![](https://assets.roar.media/Bangla/2017/06/scoreboard-congrats-laxman.jpg?w=1200)
রাউন্ড বল দিয়ে যে খেলাগুলো হয়ে থাকে, এদের মধ্যে সবচেয়ে উগ্র খেলা বলা হয় রাগবিকে। তবে যদি বলা হয় সবচেয়ে নিষ্ঠুর খেলার কথা, নিশ্চিতভাবেই সে তালিকায় উপরের দিকে থাকবে ক্রিকেট ; আরও নির্দিষ্ট করে বলতে হলে, টেস্ট ক্রিকেট। অন্য কোনো খেলাতেই ফরম্যাট বদলাতে স্কিল এবং টেম্পারামেন্টের অতটা পার্থক্য চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিতে পারে না, যতটা পারে ক্রিকেট। শুধু একটা ক্যাচ মিস পুরো একটা ম্যাচকে হাত থেকে বের করে দিতে পারে। এমনকি প্রথম ইনিংসে জঘন্যভাবে পিছিয়ে পড়ার পরও ফিরে আসা সম্ভব, এমনকি পরিষ্কার ব্যবধানে ম্যাচ জেতাও অসম্ভব নয়!
ঠিক এমন এক ঘটনাই ২০০১ সালে বদলে দিয়েছিলো ইন্ডিয়ান ক্রিকেট টিমটাকে, সৌরভ গাঙ্গুলির ঘরের মাঠ ইডেন গার্ডেনে লক্ষ্মণ-দ্রাবিড়ের ব্যাটে চড়ে রচিত হয়েছিলো ইতিহাসের পাতায় চিরঅম্লান এক অধ্যায়। তখন ভারত নেহায়েত এক উদীয়মান ক্রিকেট দল, যারা নিয়মিত টেস্ট জিততে শেখেনি তখনও। গত ম্যাচেই ১০ উইকেটের বিশাল পরাজয়ের পর এই টেস্টেও দারুণ বিপর্যয়ের মুখে পড়েছিলো ভারত, এমনকি ফলোঅনেও বাধ্য হয় তারা। আর এরপরই ইতিহাসের শুরু. ভিভিএস লক্ষ্মণের ইনিংসটিকে বলা হয়ে থাকে পুরো ক্রিকেট ইতিহাসেরই অন্যতম সেরা টেস্ট ইনিংস, আর দ্রাবিড়ের ক্যারিয়ারের সেরা ইনিংসটাও ছিলো সম্ভবত এই ম্যাচেই। তবে পরিস্থিতি যে খুব আদর্শ ছিলো এত এত রেকর্ডের জন্য, সেটা অবশ্য দাবি করা চলে না!
![](https://assets.roar.media/Bangla/2017/06/before-this-match-aus-were-celebrating-701x394.jpg)
ঠিক আগের ম্যাচেই বিশাল ব্যবধানে জিতে দারুণভাবে উজ্জীবিত ছিলো গোটা অস্ট্রেলিয়া দল। © গেটি ইমেজ
১১ মার্চ ২০০১, রবিবার। ভারতে সেদিন সরকারি ছুটি, বোর্ডার-গাভাস্কার ট্রফির চতুর্থ আসরের দ্বিতীয় টেস্ট। গত ম্যাচেই অস্ট্রেলিয়ার কাছে ১০ উইকেটে হেরে সিরিজে ভারত পিছিয়ে ছিলো ০-১ ব্যবধানে, তবু গ্যালারিতে দর্শকের নেহায়েত কমতি নেই। চারিদিকে দারুণ শোরগোল, সাথে কাঠফাটা গরমকে সঙ্গী করেই মাঠে নামলো দুই দল। ঘরের মাঠে ভারতীয় অধিনায়ক সৌরভ গাঙ্গুলির সামনে চ্যালেঞ্জ নিজের দলের যোগ্যতা প্রমাণ করার, আর অজি অধিনায়ক স্টিভ ওয়াহর সামনে লক্ষ্য প্রথম ম্যাচের দোর্দন্ড দাপট দেখানো পারফরম্যান্সকে এই ম্যাচেও টেনে আনা। টসে জিতে ওয়াহ বেছে নিলেন ব্যাটিং, মাথা নাড়িয়ে সমর্থন জানালেন সৌরভ। জানালেন, টসে জিতলে তিনিও ব্যাটিংই নিতে চাইতেন। মূল কারণ, ভারতে সেই মুহুর্তে চলছে গ্রীষ্মের প্রচন্ড দাবদাহ।
