Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

গাত্তুসোর হাত ধরেই কি চ্যাম্পিয়ন্স লিগে ফিরবে এসি মিলান?

রিয়াল মাদ্রিদের পর চ্যাম্পিয়ন্স লিগে সফলতম দল ইতালিয়ান ক্লাব এসি মিলান, ইউরোপ সেরাদের আসরে ক্লাবটি শিরোপা জিতেছে সাতবার। কিন্তু এই মৌসুমসহ চ্যাম্পিয়ন্স লিগের মোট ৬টি আসর ধরে নেই আসরের দ্বিতীয় সফলতম দল। স্বভাবতই এই টুর্নামেন্টে ফিরতে মরিয়া রোসোনেরিরা, সেই আশাতেই গত মৌসুমে ২০০ মিলিয়ন ইউরো খরচ করে দলে ভিড়িয়েছিল ১০ জন খেলোয়াড়কে। বড় রকমের অর্থ খরচ করার পরও আদতে তেমন একটা সুবিধা করতে পারেনি দলটি। সিরি আ-তে জুভেন্টাসের প্রায় একক আধিপত্যে কোনো চ্যালেঞ্জই ছুঁড়তে পারেনি তারা, লিগে ষষ্ঠ অবস্থান নিয়ে গত মৌসুম শেষ করেছিল দলটি।

মিলানের সোনালী অতীত; Image Source: acmilan.com

লিগে ক্রমাগত বাজে অবস্থার মধ্যে ইতালির অন্যতম সেরা এই ক্লাবটিতে ‘মরার উপর খাঁড়ার ঘা’ হয়ে এসেছিল উয়েফার ইউরোপিয়ান আসরে অংশগ্রহণের নিষেধাজ্ঞা, কিন্তু শেষ পর্যন্ত এই নিষেধাজ্ঞা বাতিল হওয়ায় সামগ্রিক অবস্থার উন্নতি করতে আবারও তোড়জোড় শুরু করে দলটি। ২০১৮-১৯ মৌসুম হতে যাচ্ছে এসি মিলানের ঘুরে দাঁড়ানোর প্রাথমিক অধ্যায়। নতুন মালিকানা, পরিকল্পিত অসাধারণ দলবদল, নিষেধাজ্ঞা বাতিল এবং কোচ গাত্তুসোর অধ্যবসায়ী মনোভাবের উপর ভর করে মিলান কতটা অগ্রসর হতে যাচ্ছে- সেই প্রশ্নের উত্তর সময় সাপেক্ষ। তবে সিরি আ-কে একরকম মনোপলি লিগে পরিণত করা জুভেন্টাসের শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী কি হয়ে উঠতে পারবে লাল-কালো শিবির কিংবা নিজেদের টালমাটাল অবস্থা কাটিয়ে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে ফিরতে পারবে কি একসময়ের পরাক্রমশালী দল এসি মিলান?

এসি মিলান নিজেদের পুরনো ফর্ম ফিরে পাওয়ার জন্য বেশ কয়েক বছর ধরেই দল-বদলের বাজারে বেশ সরব হলেও তাদের ভাগ্যের পরিবর্তন একেবারেই হয়নি। কোচ পরিবর্তন থেকে শুরু করে, ক্লাবের মালিকানায় বেশ বড় রকমের পরিবর্তন এসেছে। তবে এই গ্রীষ্মকালীন দল-বদলের বাজারে এসি মিলান বেশ ভালো কিছু খেলোয়াড় দলে ভিড়িয়েছে। অনেক দিন ধরেই তারা চেষ্টা করে আসছে একটা মোটামুটি স্থায়ী ও শক্তিশালী স্কোয়াড গড়ে তোলার জন্য। তবে বিগত বছরগুলোতে যে তাদের এই চেষ্টা খুব একটা সফলতার মুখ দেখেনি, তা লিগে তাদের অবস্থান দেখলে সহজেই বোঝা যায়।

