Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

প্রথম রাউন্ডের আলোচিত সাত

বিশ্বকাপ, বিশ্বকাপ, বিশ্বকাপ!

চার বছরের অপেক্ষার বিশ্বকাপ দেখতে দেখতে মাঝপথে চলে এসেছে। শেষ হয়ে গেছে সবচেয়ে দীর্ঘ অংশ প্রথম পর্ব। অন্য যেকোনো বিশ্বকাপের তুলনায় এবারের বিশ্বকাপে প্রথম পর্ব ছিলো বেশি উত্তেজনাময়, ঘটনাবহুল ও রোমাঞ্চকর।

ইতিমধ্যে রাশিয়া বিশ্বকাপের প্রথম পর্বেই বিশ্বকাপ ইতিহাসে এক আসরে সবচেয়ে বেশি পেনাল্টি ও পেনাল্টি গোলের রেকর্ড হয়ে গেছে। প্রথম পর্বে গোলশূন্য ড্র হয়েছে মাত্র একটি। তার মানে, বাকি প্রতিটি ম্যাচেই গোল হয়েছে। খুব একটা নেতিবাচক খেলা দেখা যায়নি। বরং আক্রমণ ও পাল্টা আক্রমণের খেলায় ভরপুর ছিলো এই লড়াই।

ছিলো নানান নাটকীয় ঘটনা।

রাশিয়া বিশ্বকাপের প্রথম পর্বে অনেকদিন মনে রাখার মতো স্মৃতি জমেছে অনেক। সেসব নাটকীয় কিংবা আনন্দ-বেদনার ঘটনা থেকে আমরা বেছে নিয়েছি মনে রাখার মতো কয়েকটি পয়েন্ট।

ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। Image source; Getti

 

রোনালদোর জয়

সারা পৃথিবী দুই ভাগে বিভক্ত- ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো ও লিওনেল মেসি।

এবার সকলে ভেবেছিলেন, মেসি বিতর্কটা এই বিশ্বকাপে শেষ করে দেবেন। সে সম্ভাবনা শেষ হয়ে গেছে, তা নয়। তবে রোনালদো বিতর্কের নিষ্পত্তি প্রায় করেই ফেলেছেন। বিশ্বকাপের নিজের প্রথম ম্যাচেই হ্যাটট্রিক। স্পেনকে আটকে দিলেন একাই তিন গোল করে। পরের ম্যাচেও পর্তুগালের একমাত্র গোলটি এলো রোনালদোর কাছ থেকে। ৪ গোল করে দলকে একা টেনে নিয়ে চললেন রোনালদো। ইউরো চ্যাম্পিয়ন করার পর বিশ্বকাপে পর্তুগালকে একা কাঁধে টানার এই ঘটনা রোনালদোকে জাতীয় দলের জার্সিতে এগিয়ে দিলো অনেকটাই।

পাঁচবারের ব্যালন ডি’অর বিজয়ী রোনালদো পর্তুগালের জার্সি গায়ে ইতিমধ্যে ৮৫ গোল করে ফেলেছেন। ইউরোপের খেলোয়াড়দের মধ্যে সর্বোচ্চ আর্ন্তজাতিক গোল এখন তার। এখন সারা বিশ্ব বিচারেই তার সামনে আছেন কেবল আলী দাই।

হতাশ মেসিবাহিনী; Image source: Euro Sports

বিপাকে মেসি ও তার দল

বিশ্বকাপের আগে থেকেই এটা জানা ছিলো যে, মেসি জাদু না দেখালে আর্জেন্টিনার পক্ষে এখানে কিছু করা কঠিন হবে। বাছাইপর্বে মেসি যে কয়টা ম্যাচ খেলেননি, সেই কয়টা ম্যাচেই চরম বিপাকে পড়েছিলো আর্জেন্টিনা। তাদের বাছাইপর্ব পার হওয়াটাই কঠিন ছিলো। একেবারে শেষ লগ্নে ইকুয়েডরের সাথে হ্যাটট্রিক করে দলকে বিশ্বকাপে নিয়ে এসেছেন মেসি।

ফলে তার ওপর প্রত্যাশা ছিলো। সেই সাথে রোনালদোর সঙ্গে চলমান ‘যুদ্ধের’ও একটা নিষ্পত্তির ব্যাপার ছিলো। দুজনেরই সেরা সময়ে এটা শেষ বিশ্বকাপ। ফলে দেখার ব্যাপার ছিলো কে এগিয়ে থাকেন জাতীয় দলের জার্সি গায়ে। রোনালদো প্রথমেই ৩ গোল করে এগিয়ে গেলেন।

