![](https://assets.roar.media/assets/pZsJgJJNsQSHuM4W_277894.jpg?w=1200)
তিনি তার দেশের প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরিয়ান।
দেশের অভিষেক টেস্টেই করেছেন সেঞ্চুরি। ওয়ানডে বিশ্বকাপের ইতিহাসে দ্রুততম সেঞ্চুরিটিও তার। ৩৪ বছর বয়স হয়ে গেছে। ক্রিকেট একেবারে কম খেলেননি। এই ক্যারিয়ারে অর্জনও নিতান্ত কম নয়। তাই বলে এখনই অবসরের কথা অন্তত ভাবছেন না কেভিন ও’ব্রায়েন।
ক’দিন আগেই কানাডা থেকে ফিরেছেন গ্লোবাল টি-টোয়েন্টি খেলে। সেখানে খেলেছেন এডমোন্টন রয়্যালসের হয়ে। তারপরই কথা বলেছেন সংবাদ মাধ্যমের সাথে। কেভিন ও’ব্রায়েনের এই কথাবার্তায় উঠে এসেছে তার ভবিষ্যত পরিকল্পনা এবং নিজের গৌরবময় ক্যারিয়ারের বর্ণনা।
ও’ব্রায়েনকে নিয়ে এখন আলাপ করতে বসলে অবশ্যই সবার আগে তার টেস্ট সেঞ্চুরির প্রসঙ্গ আসবে। দেশের অভিষেক টেস্টে সেঞ্চুরি করে চার্লস ব্যানারম্যান, আমিনুল ইসলাম বুলবুলদের মতো বিরল এক কীর্তি করেছেন। এছাড়া দেশের প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরি করার কৃতিত্ব তো আছেই। অনেক রেকর্ড ভেঙে যায়, অনেক রেকর্ড একদিন মুছে যায়। কিন্তু ‘প্রথম’ করা এই কীর্তি ও’ব্রায়েনের কাছ থেকে কেউ কখনো কেড়ে নিতে পারবে না।
![](https://assets.roar.media/assets/dR5qI8FqTXS0GSPL_Getti.jpg)
ও’ব্রায়েন বলছিলেন, এতদিনে এই কীর্তিটা একটু হলেও হজম হয়েছে তার,
‘হ্যাঁ, শেষ অবধি ব্যাপারটা হজম করতে পেরেছি। একটু শান্ত হয়ে বসা, এক কাপ চা হাতে নিয়ে ওই অভিষেক টেস্টটা আরেকবার মনে করা- এটা অসাধারণ একটা অনুভূতি। আয়ারল্যান্ডের হয়ে প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরিয়ান; এটা আমার কাছে অমূল্য এক ব্যাপার। কেউ আমার কাছ থেকে এই রেকর্ড কেড়ে নিতে পারবে না। তবে আমি এই গর্বের কথা ভাবার পাশাপাশি এটাও ভাবি যে, আমি সব ফরম্যাটেই আয়ারল্যান্ডের হয়ে আর কী করতে পারি। ওই টেস্টটা তো অবিশ্বাস্য ছিলো। কিন্তু ওটা শেষ হয়ে গেছে। এখন আমাকে আয়ারল্যান্ডের হয়ে ভবিষ্যতে আরও অনেক পারফর্মেন্স করে যেতে হবে।’
পাকিস্তানের বিপক্ষে ঐতিহাসিক সেই টেস্টের পর আয়ারল্যান্ড ভারতের বিপক্ষে আরও দুটি টি-টোয়েন্টি খেলেছে। কোথাও জয় না এলেও তাদের লড়াইটা সবার চোখে পড়েছে। এখন আইরিশরা প্রস্তুত হচ্ছে আফগানিস্তানের বিপক্ষে আগস্টের শেষে ও সেপ্টেম্বরের শুরুতে একটা টি-টোয়েন্টি ও একটা ওয়ানডে সিরিজ খেলার জন্য।
ও’ব্রায়েন বলছিলেন, এখন তারা আফগানিস্তানের বিপক্ষে এই সিরিজ নিয়েই ভাবছেন এবং প্রস্তুতি নিচ্ছেন। আফগানিস্তানের বিপক্ষে একটা টানটান উত্তেজনার সিরিজ খেলার জন্য মুখিয়ে আছেন তিনি,
‘আমি কানাডার অভিজ্ঞতা নিয়ে ডাবলিনে এসে পৌঁছানোর পরই আমার ফোকাস বদলে গেছে। এখন আমার সামনে বড় ক্রিকেট হলো আফগানিস্তানের বিপক্ষে এই সিরিজ। আমি আফগানিস্তানের বিপক্ষে খেলতে মুখিয়ে আছি। আমাদের খেলা সবসময় খুব প্রতিদ্বন্দ্বীতাপূর্ণ হয়। এই সিরিজটা খুব সমতার একটা সিরিজ হতে যাচ্ছে।’
