Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের জন্য প্রয়োজনীয় কিছু সফটওয়্যার ও ডিজিটাল সেবা

যেহেতু আপনি এই মুহূর্তে এ লেখাটি পড়তে পারছেন তাই বলা যায়, আপনি সৌভাগ্যবানদের একজন। কারণ গোটা পৃথিবীর ৭০০ কোটি মানুষের মধ্যে প্রায় সাড়ে তিন কোটিরও বেশি মানুষ পৃথিবীর আলো থেকে সম্পূর্ণরূপে বঞ্চিত। তারা আমার আপনার মতো অবসর পেলেই ভ্রমণে যেতে পারেন না কিংবা সপ্তাহের শেষ কর্মদিবসটিতে রাত জেগে মুভি দেখার প্ল্যান করতে পারেন না। 

দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের দৃষ্টি চিকিৎসার মাধ্যমে ফিরিয়ে দেওয়া সবক্ষেত্রে সম্ভব না হলেও গবেষক ও প্রযুক্তিবিদেরা তাদের জীবনযাত্রাকে সহজ করে দিতে নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। যুগান্তকারী ‘ব্রেইল’ আবিষ্কৃত হওয়ার পর আরও অনেক বিকল্প গ্যাজেট তৈরি করা হয়েছে দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের সহায়তা করার জন্য। এছাড়া বর্তমানে তথ্য ও প্রযুক্তিগত ক্ষেত্রে তাদের প্রবেশ সুগম করার লক্ষ্যে তৈরি করা হচ্ছে বেশ উপকারি কিছু অ্যাপ্লিক্যাশন সফটওয়্যার। আজ আমরা তেমনই কিছু প্রয়োজনীয় অ্যাপ্লিকেশন সম্পর্কে জানাবো, যা দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের জন্য খুবই সহায়ক।

দৃষ্টি প্রতিবন্ধীকতার ধরন ও বিশেষ সেবা

গ্লুকোমা, ক্যাটারেক্ট, ম্যাকুলার ডিজেনারেশন, ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি ইত্যাদি উপসর্গের কারণে একজন ব্যক্তির দৃষ্টিগত সমস্যা দেখা দিতে পারে। এগুলোর মধ্যে কোনো কোনোটির প্রভাবে কেউ সম্পূর্ণরূপে অন্ধও হয়ে যেতে পারেন। এছাড়া বর্ণান্ধতা, দূরদৃষ্টি, হ্রস্বদৃষ্টিসহ আরো অনেক ধরনের চোখের সমস্যায় একজন মানুষ ভুগতে পারেন। আবার রাতকানা রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি অন্ধকারে ভালো দেখতে পান না।

মাইকেল ফোরজানো একজন জন্মান্ধ। Binghamton University থেকে স্নাতক পাশ করে তিনি এখন ‘Amazon‘ এ কোডার হিসেবে চাকরি করছেন; Image Source: cnbc.com

তবে এখানে আমাদেরকে একটি কথা মাথায় রাখতে হবে, ‘দৃষ্টিজনিত সমস্যা’ আর ‘অন্ধত্ব’ এ দুটি পুরোপুরি এক নয়। যাদের দৃষ্টিজনিত সমস্যা থাকে, তাদের ‘’চোখ’ নামক অঙ্গটি একেবারে অকেজো হয়ে পড়ে না। কিছু দৃষ্টি সহায়ক যন্ত্র ব্যবহার করে কোনোরকমে দেখার কাজটা চালিয়ে নেওয়া যায়। কিন্তু যারা পুরোপুরি অন্ধ অর্থাৎ কিছুই দেখতে পান না, তাদের ব্যাপারটি সম্পূর্ণ ভিন্ন। ‘চোখ’ নামক অঙ্গটি থাকার পরও তারা দেখতে পান না। তারা বাকি চারটি ইন্দ্রিয়ের সাহায্যে কাজ চালিয়ে নেন। বিভিন্ন কম্পিউটার ও মোবাইল অ্যাপ্লিকেশনগুলো মূলত তাদের কথা মাথায় রেখেই বানানো হয়।

দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের জন্য তৈরি করা সফটওয়্যারগুলো বিভিন্ন ডিভাইস ও কাজের ধরন অনুসারে বিভিন্ন প্রকারের হয়ে থাকে। সেগুলোর মধ্যে রয়েছে অপারেটিং সিস্টেম, অডিও বুক, স্ক্রিন রিডার, অ্যাক্সেসিবিলিটি অ্যাপ্লিকেশন, অনলাইন ভিত্তিক অ্যাপ ও জব অ্যাসিস্ট্যান্ট অ্যাপ। সফটওয়্যারগুলোর কাজের ধরনে পার্থক্য থাকলেও তাদের মূল কার্যনীতি প্রায় একই। দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য তৈরি করা এসব সফটওয়্যারগুলো সাধারণত দুটি ভাগে কাজ করে। প্রথমত, এরা স্ক্রিনের লেখাকে উচ্চারণের ধরন অনুসারে শব্দে রূপান্তরযোগ্য ডিজিটাল সিগন্যালে পরিণত করে এবং পরবর্তীতে সেটি ব্যবহার করে দৃষ্টিহীন ব্যক্তিকে লেখাটি পড়ে শোনায়।

অডিও সার্ভিস ও ডিজিটাল কনটেন্টভিত্তিক সেবা

AIRS-LA 

‘অডিও ইন্টারনেট রিডার সার্ভিস অফ লস এঞ্জেলেস’ নামক সংস্থা কর্তৃক প্রদত্ত বিনামূল্যের এ সেবাটি তাদের সফটওয়্যার বা ওয়েবসাইটের মাধ্যমে পাওয়া যায়। তবে নাম দেখে বিভ্রান্ত হওয়ার কোনো কারণ নেই। লস এঞ্জেলেসের বাইরের বাসিন্দারাও রেজিস্ট্রেশন করার মাধ্যমে এ সেবা পেতে পারবেন। এ ব্যবস্থায় কোনো অন্ধ ব্যক্তিকে ইন্টারনেট ভিত্তিক কোনো ডিজিটাল কনটেন্ট পড়ে শোনানো হয়। আবার স্বেচ্ছাসেবীরা কিছু ম্যাগাজিন, বই, সাম্প্রতিক সংবাদপত্রে ও বিভিন্ন আর্টিকেল উচ্চারণ করে পড়েন এবং সেগুলো রেকর্ড করে রাখা হয়। এরপর অ্যাপের মাধ্যমে বা ওয়েবসাইটে গিয়ে দৃষ্টিহীন ব্যক্তিরা এসব শুনে নেন। অ্যাপ্লিকেশন সেবাটি এন্ড্রয়েড এবং আই-ওএস এর জন্য।

BARD 

পূর্ণরূপ ‘ব্রেইল এন্ড অডিও রিডিং ডাউনলোড’। এটি একটি ফ্রি অ্যাপ ও ওয়েবসাইট ভিত্তিক সেবা যা মার্কিন যুক্তরাষ্টের ‘ন্যাশনাল লাইব্রেরি সার্ভিস’ দিয়ে থাকে। এর সাথে AIRS-LA এর সেবার মিল রয়েছে। এটিও এন্ড্রয়েড ও আই-ওএস সমর্থিত।

Sero 

এটি ‘সিরোটেক’ কর্পোরেশনের তৈরি একটি স্মার্টফোন অ্যাপ। এর মাধ্যমে উপরে বর্ণিত সেবাগুলোর মতো অনুরূপ সেবা পাওয়া যায়। তবে এর একটি বিশেষ দিক হলো এটি দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের জন্য শিক্ষামূলক অডিও যেমন বিভিন্ন টিউটোরিয়াল সংরক্ষণ করে এবং যেকোনো ব্যবহারকারী প্রয়োজনে এতে নতুন কোনো বই, ম্যাগাজিন, পত্রিকা বা অন্য কোনো কিছুর অডিও পাওয়ার জন্য অনুরোধ পাঠাতে পারেন। অ্যাপটি এন্ড্রয়েড এবং আই-ওএস এ ব্যবহারযোগ্য।

Audible 

এটি ‘অ্যামাজন’ এর একটি সফটওয়্যার ও ওয়েবসাইট ভিত্তিক সেবা, যার সাহায্যে অসংখ্য অডিও বই পড়ার সুযোগ পাওয়া যাবে। এর অডিও বইয়ের স্টোর বেশ সমৃদ্ধ। তবে এই সেবাটি বিনামূল্যে মাত্র ৩০ দিন পাওয়া যাবে। এরপর অব্যহত সেবা পেতে অর্থ পরিশোধ করতে হবে। এর অ্যাপ ভার্সনটি এন্ড্রয়েড, আই-ওএস এবং উইন্ডোজচালিত ফোনে ব্যবহার করা যায়।

