Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

আন্তর্জাতিক শিরোপা-বন্ধ্যাত্ব ঘুচবে কি মেসির?

সময় গড়াচ্ছে। আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে পার করে ফেলেছেন ১৪টি বছর। খেলেছেন ৮টি মেজর টুর্নামেন্ট। কিন্তু সবগুলোর গল্পই এক, ফিরেছেন রিক্ত হাতে। বলছিলাম সময়ের অন্যতম সেরা খেলোয়াড় লিওনেল মেসির কথা। এই ক্ষুদে জাদুকরের সাথে আন্তর্জাতিক শিরোপার লুকোচুরি কি স্রেফ ভাগ্যেরই লীলাখেলা, নাকি আলবিসেলেস্তেদের জার্সি গায়ে মেসির গড়পড়তা মানের পারফরমেন্স? চলতি কোপা আমেরিকাতে মাঠে নেমেছেন ৩২ বছর বয়সী লিওনেল মেসি। কিন্তু আন্তর্জাতিক শিরোপার ভাগ্য যেন মেসির ক্ষেত্রে হচ্ছে ট্রায়াঙ্গল মুভির সময়ের লুপের মত।

প্রতিটি টুর্নামেন্ট শুরুর আগে বড় ধরনের আশা জাগিয়ে শেষ পর্যন্ত তা হতাশায় রূপান্তর করা মেসি ও আর্জেন্টিনার জন্য নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। ২০০৫ সালে আর্জেন্টিনার হয়ে অনূর্ধ্ব-২০ বিশ্বকাপ জিতে স্বপ্নের মতোই আর্জেন্টিনার হয়ে প্রতিনিধিত্ব করা শুরু করেছিলেন তিনি। তিন বছর পর জেতেন বেইজিং অলিম্পিক স্বর্ণ। কিন্তু সুখস্মৃতির সমাপ্তি সেখানেই। বড় টুর্নামেন্টে এসে খেই হারিয়ে ফেলা মেসির সৌভাগ্য হয়নি একটিও আন্তর্জাতিক শিরোপা জেতার।

আর্জেন্টিনার সর্বশেষ সুখস্মৃতি ১৯৯৩ সালের কোপা আমেরিকা; Image Source : BBC

‘আমাকে ঘুরে দাঁড়াতে হবে এবং আবার চেষ্টা করতে হবে। এটা কোনো ব্যাপার না, আমি কতবার মুখ থুবড়ে পড়লাম। ঘুরে দাঁড়ানোটাই আসল শক্তি। এবং পরবর্তী প্রজন্মের জন্য এটি একটি ভালো বার্তাও বহন করে। আমি আর্জেন্টিনার হয়ে কোনো শিরোপা জিতেই অবসরে যেতে চাই।’

কোপা আমেরিকা শুরু হওয়ার আগে নিজের লক্ষ্যের কথা এভাবেই জানিয়েছিলেন মেসি। মেসি নিজেও জানেন, ব্রাজিল কোপা আমেরিকা শিরোপা জেতার জন্য অলৌকিক কিছুই করতে হবে পড়তি ফর্ম আর পালাবদলের ভেতর দিয়ে যাওয়া আর্জেন্টিনাকে।

বিশ্বকাপে ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে ম্যাচের আগে চিন্তিত মেসি; Image Source : Getty Images

ইতঃমধ্যেই আর্জেন্টিনার হয়ে ৬৭ গোল করে দেশটির সর্বোচ্চ গোলদাতা লিওনেল মেসি। ১৩০ ম্যাচ খেলা মেসির আর মাত্র দরকার ১৭ ম্যাচ। তাতেই অবসরে যাওয়া মাচেরানোকে টপকে আর্জেন্টিনার ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি ম্যাচ খেলা ফুটবলারও হবেন তিনি। কিন্তু এত কিছুর পরও প্রশ্ন থেকে যায়, যে আটটি টুর্নামেন্ট মেসি আলবিসেলেস্তেদের হয়ে খেলেছেন, তাতে স্বরূপে ছিলেন না কেন? কেন আর্জেন্টাইনরা সপ্তাহের পর সপ্তাহ বার্সেলোনা টিভিতে দেখা ভয়ঙ্কর মেসিকে আকাশী-সাদা জার্সিতে দেখেন না? পুরো ক্যারিয়ারজুড়ে দুইটি মেসি-রূপ দেখে এসেছে ভক্তরা। একজন মেসির নাম্বার নাইন কিংবা টেন হয়ে প্রতিপক্ষের ডিফেন্সকে ভেঙ্গেচুরে এগিয়ে যাওয়া। বিশ্বের অন্যতম সেরা ক্লাব, কোচ ও সেরা খেলোয়াড়দের পাশে পেয়ে দুর্নিবার হয়ে উঠা সেই মেসি বার্সেলোনার। অন্যদিকে টালমাটাল, গোলমেলে ও অস্বস্তিকর আর্জেন্টিনার শিবিরের মেসি, যেখানে এসে গোলমুখে ক্যারিয়ার সেরা ফর্মে থাকাকালীন অবস্থায়ও ২০০৯ ও ২০১১ সালে দুই বছর কোনো গোলের মুখ দেখেননি তিনি।

