ম্যাচের শেষ বাঁশির আগে রিয়াল মাদ্রিদের মতো দলের বিপক্ষে কোনো দলের জয় নিশ্চিত বলা শক্ত, হেরে যাওয়ার আগে হার মানার দল তো তারা নয়! কিন্তু সেই রাতটা ছিল ব্যতিক্রম। ম্যাচটাও ছিল উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগের, যা কি না রিয়াল মাদ্রিদের মঞ্চ বলেই বেশি পরিচিত। আর সেই চ্যাম্পিয়নস লিগের সেমিফাইনালেই কি না রিয়াল মাদ্রিদকে ৪-০ গোলে বিধ্বস্ত করল ম্যানচেস্টার সিটি; পুরো ম্যাচে সিটিজেনদের আক্রমণভাগের সামনে অসহায় আত্মসমর্পণ করল কার্লো আনচেলোত্তির শিষ্যরা।
কোচ হিসেবে পেপ গার্দিওলার লেগ্যাসি নিয়ে কখনোই কোনো প্রশ্ন তোলার সুযোগ ছিল না। বার্সেলোনা, বায়ার্ন মিউনিখের পর ম্যানচেস্টার সিটিতে এসেও নিজের প্রাধান্যবিস্তারী ফুটবল অব্যাহত রেখেছেন। কিন্তু চ্যাম্পিয়নস লিগের নকআউট রাউন্ডে নিজের ক্রমাগত ব্যর্থতার কারণে এই টুর্নামেন্টে তার সামর্থ্য নিয়ে ফুটবলমহলে আলোচনার কমতি ছিল না। সেখানে ঘরের মাঠে রিয়ালের কাছে হেরে বিদায় নিলে সেটা অনেকটা আগুনে ঘি ঢালার মতোই তার সামর্থ্য নিয়ে বাড়তি সমালোচনার রসদ যোগাতো।
অন্যদিকে বার্সেলোনার কাছে লিগ শিরোপা হারালেও চ্যাম্পিয়নস লিগে দুর্দান্ত পারফর্ম করে আরেকটি শিরোপার পথে এগিয়ে যাচ্ছিল রিয়াল মাদ্রিদ। গত মৌসুমের রূপকথার মতো কামব্যাকের ঘটনা মাদ্রিদ-ভক্তদের মনে এখনো টাটকাই থাকার কথা। তার উপর বার্নাব্যুতে সিটির মতো দলের বিপক্ষে পুরো ম্যাচে রিয়াল মাদ্রিদের খেলোয়াড়রা যেভাবে ছড়ি ঘুরিয়েছে, তাতে নিজেদের দলকেই ইন্টার মিলানের বিপক্ষে ফাইনালের মঞ্চেই দেখছিলেন বেশিরভাগ মাদ্রিদভক্তরা।
কিন্তু ম্যাচে দেখা যায়নি সেসবের ছিটেফোঁটাও। রিয়াল মাদ্রিদকে পাড়ার দল বানিয়ে ছেড়েছে ম্যানসিটির ফুটবলাররা। পুরো ম্যাচে গার্দিওলার শিষ্যরা আসলে কতোটা আধিপত্য বিস্তার করেছে, সেটা বোঝার জন্য ম্যাচের এক্সপেক্টেড গোলের চার্টের দিকে খেয়াল করা যাক। ম্যানসিটির ৩.১১ এক্সপেক্টেড গোলের বিপরীতে রিয়াল মাদ্রিদের এক্সপেক্টেড গোল ছিল মাত্র ০.৩২। এছাড়াও পুরো ম্যাচে একটিও অন-টার্গেট শট নিতে পারেননি মাদ্রিদের খেলোয়াড়রা!
