আমাদের দেশে অনেকের কাছেই বিজ্ঞান একটি বিভীষিকার নাম। বিজ্ঞানকে আমরা বুঝি না, তাই ভয় করি। বিজ্ঞানকে ভালোবাসে এমন মানুষের অভাব নেই, কারণ তারা বিজ্ঞানে প্রবেশ করলেই মনের মাঝে সুপ্ত আনন্দ টের পায়। বিজ্ঞানকে ব্যবহার করে তা যখন প্রযুক্তির কোনো অবদানরূপে আসে আমাদের চোখের সামনে, তখন কিন্তু একজনকেও খুঁজে পাওয়া যাবে না, যে যন্ত্রটিকে ঘৃণা করছে কিংবা ভয় করছে।
বর্তমান যুগে লক্ষ লক্ষ আবিষ্কার পাওয়া যাবে, প্রযুক্তির অবদান পাওয়া যাবে, যা দেখে আমরা অভিভূত হয়ে যাবো। প্রতিনিয়ত বাজারে নিত্যনতুন পণ্য আসছে, যা তৈরি হয়েছে মানুষের প্রয়োজনকে ভিত্তি করেই। যখনই মানুষ কোনোকিছুর প্রয়োজন অনুভব করেছে, তাকে ভিত্তি করে আর বিজ্ঞানকে সঙ্গী করে তৈরি করে ফেলেছে কোনো এক অদ্ভুত যন্ত্র। বিজ্ঞান কিন্তু ক’দিন আগে যাত্রা শুরু করেনি, বিজ্ঞানের জয়যাত্রা কিন্তু আগুন আবিস্কার কিংবা চাকা আবিস্কারের মাধ্যমে হাজার বছর পূর্বেই শুরু হয়ে গিয়েছিলো। প্রযুক্তির পাঁচটি নতুন চমক নিয়েই এই লেখা, যে যন্ত্রগুলো অসাধারণ বুদ্ধিমত্তার পরিচয়বাহী। আমাদের দেশের সকলের হয়তো এই যন্ত্রগুলো কিনে ব্যবহার করার সামর্থ্য হবে না, তবু প্রযুক্তির এসব সুন্দরতম আবিস্কারের কথা জেনে, চোখে প্রশান্তি নিশ্চয় আসতে পারে, এটাই বা কম কীসে।
অ্যাস্টার
সাইকেল আরোহীদের কথা মাথায় রেখে তৈরি করা হয়েছে এই ব্যাকপ্যাকটি। অনেক স্মার্টভাবে ডিজাইনটি করা হয়েছে, একজন সাইকেল আরোহীর কী কী প্রয়োজন থাকতে পারে, বিশেষ করে সাইকেল চালানোর সময় তার নিরাপত্তার সকল বৈশিষ্ট্যের প্রতি নজর দেওয়া হয়েছে এতে।
সাইকেল আরোহীদের প্রধান সমস্যা হলো, এতে কোনো ধরনের বিল্ট-ইন লাইটের ব্যবস্থা থাকে না। যারা নিয়মিত সাইকেল চালায়, তারা আলাদাভাবে নিরাপত্তার খাতিরে লাইটিং এর ব্যবস্থা করে। দিনের বেলা সমস্যা হয় না, সমস্যা দেখা দেয় রাতের বেলায়। তখন নিশ্চয়ই সকলের মনে হয়, সাইকেলের সাথে লাইটিং জুড়ে দেওয়া থাকলে ভালো হতো। অন্ধকার রাস্তায় অন্য যানবাহন থেকে সাইকেলকে ঠিক আলাদাভাবে চোখে পড়ে না, ফলে ঘটে যায় কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনা।
পেছনের এই বাতিটি দ্বারা অন্ধকারের মাঝেও সাইকেল আরোহীর উপস্থিতি টের পাওয়া যাবে।
