Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.
তাসকিনের কান্না সবার মন ছুঁয়েছিল। ফর্মে ফিরেও কেবল ‘ইনজুরি ফেরত’ হওয়ার কারণে স্বপ্নের বিশ্বকাপে মাঠে নামার সুযোগ হাতছাড়া হওয়াতে সবার সমর্থন ছিল তার প্রতি। যদি শতভাগ ফিট থাকতেন, তাহলে ইংল্যান্ড বিশ্বকাপে ১৫ সদস্যের বাংলাদেশ স্কোয়াডে তার নাম থাকতো উপরের দিকে। কিন্তু কিছুই হয়নি। নাম লেখা হয়নি নির্বাচকদের খাতায়। সেই কষ্ট বারবার ভুলতে চেয়েছেন। চেপে রাখতে গিয়েও হু হু করে কেঁদেছেন। গলা বন্ধ হয়ে আসা আফসোস নিয়ে কোনোরকমে বলেছেন, ‘উনারা (নির্বাচক) যেটা ভালো মনে করেছেন সেটাই করেছেন। আমার ভালোর জন্যই করেছেন।’
বাংলাদেশ জাতীয় দলের এই ফাস্ট বোলার মনে করিয়ে দিয়েছেন ২০১১ সালে মাশরাফি বিন মুর্তজার কান্নাকে। সেবার মাশরাফিও ইনজুরিফেরত ছিলেন। একই সঙ্গে হয়তো তাসকিনের চেয়েও ফিট ছিলেন। কিন্তু তাকে বিশ্বকাপ দলে নেওয়া হয়নি। কান্না থামাতে পারেননি মাশরাফিও, শেষপর্যন্ত ঘরের মাঠে বিশ্বকাপে সময় কেটেছে টিভির পর্দায় চোখ রেখে।
তাসকিনের ভাগ্যটা মাশরাফির চেয়ে অনেক ভালো। বিশ্বকাপের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে আয়ারল্যান্ড ও উইন্ডিজের বিপক্ষে আইরিশ কন্ডিশনে ত্রিদেশীয় সিরিজ খেলবে বাংলাদেশ দল। বিশ্বকাপের আফসোস কাটাতেই কি না আয়ারল্যান্ড সফরে সুযোগ হয়েছে তাসকিনের। আপাতত চোখের জলে নয়, বরং পারফরম্যান্সের ধারে নিজেকে প্রমাণ করার সুযোগ পাচ্ছেন তাসকিন। কে জানে, ভাগ্যের খেয়ালে হয়তো ফেরা হতে পারে বিশ্বকাপের আসরেও!
তাসকিনকে হুট করে দলে ভেড়ানোর পেছনে সবচেয়ে বড় অবদান পেস বোলিং কোচ কোর্টনি ওয়ালশ এবং প্রধান কোচ স্টিভ রোডসের। আবার অন্যভাবে বলা যায়, কেবল এই দু’জনের কারণেই জায়গা হয়েছে তাসকিনের।
বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের অপারেশন্স কমিটির চেয়ারম্যান আকরাম খান এ প্রসঙ্গে বলেছেন,
‘গত দুইদিন নাকি নেটে সে (তাসকিন) ভালো বোলিং করেছে। আমাদের বোলিং কোচ কোর্টনি ওয়ালশ বলেছে, সে ভালো করছে। এখন গুরুত্বপূর্ণ হলো, ম্যাচে পারফরম্যান্স ভালো করা। এটি খেলোয়াড়দের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। সেখানে হয়তো তাসকিন এক বা দুই ম্যাচে সুযোগ পাবে। সেখানেই সে নিজের পারফরম্যান্স দেখাতে পারবে, নিজেকে প্রমাণ করার সুযোগ পাবে।’
সহজভাবেই বোঝা যায়, বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের সহজাত পেস বোলিং কন্ডিশনে তাসকিনকে গুরুত্ব দিয়েই ভাবছেন কোচরা। সে কারণেই কি না ১৫ সদস্যের দলে রাখা হয়েছে পাঁচজন পেসার। তবে আকরাম খান সেই সম্ভাবনা একটু সরিয়েই রাখছেন।
বলেছেন,