ম্যাচের শুরু থেকেই মাদ্রিদ প্রথম লেগের ট্যাকটিক্সেই খেলতে শুরু করে। মাঠের মাঝের অংশ দিয়ে সিটির বিল্ডআপ থামাতে ম্যাচের শুরুর দিকে মাদ্রিদের দুই উইঙ্গার রদ্রিগো এবং ভিনিসিয়াস জুনিয়র সেন্টার এরিয়ায় চেপে আসেন। ফলে তখন দুইপাশের উইং উন্মুক্ত হয়ে পড়ে। কিন্তু বেনজেমা-ভিনিসিয়াস-রদ্রিগো-মদ্রিচের আঁটসাঁট অবস্থানের কারণে সিটির দুই পিভট স্টোনস এবং রদ্রি টার্ন করারই সুযোগই পাচ্ছিলেন না। এ দু’জনের পাসিং ভিশন কতটা ভয়ঙ্কর, তা আনচেলোত্তি ভালোভাবেই জানতেন। তাই স্টোনস বা রদ্রির পায়ে বল আসলেই মাদ্রিদের ফরোয়ার্ডরা তাদের প্রেস করে টার্ন করার সুযোগ আটকে দিতেন; ফলে স্টোনস-রদ্রিকে বাধ্য হয়ে ব্যাকপাস খেলতে হতো। এ সমস্যা সমাধান বের করতে যদিও ম্যানসিটি খুব বেশি সময় নেয়নি।
সিটির দুই ওয়াইড সেন্টারব্যাক ওয়াকার এবং আকাঞ্জি বল পায়ে বেশ দক্ষ হওয়ায় তারা দুই পাশের ফাঁকা জায়গা কাজে লাগিয়ে বল পায়ে রিয়াল মাদ্রিদের হাফে উঠে আসছিলেন। সেন্টার এরিয়া দিয়ে সিটির আক্রমণ থামানো গেলেও এ কারণে সিটির বল প্রোগ্রেশন কোনোভাবেই আটকাতে পারছিল না। বরং তাদের দুই ফুলব্যাক বল নিয়ে সামনে এগিয়ে আরো ভালোভাবে ‘বিটুইন দ্য লাইনে’ অবস্থান করা ডি ব্রুইনা এবং গুন্দোয়ানকে খুঁজে নিচ্ছিলেন। রিয়াল মাদ্রিদের চারজন খেলোয়াড় উপরে থাকায় ক্রুজ এবং ভালভার্দের পক্ষে ম্যানসিটির আক্রমণের বিপক্ষে আঁটসাঁট মাঝমাঠ বজায় রাখা সম্ভব হচ্ছিল না। তাই আনচেলোত্তি দ্রুতই তার উইঙ্গারদের সেন্টার থেকে সরিয়ে ওয়াইড এরিয়ায় নিয়ে আসেন।
পেপ গার্দিওলা যেন এই সুযোগেই অপেক্ষাতেই ছিলেন! এবার ম্যানসিটির দুই পিভট মদ্রিচের বিপক্ষে ২-ভার্সাস-১, এবং সিটির চার মিডফিল্ডার মাদ্রিদের মিডফিল্ডারদের বিপক্ষে ৪-ভার্সাস-৩ পরিস্থিতির তৈরি করেন। অর্থাৎ পুরো মাঝমাঠেই ম্যানসিটি ‘নিউমেরিক্যাল সুপিরিয়রিটি’ আনতে সক্ষম হয়। ফলে সিটির বিল্ডআপ এবং আক্রমণ আরো অনেক ধারালো হয়ে উঠে।
এ সময় বিল্ডআপে সিটির দুইজন পিভটের মধ্যে একজন ফ্রি হয়ে যাচ্ছিলেন বারবার। সাধারণত স্টোনসই ফ্রি-ম্যান হিসেবে বারবার আক্রমণে উঠে এসেছেন। স্টোনস এবং রদ্রি তাদের পাসিংকে কাজে লাগিয়ে হাফস্পেসে থাকা ডি ব্রুইনা বা গুন্দোয়ানকে খুঁজে নিচ্ছিলেন, অথবা দুই উইংয়ে কিছুটা ফাঁকায় অবস্থান করা বার্নাডো সিলভা-গ্রেলিশকে লং পাস দিয়ে আক্রমণের গতি বাড়াচ্ছিলেন।
ম্যানসিটির বিল্ডআপের শুরুতে স্টোনস নিচে নেমে এসে নিজেকে ম্যান-মার্কিং ফ্রি করে নেন এবং বল নিয়ে সামনে আগানোর চেষ্টা করেন।
স্টোনস রদ্রিকে পাস বাড়ালে বেনজেমা এবং মদ্রিচ দু’জনই রদ্রিকে প্রেস করার চেষ্টা করেন। মদ্রিচ প্রেস করতে উপরে উঠে আসায় মিডফিল্ডে অনেকটা ফাঁকা জায়গা তৈরি হয়। রদ্রি স্টোনসকে ব্যাকপাস বাড়ালে স্টোনস সেই ফাঁকা জায়গা দিয়ে উপরে উঠে আসে।
