Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

অস্ট্রেলিয়ায় টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ এবং বাংলাদেশের বোলিং বাস্তবতা

দরজায় কড়া নাড়ছে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। এরই মধ্যে প্রায় সব দলেরই স্কোয়াড ঘোষণা হয়ে গেছে। সবার মতো বাংলাদেশ দলেরও স্কোয়াড ঘোষণা করা হয়েছে এরই মধ্যে, দলে হয়েছে বেশ কিছু পরিবর্তন। ২০২০-এর পর থেকেই বাংলাদেশ দল মূলত তাদের ব্যাটিং সাইড নিয়ে ভুগছিল। তবে সদ্য শেষ হওয়া সংযুক্ত আরব আমিরাতে অনুষ্ঠিত এশিয়া কাপে মরার ওপর খাড়ার ঘা হিসেবে দেখা দিয়েছে ডেথ ওভারে পেসারদের দুর্বলতা। টুনার্মেন্টের দুই ম্যাচেই ডেথ ওভারে রীতিমতো ম্যাচ ছুড়ে এসেছে পেসাররা। সেক্ষেত্রে বলাই যায়, অস্ট্রেলিয়াতে বাংলাদেশের অন্যতম চ্যালেঞ্জিং বিষয় হয়ে দাঁড়াবে বোলিং সাইডটা।

আসন্ন অস্ট্রেলিয়ায় অনুষ্ঠিত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাংলাদেশের ম্যাচ গুলোর মধ্যে অ্যাডিলেড ওভাল স্টেডিয়ামে দুইটা, বেলেরিভ ওভালে, সিডনি ক্রিকেট গ্রাউন্ডে আর গ্যাবায় ১টা করে ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে। স্টেডিয়ামগুলোর অতীত টি-টোয়েন্টি ম্যাচগুলোতে দৃষ্টিপাত করলে দেখা যায়, সবগুলো গ্রাউন্ডই হাই-স্কোরিং এবং সবক্ষেত্রেই উইকেট টেকিংয়ের দিক দিয়ে পেসাররা এগিয়ে আছে।

গ্যাবা; Image Credit: austadiums

প্রথমেই আসি অ্যাডিলেড ক্রিকেট গ্রাউন্ডে। এই মাঠে মোট ম্যাচ হয়েছে ৫টি; যার মধ্যে সবগুলো ম্যাচই জিতেছে টসে হারা দল। বলাই চলে, এখানে টসের কোনো ভূমিকা নেই। বোলিং স্ট্যাটের ক্ষেত্রে লক্ষ্য করলে দেখা যায়, এই মাঠে উইকেট টেকিংয়ের দিক দিয়ে টপ টেনের মধ্যে ৮ জনই পেসার আর দুইজন স্পিনার। আট পেসারের মধ্যে আবার ৫ জনই মিডিয়াম পেস বোলার। এই মাঠের ৫৮টা উইকেটের মধ্যে ৪২টাই গেছে পেসারদের ঝুলিতে, আর ১৬টা স্পিনারদের।

সিডনি ক্রিকেট গ্রাউন্ডের দিকে দৃষ্টিপাত করলে দেখা যায়, সেখানেও পেসারদের আধিপত্য। এখানে এই সংক্ষিপ্ত ফরম্যাটে ম্যাচ হয়েছে ১১টা। যার মধ্যে একটা পরিত্যক্ত হয়েছে। টপ দশ উইকেটধারীর মধ্যে ৬ জন পেসার এবং ৪ জন স্পিনার। তবে লক্ষ্যণীয় যে, ৪ পেসারের মধ্যে আবার ৩ জনই লেগ স্পিনার। তাদের ইকোনমিও দেখার মতো; জাম্পার ইকোনমি ৬.৮, সুইপসনের ইকোনমি ৬.০০, হাসারাঙ্গার ইকোনমি ৮.৮। তো বলাই বাহুল্য, এখানে পেসারদের পাশাপাশি লেগ স্পিনাররাও আলো ছড়িয়েছে। এই মাঠে ৯০টা উইকেটের মধ্যে ৩৩টা তুলে নিয়েছে স্পিনাররা আর বাকি ৫৭টা উইকেট গিয়েছে পেসারদের ঝুলিতে।

