Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

টাইমড আউটের যত কেচ্ছা…

এভাবেও আউট হওয়া যায়!

ক্রিকেট সম্পর্কে প্রাথমিক খোঁজখবর রাখেন যারা, তারা প্রত্যেকেই টাইমড আউটের নাম শুনেছেন নিশ্চিত। কিন্তু আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এই ঘটনা ঘটতে দেখেননি, অন্তত গত ৬ নভেম্বরের আগে তো অবশ্যই। বিশ্বকাপের আটত্রিশতম ম্যাচে শ্রীলঙ্কার ব্যাটসম্যান অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুসকে টাইমড আউট করেন বাংলাদেশের ফিল্ডাররা। বিশ্বকাপ তো বটেই, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের ইতিহাসে এই ঘটনা প্রথমবার ঘটলেও এর আগে স্বীকৃত ঘরোয়া ক্রিকেটে এই ধরনের আউটের ঘটনা ঘটেছে ছয়বার।

তবে সেই কেচ্ছায় যাওয়ার আগে জেনে নেওয়া যাক টাইমড আউট সম্পর্কিত ক্রিকেটীয় নীতিমালা।

টাইমড আউট হয়ে গেলেন অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুস; Image Source: Getty Images

কী বলছে ক্রিকেটের সংবিধান?

ক্রিকেটের আইনপ্রণেতা সংস্থা মেরিলিবোর্ন ক্রিকেট ক্লাব বা এমসিসির প্রণীত আইনের ৪০.১.১ অনুচ্ছেদ অনুসারে, একজন ব্যাটসম্যানের আউট অথবা রিটায়ার্ড হার্ট হওয়ার পরবর্তী ৩ মিনিটের মধ্যে নতুন ব্যাটসম্যানকে পরের বল মোকাবেলা করার জন্য প্রস্তুত হতে হবে। যদি তিনি কোনো কারণে তিন মিনিটের মধ্যে প্রস্তুত হতে না পারেন, সেক্ষেত্রে প্রতিপক্ষের অধিনায়কের আবেদনের প্রেক্ষিতে আম্পায়ার ঐ ব্যাটসম্যানকে টাইমড আউট হিসেবে ঘোষণা করবেন। এক্ষেত্রে ঐ উইকেটটা বোলারের নামের পাশে যুক্ত হবে না।

তবে এই বিশ্বকাপ উপলক্ষ্যে আইসিসির প্রণীত প্লেয়িং কন্ডিশন অনুসারে, একজন ব্যাটসম্যান আউট হওয়ার পর পরবর্তী ব্যাটসম্যানকে প্রস্তুত হতে ৩ মিনিটের পরিবর্তে ২ মিনিট সময় দেওয়া হয়েছে। বাকি সব ক্ষেত্রে অনুসরণ করা হচ্ছে এমসিসি প্রণীত নীতিমালাকেই।

আম্পায়ারদের বোঝানোর ব্যর্থ চেষ্টা করছেন ম্যাথুস; Image Source: Getty Images

বাংলাদেশের বিপক্ষে শ্রীলঙ্কার ইনিংসের ২৪.২ ওভারে সাকিব আল হাসানের বলে আউট হন সাদিরা সামারাবিক্রমা। নতুন ব্যাটসম্যান হিসেবে এরপর মাঠে আসার কথা অভিজ্ঞ অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুসের, মাঠে এসেছিলেনও তিনি। নির্ধারিত দুই মিনিট পেরিয়ে যেতে যখন আর ত্রিশ সেকেন্ড বাকি, তখন তাকে টাইমড আউটের ব্যাপারে সতর্ক করেন মাঠের আম্পায়ার রিচার্ড ইলিংওয়ার্থ। এরপর আনুমানিক ১ মিনিট ৫৫ সেকেন্ডের সময়ে ম্যাথুস গার্ড নিতে গেলে তার হেলমেটের স্ট্র্যাপ খুলে হাতে চলে আসে এবং তিনি বোলিং প্রান্তের আম্পায়ার মারাইস এরাসমাস বা স্কয়ার লেগ আম্পায়ার রিচার্ড ইলিংওয়ার্থকে কিছু না জানিয়েই দ্বাদশ খেলোয়াড়কে ডেকে হেলমেট পরিবর্তন করতে চান। সাধারণভাবে এমন ক্ষেত্রে মাঠের আম্পায়ারকে জানিয়েই ছোট্ট বিরতি নেন ব্যাটসম্যানরা, তবে সেই পথে হাঁটেননি অভিজ্ঞ ম্যাথুস। যতক্ষণে তিনি প্রস্তুত হলেন বল মোকাবেলা করতে, ততক্ষণে পেরিয়ে গেছে প্রায় আড়াই মিনিট। এরপরই একজন ফিল্ডারের পরামর্শে বাংলাদেশের অধিনায়ক সাকিব আল হাসান আম্পায়ারের নিকট আবেদন করেন। আম্পায়াররা এরপর সাকিবকে দুই বার জিজ্ঞেস করেন যে তিনি আবেদন প্রত্যাহার করতে চান কি না, তবে সাকিব অটল থাকেন তার সিদ্ধান্তে। স্বাভাবিকভাবেই নিয়মানুসারে আম্পায়াররা ম্যাথুসকে আউট ঘোষণা করেন।

