জিয়ানলুইজি বুফন কখনো চ্যাম্পিয়নস লিগ জেতেননি।
এই ছোটখাটো চমকপ্রদ তথ্যটি ফুটবল ভক্তদের কমবেশি সবারই জানার কথা। কিন্তু যেই জুভেন্টাসেই বলতে গেলে পুরো ক্যারিয়ার পার করে দিয়েছেন বুফন, সেই জুভেন্টাস সর্বশেষ ক্লাব শ্রেষ্ঠত্বের ট্রফি জিতেছিল কবে, তা হয়তো অনেকেই জানেন না। অবশ্য না জানারই কথা, সেই সময় যে জুভেন্টাসের রত্ন পাওলো দিবালার বয়সই ছিল মোটে ২ বছর! ক্যালেন্ডারের পাতা উল্টালে সালটা ১৯৯৬।
মাঝে পেরিয়ে গেছে ২৪টি চ্যাম্পিয়নস লিগ টুর্নামেন্ট। তাতে তুরিনের বুড়িদের ফাইনালে উঠার সৌভাগ্যও হয়েছিল ৫ বার, কিন্তু শিরোপাটা আর ছুঁয়ে দেখা হয়নি। অথচ সিরি-আ’তে সর্বশেষ ২৪ বছরে ১৩ বারই লিগ টেবিলে ১ নম্বরে থেকে মৌসুম শেষ করেছে জুভেন্টাস। নিজেদের ‘ব্যক্তিগত সম্পত্তি’ বানিয়ে ফেলা সিরি-আ বর্তমানে টানা ৯ বছর ধরে জুভের শোকেসে। তারপরও ঠিক কেন যেন তাল-লয় হারিয়ে ফেলা চ্যাম্পিয়নস লিগে। বারবারই যেন খেই হারিয়ে ফেলেন বুফন, পিরলো, জিদান, দেল পিয়েরো কিংবা হালের রোনালদো, দিবালারা। ডাগআউটে আসেন একে একে লিপ্পি, আনচেলত্তি, কন্তে, রানিয়েরি, অ্যালেগ্রি কিংবা সারি – তবে ভাগ্যের হেরফের হয় না।
মোটা দাগে বলতে গেলে, টানা নয় বছর ধরে ‘স্কুদেত্তো’ জেতা জুভেন্টাসের জন্য লিগ চ্যাম্পিয়ন হওয়াটা একেবারেই ক্লিশে হয়ে গেছে। বরং বিগত বছরগুলোতে চ্যাম্পিয়নস লিগের ব্যর্থতাই মিডিয়ার রাডারে বারবার ধরা পড়েছে বড় করে। তাই তো নিজের কোচিং ক্যারিয়ারের প্রথম লিগ শিরোপা জিতেও কোচের চেয়ারটি ধরে রাখতে পারেননি মরিসিও সারি। লিওঁ’র সাথে হেরে দ্বিতীয় রাউন্ডেই বিদায় নেওয়াতে কপালে জুটেছে ‘বরখাস্ত’ শব্দটি। সারির ফেলে যাওয়া স্থানে রোনালদোদের কোচ কে হবেন?
এই জল্পনা-কল্পনা শুরু হওয়ার আগেই তাতে পানি ঢেলে দিয়ে দুইদিন পরেই সবাইকে চমকে দিয়ে কোচের নাম ঘোষণা করে জুভেন্টাস বোর্ড। নাম তার আন্দ্রেয়া পিরলো! সাবেক জুভেন্টাস খেলোয়াড়ই আবার ফিরছেন তুরিনে; এবার দুই বছরের চুক্তিতে ডাগআউটে। ভাবছেন, অবাক করার মতো? তার চেয়ে অবাক করা তথ্য হচ্ছে, কোচ হিসেবে পিরলোর অভিজ্ঞতা শূন্য। শূন্য বলতে একদমই শূন্য। কারণ, ডাগআউট থেকে এখনো পর্যন্ত পরিচালনা করেননি একটি ম্যাচও!
