
হাড্ডাহাড্ডি লড়াই। সেয়ানে সেয়ান। কেউ কাউকে ছেড়ে কথা কয় না। যে-ই মনে হচ্ছে, একটি দলের বাজিমাৎ হবে, সঙ্গে সঙ্গে অপর দলটি উলটে দিচ্ছে পাশার দান। সব হিসেব-নিকেশ মুহূর্তেই বদলে যায়। যখনই কোনো একটি দলকে নিতান্ত যাচ্ছেতাই মনে হয়, ঠিক তখনই দলটি উদ্ভাসিত হয় সামর্থ্যের সবটা মেলে। নিংড়ে দিয়ে নিজেদের, প্রমাণ রাখে তাদের ঝেড়ে ফেলার সময় হয়নি এখনো। প্রত্যেকটি টেস্ট, প্রতিটি মুহূর্ত ছড়িয়েছে উত্তেজনা। শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত দল দু’টি লড়াই করে গেছে। কেউ কাউকে তিল পরিমাণ দেয়নি ছাড়। স্মরণকালের সবচেয়ে উত্তেজনাকর ও রোমাঞ্চপূর্ণ সিরিজশেষে ক্রিকেট-জনতার নতুন করে উপলব্ধি হয়েছে টেস্ট ক্রিকেটের অনিশ্চয়তার অনন্য সৌন্দর্য্য।
সেই সৌন্দর্য্যের স্ন্যাপশটস্বরূপ আমাদের এই আয়োজন। বোর্ডার-গাভাস্কার ট্রফি ২০২০-২০২১ এর চারটি টেস্টকে শব্দগুচ্ছে বন্দী করে চারটি অধ্যায় ও তিনটি পর্বের সমন্বয়ে সাজানো আমাদের এই উপস্থাপনা। আজ থাকছে তৃতীয় ও শেষ পর্ব।

চতুর্থ অধ্যায়
পাড়ায় সিনিয়র-জুনিয়র ক্রিকেট ম্যাচ। সিনিয়র টিমে ক্রিকেটার কম পড়ে গেছে, জুনিয়র দলে বাড়তি আছে। সুতরাং জুনিয়র দলের একজন খেলুক সিনিয়র টিমের হয়ে। ভারতীয় ক্রিকেট দলের যে সংকট, তা থেকে উত্তরণে অস্ট্রেলিয়ার কাছে ক্রিকেটার চাওয়া অন্যায় হবে না মোটেও। ভারতের তাঁবুতে সুস্থ-স্বাভাবিক এগারোজন ক্রিকেটার খুঁজে পাওয়াই যে মুশকিল! সিরিজ-নির্ধারণী টেস্টের কৌশল সাজানোর চেয়েও টিম মিটিংয়ে তাই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে, বাকিরা সুস্থ আছে তো? সিরিজটা শেষ করে ভালোই ভালোই দেশে ফেরা যাবে তো?
সিরিজ-নির্ধারণী এইরকম ফাইনাল টেস্টের বাতাবরণ বোর্ডার-গাভাস্কার ট্রফি দেখেছে আগেও। স্টিভ ওয়াহর বিদায়ী সিরিজে সৌরভের ‘টিম ইন্ডিয়া’ সিরিজ জেতার দ্বারপ্রান্তে ছিল, কিন্তু ইস্পাত-মানব লৌহকঠিন নার্ভ নিয়ে দাঁড়িয়ে গেলেন প্রতিরোধের দেয়াল হয়ে। তারও আগে লক্ষ্মণ-দ্রাবিড়ের ইতিহাসধন্য ইডেন গার্ডেনের পর চেন্নাইয়ে ফাইনাল টেস্টে ভিভিএস লক্ষ্মণের আরো একটি ‘ভেরি ভেরি স্পেশাল’ ইনিংসে ভর দিয়ে রুদ্ধশ্বাস জয় পায় ভারত।
বছরকয়েক আগে স্টিভ স্মিথের অস্ট্রেলিয়া যখন ভারতে পা রাখে, অনেকেই তাকিয়েছিল চোখ বাঁকিয়ে। ভারতীয় সাবেকদের কেউ কেউ আগাম ঘোষণা দিয়েছিলেন, অস্ট্রেলিয়া ৪-০তে ধবল ধোলাই হবে। কিন্তু সবাইকে চমকে দিয়ে দুর্দান্ত লড়াই উপহার দেয় স্মিথের তরুণ অস্ট্রেলিয়া। দৃশ্যপট ছিল অনেকটা এবারের মতোই। প্রথম টেস্টে অস্ট্রেলিয়ার এগিয়ে যাওয়ার পর পরের টেস্টেই ভারতের ফিরে আসা, এরপর তৃতীয় টেস্টে দুর্দান্ত লড়াইয়ের পর ড্র। সেবার ধর্মশালায় বিরাটের অনুপস্থিতিতে আজিঙ্কা রাহানের নেতৃত্বে অভিষেক হয়, তিনি হন ভারতের তেত্রিশতম অধিনায়ক।
ব্রিসবেনের চূড়ান্ত রঙ্গমঞ্চে কী অপেক্ষা করছে এবার?