ব্যাগের সামনেও রয়েছে দু’টি বাতি, যার দ্বারা যেকোনো গাড়ির আয়নাতে সহজেই চোখে পড়বে সাইকেল আরোহীর উপস্থিতি।
এই বৈশিষ্ট্যটি অনেক দারুণ, সাইকেল থামানোর সময় যখন ব্রেক চেপে গতি কমিয়ে আনা হবে, ব্যাগটি তা বুঝতে পারবে বিল্ট-ইন সেন্সর দ্বারা, নিজ থেকেই ব্রেক লাইট জ্বালিয়ে পেছনের যানবাহনকে জানান দেবে।
ব্যাগের দু’পাশেই রয়েছে এমন লম্বা বাতির ব্যবস্থা, পেছন থেকে এই দুই বাতি দেখে বোঝা যাবে সাইকেল আরোহী রাস্তার কতটুকু জায়গা দখল করে আছে। ফলে কোনোরূপ দুর্ঘটনা ছাড়া আরোহীকে সহজেই পাশ কাটানো সম্ভব।
গাড়ির ইন্ডিকেটর বাতির কথা নিশ্চয় সকলের জানা আছে, ব্যাগেও রয়েছে এই বাতি, সাইকেল আরোহী ডানে যাবে নাকি বামে, তা সহজেই ইন্ডিকেটর বাতি জ্বালিয়ে পেছনের যানবাহন চালকদের বুঝাতে সক্ষম হবে। এই বাতিটি অবশ্য স্বয়ংক্রিয় ভাবে কাজ করে না, সাইডকিক নামক ছোট এক যন্ত্র দেয়া হয় ব্যাগের সাথে, সেই যন্ত্রটি দিয়ে ইন্ডিকেটর বাতিকে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।
অ্যাস্টার ব্যাকপ্যাকটিতে লাইটিংয়ের প্রতি বিশেষভাবে জোর দেয়া হয়েছে, সেই সাথে নিরাপত্তার আরো বেশ কিছু বৈশিষ্ট্য রাখা হয়েছে। আরেকটি কথা, বাতিগুলোকে চার্জ দেওয়া নিয়ে বিশেষ ভাবতে হবে না, ব্যাগটির মাঝে বিল্ট-ইন অবস্থায় রয়েছে পোর্টেবল ব্যাটারি। ইউএসবি ক্যাবল দিয়ে যেকোনো সময় চার্জ দেওয়া যাবে ৮,০০০ মিলিঅ্যাম্পিয়ারের ব্যাটারিকে। আর একবার ফুল চার্জে ১০-১৫ ঘণ্টা একটানা ব্যাকআপ পাওয়া যাবে ব্যাটারিটি থেকে।
এই ব্যাকপ্যাকটির প্রতিটি বৈশিষ্ট্যই অনন্য। অ্যাস্টার ব্যাকপ্যাকটির সাথে পাওয়া যাবে সাইডকিক এবং লুমোস অ্যাস্টার অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ। এই সাইডকিক ও লুমোস ব্যাকপ্যাকটির কার্যকারিতাকে অনেকগুণ বাড়িয়ে তোলে, ডিভাইস ও অ্যাপটি ব্যাগের সাথে সংযুক্ত থাকে ব্লুটুথ প্রযুক্তির দ্বারা। যদিও আজকাল ব্লুটুথ খুব কম ব্যবহৃত হয়, কিন্তু এক্ষেত্রে অনেকটাই কার্যকর। অ্যাপের মাধ্যমে ব্যাগে বিল্ট-ইন ব্যাটারির চার্জ কমে আসার অ্যালার্ট পাওয়া যাবে, ব্যাগটি যদি চুরি হয়ে যায়, তাহলে অ্যান্টি-থেফট ব্যবস্থার মাধ্যমে জিপিএস সুবিধা ব্যবহার করে ব্যাগটিকে খুঁজে পাওয়া যাবে। জিপিএস ট্র্যাকারও এতে বিল্ট-ইন রয়েছে। ব্যাগের বাতিগুলোর বৈশিষ্ট্যও পরিবর্তন করা যাবে অ্যাপটির মাধ্যমে।