Audible এর অডিও বুক স্টোর বেশ সমৃদ্ধ; Image Source: Amazon.com

ডেস্কটপ ও জব অ্যাসিস্ট্যান্ট(স্ক্রিন রিডার)

ন্যারেটর (Narrator) 

উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেমে এই প্রোগ্রামটি বিল্ট-ইন হিসেবেই দেওয়া থাকে। এটি একটি স্ক্রিন রিডার অ্যাপ্লিকেশন। এর আধুনিক ভার্সনে কার্সরের গতিবিধি ধারাবাহিক শব্দের মাধ্যমে ব্যবহারকারীর কাছে উপস্থাপন করা হয়। ফলে ব্যবহারকারী ব্যক্তি সহজেই অনুমান করতে পারেন, তিনি এখন স্ক্রিনের কোন জায়গায় আছেন এবং কোনদিকে কত দ্রুত মাউসের কার্সরটি সরাচ্ছেন।

এনভিডিএ (Non Visual Desktop Acces

মাইকেল কারান ও জেমস টে নামক দুজন সফটওয়্যার প্রকৌশলী দেখলেন, দৃষ্টিহীন ব্যক্তিদের কম্পিউটার ব্যবহারে সাহায্যকারী তেমন কোনো কার্যকর অ্যাপ্লিকেশন নেই যা বিনামূল্যে ব্যবহার করা যায়। তারা দুজন শুধুমাত্র নিজেদের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠা করেন NV Access নামক একটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠান, যার লক্ষ্য দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের জন্য এমন একটি ফ্রি সফটওয়্যার তৈরি করা, যার সাহায্যে তারা সহজেই কম্পিউটার ব্যবহার করতে পারবেন। উল্লেখ্য, তারা দুজনও দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ছিলেন! তাদের তৈরি এ সফটওয়্যারটি একজন দৃষ্টিহীন ব্যক্তির সাথে আন্তঃক্রিয়ার মাধ্যমে তাকে কম্পিউটার ব্যবহারে সাহায্য করে, একইসাথে এটি একটি স্ক্রিন রিডার অ্যাপ।

কম্পিউটার ব্যবহারকারী ব্যক্তি মাউসের কার্সর বা পয়েন্টার কম্পিউটার স্ক্রিনের যে অংশে নিয়ে যাবেন, এ সফটওয়্যারটি তাকে সেই অংশের লেখা পড়ে শোনাবে, কিংবা সেই স্থানে কোনো মেন্যু, ডায়ালগ বক্স বা অন্য কোনো ডিজিটাল তথ্য থাকলে তাও বলবে। আবার ব্যবহারকারী বিভিন্ন কিবোর্ড-শর্টকাট ব্যবহার করে স্ক্রিনের বিভিন্ন অংশ সিলেক্ট করতে কিংবা কোনো বিশেষ অংশে প্রবেশ করতে পারেন। এটি শুধুমাত্র মাইক্রোসফটের উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহারকারীদের জন্য।

জেমস টে ও মাইকেল কারান; Image Source: TEDx Talks/YouTube

অরকা (Orca

অরকা লিনাক্স-ভিত্তিক অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহারকারীদের জন্য একটি অ্যাপ। এটিও একটি স্ক্রিন রিডার। এর কাজ অনেকটা পূর্বোক্ত সফটওয়্যারগুলোর মতোই।

ব্রিলটি (BRLTTY)

এটি লিনাক্সে ব্যবহৃত একটি অ্যাপ্লিকেশন যা ‘রিফ্রেশেবল ব্রেইল ডিসপ্লে’কে নিয়ন্ত্রণ করে। রিফ্রেশেবল ব্রেইল ডিসপ্লের সাহায্যে একজন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ব্যক্তি হাতের স্পর্শের মাধ্যমে বুঝতে পারেন স্ক্রিনে কী লেখা রয়েছে। রিফ্রেশেবল ব্রেইল ডিসপ্লেকে যদি প্রিন্টারের সাথে এবং BRLTTY অ্যাপ্লিকেশনটিকে যদি ক্যামেরার সাথে তুলনা করা যায়, তাহলে বলা চলে BRLTTY একটি ভালো ক্যামেরা। প্রিন্টার যত ভালো মানেরই হোক, ছবি যদি ভালো ক্যামেরায় তোলা না হয়, তাহলে প্রিন্টার ভালো ছবি প্রিন্ট করতে পারবে না। এই অ্যাপ্লিকেশনটির নতুন ভার্সনগুলোকে স্ক্রিন রিডার হিসেবেও ব্যবহারোপযোগী করে তোলা হয়েছে।