এক.
ভারতের পেস ইউনিটের অবিসংবাদিত নেতা জাসপ্রিত বুমরাহ। গ্র্যান্ড ফিন্যালেতে নেই তিনি। জানবাজ লড়িয়ে রবি অশ্বিনকেও বেঞ্চে বসিয়ে রাখতে হয়েছে। আগের ম্যাচের আরেক লড়াকু হনুমা ভিহারিও নেই। ভিহারির নেতিবাচক ব্যাটিং অনেকের কাছেই নীরস ও বিরক্তিকর। একটু ব্যাট চালালেই নাকি নিশ্চিত ম্যাচটা জেতে ভারত, তিনিই নাকি ভারতের জয় গলা টিপে হত্যা তো করেছেন, এমনকি ক্রিকেটকেও নাকি পুরোপুরি সমাধিস্থ করে ছেড়েছেন – এহেন হাজারটা কথা চলতে শুরু করে চারদিকে।
ভিহারী ওসবে কান দেন না। মাঠে যতই নীরস হন না কেন, মাঠের বাইরে বেশ সরস চরিত্র। তাই বাবুল সুপ্রিয় যখন তাকে কাঠগড়ায় রেখে কঠিন সমালোচনাপূর্ণ টুইট করেন, তিনি জবাবে শুধুই নিজের নামের বানানে ‘B’ এর বদলে ‘V’ লেখার সংশোধনী দেন। ভিহারিও জানেন, তার ইনিংস বোঝা সকলের কম্মো নয়। বর্ষাকালে গ্রামের এবড়ো-থেবড়ো মেঠোপথের মতো পঞ্চম দিনের ভাঙা পিচে দুই-চারটে বাউন্ডারি ঠেঙানোর চেয়ে দুই-চার ঘন্টা টিকে থাকা কতটা বীরত্বের, সে বোধ বা জ্ঞান সকলের হবে না। মাঠের ভেতরে দারুণ লড়াকু যোদ্ধা, মাঠের বাইরের চমৎকার রসিক ও বুদ্ধিদ্বীপ্ত মস্তিষ্কের অধিকারী হনুমা ভিহারিকে নিশ্চিতভাবেই মিস করবে ভারত।
আজিঙ্কা রাহানে তৃতীয়বারের চেষ্টাতেও টস জিততে পারেন না। ব্রিসবেনের সমাপনী মঞ্চে প্রথমে ব্যাটিংয়ে অস্ট্রেলিয়া। ভিহারির বদলে মিডল অর্ডারে ফেরেন মায়াঙ্ক। অশ্বিনের বদলে শার্দুল ঠাকুর এবং বুমরাহ ও জাদেজার পরিবর্তে যথাক্রমে ওয়াশিংটন সুন্দর ও নটরাজন অভিষিক্ত হন। নটরাজনের যাত্রাটা স্বপ্নের চেয়েও অবিশ্বাস্য। এত দ্রুততম সময়ে ক্রিকেটের তিনটি আঙিনাতেই অভিষেক হওয়ার নজির নেই আর। অধিনায়ক বিরাট কোহলির হাত থেকে ডেব্যু-ক্যাপ নিতে গিয়ে চোখে পানিই চলে এসেছিল! ভিভিএস লক্ষ্মন ও টম মুডির জহুরী চোখ হয়ে আইপিএল অভিষেক, সেখানে মাতিয়ে অস্ট্রেলিয়াগামী দলে জায়গা নিশ্চিত। তারপর প্রথমে ওডিআই, এরপর টি-টোয়েন্টি, এবং সবশেষে আভিজাত্যের শ্বেত পোশাকি টেস্ট ক্রিকেট। মাত্র মাসকয়েকের ব্যবধানে শূন্য থেকে ভারতের ক্রিকেটের অন্যতম উজ্জ্বল তারকা। নটরাজনের সম্ভাব্য কল্পনায় সবচেয়ে সুন্দর স্বপ্নটাও এতটা রোমাঞ্চকর ছিল না নিশ্চয়ই!
