
বর্তমান পৃথিবীতে আড়াই বিলিয়নেরও বেশি মানুষ স্মার্টফোন ব্যবহার করে এবং তাদের অধিকাংশই এই ডিভাইসটি ছাড়া সময় কাটানোর কথা ভাবতেও পারে না। প্রতিনিয়ত এমন কোনো অ্যাপ বের হচ্ছে, যেটি এরকম আসক্তির গতি আরো বৃদ্ধি করে দেয়। এরকম কোম্পানিগুলোর জন্যে এই আসক্তিটি বিশাল অঙ্কের মুনাফা বয়ে আনে।
তবে, এরজন্যে ব্যবহারকারীরা যতটুকু দায়ী, তার চেয়েও বেশি দায়ী হচ্ছে স্মার্টফোন ডিভাইসগুলো। সাধারণ মনোবিজ্ঞানকে অনুসরণ করে এই ডিভাইসগুলো এমনভাবে ডিজাইন করা হয়েছে যে, আমরা তার ফাঁদে পড়তে বাধ্য। তবে, যে কেউই এই চাতুরিটি বুঝতে পারলে তা থেকে বের হয়ে আসার পথ খুঁজে পাবে।
কোনো নির্দিষ্ট সময়ে ‘মনোযোগ’ একটি সীমিত সম্পদের মতো কাজ করে। অনেকটা যেমন প্রতি মাসে আপনার ব্যবহারের জন্যে টাকার পরিমাণ নির্দিষ্ট। কোনো সময়ে এই নির্দিষ্ট পরিমাণের বেশি মনোযোগ আপনি ব্যবহার করতে পারবেন না। আজকাল আমাদের বেশিরভাগ মনোযোগই ব্যবহৃত হচ্ছে অপ্রয়োজনীয় অ্যাপ ও কন্টেন্টে।
আমরা এখন যেখানে বাস করি, সেটি হচ্ছে প্রতিনিয়ত মনোযোগ বিচ্ছিন্ন করার দুনিয়া। কিছু স্টাডি অনুযায়ী, প্রতিনিয়ত আমাদের ফোনে গড়ে ৬৩টির বেশি নোটিফিকেশন আসে। ইমেইল ইনবক্সে এই সংখ্যাটি হচ্ছে ৯০। গড়ে প্রতি তিন মিনিটে আমরা কাজ পরিবর্তন করি।
কোনো কাজে মনোবিঘ্ন ঘটলে আমাদের মস্তিষ্কের দুইটি অঞ্চল নিজদের মধ্যে অনেকটা যুদ্ধে লিপ্ত হয়। এই দুইটি অঞ্চল হচ্ছে, প্যারাইটাল করটেক্স এবং ফ্রন্টাল করটেক্স। প্যারাইটাল করটেক্স মনোবিঘ্ন ধরনের কাজে প্রতিক্রিয়া দেখায়। অন্যদিকে, বুদ্ধিবৃত্তিক বা যে কাজে মনোযোগ ধরে রাখতে হয়, সেখানে ফ্রন্টাল করটেক্স সাহায্য করে। তাই, ফ্রন্টাল করটেক্সের কোনো কাজের মাঝখানে প্যারাইটাল করটেক্স আধিপত্য বিস্তার করতে গেলে আমরা মনোযোগ হারিয়ে ফেলি। অন্যদিকে, ফ্রন্টাল করটেক্স যদি প্যারাইটাল করটেক্সের নিয়ন্ত্রণ রাখে, তখন আমরা ফোকাস করতে পারি।
আমাদের মস্তিষ্ক কোন জিনিসটি গুরুত্বপূর্ণ এবং কোনটি নয়, সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়। এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার সময়ে মনোযোগের দরকার হয়। আপনি যদি ইমেইল বক্সটি পরিষ্কার করতে চান, তখন অনেকগুলো ছোট ছোট সিদ্ধান্ত নিতে হয়। কোন ইমেইলটি রাখবেন, কোনটি ডিলিট করবেন, এই ব্যাপারে ভাবতে হয়। সাধারণভাবে, এটা কোনো ভারি বুদ্ধিবৃত্তিক কাজ না। কিন্তু এরকম অনেকগুলো ইমেইল দেখার পরে, আপনার অন্য কোনো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়ার সামর্থ্য থাকে না।
২০১৮ সালে আগস্ট মাসে, যুক্তরাজ্যের টেলিকম রেগুলেটর অফকম জানিয়েছিল, মানুষ গড়ে প্রতি বারো মিনিটে তাদের স্মার্টফোন চেক করে। ৭১ শতাংশ কখনোই তাদের ফোন বন্ধ করে না। আর ৪০ শতাংশ মানুষ ঘুম ভাঙার পাঁচ মিনিটের মধ্যে স্মার্টফোন হাতে নেয়।