এবার স্টোনসের সামনে পুরো মাদ্রিদের মাঝমাঠ ওপেন হয়ে পড়েছে। ডি ব্রুইনা এবং গুন্ডোয়ান হাফস্পেস ধরে রান নেওয়ায় ক্রুস কিংবা ভালভার্দের কেউই স্টোনসকে প্রেস করতে উঠে আসেনি। আর স্টোনসের সামনেও বল নিয়ে সামনে আগানোর মতো অনেক সময় এবং ফাঁকা জায়গা তৈরি হয়েছে। সিটি এ ধরনের পরিস্থিতি বারবারই তৈরি করেছে এবং এভাবেই একের পর এক আক্রমণ সাজিয়েছে।
এক্ষেত্রে আনচেলোত্তির একটা বড় ভুল ছিল সিটির পিভটদের বিপক্ষে মদ্রিচকে রাখা। এই পজিশনে ভালভার্দে থাকলে তিনি তার গতি এবং ওয়ার্করেট কাজে লাগিয়ে অন্তত কিছু ক্ষেত্রে ম্যানসিটির পিভট-ডুয়োকে বাধা দিতে পারতেন। ফলে তারা এতটা সহজে আক্রমণে উঠে আসার সুযোগ পেত না।
প্রথম লেগে ম্যানসিটির দুই উইঙ্গার মাদ্রিদের ফুলব্যাকদের সামনে খুব একটা সুবিধা করতে পারেনি, যে কারণে ম্যানসিটির বেশিরভাগ আক্রমণই আলোর মুখ দেখেনি। সেই ম্যাচে মাদ্রিদের মিডফিল্ডাররা ফুলব্যাকের সাথে মিলে সিটির দুই উইংয়েই ২-ভার্সাস-১ তৈরি করছিলেন। তাই বার্নাডো সিলভা বা গ্রেলিশের কেউই সেদিন আক্রমণে খুব একটা সুবিধা করতে পারেননি। কিন্তু এই ম্যাচে সিটির মিডফিল্ডাররা উইঙ্গারদের ক্রমাগত সাপোর্ট দিয়ে গেছেন; বার্নাডোর পায়ে বল গেলেই ডি ব্রুইনা হাফস্পেস ধরে ইনভার্টেড রান নিয়ে ক্রুজকে নিজের দিকে টেনে নিয়েছেন, গ্রেলিশের পায়ে বল গেলেও একই কাজ করেছেন গুন্দোয়ান। আর ড্রিবল করার স্বাধীনতা পেয়ে গ্রেলিশ-বার্নাডোরাও ছড়ি ঘুরিয়েছেন মাদ্রিদের ফুলব্যাকদের উপর। বার্নাডো সিলভা ৭১% সাকসেস রেটে ৭ বার ড্রিবলিংয়ের চেষ্টা করেছেন এবং গ্রেলিশ ৮ বার ড্রিবল করেছেন ৬৩% সাকসেস রেটে; যা কি না ম্যাচের মধ্যে দুই দলের খেলোয়াড়দের মধ্যে সর্বোচ্চ।
তবে ম্যানসিটি বেশিরভাগ সময়ই ডানপাশে ওভারলোড তৈরি করে আক্রমণে ওঠায় বামপাশে গ্রেলিশ বেশিরভাগ সময়ই ম্যান-মার্কিং ফ্রি অবস্থায় ছিলেন। এই স্পেস কাজে লাগানোর জন্য সিটি বারবার ডানপাশ থেকে ২-৩ পাসে বামপাশে বল নিয়ে গেছে। সিটির বল সুইচিং থামাতে মাদ্রিদের মিডফিল্ডাররা সিটির পিভটদের কড়া মার্কিংয়ে রেখেছেন। এক্ষেত্রে সমাধান হিসেবে আকাঞ্জি উপরে উঠে এসে ফ্রি-ম্যান হিসেবে বারবারই গ্রেলিশের সাথে বাকিদের সংযোগ তৈরি করেছেন।
বার্নাডোর পায়ে বল আসার সাথে সাথেই ডি ব্রুইনা ওভারল্যাপিং রান নিয়ে কামাভিঙ্গাকে বিভ্রান্ত করে দেন।
ফলে বার্নাডো সিলভা টার্ন করে আক্রমণের দিক পরিবর্তন করার সুযোগ পান। তিনি বামপাশে ফ্রি হয়ে থাকা আকাঞ্জিকে পাস বাড়ান।
আকাঞ্জি খুব দ্রুত বামপাশে বক্সের বাইরে অবস্থান করা গ্রেলিশকে পাস বাড়ান।
