আন্তর্জাতিক ওয়ানডে ক্রিকেট খেলা ২,৫০৪ জন ক্রিকেটারের মধ্যে এখন পর্যন্ত বিশ্বকাপ ক্রিকেট খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছেন ১,০৫৭ জন ক্রিকেটার। এদের মধ্যে কমপক্ষে এক উইকেট শিকার করেছেন, এমন ক্রিকেটারের সংখ্যাও কম নয়। ৬০৯ জন ক্রিকেটার বিশ্বকাপে উইকেট শিকার করেছেন, যার মধ্যে শুধুমাত্র তিনজন বোলার পঞ্চাশের অধিক উইকেট শিকার করেছেন: গ্লেন ম্যাকগ্রা, মুত্তিয়া মুরালিধরন এবং ওয়াসিম আকরাম।
বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি উইকেট সংগ্রাহকদের তালিকায় পেসারদেরই আধিক্য বর্তমান। সেরা দশের মধ্যে মাত্র দুইজন স্পিনার, সেরা পাঁচে মাত্র একজন।
চলুন, জেনে আসা যাক বিশ্বকাপ ইতিহাসের সেরা পাঁচ বোলার সম্পর্কে।
গ্লেন ম্যাকগ্রা
ক্রিকেট ইতিহাসের সর্বকালের সেরা পেসারের তালিকা তৈরি করলে অস্ট্রেলিয়ার পেসার গ্লেন ম্যাকগ্রার নামটা উপরের দিকেই থাকবে। এই কিংবদন্তি পেসার অস্ট্রেলিয়ার হয়ে চারটি বিশ্বকাপ খেলেছেন। নিজের চার বিশ্বকাপের সবক’টি বিশ্বকাপে ফাইনাল খেলেছেন তিনি, যার মধ্যে তিনবার জয়ী দলের সদস্য ছিলেন ম্যাকগ্রা। ১৯৯৬ সালে নিজের প্রথম বিশ্বকাপে দলকে শিরোপা এনে দিতে না পারলেও পরবর্তী তিন আসরে দলের শিরোপা জয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন ম্যাকগ্রা।
গ্লেন ম্যাকগ্রা বিশ্বকাপে মোট ৩৯ ম্যাচ খেলে ১৮.১৯ বোলিং গড়ে এবং ২৭.৫ স্ট্রাইকরেটে ৭১ উইকেট শিকার করেছেন। বিশ্বকাপের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি ৪২টি মেইডেন ওভার বল করেছেন তিনি। রান দেওয়ার দিক থেকে বরাবরই মিতব্যয়ী থাকা এই পেসার ওভারপ্রতি রান দিয়েছেন মাত্র ৩.৯৬। বিশ্বকাপের ইতিহাসে সেরা বোলিং ফিগারও তার দখলে। নামিবিয়ার বিপক্ষে ২০০৩ সালের বিশ্বকাপে মাত্র ১৫ রানের বিনিময়ে সাত উইকেট শিকার করেছিলেন তিনি।
উপমহাদেশে অনুষ্ঠিত ১৯৯৬ সালের বিশ্বকাপে গ্লেন ম্যাকগ্রা সাত ম্যাচ খেলে ৪৩.০০ বোলিং গড়ে শিকার করেছিলেন মাত্র ছয় উইকেট। এর মধ্যে চার উইকেট শিকার করেছিলেন কোয়ার্টার ফাইনাল এবং সেমিফাইনালে। সেমিফাইনালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ৩০ রানের বিনিময়ে গুরুত্বপূর্ণ দু’টি উইকেট শিকার করে দলকে ফাইনালে উঠতে সাহায্য করেন তিনি। ফাইনালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে তিনি উইকেটশূন্য থাকলে অস্ট্রেলিয়াও রানার্সআপ হয়েই সন্তুষ্ট থাকে।