‘ত্রিদেশীয় সিরিজের জন্য দলে ১৭ জন ক্রিকেটার রাখা হয়েছিল। কিন্তু ইনজুরি সমস্যা ও কোচের পরিকল্পনা থাকাতে এবং বিশেষ করে অনেক অনুরোধ করার কারণে আমরা আরও দু’জন ক্রিকেটার বাড়িয়েছি। ১৯ জন দলের সাথে আয়ারল্যান্ড সফর করবে, অনুশীলন করবে। কিছু পরিকল্পনার জন্য রোডস অনেক অনুরোধ করেছে। সবকিছু মাথায় রেখেই আমরা দু’জন সদস্য বাড়িয়েছি, তাসকিন ও ফরহাদ রেজা।’
আয়ারল্যান্ড সফরের জন্য চলছে তাসকিনের জোর অনুশীলন; Image Source: UNB
অনেকের ভাবনা, তাসকিনকে কোচরা বিশ্বকাপের জন্যই চেয়েছেন। যেহেতু হাতে এখনও সময় আছে, তাই ত্রিদেশীয় সিরিজের মাঠে নামিয়ে তাকে পরীক্ষা করার জন্য এর চেয়ে ভালো সুযোগ আর হতে পারে না। অবশ্য আকরাম খান তাসকিনের বিশ্বকাপের সম্ভাবনা আমলে নিচ্ছেন না। আবার এটাও অস্বীকার করতে পারছেন না যে, তাসকিনের সুযোগ রয়েছে। সেজন্য তাসকিনের ভাগ্য খুলতে প্রয়োজন পাঁচ পেসারের কোনো একজনের ইনজুরি।
সাবেক এই অধিনায়ক জানিয়েছেন, দলের ইনজুরি সমস্যার কারণেই মূলত কোচ তাদেরকে দুই ক্রিকেটারের অন্তর্ভুক্তি নিয়ে সুপারিশ করেছেন। আকরাম খান বলেন,
‘ইনজুরি সমস্যাটি নিয়ে সবাই ঠিক অবস্থানে নেই। সে কারণেই কোচ আমাদের এই অনুরোধ করেছে। আর বিশ্বকাপের যে দল দেওয়ার কথা, সেটি আমরা দিয়েছি। তবে সুযোগ থাকবে (পরিবর্তনের)। তবে ইনজুরি ছাড়া পরিবর্তন হওয়ার সম্ভাবনা খুব কম। যেহেতু নির্বাচকরা সেরা দলটিই নির্বাচন করেছেন, এখন আল্লাহর রহমতে ইনজুরি যদি না হয় তাহলে পরিবর্তন হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম।’
বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দলের সদস্য বাড়ানোর প্রসঙ্গে বলেছেন,
‘আমরা বিশ্বকাপে বেশি খেলোয়াড় বাড়ানোর চিন্তা করছি না। আর সেখানে কিন্তু একদিনেই খেলোয়াড় পাঠানো সম্ভব। এটি ওয়েস্ট ইন্ডিজ বা নিউজিল্যান্ড হলে একটু কঠিন হতো। এই কারণে আমরা আগে একটু বেশি খেলোয়াড় নিয়ে যেতাম। তবে ইংল্যান্ডে দিনে দিনে পৌঁছে যাবে, তাই ঐ বিষয়টি মাথায় রাখিনি। টুর্নামেন্ট চলাকালে এখানে কোচদের অধীনে কিছু খেলোয়াড় ট্রেনিং করবে।’
২৫ বছর বয়সী তাসকিন বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে (বিপিএল) দারুণ ফর্মে ছিলেন। কিন্তু সিলেট সিক্সার্সের হয়ে টুর্নামেন্টে নিজেদের শেষ ম্যাচে গোড়ালিতে গুরুতর চোট পান, যে কারণে তাকে তিন সপ্তাহের বিশ্রাম দেওয়া হয়। সঙ্গে যোগ হয় ইনজুরির পুনর্বাসন প্রক্রিয়া। সবকিছু শেষ করে তাসকিন মাঠে ফেরেন ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগে। মাঠে নামলেও তার বোলিং-ফিল্ডিং দেখে ফিট মনে হয়নি নির্বাচকদের। ‘আনফিট’ প্রতিবেদন এসেছে ফিজি’র কাছ থেকেও। সে কারণেই বিশ্বকাপে নির্বাচকদের ভাবনায় থাকার পরও বাদ পড়তে হয়েছে তাকে।