বেলেরিভ ওভাল ও গ্যাবাও ফ্ল্যাট হাইস্কোরিং পিচ। স্বভাবতই এখানেও পেসারদের বাড়তি সুবিধা থাকবে। বেলেরিভ ওভালের ৪২ উইকেটের মধ্যে স্পিনাররা নিয়েছে মাত্র ১১টা। আর গ্যাবায় খেলা ৫ ম্যাচের ৫১টা উইকেটের মধ্যে পেসাররা তুলে নিয়েছে ৩৯ উইকেট, যেখানে স্পিনারদের প্রাপ্তি মোটে ১২ উইকেট। এখানেও উইকেট টেকিংয়ের দিক দিয়ে পেসাররা একপেশে রাজত্ব করেছে।

Image source: cricmatric.com

ইকোনমিক দিক দিয়ে খেয়াল করলে দেখতে পাই যে, গ্যাবায় লেগ স্পিনাররা সবচেয়ে এগিয়ে আছে। লেগ স্পিনে এখানে ইকোনমি ৭.০০। ফার্স্ট পেসে ইকোনমি ৭.৫০, মিডিয়াম পেসে ৯.০০, আর অফ স্পিনে ১০.৩০।

অ্যাডিলেড ওভালের রেকর্ড বোর্ডের দিকে তাকালে দেখা যায়, এখানেও ইকোনমির দিক দিয়ে লেগ স্পিনাররা বেশ সুবিধাজনক অবস্থায় আছে। তাদের ইকোনমি ৫.৫ এর মতো, যেখানে অফ স্পিনারদের ইকোনমি ৬.৫, ফাস্ট পেসারদের ৮, মিডিয়াম পেসে ৯।

সিডনি ক্রিকেট গ্রাউন্ডে লেগ স্পিন, ফাস্ট পেস, মিডিয়াম পেস, অফ স্পিন সবারই ইকোনমি কাছাকাছি, প্রায় ৭-৮ এর মধ্যে। তবে এভারেজের দিক থেকে এগিয়ে লেগিরা, তাদের বোলিং এভারেজ ২০, যেখানে ফার্স্ট পেসের এভারেজ ৩৫ এবং অফ স্পিনে ৪০।

সর্বশেষে বেলেরিভ ওভালে আসি। এখানে লেগিদের ইকোনমি ৮ হলেও তাদের এভারেজ প্রায় ৩৬। আর ফাস্ট পেস বোলারদের ইকোনমি ৮.৬৬, সেই সাথে এভারেজটাও আকর্ষণীয় — ১৬। মিডিয়াম পেসারদের ইকোনমি এখানে ৯.৫০ এবং সেই সাথে এভারেজ ৩৬। ফিঙ্গার স্পিনে ৯.৭৫ ইকোনমির সাথে আছে ৩৪ এভারেজ।

স্ট্যাটের দিকে তাকালে দেখাই যাচ্ছে যে, উইকেটের টেকিংয়ের দিক দিয়ে রাজত্ব করেছে ১৪০+ গতির ফার্স্ট বোলাররা। আর স্কোরবোর্ডে ইকোনমি নিয়ন্ত্রণের কাজটা সেরেছে লেগ স্পিনাররা। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্যি বাংলাদেশ দলের স্কোয়াডে একজনও লেগ স্পিনার নেই। যেখানে বিশ্বকাপের জন্য ঘোষিত সব দলেই দুই একজন করে লেগ স্পিনার আছেন। বাংলাদেশ দলের ঘোষিত স্কোয়াডে তিনজন ফাস্ট পেস বোলার, দুই জন মিডিয়াম পেসার, তিনজন অফস্পিনার আছে। যেহেতু অস্ট্রেলিয়ান পিচ হবে বেশ বাউন্সি এবং ফ্লাট, সেহেতু এখানে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা থাকবে পেসারদের। বাংলাদেশ দলে ফাস্ট বোলার আছেন তাসকিন, এবাদত আর হাসান মাহমুদ। তাসকিনের অ্যাওয়ে পরিসংখ্যান নাজুক হলেও করোনা-পরবর্তী সময়ে সম্প্রতি বেশ ভালো করছেন; গত দুই বছরে তার ইকোনমি রেট ৮.০৬। সর্বশেষ নিউ জিল্যান্ড এবং সাউথ আফ্রিকার বাউন্সি পিচেও ভালো করেছেন, যদিও সেগুলো শর্টার ফরম্যাট ছিল না। তাছাড়া হাসান মাহমুদের ক্যারিয়ারের দৈর্ঘ্য বড় না হলেও এরই মধ্যে আলো ছড়িয়েছেন তার গতি এবং ইকোনমিক দিক দিয়ে। সদ্য ডেব্যুটেন্ট এবাদত তার প্রথম ম্যাচে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সফল না হলেও তার গতিও হয়ত আশা দেখাবে তাসমানিয়ান দ্বীপে।