মাস কয়েক আগে বাবাকে হারানো সিরাজ নতুন বল হাতে শুরু করছেন টেস্ট ম্যাচ। বিরাট কোহলি নিশ্চয়ই খুব আনন্দিত। বিরাটের আরসিবিতে উমেশ যাদব, মোহাম্মদ সিরাজ, নবদীপ সাইনিরা ম্যাচের পর ম্যাচ সুযোগ পেয়েছে, লোকজন বিদ্রুপ-টিটকারি কত কী দিয়েছে। বিরাট কান পাতেননি সেসবে; ফাস্ট বোলারদের নিয়ে নিজের স্বপ্নের পথে চলেছেন, নিজেই ঢাল হয়ে দাঁড়িয়েছেন প্রতিভাবানদের, সিরাজের সবচেয়ে বড় প্রশংসকও ছিলেন তিনিই। আরসিবির সুন্দর-সিরাজ-সাইনিরা সুনিপুণ দক্ষতায় ভারতের বোলিং ইউনিটের দায়িত্ব পালন করছে, বিরাটের আনন্দ ধরে না! আরো আনন্দকর সংবাদ — সিডনি টেস্টের সমাপণী মঞ্চে ঠিক যেদিন ভারত নিজেদের ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম শ্রেষ্ঠ দিন পার করেছে, সেদিনই বাবা হয়েছেন তিনি। জীবনের এইসব কাকতাল, এইসব ছন্দমিল, এইসব নাটুকেপনা কেমন যেন!

দুই.
অ্যাডিলেইড ওভালের মাঠকর্মী থেকে ক্রিকেটার বনে গেছেন তিনি, গায়ে জড়িয়েছেন গৌরবের সাদা পোশাক। মাথায় তুলেছেন অহঙ্কারের ব্যাগি গ্রিন। স্বপ্নের মতো ব্যাপার। সেই মাঠকর্মী আজ শততম টেস্টের সম্মুখে দাঁড়িয়ে।
প্রথম বলেই কুমার সাঙ্গাকারাকে তুলে নেওয়া এখনো চোখে ভাসে বুঝি তার। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে গল টেস্ট। অধিনায়ক তার হাতে লালচে গোলক তুলে দিয়ে প্রিয় পজিশন স্লিপে গিয়ে দাঁড়িয়েছেন, ক্ল্যাসিক্যাল অফ স্পিনে নাকাল হলেন আধুনিক যুগের ‘ব্র্যাডম্যান’ খ্যাত কুমার সাঙ্গাকারা। ক্রিকইনফোর কমেন্ট্রিতে যদি ফিরে যাই,
“He has struck first ball… would you believe it! He has got Kumar Sangakkara, of all men, what a first test wicket to have! Off your first ball, flight from round the wicket, grip, turn, bounce, Sanga hangs out the bat away from the body, with a bit of an open face… Clarke snaps it up low with a lunge to his left at slip… superb catch! Aye, aye, this is an attack being led by the debutants at the moment!”
শেন ওয়ার্নের অবসরের পর হন্য হয়ে একজন স্পিনার খুঁজেছে অস্ট্রেলিয়া, পায়নি। ১১ জনের বিফল প্রচেষ্টার পর একজন মাঠকর্মীতে গিয়ে থিতু হয় তারা। মাইকেল ক্লার্ক থেকে শুরু করে স্টিভ স্মিথ হয়ে টিম পেইনেরও সবচেয়ে বড় আস্থার নাম — নাথান লায়ন। চারশ’ উইকেটের খুব কাছেই দাঁড়িয়ে। নিশ্চয়ই যাবেন আরো বহু দূর।
পাচ্ছি পাচ্ছি করেও বড় ইনিংস পাওয়া হচ্ছিল না ল্যাবুশেনের। পুরো সিরিজে দারুণ ধারাবাহিক। রানের ফল্গুধারা বইছে ব্যাটে। তবু কখনো ফোর্টিতে আটকে যাচ্ছেন, নাইন্টিজে ফেঁসে যাচ্ছেন। অবশেষে সিরিজ-নির্ধারণী মঞ্চে মহাগুরুত্বপূর্ণ সময়ে তিন অঙ্কের দেখা পান মার্নাস। তার ১০৮-এ ঠেস দিয়ে মিডল অর্ডারও বেশ চালিয়ে নেয়। অস্ট্রেলিয়া পায় ৩৬৯-এর নিরাপদ সংগ্রহ, যা দু’দল মিলিয়ে সিরিজ-সর্বোচ্চ। ভারত-শিবিরে ইনজুরি হানা থেমে থাকে না, সাইনি উঠে যান মাঝপথেই। আশ্চর্য অধিনায়ক আজিঙ্কা রাহানে; কোনো ভাবান্তর নেই, বিচলিত ভাব নেই। অস্ত্রাগারে যা মজুদ আছে, তা দিয়েই লড়াইয়ে প্রস্তুত। বিনা যুদ্ধে নাহি দেব সূচাগ্র মেদিনী!