ও’ব্রায়েনের কানাডার অভিজ্ঞতা অবশ্য খুব সুখকর হয়নি। এডমোন্টন রয়্যালসের হয়ে ৫ ম্যাচ খেলেছেন; সর্বোচ্চ এক ইনিংসে ৪৯ রান সহ মোট করেছেন ৭৪ রান। বল হাতেও সময়টা ভালো যায়নি। মাত্র একটি উইকেট পেয়েছেন। ওভারপ্রতি খরচ করেছেন ১০.২৫ রান। এই খারাপ সময়ের পরও ও’ব্রায়ানের কাছে অভিজ্ঞতাটাই বড় ব্যাপার। তিনি বলছিলেন, যে অভিজ্ঞতা তিনি এই টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট থেকে পেয়েছেন, সেটা অনন্য,
‘গ্লোবাল টি-টোয়েন্টি আমার জন্য অসাধারণ একটা সুযোগ ছিলো। বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন ফ্রাঞ্চাইজি টি-টোয়েন্টি লিগে খেলার বড় ব্যাপার হলো, এখানে আপনার স্কিলের বিরাট একটা পরীক্ষা হয়ে যায়। সেই সাথে বিশ্বের বিস্ময়কর, সেরা কিছু খেলোয়াড়ের সাথে খেলার একটা সুযোগ মেলে। আমি ওই ভিন্ন পরিবেশে খেলে অনেক কিছু শিখতে পারিনি। আশা করি, আগামী বছর আবার ওখানে খেলার সুযোগ পাবো।’
![](https://assets.roar.media/assets/mcODgc292eoffD3c_Getti-3.jpg)
ও’ব্রায়েনের জন্য ফ্রাঞ্চাইজি লিগের অভিজ্ঞতা অবশ্য এই নতুন নয়। বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে (বিপিএল) খেলেছেন রংপুর রাইডার্সে, সিপিএলে খেলেছেন ত্রিনিদাদ ও টোবাগো রেড স্টিলের হয়ে, নিউজিল্যান্ডের সুপার স্ম্যাশে খেলেছেন নর্দান ডিস্ট্রিক্টের হয়ে এবং ইংল্যান্ডে সমারসেট ও সারের হয়ে খেলেছেন। কিন্তু এটা অপূর্ণতা রয়ে গেছে ও’ব্রায়েনের, আইপিএল খেলতে পারেননি কখনো।
কয়েক বছর ধরেই আইপিএলের নিলামে নাম আসে তার। একটা সময় কেউ কিনে নেবে, এমন স্বপ্নও দেখতেন খুব। কিন্তু এখন তিনি মনে করেন, তার আর আইপিএল খেলার সম্ভাবনা নেই,
‘একটা সময়, যখন আমি আরও তরুণ ছিলাম, আমার আইপিএল খেলার খুব ইচ্ছা ছিলো। গত ৬-৭ বছর ধরে নিলামে আমার নাম ওঠে। কিন্তু কোনো দল আমাকে সই করায় না। আমি মনে করি, আইপিএল এমন একটা টুর্নামেন্ট, যেখানে সুযোগ পাওয়ার চেয়ে বাদ পড়া আরও সোজা। ফলে একবার আপনি যখন ফর্মে থাকবেন, ওখানে আপনার নাম উঠবে। কিন্তু সেটা আদৌ কাজে দেবে কি না, কে জানে। এই দৃষ্টিকোণ থেকে আমার মনে হয়, আমার সুযোগ চলে গেছে। কিন্তু আমি অন্যান্য টুর্নামেন্টগুলোতে খেলা খুব উপভোগ করি এবং এটা আমার জন্য অসাধারণ একটা অভিজ্ঞতা।’
ও’ব্রায়েনদের জন্য অবশ্য এখন আইপিএলের চেয়ে বড় একটা দুঃখ আছে। ২০১৯ বিশ্বকাপে খেলতে পারবেন না তারা। আয়ারল্যান্ডের মতো সদ্য টেস্ট পাওয়া একটা দল বিশ্বকাপের বাইরে বসে থাকবে; আইসিসির এমন পদক্ষেপের কারণে সমালোচনাও কম হচ্ছে না। ও’ব্রায়েন অবশ্য এ নিয়ে আফসোস করে সময় কাটাতে চান না। তিনি বরং মনে করেন, তারা যথেষ্ট ভালো খেলতে পারেননি বলেই আজ তাদের বাইরে বসে থাকতে হচ্ছে,
