‘প্রথম দেখায় প্রেম’ বাক্যটিকে বেশ ক্লিশে বললে আগুয়েরো বাদ সাধতে পারেন। সিটিজেনদের ইতিহাদের সাথে যে আগুয়েরোর প্রেম প্রথম দেখাতেই! বিশ্বের সবচেয়ে প্রতিযোগিতামূলক লিগে খেলতে ইংল্যান্ডে পা রেখেছিলেন ২০১১ সালে। যেখানে হুট করে আসা নতুন খেলোয়াড়দের খাপ খাইয়ে নিতে মাস কিংবা বছর পেরিয়ে যায়, সেখানে আগুয়েরোর লেগেছিল মোটে ৩০ মিনিট। নাইজেল ডি জংয়ের বদলি নেমে ৩০ মিনিটের মধ্যে জোড়া গোল করেই ক্ষান্ত হননি ‘কুন’, ডেভিড সিলভাকে দিয়ে করিয়েছিলেন আরেকটি গোলও। সব সংশয় সেদিন কর্পূরের মতো উড়িয়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু নিজের কল্পনাতেও কি আগুয়েরো এঁকে রেখেছিলেন, বিদায়বেলায় তার স্থান হবে কত উচুঁতে?
মার্টিন টাইলরকে চিনে থাকবেন অনেকেই। ভদ্রলোক প্রিমিয়ার লিগের বেশ নামকরা ধারাভাষ্যকার। আগুয়েরোর শেষ মুহূর্তের গোলে সিটিজেনদের যখন প্রথম প্রিমিয়ার লিগ শিরোপা নিশ্চিত হলো, মার্টিন টাইলর বলে উঠলেন,
“Aguerooooo! I swear You’ll never see anything like this ever again!”
নিজের প্রথম মৌসুমেই সিটির ইতিহাসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ গোলটি সেদিন করেছিলেন আগুয়েরো। পারতপক্ষে পুরো মৌসুমের শেষ শটে নগর প্রতিদ্বন্দ্বীদের বুক ভেঙে নিশ্চিত করেছিলেন প্রিমিয়ার লিগ। সেই গোলের পর আগুয়েরো যদি বাকিটা সময় সিটিজেনদের হয়ে আর একটিও গোল না করতেন, তবু সেই প্রথম দেখায় ভালোবাসায় মরচে পড়ত না। কিন্তু আগুয়েরো ভেবে রেখেছিলেন অন্য কিছু। কুনের জন্য তা ছিল সবেমাত্র শুরু।
প্রিমিয়ার লিগে খেলা রথী-মহারথী স্ট্রাইকারদের সংখ্যা নেহায়েত কম নয়, তবে কিংবদন্তির ছাঁকনিতে ছাকলে পাওয়া যাবে অল্প কিছু নামই। অবিসংবাদিতভাবেই অ্যালান শিয়েরার এবং অঁরির নামের পাশাপাশি তর্কসাপেক্ষে আসতে পারে ওয়েইন রুনি, ফন পার্সি, মাইকেল ওয়েন, দ্রগবা, কিংবা নিস্টলরয়দের নাম। ইতিহাদে পা রাখার আগে এই ছোট্ট তালিকায় ঢুকতে পারাটাও হয়তো ছিল আগুয়েরোর কাছে স্বপ্নের মতো। তবে আগুয়েরো শুধু সেই ছোট্ট তালিকাতেই ঢোকেননি, শিয়েরার আর অঁরিকে ছোঁয়ার তোড়জোড়ও শুরু করে দিয়েছিলেন, যদিও ইনজুরি প্রায়ই তাতে বাদ সাধত। তবে ইনজুরি আর প্রতিভার লড়াই শেষেও আগুয়েরো তর্কের উর্ধ্বে গত এক দশকের সেরা প্রিমিয়ার লিগ খেলোয়াড়। গত এক দশকে প্রিমিয়ার লিগে আগুয়েরো গোল করেছেন সর্বোচ্চ ১৮৪টি, তাও মাত্র ২৭৫ ম্যাচে। ম্যাচপ্রতি কিংবা মিনিটপ্রতি গোল – সবকিছুতেই প্রথম স্থানটি কুনের দখলে।