চূড়ান্ত অনভিজ্ঞ বোলিং লাইনআপ ভারতের। বোলিংয়ে সর্বসাকুল্যে ১৩ উইকেট, আর অস্ট্রেলিয়ার ঝুলিতে উইকেট সংখ্যা ১,০৩৩! সাইনিকে ঘিরে শঙ্কার কালো মেঘ। ম্যাচ বাঁচাতে হলে উইকেটে দীর্ঘ সময় ব্যাটিংয়ের বিকল্প নেই। ফোর্থ ইনিংসের ব্লক্যাথন রোজ রোজ হবে না। মিডল অর্ডার সিডনির তুলনায় আরো বেশি আনাড়ি। যা করার প্রথম ইনিংসে করা প্রয়োজন। রোহিতের সাবলীল ব্যাটিংয়ে স্বপ্ন দেখে ভারত। এই ভদ্রলোক দাঁড়িয়ে গেলে আর কী চাই?
কিন্তু রোহিত শর্মা উপহার দেন নিজেকে। রাহানে-পুজারা-আগরওয়াল-পান্ট প্রত্যেকেই চমৎকার শুরুর পরও খেই হারিয়ে ফেলেন। ফলে ১৮৬তে ভারত হারিয়ে প্রথম সারির ছয়জনকেই। তারপর ‘শার্দুল’ ঠাকুর এবং ওয়াশিংটন ‘সুন্দর’ যুগলবন্দীতে হয়ে উঠেন সুন্দরতম বাঘ। ১২৩ রানের সপ্তম উইকেট জুটিতে ভারতের স্কোর তিনশ’ ছাড়িয়ে যায়; সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যা, ভারত কমিয়ে আনে অস্ট্রেলিয়ার লিড। শেষ পর্যন্ত ৩৩৬-এ পৌঁছে যায় ভারত, সুন্দর ও শার্দুল দু’জনই হাঁকান প্রথম টেস্ট ফিফটি। খুব সম্ভব নিজেদের ক্রিকেট ক্যারিয়ারের সবচেয়ে মূল্যবান ফিফটি।
তিন.
বোর্ডার-গাভাস্কার ট্রফি অস্ট্রেলিয়ায় নেই বেশ ক’বছর হয়ে গেছে। এত দীর্ঘ সময় অস্ট্রেলিয়ার বাইরে ছিল না ট্রফিটা। অস্ট্রেলিয়ায় পৌঁছে অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে ট্রফি নিয়ে যাওয়ার মতো অভূতপূর্ব ঘটনাও ঘটেছে। যেকোনো মূল্যে এবার ট্রফি ফেরত চায় অস্ট্রেলিয়া, ড্র হলেও চলবে না। তাহলে ট্রফি যে শোকেসে আছে, সেখানেই থেকে যাবে। ওয়ার্নারের ব্যাটে ফর্মে ফেরার ইঙ্গিত। উদ্বোধনী ব্যাটসম্যানদের চমৎকার সূচনা। আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, গ্যাবার আকাশে আছে ঝড়ের পূর্বাভাস। যা করার, তাড়াতাড়ি করতে হবে। দ্রুত রান তোলো, পর্যাপ্ত টার্গেট সেট করো, অতএব ওদের ব্যাটিংয়ে নামাও। গত টেস্টেই প্রায় চার সেশন মড়ার মতো পড়েছিল উইকেট আঁকড়ে। যথেষ্ট সময় না পেলে ওদের শেষও করা যাবে না। প্রথম ইনিংসে লিডের খামতিটাই ভোগাচ্ছে। মহা ঝামেলা।
ল্যাবুশেন নামক ছুটন্ত পাগলা ঘোড়াকে সিরাজ বোতলবন্দী করলেন। অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটিং-আকাশে আচানক দুর্যোগের ঘনঘটা। ৮৯/০ থেকে ১২৩/৪; ভরসা হয়ে স্মিথ আছেন। সিরাজ এবার স্মিথকেও বশে আনেন। লেজের ঝাপটায় অস্ট্রেলিয়া প্রায় তিনশ’র টোটাল দাঁড় করায়। ভারত চতুর্থ দিনের শেষ বিকেলে চতুর্থ ইনিংসে টার্গেট পায় ৩২৮ রান।

আপ্লুত হন সিরাজ। বাবার শত সংগ্রাম ও আত্মত্যাগ পূর্ণতা পাওয়ার দিনে নেই বাবা-ই। অভাব অনটনের দিনগুলোয় বাবা-ই তাকে স্বপ্নের পথে চলার উৎসাহ যুগিয়েছিলেন, তার আশা ও আকাঙ্ক্ষার লাগামে রাশ না টেনে ধরে বরং ছেড়ে দিয়েছিলেন সিরাজের স্বপ্নপূরণের মহাউদ্যানে। চকচকে লালচে গোলক হাতে, ভারতের পেস ইউনিটের নেতৃত্বের আর্মব্যান্ড কাঁধে, সিরাজের প্রথম ফাইফার অর্জন। বাবা, আপনি দেখে যেতে পারলেন না!