জুভেন্টাস থেকে দুজনই যোগ দিয়েছেন মিলানে; Image Source: beinsports.com

এই মৌসুমে মিলানের সবচেয়ে আলোচিত ও সফল অন্তর্ভুক্তি মনে করা হচ্ছে সান সিরোতে হিগুয়েনের আগমন। জুভেন্টাস থেকে হিগুয়েনের সাথে মিলানে যোগ দিয়েছেন ইতালিতে মাত্রই অভিষেক হওয়া রক্ষণভাগের খেলোয়াড় মাত্তিয়া কালদারা। সেই সাথে মিলান থেকে পুনরায় পূর্বের ক্লাবে ফিরে গিয়েছেন ইতালিয়ান ডিফেন্ডার বনুচ্চি। তাছাড়া দলটির মাঝমাঠে বাকাইওকো বরিনি ও অ্যালেন হ্যালিলোভিচের মতো খেলোয়াড় যুক্ত হওয়ায় তাদের মাঝমাঠ আরও শক্তিশালী হয়েছে। মিলান স্কোয়াডে আরও যোগ হয়েছে পেপে রেইনা, স্ট্রিনিচদের মতো খেলোয়াড়েরা, যা স্কোয়াড রোটেশনের প্রশ্নে দলটিতে ভিন্ন মাত্রা যোগ করবে। খেলোয়াড় যেমন দলে ভিড়িয়েছে মিলান, তেমনি আবার বেশ কয়েকজন খেলোয়াড়কে ছেড়েও দিয়েছে তারা। এদের মধ্যে প্রতিভাবান লোকাতেল্লি, এমবায়ে ছাড়াও রয়েছে ক্রোয়েশিয়ান কালিনিচের নাম।

কিংবদন্তি মালদিনি আবারও ফিরেছেন এসি মিলানে; Image Source: beinsports.com

মিলানে যে ইতিবাচক পরিবর্তনে বাতাস বইছে, তার সবচেয়ে বড় প্রমাণ বলতে হবে চলতি বছরের ৫ই আগস্ট দলটিতে কিংবদন্তি মালদিনির ফিরে আসা। না, তিনি খেলোয়াড় হিসেবে যোগ দেননি, যোগ দিয়েছেন ক্লাবটির স্পোর্টিং ডিরেক্টর হিসেবে। স্পোর্টিং ডিরেক্টর হিসেবে মালদিনির যোগ দেওয়ার পর থেকে দলটির সমর্থকেরা দারুণ কিছু আশা করছেন প্রিয় ক্লাব থেকে, কারণ দল-বদলের ব্যাপারে মিলানের টেকনিক্যাল ডিরেক্টর লিওনার্দোর সাথে এর মধ্যেই বেশ ভালো বোঝাপড়া তৈরি হয়েছে মালদিনির। যদিও মাত্র ৪০ বছর বয়সী আরেক মিলান কিংবদন্তি খেলোয়াড় গাত্তুসোর কোচিং ক্যারিয়ার বলার মতো সমৃদ্ধ নয়, তবে গত বছরের নভেম্বরেই দায়িত্ব নিয়ে দলে যথেষ্ট ভারসাম্য ফিরিয়ে এনেছেন তিনি। মিলানের দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার অংশ হিসেবে গাত্তুসোর সাথে ক্লাবটির চুক্তি রয়েছে ২০২১ সাল পর্যন্ত। তার হাত ধরে মিলানের অগ্রযাত্রার সিঁড়ি কতটা ঊর্ধ্বগামী হয় সেটাই এখন দেখার বিষয়।