হতাশ অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুস; Image Source: Getty Images

তবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে টাইমড আউটের ঘটনা এটাই প্রথম হলেও, ঘরোয়া ক্রিকেটে এমন উদাহরণ রয়েছে ছয়টি। তবে টাইমড আউট ব্যাপারটা যেমন অপ্রচলিত, ঘরোয়া ক্রিকেটের উদাহরণগুলোও বেশ চমকপ্রদ।

১. অ্যান্ড্রু জর্ডান (৩০ ডিসেম্বর, ১৯৮৭)

টাইমড আউটের প্রথম ঘটনাটি ঘটে দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে, ১৯৮৭-৮৮ মৌসুমে অ্যান্ড্রু জর্ডানের ইস্টার্ন প্রোভিন্সের মুখোমুখি হয়েছিল ট্রান্সভাল। পোর্ট এলিজাবেথে অনুষ্ঠিত ঐ ম্যাচের প্রথম দিন শেষে অপরাজিত ব্যাটসম্যান অ্যান্ড্রু জর্ডান পরদিন সকালে সময়মতো মাঠে পৌঁছাতে পারেননি। আগের রাতের প্রবল বৃষ্টির পর রাস্তার জলাবদ্ধতার কারণে তিনি আটকে গিয়েছিলেন, ফলাফল হিসেবে ক্রিকেট ইতিহাসের প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে টাইমড আউট হন তিনি।

২. হেমুলাল যাদব (২০ ডিসেম্বর, ১৯৯৭)

১৯৯৭-৯৮ মৌসুম, রঞ্জি ট্রফিতে মুখোমুখি উড়িষ্যা ও ত্রিপুরা। ত্রিপুরার প্রথম ইনিংসের ব্যাটিংয়ের সময়ে নবম উইকেটের পতন ঘটলে আম্পায়াররা পানি পানের বিরতির আহ্বান করেন।পানি পানের তিন মিনিটের বিরতি শেষ হওয়ার পরও ত্রিপুরার এগারো নম্বর ব্যাটসম্যান হেমুলাল যাদব মাঠে প্রবেশ করেননি, বরং বাউন্ডারির ঠিক বাইরে বসে তিনি আলাপ করছিলেন দলের ম্যানেজারের সাথে। বিরতির শেষে আম্পায়াররা যার যার জায়গা নেন, উড়িষ্যার ফিল্ডাররা যার যার পজিশনে চলে যান, তবুও হেমুলালকে মাঠে নামতে না দেখে ফিল্ডাররা আবেদন করেন। ফলস্বরূপ আম্পায়াররা হেমুলালকে ইতিহাসের দ্বিতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে টাইমড আউট ঘোষণা করেন।

৩. ভ্যাসবার্ট ড্রেকস (২৭ সেপ্টেম্বর ২০০২)

ভ্যাসবার্ট ড্রেকস; Image Source: Getty Images

দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে ঘটে টাইমড আউটের তৃতীয় ঘটনাটা। ইস্ট লন্ডনে বোর্ডারের বিপক্ষে মাঠে নেমেছিল ফ্রি স্টেট। ম্যাচটা যখন শুরু হয়, বোর্ডারের ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান ফাস্ট বোলার ভ্যাসবার্ট ড্রেকস তখনও দক্ষিণ আফ্রিকাতে পৌঁছাননি। ফ্লাইট-সংক্রান্ত জটিলতায় দক্ষিণ আফ্রিকাগামী বিমান ছাড়তে দেরি করেছিল। তাই ম্যাচে প্রথম দিনেই প্রথম ইনিংসে ব্যাট করা বোর্ডার দলের নয় উইকেট যখন পড়ে গেল, অনুপস্থিত ড্রেকসকে টাইমড আউট ঘোষণা করা ছাড়া উপায় ছিল না আম্পায়ারদের।

৪. অ্যান্ড্রু হ্যারিস (১৩ এপ্রিল ২০০৩)

ব্রিটেনের প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেট টুর্নামেন্ট ইউনাভির্সিটি সেন্টার অব ক্রিকেটিং এক্সিলেন্সের ম্যাচে ট্রেন্টব্রিজে মুখোমুখি হয় ডারহাম ও নটিংহ্যামশায়ার। প্রথম দিনেই প্রথম ইনিংসে অলআউট হয়ে যায় ডারহাম, এরপর ব্যাটিংয়ে নামে নটিংহ্যামশায়ার। তবে কুঁচকির চোটের কারণে ব্যাটিংয়ে নামার কথা ছিল না নটিংহ্যামশায়ারের পেসার অ্যান্ড্রু হ্যারিসের।