ইনজুরির কথাও এলো, কারণ গত এক দশকে ৩০ ম্যাচের বেশি খেলতে পেরেছেন মোটে ৪ মৌসুমে। নতুবা এত বাধা সত্ত্বেও প্রিমিয়ার লিগে এক ক্লাবের হয়ে সর্বোচ্চ গোল করার রেকর্ড আগুয়েরোরই দখলে। তাও নাটকীয়ভাবে নিজের খেলা শেষ প্রিমিয়ার লিগ ম্যাচে এভারটনের সাথে জোড়া গোল (১৮৪ গোল) করে পেছনে ফেলেছেন ওয়েইন রুনিকে (১৮৩ গোল)। এবারসহ প্রিমিয়ার লিগ জিতলেন ৫ বার, সর্বোচ্চ হ্যাটট্রিকের মুকুটটাও তারই দখলে। এছাড়া আরো নানান রেকর্ড তো আছেই। চলুন, চোখ বুলিয়ে আসা যাক আগুয়েরোর সেই ইনজুরিপ্রবণ ক্যারিয়ারের রেকর্ডবুকে।
থিয়েরি অঁরি আর্সেনাল ছেড়েছিলেন ২০১২ সালে। আগেই বলা হয়েছে, ১৯৯২-পরবর্তী সময়ে ‘প্রিমিয়ার লিগ’ নামকরণের পর থেকে লিগে অবিসংবাদিতভাবে সেরা দুই খেলোয়াড়ের একজন অঁরি, আরেকজন অ্যালান শিয়েরার। দুইজন মিলে বগলদাবা করেছিলেন ৭টি প্রিমিয়ার লিগ গোল্ডেন বুট এবং ১৯টি হ্যাটট্রিকসহ ৪৩৪ গোল। রেকর্ড ভাঙাগড়ার খেলায় মত্ত এই দুইজন নির্ধারণ করেছিলেন প্রিমিয়ার লিগের সেরা খেলোয়াড়ের বেঞ্চমার্ক।
একমাত্র খেলোয়াড় হিসেবে টানা পাঁচ মৌসুমে ২০-এর বেশি গোল করেছিলেন অঁরি। অন্যদিকে, একমাত্র খেলোয়াড় হিসেবে টানা তিন মৌসুম ত্রিশের বেশি গোল করেছেন শিয়েরার। প্রিমিয়ার লিগের প্রথম ফুটবলার হিসেবে টানা তিন মৌসুমে গোল্ডেন বুট জিতেছিলেন শিয়েরার, এক দশক পর সেই রেকর্ড ছুঁয়েছিলেন অঁরি। প্রথম ১০০ গোল পেতে অঁরি সময় নিয়েছিলেন ১৬০ ম্যাচ, সেখানে শিয়েরারের লেগেছিল আরো অনেক কম – মাত্র ১২৪টি ম্যাচ। আরো সন্ধানী চোখে তাকালেও দেখা যায় একই মাপে পাল্লা দিয়েছেন এই দুই তারকা। প্রিমিয়ার লিগে প্রথম ১০০ গোলে অবদান রাখার ক্ষেত্রে এগিয়ে শিয়েরার, ৭৯ গোল আর ২১ অ্যাসিস্ট মিলে ১০০ গোলে তিনি অবদান রেখেছিলেন ১০০ ম্যাচে, অন্যদিকে অঁরির ৭১ গোল আর ২৯ এসিস্ট এসেছিল ১২১তম ম্যাচে এসে। তাদের লড়াইটা ছিল সেয়ানে সেয়ানে, কেউ যেন কাউকে ছেড়ে কথা বলতে চাননি।