সাইডকিকের আরো বিশেষ এক বৈশিষ্ট্য রয়েছে। সাইকেলের হাতলে এটি বসানো যাবে। সাইকেল চালনার সময় আরোহী যদি দুর্ঘটনার সম্মুখীন হয়, তাহলে সাইডকিকটি সাথে সাথে আরোহীর মোবাইলে একটি অ্যালার্ট প্রেরণ করবে, “Are you okay?” লিখে, একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত এই অ্যালার্টটি থাকবে, আরোহী তার নিজের মতো করে অ্যাপের মাধ্যমে এই সময় সেট করে নিতে পারবে। যদি দুই মিনিট সেট করা থাকে, তাহলে দুই মিনিট পর অ্যালার্টটি বন্ধ হয়ে যাবে। তখন আগে থেকে সেট করে রাখা কোনো ইমার্জেন্সি কন্টাক্টের কাছে একটি ক্ষুদে বার্তা চলে যাবে। বার্তায় দুর্ঘটনার ব্যাপারে বলা থাকবে এবং সেই সাথে থাকবে দুর্ঘটনার জিপিএস লোকেশন। সবদিক থেকেই সাইকেল আরোহীদের সুবিধা প্রদান করছে এই ব্যাকপ্যাকটি। এছাড়াও এর ভেতরের অংশটিও অনেক বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিয়ে ডিজাইন করা হয়েছে, যাতে প্রয়োজনীয় সকল জিনিস রাখা সম্ভব হয়।
ব্যাকপ্যাকটি পুরোপুরি খুলে ফেলা সম্ভব। ব্যাগের সামনে হেলমেট ঝুলিয়ে রাখার জন্য বিশেষ জায়গার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে, নিচে জুতো রাখার জন্য বিশেষ পকেট রাখা হয়েছে। একদম পেছনে ল্যাপটপ রাখার জন্যেও পকেট রয়েছে, সেই সাথে পানির বোতল রাখার জন্য আছে ছোট জিপারযুক্ত পকেট।
Source: indiegogo.com
মুজো
এই ক্ষুদ্র ডিভাইসটি আপনার জীবনের অসহনীয় কিছু মুহূর্তকে সাজিয়ে তুলতে পারে আপনার ইচ্ছানুযায়ী। ধরুন, পাবলিক বাস কিংবা ট্রেনে বসে আছেন, কোনো রেস্টুরেন্টে খেতে গিয়েছেন, অথবা যেকোনো কারণে আপনার বাসার বাইরে থেকে ভেতরে শব্দ আসছে। এসবই আপনার প্রতিটি সেকেন্ডকে করে তুলছে বিরক্তিকর। এখানেই এই ডিভাইসটির চমক। এই ডিভাইসটি তৈরি করা হয়েছে বিরক্তকর শব্দকে প্রতিহত করতে। এটি অন করে রেখে দিন শুধু, একটি নির্দিষ্ট বৃত্তাকার জায়গা পর্যন্ত কোনো ধরনের শব্দ প্রবেশ করবে না। ডিভাইসটি একটি অদৃশ্য জাল বিছিয়ে রেখে সবধরনের শব্দকে প্রতিহত করবে। বৈশিষ্ট্যটি খুব ম্যাজিকাল মনে হচ্ছে কি?