‘ভবিষ্যতে কোচ হিসেবে আমাকে দেখা যাবে, সে সম্ভাবনার উপর আমি নিজেও এক সেন্টের বাজি লাগতে ইচ্ছুক নই। এই কাজটি আমাকে আকর্ষণ করে না, কারন তাতে অনেক বেশি দুশ্চিন্তা করতে হয়।’
নিজের আত্মজীবনীতে পিরলো বলে দিয়েছিলেন, কোচ হওয়ার কোনো সম্ভাবনাই নেই তার। তবুও নিয়তির পরিণতিতে আজ মাত্র ৪১ বছর বয়সেই জুভেন্টাসের মতো ক্লাবের ডাগআউটে পিরলো। তবে তার কাজটা যে সহজ হবে না, সেই আগাম ভবিষ্যতবাণী দিয়েই রেখেছেন একসময়ের সতীর্থ ও নাপোলি কোচ জেনারো গাত্তুসো। নির্ঘুম রাত কাটানোর প্রস্তুতিও নিয়ে রাখতে বলেছেন পিরলোকে। তবে গাত্তুসোর থেকেও পিরলোর কাজ যে আরো কঠিন হবে, তা বলে দেওয়াই যায়। কারণ? একমাত্র চ্যাম্পিয়নস লিগ জয়ই যে জুভেন্টাসের সাফল্য হিসেবে গণ্য করা হবে!
খেলোয়াড়ি জীবনে পিরলো খেলেছিলেন বেশ কিছু নামীদামী কোচের অধীনে। তার মধ্যে ইতালির বিশ্বকাপজয়ী কোচ মার্সেলো লিপ্পি কিংবা আনচেলত্তি, অ্যালেগ্রির কথা না বললেই নয়। সেক্ষেত্রে বলা যায়, পিরলোর বেশ ভালো অভিজ্ঞতাও রয়েছে। তবে ডাগআউটের অভিজ্ঞতার হিসেব যখন আসে, তাতে এখন অবধি নিতান্তই ‘শিশু’ তিনি। ২০১৯ এর আগস্টে উয়েফা লাইসেন্সধারী কোর্স সম্পন্ন করেছিলেন পিরলো। ঠিক এক বছর পর ৩০ জুলাই জুভেন্টাস অনূর্ধ্ব-২৩ দলের কোচের দায়িত্ব গ্রহণ করেন এই ‘মিডফিল্ড মায়েস্ত্রো’। কিন্তু মাত্র ৯ দিনের মাথায় সারির জায়গায় এক লাফে জুভেন্টাসের প্রধান কোচে স্থলাভিষিক্ত হন তিনি। অর্থাৎ, ক্যারিয়ারে ডাগআউটে থেকে এক ম্যাচ পরিচালনা না করেও সিরি-আ চ্যাম্পিয়নদের কোচ পিরলো! এই ভাগ্য কি বিড়ম্বনা আনবে নাকি সাফল্য, তা অবশ্য জানা যাবে খুব শীঘ্রই। তবে সেই সময় পর্যন্ত বসে নেই ফুটবল বিশ্ব। নাম ঘোষণার পর থেকেই পিরলোর সম্ভাব্য ট্যাকটিকস কিংবা গেইমপ্ল্যান নিয়ে কাটাছেঁড়া শুরু হয়ে গিয়েছে ইতঃমধ্যেই।
দল গোছানো
নতুন মৌসুম শুরুর আগেই পিরলোর প্রথম পরীক্ষা দলকে নিজের মতো করে গুছানো। সেক্ষেত্রে প্রথমেই রক্ষণের দিকেই নজর দেওয়া যাক।
‘রক্ষণের আঁতুড়ঘর’-খ্যাত ইতালির ক্লাব হিসেবে খোলা চোখে রক্ষণ নিয়ে মাথা ব্যথার কারণ না দেখলেও এখানেই রয়েছে শুভঙ্করের ফাঁকি। বিগত টানা যে নয় বছর ধরে স্কুদেত্তো ঘরে তুলেছে জুভেন্টাস, তার মধ্যে চলতি মৌসুমেই হজম করছে সবচেয়ে বেশি ৪৩টি গোল। শুধু তা-ই নয়, দুই গোলরক্ষক শেজনি আর বুফন মিলে এই মৌসুমে মোট গোল