Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

ডিজিটাল ওয়ালেট: প্রচলিত মানিব্যাগের জায়গা দখল করে নেবে যে প্রযুক্তি

পৃথিবী ব্যাপী মোবাইল ফোন বৃদ্ধির সাথে সাথে বাড়ছে মোবাইল ফোন ভিত্তিক গ্রাহক সেবা। জীবনযাত্রায় আর্থিক লেনদেন যেহেতু বড় রকমের ভূমিকা পালন করে, সেহেতু বর্তমানে বিভিন্ন ব্যাংকিং কোম্পানি তাদের সেবাগুলোকে মোবাইল ফোন নির্ভর করে তুলছে। অন্যদিকে ই-কমার্স, ই-সেবা ভিত্তিক কোম্পানিগুলোর সাথে লেনদেন সংক্রান্ত জটিলতাগুলোকে সহজ করতে মোবাইল ফোন নির্ভর সেবার দিকে মনোযোগ দিচ্ছে বড় বড় টেক জায়ান্টগুলো। এমন একটি সেবাই ‘ডিজিটাল ওয়ালেট’ বা ‘ই-ওয়ালেট’ নামে পরিচিত।

আরো যেসকল কারণে কোম্পানিগুলো মোবাইল ব্যাংকিংয়ের দিকে ঝুঁকছে; Image Source: thefinancialbrand.com

ডিজিটাল ওয়ালেট

ডিজিটাল ওয়ালেট হচ্ছে সাধারণ ওয়ালেট বা মানিব্যাগের ইলেকট্রনিক সংস্করণ। এই প্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে ভোক্তারা কাগজের মুদ্রার পরিবর্তে মূল্য পরিশোধ সংক্রান্ত ঝামেলাগুলো ভার্চুয়াল মাধ্যমে মেটাতে পারে। তবে এখানে, ভার্চুয়াল কারেন্সি না, বরং দেশের প্রচলিত কারেন্সির লেনদেনই ভার্চুয়ালি ইলেকট্রনিক মাধ্যমে সম্পন্ন হয়। ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড, অনলাইন ব্যাংকিংয়ের মতো টাকা আদান প্রদানে ইলেকট্রনিক ব্যবস্থার সাথে এই প্রযুক্তির মূল পার্থক্য হচ্ছে, খুচরা লেনদেনে ডিজিটাল ওয়ালেটের স্বতঃস্ফূর্ততা।

প্রচলিত কাগজের মুদ্রার মতো ডিজিটাল ওয়ালেটের মাধ্যমেও খুব সহজেই যেকোনো পরিমাণ টাকা আদান প্রদান করা যায়। এছাড়া, ডিজিটাল ওয়ালেট সাধারণ ওয়ালেটের মতো কনসার্ট ও মুভি-থিয়েটারের টিকিট, বাস ও সাবওয়ের ছাড়পত্র, গিফট কার্ড সহ কোনো কিছু কেনার পর ঐ পণ্যের ভাউচার সংরক্ষণ করে রাখতেও সক্ষম। এমনকি, ডিজিটাল ওয়ালেটে গ্রাহকের ডেভিড কার্ড ও ক্রেডিট কার্ডের তথ্য সংরক্ষণের পাশাপাশি ঐ তথ্য ব্যবহার করে ব্যাংকিং সেবাগুলোও নিশ্চিত করা যায়।

ডিজিটাল ওয়ালেটে গ্রাহকের ডেভিড কার্ড ও ক্রেডিট কার্ডের তথ্য সংরক্ষণের পাশাপাশি ঐ তথ্য ব্যবহার করে ব্যাংকিং সেবাগুলোও নিশ্চিত করা যায়; Image Source: tender-retail.acceo.com

ডিজিটাল ওয়ালেট মূলত দুই ধরনের হয়। ক্লায়েন্ট-সাইড ওয়ালেট ও সার্ভার-সাইড ওয়ালেট। এই দুটি ক্যাটাগরির উপর নির্ভর করেই ওয়ালেট সেবাগুলো অফলাইন নাকি অনলাইন, কিংবা ব্যবহারকারীর নাকি কোনো কোম্পানির নিয়ন্ত্রণাধীন হবে তা নিশ্চিত করে।