ব্যাপারটি আসলে খুবই সরল, পদার্থবিজ্ঞানের মৌলিক এক জ্ঞান কাজে লাগিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে এই ডিভাইসটি। এ কথা আশা করি আমাদের সকলের জানা রয়েছে যে, বস্তুর কম্পনের ফলে শব্দ উৎপত্তি হয়। কী হবে যদি বস্তুর মাঝে কম্পনই না থাকে? যেকোনো সমতল দেয়ালে এই ডিভাইসটি লাগিয়ে রাখা যায়। শব্দ ভেতরে প্রবেশ করতে হলে অবশ্যই দেয়ালকে কাঁপিয়ে তুলবে, ডিভাইসটি দেয়ালকে কম্পনে বাধা প্রদান করবে। ফলে শব্দ ভেতরে প্রবেশ করবে না। এছাড়াও রয়েছে বেশ কিছু বৈশিষ্ট্য; যেমন- দ্রুত ঘুমোতে সাহায্য করবে এই ডিভাইসটি, ঘুম নিয়ে অ্যানালাইসিস করতে সক্ষম এটি, অ্যালার্ম দেওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে এতে। কতটুকু জায়গা প্রোটেকশন দেবে ডিভাইসটিতে, তা-ও পরিবর্তন করে নেওয়া যাবে। ক্লাসরুমে প্রায়ই এমন হয় যে, বাইরের অনাকাঙ্ক্ষিত শব্দ প্রবেশের ফলে শিক্ষকের কথা ঠিকমতো শোনা যায় না, ক্লাসরুমে এর ব্যবহার তখন অনেকটাই সুবিধাজনক হতে পারে।
এর আরেকটি বৈশিষ্ট্য হলো, হোয়াইট নয়েজ তৈরি করতে সক্ষম এটি, তবে বিশেষ এক পদ্ধতিতে। আজকাল যেকোনো স্মার্টফোনে থার্ড পার্টি অ্যাপ দিয়ে হোয়াইট নয়েজ তৈরি করা সম্ভব। স্মার্টফোন হোয়াইট নয়েজ তৈরি করে স্পিকারের মাধ্যমে তা ছড়িয়ে দেয়। কিন্তু এই ডিভাইসটিতে কোনো স্পিকার নেই, একে কোনো কাঁচের দেয়ালে সেট করে রাখলে, পুরো কাঁচকে কাঁপানোর মধ্য দিয়ে এটি শব্দ সৃষ্টি করে। অর্থাৎ ব্যাপারটি এমন যে, কাঁচের দেয়ালটিই হয়ে যাবে বিশাল এক স্পিকার, যার মাধ্যমে আমরা হোয়াইট নয়েজ শুনতে পাবো।
পাপ
যারা আধুনিক প্রযুক্তি নিয়ে খোঁজখবর রাখেন, তাদের ক্যামস্ক্যানার টাইপ অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপের সাথে নিশ্চয়ই পরিচয় আছে। ক্যামস্ক্যানার অনেক কাজের, এ ধরনের অনেকগুলো অ্যাপ প্লেস্টোরে পাওয়া যায়। নামীদামী কর্পোরেশনগুলোও এদিকে বেশ ভালোই নজর দিয়েছে। মাইক্রোসফটের অফিস লেন্স কিংবা অ্যাডোবির অ্যাডোবি স্ক্যান; ক্যামস্ক্যানারের মতোই কাজ করে থাকে। তবে অফিস লেন্স অ্যাপটি অনেক ইউজার ফ্রেন্ডলি। যা-ই হোক, কেমন লাগবে, যখন আলাদা কোনো ডিভাইস তৈরি করা হয়, যা আরো উন্নত, যা আরো সহজভাবে যেকোনো ডকুমেন্ট স্ক্যান করে দেবে?