বাঁচিয়েছেন ১১৬টি – যেটি কি না বিগত ৯ বছরে জুভেন্টাসের গোলরক্ষকদের জন্য সর্বোচ্চ। সর্বশেষ ৯ বছরে মৌসুমে জুভের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ গোলহজম করার সংখ্যা কত জানেন? মোটে ৩০টি। অথচ মৌসুম শুরুর আগেই আয়াক্স থেকে উড়িয়ে আনা হয়েছিলো ডি লিটকে। তবে হতাশাজনক পারফরম্যান্সের জন্য রেড লাইনে আছেন সান্দ্রো, ডি শিলিও, দানিলো ও রুগানি। ফুলব্যাকদের দুর্দশায় শেষ দিকে সারি কোয়াদ্রাদোকেও পর্যন্ত খেলিয়েছিলেন রাইটব্যাকে। মন্দের ভালো যে, সেন্টারব্যাক নিয়ে এত দুশ্চিন্তা নেই পিরলোর। ডি লিট-বোনুচ্চি ছাড়াও ডেমিরাল, কিয়েল্লিনির মতো খেলোয়াড় হাতে রয়েছে তার। তাই জুভেন্টাসে পিরলোর প্রথম কাজ হবে গুণসম্পন্ন দুই ফুলব্যাক ভেড়ানো।
জুভেন্টাসের ছন্নছাড়া খেলার পিছনে সবচেয়ে বড় দায় মাঝমাঠের। সেক্ষেত্রে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে পারে বিয়ানকোনেরিরা। ক্যারিয়ার জুড়ে মাঝমাঠের ত্রাণকর্তা হিসেবে আবির্ভূত হওয়া পিরলোর দিকেই চাতক পাখির মতো তাকিয়ে জুভের ভঙ্গুর মাঝমাঠ। পগবা কিংবা ইস্কো পছন্দের তালিকায় থাকলেও তাদের হয়তো পাবেন না পিরলো। সেটার দায় চাপানো যায় করোনা-পরবর্তী অর্থনৈতিক মন্দার উপর। তবে হাতে যে খেলোয়াড় একদমই নেই, তাও কিন্তু না। মাতুইদি ক্লাব ছেড়েছেন ইতঃমধ্যেই। সেই পথের যাত্রী হতে পারেন রামসি, খেদিরাও। তবে দলে ভিড়েছেন আর্থুর, কুলুসেভস্কির মতো তরুন মিডফিল্ডাররা। কুলুসেভস্কি তো এইবার জিতেই নিয়েছিলেন সিরি-আ বর্ষসেরা তরুণ খেলোয়াড়ের পুরষ্কার। ব্রেশিয়া থেকে আরেক প্রতিভাবান তরুন সান্দ্রো টোনালির তুরিনে আসার গুঞ্জন আরো বড়সড় হচ্ছে পিরলোর আগমনের পর। ৪০ মিলিয়নের প্রাইসট্যাগ লাগানো টোনালির পিছনে অবশ্য ছুটছে ইন্টারসহ বেশ বড় কয়েকটি ক্লাব। টোনালি ছাড়াও চ্যাম্পিয়নস লিগে চমকে দেওয়া লিঁও’র মাঝমাঠের প্রাণভোমরা হোসেম আউয়ারের দিকেও চোখ জুভেন্টাসের। গুঞ্জন অনুসারে, উদিনেস মিডফিল্ডার রদ্রিগো ডিপল, পিএসজির লিয়ান্দ্রো প্যারাদেস ও রোমার সেনসেশন জানিওলোর দিকেও নজর রয়েছে পিরলোর। এই কয়েকটি ট্রান্সফার হয়ে গেলে নিজের মতো করে মিডফিল্ডকে জাগ্রত করার সব রসদই পেয়ে যাবেন পিরলো।