মিলানের বর্তমান কোচ গাত্তুসো; Image Source: 101greatgoals.com

মৌসুমের মাঝপথে মনতেল্লার কাছ থেকে মিলানের কোচ হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয় একসময়ের ক্ষ্যাপাটে মিডফিল্ডার গাত্তুসোকে। গাত্তুসো দলের দায়িত্ব নিয়েই লিগে মিলানের ক্রমাগত ভরাডুবির লাগাম টেনে ধরেন। এরপর তার অধীনে মিলান টানা ১৩ ম্যাচ অপরাজিতও ছিল, যা ২০০৯ সালের পর তাদের সেরা পরিসংখ্যান! দায়িত্ব নিয়েই মনতেল্লার ৩-৫-২ ফর্মেশন থেকে বেরিয়ে এসে নিজের মতো করে ৪-৩-৩ ফর্মেশনে দলকে ঢেলে সাজিয়েছিলেন তিনি। তার দলের সেন্টারব্যাকের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিলো বনুচ্চি ও রোমানিওলিকে, তাদের দুই পাশে ফুলব্যাক হিসেবে কালাব্রিয়া ও রদ্রিগেজ। মাঝমাঠে তিনজন মিডফিল্ডারের একজন ছিলেন বিলিয়া, যিনি ছিলেন হোল্ডিং মিডফিল্ডার হিসেবে এবং তার ঠিক উপরে দুজন মিডফিল্ডার ছিলেন বনাভেনতুরা এবং কেসি। আক্রমণের দুই উইঙ্গার সুসো ও বরিনি বা হাকানের মাঝে স্ট্রাইকার হিসেবে তরুণ প্যাট্রিক কুত্রুনেই ছিলেন ভরসা। দায়িত্ব নেওয়ার প্রথম মৌসুমে এই ছিল মিলান কোচের ৪-৩-৩ ফর্মেশনের সাধারণ রূপ।

অনেকটা এই লাইন-আপে দেখা যেতে পারে মিলানকে; Image Source: buildlineup.com

গাত্তুসোর কৌশলের মূল মন্ত্র ছিল তার দলের বলের দখলভিত্তিক খেলার পরিবর্তে ডাইনামিক ট্রানজিশন ও ফ্লুইড পজিশনিং। সংক্ষেপে ব্যাখ্যা করলে ব্যাপারটা বুঝতে অনেকটা সহজ হবে। সাধারণত মিলানের ৪-৩-৩ ফর্মেশন বলের দখল থাকা অবস্থায় রূপান্তরিত হয়ে ৩-৪-৩ এ পরিণত হয়। তখন দুই ফুলব্যাক উপরে উঠে গেলে রক্ষণাত্মক মিডফিল্ডার নিচে নেমে এসে দুই সেন্টারব্যাকের মাঝে জায়গা করে নেয় রক্ষণ সুরক্ষিত রাখার জন্য।

গাত্তুসোর দল সাধারণত উইংভিত্তিক আক্রমণের পরিবর্তে মাঝ বরাবর আক্রমণে বেশি সাবলীল ছিল। এই কৌশলে আক্রমণের কারণ ছিল এই যে, দলটির দুই উইঙ্গার খানিকটা মাঝমাঠের নিচে নেমে এসে খেললে প্রতিপক্ষের অর্ধে স্ট্রাইকারকে গোলের সুযোগ তৈরি করে দেওয়ার জন্য তাদের দুই সেন্টার মিডফিল্ডার আরও উপরে উঠে খেলতো। পরিস্থিতির সাপেক্ষে তাদের সাথে যোগ দিত দুই ফুলব্যাক। তখনই মূলত ক্রস বা উইংভিত্তিক ফুটবলের দেখা মিলতো, যা তাদের মূল কৌশল ছিল না। উল্লেখ্য, কেসি তার অসাধারণ শারীরিক শক্তি ও সহনশীলতার দরুন বক্স-টু-বক্স মিডফিল্ডার হিসেবে মাঠের একটা বিশাল অংশে উপস্থিতি বজায় রাখতে সক্ষম ছিলেন। তবে বনাভেনতুরা ও কেসি মাঝমাঠ থেকে উপরে উঠে দুই প্রান্ত থেকে অনেকটা প্লে-মেকারের ভূমিকায় আক্রমণে অংশ নিতেন এবং গোলের সুযোগ তৈরি করতেন।

বনাভেনতুরা, মিলানের মাঝমাঠের অন্যতম ভরসা; Image Source: acmilan.com

প্রাক-মৌসুমেও মিলান ৪-৩-৩ ফর্মেশনে মাঠে নেমেছিল। কৌশলের বড় ধরনের পরিবর্তন না আসলে এবারও একই ফর্মেশন দেখা যাবে। তাছাড়া, মিলানের গত মৌসুমের নিয়মিত একাদশের তেমন একটা পরিবর্তন হয়নি। রক্ষণে বনুচ্চির পরিবর্তে দেখা যেতে পারে মাত্তিয়া কালদারাকে। ফুলব্যাক পজিশনের জন্য মিলানের হাতে রয়েছেন রদ্রিগেজ, স্ট্রিনিচ, আবাতে ও কালাব্রিয়া। তবে নিয়মিত জুটি হিসেবে দেখা যাবে রদ্রিগেজ ও কালাব্রিয়াকেই।