১৯৯৯ সালের বিশ্বকাপে দুর্দান্ত বোলিং করেছিলেন গ্লেন ম্যাকগ্রা। শেন ওয়ার্নের সাথে জুটি বেঁধে অস্ট্রেলিয়ার শিরোপা জয়ে বড় ভূমিকা পালন করেন তিনি। দশ ম্যাচে ২০.৩৮ বোলিং গড়ে ১৮ উইকেট তুলে নিয়ে তৃতীয় সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি হিসাবে আসর শেষ করেন। গ্রুপপর্বের শেষ ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে মাত্র ১৪ রানের বিনিময়ে পাঁচ উইকেট শিকার করে দলকে সুপার সিক্সে উঠতে সাহায্য করেন। পাকিস্তানের বিপক্ষে ফাইনালে নয় ওভার বল করে মাত্র ১৩ রানের বিনিময়ে দুই উইকেট শিকার করে দলকে শুরু থেকেই চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পথে রেখেছিলেন তিনি।
২০০৩ সালের বিশ্বকাপে ব্রেট লি, গ্লেন ম্যাকগ্রা এবং অ্যান্ডি বিকেলদের নিয়ে গড়া অস্ট্রেলিয়ার পেস অ্যাটাক অপ্রতিরোধ্য ছিল। আসরে ব্রেট লি ২২ উইকেট, ম্যাকগ্রা ২১ উইকেট এবং বিকেল ১৮ উইকেট শিকার করেছিলেন। ম্যাকগ্রা ১১ ম্যাচ খেলে ১৪.৭৬ বোলিং গড়ে ২১ উইকেট শিকার করেছিলেন। নামিবিয়ার বিপক্ষে গ্রুপপর্বের ম্যাচে ক্যারিয়ারসেরা এবং বিশ্বকাপের ইতিহাসে সেরা বোলিং করে মাত্র ১৫ রান খরচায় সাত উইকেট শিকার করেছিলেন। এছাড়া ফাইনালে ভারতের বিপক্ষে শচীন টেন্ডুলকার এবং মোহাম্মদ কাইফের উইকেটসহ মোট তিন উইকেট শিকার করেছিলেন।
২০০৭ সালের বিশ্বকাপেও অস্ট্রেলিয়ার বোলিং ডিপার্টমেন্ট দুর্দান্ত ছন্দে ছিল। গ্লেন ম্যাকগ্রা, শন টেইট এবং নাথান ব্র্যাকেনের পাশাপাশি স্পিনার ব্র্যাড হগও দুর্দান্ত বোলিং করেছিলেন। ম্যাকগ্রা ২৬ উইকেট, টেইট ২৩ উইকেট, হগ ২১ উইকেট এবং ব্র্যাকেন ১৬ উইকেট শিকার করেছিলেন। গ্লেন ম্যাকগ্রা ঐ আসরে কোনো ম্যাচে চার বা ততোধিক উইকেট শিকার না করলেও ধারাবাহিকভাবে দুর্দান্ত বোলিং করে গেছেন। ১১ ম্যাচের মধ্যে ছয় ম্যাচে তিনটি করে উইকেট শিকার করেছেন তিনি, যার ফলে আসরশেষে তার উইকেট সংখ্যা দাঁড়ায় ২৬টি। মাত্র ১৩.৭৩ বোলিং গড়ে এবং ১৮.৬ স্ট্রাইক রেটে তিনি এই উইকেট শিকার করেন।
মুত্তিয়া মুরালিধরন
মুত্তিয়া মুরালিধরন ১৯৯৬ সাল থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত মোট পাঁচটি বিশ্বকাপে শ্রীলঙ্কার হয়ে প্রতিনিধিত্ব করেন। তার খেলা পাঁচ বিশ্বকাপের মধ্যে শ্রীলঙ্কা তিনবার ফাইনাল খেলেছিল। এর মধ্যে ১৯৯৬ সালে বিশ্বকাপে তারা শিরোপা ঘরে তোলে। তিনি ৪০ ম্যাচের মধ্যে ৩৯ ইনিংসে বোলিং করে ১৯.৬৩ বোলিং গড়ে এবং ৩০.৩ স্ট্রাইকরেটে ৬৮ উইকেট শিকার করেছেন। ইনিংসে পাঁচ উইকেট শিকার না করলেও চারবার চার উইকেট শিকার করেছেন।
১৯৯৬ সালের বিশ্বকাপে মুরালিধরন ছয় ম্যাচ খেলে ৩০.৮৫ ব্যাটিং গড়ে সাত উইকেট শিকার করেছিলেন। মাত্র সাত উইকেট শিকার করেই আসরে শ্রীলঙ্কার হয়ে সবচেয়ে বেশি উইকেট শিকার করার রেকর্ড গড়েছেন তিনি। খুব বেশি উইকেট না পেলেও আসরজুড়ে মিতব্যয়ী বোলিং করেছিলেন তিনি। কোয়ার্টার ফাইনালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৩৭ রান খরচায় দুই উইকেট শিকার করেছিলেন, যা আসরে তার সেরা বোলিং ফিগার।