‘বিশ্বকাপ বাইরে থেকে দেখাটা একটা কষ্টকর অভিজ্ঞতা হবে। সেই সাথে চিন্তা আসবে, আমরা থাকলে কেমন হতো ব্যাপারটা। কিন্তু এই ধরনের চিন্তা করে তো আসলে তো লাভ নেই। আমরা আসলে যথেষ্ঠ ভালো ক্রিকেট খেলতে পারিনি, যাতে বাছাইপর্ব পার হতে পারি। এটা আসলে এমন সরল ও সোজা ব্যাপার।’
![](https://assets.roar.media/assets/uCgIIM6JbaeOVZ5y_Sports-Keeda.jpg)
ও’ব্রায়েন যা-ই বলুন, বিশ্বকাপ আয়ারল্যান্ডকে মিস করবে। গত তিনটি বিশ্বকাপে বিশ্বকে চমকে দেওয়া তিনটি অঘটনের জন্ম দিয়েছে আইরিশরা। আর তিন দফাতেই দলে ছিলেন এই কেভিন ও’ব্রায়েন। ২০০৭ সালে তারা ৩ উইকেটে হারিয়ে পাকিস্তানকে টুর্নামেন্ট থেকে ছিটকে দিয়েছিলেন। ২০১১ সালে তারা ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ঐতিহাসিক এক জয় পেয়েছিলেন। ৩২৯ রান তাড়া করে পাওয়া সেই জয়ের পথে ও’ব্রায়ানের দ্রুততম সেঞ্চুরিটা এসেছিলো। আর ২০১৫ সালে আয়ারল্যান্ড হারিয়েছিলো ওয়েস্ট ইন্ডিজকে।
ও’ব্রায়েন সেসব স্মৃতি মনে না করে বরং নিজেকে ও দলের ভবিষ্যত নিয়ে ভাবতে চান।
তার নিজের ভবিষ্যত নিয়ে ভাবার সময় চলে এসেছে। ১২৫টি ওয়ানডে, ৬৫টি টি-টোয়েন্টি এবং একটি টেস্ট খেলা ও’ব্রায়েনের এখন ক্যারিয়ারের শেষ দেখতে পাওয়ার কথা। ক্যারিয়ার শেষে কী করবেন, সে নিয়ে পরিকল্পনাও করে ফেলেছেন। তিনি বলছিলেন,
‘আমি লেভেলে-৩ কোচিং কোর্স শেষ করছি। বিভিন্ন জায়গা থেকে কোচিং অভিজ্ঞতা সংগ্রহের চেষ্টা করছি। আমি এখনও খেলছি। তবে যখন খেলা শেষ করবো, তখন সন্ধিক্ষণটা যাতে সহজ হয়, সেজন্য কাজ করে রাখছি। এর মাঝে আমি জার্মানির বিপক্ষে ৫ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজে ডেনমার্কের উপদেষ্টার কাজও করেছি।’
তার মানে, বোঝা যাচ্ছে, নিজেকে পুরোপুরি প্রস্তুত করে রেখেছেন ও’ব্রায়েন।
নিজেই বলছিলেন, প্রস্তুতি তার আরও কিছু আছে,
‘আমার আয়ারল্যান্ডে একটা ক্রিকেট অ্যাকাডেমিও আছে। সেখানে আমি বিভিন্ন বয়সভিত্তিক খেলোয়াড়দের কোচিং করাই। আমি বিভিন্ন ক্লাবের সাথেও বিভিন্ন সেশনে কাজ করেছি। হ্যাঁ, কোচিংটা আমার একটা পথ। তবে আমি আম্পায়ারিং নিয়ে পড়াশোনা করে আম্পায়ার হওয়ার ব্যাপারেও আগ্রহী।’
![](https://assets.roar.media/assets/isQWRlomh4a8cKgu_Getti-2.jpg)
১৫ বছরের বর্ণাঢ্য এক ক্যারিয়ারের শেষে গত বছর অবসর নিয়েছেন কেভিন। যাওয়ার আগে বলেছেন,
“সহজ সিদ্ধান্ত ছিল না অবশ্যই, তবে বুঝতে পারছি যে আগের মতো অতটা অবদান রাখতে পারব না ওডিআই দলে। সেই সাফল্যক্ষুধা কিংবা ভালোবাসা কোনোটাই আগের মতো নেই। আর শতভাগ উজাড় করে দিতে না পারলে সেটা অ্যান্ড্রু, গ্রাহাম, দল, কিংবা সমর্থক কারো জন্যই সেটা ঠিক ভালো হবে না।”
শুভ কামনা, কেভিন! ধন্যবাদ দারুণ সব মুহূর্ত উপহার দেওয়ার জন্য!