অ্যাপল ও মাইক্রোসফটের প্রাক্তন কনসাল্টেন্ট লিন্ডা স্টোন একটি টার্ম উত্থাপন করেছিলেন, ‘কন্টিনিউয়াস পারশিয়াল অ্যাটেনশন’। যেকোনো সময়ে, যেকোনো জায়গায় আমরা সবসময় আমাদের মনোযোগের একাংশ স্মার্টফোনের দিকে দিয়ে থাকি। প্রতিনিয়ত আমাদের এই ‘অ্যালার্টনেস’ অন্য যেকোনো কিছুতে মনোযোগ বসানো কঠিন করে তুলে। আমরা এর সাথে অভ্যস্ত হয়ে গেছি। কিন্তু অ্যাড্রিনালিন আর করটিসোল হরমোন মানসিকভাবে একটি ‘হাইপার-অ্যালার্ট’ অবস্থা তৈরি করে রাখছে, যে সবসময়ে উদ্দীপনা খুঁজতে থাকে। এভাবে একটি ভয়ংকর আসক্তি তৈরি হয়েছে। প্রশ্ন হচ্ছে, স্মার্টফোন ব্যবহার করে এবং একইসাথে এই আসক্তি থেকে কি বের হয়ে আসা সম্ভব?
ট্রিস্টান হ্যারিস গুগলের ডিজাইন এথিসিস্ট হিসেবে কাজ করেছিলেন। এখন তিনি ‘টাইম ওয়েল স্পেন্ট’ নামের একটি অলাভজনক সংস্থা চালান, যার প্রধান কাজ হচ্ছে, প্রযুক্তি কোম্পানিগুলো কীভাবে আমাদের মনোযোগ কেড়ে নিয়ে তা থেকে মুনাফা অর্জন করে, সে সম্বন্ধে জানানো। তার মতে, আমরা দুই বিলিয়ন ট্রুম্যান শো’য়ের ভেতরে বাস করছি। দ্যা ট্রুম্যান শো (১৯৯৮) চলচ্চিত্রে, প্রধান চরিত্রটি ঘুম থেকে উঠে দেখতে পায়, সবকিছুই শুধুমাত্র তার জন্য, তার মতো করে গুছিয়ে রাখা হয়েছে। স্মার্টফোনের ব্যাপারটিও তাই, কিন্তু আমরা তা সহজে বুঝতে পারি না। সবগুলো অ্যাপ এখানে শুধুমাত্র তার ব্যবহারকারীর মতো করে গুছিয়ে রাখা হয়, তাদের মধ্যে একটি সামঞ্জস্য কাজ করে, যেন ব্যবহারকারীকে আকৃষ্ট করা যায়।

স্মার্টফোনের এই প্রবল আকর্ষণ থেকে মুক্ত হওয়ার জন্যে ট্রিস্টান হ্যারিস সহজ তিনটি উপায় জানিয়েছেন। একেবারে প্রথম পদক্ষেপটি হচ্ছে, সবগুলো নোটিফিকেশন বন্ধ করে দেওয়া। কোনো সত্যিকারের মানুষ আপনার সাথে যোগাযোগ করতে চাইলে, একমাত্র সেটাই যেন নোটিফিকেশন প্যানেলে দেখায়। সাধারণত কেউ যোগাযোগ করতে চাইলে কল এবং টেক্সট মেসেজের মাধ্যমেই তা করে থাকে। অনেকগুলো অ্যাপ রয়েছে, যেগুলো এ ধরনের সামাজিক ইন্টার্যাকশনের একটি বিভ্রম তৈরি করে। যেমন: ফেসবুক যদি নোটিফিকেশন পাঠায় যে, কোনো একজন বন্ধু একটি ইভেন্টে যেতে আগ্রহী, সেক্ষেত্রে তারা একজন পাপেট মাস্টারের ভূমিকা পালনের চেষ্টা করছে। সামাজিক সম্পর্ক তৈরির জন্যে তারা এভাবে আকাঙ্ক্ষা বৃদ্ধি করে থাকে, যেন আপনি তাদের অ্যাপটি আরো বেশি পরিমাণে ব্যবহার করেন।