এক-একটি অস্ট্রেলিয়া সফর ভারতকে এক-একজন তারকা উপহার দেয়। বীরত্বপূর্ণ এবারকার ভারত দলে অনেকেই তারকা হতে পারেন। সুন্দর, শার্দুল, ভিহারি, গিল… অনেকেই। তবে ভারতের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি সম্ভবত সিংহহৃদয় মোহাম্মদ সিরাজ। একজন জাত লড়াকু, একজন নতুন বলের নেতা। বিয়োগবেদনার ক্লান্তি যাকে পরাস্ত করে না, দায়িত্বের ভার যাকে ন্যুব্জ করে না, যিনি ক্রিকেট আকাশের উজ্জ্বলতর নক্ষত্র হতে চান। সকল বাধা পেরিয়ে তরতর করে শীর্ষে পৌঁছানোর অভিপ্রায় যার হৃদয়ে। যার বদ্ধমূল বিশ্বাস — তিনি হারবেন না, তার বাবার পরিশ্রম বৃথা যেতে দেবেন না, স্বদেশকে উজার করে দেবেন সামর্থ্যের পুরোটা।

হয় একশো ওভার দাঁত কামড়ে পড়ে থাকো, নয়তো তাড়া করো ওভারপ্রতি তিন দশমিক দুই আট! টেস্ট ক্রিকেটের শেষদিনে রীতিমতো অসম্ভব। বৃষ্টির শঙ্কাও আছে, পুরো দিন খেলা হয় কিনা সংশয়। চতুর্থ দিন বিকেলেই যেমন সময়ের আগে নেমে গেল পর্দা। পটাপট দশটি উইকেট তুলে নাও, মেতে উঠো বিজয়ের আনন্দে। টেকো মাথার নাথান লায়ন সত্যিকার লড়াকু। নিজের শততম টেস্টের এই মঞ্চে নিজেকে উজার করে দেবে নিশ্চিত। অদম্য ও দুরন্ত পেসত্রয়ী তো আছেই।
চার.
একটা পরিস্থিতি কল্পনা করা যাক। দৃশ্যপটটা এমন — দক্ষিন আফ্রিকার ডারবানে পঞ্চম দিনের খেলা। পিচ কিছুটা পেস-সহায়ক, খানিকটা স্পিনও। তবে খুব ভীতিকর কিছু নয়। বিশ্ব একাদশের নেতৃত্বে আছেন আপনি। আপনার প্রতিপক্ষ স্বাগতিক দক্ষিণ আফ্রিকা। চতুর্থ ইনিংসে ২৮০ রানের টার্গেট পেয়েছে আপনার দল, কিন্তু ১১০ রানেই আপনি হারিয়ে বসেছেন পাঁচ উইকেট। একজন চার নাম্বার ব্যাটসম্যান অপরাজিত আছেন, সাত নাম্বারে্র অপরজন যোগ দেবেন তার সঙ্গে। এখন এই দুটি জায়গায় আপনার পছন্দ হবে কে কে, বা কোন দুইজন?
ব্যাটা নেশাটেশা করলো নাকি? কীসব গাঁজাখুরি গল্প ফেঁদেছে? লিখতে না পারো, বসো না, ব্যস! মানুষকে পাগল বানানোর তো কোনো মানে হয় না।
রাগ যদি পড়ে গিয়ে থাকে, এবার তবে শান্ত হয়ে শুনুন। দৃশ্যপট মোটেও আমার বানানো নয়। ইএসপিএন ক্রিকইনফোর লেখকদের তৈরি। এই দুইটি পজিশনের জন্য কল্পনার স্বাধীনতার পূর্ণ ব্যবহার করে একেকজন ভিন্ন ভিন্ন ব্যাটসম্যান বেছে নিয়েছেন। তার মধ্যে অ্যালান গার্ডনার যে দু’টি নাম বেছে নিয়েছেন, তার একটিই আজ আমাদের মুখ্য চরিত্র। গার্ডনার যে চার নাম্বারে বেন স্টোকসের সঙ্গে সাত নাম্বারে রিশাভ পান্তের নাম বলেছেন!