ক্লায়েন্ট-সাইড ওয়ালেট সাধারণত ব্যবহারকারীর নিয়ন্ত্রণাধীন। ব্যবহারকারীকে ব্যক্তিগত স্মার্টফোন বা কম্পিউটারে একটি অ্যাপলিকেশন ইন্সটল করতে হয় এবং পেমেন্ট সংক্রান্ত তথ্যাদি ইনপুট দেওয়ার পাশাপাশি কোনো সেবা বা পণ্যের মূল্য পরিশোধের জন্য ব্যক্তিগত ব্যাংক অ্যাকাউন্টের সাথে সংযুক্ত করে অথবা অন্য কোনোভাবে টাকা রিচার্জ করে অ্যাপ্লিকেশনটিকে সচল করতে হয়।

ক্লায়েন্ট-সাইড ডিজিটাল ওয়ালেট সেবাতেই পণ্যের মূল পরিশোধ সংক্রান্ত কাজ ছাড়াও আরো অনেক কিছুই করা যায়; Image Source: icicibank.com

ক্লায়েন্ট সাইড ওয়ালেটের প্রধান সমস্যা হচ্ছে সামঞ্জস্যপূর্ণ অ্যাপ্লিকেশন ও ইন্টারনেট ছাড়া এটি ব্যবহার করা সম্ভব নয়। তাছাড়া ঐ সেবা যদি থার্ড পার্টি অ্যাপ্লিকেশন হয়ে থাকে, তাহলে ঐ অ্যাপ ব্যবহার করার জন্য হয়তো ব্যবহারকারীকে আলাদা চার্জও দিতে হতে পারে। এমনকি যেহেতু মাঝে মাঝে পুরো প্রক্রিয়াটিতে থার্ড পার্টি অ্যাপ্লিকেশনের ভূমিকা থাকে সেহেতু ব্যবহারকারীর গোপনীয়তা এবং আর্থিক নিরাপত্তার সংক্রান্ত জটিলতাগুলোর ব্যাপারেও গ্রাহককে সচেতন থাকতে হয়। তবে এই ওয়ালেট ব্যবস্থাটি স্বাধীন ব্যবহার বিধি নিশ্চিত করে এবং দৈনন্দিন জীবনে পেমেন্ট সংক্রান্ত তথ্যাদিগুলোর বারবার ব্যবহারকে আরো সহজ করে দেয়। এছাড়াও ক্লায়েন্ট-সাইড ডিজিটাল ওয়ালেটই অধিকাংশ ক্ষেত্রে ভোক্তাকে একের অধিক পেমেন্ট মেথড ব্যবহারের সুযোগ দেয়।

অন্যদিকে, সার্ভার-সাইড ওয়ালেট পুরোপুরি বিপরীত। এই ওয়ালেট ব্যবস্থায় ব্যবহারকারীকে একটি কোম্পানির নিয়ন্ত্রণাধীন হতে হয়। ঐ কোম্পানির সার্ভারে ব্যবহারকারীর নামে পর্যাপ্ত তথ্য-উপাত্ত সহ একটি নিবন্ধিত অ্যাকাউন্ট থাকে এবং ঐ অ্যাকাউন্টে প্রবেশ করার জন্য একটি নির্দিষ্ট পাসওয়ার্ড ব্যবহার করতে হয়। তবে সার্ভার-সাইড ওয়ালেটের মূল সমস্যা হচ্ছে, এর সীমাবদ্ধতা।

বিকাশ সার্ভার-সাইড ডিজিটাল ওয়ালেট সেবা দিয়ে থাকে; Image Source: bKash Limited

প্রথমত, এই ওয়ালেট ব্যবহারের জন্য ভোক্তাকে একই ওয়ালেট মেথড বা একই কোম্পানির ওয়ালেট ব্যবস্থা চালু আছে এমন বিক্রয় প্রতিষ্ঠান থেকে পণ্য ক্রয় করতে হয়। তবে সার্ভার-সাইড ওয়ালেটে অ্যাপ্লিকেশন নির্ভর সেবা থাকলেও, ব্যবহারের ডিফল্ট প্রক্রিয়াটি সাধারণ মোবাইল সিমের ব্যালেন্স চেকিং এর মতো; অর্থাৎ যেকোনো ফোনে কি-প্যাডে নির্ধারিত কমান্ড লিখেই এই ওয়ালেট ব্যবস্থাটি ব্যবহার করা যায়। বাংলাদেশে ব্র্যাক ব্যাংকের ‘বিকাশ’, ডাচ বাংলা ব্যাংকের ‘রকেট’য়ের মতো সার্ভিসগুলো সার্ভার-সাইড ডিজিটাল ওয়ালেট সুবিধা দিয়ে থাকে।    