নোটিফিকেশন সবসময় এভাবে কাজ করেনি। ২০০৩ সালে ব্ল্যাকবেরি যখন ইমেইলের জন্যে প্রথম পুশ নোটিফিকেশন ফিচারটি পরিচিত করেছিল, এটা ফোনের ব্যবহার কমানোর একটি উপায় হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিল। আজকের যুগে, যেকোনো অ্যাপ থেকেই নোটিফিকেশন পাওয়া যায়। তাই, প্রতিবার ফোনে নজর দিলেই দেখা যায়, অনেকগুলো নোটিফিকেশন এসে প্যানেলটিকে ভারি করে তুলেছে। এই নোটিফিকেশনগুলোর একেকটির একেক রকমের অনুভূতি তৈরি করার ক্ষমতা রয়েছে।
এখানে সবচেয়ে বড় চাতুরিটি হচ্ছে, এই নোটিফিকেশনগুলো বেশ এলোমেলো। কোনোটি আপনাকে ভালো অনুভূতি দেবে। কোনোটি আবার মন খারাপ করে দেবে, যেমন: সামাজিক মাধ্যমে কাউকে ভালো জীবনযাপন করতে দেখলে অনেকেই ঈর্ষান্বিত হয়। যদি এই নোটিফিকেশনগুলোর বেশিরভাগই ভালো অথবা বেশিরভাগই খারাপ অনুভূতি দিত, তাহলে এই আসক্তির মায়াটি কেটে যেত। ব্যাখ্যা করা যাক।
আমেরিকায় স্লট মেশিন খুবই জনপ্রিয়। এমনকি এটা বেজবল, সিনেমা ও থিম পার্ক ইন্ডাস্ট্রির সম্মিলিত মুনাফার চেয়েও বেশি আয় করে। এর কারণ হচ্ছে, অন্য যেকোনো জুয়ার তুলনায় এটা ৩-৪ গুণ বেশি দ্রুত আসক্তি তৈরি করে। স্লট মেশিনের লিভার টান দিলে একেকবার একেকরকম ফলাফল সামনে আসে। মানুষের ভেতরে এটা একটা আকাঙ্ক্ষা তৈরি করে যে, পরেরবার ফলাফল তার পক্ষে কাজ করবে। এই আকাঙ্ক্ষাটিই আসক্তিকে ট্রিগার করে। চোরের মতো স্লট মেশিনগুলোর মানুষের পকেট শূন্য করে দেওয়ার ক্ষমতার ফলে, এগুগুলোকে অনেকসময়ে ‘ওয়ান আর্ম ব্যান্ডিট’ও বলা হয়।

অনেকগুলো অ্যাপ স্লট মেশিনের এই লিভার টানার উপায়টিকে অনুকরণ করে ‘পুল টু রিফ্রেশ’ ফিচার যোগ করেছে। এই অ্যাপগুলো প্রতিনিয়ত তাদের ফিড আপডেট করার সামর্থ্য রাখে। এই ‘পুল’ করার করার ফলে, ফিডটি আপডেটও হয়। এখানে স্লট মেশিনের মতো ব্যবহারকারীর একটি আকাঙ্ক্ষা তৈরি হয় যে, পরের আপডেটে সে ভালো, পছন্দসই কিছু দেখতে পাবে। আর ‘পুল’ করার ব্যাপারটি একটি নিয়ন্ত্রণের বিভ্রম তৈরি করে, যেটা যথেষ্ট আসক্তিজনক। ফেসবুক, টুইটারের মতো সোশ্যাল মিডিয়া জায়ান্টগুলোতে এই ফিচারটি ব্যবহৃত হয়েছে।
একটি গবেষণায়, এক গ্রুপ মানুষকে যখন খুশি তাদের ইমেইল চেক করতে বলা হলো। অন্য আরেকটি গ্রুপ তাদের ইমেইল দেখতে পেল নির্দিষ্ট সময় পরপর, ব্যাচ আকারে। দেখা গেল, যারা তাদের ইমেইলকে তিন থেকে পাঁচটি ব্যাচে বিভক্ত করেছিল, তারা তুলনামূলক কম মানসিক চাপের মুখোমুখি হয়েছিল। তাদের মনোযোগ নিয়ন্ত্রণে রাখার ক্ষমতাও বেশি দেখা গেল।

কল্পনা করা যাক, আপনার মনোযোগ একটি শান্ত হ্রদ, যেখানে নির্বিঘ্ন প্রতিফলন পড়ে। এই প্রতিফলনটাকে মনোযোগ ধরে রাখার সামর্থ্য হিসেবে চিন্তা করা যাক। প্রতিটি নোটিফিকেশন হচ্ছে এই হ্রদে একটি বৃষ্টির ফোঁটার মতো। যার ফলে, হ্রদটির প্রতিফলনে ঝাঁকুনি দেখা যায়, শান্ত ভাবটিতে ব্যাঘাত ঘটে। প্রতিনিয়ত আমরা যেরকম নোটিফিকেশনের মুখোমুখি হই, তা এই হ্রদের উপমায় একটি ঝড় বলা যায়। প্রতিবার আমাদের মনোযোগ সরে যাওয়ার পরে, আমাদেরকে সেই মনোযোগ ফেরত আনার জন্যে মানসিক শ্রম দিতে হয়। ফলে, দিনশেষে আমরা আরো বেশি অবসন্ন হয়ে পড়ি।