লন্ডনের ওভালে সিরিজের পঞ্চম ও শেষ টেস্টে ইংল্যান্ড ও ভারত মুখোমুখি। সিরিজের ফয়সালা হয়েই গেছে। এটা স্রেফ আনুষ্ঠানিকতা। আগের চার টেস্টের ৩-১ ফলাফল ইংল্যান্ডের পক্ষে। শেষ টেস্ট আবার স্যার অ্যালেস্টার কুকের বিদায়ী মঞ্চ। ফেয়ারওয়েল ট্রিবিউট ‘উপভোগ্য’ করতে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন কুক, বহুদিনের রান-খরা কাটিয়ে পেয়েছেন সেঞ্চুরি। অধিনায়ক রুটও অগ্রজের সম্মানার্থে তুলে নিয়েছেন সেঞ্চুরি, ভারতকে দেয়া হয়েছে ৪৬৪ রানের অসম্ভব এক লক্ষ্য অথবা প্রায় সাড়ে তিন সেশন উইকেট আঁকড়ে বাঁচার পরীক্ষা।
পঞ্চম দিনের প্রথম ঘন্টা পেরোতেই ভারতের পাঁচ উইকেট হাওয়া, দিনের বাকি সত্তরেরও বেশি ওভার, অবারিত সময় পড়ে আছে; অ্যান্ডারসন-ব্রড-স্টোকসদের পুরনো বলে মুন্সিয়ানা, আদিল-মঈনদের ঘূর্ণি, সমস্ত সামলে ভারত ম্যাচ বাঁচাবে, সে দুরাশা বৈ কিছু নয়। পান্ত যোগ দিলেন রাহুলের সঙ্গে। প্রতিআক্রমণে একটু একটু করে অসম্ভব এক আশা জাগিয়ে তুললেন ভারতবাসীর মনে। চা-বিরতি পর্যন্ত আর কোনো উইকেট হারালো না ভারত। আর কোনোমতে ঘন্টা আড়াই, ওভার-পঁয়ত্রিশ ঠেকাতে পারলেই কেল্লা ফতে। পান্ত ততক্ষণে তার প্রথম সেঞ্চুরি তুলে নিয়েছেন, রাহুলের সঙ্গে জুটিটা দুইশো পেরিয়ে যায়, তার চেয়েও বড় কথা ৪৫ ওভার সামলে নিয়েছেন দু’জন। তবে শেষ রক্ষা হয় না। রাহুলকে ফেরান আদিল, খানিক বাদে পান্তকেও। তবে ততক্ষণে ১৪৬ বলে ১১৪ রানের ফোর্থ ইনিংসের প্রথম মাস্টারক্লাসের জন্ম দিয়ে বসেছেন রিশাভ পান্ত!
সিডনির ১১৭ বলে ৯৭ রানের আরো একটি ফোর্থ ইনিংস স্পেশালের পর ভারতের ত্রাতার ভূমিকায় পান্তের আবারো আবির্ভাব। গিল-পুজারার ভিত্তিপ্রস্তরে দাঁড়িয়ে অট্টালিকা বিনির্মাণ ও স্থাপত্যশৈলীর চূড়ান্ত কার্য সম্পাদন করেন রিশাভ। তার আগে অস্ট্রেলিয়ান বোলারদের হতদ্যেম করার সর্বোচ্চ প্রক্রিয়া সারা হয়ে যায় পুজারার। একের পর এক অস্ট্রেলিয়ান-গোলা পুজারা নামক দেয়ালে গিয়ে নিস্ফল হয়ে ফিরে আসে। কামিন্সের অতিমানবীয় প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়, স্টার্ককে বড্ড ম্রিয়মান দেখায়, হ্যাজলউড কোনো উপায় পান না। লায়নের সমস্ত কৌশল মাঠে মারা যায়। পুজারা আত্মপ্রসাদের গান শোনান,
‘শর্ট লেংথে শরীর তাক করে বল ছুঁড়ছিল ওরা। সে সময় উইকেট হারানোর ঝুঁকি নিতে পারতাম না, সুতরাং শরীরটা পেতে দিলাম আমি। গোলাগুলো শরীরেই আঘাত হানুক, যা হয় দেখা যাবে পরে।’

শুভমান গিল ও চেতেশ্বর পুজারা জমিনটাকে যেমন উর্বর করে দিয়ে যান, ঠিক তেমন করেই তাতে সোনা ফলান রিশাভ পান্ত। প্রথমে রয়েসয়ে সামলে, প্রয়োজন মতো হাত খুলে, পরিস্থিতি কখনোই নাগালের বাইরে যেতে দেন না। তেইশের তরুণ ত্রিশের মস্তিষ্ক নিয়ে নেমেছেন বুঝি। একদম হিসেব কষা, যখন যেমন প্রয়োজন। উইকেটকিপিংয়ে কিছুটা খামতির পরও টিম ম্যানেজমেন্ট তাকে পিঠ চাপড়ে দিয়েছে বরাবর। সেই আস্থার প্রতিদান এর চেয়ে ভালোভাবে আর দেয়া যেত না। পরপর দুটি ফোর্থ-ইনিংস স্পেশাল। দু’টিরই মাস্টারক্লাসের মর্যাদা প্রাপ্য। ১৩৮ বলে অপরাজিত ৮৯, ৯টি চার ও ১টি ছয়; তার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ — মাত্র ঘন্টাতিনেকের ব্যবধানে ম্যাচে ভারতের আধিপত্য প্রতিষ্ঠা এবং চূড়ান্ত দাপট দেখিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো অস্ট্রেলিয়ার মাঠে সিরিজ-বিজয়ের মহোৎসব, যার অন্যতম কারিগর রিশভ পান্ত।