১৯৯৯ সালের বিশ্বকাপে শ্রীলঙ্কা গ্রুপপর্ব থেকে বাদ পড়ে যায়। ঐ আসরেও নিজের জাত চেনাতে পারেননি মুরালিধরন। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ২৫ রানের বিনিময়ে তিন উইকেট তুলে নিয়েছিলেন, তবে বাকি চার ম্যাচে মাত্র তিন উইকেট শিকার করেছিলেন। সব মিলিয়ে ‘৯৯ বিশ্বকাপে পাঁচ ম্যাচে ২৬.৩৩ বোলিং গড়ে ছয় উইকেট শিকার করেছিলেন তিনি।
২০০৩ সালের বিশ্বকাপে শ্রীলঙ্কা সেমিফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার কাছে পরাজিত হয়ে বিদায় নেয়। মুত্তিয়া মুরালিধরন আসরে দশ ম্যাচ খেলে ১৮.৭৬ বোলিং গড়ে ১৭ উইকেট শিকার করেছিলেন। কেনিয়ার বিপক্ষে ২৮ রান খরচায় চার উইকেট এবং বাংলাদেশ ও ভারতের বিপক্ষে তিনটি করে উইকেট শিকার করেছিলেন। দক্ষিণ আফ্রিকায় অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপ আসরে স্পিনারদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি উইকেট শিকার করেছিলেন তিনিই।
ওয়েস্ট ইন্ডিজে অনুষ্ঠিত ২০০৭ সালের বিশ্বকাপে শ্রীলঙ্কা ফাইনাল খেলে। তাদেরকে ফাইনালে ওঠাতে বড় ভূমিকা রাখেন মুরালি। সেমিফাইনালে নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে দুর্দান্ত বোলিং করে ৩১ রানের বিনিময়ে চার উইকেট শিকার করে দলকে ফাইনালে ওঠান তিনি। আসরজুড়েই তার ঘূর্ণিতে কুপোকাত হয়েছিল বিপক্ষ দলের ব্যাটসম্যানরা। এই আসরেও স্পিনারদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি উইকেট শিকার করেন তিনি। দশ ম্যাচে ১৫.২৬ বোলিং গড়ে তিনি ২৩ উইকেট শিকার করেছিলেন।
২০১১ সালে নিজের শেষ বিশ্বকাপেও দলকে ফাইনালে উঠালেও শিরোপা জেতাতে পারেননি মুরালিধরন। ভারতের কাছে হেরে রানার্সআপ হয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হয় শ্রীলঙ্কাকে। তিনি নিজের শেষ বিশ্বকাপ আসরে নয় ম্যাচ খেলে ১৯.৪০ বোলিং গড়ে ১৫ উইকেট শিকার করেন। এতে করে বিশ্বকাপে তার উইকেট সংখ্যা দাঁড়ায় ৬৮টি, যা স্পিনারদের মধ্যে বিশ্বকাপে দ্বিতীয় সর্বাধিক উইকেট শিকার করা ড্যানিয়েল ভেট্টোরির (৩৬) তুলনায় ৩২ উইকেট বেশি।
ওয়াসিম আকরাম
১৯৯২ সালের বিশ্বকাপের ফাইনালে ব্যাটে-বলে ওয়াসিম আকরামের অসাধারণ নৈপুণ্যে পাকিস্তান শিরোপা ঘরে তোলে। ফাইনালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথমে ব্যাট হাতে মাত্র ১৮ বলে ৩৩ রান করার পর বল হাতে তিন উইকেট শিকার করেছিলেন, যার মধ্যে অ্যালান লাম্ব এবং ক্রিস লুইসকে পরপর দুই বলে ফিরিয়ে ইংল্যান্ডকে ব্যাকফুটে ঠেলে দেন। ঐ আসরে সবচেয়ে বেশি ১৮ উইকেট শিকার করেছিলেন ওয়াসিম আকরাম।
ওয়াসিম আকরাম বিশ্বকাপে ৩৮ ম্যাচে ২৩.৮৩ বোলিং গড়ে ৫৫ উইকেট শিকার করেছিলেন। ইনিংসে পাঁচ উইকেট একবার এবং চার উইকেট দুইবার শিকার করেছিলেন।