 JAWS (Job Access With Speech)

যেসব সফটওয়্যারগুলো দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের দৈনন্দিন জীবনের পাশাপাশি কর্মক্ষেত্রেও সহায়তা করে থাকে, সেগুলোর মধ্যে JAWS  নিশ্চিতভাবেই সবার উপরে থাকবে। একজন দৃষ্টিহীন ব্যক্তির যেসকল ধরনের ভার্চুয়াল সহায়তার দরকার হতে পারে, তার বেশির ভাগই এই সফটওয়্যারটিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এ সফটওয়্যারটিতে ওয়ার্ড প্রসেসিং এর উপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। ফলে অফিস-আদালত বা পেশাজীবীদের ব্যবহারের জন্য এটি বেশ জনপ্রিয় একটি সফটওয়্যার। এটি শুধুমাত্র উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেমে সমর্থিত। এ সফটওয়্যারটি মোটামুটি ব্যয়বহুল হলেও দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের দ্বারা ব্যবহৃত জনপ্রিয় সফটওয়্যারের তালিকায় এটি সবার উপরে আছে।

সিস্টেম এক্সেস (System Acces) 

স্বল্প ব্যয়ে কমার্শিয়াল স্ক্রিন রিডার ব্যবহার করতে চাইলে, ‘সেরোটেক’ কর্পোরেশনের তৈরি এই অ্যাপ্লিকেশনটি একটি ভালো অপশন। সিস্টেম এক্সেস অ্যাপটি সমজাতীয় অন্যান্য কমার্শিয়াল অ্যাপসগুলোর চেয়ে তুলনামূলক কম অর্থ খরচ করেই বৈধভাবে ব্যবহার করা যাবে। এর একটি বিশেষ সুবিধা হচ্ছে, এটি ব্যবহারকারীদের কাছ থেকে পাওয়া ফিডব্যাক ও পরামর্শগুলো গুরুত্বের সাথে নেয় এবং সেগুলোর উপর ভিত্তি করে পরবর্তী আপডেটে অ্যাপটিকে আরও ব্যবহার উপযোগী করে দেয়। আপডেটগুলো ফ্রিতে পাওয়া যায়।

ইম্যাক স্পিক (EmacSpeak)

অ্যাপভিত্তিক এই সেবাটি লিনাক্স অপারেটিং সিস্টেমে সমর্থিত। এটি দৃষ্টিহীন ব্যক্তিদের অনলাইন কার্যক্রম, বিশেষ করে ব্রাউজিং, ইমেইল আদান-প্রদান ও মেসেজ পাঠের জন্য বিশেষ উপযোগী করে বানানো হয়েছে।

উল্লেখ্য, স্ক্রিন রিডার অ্যাপ্লিকেশনগুলোকে ইবুক রিডার হিসেবে ব্যবহার করে বইসহ নানান ডকুমেন্টও পড়া যায়। কিছু কিছু স্ক্রিন রিডারে ‘ন্যাচারাল টেক্সট-টু-স্পিচ’ ফিচার থাকে। ফলে যন্ত্র যখন লেখা পড়ে শোনায়, তখন সেটিকে খুব একটা যান্ত্রিক স্বর বলে মনে হয় না। ফলে স্বাচ্ছন্দ্যে ইবুকটি উপভোগ করা যায়।

স্মার্টফোন অ্যাপস

গুগল টক ব্যাক; Image Source: androidpolice.com

গুগল টক ব্যাক (Google Talk Back) 

প্রায় সব অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেম চালিত স্মার্টফোনে গুগলের এ অ্যাপটি দেওয়া থাকে। তবে এটি স্বয়ং সম্পূর্ণ কোনো অ্যাপ্লিকেশন নয়। এটি গুগলের ‘টেক্সট-টু-স্পিচ’ নামক আরেকটি সফটওয়্যারের সহায়তায় কাজ করে। ‘টেক্সট-টু-স্পিচ’ এমন একটি সফটওয়্যার, যা স্ক্রিনে থাকা লেখাগুলোকে অডিও সিগন্যালে রূপান্তরিত করে। আর ‘টক-ব্যাক’ এটির সাহায্য নিয়ে স্ক্রিনের বিভিন্ন অংশ ব্যবহারকারীকে পড়ে শোনায়। এরপর ব্যবহারকারী ব্যক্তিটি যেকোনো একটা অপশন বা অ্যাপ বাছাই করেন, ‘টক-ব্যাক’ নিশ্চিত করে কোন অ্যাপ বা অপশনটি বাছাই করা হয়েছে। এরপর ব্যবহারকারী স্ক্রিনের যেকোনো স্থানে পরপর দুইবার স্পর্শ করলে সেই নির্দিষ্ট অপশন বা অ্যাপ্লিকেশনটিতে প্রবেশ করতে পারেন।