নিরাপত্তা ও সুবিধা-অসুবিধা    

ডিজিটাল লেনদেনের ব্যাপারটির ক্ষেত্রে ‘নিরাপত্তা’ এবং ‘গোপনীয়তা’র মতো দুটো প্রচলিত শব্দ বরাবরের মতোই মানুষের মাঝে আশঙ্কা তৈরি করে। মানুষ খুব সহজেই চিন্তা করে বসে থাকে, পৃথিবীর কোথাও না কোথাও কিছু সাইবার অপরাধী তাদের টাকা মেরে দেওয়ার ধান্দায় বসে রয়েছে। ডিজিটাল ওয়ালেট সেবার জটিলতাগুলোর কারণে এই ধরনের উদ্বেগ আরো বেশি জোরালো। কেননা, এই সেবা ব্যবহার করে ভোক্তা এবং বিক্রেতার মাঝে খুব সহজে লেনদেন সম্পন্ন করা গেলেও, টেকনিক্যালি পুরো প্রক্রিয়াটি বেশ জটিল এবং কয়েকটি ভাগে বিভক্ত।

ক্লায়েন্ট সাইড ওয়ালেটের কথাই ধরা যাক। প্রথমত, নিজের মোবাইল ফোনে একটি অ্যাপ ইন্সটল করতে হয়। এরপর ঐ অ্যাপে নিজের এবং ব্যাংক অ্যাকাউন্টের তথ্য দিয়ে একটি লগইন করার ব্যাপারটি আসে। অ্যাপটি একটি সার্ভারের সাথে সংযুক্ত থাকে। ঐ সার্ভারটি লেনদেনের সময় গ্রাহকের অ্যাকাউন্টের সাথে বিক্রেতার অ্যাকাউন্টের ডাটা বাইপাস করে পুরো প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করে। এইসব ধাপের কোনো একটিতে নিরাপত্তাজনিত ত্রুটি দেখা দিলেই হয়তো ভোক্তা তার সব জমাকৃত অর্থ বা গোপন কোনো তথ্য হারাতে পারেন। এ কারণে, পুরো ব্যাপারটি বেশ উদ্বেগেরই।

ডিজিটাল লেনদেনের ব্যাপারে অধিকাংশ মানুষই নিরাপত্তাজনিত আশংকায় থাকে; Image Source: bcmy.io

কিন্তু স্বস্তির বিষয় হচ্ছে, ডিজিটাল ওয়ালেট সেবা ভিত্তিক অ্যাপ এবং এর সাথে সম্পর্কযুক্ত সার্ভার সহ সব কিছুই অতিরিক্ত নিরাপত্তা বলয়ের মধ্যে থাকে। অনলাইন এবং অফলাইন, যেকোনো মাধ্যমে লেনদেনের সময় প্রেরক এবং প্রাপকের মধ্যে যে অদৃশ্য যোগাযোগ হয়, তা পুরোপুরি ডিজিটাল সার্টিফিকেশনের আওতাধীন। অর্থাৎ, সবকিছু এনকোডেড।

এ কারণে, হ্যাকারদের দ্বারা রিমোটলি ভোক্তার ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টে ঢুকে ক্ষতিসাধন করা সম্ভব নয়। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে ব্যবহারকারীর সচেতনতা, নিরাপত্তা জনিত সমস্যাগুলোকে সমাধান করতে পারে। যেমন পাসওয়ার্ড কাউকে না জানানো এবং সহজেই ধারণা করা যায় এমন পাসওয়ার্ড দিয়ে নিজের ফোন অন্য কারো কাছে রেখে না যাওয়া; অর্থাৎ, কাউকে ঘরের শত্রু বিভীষণ হওয়ার সুযোগ না দিলেই অধিকাংশ ক্ষেত্রে নিরাপত্তা সমস্যাগুলো সমাধান করা যায়।