মেসি বিপরীতে সামান্য একটু জ্বলে উঠলেও প্রথম দুই ম্যাচে গোলই পেলেন না। প্রথম ম্যাচে আর্জেন্টিনা ড্র করলো আইসল্যান্ডের সাথে। পরের ম্যাচে ক্রোয়েশিয়ার সাথে হেরেই বসলো। এ অবস্থায় শেষ ম্যাচে নাইজেরিয়াকে হারাতেই হতো এবং আইসল্যান্ড-ক্রোয়েশিয়া ম্যাচেও ফল আইসল্যান্ডের বিপক্ষে যেতে হতো। শেষ অবধি মেসিকে একটু খুঁজে পাওয়া গেলো। ভাগ্য পক্ষে এলো। আর্জেন্টিনা দ্বিতীয় রাউন্ডে পা রাখলো।

তবে মেসি এখনও স্বরূপ থেকে অনেকটাই পেছনে; আর্জেন্টিনাও তা-ই।

হ্যারি কেইন; Image source: Sky Sports

ইংল্যান্ড ও কেইন

হ্যারি কেইনের মধ্যে ইংলিশরা কখনো জিওফ হার্স্টকে দেখছে, কখনো গ্যারি লিনেকারকে দেখছে। বিশ্বকাপ শুরুর আগে এবার ইংলিশ মিডিয়া একটু সংযত ছিলো। প্রতিবারের মতো এবার আশার বেলুনটা অতো বড় ছিলো না। কিন্তু টুর্নামেন্ট শুরু হতেই ইংল্যান্ড দল তার অধিনায়কের উজ্জ্বলতায় যেভাবে জ্বলে উঠেছে, তাতে স্বপ্ন না দেখে আর পারছে না তারা।

ইংলিশ অধিনায়ক হ্যারি কেইন প্রথম রাউন্ডে এবারের আসরের সর্বোচ্চ গোলদাতা। প্রথম ম্যাচে তিউনিশিয়ার বিপক্ষে জোড়া গোল, পরের ম্যাচে পানামার বিপক্ষে হ্যাটট্রিক। ৫ গোল করে কেইন পিছনে ফেলেছেন রোনালদো, লুকাকুদের। এবারের আসরটাকে অনায়াসে নিজের করে নিতে পারেন তিনি।

কেইনের সাথে দূরন্ত ঘোড়ার মতো ছুটছে ইংল্যান্ডও। যদিও শেষ ম্যাচে হালকা চালের খেলায় বেলজিয়ামের বিপক্ষে হেরে গেছে তারা। কিন্তু তাতে ক্ষতি কিছু হয়নি। বরং নকআউট পর্বে সহজ রাস্তা ধরতে পেরেছে ইংল্যান্ড। এখন সময় বলবে, এবার হার্স্ট হতে পারেন কি না কেইন!

হতাশায় জার্মান খেলোয়াড় ওজিল; Image source: Four Four Two

জার্মানির পতন

জার্মানরা এবার পঞ্চম শিরোপা জিততে এসেছিলো, জার্মানরা এবার শিরোপা ধরে রাখতে এসেছিলো।

সেই জার্মানির পতন ঘটলো আবার রাশিয়ায় এসে!

জার্মানি খুব একটা ভালো ছন্দে নেই, সেটা বোঝাই যাচ্ছিলো। ফলে বিশ্বকাপ তারা টানা দ্বিতীয়টা জিতবে, এমন মনে হচ্ছিলো না। তাই বলে প্রথম পর্বে বিদায়টা একটা চমকের চেয়েও বেশি কিছু হয়ে এসেছে। জার্মানি অবশ্য বিশ্বকাপ শুরুই করলো বিদায় নেওয়ার মতো করে। প্রথম ম্যাচেই মেক্সিকোর কাছে হেরে বসলো তারা। পরের ম্যাচে সুইডেনের বিপক্ষে কোনোক্রমে পিঠ রক্ষা করলো শেষ সময়ের গোলে। শেষ ম্যাচে নিজেদের জিততেই হতো। অন্য দিকে সুইডেন জিতলেও ঝামেলা ছিলো। সেই সুইডেন আগেরই জয় নিশ্চিত করে ফেললো। তখন জার্মানি ১ গোলে জিতলেও আর কাজ হতো না। সেই সময় উল্টো তারা ২ গোল হজম করে বসলো।

একেবারে গ্রুপের শেষ দল হিসেবে জোয়াকিম লোর শিষ্যরা বাড়ির পথ ধরলো। ম্যাচ শেষে লো বলেছেন, এই বিদায়ই তাদের প্রাপ্য ছিলো।

ভিএআর; Image source: Four Four Two

ভিডিও এসিস্ট্যান্ট রেফারি (ভিএআর)