বিশ্বকাপ ফাইনালের পর মেসি; Image Source : India Today

প্রতিটি কোপা আমেরিকা, প্রতিটি বিশ্বকাপ শেষেই অভিযোগের আঙ্গুল যায় মেসির দিকে। সমালোচনা ও বিদ্বেষপূর্ণ তীরে জর্জরিত হন তিনি। সেই ১৭ বছরের বালক মেসি থেকে শুরু করে তিন সন্তানের জনক মেসি; কিন্তু সমালোচনা এতটুকুও কমেনি তার প্রতি। আর সমালোচনার বানে বিদ্ধ ভঙ্গুর হয়ে আর্জেন্টিনা থেকে বার্সেলোনা ফেরেন মেসি। যখনই আর্জেন্টাইন মিডিয়া মেসিকে এইভাবে ভেঙ্গে দেওয়ার চেষ্টা করে, তখনই বার্সেলোনা শিবিরে গিয়ে আশ্চর্যভাবে নিজেকে আবারও ফিরে পান তিনি।

বারবার অভিযোগের আঙ্গুল উঠেছে মেসির দিকে; Image Source : Goal.com

বার্সেলোনাই সবসময় মেসির ঢাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে এইবারের টুইস্ট তো বরাবর থেকে উল্টো। কোপা আমেরিকার খেলার জন্য এইবার বার্সেলোনা থেকে ভেঙে যাওয়া মেসি ফিরে এসেছেন আর্জেন্টিনায়। লিভারপুলের বিপক্ষে হতাশাজনক পারফরমেন্সে সেমিফাইনালে বিদায় নিয়েই ক্ষান্ত হয়নি বার্সেলোনা, হেরেছে কোপা দেল রে ফাইনালও। বার্সেলোনায় কাটানো শেষ দুই সপ্তাহ যে বেশ দুর্বিষহ ছিল মেসির জন্য, তা বলাই বাহুল্য। বার্সেলোনা হয়তো লিগ শিরোপা জিতেছে, তবে দর্শক কিংবা সবারই প্রত্যাশার পারদ ছিল অনেক উঁচুতে। কী হবে, যদি এইবার আর্জেন্টিনাই হয় ভঙ্গুর মেসির ফিরে আসার মঞ্চ?

আর্জেন্টিনার সর্বশেষ সুখস্মৃতি ১৯৯৩ সালের কোপা আমেরিকা জয়। এরপর চারটি কোপা আমেরিকা ফাইনাল (২০০৪, ২০০৭, ২০১৫, ২০১৬) ও একটি বিশ্বকাপ ফাইনাল (২০১৪) খেললেও ভাগ্যের শিঁকে ছেঁড়েনি আর্জেন্টিনার। এই পাঁচটি ফাইনালের চারটিতেই খেলেছেন মেসি। গোল তো করতেই পারেননি, তার পাশাপাশি ফাইনালে তার পারফরমেন্সও ছিলো বেশ হতাশাজনক কিংবা মেসিসুলভ নয়।

আর্জেন্টিনার নতুন প্রজন্মের কাছে মেসি তবুও ঈশ্বর, তাদের আদর্শ। কিন্তু বয়স্ক লোকদের কাছে মেসি ম্যারাডোনার সাথে তুলনারও অযোগ্য। মেসি কখনোই ডিয়েগো হতে পারবেন না। মেসি আর ডিয়েগোর দূরত্ব একটি বিশ্বকাপ শিরোপা। কিন্তু মেসি কি আদৌ আর্জেন্টিনার জার্সি গায়ে বিশ্বকাপ মঞ্চে আর খেলবেন কি না, তা নিয়েও রয়েছে সংশয়। রাশিয়া বিশ্বকাপে দলকে মূল পর্বে তোলাতে মেসির অনস্বীকার্য ভূমিকা ছিল, তা অস্বীকার করার উপায় নেই। বলতে গেলে ইকুয়েডরের বিপক্ষে হ্যাটট্রিক করে দলকে একা হাতেই বিশ্বকাপের টিকেট পাইয়ে দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু মূলপর্বের গল্পের চিত্রনাট্য সেরকম হয়নি। আইসল্যান্ডের বিপক্ষে পেনাল্টি মিস দিয়ে শুরু, আর সেই হতাশাজনক পারফরম্যান্স ছিল পুরো সময় জুড়েই। ফ্রান্সের বিপক্ষে ৪-৩ গোলে হেরে বাদ পড়ার সময়ে অনেকেই মেসির আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের শেষ দেখে ফেলেছিলেন। মাচেরানো, বিলিয়া ও হিগুয়াইনের অবসরের ঘোষনার পর সবাই ভেবেছিল, মেসিও বুটজোড়া তুলে রাখবেন। নাহ, মেসি দেশের প্রতি দায়বদ্ধতা থেকে আবারও ফিরেছেন।