অন্যদিকে, ডিজিটাল ওয়ালেট সাধারণ ওয়ালেট বা ডেবিট, ক্রেডিট কার্ড থেকে বেশি নিরাপত্তা দিয়ে থাকে। আপনার ওয়ালেট হারানো বা চুরি যাওয়ার সাথে সাথে নগদ অর্থ হারানো সম্ভাবনা তৈরি হয়। পাশাপাশি, ডেবিট-ক্রেডিট কার্ড হারিয়ে ফেললে, সেগুলো পুনরায় পাওয়া বেশ সময় সাপেক্ষ। কিন্তু ডিজিটাল ওয়ালেটে এই সমস্যা নেই। ফোন হারিয়ে ফেললেও টাকা চুরি যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে না। এমনকি, খুব সহজেই ব্যবহৃত সিম কার্ডটি উদ্ধার করা যায়।

ওয়ালেট চুরি যাওয়ার সাথে সাথে নগদ অর্থ হারানো সম্ভাবনা তৈরি হয়। কিন্তু ডিজিটাল ওয়ালেটে এই সমস্যা নেই; Image Source: newsbook.com.mt

যেহেতু অফলাইন, অনলাইন দুটি সেবার ক্ষেত্রেই ফোনের চার্জের উপর নির্ভর করতে হয়, সেহেতু মোবাইল ফোনের চার্জ শেষ হয়ে গেলে সমস্যা সম্মুখীন হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তবে, প্রযুক্তির উৎকর্ষতা বৃদ্ধির সাথে সাথে এই সমস্যার সমাধানও হচ্ছে। যেমন নিয়ার ফিল্ড কমিউনিকেশন বা এনএফসি প্রযুক্তিতে ব্যবহৃত চিপগুলো ব্যবহারের জন্য কোনো রকমের চার্জের প্রয়োজন হয় না। ঐ চিপের সাথে সংযুক্ত ম্যাগনেটিক ফিল্ড থেকেই শক্তি উৎপাদন করে সেটি কাজ চালাতে পারে। তাছাড়া বর্তমানে মোবাইল ফোনের সাথে সংযুক্ত এনএফসি চিপগুলো অধিকাংশ ক্ষেত্রেই আর্থিক লেনদেন পরিচালনার জন্য তৈরি করা হয়। যে কারণে, এগুলো এনক্রিপটেড হওয়ার সাথে সাথে বেশ শক্তিশালীও হয়ে থাকে। অর্থাৎ, ভবিষ্যতে হয়তো চার্জ বিহীন মোবাইল ফোনের মাধ্যমেও ডিজিটাল ওয়ালেট সেবা ব্যবহার করা যাবে।

আদি কথন

১৯৯৭ সালের দিকে বিশ্ব বিখ্যাত সফট ড্রিংক প্রস্ততকারক কোম্পানি কোকা-কোলা, ফিনল্যান্ডের হেলসিঙ্কি শহরে পরীক্ষামূলকভাবে কিছু মেশিন স্থাপন করেন, যেখানে শুধুমাত্র মোবাইল ফোন থেকে মেসেজ করার মাধ্যমে ভোক্তারা কোকা-কোলার যেকোনো সফট ড্রিংক কিনতে পারতেন। সম্ভবত, কোকা-কোলার এই চেষ্টাই ডিজিটাল ওয়ালেটের আদি সংস্করণ

এরপর, নব্বইয়ের শেষের দিকে এলন মাস্কের ‘এক্স ডট কম’ এবং ম্যাক্স লেভচিন, পিটার থিয়েল ও লুক নসেকের ‘কনফিনিটি’র মতো অনলাইন ব্যাংকিংয়ের ধারণাকে বাস্তবে রূপদান এবং পরবর্তীতে দুই দলের একত্রিত হওয়ার মাধ্যমে ‘পেপাল’ আবির্ভূত হয়। ১৯৯৮ সালে, দুই দল যখন পুরো ব্যাংকিং ব্যবস্থাকেই অনলাইন ভিত্তিক করার ধারণাকে বাস্তবায়ন করছিল, এস ইয়ং লি এবং তার দল ‘ব্যক্তি থেকে ব্যক্তি’ মানি ট্রান্সফারের জন্য অনলাইন সেবা ‘বিলপয়েন্ট’ নিয়ে হাজির হয়।

