Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

করনিং গোরিলা, ড্রাগনট্রেইল, টেম্পারড এবং স্যাফায়ার গ্লাস বৃত্তান্ত

সম্প্রতি করনিং গোরিলা গ্লাসের নতুন ষষ্ঠ প্রজন্মের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। অল্প দিনের মধ্যেই ভালোমানের স্মার্টফোনগুলোতে স্ক্রিন সুরক্ষার জন্য এই গ্লাসের বাণিজ্যিক বিপণন শুরু হবে। বর্তমানে ভালোমানের স্মার্টফোনের স্ক্রিনকে আঁচড় ও আঘাতের হাত থেকে বাঁচানোর জন্য করনিং কোম্পানির ৪র্থ এবং ৫ম প্রজন্মের গোরিলা গ্লাস ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে।

তবে শুধু করনিং নয়, স্মার্টফোন এবং ট্যাবলেটের পর্দার নানা রকম সুরক্ষার জন্য করনিং কোম্পানির গোরিলা গ্লাসের পাশাপাশি রয়েছে জাপানভিত্তিক ড্রাগনট্রেইল গ্লাস এবং গ্রাহক পর্যায়ে ব্যবহারযোগ্য টেম্পারড গ্লাস। এছাড়া ক্যামেরা লেন্স এবং স্মার্টওয়াচের পর্দার সুরক্ষার জন্য সাম্প্রতিক সময়ে ব্যবহৃত হচ্ছে দামি স্যাফায়ার গ্লাস। নানারকম প্রযুক্তি পণ্যের পর্দা আঁচড় এবং ভঙ্গুরতার হাত থেকে সুরক্ষিত রাখতে এখন বিভিন্ন রকম সুরক্ষা গ্লাস ব্যবহৃত হচ্ছে।  ঠিক কতটা এগিয়েছে এই গ্লাসভিত্তিক পর্দা-সুরক্ষা প্রযুক্তি? আজকের এই আয়োজনে বিষয়টি তুলে ধরার প্রয়াস থাকছে।

করনিং কর্পোরেশনের গোরিলা গ্লাস; Image Source: Corning

গোরিলা গ্লাস

‘গোরিলা গ্লাস’ এর সাথে যুক্ত সংখ্যার ট্যাগ থেকে খুব সহজে বুঝে নেওয়া সম্ভব যে গোরিলা গ্লাস বেশ কয়েকটি সংস্করণ পার করেছে। বর্তমানে বাজারে প্রচলিত ভালোমানের স্মার্টফোনগুলোতে এই গ্লাসের ৫ম সংস্করণ ব্যবহৃত হচ্ছে। গোরিলা গ্লাসের ১ম সংস্করণ বাণিজ্যিক ভিত্তিতে ব্যবহার করা শুরু হয় ২০০৭ সালে। এরপরে ২০১২ সালে ২য় সংস্করণ, ঠিক পরবর্তী ২০১৩ সালে ৩য় সংস্করণে এই গ্লাস বাজারে আসে। বর্তমানে একটু ভালো স্মার্টফোনগুলোর পর্দা সুরক্ষার ক্ষেত্রে মূলত ৫ম সংস্করণের গোরিলা গ্লাস ব্যবহৃত হচ্ছে। এখানে উল্লেখ্য, এই গ্লাসের এক একটি সংস্করণকে একটি প্রজন্ম হিসেবে অভিহিত করা হয়।

গোরিলা গ্লাসের প্রস্তুতকারক করনিং কোম্পানির ভাষ্যমতে

গোরিলা গ্লাসের প্রতিটি প্রজন্মের তৈরির ক্ষেত্রে সাধারণভাবে একই পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়। পদ্ধতিটি হচ্ছে- ‘আয়ন-বিনিময় পদ্ধতি’। এই পদ্ধতিতে বিশেষ কাঁচগুলোকে ঠিক ৪০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় একটি গলিত লবণের দ্রবণে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য দ্রবীভূত করা হয়। পটাসিয়াম দ্রবণ এই কাঁচগুলোকে সংকোচনের মাধ্যমে শক্ত করে তোলে।