তিনি প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ খেলেন ১৯৮৭ সালে। ঐ আসরে সাত ম্যাচে ৪২.১৪ বোলিং গড়ে সাত উইকেট শিকার করেছিলেন। এরপর ১৯৯২ সালের বিশ্বকাপে তার উইকেটের সংখ্যা ১৮টি। ইংল্যান্ডের ফাইনালে তিন উইকেট ছাড়াও নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে গ্রুপ পর্বের ম্যাচে ৩২ রানের বিনিময়ে চার উইকেট শিকার করেছিলেন।
১৯৯৬ সালের বিশ্বকাপে ওয়াসিম আকরামের সময়টা খুব একটা ভালো কাটেনি। গ্রুপপর্বের পাঁচ ম্যাচে মাত্র তিন উইকেট শিকার করেছিলেন। ১৯৯৯ সালে এরপরের আসরে পাকিস্তান রানার্সআপ হয়। ঐ আসরে পাকিস্তানের হয়ে তৃতীয় সর্বোচ্চ উইকেট সংগ্রাহক ছিলেন তিনি। দশ ম্যাচে ২২.৮০ বোলিং গড়ে ১৫ উইকেট শিকার করেছিলেন। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে গ্রুপপর্বের ম্যাচে ৪০ রানের বিনিময়ে চার উইকেট শিকার করে দলকে দশ রানের জয় পেতে সাহায্য করেছিলেন। ঐ আসরে এটিই তার সেরা বোলিং ফিগার।
ওয়াসিম আকরাম ২০০৩ সালে নিজের শেষ বিশ্বকাপ আসরে ছয় ম্যাচ খেলে পাঁচ ইনিংসে বল করে ১৬.৭৫ বোলিং গড়ে ১২ উইকেট শিকার করেছিলেন। গ্রুপপর্বের ম্যাচে নামিবিয়ার বিপক্ষে মাত্র ২৮ রানের বিনিময়ে পাঁচ উইকেট শিকার করেছিলেন তিনি, যা বিশ্বকাপের ইতিহাসে তার সেরা বোলিং ফিগার। ওয়াসিম আকরাম তার ক্যারিয়ারে বহু উইকেট শিকার করলেও সবচেয়ে বেশি স্মরণীয় হয় থাকবে ‘৯২ এর বিশ্বকাপের ফাইনালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে পরপর দুই বলে দুই উইকেট, যার কারণেই পাকিস্তান শেষ পর্যন্ত বিশ্বকাপ ঘরে তুলেছিল।
চামিন্দা ভাস
শ্রীলঙ্কার ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা পেসার চামিন্দা ভাস ১৯৯৬ সাল থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত মোট চারটি বিশ্বকাপে শ্রীলঙ্কার হয়ে প্রতিনিধিত্ব করেছেন, যার মধ্যে শ্রীলঙ্কা ১৯৯৬ সালে চ্যাম্পিয়ন এবং ২০০৭ সালে রানার্সআপ হয়ে আসর শেষ করে। তিনি বিশ্বকাপে মোট ৩১ ম্যাচ খেলে ২১.২২ বোলিং গড়ে ৪৯ উইকেট শিকার করেছিলেন। ইনিংসে পাঁচ উইকেট শিকার করেছিলেন একবার এবং চার উইকেট শিকার করেছেন একবার।
১৯৯৬ সালের বিশ্বকাপে ছয় ম্যাচে ৩২.১৬ বোলিং গড়ে ছয় উইকেট শিকার করেছিলেন তিনি, ওভারপ্রতি খরচ করেছিলেন মাত্র ৩.৯৩ রান। ১৯৯৯ সালের বিশ্বকাপে চামিন্দা ভাসের সময় খুব একটা ভালো কাটেনি। পাঁচ ম্যাচে ৩২.৮৫ বোলিং গড়ে এবং ৪.৮৯ ইকোনমি রেইটে শিকার করেছিলেন সাত উইকেট।
চামিন্দা ভাস ২০০৩ সালের বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ উইকেটসংগ্রাহক ছিলেন। তিনি বাংলাদেশের বিপক্ষে গ্রুপ পর্বের ম্যাচে ইনিংসের প্রথম ওভারের প্রথম তিন বলে হ্যাটট্রিক করার পাশাপাশি প্রথম ওভারে চার উইকেট শিকার করেছিলেন। ম্যাচে তিনি ছয় উইকেট শিকার করেছিলেন ২৫ রান খরচায়। এরপরের তিন ম্যাচেও দুর্দান্ত বোলিং করেছিলেন তিনি। কেনিয়া এবং কানাডার বিপক্ষে তিনটি করে উইকেট শিকার করার পর ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে চার উইকেট শিকার করেছিলেন। শ্রীলঙ্কা টুর্নামেন্ট থেকে সেমিফাইনালে বিদায় নিলেও চামিন্দা ভাস দশ ম্যাচে ১৪.৩৯ বোলিং গড়ে ২৩ উইকেট শিকার করে আসরের সেরা বোলার ছিলেন।