২০০৫ সালে, ড. গ্লেন উইলসনের একটি গবেষণায় উঠে এসেছে, ইমেইল এবং ফোন কল দ্বারা যাদের মনোযোগ বিচ্ছিন্ন হয়, আইকিউতে তাদের স্কোর দশ পয়েন্ট কমে যায়। মারিজুয়ানা সেবনের তুলনায় এই প্রভাবটি প্রায় দ্বিগুণ বেশি। এই গবেষণায় অংশগ্রহণকারী অর্ধেক লোক জানিয়েছিল, তারা ইমেইল পাওয়ার সাথে সাথেই তার উত্তর দিতে বসে যায়। ২১ শতাংশ স্বীকার করেছে, এই কাজটি তারা এমনকি গুরুত্বপূর্ণ মিটিংয়েও করে থাকে। এ রকম মনোবিঘ্নতা রাতে ঘুম না আসার মতো প্রভাব ফেলে।

ট্রিস্টান হ্যারিসের দ্বিতীয় পরামর্শ হচ্ছে, ফোনের স্ক্রিন সাদাকালো বা ‘গ্রেস্কেল’ করে দেওয়া। মানুষের চোখ উষ্ণ রংগুলোর প্রতি বেশি সংবেদনশীল। স্ক্রিনের মধ্যে খুব সহজেই ব্যবহারকারীকে আকর্ষণ করার উপায় হচ্ছে এই রংগুলো। আইট্র্যাকিং পরীক্ষাগুলোতে দেখা গেছে, উজ্জ্বল লাল রং সবচেয়ে বেশি আকর্ষণ তৈরি করতে সক্ষম। এ কারণেই, বেশিরভাগ অ্যাপ তাদের আইকনগুলো নতুন করে ডিজাইন করলে উজ্জ্বল ও উষ্ণ রংগুলোই ব্যবহার করে। একই কারণে নোটিফিকেশন বাবলগুলো লাল রঙের হয়।
মনোযোগ বিচ্ছিন্ন করার জন্যে এই চাতুরিটি প্রতিরোধ করার সহজ উপায় হচ্ছে, সাদাকালো রঙ ব্যবহার করা। আধুনিক ফোনগুলোর অ্যাক্সেসিবিলিটি সেটিংয়ে এই অপশনটি পাওয়া যাবে। সবগুলো অ্যাপই সাদাকালো দেখালে মস্তিষ্ক কোনো অ্যাপের প্রতি বাড়তিভাবে আকৃষ্ট হবে না। স্লট মেশিনগুলোতে উজ্জ্বল রঙয়ের আধিপত্য দেখার পেছনে এটাই সবচেয়ে বড় কারণ।

ট্রিস্টান হ্যারিসের সর্বশেষ পরামর্শ হচ্ছে, হোম স্ক্রিনে শুধু নিত্যদিনের প্রয়োজনীয় অ্যাপগুলোই রাখতে হবে। অর্থাৎ, ফোন আনলক করার পরে, যে অ্যাপগুলো আপনার জীবনযাপনে প্রয়োজনীয়, শুধু সেগুলোই যেন চোখের সামনে দেখতে পান। এরকম কিছু অ্যাপ হচ্ছে, উবার, ম্যাপস, ক্যালেন্ডার। এই অ্যাপগুলো ব্যবহারকারীকে ‘বটমলেস ভরটেক্স অব স্টাফ’-এ টেনে নামানোর সামর্থ্য রাখে না।
‘বটমলেস ভরটেক্স অব স্টাফ’ ব্যখ্যা করা যাক। সহজভাবে, এটা সেই অ্যাপগুলোকে নির্দেশ করে, যেগুলোতে আপনি ক্রমাগত স্ক্রল করে যেতে পারবেন। এই স্ক্রলের কোনো শেষ নেই। স্বাভাবিকভাবেই ফেসবুক, টুইটার, ইন্সটাগ্রামের মতো অ্যাপগুলোর কথা আপনার ভাবনায় আসতে পারে। অন্যদিকে, গুগল সার্চ পেজের কথা ভাবা যাক। সেখানে, নতুন কন্টেন্ট দেখতে হলে আপনাকে ক্লিক করতে হবে।