করনিং গোরিলা গ্লাসের প্রতিটি প্রজন্ম আগের প্রজন্ম থেকে বেশি শক্তিশালী। এই গ্লাসের ৫ম প্রজন্ম চতুর্থ প্রজন্মের মতোই ‘দাগ এবং আঁচড় প্রতিরোধক’ হলেও আগের থেকে কমপক্ষে ১.৮ গুণ মজবুত। ঠিক এভাবেই করনিং গ্লাসের ক্ষেত্রে প্রতিটি প্রজন্মকে আগের থেকে বেশি মজবুত এবং সহনীয় করে তোলা হয়। বর্তমান সময়ে ৫ম প্রজন্মের করনিং গ্লাস ১.৬ মিটার দূরত্ব থেকে নিচে ফেললেও ৮০ শতাংশ ক্ষেত্রে কোনো রকমের ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে না। তথ্যগুলো করনিং কোম্পানির ল্যাব পরীক্ষা থেকে সরবরাহকৃত।

গরিলা গ্লাস; Image Source: Android Authority

এই কোম্পানির সাম্প্রতিকতম পণ্য করনিং গ্লাস ৬ এখনো বাণিজ্যিক ভিত্তিতে ব্যবহার করা শুরু হয়নি। তবে, এই ষষ্ঠ সংস্করণ ৫ম সংস্করণের থেকেও অন্ততপক্ষে ২গুণ আধুনিক বলে বলা হচ্ছে। বাণিজ্যিক ব্যবহারের অল্প সময়ের মধ্যেই ষষ্ঠ প্রজন্মের করনিং গ্লাস স্মার্টফোন কোম্পানিগুলোর কাছে জনপ্রিয়তা পাবে বলে আশা করা হচ্ছে।

ড্রাগন ট্রেইল গ্লাস

স্মার্টফোন এবং ট্যাবলেট কম্পিউটারের পর্দা সুরক্ষায় ব্যবহৃত গ্লাসের জনপ্রিয়তার বিচারে করনিং গোরিলা গ্লাসের পরেই ড্রাগনট্রেইল গ্লাসের অবস্থান। জাপান ভিত্তিক কোম্পানি আসাহি গ্লাসের (Asahi Glass) আবিষ্কৃত ড্রাগনট্রেইল গ্লাস জাপানের অনেক ইলেকট্রনিক্স পণ্যের পর্দা সুরক্ষায় প্রচুর পরিমাণে ব্যবহার করা হয়।

ড্রাগনট্রেইল গ্লাসের বেন্ডিং টেস্ট; Image Source: Asahi Glass Co.

করনিং গ্লাসের প্রস্তুত প্রক্রিয়া থেকে ড্রাগনট্রেইল গ্লাসের প্রস্তুত প্রক্রিয়াটি একটু ভিন্ন ধরণের। এই প্রক্রিয়ায় গলিত কাঁচকে বিশেষ ব্যবস্থার মাধ্যমে গলিত টিনের সংস্পর্শে আনা হয়। পরবর্তীতে মজবুত করার জন্য অন্যান্য উপাদান সংযুক্ত করে গলিত কাঁচ ঠাণ্ডা করার মাধ্যমে শক্ত করে তোলা হয় এবং পরবর্তীতে কাটছাঁট করার মাধ্যমে মসৃণ করে তোলা হয়।

ড্রাগনট্রেইল গ্লাসের তিনটি সংস্করণ রয়েছে। ড্রাগনট্রেইল, ড্রাগনট্রেইল এক্স এবং ড্রাগনট্রেইল প্রো। এগুলোর মধ্যে  ড্রাগনট্রেইল প্রো সংস্করণটি সবথেকে বেশি শক্তিশালী। আশাহি কোম্পানির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে-

তাদের ‘প্রো’ মডেলটি সাধারণ মডেলের থেকেও অন্ততপক্ষে ৩০ শতাংশ বেশি শক্তিশালী। প্রান্তিক গোলাকার কোণগুলোর জন্য এই গ্লাস হাত থেকে পড়লে সহজে ভাঙ্গে না কিংবা এই গ্লাসে আঁচড় পড়ে না।

টেম্পারড গ্লাস

টেম্পারড গ্লাস মূলত স্মার্টফোনের পর্দা সুরক্ষায় ব্যবহৃত এক ধরণের ৩য় পক্ষীয় কাঁচের আস্তরণ বা পর্দাবিশেষ। উপরে উল্লেখিত গোরিলা এবং ড্রাগনট্রেইল গ্লাস উৎপাদন পর্যায়ে ব্যবহৃত হলেও কোনো ব্যবহারকারী চাইলেই তার স্মার্টফোনের পর্দার বাড়তি সুরক্ষার জন্য এই টেম্পারড গ্লাস ব্যবহার করতে পারেন।