****
ম্যাচের শুরু থেকে প্রভাব বিস্তার করেছে অস্ট্রেলিয়া, গোটা চারদিনই। শেষ দিনেও অস্ট্রেলিয়ার পরাজয়ের কোনো চিহ্ন নেই দূর দিগন্তে কোথাও। চা-বিরতির সময়েও চালকের আসনে টিম পেইনের দল। ক্রিকেট দর্শকমাত্রই জানা আছে, এক সেশনে বহুবার ম্যাচের রঙ পাল্টে গেছে, একটি স্পেলে বহুবার বহু প্রতিরোধ ধ্বসে পড়েছে তাসের ঘরের মতো। নতুন বল হাতে ম্যাচ হস্তগতের সম্ভাবনাও অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে। তবুও আচমকা দিক বদলে বিজয়মাল্য ভারতের গলায়। টেস্ট ক্রিকেটের অনন্যতা এখানেই। আনন্দ-সুখ-সন্তুষ্টি-পরিতৃপ্তির আঁতুরঘর এই অনিশ্চয়তার রোমাঞ্চ। মানুষ যা ভাবে, হয় ঠিক তার উলটো; মানুষ যা কল্পনাও করে না, বাস্তবতার ডালিতে তা-ই থাকে সাজানো। ব্রিসবেনের অস্ট্রেলিয়ান দুর্গ ৩২ বছর পর ধ্বসে পড়ে ভারত-অভিঘাতে।

রঙধনুর সাতরঙা রঙ একেকবার একেক রঙে
সবুজ মাঠে লুটোপুটি করে; কভু-গড়ে-কভু-ভাঙে।
অনিশ্চয়তার অনিন্দ্য সুন্দর রোমাঞ্চ পরিবেশ,
সংশয়-শঙ্কা-সম্ভাবনার মিলমিশ, শিহরণ-আবেশ,
রহস্য-নাটক-উত্তেজনায় বুঝি-বা শ্বাসরুদ্ধ টুঁটি—
বিবশ ঠোঁটে বিড়বিড়; টেস্ট ক্রিকেট, ইউ বিউটি!
পরিশিষ্ট
ইনজুরি-জর্জর ভারত যেখানে নতুন নতুন বোলার ভিড়িয়েছে দলে, সেখানে একই বোলিং আক্রমণ নিয়ে অস্ট্রেলিয়া লড়ে গেছে পুরোটা সময়। এবার নয় শুধু, অস্ট্রেলিয়ার এই বোলিং ইউনিট গত কয়েক বছর ধরেই একই রকম। ফ্যাকাশে স্টার্ক, ধারহীন লায়ন আলোচনার জন্ম দেন তবু। নানান প্রশ্ন উঠে তাদের ঘিরে। সেই পুরনো কথা স্মরণ করে নিতে হয় আমাদের — তোমার ব্যর্থতা প্রশ্নবিদ্ধ করবে তোমার শক্তিকেও। আর তোমার সফলতা ঢেকে দেবে তোমার দুর্বলতাও।
ওপেনার নিয়ে নতুন করে ভাববে অস্ট্রেলিয়া। তিন-চার নাম্বারে ল্যাবুশেন-স্মিথের সঙ্গে একজন যোগ্য পাঁচ নাম্বারের খোঁজ চলছে। অধিনায়কও কাঠগড়ায়। অস্ট্রেলিয়া কি ফিরবে সেই পুরনো নির্বাচন প্রক্রিয়ায়? সেরা একাদশ হতে একজন নেতা বেছে নেবে তারা? নাকি একজন নেতা বেছে নিয়েই তবেই বাকি দশজন সাজাবে?

ভারত তার বেঞ্চ-শক্তির প্রমাণ দিয়েছে। পাইপলাইনে আরো বহু বহু ক্রিকেটার। তেরঙার জন্য যারা নিজেদের উজার করে দিতে প্রস্তুত, একটু সুযোগের প্রহর গুণছে। এই ভারত ইংলিশ ও কিউই কন্ডিশনে এখনো যোগ্যতার প্রমাণ রাখতে পারেনি, যদি তা-ও সফলতার সঙ্গে উতরে যায়, তাহলে এই বিশ্বের অবিসিংবাদিত ক্রিকেট সম্রাট হবে তারাই। উঁহু, ওসব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে ফাঁকি আছে বহু। র্যাঙ্কিংয়েরও ফাঁকফোঁকর গলে ‘গদা’ হাতে তোলা যায়। মাঠের ক্রিকেটে নিজেদের ‘সর্বজয়ী’ ও ‘সম্রাট’ যদি কেউ প্রমাণ করতে চায়, তাহলে তাকে পৃথিবীর সবক’টা প্রান্তে সর্বোত্তম ক্রিকেটের নজিরবিহীন প্রদর্শনী রাখা চায়। ভারতের এই দল জানান দিচ্ছে, তারা চ্যালেঞ্জটা নিতে প্রস্তুত। ভারতের প্রতিপক্ষরা প্রস্তুত তো?