এদিকে তাসকিনের সঙ্গে আয়ারল্যান্ড সফরে সুযোগ হয়েছে অলরাউন্ডার ফরহাদ রেজার। মূলত মাত্র শেষ হওয়া প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগে নিজের পারফরম্যান্সের পুরস্কার পেলেন তিনি। ২০১৪ সালে শেষবার জাতীয় দলে খেলেছেন তিনি। এবারের প্রিমিয়ার ডিভিশন লিগে ১৬ ম্যাচে নিয়েছেন ৩৮ উইকেট। শুধু এখানেই নয়, সাম্প্রতিক সময়ে ঘরোয়া যেকোনো লিগেই ভালো ফর্মে আছেন ফরহাদ। সে কারণেই কোচের চোখে পড়া।
তাকে নিয়ে আকরাম খানের ব্যাখ্যা হলো,
‘দীর্ঘদিন পর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলা আসলে অনেক কঠিন। ঘরোয়া ক্রিকেট থেকে হঠাৎ করে আন্তর্জাতিক, সেটাও আবার বিশ্বকাপের মতো একটি ইভেন্টে মানিয়ে নেয়া কিন্তু টপ কোয়ালিটির ক্রিকেটার ছাড়া বেশ কঠিন। এরপরও আমরা এটি মাথায় রেখেছি যে, আমরা যেহেতু আয়ারল্যান্ডে যাচ্ছি, সেখানে যে ত্রিদেশীয় সিরিজটি আছে, সেখানে একটি-দু’টি ম্যাচ খেলার সুযোগ পেলে সে (ফরহাদ রেজা) নিজেও বুঝতে পারবে, আমরাও বুঝতে পারবো। যদি কোনো ক্রিকেটার ইনজুরিতে পড়ে, তাহলে তার কথা মাথায় আসবে।’
২০১৪ সালের কোনো এক আন্তর্জাতিক ম্যাচে ফরহাদ রেজার উদযাপন; Image Source: AFP
দলে জায়গা পাওয়ার ব্যাপার নিয়ে রেজা নিজেও শুরুতে ভেবেছিলেন। কিন্তু জায়গা না পাওয়ায় সে আশায় গুড়ে বালি হয় তার। আবার ফিরেছেন, সেজন্য খুশি তিনি। এখন সিরিজে মূল একাদশে জায়গা পাওয়া এবং ভালো পারফরম্যান্স করা নিয়েই ভাবনা তার।
‘প্রথম যখন শুনলাম ২৩ জনকে স্কোয়াডে রেখেছে, খুব ভাল লেগেছিল। তারপর যখন বাদ পড়লাম, একটু তো কষ্ট লেগেছে যে, এরকম পারফর্ম করলাম, তারপরও বাদ…। অনেকেই বিশ্বাস করেছে যে, আমার সুযোগ আসবে। তার মধ্যে দু’জন মানুষ সবসময় আমাকে মানসিকভাবে বুস্টআপ করেছে যে, আপসেট হয়ো না, তুমি যেকোনো সময় আসবা। এর মধ্যে একজন আমার আম্মা, আর একজনের নাম বলব না।’
আয়ারল্যান্ড সিরিজের চ্যালেঞ্জটা নিতে চান এই ক্রিকেটার। তার মতে, প্রতিটি দিনই পরীক্ষা দিতে হয়। নিজের সহজাত পারফরম্যান্স করতে চান। শুধু তা-ই নয়, অভিজ্ঞতাতেও নিজেকে এগিয়ে রাখছেন ফরহাদ রেজা। এখনই তার সেরাটা দেওয়ার সময়, এমনই ভাবনা। বলেছেন,
‘আমাদের প্রতিদিনই চ্যালেঞ্জ। আমি যেখানে খেলি সবসময় চ্যালেঞ্জ থাকে। প্রতিদিনই পরীক্ষা দিতে হয়। আপনি দেখেন গত বছর ওভারঅল টুর্নামেন্টে ৬৭টি উইকেট পেয়েছি এবার ১০০টা। আমি অনেক কিছু বুঝেছি এখন যেটা আগে বুঝতাম না। ফিল্ডিং সাজাতাম একদিকে, বল পড়ত একদিকে। এখন বুঝতে পারি।’
অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা; Image Source: AFP
মাশরাফি বিন মুর্তজার অধিনায়কত্বে মে মাসের ৫ তারিখ থেকে ত্রিদেশীয় সিরিজের মাঠে নামবে বাংলাদেশ দল। এখানে ভালো করলে বিশ্বকাপের প্রস্তুতিটাও ভালো হবে লাল-সবুজ জার্সিধারীদের।