ভয়েস ওভার (VoiceOver) 

দৃষ্টিহীনদের কথা মাথায় রেখে অ্যাপল সর্বপ্রথম ম্যাক ওএস-এক্স অপারেটিং সিস্টেমে ভয়েসওভার নামক সেবাটি যুক্ত করে। পরবর্তীতে এটি আইওএস এও যুক্ত করা হয়। আইফোন বা আইপ্যাডের টাচস্ক্রিনে এটিকে খুব দক্ষতার সাথে ব্যবহার করা যায়। এর কাজের ধরন অনেকটা গুগলের ‘টক-ব্যাক’ এর অনুরূপ। তবে অনান্য অনেকগুলো অ্যাপ্লিকেশনের সাথে ভয়েসওভারের বড় একটি পার্থক্য হচ্ছে এটি নিজ থেকে ব্যবহারকারীকে বিভিন্ন পরামর্শ ও অপশন দিয়ে থাকে।

ব্যবহারকারী স্ক্রিনে স্পর্শ করার মাধ্যমে কোনো একটি বিশেষ অ্যাপ্লিকেশন বা কোনো একটি ফোল্ডার বাছাই করলে সেখান থেকে আর কী কী করা যাবে এবং পরবর্তী ধাপে কীভাবে কী করতে হবে, সে ব্যাপারে ব্যবহারকারীকে দিকনির্দেশনা দেয় এই অ্যাপটি। অনেক ব্যবহারকারীর মতে, অ্যাপলের এ সেবাটি সমজাতীয় অন্যান্য অনেক অ্যাপ্লিকেশনের তুলনায় বেশ উন্নতমানের। উপযুক্ত সেটিং এর মাধ্যমে এটিকে আরও ব্যবহারোপযোগী করে তোলা যায়।

অপারেটিং সিস্টেম

মিখাইল পোজিদেভ; Image Source: Impact Journalism Day

ভিনাক্স (Vinux) 

এটি লিনাক্স উবুন্টু এর উপর ভিত্তি করে তৈরি করা একটি অপারেটিং সিস্টেম। এটি মূলত দৃষ্টিহীন ব্যক্তিদের জন্যই বানানো হয়েছে। এর মেন্যু ও অ্যাপ্লিকেশনগুলো দৃষ্ট প্রতিবন্ধীদের ব্যবহারের জন্য বিশেষ উপযোগী।

লুওরেইন (Luwrain) 

রাশিয়ান ডেভেলপার মিখাইল পোজিদেভ নিজেই একজন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী। তাই তিনি অন্যান্য দৃষ্টিহীনদের সমস্যাটি ভালোভাবে বোঝেন। তিনি মনে করেন, দৃষ্টিহীন ব্যক্তিদের জন্য তৈরি করা প্রচলিত সফটওয়্যারগুলো এমনভাবে বানানো হয়েছে যেন সেগুলো ব্যবহারকারীদেরকে সহযোগিতা করতে গিয়ে ইচ্ছাকৃতভাবেই অনেক ধীরে কাজ করে। তাই তিনি শুধুমাত্র দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের কথা মাথায় রেখে তৈরি করেন ‘লুওরেইন’ নামক অপারেটিং সিস্টেমটি।

মজার বিষয় হচ্ছে, এটিকে অপারেটিং সিস্টেম হিসেবেও ব্যবহার করা যায়, আবার চাইলে অন্যান্য অপারেটিং সিস্টেম যেমন লিনাক্স, উইন্ডোজ, ম্যাক-ওএস ইত্যাদির ভেতর অ্যাপ্লিকেশন হিসেবেও ইনস্টল করা যায়। এর ফাংশনগুলো খুবই বেসিক ও দ্রুতগতির।

অনলাইনভিত্তিক সেবামূলক অ্যাপস

বি মাই আইজ; Image Source: vimeo.com

বি মাই আইজ (Be My Eyes) 