অ্যান্ড্রু হ্যারিস; Image Source: Getty Images

কিন্তু পরিস্থিতি বদলে যায় দলের নবম উইকেটের পতনের পর। ক্রিজে তখন ৯৪ রানে অপরাজিত ছিলেন ক্রিস রিড, তার সেঞ্চুরি পূর্ণ করার জন্যই মাঠে নামতে হয় হ্যারিসকে। কিন্তু চোটের কারণে খোঁড়াতে থাকা হ্যারিস যতক্ষণে মাঠে নামেন, ততক্ষণে ডারহামের খেলোয়াড়েরা আবেদন করেছেন আম্পায়ারের কাছে, আম্পায়ার আউট দিয়েও দিয়েছেন। মাঠের ভেতরে যখন পা রাখছেন হ্যারিস, প্রতিপক্ষের ফিল্ডাররা এবং দুই আম্পায়ার তখন মাঠ ছাড়ছেন। ফলাফল, টাইমড আউটের চতুর্থ উদাহরণ।

৫. রায়ান অস্টিন (৬ এপ্রিল ২০১৪)

রায়ান অস্টিন; Image Source: West Indies Cricket

আঞ্চলিক চার দিনের ক্রিকেট প্রতিযোগিতায় কিংসটাউনে মুখোমুখি হয়েছিল কম্বাইন্ড ক্যাম্পাস ও কলেজ (সিসি অ্যান্ড সি) এবং উইন্ডওয়ার্ড আইল্যান্ড। সিসি অ্যান্ড সি দলের দ্বিতীয় ইনিংসে এগারোতম ব্যাটসম্যান রায়ান অস্টিন সময়মতো ক্রিজে পৌঁছাতে ব্যর্থ হন, এবং টাইমড আউটের শিকার হন। তবে মজার বিষয়, বল হাতে দুই ইনিংস মিলিয়ে এগারোটি উইকেট নিয়ে ম্যাচসেরা হয়েছিলেন ঐ রায়ান অস্টিনই।

৬. চার্লস কুঞ্জে (৩ ডিসেম্বর ২০১৭)

জিম্বাবুয়ের প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেট টুর্নামেন্ট লোগান কাপের ম্যাচে ঘটে টাইমড আউটের ষষ্ঠ ঘটনাটি। মাটাবেলেল্যান্ড টাস্কার্স এবং মাউন্টেইনার্সের মধ্যে বুলাওয়োতে অনুষ্ঠিত এই ম্যাচের প্রথম দিনের টাইমড আউটের শিকার হন চার্লস কুঞ্জে। নির্ধারিত তিন মিনিটের মধ্যে মাঠে নামতে ব্যর্থ হওয়ায় প্রতিপক্ষের আবেদনের প্রেক্ষিতে আম্পায়ার আউট ঘোষণা করেন কুঞ্জেকে।

চার্লস কুঞ্জের আউট হওয়ার ঘটনা; Image Source: Twitter/ ICC

এর বাইরে ক্রিকেট ইতিহাসে আরো একটা ঘটনা পাওয়া যায়। ১৯১৯ সালের ২২ মে, টন্টনে কাউন্টি ক্রিকেটের ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছিল সমারসেট আর সাসেক্স। সাসেক্সের দ্বিতীয় ইনিংসের নবম উইকেট যখন পড়ে গেলো, দুই দলের রানে তখন সমতা। তবে সাসেক্সের এগারো নম্বর ব্যাটসম্যান হ্যারল্ড হেইগেটের ব্যাট করার কথা ছিল না ঐ ইনিংসে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের অনেকটা সময় ট্রেঞ্চে কাটানোর কারণে তিনি বাত রোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন, সেই ব্যথাটা ফিরে আসার কারণেই পুরো ম্যাচে ব্যাটিং বা বোলিং করেননি তিনি। স্বাভাবিকভাবেই নবম উইকেটের পতনের পরও তিনি মাঠে নামেননি, সমারসেটের একজন ফিল্ডারের আবেদনের প্রেক্ষিতে আম্পায়ারও তাকে আউট ঘোষণা করেন। ম্যাচটাও শেষ হয় টাইয়ে। এমসিসি প্রণীত আইন অনুসারে হেইগেট ‘আউট’ই, তবে উইজডেনের হিসেবে তিনি আউট নন, ‘অনুপস্থিত’। আউট নাকি অনুপস্থিত, এই বিতর্ক তাই শেষ হয়নি। আউট ধরে নিলে হেইগেটই হবেন ইতিহাসের প্রথম টাইমড আউট ব্যাটসম্যান।

তবে ঘরোয়া ক্রিকেটে টাইমড আউট হওয়ার দিক দিয়ে হেইগেট প্রথম কি না সেটা নিয়ে সংশয় থাকলেও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের প্রথম টাইমড আউট ব্যাটসম্যান হিসেবে অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুস নিজের নামটা অক্ষয় করে ফেলেছেন। তবে এই রেকর্ডে তিনি আদৌ যে নাম লেখাতে চাননি, সেটা তো পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহেই স্পষ্ট।

This article is in Bangla language. It is about the history of timed out, the most recent controversy in world cup cricket. Necessary links, sources and pictures are attached inside.

Necessary Sources:
1. https://www.espncricinfo.com/story/out-of-time-124532
2. https://ipl.ae/stories/series/cwc-cricket-world-cup/list-of-timed-out-dismissals-in-first-class-cricket-odi-history/

Featured Image: Getty Images

Related Articles