ফিফা কখনোই খুব সহজে নতুন কোনো প্রযুক্তি খেলায় ঢুকিয়ে দেয় না। প্রযুক্তির ক্ষেত্রে ফিফা সবসময় বলে আসতো যে, এটা খেলার যে সনাতনী গতি, তাকে নষ্ট করে দিতে পারে। যে কারণে অনেক চিন্তাভাবনা ও পরীক্ষার পর গোল লাইন টেকনোলজি আসতে পেরেছিলো বিশ্বকাপ অবধি। সে তুলনায় ভিডিও এসিস্ট্যান্ট রেফারি বা ভিএআর এর কপাল ভালো। ট্রায়াল শুরু করার কয়েক বছরের মাথায়ই ফিফা কনফেডারেশন্স কাপে দেখা গিয়েছিলো ভিএআর ব্যবস্থা। এবার বিশ্বকাপেই সারা দুনিয়া দেখছে এই নতুন ব্যবস্থা।

বলা চলে প্রথম পর্ব শেষে খেলোয়াড়দের চেয়ে এই ভিএআর-ই বেশী আলোচনায় আছে। আলোচনাটা মিশ্র। কোনো অংশ থেকে এর প্রশংসা হচ্ছে। বিশেষ করে পেনাল্টির ক্ষেত্রে একটা নিখুঁত সিদ্ধান্ত পাওয়া যাচ্ছে বলে অনেকেই এটাকে বেশ নিরপেক্ষ একটা ব্যবস্থা হিসেবে দেখছেন। আবার দারুণ নিন্দাও আছে। অনেকেই বলছেন, খেলার গতি কমিয়ে দিয়ে কিছু দ্বিধা তৈরি করছে বরং এই ভিএআর।

পর্তুগাল-ইরান খেলার পর দুই দলের কোচই তুমুল সমালোচনা করেছেন এই ব্যবস্থার। আবার জার্মানির কোচ জোয়াকিম লো দারুণ প্রশংসা করেছেন নতুন এই প্রযুক্তির। তবে প্রযুক্তি যে প্রভাব ফেলছে, তাতে সন্দেহ নেই। এই প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে পেনাল্টির সিদ্ধান্ত আসছে অনেক বেশি।

হলুদ কার্ডে বিদায় হলো সেনেগালের; Image source: Four Four Two

আফ্রিকার হতাশা

আফ্রিকা থেকে এবারও ৫টি দেশ অংশ নিয়েছিলো বিশ্বকাপে। মিশর, মরক্কো, নাইজেরিয়া, সেনেগাল ও তিউনিশিয়া প্রতিনিধিত্ব করছিলো এই মহাদেশের। কিন্তু ১৯৮২ সালের পর এই প্রথম কোনো আফ্রিকান দল দ্বিতীয় রাউন্ডে উঠতে ব্যর্থ হলো। এবার প্রথম রাউন্ড পার হতে পারেনি তারা কেউ।

এর মধ্যে সেনেগাল অন্তত দ্বিতীয় রাউন্ডে পা রাখার মতো ফুটবল খেলছিলো। কিন্তু প্রথম বিশ্বকাপে চমক দেখানো সেনেগালের সেই সাবেক অধিনায়ক সিসের কোচিংয়ে এবার আর দলটি দ্বিতীয় পর্বে যেতে পারেনি। এবার তারা বিশ্বের প্রথম দল হিসেবে ফেয়ার প্লে আইনে কাটা পড়েছে। জাপান ও সেনেগালের পয়েন্ট, গোল পার্থক্য সব একই ছিলো। কিন্তু সেনেগাল হলুদ কার্ড বেশি দেখায় বিদায় নিয়েছে প্রথম পর্ব থেকে।

রাশিয়ার উদযাপন; Image source: Four Four Two

রাশিয়ার বিস্ময়

স্বাগতিক দল প্রথম পর্ব থেকে সবিদায় নেয় না; সামান্য ব্যতিক্রম ছাড়া এটা বিশ্বকাপের একটা আপ্তবাক্যে পরিণত হয়েছে। এবার সংশয় ছিলো রাশিয়াকে নিয়ে। বিশ্বকাপে অংশ নেওয়া দলগুলোর মধ্যে তারাই ছিলো সবচেয়ে দুর্বল। প্রথম ম্যাচেই সৌদি আরবকে ৫-০ গোলে উড়িয়ে দিয়ে নিজেদের নতুন করে চেনালো রাশিয়া। দ্বিতীয় ম্যাচে মিশরকে হারালো তারা ৩-১ গোলের ব্যবধানে। শেষ ম্যাচে উরুগুয়ের বিপক্ষে হেরে গেলেও দ্বিতীয় পর্ব নিশ্চিত করেছে তারা দাপটের সাথেই। ধরে রেখেছে স্বাগতিকদের ঐতিহ্য।

ডেনিস চেরিশভ ৩ গোল করে রাশিয়াকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ায় ভূমিকা রাখছেন।

Related Articles