গোলরক্ষক হিসেবে থাকছেন বিস্ময়বালক ডনারোমা, বিকল্প হিসেবে থাকছেন অভিজ্ঞ পেপে রেইনা। গতবারের তুলনায় মিলানের আক্রমণভাগ ও মাঝমাঠ আরও শক্তিশালী হয়েছে। রক্ষণাত্মক মিডফিল্ডার হিসেবে রয়েছেন শুধুমাত্র বিলিয়া ও মন্তোলিভো, যাদের দুজনের বয়সই ত্রিশের উপরে। এই পজিশনে নতুন খেলোয়াড় যোগ না করলে ভুগতেও হতে পারে ক্লাবটিকে, যদিও মাঝমাঠে তাদের অনেক খেলোয়াড় রয়েছে। আক্রমণে হিগুয়েনের উপস্থিতি বাড়তি আত্মবিশ্বাস যোগাবে দলকে, সেই সাথে একই পজিশনে বিকল্প হিসেবে রয়েছেন প্রতিভাবান স্ট্রাইকার কুত্রুনে। জাতীয় দলের হয়ে হিগুয়েনের পারফরম্যান্স যা-ই হোক না কেন, ক্লাবের হয়ে তিনি দুর্দান্ত একজন স্ট্রাইকার তা অস্বীকার করার উপায় নেই। জুভেন্টাসের হয়ে ৭০ ম্যাচে ৪৩ গোল ও নাপোলিতে ১০৪ ম্যাচে ৭১ গোল তার অসাধারণ গোল গড়ের স্বাক্ষর ও মিলান ভক্তদের জন্য স্বস্তিও বটে। তাছাড়া গত মৌসুমে মিলানের নিয়মিত স্ট্রাইকার কুত্রুনেও বেশ ভালো ফর্মে ছিলেন, যদিও তা নিয়মিত ছিল না।

এসি মিলানের আক্রমণে এবারে নেতৃত্ব দেবেন হিগুয়েন; Image Source: 90min.com

আক্রমণের সময় গাত্তুসোর কৌশল বেশ কার্যকরী হলেও বলের দখল নিতে তার কাউন্টার প্রেসিং রক্ষণে অনেকটা দুর্বলতা তৈরি করে দেয়। এই কৌশলে মাঝমাঠে ৪-৫-১ ফর্মেশনে প্রেসিং শুরু করলে ক্ষেত্র বিশেষে মিডফিল্ডারদের অবস্থান এতটাই এলোমেলো হয়ে যায় যে, সেই প্রভাব গিয়ে পড়ে রক্ষণ দেয়ালে। কারণ মাঝমাঠ থেকে প্রতিপক্ষের কোনো খেলোয়াড়ের কে কাকে প্রেসিং করবে এটা নিয়ে দ্বিধার তৈরি হলে হ-য-ব-র-ল অবস্থা তৈরি হওয়ার একটা সম্ভাবনা দেখা দেয়, যেখানে প্রতি-আক্রমণে হয়তো ডিফেন্ডাররা নিজেদের পজিশন তখনও গুছিয়ে নিতে না পারলে বেশ বড় রকমের বিপর্যয়ের সম্মুখীন হতে পারে লাল-কালো শিবির।

যা-ই হোক, রক্ষণের দুর্বলতা কাটিয়ে উঠলে গাত্তুসোর হাত ধরে এই মৌসুমে দুর্দান্ত এক মিলানকে দেখা যেতে পারে। দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই যে দুর্দান্ত ভঙ্গিতে মিলান দলকে পাল্টে দিয়েছিলেন তিনি, অতটা কেউ হয়তো আশাও করেনি। সত্যি বলতে, এখনও এই মৌসুমে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে নিজেদের জায়গা করে নেওয়ার প্রশ্নে এখনও অনেক ‘যদি’ ও ‘কিন্তু’ আছে, তবে সময় দিলে আবারও নতুন মিলানের দেখা মিলতেও পারে, যারা আবারও ইউরোপ কাঁপিয়ে বেড়াবে।

ফিচার ইমেজ- en.as.com

Related Articles