শ্রীলঙ্কা ২০০৭ সালের বিশ্বকাপ ফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার কাছে পরাজিত হয়ে রানার্সআপ হয়েই সন্তুষ্ট থাকে। চামিন্দা ভাস এই আসরের মধ্য দিয়ে নিজের বিশ্বকাপ ক্যারিয়ারের ইতি টেনেছিলেন। তিনি এই বিশ্বকাপে দশ ম্যাচে ২২.০০ বোলিং গড়ে এবং মাত্র ৩.৬৮ ইকোনমি রেটে ১৩ উইকেট শিকার করেছিলেন। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সুপার এইটে ৩৩ রানের বিনিময়ে তিন উইকেট শিকার করেছিলেন, যা ঐ আসরে তার সেরা বোলিং ফিগার ছিল।
জহির খান
ভারতের বাঁহাতি পেসার জহির খান তিনটি বিশ্বকাপ খেলেছেন, যার মধ্যে ভারত ২০১১ সালে চ্যাম্পিয়ন এবং ২০০৩ সালে রানার্সআপ হয়ে টুর্নামেন্ট শেষ করেছিলেন। এই দুই আসরেই দুর্দান্ত বোলিং করেছিলেন জহির খান। তিনি বিশ্বকাপে ভারতের হয়ে সবচেয়ে বেশি উইকেট শিকার করেছেন; মোট ২৩ ম্যাচে ২০.২২ বোলিং গড়ে তার উইকেট সংখ্যা ৪৪টি।
জহির খান ২০০৩ সালের বিশ্বকাপে নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে সুপার সিক্সের ম্যাচে ৪২ রান খরচায় চার উইকেট শিকার করে দলকে গুরুত্বপূর্ণ জয় এনে দিয়েছিলেন। পুরো টুর্নামেন্টজুড়ে দুর্দান্ত বোলিং করে ভারতের সর্বোচ্চ উইকেটসংগ্রাহক ছিলেন তিনি। ১১ ম্যাচে ২০.৭৭ বোলিং গড়ে ১৮ উইকেট শিকার করেছিলেন তিনি। ২০০৭ সালের বিশ্বকাপে ভারত গ্রুপপর্ব থেকে বিদায় নেয়। জহির খান গ্রুপপর্বের তিন ম্যাচে ২৪.৪০ বোলিং গড়ে পাঁচ উইকেট শিকার করেছিলেন।
১৯৮৩ সালের পর ভারত দ্বিতীয়বারের মতো বিশ্বকাপ ঘরে তোলে ২০১১ সালে। ভারতের শিরোপা জয়ে বড় ভূমিকা পালন করেছিলেন জহির খান। টুর্নামেন্টে শহীদ আফ্রিদির সাথে যৌথভাবে সর্বোচ্চ উইকেটসংগ্রাহক ছিলেন তিনি। নয় ম্যাচে ১৮.৭৬ বোলিং গড়ে এবং ২৩.২ স্ট্রাইকরেটে তিনি ২১ উইকেট শিকার করেছিলেন। নয় ম্যাচের সবক’টিতেই তিনি উইকেট শিকার করেছিলেন, চারবার তিনটি করে এবং চারবার দু’টি করে উইকেট নিয়েছিলেন।
বিশ্বকাপ ক্রিকেটের ইতিহাসে সর্বোচ্চ উইকেট সংগ্রাহক হিসাবে এই পাঁচজনের নাম আরও কয়েক বিশ্বকাপে থেকে যেতে পারে। নিউ জিল্যান্ডের টিম সাউদি এবং দক্ষিণ আফ্রিকার ইমরান তাহিরের সুযোগ রয়েছে এই তালিকা রদবদল করার। সাউদির বিশ্বকাপে উইকেট সংখ্যা ৩৩টি, এবং তাহিরের ২৯টি। ইমরান তাহিরের এটি শেষ বিশ্বকাপ হলেও ৩০ বছর বয়সী টিম সাউদির সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আরও কয়েক বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ করতে পারবেন। তিনি সেরা পাঁচে জায়গা করে নিতে পারবেন কি না, সেটা সময়ই বলে দেবে।