এই মাপের দুইজন ফুটবলারের লেগ্যাসি ছোঁয়াও অসম্ভবের পর্যায়ে ছিল একটা সময়। তবে ‘কুন’ সেটা মানতে চাননি, নিজের ইনজুরিবিক্ষুব্ধ ক্যারিয়ারে ফর্মের ওঠানামাও দেখতে হয়েছে অনেক, হয়েছেন অনেক গল্পের সাক্ষী, কিছু গল্পের হয়ে উঠেছেন নায়কও। এসবের মাঝেই ঠিক এই দু’জনের মাঝামাঝি অবস্থানে রয়েছেন আগুয়েরো। ১১৮তম ম্যাচে এসে আগুয়েরো করেছিলেন ৭৭ গোল আর ২৩ অ্যাসিস্ট।
গত এক দশকে গোলমুখে অনেকের সাম্রাজ্য গড়েছে-ভেঙ্গেছে। নিস্টলরয়, তোরেস, সুয়ারেজ, ভার্ডি কিংবা দ্রগবারা জ্বলে উঠেছেন, আলো দেখিয়েছেন, আবার নিভে গেছেন কিংবা ছেড়ে গেছেন প্রিমিয়ার লিগ। তবে আগুয়েরো গত এক দশক পুরোটা জুড়েই ছিলেন সবচেয়ে উজ্জ্বল। একটা সময় হয়তো ছোটখাটো গড়নের আগুয়েরোর জন্য অঁরি-শিয়েরারের সেই লেগ্যাসি ছিল আকাশস্পর্শী দূরত্বে। কিন্তু সেই আগুয়েরোই যে প্রিমিয়ার লিগে এত বড় নক্ষত্র হয়ে উঠবেন, কে ভেবেছিল সেদিন! গোলমুখে ভয়ঙ্কর এই স্ট্রাইকারের এখন অঁরির থেকে বেশি গোল, শিয়েরারের চেয়েও বেশি হ্যাটট্রিক, এবং অবিশ্বাস্যভাবে দুইজনের চেয়েও ম্যাচপ্রতি গোলের হারও বেশি।
অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ থেকে ইতিহাদে আগুয়েরোর আগমন ২০১১ সালে। তার আগে মাত্র ১৭ বছর বয়সেই আর্জেন্টিনার ইন্দিপেন্দিয়েন্তে ক্লাবের হয়ে আলো কেড়েছিলেন। সেখান থেকে অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদে ৫ বছর কাটিয়ে সিটিতে আগমন এই আর্জেন্টাইন বরপুত্রের। তখন প্রিমিয়ার লিগে সিটিজেনদের নগর প্রতিদ্বন্দ্বী ইউনাইটেডের জয়জয়কার। তার আগমনের উদ্দেশ্যই ছিল সেই জয়জয়কারের সমাপ্তি ঘটানো।
সেই উদ্দেশ্যটা ষোল আনা পূর্ণ করলেন আগুয়েরো। নিজের প্রথম মৌসুমেই ২৩ গোল করে সিটিজেনদের ৫২ বছর পর লিগ শিরোপার স্বাদ পাইয়ে দিলেন, যেটি কি না প্রিমিয়ার লিগ নামকরণের পর ম্যানচেস্টার সিটির প্রথম লিগ শিরোপা। সেই থেকে যে সিটিজেনদের উত্থান, তার সাথে পরিচিত একটি নাম জড়িয়ে ছিলো প্রতিবারই – সার্জিও কুন আগুয়েরো। ডাগআউটে একে একে এসেছিলেন মানচিনি, কিড, পেলেগ্রিনি, গার্দিওলা; সবার ভরসার পাত্র হয়ে সবসময় ছিলেন কুন। প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনে নিজের কমফোর্ট জোনের বাইরেও খেলেছেন, তাতেও গোলক্ষুধা এতটুকু কমেনি তার। টার্গেটম্যান জেকো-নেগ্রেদোদের সাথেও খেলেছিলেন নাম্বার টেন রোলে। আবার প্রথাগত বক্স খেলোয়াড় জেসুসের সাথেও জমিয়ে তুলেছিলেন রসায়ন। প্রতিবারই নতুন সব রোলে দারুণ মানিয়ে নিয়েছেন, নিজের বুটে মরচে পড়তে দেননি এতটুকুও।