Image source: gettyimages.com

মিডিয়াম পেসার হিসেবে দলে আছেন মুস্তাফিজুর রহমান এবং সাইফুদ্দিন। দুজনেরই রিসেন্ট পারফরম্যান্স ঠিক যুতসই নয়। শেষ দশ টি-টোয়েন্টি ম্যাচে মুস্তাফিজের ইকোনমি প্রায় ৮.৩৯, যেখানে উইকেট সংখ্যা মাত্র ৬টা। তাছাড়া ক্যারিয়ারে তার অ্যাওয়ে পারফর্মও বেশ নাজুক, ইকোনমি রেট ৮.৯১। তার রিসেন্ট উইকেট এবং বোলিং ঝলকের প্রায় সবটাই ঘরের মাঠে। অন্যদিকে সাইফুদ্দিনের মিরপুরের স্লো পিচে কিছু ভালো স্পেল ছাড়া এর বাইরে কার্যকরী কোনো পারফরম্যান্সই নেই। উপরন্তু, একটা লম্বা সময় প্রতিযোগিতামূলক ক্রিকেটের বাইরে থেকে ফিরছেন তিনি। মুস্তাফিজ এবং সাইফুদ্দিন যেখানে সংযুক্ত আরব আমিরাত আর উইন্ডিজের মিডিয়াম পেসারদের স্বর্গভূমিতেই ব্যর্থ হয়েছেন, সেখানে তাসমানিয়ায় সম্পুর্ণ বিপরীত কন্ডিশনে কতটা কার্যকরী হবেন, সেটাই হবে দেখার বিষয়।

বাংলাদেশের অফ স্পিনে আছেন সাকিব, মোসাদ্দেক, নাসুম এবং মিরাজ। সাকিব বরাবরই বল হাতে একটা ভরসার নাম, সেটা ইকোনমির দিক দিয়েই হোক আর উইকেট টেকিংয়ের দিক দিয়েই হোক। মোসাদ্দেকও বল হাতে বেশ কার্যকরী ভূমিকা রাখছেন সম্প্রতি। নাসুমের বোলিং দেশের মাটিতে বিপক্ষ দলের জন্য হুমকি হয়ে দেখা দিলেও নিরপেক্ষ ভেন্যুতে এখন পর্যন্ত তার স্ট্যাট বলার মতো নয়। ঘরের মাটিতে তার ইকোনমি এখানে ৪.৯৯, সেখানে দেশের বাইরে তার ইকোনমি ১০.৩৮। মিরাজ লঙ্গার ভার্সনে বল হাতে আস্থার প্রতীক হলেও টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে একেবারেই অধারাবাহিক। আশা থাকবে অ্যাডিলেডের হালকা টার্ন আর মাঠের আকারের সুবিধা ঠিকঠাকভাবেই কাজে লাগাবেন তারা। উপরন্তু, অস্ট্রেলিয়ান মাঠগুলো আকারের দিক থেকে তুলনামূলক বেশ বড়, তাই স্পিনারদের পার্থক্য গড়ে দেওয়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে বৈকি!  

যেহেতু দলে কোনো লেগ স্পিনার অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি, সেহেতু ইকোনমির লাগাম টেনে ধরতে হবে অফ স্পিনারদেরই। তবে মূল দায়িত্ব পালন করতে হবে পেসারদেরই। কারণ পেসারদের স্বর্গভূমি অস্ট্রেলিয়ান কন্ডিশনে পেসাররা জ্বলে না উঠলে কাঙ্ক্ষিত ফলাফল অধরাই থেকে যাবে।

Related Articles