এবার গ্রেলিশ বল রিসিভ করে কন্ট্রোলে আনার কিছুটা সময় এবং ফাঁকা স্পেস পেয়ে যান। এসময় হালান্ড রান নিলে গ্রেলিশের ক্রস থেকে হালান্ডের হেডারে ম্যানসিটি একটুর জন্য গোলবঞ্চিত হয়।
এবার ম্যানসিটির প্রথম গোলটার দিকে খেয়াল করা যাক। রাইট উইংয়ে বার্নাডো সিলভা যখন বল রিসিভ করেছেন তখন তিনি নিজের জন্য বেশ খানিকটা ফাঁকা জায়গা তৈরি করে নেন। একই সময় স্টোনস মাদ্রিদের ডিফেন্ডারদের পেছনে রান নেন। বার্নাডো সিলভা বলের কন্ট্রোল নিয়েই স্টোনসকে উদ্দেশ্য করে পাস বাড়ান।
বল যখন উইং ঘুরে ওয়াকার হয়ে ডি ব্রুইনের পায়ে আসে তখন তার সামনেও অনেকটা ফাঁকা জায়গা তৈরি হয়। বার্নাডো তখন ইন-বিহাইন্ড রান নেন। গুন্ডোয়ান বক্সের অনেকটা ভেতরে অবস্থান করায় আলাবার সম্পূর্ণ মনোযোগ ছিল তার দিকে। ফলে বার্নাডো সিলভা বক্সের ভেতরে পাস রিসিভ করে অনেকটা সময় নিয়েই সামনে এগিয়ে সামনের পোস্টে কোর্তোয়াকে বিট করে সিটিকে লিড এনে দেন।
আমাদের আলোচনা অনেকদূর চলে এলেও এখন পর্যন্ত একবারও আর্লিং হালান্ডের নাম আসেনি। তাই বলে ভেবে বসবেন না, হালান্ড এই ম্যাচে বাজে পারফর্ম করেছেন। হালান্ড হয়তো বা এই ম্যাচে কোনো গোল করতে পারেননি, কিন্তু তার বুদ্ধিদীপ্ত মুভমেন্ট আর লং বল কন্ট্রোলে নিয়ে টিমমেটকে খুঁজে নেওয়ার সামর্থ্য সিটির আক্রমণের ধার অনেকটা বাড়িয়েছে। দুর্দান্ত চারটি শটের পরও হালান্ড গোল পেলেন না, এটাকে দুর্ভাগ্য ছাড়া আর কোনো কিছু বলার কোনো উপায় নেই। এই ম্যাচে হালান্ড কতটা দুর্দান্ত ছিলেন, তার একটা ছোট্ট উদাহরণ দেওয়া যাক।
আকাঞ্জির থেকে পাস রিসিভ করতে হালান্ড তার পজিশন ছেড়ে অনেকটা নিচে নেমে আসেন। তাকে আঁটসাঁটভাবে ম্যান মার্ক করা রুডিগারও তাকে ট্র্যাক করে উপরে উঠে আসেন।
হালান্ড বল রিসিভ করে এক টাচেই তার সামনে থাকা গুন্দোয়ানকে পাস বাড়ান এবং ঘুরে ফাঁকা জায়গার দিকে রান নেন। তাকে মার্ক করে আসা রুডিগার এ সময় পুরোপুরিভাবে আউট অব পজিশনে।
হালান্ড ফাঁকা জায়গা ধরে রান নিতে পারলেও রুডিগার জটলার মধ্যে পড়ে যান। যে কারণে তিনি পুরোপুরিভাবেই হালান্ডের উপর দখল হারিয়ে ফেলেন। গুন্ডোয়ান বল কন্ট্রোলে নিয়ে হালান্ডকে উদ্দেশ্য করে ব্যাকফ্লিক করাতে হালান্ড কোর্তোয়ার সামনে ‘১-ভার্সাস-১’ হয়ে পড়েন।
এরকম পরিস্থিতিতে হালান্ডের মতো গোলমেশিন দশবারে সম্ভবত আটবারই জাল খুঁজে নেবেন। কিন্তু এদিন হয়তো বা কোর্তোয়া পণ করেই নেমেছিলেন, যেভাবেই হোক হালান্ডকে গোলবঞ্চিত রাখবেন। তাই হালান্ডের আরেকটি বুলেট গতির শট তিনি ঠেকিয়ে দিলেন।
এবার রিয়াল মাদ্রিদের বিল্ডআপের ধরন নিয়ে আলোচনা করা যাক।
