Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

রিয়াল বনাম বায়ার্ন: অনিশ্চিত লড়াইয়ের আসল অংশটা এখনো বাকি

সেমিফাইনালের প্রথম লেগের বায়ার্ন মিউনিখ বনাম রিয়াল মাদ্রিদের ম্যাচ দেখে কি আঁচ পাননি কেন এই ম্যাচকে ইউরোপিয়ান ক্লাসিকো বলা হয়? কী ছিল না এই ম্যাচে? শুরু থেকেই বায়ার্নের আধিপত্য, স্রোতের অনুকূলেই বায়ার্ন পেল গোল, আবার বায়ার্নের সাঁড়াশি আক্রমণ। সব পাশা উল্টে গেল মার্সেলোর গোলে, এরপর দ্বিতীয়ার্ধে বায়ার্নের কৌশলকে নিষ্ক্রিয় করতে অ্যাসেনসিওর মাঠে বদলি নামা, সেই অ্যাসেনসিওর গোল, এরপর রিয়ালের জমাট রক্ষণে ও ভাগ্যের কাছে বারবার বায়ার্নের ঠেকে যাওয়া, কী ছিল না? অপ্রত্যাশিত এক জয় রিয়ালকে খানিক এগিয়ে রাখলেও খুব বেশি নিশ্চয়তা দেয় না। অন্তত এমন হাইভোল্টেজ ম্যাচে তো দেয় না। তাই ম্যাচ এখনো নির্ধারিত হয়নি। স্নায়ুক্ষয়ী এই ৯০ মিনিটে তাই অনেক কিছুই ঘটতে পারে।

রিয়ালের প্রথম লেগ জয়ের নায়ক অ্যাসেনসিও; Source: Metro

ইতিহাস কী বলে?

খুবই সাম্প্রতিক তিনটি রিয়াল বনাম বায়ার্ন ম্যাচের কথা আলোচনায় আনা যাক। মরিনহোর রিয়াল মাদ্রিদ ২০১২ সালে সেমিফাইনালে প্রথম লেগে বায়ার্নের মাঠে হেরে আসে ২-১ গোলে। ১-০ বা ২-০ ব্যবধানের জয় যথেষ্ট ছিল রিয়ালের জন্য। শনিবারে ২-১ গোলে বার্সার মাঠে বার্সাকে হারিয়ে পেপ গার্দিওলার টানা তিনবারের লিগ জেতার আধিপত্য ভেঙে লিগ নিশ্চিত করে আসা রিয়াল মাদ্রিদ ঘরের মাঠে ১৫ মিনিটের মধ্যেই ২-০ গোলে এগিয়ে যায়। গোটা বার্নাব্যু ফুটছে। কিন্তু বায়ার্ন ঠিকই অ্যাওয়ে গোল আদায় করে ম্যাচ নিজেদের দিকে নিয়ে আসতে থাকে। শেষপর্যন্ত বিশ্বের সেরা দুই পেনাল্টি টেকার কাকা ও রোনালদো পেনাল্টি মিস করায় টাইব্রেকারে হেরে বাদ পড়ে রিয়াল।

এরপর ২০১৪ সালে আনচেলোত্তির রিয়ালের সাথে মুখোমুখি বায়ার্ন। বার্নাব্যুতে ১-০ গোলে জিতে আসা রিয়াল বায়ার্নের মাঠে যায় অনেক অনিশ্চয়তার মধ্যে। পেপ গার্দিওলার বায়ার্নও তখন প্রচণ্ড আগ্রাসী। বায়ার্ন প্রেসিডেন্ট হুমকি দিলেন অ্যালিয়াঞ্জ অ্যারেনায় রিয়াল নরকের আগুনের মুখোমুখি হবে। সব আগুনে পানি ঢেলে রিয়াল জিতে নিলো ৪-০ গোলে।