ব্যাটিংয়ে নামলেন অস্ট্রেলিয়ান দুই ওপেনার মাইকেল স্ল্যাটার এবং ম্যাথু হেইডেন। প্রথম থেকেই দাপটের সাথে খেলতে শুরু করলেন দুইজনই, গড়লেন শতরানের পার্টনারশিপ। উইকেটের চারিদিকে ছড়িয়ে খেলতে খেলতেই হঠাৎ জহির খানের বলে উইকেটের পিছনে নয়ন মঙ্গিয়ার কাছে ক্যাচ তুলে দিয়ে ১০৩ রানে বিদায় নিলেন স্ল্যাটার, নামলেন জাস্টিন ল্যাঙ্গার। এতে যেন ভারত ফুটন্ত কড়াই থেকে জ্বলন্ত উনুনে পড়লো, ল্যাঙ্গার এসেই চালিয়ে খেলতে শুরু করলেন। দলীয় ১৯৩ রানের মাথায় হরভজন সিংয়ের বলে ম্যাথু হেইডেন ব্যক্তিগত ৯৭ রানে অতিরিক্ত ফিল্ডার হেমাং বাদানির হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরে গেলে হঠাৎ যেন কিছুটা ছন্দপতন, ২ উইকেটে ১৯৩ থেকে হঠাৎ অস্ট্রেলিয়া পরিণত হলো ৮ উইকেটে ২৬৯ রানে। সে যাত্রায় নায়ক হরভজন সিং, ইডেনে উপস্থিত প্রায় ৭৫,০০০ দর্শককে সাক্ষী রেখে টেস্টে ভারতের প্রথম বোলার হিসেবে হ্যাটট্রিক করেন তিনি। মাত্রই কিছুদিন হলো অ্যাকশন শুধরে আবার দলে ফিরেছেন, এরই মধ্যে এই হ্যাটট্রিক জানান দিলো, হরভজন হারিয়ে যেতে আসেননি।
![](https://assets.roar.media/Bangla/2017/06/harbhajan-after-ponting-dismissal-701x589.jpg)
হ্যাটট্রিক করে হরভজন সিং তাবৎ দুনিয়ার সামনে নিজের আগমনী বার্তা ঘোষণা করলেন। © গেটি ইমেজ
তবে এক পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন থ্রি-ডাউনে নামা স্টিভ ওয়াহ, টেইলএন্ডারদের নিয়ে চালিয়ে গেলেন লড়াই। ওয়াহকে দারুণ সমর্থন দিয়েছিলেন জ্যাসন গিলেস্পি এবং গ্লেন ম্যাকগ্রা, প্রায় ৫৩ ওভার ধরে দাঁতে দাঁত চেপে ব্যাটিং করে গেছেন দুজনই। গিলেস্পি তো ছিলেন অনবদ্য, ১৯০ মিনিট ধরে ক্রিজে থেকে ১৪৭ বলে খেলেছিলেন ৪৬ রানের গুরুত্বপূর্ণ একটি ইনিংস। তবে সবাইকে ছাড়িয়ে গিয়েছিলেন অধিনায়ক স্টিভ ওয়াহ, ৩০৫ মিনিট ক্রিজে থেকে দারুণ লড়াকু এক ইনিংস শেষে যখন মাঠ ছাড়ছেন, নামের পাশে লেখা ছিলো ১১০ রান!
আগের ম্যাচের ১০ উইকেটে জয়ের পর এই ম্যাচে মাঝের ব্যাটিং বিপর্যয়ের পরও স্কোরকার্ডে ৪৪৫ রান তুলে ফেলাতে ম্যাচে তখন পরিষ্কার ব্যবধানে এগিয়ে অস্ট্রেলিয়া। সেই ব্যবধান যেন আরেকটু বাড়িয়ে দিলো ভারতই, যখন প্রথম ইনিংসে মাত্র ১৭১ রানেই গুটিয়ে গেলো তারা। ম্যাকগ্রা-ওয়ার্নদের সামনে এক লক্ষণ ছাড়া আর কেউ যেন সেভাবে দাঁড়াতেই পারলেন না! ফলোঅনে পড়লো ভারত, মানসিকভাবেও যেন আরও একটু পিছিয়ে গেলো। অন্যদিকে অস্ট্রেলিয়া শিবিরে তখন উৎসবমুখর পরিবেশ, জয়ের সুবাস তখনই পেতে শুরু করে দিয়েছে তারা। এমনকি স্ল্যাটার তো কোত্থেকে এক ব্যাগ সিগার আর বিয়ার নিয়ে চলে এসেছিলেন পার্টি করতে!