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিকে সত্যিকার অর্থে যতগুলো ভালো কাজে লাগানো যায়, সেগুলোর মধ্যে অন্যতম সেরা নিদর্শন সম্ভবত ‘বি মাই আইজ’ নামক অ্যাপটির ধারণা। এই অ্যাপটি যে কেউ ব্যবহার করতে পারেন। এটি ইনস্টল করার পর ব্যবহারকারীর কাছে জানতে চাওয়া হয় তিনি চোখে দেখতে সক্ষম কিনা। যদি তিনি সক্ষম হয়ে থাকেন, তাহলে তিনি স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে সিস্টেমের সাথে যুক্ত হতে পারেন, তিনিই মূলত অন্ধ ব্যক্তিদের সেবাদানে ভূমিকা রাখেন। অপরদিকে যিনি দৃষ্টিহীন ব্যক্তি, তিনি সেবা নিয়ে থাকেন। এর জন্য তিনি ইন্টারনেটে যুক্ত হয়ে অনলাইনে থাকা একজন স্বেচ্ছাসেবীকে ভিডিও কল করেন এবং ফোনের ক্যামেরাটি সামনের দিকে তাক করে ধরেন, যে দিকটা তিনি দেখতে চান।

একইসাথে তার কানে ইয়ারফোন বা হেডফোন লাগানো থাকে। ফোনের অপরপ্রান্তে থাকা স্বেচ্ছাসেবী ব্যক্তিটি সেই অন্ধ ব্যক্তিটিকে বর্ণনা করে শোনান তার সামনে কী রয়েছে, সেটি দেখতে কেমন কিংবা সেই দৃষ্টিহীন ব্যক্তিকে অন্য কোনো কাজেও সহযোগিতা করে থাকেন। এ ব্যাপারটা থেকেই এই অ্যাপ্লিকেশনটির নামের সার্থকতা বোঝা যায়। এ মহান উদ্যোগটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ‘ন্যাশনাল ফেডারেশন অব দ্য ব্লাইন্ড’ এর দ্বারা পুরস্কৃত হয়েছিলো। এই অ্যাপটি বিনামূল্যে ব্যবহারের জন্য উন্মুক্ত।

ল্যাজাস (Lazzus) 

এটি অনলাইনভিত্তিক একটি অ্যাক্সেসিবিলিটি অ্যাসিস্ট্যান্ট সফটওয়্যার। তবে একে অফলাইনেও ব্যবহার করা যায়। ল্যাজাস গুগলসহ অন্যান্য কিছু প্রতিষ্ঠানের ম্যাপ ও কয়েকটি অনলাইন সেবা ব্যবহার করে ব্যবহারকারীকে কোনো প্রকার সাহায্য ছাড়াই কোনো স্থানে ভ্রমণে করতে সহায়তা করে। আবার স্মার্টফোনে অত্যাধুনিক সেন্সরসমূহ থাকলে সেগুলো ব্যবহার করে অন্যান্য দিকনির্দেশনাও দিতে পারে এই অ্যাপটি। তবে এই সেবাটি পেতে হলে অর্থ পরিশোধ করতে হয়। শুধুমাত্র প্রথম কয়েকদিন বিনামূল্যে ব্যবহার করা যায় এটি। উপরিউক্ত দুটি অ্যাপই এন্ড্রয়েড ও আই-ওএস এ ব্যবহার করা যায়।

মানুষ মানুষের জন্য

দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের কথা মাথায় রেখে যেসব সফটওয়্যার বানানো হয় বা সেবা প্রদান করা হয়, সেগুলো ব্যবহার করার জন্য তাদের ডিভাইসে সেবাটি ঠিকমতো যুক্ত করে দিতে হয়। এ কাজটি সাধারণত তারা নিজ থেকে করতে পারেন না, দ্বিতীয় কোনো ব্যক্তির সহায়তা প্রয়োজন হয়। এসব সেবা গ্রহণের মাধ্যমে পৃথিবীর আলো বঞ্চিত একজন মানুষ স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়ে উঠেন না; দীর্ঘদিনের অভ্যাস তাকে প্রযুক্তির সাথে একটা মেলবন্ধন স্থাপন করে দেয় মাত্র। যা তার দৈনন্দিন জীবনকে খানিকটা হলেও সহজ করে তোলে।

This article is in bangla language. It introduces to some of the useful digital services and applications that could help the blind people. Necessary sources have been hyperlinked inside the article.

More References:

1. Vision - Everyday Health

2. Five Great Reading Apps for Booklovers Who Are Blind or Visually Impaired - Vision Aware

3. 10 Free Screen Readers For Blind Or Visually Impaired Users - US Ability Geek

4. 6 best screen reading software for the blind or visually impaired - Windows Report

Featured Image: Be My Eyes

Related Articles