২০১৩-১৪ মৌসুমে সিটিজেনদের দ্বিতীয় লিগ শিরোপা জয়ে আগুয়েরো করেছিলেন ১৭ গোল ও ৯ অ্যাসিস্ট। অবশ্য সেবার খেলতেই পেরেছিলেন মোটে ২৩ ম্যাচ, যার ১৫টিতেই বদলি হিসেবে নেমে যেতে হয়। প্রায় ৯০ মিনিটে গড়ে একটি করে গোল করা আগুয়েরোকে সেবার কোনো মানুষ থামাতে পারেনি, পেরেছিল ইনজুরি। ৩১ গোল করে সেবার গোল্ডেন বুট জেতা সুয়ারেজ তাই অবশ্য ধন্যবাদ জানাতে পারেন আগুয়েরোর কাফ মাসল ও হ্যামস্ট্রিংয়ের ইনজুরিকে।
ইনজুরি অবশ্য বরাবরই ছিল আগুয়েরোর ‘প্রিয় বন্ধু’। পরের মৌসুমে এই ইনজুরিকে সঙ্গী করেই করেছিলেন ২৪ গোল। তাতে প্রথম ও শেষবারের মতো জিতে নিয়েছিলেন প্রিমিয়ার লিগ গোল্ডেন বুটও। পরবর্তী মৌসুমেও আগুয়েরোর বুট থেকে আসে ২৩ গোল, তবে আর গোল্ডেন বুট মেলেনি।
প্রিমিয়ার লিগের এক্সক্লুসিভ একটা ক্লাবে আগুয়েরো ঢুকে পড়েন আরও এক মৌসুম পর, নিউক্যাসলের বিপক্ষে এক ম্যাচেই ৫ গোল করে। ২৩ মিনিটের মধ্যে সেই ৫ গোল প্রিমিয়ার লিগের সবচেয়ে দ্রুততম। ৫ গোলের ক্লাবে আগুয়েরো যোগ দিয়েছিলেন শিয়েরার, ডেফো, অ্যান্ডি কোল ও দিমিতর বারবেতভদের সাথে। টানা তিন মৌসুমে ২০ বা ততোধিক গোল করে সেই মৌসুম শেষ করেন আগুয়েরো। সেখানেও কিংবদন্তিদের পাশে জায়গা হলো তার।
পরের মৌসুমেই ডাগআউটে আগমন পেপ গার্দিওলার। তার অধীনে প্রথম মৌসুমে কুন করেন ২০ গোল। কিন্তু গার্দিওলার চাওয়া ছিল আরো বেশি। বল না পায়ে রেখেও যে মাঠে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করা যায়, আগুয়েরোকে তা শিখিয়েছিলেন গার্দিওলা। ফলস্বরূপ, পরবর্তী মৌসুমে নিজেকে আরো শাণিত করেন আগুয়েরো। প্রতি ৯০ মিনিটে আগুয়েরোর স্প্রিন্ট বেড়ে যায় ৪০%। এমনকি প্রতি ম্যাচে গড় দূরত্ব অতিক্রমণের পরিমাণও বেড়ে যায় প্রায় এক কিলোমিটার। আরো ক্ষুধার্ত ও শাণিত আগুয়েরো সে মৌসুম শেষ করেন ২১ গোল আর ৬ অ্যাসিস্ট নিয়ে।