![](https://assets.roar.media/Bangla/2017/06/aus_happy_first_day-701x611.jpg)
প্রথম ইনিংস শেষে বেশ নির্ভারই ছিলো অজি শিবির। © গেটি ইমেজ
তবে সাময়িক উদযাপন শেষে এবার সমস্যায় পড়লো অস্ট্রেলিয়া ; ভারতকে আবার ব্যাটিংয়ে পাঠাবে, নাকি নিজেরাই ব্যাটিংয়ে নামবে আবার? একদিকে প্রচন্ড গরমে সবাই দারুণ অস্বস্তিবোধ করছে, অধিনায়ক নিজেও তখন দারুণ ক্লান্ত। ওই দলের অন্যতম সদস্য ওয়ার্নের মুখ থেকেই শোনা যাক পুরো ঘটনাটা,
স্টিভ বারবার আমাদেরকে জিজ্ঞেস করছিলো, “সবাই কেমন ফীল করছো?” ঐ সপ্তাহটাতে চারিদিকে এত গরম ছিলো, আমার মনে হয় ক্যাসপারের (মাইকেল ক্যাসপ্রোভিচ) মত তরুণ বোলাররা তখন মানসিকভাবে চাঙ্গা রাখছিলো শুধু মনে মনে “ইয়েস, আই ক্যান ডু ইট” বলতে বলতে বজ্রমুষ্ঠি করে হাতে কিল মারার মাধ্যমেই।
শেষমেশ স্টিভ এসে আমাকে জিজ্ঞেস করলো, “হোয়াট ডু ইউ থিংক?” আমি বললাম, আমরা এখন ব্যাটিং করতে নামি, বেশি বেশি রান করি যাতে ওরা সেটা আর চেজ করতে না পারে, আর ততক্ষণে বোলারদের একটু ফ্রেশ হয়ে নিতে দিই। সে তখন আমতা আমতা করে বললো, ‘উমম… মেবি, মেবি, না না, আমার মনে হয় এখন আরেকবার বোলিং করা উচিত আমাদের।’ আমি তখন ভুরু কুঁচকে ওকে বললাম, “ভাই রে, বাইরে এই পরিমাণ গরম! এর মধ্যে বোলিং করতে চাও তুমি?”
যাহোক, শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত হলো অস্ট্রেলিয়া ফলোঅন করাবে ভারতকে। কিছুটা বিশ্রাম সেরে নিয়েই ফিল্ডিংয়ে নেমে পড়লো অস্ট্রেলিয়া, খুব তাড়াতাড়িই টপঅর্ডার ব্যাটসম্যানদেরকে ফিরিয়ে দিয়ে অধিনায়কের সিদ্ধান্তের যথার্থতাই যেন প্রমাণ করতে শুরু করলেন গিলেস্পি-ওয়ার্নরা। তবে ওই পর্যন্তই, এরপরই ইতিহাসের সূচনা।
![](https://assets.roar.media/Bangla/2017/06/mcgrath-traps-sachin-701x1139.jpg)
ফলোঅন করানোর সিদ্ধান্তটিকে সঠিক প্রমাণ করার দায়িত্ব যেন নিয়েছিলেন অজি বোলাররা, খুব দ্রুতই টপ অর্ডার বেশ কিছু ব্যাটসম্যানকে ফিরিয়ে দেন তাঁরা। © গেটি ইমেজ
লক্ষণকে ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে বেশ কিছুদিন মেকশিফট ওপেনার হিসেবে চেষ্টা করে দেখা হয়েছে, তাতে খুব একটা সুবিধা করে উঠতে না পারায় বাদ পড়তে হয়েছিলো তাকে। এরপর ঘরোয়া ক্রিকেটে রানের ফুলঝুড়ি ছুটিয়ে আবারও ফিরেছিলেন দলে, তবে অন্য ভূমিকায়। এবার আর ওপেনিংয়ে নয়, দলের প্রয়োজনে ব্যাটিং করেছেন ছয় নম্বরে। সেখানে দারুণভাবে অ্যাডজাস্ট করে নিয়েছিলেন তিনি, মনে করা হচ্ছিলো সেখানেই এবার স্থায়ী হবেন। কিন্তু দ্বিতীয় ইনিংসে হঠাৎই কিছুটা পরিবর্তন, হুট করে তাকে তুলে আনা হলো তিন নম্বরে।