স্মরণকালে এত আনন্দদায়ক ক্রিকেট-প্রতিদ্বন্দ্বিতা দেখেনি কেউ। অ্যাশেজ ২০১৯ — স্মিথ-স্টোকসের অতিমানবীয়তার পরও প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও প্রতিযোগিতার নিরিখে এটার কাছাকাছিও আসবে না। কাছাকাছি আসতে পারে ২০০৮ সালের দক্ষিণ আফ্রিকা বনাম অস্ট্রেলিয়া দ্বৈরথ। গ্রায়েম স্মিথের দক্ষিণ আফ্রিকার রেকর্ড চেজ, ভাঙা হাতে স্মিথের অসম্ভব লড়াই, জেপি ডুমিনির ব্যাটসম্যানশিপ, ডি ভিলিয়ার্স-আমলার দুরন্ত ফর্ম, স্টেইন-মরকেল জুটি, সেরা সময়ের অস্ট্রেলিয়া, অস্ট্রেলিয়ায় অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে মাস্তানি; অসাধারণ এক লড়াইয়ের গল্প।
তবু এবারের অস্ট্রেলিয়া-ভারত সিরিজ এগিয়ে থাকবে পরিপার্শ্বিকতা বিবেচনায়। ভারতের নানান বাঁধা উতরানো এবং অস্ট্রেলিয়ার প্রতিনিয়ত চ্যালেঞ্জ — ধুন্ধুমার উত্তেজনা পরতে পরতে। অ্যাশেজ ২০০৫-এর সঙ্গে কোনো কিছুর তুলনা হয় না, তবে বোর্ডার-গাভাস্কার ২০২০-২০২১ নিশ্চয়ই খুব কাছেই অবস্থান করছে। সেই প্রেক্ষিতে বলা যায় শতাব্দীর আনন্দদায়ক প্রতিদ্বন্দ্বিতার তালিকায় দ্বিতীয়তেই অবস্থান করবে হয়তো। লক্ষ্মণ-দ্রাবিড়ের ‘ইডেন মহাকাব্য’ বা ২০০৩ সালের পাক-ভারত মনে রেখেও এই দাবি রাখা যায়।
যে সিরিজ আপনাকে প্রতি মুহূর্তে ক্রিকেট সৌন্দর্যের অনন্য রূপরসে সিক্ত করবে, জীবনের নানা রঙে রাঙায়িত করবে প্রতিক্ষণ। পতন-উত্থানের গল্পে ভরিয়ে তুলবে অভিজ্ঞতার ভাণ্ডার, পশ্চৎপদ জনতার সম্মুখগামিতায় রূপান্তরের প্রত্যক্ষ সাক্ষী হবেন আপনি। আপনার মনে রঙধনুর সাতরঙা রঙ আলপনা আঁকবে প্রতিনিয়ত, রহস্য-রোমাঞ্চ-উত্তেজনা কাঁপবেন আপনি, দু’টি দল তীব্র হার না মানা লড়াইয়ে ঢেলে দেবে মনপ্রাণ — তেমন একটা সিরিজ শেষে আপনার মানসপটে ভেসে উঠতে পারে, হয়তো এটাই সর্বকালের শ্রেষ্ঠ আনন্দসঞ্চারী সিরিজ কি না!
সর্বকালের ‘শ্রেষ্ঠ’ না হলেও যে ‘অন্যতম শ্রেষ্ঠ’, তা ঠিকই বোঝেন আপনি। অতএব, আপনি টেস্ট ক্রিকেটের সৌন্দর্য্যে বুঁদ না হয়ে পারেন না। আপনি ঠিক করতে পারেন না, টেস্ট ক্রিকেট কতট সুন্দর আসলে — পরিণত যৌবনের মহিলার মতো নাকি সদ্য কৈশোর ছাড়া তরুণীর মতো? রূপ-রস-সৌন্দর্য্যের ক্ষণে ক্ষণে রঙ বদল আপনাকে বিভ্রান্ত করে দেয়। আপনি বিভ্রম ও ঘোরগ্রস্থ মন নিয়ে বলতে বাধ্য হন — টেস্ট ক্রিকেট, ইউ বিউটি। অ্যাবসোলিউট বিউটি!