একই সময়ে, অকশন সাইট ‘ই-বে’র ‘যাত্রার শুরুতেই বাজিমাত’ এর দিন চলছিল। আর নিলামের ব্যাপারটি যেহেতু ব্যক্তি থেকে ব্যক্তি ভিত্তিকই হয়ে থাকে, সেহেতু নিজেদের পেমেন্ট সিস্টেম হিসেবে ১৯৯৯ সালে ই-বে ‘বিলপয়েন্ট’কে কিনে নেয় এবং ২০০০ সালে এটি ই-বে’র পেমেন্ট সিস্টেম হিসেবে আবির্ভূত হয়।

পেপালের ডিজিটাল ওয়ালেট অ্যাপ; Image Source: theverge.com

কিন্তু ২০০০ সালের শুরু থেকেই দেখা যায়, ই-বের গ্রাহকরা ই-বে পেমেন্ট থেকে পেপালের মাধ্যমে লেনদেন করতেই বেশি স্বতঃস্ফূর্ত। ২০০২ কোম্পানিটি পেপালকেও কিনে নেয়। আর এভাবেই, পণ্যের মূল্য পরিশোধে ডিজিটাল মুদ্রার দৌড় শুরু হয়।

ডিজিটাল ওয়ালেটের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ

বর্তমানে, ডিজিটাল ওয়ালেট প্রযুক্তির দ্বিতীয় প্রজন্ম চলছে। উন্নত বিশ্বে এই প্রযুক্তি নিয়ে নানান উদ্ভাবনী কাজ হওয়ার পাশাপাশি তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতেও বিভিন্ন ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানের পৃষ্ঠপোষকতায় সীমিত সেবামূলক ডিজিটাল ওয়ালেট ব্যবস্থা চালু হচ্ছে।

যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ৮ কোটি মানুষ নিয়মিত সেবা-পণ্য কিনতে ডিজিটাল ওয়ালেট প্রযুক্তির ব্যবহার করছে। ‘বিজনেস ইনসাইডার ইন্টেলিজেস’য়ের করা একটি জরিপে উঠে এসেছে, আগামী ২০২০ সালের মধ্যে শুধুমাত্র যুক্তরাষ্ট্রেই প্রায় ৫০৩ বিলিয়ন ডলারের ই-ওয়ালেট লেনদেন সম্পন্ন হবে। তাছাড়া, ২০১৫ সাল থেকে ডিজিটাল ওয়ালেট সেবা বৃদ্ধির বাৎসরিক হার প্রায় আশি শতাংশ।

বিশ্বব্যাপী সবচাইতে বেশি ব্যবহৃত ডিজিটাল ওয়ালেট কোম্পানি; Image Source: Statista

বাংলাদেশেও বিকাশ, রকেট, ইউক্যাশ, এমক্যাশের মতো মোবাইল ব্যাংকিং সেবাগুলোও ই-ওয়ালেট সেবার মান বৃদ্ধি করছে। নামী দামী, বৃহৎ পণ্য বিক্রয় প্রতিষ্ঠানগুলোর পাশাপাশি স্বতন্ত্র মালিকানাধীন ছোট ছোট প্রতিষ্ঠানগুলোও ভোক্তাদের সাথে লেনদেনে এইসব সেবা ব্যবহার করছে। গত বছরের নভেম্বরে ডাচ বাংলা ব্যাংকের পৃষ্ঠপোষকতায় এবং ডাটা সফট ও ফাইনটেক সহযোগিতায় বাজারে এসেছে ‘পে ৩৬৫’য়ের মতো ডিজিটাল ওয়ালেট সেবা। তাছাড়াও, দেশে অ্যাপ ভিত্তিক রাইড শেয়ারিং প্রতিষ্ঠান পাঠাও ডিজিটাল ওয়ালেট সেবা ‘পাঠাও-পে’র ঘোষণা দিয়েছে। অন্যদিকে, এই খাতে তরুণ উদ্যোক্তাদের দ্বারা ‘মুঠোপে’র মতো দেশি স্টার্টাআপও তৈরি হচ্ছে।