২০১২ তে পেনাল্টিতে হারের পর বিধ্বস্ত রিয়াল মাদ্রিদ; Source: El Centrocampista

গতবার চ্যাম্পিয়নস লিগে আবার বায়ার্নের সাথে দেখা। এবার অপর ডাগআউটে কার্লো আনচেলোত্তি। ফ্রি স্কোরিং বায়ার্নের সাথে কেবল ক্রস ভিত্তিক খেলতে থাকা রিয়াল মাদ্রিদ নিয়ে তখন খোদ সমর্থকরাই সন্দেহে। শুরু থেকেই রিয়াল ব্যাকফুটে আর বায়ার্ন আগ্রাসী। ঠিক এমন অবস্থায় স্রোতের বিপরীতে এক গোল করে রিয়ালকে ম্যাচে ফেরান রোনালদো। এরপর গোটা ম্যাচে একের পর এক আক্রমণ করতে থাকে রিয়াল। শেষমেশ ২-১ গোলের মূল্যবান জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে রিয়াল। ফিরতি লেগে নিজেদের মাঠে আত্মবিশ্বাসী রিয়াল। কিন্তু আবার নাটক। নির্ধারিত ৯০ মিনিটে ২-১ এ জিতে নেয় বায়ার্ন। ম্যাচ অতিরিক্ত সময়ে গড়ালে সেখানে রিয়াল বায়ার্নের লাল কার্ডের সিদ্ধান্তে খানিকটা সুবিধা পেয়ে ম্যাচ নিজেদের করে নেয়।

আসল সারমর্ম হলো, এমন লড়াইয়ে শেষ বাঁশি বাজার আগে কোন কিছুই নিশ্চিত করে বলা যায় না যে কী হবে।

যে কারণে বায়ার্ন আশা করতে পারে

১) প্রথম লেগের পারফর্মেন্স: বায়ার্নের আশা করার সবচেয়ে বড় ব্যাপার হতে পারে প্রথম লেগে তাদের পারফর্মেন্স। আসলে স্কোরলাইন বায়ার্নের আসল খেলাটার পরিচায়ক না। ব্যাকফুটে থাকা রিয়ালকে বায়ার্ন যেভাবে চেপে ধরেছিল তাতে বায়ার্ন আশান্বিত হতেই পারে। ভাগ্য সহায় থাকলে ম্যাচে বায়ার্ন জিতে জেতে পারতো অনায়াসেই। এমনকি ম্যাচ হারের ধাক্কা কাটিয়ে হেইঙ্কেস ম্যাচের পরপরই বলেছেন, “আমি এত সুযোগ তৈরি করতে দেয়া কোনো রিয়াল মাদ্রিদ দলকে আগে কখনো দেখিনি। আমরা এই কারণেই আশাবাদী।”

২) সান্তিয়াগো বার্নাব্যু: আরেক আশার কারণ হতে পারে রিয়ালের মাঠ সান্তিয়াগো বার্নাব্যু। বিখ্যাত এই মাঠ ঐতিহাসিকভাবে রিয়ালের দুর্গ হলেও এই মৌসুমে মাঠটি রিয়ালের জন্য তেমন সুবিধাজনক নয়। লেগানেস, বিলবাওর মতো দল সহ অনেক দলই এবার বার্নাব্যু এসে ড্র করে যাছে যাচ্ছে, কেউ কেউ আবার পয়েন্ট বাগিয়ে নিয়ে নিচ্ছে। সর্বশেষ জুভেন্টাসের সাথের ম্যাচ দেখলেও আশান্বিত হতে পারে বায়ার্ন। ০-৩ গোলে হেরে আসা জুভেন্টাস প্রায় অঘটন ঘটিয়েই ফেলেছিল। ৯২ মিনিট অবধি জুভেন্টাস এগিয়ে ছিল ৩-০ তে। সাবেক বায়ার্ন খেলোয়াড় লিজারাউ তো বলেই দিলেন, “জুভেন্টাস যদি ৩-১ এ জিততে পারে তবে বায়ার্ন কেন পারবে না ২-০ তে জিততে?”

সাবেক রিয়াল খেলোয়াড় হামেসের গতলেগের পারফর্মেন্স ছিল দারুণ; Source: Metro

৩) রিয়ালের ইনজুরি: ইনজুরি কেড়ে নিয়েছে রিয়ালের দুই স্তম্ভ দানি কারভাহাল ও ইস্কোকে। কারভাহালের উইং এ থাকবে গতম্যাচের সেরা খেলোয়াড় রিবেরি এবং ইনজুরি কাটিয়ে ফিরে আসা ডেভিড আলাবা। বায়ার্ন রিয়ালের এই দুর্বলতার সুযোগ নিতে অবশ্যই তক্কে তক্কে থাকবে।

কেন রিয়াল মাদ্রিদ টানা ৩য় ফাইনালের স্বপ্ন দেখতে পারে?