কোপা আমেরিকাও শূন্য হাতে ফিরিয়েছে মেসিকে; Image Source : Conmebol

বিশ্বকাপের পর আর্জেন্টিনা দলে এসেছে বিশাল পালাবদল। কোচ সাম্পাওলির জায়গায় এসেছেন রাশিয়া বিশ্বকাপে তার সহকারী থাকা লিওনেল স্কালোনি। আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার থেকে বিরতি নিয়েছিলেন মেসি। তরুন প্রজন্মদের নিয়েই দল ঢেলে সাজিয়েছেন স্কালোনি। মাঝে মেসির ফেরা না ফেরা নিয়েই উঠেছিলো গুঞ্জন। ইতঃমধ্যেই একবার অবসরে যাওয়া মেসি সেই সময় মুখ বন্ধ করেই ছিলেন। আফা প্রেসিডেন্ট ক্লদিও তাপিয়া মেসির সবচেয়ে কাছের মানুষদের একজন। তিনি সকল চেষ্টাই করেছেন মেসিকে ফিরে পাবার। পেপ গার্দিওলাকে কোচ করানোর চিন্তাও এসেছে তার মাথায়। মেসির আদর্শ আইমারকে করেছেন স্কালোনির সহকারী, যাতে করে মেসির জাতীয় দলের প্রতি আকৃষ্টতা বেড়ে যায়। জাতীয় দলের পরিচালক পদে বসিয়েছেন ১৯৭৮ বিশ্বকাপ জয়ী লুইস মেনোত্তিকে।

সবশেষে মেসি ফিরেছেন। মার্চে মাদ্রিদে ভেনিজুয়েলার বিপক্ষে দিয়ে আবার আকাশী-সাদা জার্সি গায়ে মাঠে নামেন তিনি। যদিও সেই ম্যাচটি ৩-১ গোলে হেরেছে মেসি বাহিনী। পরবর্তীতে দলে এসেছেন ডি মারিয়া আর আগুয়েরোও। মেসি নিজেও বলেছেন, তার বড় ছেলে থিয়াগো তাকে আর্জেন্টিনার জার্সি গায়ে দেখতে চায়।

তবে সবকিছুর পর মেনে নিতে হবে যে, মেসি থাকার পরও আর্জেন্টিনা তাদের ইতিহাসের সবচেয়ে দুর্বল দল নিয়েই ব্রাজিলে এসেছে। মেসি, আগুয়েরো, ডি মারিয়া আগের প্রজন্মের প্রতিনিধি। দিবালা, ওটামেন্ডি, তাহলিয়াফিকো, লো সেলসো বর্তমান সময়ের সাড়া জাগানো ফুটবলার। এদের বাদে লাউটারো ও ফয়েথ ২১ বছরের তরুন প্রতিভাবান। আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতা ছাড়াও ফুটবলার রয়েছেন অনেক। মাতিয়াস সুয়ারেজ, মিল্টন কাস্কোদের বয়স ৩১ পেরিয়ে গেলেও আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার সবেমাত্র শুরু তাদের। প্যারেদেস, প্যারেইরা, ডি পল, আন্দ্রাবাদের মতো অনভিজ্ঞ তরুন একটি দল সর্বশেষ কবে খেলিয়েছে আর্জেন্টিনা, সেটিই ভাববার বিষয়।

আর্জেন্টিনার বর্তমান দল; Image Source : BBC

বার্সেলোনায় দুঃসহ সময় কাটানোর পর মেসির সাথে দেখা করেছেন মেনোত্তি। পরবর্তীতে তিনি জানিয়েছেন যে, মেসি চ্যাম্পিয়নস লিগ হারের পর বেশ পর্যুদস্ত। তবে তাতে করে আর্জেন্টিনার প্রতি তার দায়বদ্ধতা এতটুকুও কমেনি। বরং বিশাল পথ ভ্রমন করে আর্জেন্টিনা পৌঁছেই অনুশীলনে নেমে পড়েন মেসি। বল পাওয়ামাত্রই সেই চিরচেনা হাসিমুখের মেসিকে দেখা যায় আর্জেন্টিনার অনুশীলন ক্যাম্পে।

মেসি নিজেও জানেন তার হাসির উপরই নির্ভর করছে গোটা আর্জেন্টিনার হাসি। সেই হাসি কি এইবার ছড়িয়ে দিতে পারবেন মেসি? কোপা আমেরিকার শুরু কিন্তু সেভাবে আশা জাগাতে পারছে না! 

This article is about Messi's struggle in international football. References are hyperlinked in below.

Feauture Image : Barca Blaugranes

 

Related Articles