এই চিন্তা থেকেই তৈরি হয়েছে পাপ। ছোট একটি ডিভাইস, ইউজার ফ্রেন্ডলি, এক হাতে নিয়ে কাজ করা যায়, এতে আছে একটি বাটন ও একটি ছোট টাচ স্ক্রিন। এটি দিয়ে যেকোনো মুহূর্তে যেকোনো ধরনের ডকুমেন্ট স্ক্যান করা যায়, ডকুমেন্টের ডাইমেনশন নিয়ে ভাবতে হয় না। সবকিছু এই ছোট ডিভাইসটিই ঠিক করে নেয় এতে সংযুক্ত লেজার প্রযুক্তি দ্বারা। ডকুমেন্টকে ডিভাইসটির নিচে স্থাপন করুন, লেজার রশ্মি ডকুমেন্টকে চারদিক থেকে ঘিরে ফেলবে, আপনি শুধু উপরের বাটনটি চেপে দিন, সঙ্গে সঙ্গে স্ক্যান হয়ে যাবে।
কাজ কিন্তু এখানেই শেষ নয়, অল্প একটু বাকি, টাচ স্ক্রিনের কাজটি বাকি রয়ে গেছে। ওখানে আপনি নির্ধারণ করে দিতে পারবেন, ডকুমেন্ট স্ক্যান করার পর সেটি নিয়ে আপনি কী করতে চান। চাইলে অনেকগুলো ডকুমেন্টকে একসাথে পিডিএফ বানিয়ে ফেলতে পারেন, নাহয় অনলাইন স্টোরেজ, যেমন- গুগল ড্রাইভের সাথে কানেক্ট করে রাখতে পারেন। বিভিন্ন সামাজিক সাইট, যেমন- ফেসবুক, ইনস্টাগ্রামের সাথেও কানেক্ট করে রাখতে পারেন। ডকুমেন্টটি স্ক্যান করার পূর্বে শুধু স্ক্রিনে সেই লোগোটি ঠিক করুন যেখানে আপনি ডকুমেন্টটি পেতে চান। সংযুক্ত কম্পিউটারেও পেতে পারেন, কিংবা মাইক্রোসফট ওয়ার্ড ডকুমেন্ট হিসেবেও পেতে পারেন আপনি আপনার কাঙ্ক্ষিত লেখাগুলো।
রকেটবুক ওয়েভ
প্রযুক্তির আরো এক চমৎকার আবিস্কার এই রকেটবুক ওয়েভ। দেখতে অতি সাধারণ, আর সব নোটবুকের মতোই, যখন খুশি এতে লেখা যাবে, যা খুশি লেখা যাবে। প্রয়োজনীর লেখা শেষ করার পরই এর চমক।
প্রতিটি পৃষ্ঠার নিচে রয়েছে সাতটি লোগো, প্রত্যেকটি লোগো ভিন্ন ভিন্ন ক্লাউড স্টোরেজের সাথে সম্পর্কিত। রকেটবুক অ্যাপের মাধ্যমে আপনি লোগোগুলোকে যেকোনো ক্লাউড স্টোরেজের যেকোনো ফোল্ডারের সাথে যুক্ত করে নিতে পারবেন। লেখা শেষে মার্ক করে দিন এই ডকুমেন্টটি কোন স্টোরেজে রাখতে চান আপনি, স্মার্টফোনে রকেটবুক অ্যাপের মাধ্যমে ছবি তুলুন লেখাটির, সঙ্গে সঙ্গে সেটি কাঙ্ক্ষিত ক্লাউড স্টোরেজে চলে যাবে।
চমক এখানেই শেষ নয়, নোটবুকের সবগুলো পৃষ্ঠা লিখে শেষ হয়ে গেলে নতুন করে আরেকটি নোটবুক কেনার প্রয়োজন নেই। এর সাথে একটি পাইলট ফ্রিক্সিয়ন কলম দেওয়া হয়, কেবল মাত্র এই কলমটি ব্যবহার করে লিখলে নোটবুকের সব লেখা আপনি মুছে ফেলতে সক্ষম হবেন। মাইক্রোওয়েভ ওভেনের তাপ সহ্য করার ক্ষমতা রয়েছে এই নোটবুকটির। নোটবুকটি ওভেনে অল্প সময় রেখে দিলেই প্রতিটি পৃষ্ঠার সব লেখা মুছে যাবে, আপনি আবারো নতুন করে এটি ব্যবহার করতে পারবেন।