১) সান্তিয়াগো বার্নাব্যু: রিয়ালের এবারের দুর্বলতা যদি হয় বার্নাব্যু, এটিই হয়ে উঠতে পারে শক্তি। স্টেডিয়াম কর্তৃপক্ষ দর্শকদের জন্য ৮০ হাজার প্ল্যাকার্ড দিচ্ছে এই ম্যাচের জন্য। পুরো স্টেডিয়ামে মোজাইক বানাবে রিয়াল। ৮০ হাজার মাদ্রিদিস্তা একসাথে গাইবে রিয়ালের দলীয় সঙ্গীত। টিম বাস স্টেডিয়ামে আসার পথে দুই পাশ জুড়ে থাকবে সহস্র মাদ্রিদিস্তা। সম্ভাব্য সকল উপায়ে ক্লাব স্টেডিয়ামে আসা সমর্থকদের বলে দিচ্ছে প্রথম থেকে নব্বই মিনিট অবধি যেন পাশে থাকে দর্শকগণ। বায়ার্নের প্রতিটি পাস শুনবে সমবেত বিদ্রূপ। কে জানে আজই হয়ত বার্নাব্যু মৌসুমের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে দুর্গরূপে আবির্ভূত হতে পারে!

২) অ্যাওয়ে গোল: চ্যাম্পিয়নস লিগে নক আউট রাউন্ডে পরের রাউন্ডের জন্য কোয়ালিফাই করার সবচেয়ে মোক্ষম অস্ত্র হলো অ্যাওয়ে গোল। মোটামুটি স্রোতের বিপরীতে গিয়েই রিয়াল অ্যালিয়াঞ্জ অ্যারেনার মতো কঠিন জায়গায় দুটো অ্যাওয়ে গোল পেয়ে এসেছে। যেকোনো ড্র বা জয়, এমনকি ১-০ গোলের হারও রিয়ালকে ফাইনালে নিয়ে যাওয়ার জন্য যথেষ্ট। এটা রিয়াল মাদ্রিদের জন্য দারুণ সহায়ক। শুরুতে গোল করে ফেললে বায়ার্নকে ন্যূনতম সমতায় আসার জন্যও দুই গোল করতে হবে যেটা চাপে ফেলার জন্য যথেষ্ট।

সাম্প্রতিক রিয়ালের সাফল্যের চার কাণ্ডারি; Source: Real Madrid CF

৩) অভিজ্ঞতা: রিয়ালের এই দলের যে মূল অংশটা বা মূল খেলোয়াড়ের গ্রুপটা তারা গত চার বছরে তিনটি ফাইনাল খেলেছে, জিতেও নিয়েছে তিনটিই। আতলেতিকো মাদ্রিদের সাথে হারের মুখে থাকা মাদ্রিদ ঠিকই বের করে এনেছিল সমতাসূচক গোল, ভোলফসবুর্গের সাথে ২-০ তে হেরে আসা মাদ্রিদ ঠিকই রক্ষণভাগ ঠিক রেখে করেছিল ৩ গো। হারের পথে থাকা মাদ্রিদ জুভেন্টাসের সাথেও পা হড়কায়নি। স্বীকার করতেই হবে, এই সাম্প্রতিক সাফল্যের পথে রিয়াল যে দুর্দম্য ছিল তা না। প্রায়ই তারা বাদ পড়ার শঙ্কায় ছিল কিন্তু ঠাণ্ডা মাথায় তারা সেই বাঁধা পেরিয়ে এসেছে। বায়ার্ন প্রেসিডেন্ট তাই রিয়ালের অভিজ্ঞতাকে নিয়ে বলেছেন, “আমাদের এমন এক দলের বাঁধা পেরোতে হবে যারা চার বছরে তিনটি ট্রফি জিতেছে। তারা বর্তমান ফুটবলের রেফারেন্স পয়েন্ট।”