অন্যদিকে, আক্রমণভাগে রোনালদো আর দিবালা ছাড়া বাকি সবার অবস্থানই নড়বড়ে। এমএলএসে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে হিগুয়াইনের। ট্রান্সফার লিস্টে নাম রয়েছে বার্নাদেস্কি ও ডগলাস কস্তার। তাই একজন স্ট্রাইকার কেনা মোটামুটি প্রয়োজনীয় কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে পিরলোর জন্য। সেক্ষেত্রে পিরলো নিজের পছন্দের নাম জানিয়ে অবশ্য সবাইকে চমকেই দিয়েছেন। নাপোলির মিলিক পিরলোর প্রধান লক্ষ্য। তবে নাপোলি তাকে ছাড়বে কি না, সে ব্যাপারে সন্দেহ রয়েছে। উলভসের রাউল জিমেনেজ বা আর্সেনালের অবামেয়াং-এর উপর চোখ রাখলেও সেখানে কিন্তু থেকেই যাচ্ছে। তাদের পেতে হলে কমপক্ষে ৬০ মিলিয়ন ইউরোর উপর ঢালতে হবে জুভেন্টাসকে। সেজন্য বলা যায়, আক্রমণভাগ গোছানোই পিরলোর বড় মাথা ব্যথার কারন হয়ে দাঁড়াতে পারে।
সম্ভাব্য গেমপ্ল্যান
জুভেন্টাসের স্পোর্টিং ডিরেক্টর ফ্যাবিও প্যারাটিচি অবশ্য পিরলোর নিয়োগকে চমক হিসেবে দেখছেন না। তার মতে, পিরলোকে দায়িত্ব দেওয়া আর দশটি স্বাভাবিক ঘটনার মতোই।
‘সে এখানে চার বছর ধরে খেলেছে। এমনকি খেলা ছাড়ার পরও সবসময় ক্লাবের সাথে তার যোগাযোগ ছিল। স্বভাবতই তিনিই জুভেন্টাসের খেলার ধরন সবচেয়ে ভালো বুঝবেন।’
পিরলোকে নিয়ে এই কথাগুলোই বলেছেন ফ্যাবিও। তাতে একটি জিনিস পরিষ্কার যে, জুভেন্টাসকে তাদের চিরাচরিত ঘরানার ফুটবলই খেলাবেন পিরলো। আধুনিক কোচদের মতো বল পায়ে রেখে মাঝমাঠে একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার রাখাই হবে পিরলোর খেলার ধরন। সর্বশেষ সংবাদ সম্মেলনে পিরলো জানিয়েছেন, তিনি তার খেলোয়াড়দের বলে দিয়েছেন যথাসম্ভব সময় পায়ে বল রাখা নিয়ে। আর বল হারালেও সেটি যেন দ্রুত উদ্ধার করে তার খেলোয়াড়েরা।
তবে গার্দিওলা কিংবা গ্যাসপেরিনির মতো আক্রমণের স্বার্থে রক্ষণভাগকে বলি দেওয়াটা ধোপে টিকবে না পিরলোর খেলায়। নিজের আত্মজীবনীতে পিরলো লিখেছিলেন,
‘ফুটবলকে আপনি মিলিটারির সাথে মিলাতে পারেন। সাফল্য শুরু হবে একেবারে লাইনের শেষ অঞ্চল থেকে। যে দল সবচেয়ে কম গোল খাবে সেই দলই হবে চ্যাম্পিয়ন।’
কথাটি হয়তো আপনাকে স্যার আলেক্স ফার্গুসনের সেই অমর বাণী মনে করিয়ে দিচ্ছে, ‘আক্রমণভাগ হয়তো আপনাকে ম্যাচ জেতাবে, কিন্তু রক্ষণভাগ জেতাবে শিরোপা।’ তাতে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে পারেন জুভেন্টাস ভক্তরা। চলতি মৌসুমে যে ম্যাচে এগিয়ে থেকেও পিলে চমকানোর মতো মোট ২১ পয়েন্ট হারিয়েছে সারির দল!