ডিজিটাল পেমেন্ট সিস্টেম নিয়ে গুগল, অ্যাপল, স্যামসাং’য়ের মতো টেক জায়ান্টগুলো দৌড় ঝাঁপ দেখলেই বোঝা যায়, ডিজিটাল ওয়ালেট বা ই-ওয়ালেট প্রযুক্তি বেশ দ্রুতগতিতে প্রচলিত কাগজের মুদ্রার লেনদেনের জায়গা দখল করে নিবে। এমনকি, এক সময় প্রচলিত ডেভিড ও ক্রেডিট কার্ডের প্রয়োজনীয়তাও হারাবে

পাল্লা দিয়ে বাড়ছে টেক জায়ান্টগুলোর নিজস্ব ডিজিটাল ওয়ালেট সেবা; Image Source: cnet.com

তবে, ডিজিটাল ওয়ালেটকে যেভাবে কল্পনা করা হয়, সে পর্যায়ে পৌঁছাতে আরো সময়ের প্রয়োজন। যেমন একই কোম্পানির ওয়ালেট মেথড ব্যবহার ছাড়া ভোক্তা এবং বিক্রেতার লেনদেন বর্তমানে তেমন একটা সম্ভব নয়। এছাড়াও, পূর্বে উল্লেখ করা ক্লায়েন্ট-সাইড ওয়ালেট ব্যবস্থাটির প্রচলনও তেমন একটা শুরু হয়নি। তবে SGPay’য়ের মতো প্রজেক্টগুলো এই সীমাবদ্ধতা দূরীকরণে কাজ করে যাচ্ছে।

বর্তমানে, নিয়ার ফিল্ড কমিউনিকেশন (এনএফসি) প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ছে। এই প্রযুক্তি সাহায্যে মূল্য পরিশোধের জন্য ভোক্তা নিজের ডেভিড কার্ড অথবা ক্রেডিট কার্ড পয়েন্ট অফ সেল (পিওএস) মেশিনে পাঞ্চ না করে, কাছাকাছি ধরলেই লেনদেন হয়ে যায়। নানান ধরনের সীমাবদ্ধতা থাকলেও, এটি সীমিত আঁকারে প্রায় অধিকাংশ দেশেই প্রচলিত একটি ব্যবস্থা।

এনএফসি চিপ সম্বলিত মোবাইল ফোন পয়েন্ট অফ সেল মেশিনে কাছাকাছি এনেই পরিশোধ করা যাবে যেকোনো পণ্যের মূল্য; Image Source: fidelity.com 

তবে স্মার্ট ওয়াচ, স্মার্ট ব্যান্ডের মতো সব রকমের স্মার্ট ওয়ারেবল পণ্য এবং মোবাইল ফোন প্রযুক্তিতে শক্তিশালী সেন্সরের ব্যবহার বৃদ্ধির কারণে, এনএসফি প্রযুক্তি সাথে ডিজিটাল ওয়ালেটের সংযোগ নিয়ে নতুন স্বপ্ন দেখছে টেক জায়ান্টগুলো। খুব শীঘ্রই হয়তো ডেভিড কার্ড অথবা ক্রেডিট কার্ডের বদলে আপনার স্মার্ট ব্যান্ডটি পয়েন্ট অফ সেলস মেশিনের কাছাকাছি ধরেই পণ্যের মূল্য পরিশোধ করতে পারবেন।

এধরনের প্রজেক্টগুলোর সফলতাই ভোক্তাদের তৃতীয় প্রজন্মের ডিজিটাল ওয়ালেটের দুনিয়ায় নিয়ে যাবে। এমনকি, প্রযুক্তির উৎকর্ষতা বৃদ্ধির সাথে সাথে ক্রিপ্টো-কারেন্সি নির্ভর ডিজিটাল ওয়ালেট সেবার অগ্রগতিও অস্বাভাবিক কিছু না।

This article is in Bangla language. It's about the future of payment system 'Digital Wallet'. Necessary references have been hyperlinked.

Featured Image: pymnts.com

Related Articles