অন্যদিকে বেশ কিছুদিন ধরেই দ্রাবিড়ের সম্পর্কে সমালোচনা চলছিলো, অস্ট্রেলিয়ান বোলারদের বিপক্ষে নাকি সেভাবে সুবিধা করে উঠতে পারছিলেন না। স্কোরকার্ড সেটার পূর্ণ প্রতিফলন দেখাতে না পারলেও তখন এটা নিয়ে কোনো প্রশ্নই ছিলো না। ফলস্বরূপ এই ইনিংসে তাকে ডাউন-অর্ডার ডিমোশন করিয়ে নামানো হয় ছয় নম্বরে, আর তার জায়গায় প্রোমোশন দেওয়া হয় ভিভিএস লক্ষ্মণকে। কি অদ্ভুত, দলের সবচেয়ে প্রয়োজনের সময়টাতে এই দুজনই দাঁড়িয়ে গেলেন একসাথে! বুক চিতিয়ে লড়াই করলেন একসাথে, গড়লেন ৩৭৬ রানের ম্যারাথন পার্টনারশিপ! লক্ষ্মণ ক্রিজে ছিলেন ৬৩১ মিনিট ধরে, পুরোটা সময়ে একটুও সুযোগ দেননি ওয়ার্ন-ম্যাকগ্রা-গিলেস্পি-ক্যাসপ্রোভিচকে নিয়ে গড়া বিশ্বমানের বোলিং অ্যাটাককে! সে তুলনায় কিছুটা ‘নড়বড়ে’ ছিলেন দ্রাবিড় ; তিনি দু-একটা হাফচান্স ক্রিয়েট করেছিলেন বটে, তবে তাতেও খুব একটা সুবিধা করে উঠতে পারেনি অস্ট্রেলিয়ান ফিল্ডাররা। গোটা একটা দিন ধোঁয়া ওঠা গরমে নিরবচ্ছিন্ন মনঃসংযোগে খেলে গেছেন দুজনই, কোনোরকম তাড়াহুড়ো কিংবা ভুল ছাড়াই নিপাট বিশুদ্ধ টেস্ট ইনিংস। স্কিল এবং টেম্পারামেন্টের সাথে ডেডিকেশনের অদ্ভুত মিশেলে চারিদিকে স্ট্রোকের ফুলঝুরি ছুটিয়ে গড়েছিলেন পর্বতসমান এক জুটি। পুরোটা সময়ে একবারের জন্যও মনে হয়নি দুজনের কেউ আউট হতে পারেন।
![](https://assets.roar.media/Bangla/2017/06/both-mayestro-701x819.jpg)
গোটা একটা দিন ধোঁয়া ওঠা গরমে নিরবচ্ছিন্ন মনঃসংযোগে খেলে গেছেন দুজনই, কোনোরকম তাড়াহুড়ো কিংবা ভুল ছাড়াই নিপাট বিশুদ্ধ টেস্ট ইনিংস। © গেটি ইমেজ
শেষ পর্যন্ত ম্যাকগ্রার বলে পন্টিংয়ের হাতে ক্যাচ দিয়ে যখন সাজঘরে ফিরছেন লক্ষ্মণ, তার নামের পাশে লেখা হয়ে গেছে ৪৫২ বলে খেলা ২৮১ রানের অনবদ্য এক ইনিংস। এতটাই সুন্দর এক ইনিংস, যেটার সৌন্দর্য্যর কোনো বর্ণনা ওই ‘গর্দভ’ স্কোরবোর্ড বিন্দুমাত্র বোঝাতে পারে না! এতটাই মায়াবী ছিলো লক্ষ্মণের ইনিংসটা, অন্যপাশে দাঁড়িয়ে ১৮০ রানের দুর্দান্ত আরেকটা ইনিংস খেলা রাহুল দ্রাবিড় ম্লান হয়ে গেলেন সেই সৌন্দর্যযমাখানো ইনিংসের কাছে। তবু সেই ইনিংসটাই যেন বুঝিয়ে দিলো, আগামী কয়েক বছরে ভারতের আরেক ব্যাটিং ভরসার নাম হতে যাচ্ছেন রাহুল দ্রাবিড়। আর এই দু’জনের ব্যাটে সওয়ার হয়েই প্রথম ইনিংসে ফলোঅনে পড়া ভারত দ্বিতীয় ইনিংসে বিশাল লিড নিলো, শক্তিশালী অস্ট্রেলিয়াকে টার্গেট ছুঁড়ে দিলো ৩৮৪ রানের!