তবে দলের সেরা তারকা রোনালদোকে ‘মেইনম্যান’ করেই দল সাজাবেন পিরলো। ট্যাকটিক্যালি বলা যায়, ডাবল পিভট রেখে মধ্যমাঠ-নির্ভর ৪-২-৩-১ কিংবা ৪-৩-১-২ ফর্মেশনে দেখা যেতে পারে জুভেন্টাসকে। তবে পরিসংখ্যান ঘেঁটে থাকার অভ্যাস থাকলে পিরলো দলকে খেলাতে পারেন দ্বিতীয় ফর্মেশনেই। কারণ, পরিসংখ্যান বলে যে, বিগত বছরগুলোতে যখন জুভেন্টাস ৪-২-৩-১ এ খেলেছিল, সেই ম্যাচগুলোতে জুভেন্টাসের ডিফেন্সিভ থার্ডে ঢুকেছে প্রতিপক্ষের ৩৪% পাস। আর ফর্মেশনটা ৪-৩-১-২ রূপ নিলেই সেটি কমে দাঁড়িয়েছে ২৮%। গড়ে সিরি-আ’র একেকটি দল ম্যাচে ৪৪০টি পাস দিয়ে থাকেন। সেক্ষেত্রে ৬% কমা মানে গড়ে ম্যাচে ২৭টি পাস কম প্রবেশ করা। আবার ৪-৩-১-২ ফর্মেশনে দেখা গেলে রোনালদোকেও দেখা যেতে পারে সেন্টার ফরোয়ার্ড রোলে। সেই রোলে রোনালদোকে আটকানোর সাধ্য যে কারো নেই, বলাই বাহুল্য।
তবে গোলের কথা আসলে পরিসংখ্যানের চোখে জয়ী ৪-২-৩-১ ফর্মেশন। বিগত বছরগুলোতে গোল পার্থক্যে জুভেন্টাস সেরা সময় কাটিয়েছিলো কন্তে ও অ্যালেগ্রির আমলে। আর ফর্মেশনে ঝুঁকলে দেখা যায় যে ৪-২-৩-১ ফর্মেশনে জুভেন্টাসের গড়ে ম্যাচ প্রতি গোল পার্থক্য ছিলো ২, আর ৪-৩-১-২ ফর্মেশনে গেলে সেটি কমে দাঁড়িয়েছে ১.৬৭। সেক্ষেত্রে পিরলোর প্রাধান্য যদি হয় রক্ষণ আগলে রেখে আক্রমণ, তাহলে ৪-২-৩-১ ফর্মেশনেই দেখা যেতে পারে জুভেন্টাসকে।
সম্ভাব্য সমস্যা
এ তো গেল দল গোছানো আর গেমপ্ল্যান নিয়ে পিরলোর সম্ভাব্য চিন্তাভাবনা। তবে শুরুতে এত বড় দলের কোচ হওয়াটা মোটেও সুবিধার নয়। অনেক ঝক্কি-ঝামেলা ওঁত পেতে আছে পিরলোর সামনে।
প্রথমেই বলতে হয় পূর্ণ স্বাধীনতার ব্যাপারে। পিরলো কোচ হলেও দলবদলের বাজারের পূর্ণ নিয়ন্ত্রন মূলত ভাইস প্রেসিডেন্ট পাভেল নেদভেদ ও স্পোর্টিং ডিরেক্টর ফ্যাবিও প্যারাটিচির হাতে। তাদের উপরের হর্তাকর্তা হিসেবে আছে প্রেসিডেন্ট আগনেল্লি।
দ্বিতীয়ত, ড্রেসিংরুমের উপর নিয়ন্ত্রণ। বুফন, কিয়েল্লিনি, বোনুচ্চি, রোনালদোসহ বেশ কিছু সিনিয়র খেলোয়াড় রয়েছে জুভেন্টাসের, যাদের সাথে একসাথে মাঠে খেলেছেন পিরলোও। সেক্ষেত্রে কোচ হিসেবে ‘কমান্ডিং টোন’ আয়ত্ত করতে পারাটাও বড় চ্যালেঞ্জ পিরলোর জন্য।