রোটেশন সিস্টেমে আগ্রহী গার্দিওলা সেবার আগুয়েরোকে খেলিয়েছিলেন মোটে ২৬ ম্যাচে। তাতেও অবশ্য অঁরির পর প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে টানা পাঁচ মৌসুমে প্রিমিয়ার লিগে ২০ বা ততোধিক গোল করতে বেগ পেতে হয়নি আগুয়েরোর।
সেই রেকর্ড একান্তই নিজের করার সুযোগ ছিল পরের মৌসুমেই, কিন্তু টানা ছয় সিজন আর হলো না কুনের, আবার হানা দিল ইনজুরি। বড়সড় ইনজুরির আঘাতে সেবার পুরো মৌসুম জুড়ে খেলেছিলেন মাত্র ১৭ ম্যাচ, তাতেও ১৬ গোল! তাই মৌসুমশেষে চার গোলের আক্ষেপ নিয়ে অঁরির সাথে রেকর্ডটি ভাগাভাগি করেই সন্তুষ্ট থাকতে হলো আগুয়েরোকে।
অন্যদিকে, চ্যাম্পিয়নস লিগে আগুয়েরোর পরিসংখ্যান মেসি-রোনালদো-লেওয়ানডস্কিদের মতো না হলেও বেশ চলনসই। দলগতভাবে প্রতিবারই সিটিজেনদের মুখ থুবড়ে পড়ার কারণে হয়তো তেমন বেশি ম্যাচ খেলার সুযোগও পাননি কুন, কিংবা বলা যেতে পারে দলগতভাবে ব্যর্থতার কারণেই হয়তো সিটিজেনদের বারবার মুখ থুবড়ে পড়তে হয়েছে। তবুও ৫৬ ম্যাচে ৩৬ গোল চ্যাম্পিয়নস লিগের জন্য বেশ ঈর্ষনীয় পরিসংখ্যান। তবে সিটিজেনদের হয়ে একমাত্র অপূর্ণতা চ্যাম্পিয়নস লিগ শিরোপা কি এইবার তুলে যেতে পারবেন কি না, সে উত্তর পাওয়া যাবে ৩০ মে’র ফাইনালের পরই। হয়তো কুনের বিদায়বেলায় তার সতীর্থরাও মনেপ্রাণে চাচ্ছেন এই বিদায়ী উপহার দিতে। পেপ গার্দিওলা তো বলেই দিয়েছেন,
“We cannot replace him… we cannot!”
এ তো গেল পূর্বসূরিদের সাথে তুলনা। সমসাময়িকদের সাথে? সেক্ষেত্রে আগুয়েরো ধারেকাছেও ঘেষতে দেননি কাউকে। গত চার মৌসুমের হিসাব করলেও বুড়িয়ে যাওয়া আগুয়েরো সবার উপরেই থাকবেন। আগুয়েরোর প্রতি ৯০ মিনিটে গোল-গড় যেখানে ০.৯০, সেখানে নিকট প্রতিদ্বন্দ্বী হ্যারি কেইনের গড় ০.৮২। শটকে গোলে রূপান্তরের ক্ষেত্রে ১৮.৯% নিয়ে অবশ্য আগুয়েরো দ্বিতীয় স্থানে। তার সামনে রয়েছেন ফরাসি স্ট্রাইকার অলিভিয়ের জিরু। এক্সপেক্টেড গোলের ক্ষেত্রে আবার এক নাম্বারে কুন। ম্যাচপ্রতি কুনের এক্সপেক্টেড গোল ০.৮৪, অন্যদিকে পরবর্তী স্থানে থাকা কেইনের ০.৬৯। হ্যাটট্রিকের দিক দিয়েও আগুয়েরো সবার উপরে। শিয়েরারের ১১ হ্যাটট্রিকের রেকর্ড ভাঙা আগুয়েরোর কাছাকাছি আছেন সমসাময়িকদের মধ্যে একমাত্র হ্যারি কেইন (৮)।