![](https://assets.roar.media/Bangla/2017/06/warne-helpless-701x539.jpg)
আরেকটি রানের জন্য দৌড়ালেন দ্রাবিড়, অসহায় দৃষ্টিতে দেখছেন শেন ওয়ার্ন। © গেটি ইমেজ
টেস্টের চতুর্থ ইনিংসে অস্ট্রেলিয়া যখন ব্যাটিং করতে নামলো, পঞ্চম দিনের লাঞ্চের আগে বাকি আছে আর ১২ ওভার। শেষ দিনে বল ঘুরছে চরকির মতো, চতুর্থ দিনে অবিচ্ছিন্ন জুটি লক্ষ্মণ-দ্রাবিড়সহ সব মিলিয়ে সকাল থেকে তিনটা উইকেট চলে গেছে, অন্যদিকে প্রতিপক্ষ দলে রয়েছে প্রথম ইনিংসের হ্যাটট্রিক-বয় হরভজন সিং। সুতরাং কোনো রকমের উত্তেজনাকর কোনো কিছু না করার চেষ্টা করে বরং স্থিতধী ইনিংসসূচনাই করতে চাইলেন হেইডেন-স্ল্যাটার, লাঞ্চে যাওয়ার আগে স্কোরবোর্ডে তাই ১২ ওভারে কোনো উইকেট না হারিয়ে মাত্র ২৪ রান উঠলো।
তবে এরপরই যেন হঠাৎ অস্ট্রেলিয়ান চেতনা মাথাচাড়া দিয়ে উঠলো, হঠাৎই আগ্রাসী হয়ে উঠলেন দুজন। ফলাফল, ৫০ ছুঁতে দুজন নিলেন আর মাত্র ৩.২ ওভার। ৭৪ রানে স্ল্যাটারের বিদায়ের পর নামলেন জাস্টিন ল্যাঙ্গার, তিনি নেমেই পাল্টা আক্রমণ শুরু করলেন। কিন্তু ২১ বলে ২৮ রান করে তিনিও আউট হয়ে গেলে এরপর কোত্থেকে কী হলো কে জানে, নিয়মিত বিরতিতে উইকেট পড়তে শুরু করলো। রীতিমতো ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়ে অস্ট্রেলিয়ার শক্তিশালী ব্যাটিং লাইনআপকে যেন এক তাসের ঘরে পরিণত করলেন দুইজন, সেই হরভজন সিং এবং শচীন টেন্ডুলকার। পুরো ম্যাচে এর আগে শচীনের অবদান ছিলো দুই ইনিংসেই ১০ রান করে মোট ২০ রান, সারা ম্যাচে ‘ফ্লপ হিরো’ জ্বলে ওঠার জন্য মোক্ষম সময় বেছে নিলেন এটাকেই। প্রথম ইনিংসের সেঞ্চুরিয়ান স্টিভ ওয়াহ মাত্র ২৪ রান করে ফিরে যাওয়ার পর একে একে পন্টিং, গিলক্রিস্ট এবং হেইডেনের বিদায়ের সঙ্গে সঙ্গেই আসলে নির্ধারিত হয়ে গিয়েছিলো ম্যাচের ভাগ্য, বাকিটা শুধুই আনুষ্ঠানিকতা রক্ষা।
![](https://assets.roar.media/Bangla/2017/06/95745-701x466.jpg)
দ্রাবিড়-লক্ষ্মণের অতিমানবীয় এক জুটিই অস্ট্রেলিয়াকে এক ঝটকায় বের করে দিয়েছিলো ম্যাচ থেকে। © গেটি ইমেজ
তবে প্রথম ইনিংসের মতই এই ইনিংসেও সামর্থ্যমতো চেষ্টা করেছিলেন গিলেস্পি-ক্যাসপ্রোভিচ-ম্যাকগ্রারা, তবে সেটাও বেশিদূর নিতে পারেনি তাদের। শেষ পর্যন্ত প্রথম ইনিংসে ফলোঅন করিয়েও ম্যাচশেষে ১৭১ রানের বিশাল পরাজয় বরণ করে নিতে হলো অস্ট্রেলিয়াকে। আর তাতেই ভারতীয় দলের প্রত্যেক সদস্যের মনে ঢুকে গেলো এক অফুরান আত্মবিশ্বাস, তারাও অসাধারণ কিছু করতে পারেন।
বর্তমানে প্রবল প্রতাপশালী ভারতের নতুন সূচনা হয়েছিলো সে ম্যাচ দিয়েই। একটা ম্যাচই যেখানে বদলে দিয়েছিলো গোটা একটা দেশের ক্রিকেট-গতিপথ, সেই ম্যাচটা যে কতটা গুরুত্বপূর্ণ, সেটা আর না বললেও চলছে! আর তবু যদি জানতে চান আরো একটু গভীরভাবে, তবে জিজ্ঞেস করে দেখতে পারেন হরভজন সিংকে। দুই ইনিংস মিলিয়ে ১৩ উইকেট নিয়ে সেই ম্যাচেই যে পুরো বিশ্বকে জানান দিয়েছিলেন নিজের আগমনের কথা!