তাছাড়া আগনেল্লি সন্তুষ্ট ছিলেন না সারির ট্রেইনিং সিস্টেমের উপরও, যার দরুন খেলোয়াড়েরাও দিতে পারেননি নিজেদের সর্বোচ্চটা। নতুন উদ্যম আর উদ্দীপনা সম্পন্ন ট্রেইনিংও পিরলোর কাছে প্রতাশা করছেন জুভের টেকনিক্যাল ডিরেক্টররা।
সবশেষে পুরো দলকে নতুন করে তৈরি করা আরো একটি বড় চ্যালেঞ্জ। দলে তিরিশোর্ধ্ব খেলোয়াড়ের ছড়াছড়ি। এই টিমকে পালাবদলের মধ্য দিয়েও ট্র্যাকে রাখাটা হবে পিরলোর অন্যতম দুশ্চিন্তার কারণ।
তবে এত সব দৃশ্যমান সমস্যা ছাড়াও অদৃশ্য এক পাহাড় সমান চাপ যে ছড়ি ঘুরাচ্ছে পিরলোর উপর, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। জুভেন্টাস লেজেন্ড দেল পিয়েরো মোটেও খুশি নন পিরলোর কোচ হওয়াতে। তাছাড়া স্বাভাবিকভাবেই জিদান কিংবা গার্দিওলার সাথে তুলনাটা চলেই আসে, যারা কোচ হিসেবে প্রথমবারেই বিগ ক্লাব পেয়ে বাজিমাত করেছিলেন। অবশ্য পিরলো নিজেও বলেছেন তার লক্ষ্য গার্দিওলা-জিদানদের কাতারেই যাওয়া। সেই লক্ষ্যকে তিনি কতটুকু বাস্তবায়িত করতে পারবেন, তা জানা যাবে অতি শীঘ্রই। তার আগে ভক্তরা শুধু শুভকামনাই জানাতে পারেন এই মিডফিল্ড মায়েস্ত্রোকে।
ট্রিভিয়া
-
ইউরোপিয়ান টপ ফাইভ লিগে সবচেয়ে কম বয়স্ক কোচের তালিকায় পিরলোর অবস্থান ৪ নাম্বারে। তার সামনে রয়েছেন ওসাসুনার দিয়েগো মার্টিনেজ (৩৯), রেঁনের জুলিয়েন স্টিপেন্স (৪০), আর লাইপজিগের জুলিয়েন নাগেলসমান (৩৩)।
-
বুফন ৪২, আর পিরলো ৪১। বয়সে পিরলোর চেয়ে ১ বছরের বড় বুফন। এক সময় পিরলোর অধিনায়ক থাকা বুফন এখন খেলবেন কোচ পিরলোর অধীনে। ফুটবল ইতিহাসে প্রথমবারের মতো এমনটা দেখবেন ফুটবল ভক্তরা।
-
কোনো ম্যাচে কোচিংয়ের অভিজ্ঞতা না নিয়েও লিগ চ্যাম্পিয়ন ক্লাবের কোচ হওয়ার প্রথম নজির গড়লেন পিরলো।
-
এই শতাব্দীতে পিরলো হবেন জুভেন্টাসের ১৬তম কোচ। এই সময়ে অ্যালেগ্রির ৫ বছরই জুভের হয়ে কোনো কোচের জন্য সবচেয়ে বড় অধ্যায়।