 

https://rb.gy/4hki9h

This article is in Bangla language. It is about the pathway of how Mashrafe has become an iconic superhero in Bangladesh Cricket Arena. 

Featured Image: Raton Gomes/BCB

Related Articles