এরকম ‘ইনফিনিট স্ক্রল’-এর ফলে স্বয়ংক্রিয়ভাবেই পেজের নিচে নতুন কন্টেন্ট উদয় হতে থাকে। এই পেজগুলোর বিল্ট-ইন কোনো শেষ প্রান্ত নেই। ইউটিউবের ভিডিও অটো প্লে কিংবা মেসেঞ্জারের স্টোরি অটো প্লেও একইভাবে কাজ করে। এই ইন্টারফেস ব্যবহারকারীকে বাঁধাহীন কন্টেন্ট দেখার একটি অভিজ্ঞতা দেয়। একইসাথে, ব্যবহারকারীর হাতে নিয়ন্ত্রণ রয়েছে, এমন একটি অনুভূতিও তৈরি করে। কিন্তু, এই স্বয়ংক্রিয়তা বন্ধ করা যথেষ্ট কঠিন। কারণ, আমাদেরকে একটি মানসিক ফাঁদে আটকে ফেলা হয়।
২০০৫ সালের একটি স্টাডিতে দেখা যায়, যেসব ব্যক্তি স্বয়ংক্রিয়ভাবে পূর্ণ হয়ে যায় এমন বাটি থেকে স্যুপ খাচ্ছিলেন, তারা অন্যদের তুলনায় ৭৩ শতাংশ বেশি স্যুপ খেয়েছিলেন। কিন্তু অন্যদের তুলনায় তাদের সন্তুষ্টির পরিমাণ কম ছিল। তাই, দৃষ্টিলদ্ধ কোনো বাঁধা থাকা ভালো। কারণ, এটি নিজের সন্তুষ্টির যে অনুভূতি তার তুলনায় কখন থেমে যাওয়া উচিত, সে ব্যাপারে ভালো ধারণা দেয়। যেহেতু অনেকগুলো মূলধারার অ্যাপই এই ‘এন্ড পয়েন্ট’-এর ধারণাটি দেয় না, তাই হোমস্ক্রিনে তাদেরকে না রাখলেই, মনোযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার আশঙ্কা কমে যায়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের উপরে একটি স্টাডি করা হয়েছিল। তাদেরকে একটি নির্দিষ্ট বিল্ডিং খুঁজে বের করতে বলা হয়েছিল। একদল এই কাজটি করেছিল স্মার্টফোনের সহায়তায়। আরেকদল তা করেছিল স্মার্টফোন ছাড়াই। যারা স্মার্টফোন ব্যবহার করেছিল তারা স্বাভাবিকভাবেই তাড়াতাড়ি পৌঁছে গিয়েছিল। কিন্তু একইসাথে, তারা কম্যুনিটির সাথে কম সম্পর্কযুক্ত অনুভব করছিল। তাই, দ্রুতগামিতার জন্যে, এই ডিভাইসগুলো ব্যবহার করার জন্যে আমাদেরকে কি মূল্য দিতে হচ্ছে তা নিয়ে ভাবা উচিত। সমাজকে একত্রে ধরে রাখার জন্যে সামাজিক বন্ধনগুলো অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু আমাদের কাছ থেকে তা ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে।
আমরা প্রতিনিয়ত স্মার্টফোন অনেক বেশিই ব্যবহার করে থাকি। অনেকে নিজেদের এই অপ্রয়োজনীয় ব্যবহারের সময়টুকু মারাত্মকভাবে অবমূল্যায়ন করে থাকে। আশার কথা হচ্ছে, ভিন্ন ধরনের ইন্টারফেসের ধারণা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে, যেখানে অ্যাপগুলো ব্যবহারকারীর সাথে আরো স্বচ্ছভাবে যোগাযোগ করবে, কোন অ্যাকশনের ফলে কতোটুকু সময় ব্যয় হবে, সে ব্যাপারে সহজেই ধারণা পাওয়া যাবে। তাই, প্রযুক্তি হয়তো সবসময়ে একই রূপে বিরাজ করবে না।
কোন জিনিসটি সত্যিকার অর্থেই আপনার মনোযোগ আকর্ষণের জন্যে উপযুক্ত? ট্রিস্টান হ্যারিসের মতে, এটা একটা গভীর দার্শনিক প্রশ্ন। আপনার জন্যে উত্তরটি কী হবে? এটা বেশ কঠিন প্রশ্ন। কিন্তু আমরা বেশিরভাগই কখনো এ নিয়ে চিন্তা করিনি। তাই, এই লেখাটি পড়ার পরের সময় থেকে আমাদের সবার উচিত হবে, এই প্রশ্নটির উত্তর নিয়ে চিন্তা করা।