বেঞ্চ রোল থেকে লুকাস হয়ে উঠেছেন দলের গুরুত্বপূর্ণ এক অংশ; Source: Diario Gol

৪) ইনজুরি: ইনজুরির কারণে বায়ার্ন পাবে না তার প্রথম পছন্দের কিপার নয়ারকে, পাচ্ছে না অনেক বছর যাবতই দলের ভরসার আরেক নাম আরিয়েন রোবেনকে, পাচ্ছে না দলের নিয়মিত ডিফেন্ডার বোয়াটেংকেও। ফিট থাকলে প্রত্যেকেই শুরুর একাদশে থাকতেন। বদলিরাও যথেষ্ট ভালো। তবে এত উঁচু পর্যায়ের প্রতিযোগিতায় প্রতিপক্ষের তিনজন মূল খেলোয়াড় না থাকাটা বিশাল ব্যাপার রিয়ালের জন্য। উপরন্তু রিয়াল ফেরত পাচ্ছে ইনজুরি কাটিয়ে ফিরে আসা নাচো হার্নান্দেজকে। নাচো মাদ্রিদের এক ভরসার নাম। ম্যাচ ফিটনেস থাকলে চোটগ্রস্থ কারভাহালের জায়গায় এই নাচোকেই খেলাবেন রিবেরির বুড়ো হাড়ের ভেল্কির প্রতিষেধক হিসেবে।

কেমন হতে পারে খেলার ধরন

অবশ্যই বায়ার্ন আক্রমণ শানাবে যেহেতু তারা পিছিয়ে। কিন্তু ডাগ আউটে ৩৫ বছরের বেশি অভিজ্ঞতা সম্পন্ন কোচ হেইঙ্কেস ভালোমতোই জানেন ব্যবধান এমন আহামরি না যে, শুরু থেকেই অল-আউট এটাকে যেতে হবে। রিয়ালের ড্র করলেই চলে কিন্তু তাই বলে রিয়াল শুধুই ডিফেন্ড করবে না বলে জানিয়েছেন জিদান। বার্নাব্যুতে রিয়াল চাইবে বলের দখল রাখতে। বায়ার্ন অল-আউট এটাকে গেলে রিয়ালও প্রতি আক্রমণ কৌশলে চলে যাবে। তা না হলে ক্রুস-মদ্রিচের দ্বারা মাঝমাঠের নিয়ন্ত্রণ নিজেদের কাছে রেখে বায়ার্নের আক্রমণের ঝুঁকি কমাতে চাইবে।

বায়ার্নের একাদশ মোটামুটি নিশ্চিত কিন্তু রিয়াল একাদশে তিনটা জায়গা নিয়ে একটু সন্দেহ আছে। কে খেলবেন কারভাহালের জায়গায়? উইঙ্গার লুকাস ভাসকেজকে কি জিদান এমন এক ম্যাচে চাইবেন রিবেরি-আলাবার বিপক্ষে? নাকি নাচো? ইস্কোর জায়গায় কে খেলবেন? আগের ম্যাচের নায়ক অ্যাসেনসিও নাকি কোভাচিচ? রোনালদোকে কি একা স্ট্রাইকার খেলাবেন নাকি সাথে করিম বেনজেমা বা অ্যাসেনসিওর মতো কাউকে খেলাবেন?

টানা ৩য় বারের মতো ফাইনালে কি খেলতে পারবে রিয়াল?; Source: Ahram Online

যেমন হতে পারে একাদশ

রিয়াল মাদ্রিদ

নাভাস

নাচো-রামোস-ভারানে-মার্সেলো

মদ্রিচ-ক্যাসেমিরো-ক্রুস

ভাসকেজ

বেনজেমা-রোনালদো

বায়ার্ন মিউনিখ

উলরাইখ

কিমিখ-সুলে-হুমেলস-আলাবা

মার্টিনেজ

ম্যুলার-থিয়াগো-হামেস-রিবেরি

লেভানডস্কি

রিয়াল-বায়ার্ন ম্যাচের অন্তিম নাটক এখনো দেখার বাকি। চ্যাম্পিয়নস লিগের আকর্ষণ এসব ম্যাচ। পুরো ফুটবল বিশ্বে এই ম্যাচ নিয়েই এখন যত জল্পনা। কে যাচ্ছে কিয়েভে? টানা দুইবারের চ্যাম্পিয়ন রিয়াল মাদ্রিদ নাকি জার্মান চ্যাম্পিয়ন বায়ার্ন মিউনিখ? উত্তেজনার পারদ চড়তে থাক, ১২.৪৫ এ মঞ্চস্থ হবে ক্লাব ফুটবলের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ আসরের এবারের সবচেয়ে আকাঙ্ক্ষিত ম্যাচের শেষ লড়াই।

ফিচার ছবি: YouTube

Related Articles