তবে পরিসংখ্যান আসলে কুনের মাহাত্ম্য পুরোপুরি বুঝাতে ব্যর্থ। ইনজুরির শাপ সবসময় না লেগে থাকলে হয়তো গোল করার সামর্থ্যে মেসি রোনালদোদের কাছাকাছিই থাকতেন তিনি। বড় ক্লাবের বিপক্ষে সবসময় নিজেই দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছেন আগুয়েরো, যার প্রমাণ প্রিমিয়ার লিগের টপ সিক্সের বিপক্ষে সবচেয়ে বেশি গোল। ৫৪ গোল নিয়ে প্রথমে থাকা আগুয়েরোর পরবর্তী স্থানটি জেমি ভার্ডির, তার ঝুলিতে রয়েছে ৩৭টি গোল। বলতে গেলে অনেকাংশেই গত এক দশক ধরে সিটির গার্ডিয়ান অ্যাঞ্জেল হিসেবেই ছিল কুনের পদচারণা। তাই তো বিদায়বেলায় ডেভিড সিলভা ও ভিনসেন্ট কোম্পানির পাশে স্ট্যাচু হিসেবে আগুয়েরোকেও রাখার ঘোষণা দেয় সিটি কতৃপক্ষ।
যাদের সাথে আগুয়েরোর তুলনা হয় সবচেয়ে বেশি, তারাই বা আগুয়েরোকে কেমন চোখে দেখেন? অঁরির কাছে গত এক দশকে প্রিমিয়ার লিগের একমাত্র ‘ওয়ার্ল্ড ক্লাস’ স্ট্রাইকার আগুয়েরো। শিয়েরার তো আরো এক কাঠি সরেস, শিয়েরারের মতে আগুয়েরোই প্রিমিয়ার লিগের সর্বকালের সেরা স্ট্রাইকার।
“৩২ বছর বয়সে এসেও সে বাম পা-ডান পা দিয়ে গোল করে বেড়াচ্ছে। এই বয়সেও এত ধারাবাহিকতার কারণেই সে আমার কাছে অঁরির চেয়েও উপরে।”
ডেইলি মেইলকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে আগুয়েরোকে নিয়ে এমন মন্তব্য করেন শিয়েরার। শুধু শিয়েরার কিংবা অঁরি নন, প্রতিপক্ষ কোচ কিংবা খেলোয়াড় সবার কাছেই আগুয়েরো ‘ওয়ার্ল্ড ক্লাস’। আর এই সম্মানটুকু যে আগুয়েরোর প্রাপ্য, সেটা তো আর বলার অপেক্ষা রাখে না। সাবেক ইংলিশ ফুটবলার মাইকাহ রিচার্ডস যেমন একটা গল্প বললেন,
“ট্রেইনিংয়ে আমি এই গল্পটা অনেকবার বলেছি। যখন সে প্রথম প্রথম এলো, আমি ভাবছিলাম, এ কাকে সাইন করালাম আমরা! ভালো করে ট্রেইনিং করে না, আলসে। অথচ যেই না সে মাঠে নামলো সোয়ানসির বিপক্ষে, ডালভাতের মতো দুটো গোল করে বসলো!”
শেখ মনসুর যুগে টাকাকড়ি দিয়ে বেশ ভারি দল সাজিয়েছিল ম্যানচেস্টার সিটি, তা অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। সেই ভারি দলের প্রথম তারকা বলা যায় সার্জিও আগুয়েরোকেই। যে তারার ঔজ্জ্বল্য সবাইকে ছাড়িয়ে প্রিমিয়ার লিগের আকাশেও জ্বলেছে আপন মহিমায়, যেখানে আলো ছড়াচ্ছেন শিয়েয়ার-অঁরি-রুনির মতো কিংবদন্তিরাও। সে আলো যে অনন্তকাল ধরে ছড়াবে, তাতে বোধ করি আপত্তি জানানোর কেউ নেই।