এছাড়া প্রতিটি পৃষ্ঠার নিচে একটি করে QR Code রয়েছে, যা হলো নোটবুকের পৃষ্ঠা নাম্বার। যেভাবেই ছবি তোলা হোক না কেন, পৃষ্ঠা নম্বর অনুযায়ী সাজিয়ে নিতে সক্ষম আপনার স্মার্টফোনের রকেটবুক অ্যাপটি।
সি-পেন
Taare Zameen Par মুভিটির কথা কি মনে আছে? ঈশান অনেক মেধাবী, সৃজনশীল একটি ছেলে। তবু পড়াশোনা কোনোভাবেই হয় না তার দ্বারা। নতুন বোর্ডিং স্কুলে গিয়ে সে জানতে পারে তার সমস্যাটির ব্যাপারে। ডিস্লেক্সিয়া (Dyslexia); এটি এমন একটি রোগ, যার দরুন একজন মানুষ ঠিকমতো কোনোকিছু পড়তে পারে না, কোনো অক্ষর কিংবা সিম্বল স্বাভাবিকভাবে তার মস্তিষ্কে প্রবেশ করে না। এই রোগে কিন্তু স্বাভাবিক বুদ্ধিমত্তার কোনো কমতি দেখা যায় না, যেমনটি ঈশানকে ধারণা করা হয় চলচ্চিত্রে, সবাই সারাক্ষণ ‘ডাম্ব’, ‘ডাফার’ ভাবতে শুরু করে ঈশানকে। এই রোগে আক্রান্ত মানুষদের কেবলমাত্র কোনোকিছু একটানা পড়তে সমস্যা দেখা দেয়। যা-ই হোক, এ ধরনের ডিস্লেক্সিয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের কথা ভেবেই তৈরি করা হয়েছে এই সি-পেন। এর মাধ্যমে সহজেই যেকোনো ডকুমেন্টের লেখা পড়ে নেওয়া যাবে।
লেখার উপর দিয়ে এই সি-পেনকে একপ্রান্ত থেকে অপরপ্রান্তে টেনে নিলেই যন্ত্রটি উচ্চস্বরে পড়ে দেবে লেখাটি। হয়তো আহামরি কোনো যন্ত্র মনে হচ্ছে না বর্ণনা শুনে, কিন্তু যারা ডিস্লেক্সিয়াতে আক্রান্ত, তাদেরকে যদি এর কথা বলা হয়, তখন বোঝা যাবে কতটুকু উপকারী এই এটি। খুবই ইউজার ফ্রেন্ডলি, সহজেই ব্যবহার করা যায়, ইয়ারফোন যুক্ত করার ব্যবস্থা রয়েছে। ডিস্লেক্সিয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তিরা পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র পড়তে পারবে এর দ্বারা।
এ কথা সত্য যে, প্রযুক্তি আমাদের আবেগকে কেড়ে নিয়ে জীবনকে করে তুলেছে গতিশীল। আবেগও যেমন প্রয়োজন, গতিরও প্রয়োজন ছিলো। আমরা তখনই সেই জিনিসকে খুঁজে বের করেছি কিংবা আবিস্কার করেছি, যখন সেটার প্রয়োজন অনুভব করেছি। জীবনে গতির প্রয়োজন ছিলো, এমনটি হবারই ছিলো, তাই দিন দিন প্রযুক্তি এগিয়ে চলেছে চিতাবাঘের ন্যায়, মানবজাতিকে দিয়ে চলেছে অসংখ্য সুবিধা। এভাবে চলতে থাকলে মানবজাতি হয়তো আরো এগিয়ে যাবে, যদি আমরা বুঝে শুনে ব্যবহার করতে পারি আমাদের জ্ঞান, বুদ্ধি, বিবেক, মেধা আর মননকে। একতরফাভাবে প্রযুক্তি নিয়ে পড়ে থাকলেই চলবে না, জীবনের মুহূর্তগুলোর প্রতিও নজর দেয়া প্রয়োজন আমাদের, যাতে করে সাদা-কালো জীবনের গল্পগুলোকে রাঙিয়ে তোলা যায়।
ফিচার ইমেজ- youtube.com