এই ম্যাচে ম্যানসিটির কাছে রিয়াল মাদ্রিদ এতটাই অসহায় ছিল যে বল পায়ে তাদের আক্রমণের নির্দিষ্ট কোনো প্যাটার্ন খুঁজে পাওয়াই মুশকিল বৈকি! রিয়াল মাদ্রিদের খেলা দেখে মনে হয়েছে সিটির আক্রমণাত্মক প্রেসিং রুখে নিজেদের আক্রমণ রচনার জন্য আনচেলোত্তির সুনির্দিষ্ট কোনো পরিকল্পনাই ছিল না। রিয়ালের আক্রমণের মধ্যমণি নিঃসন্দেহেই ব্রাজিলিয়ান তারকা ভিনিসিয়াস জুনিয়র। কিন্তু এদিন আনচেলোত্তির তুরুপের তাসকে একেবারে বোতলবন্দী করে রেখেছিলেন ম্যানসিটি ডিফেন্ডার কাইল ওয়াকার। ওয়াকার এবং ভিনির মধ্যে পুরো ম্যাচে মোট ১০ বার ইন্ডিভিজুয়াল ডুয়েল হয়েছে, যার মধ্যে ৯ বারই বিজয়ী ব্যক্তির নাম ওয়াকার। এর মাধ্যমেই ভিনিসিয়াস সিটির অভিজ্ঞ এই ডিফেন্ডারের সামনে কতটা অসহায় ছিলেন তা পরিষ্কারভাবে ফুটে উঠছে।
ম্যাচের তখন কেবল এক-তৃতীয়াংশ পেরিয়েছে। মাঝমাঠের জটলার ভেতর থেকে সিটির ডিফেন্স ভেদ করে রদ্রিগো দুর্দান্ত এক ডিফেন্সচেরা পাস বাড়ালেন। ভিনিসিয়াসও ওয়াকারকে ফাঁকি দিয়ে একেবারে ফাঁকা জায়গায় বল পেয়ে যান।
এ ধরনের পরিস্থিতিতে সাধারণত ভিনিসিয়াসের গতির সাথে প্রতিপক্ষ ডিফেন্ডার পেরে ওঠেন না। তাছাড়া তখন বেনজেমাও ফাঁকা জায়গা খুঁজে রান নিচ্ছিলেন। তাই এই আক্রমণ থেকে রিয়াল মাদ্রিদ সমতায় ফিরে আসবে এমনটাই মনে হচ্ছিল। কিন্তু ওয়াকারের গতির কাছে ভিনিসিয়াসও হার মানতে বাধ্য হন।
গোলকিপারের থেকে রিয়াল মাদ্রিদের বিল্ডআপের শুরুতে সিটির ফরোয়ার্ড খেলোয়াড়রা খুব একটা প্রেসিংয়ে অংশ নেননি। কিন্তু ডিফেন্ডাররা নিজেদের মধ্যে ৪-৫ পাস খেলার পরপরই সিটি প্রেসিংয়ের জন্য উপরে উঠে এসেছে। এ সময় গ্রেলিশ উইং ছেড়ে মিলিতাওকে প্রেস করতে উঠে এসেছেন, আকাঞ্জি অনেকটা উপরে উঠে এসে কার্ভাহালকে মার্ক করে ফেলেছেন। অপর উইঙ্গার বার্নাডো কামাভিঙ্গাকে মার্ক করেছেন এবং সিটির মিডফিল্ডাররা মাদ্রিদের রক্ষণের সাথে মাঝমাঠের সমস্ত সংযোগ বন্ধ করে দিয়েছে; যে কারণে বল বাহককে বাধ্য হয়েই কোর্তোয়াকে ব্যাকপাস খেলতে হয়েছে। এ সময় হালান্ড সামনে এগিয়ে কোর্তোয়াকে প্রেস করে উদ্দেশ্যহীন লং বল খেলতে বাধ্য করেছেন। কোর্তোয়া পুরো ম্যাচে ৮টি লং বল ডেলিভার করলেও এদের মধ্যে মাত্র দু’টি তার টিমমেটকে খুঁজে পেয়েছে।
এ ম্যাচে সিটির একচ্ছত্র আধিপত্যের বিপরীতে রিয়াল মাদ্রিদের খেলোয়াড়দেরকে একেবারেই ছন্নছাড়া মনে হয়েছে। কার্লো আনচেলোত্তিও তার প্রথাগত ধ্যানধারণা থেকে বেরিয়ে সাহসী কোনো পদক্ষেপ নিতে পারেননি – যার ফলে চ্যাম্পিয়নস লিগে অমিত শক্তিধর রিয়াল মাদ্রিদকে বিধ্বস্ত করেই ফাইনালে পা রাখল পেপ গার্দিওলার শিষ্যরা। এখন ফাইনালে ইন্টার মিলানকে হারিয়ে বহু বছরের আরাধ্য চ্যাম্পিয়নস লিগের শিরোপা আরেকবার উঁচিয়ে ধরতে পারেন কি না, সেটা এখন সময়ই বলে দেবে!