সায়েন্টিফিক অ্যামেরিকান ওয়েবসাইটের ভাষ্যমতে

কোনো সাধারণ কাঁচকে ঘাত-প্রতিঘাত সহনশীল বা ‘টেম্পারড’ করে তুলতে চাইলে নির্দিষ্ট আকারে এই কাঁচ কেটে নেয়ার পরে বিশেষ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তাপ প্রদান করা হয়। ঠিক ৬০০ ডিগ্রি তাপে পৌঁছানোর পরে কাঁচটিকে সাবধানতার সাথে ক্রমান্বয়ে দুইটি পর্যায়ে ঠাণ্ডা করা হয়। কাঁচের দুই পাশে তাপমাত্রার বড় ধরণের পার্থক্যের ফলে সঙ্কোচনের সৃষ্টি হয় এবং কাঁচটি টেম্পারড গ্লাসে পরিণত হয়।

টেম্পারড গ্লাস সুরক্ষিত স্মার্টফোন পর্দা; Image Source: Android Authority

এখানে প্রসঙ্গত উল্লেখ্য- 

বাংলাদেশের বাজারে বিভিন্ন দামের টেম্পারড গ্লাস বিক্রি হলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তা আদৌ টেম্পারড গ্লাস নয় বরং প্লাস্টিকের একটি আস্তরণ। আসল টেম্পারড গ্লাস অবশ্যই কাঁচের হয়ে থাকে এবং দামেও খুব সস্তা নয়।

স্যাফায়ার গ্লাস

দামি এই গ্লাসটি মূলত ভালোমানের কোনো স্মার্টফোনের ক্যামেরা এবং বেশ কিছু ঘড়ি প্রস্তুতকারক কোম্পানির দামি দামি ঘড়িতে পর্দার সুরক্ষার জন্য ব্যবহৃত হয়ে থাকে। উদাহরণস্বরূপ- অ্যাপল ওয়াচে স্যাফায়ার গ্লাস ব্যবহারের কথা বলা যেতে পারে।

অ্যাপল ওয়াচে স্যাফায়ার গ্লাস; Image Source: Apple

জনপ্রিয় ইউটিউব টেক চ্যানেল পকেটনাউ অনুসারে

স্যাফায়ার গ্লাসের প্রস্তুত প্রক্রিয়াটি বেশ জটিল এবং ব্যয়সাপেক্ষ। এই ধরণের কাঁচ তৈরিতে বিশেষ ধরনের ব্যারেল, স্যাফায়ার সিড, কোরাণ্ডাম স্ফটিক এবং বিশেষ করে পূর্ববর্তী ব্যাচের অস্ফটিক স্যাফায়ারের প্রয়োজন। বিশেষ ব্যবস্থায় এই মূল্যবান কাঁচ তৈরি করার জন্য অন্ততপক্ষে ২২০০ ডিগ্রি তাপের প্রয়োজন হয় । এছাড়া একটি ব্যাচ থেকে ব্যবহারযোগ্য স্যাফায়ার গ্লাস পেতে ১৬ থেকে ১৭ দিনের প্রয়োজন।

মোস স্কেলে সহনীয়তার মাত্রা

আলোচিত গ্লাসগুলো স্মার্টফোন এবং ক্যামেরার পর্দা, ঘড়ির সুরক্ষাসহ নানা ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হবার কারণে এগুলোর মধ্যে সবথেকে ভালো কোনটি- এই প্রশ্নটি কিন্তু আসতেই পারে। এই প্রশ্নের উত্তর খোঁজার আগে আমাদের দেখতে হবে যে গ্লাসটি ঠিক কি কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে? চাপ প্রতিরোধ, আঘাত সহনীয়তা না আঁচড় থেকে সুরক্ষার জন্য?

কোনো স্মার্টফোনের পর্দায় চাপ, আঘাত বা আঁচড় সহনীয়তার মাত্রাটি পরিমাপ করার জন্য যে স্কেলটি ব্যবহার করা হয় সাধারণভাবে তাকে মোস স্কেল বলা হয়। সাম্প্রতিক সময়ের অত্যন্ত জনপ্রিয় ইউটিউব জেরিরিগএভ্রিথিং চ্যনেলে এই ধরনের পরীক্ষার ভিডিও দেখতে পাওয়া যায়।

মোস স্কেলে সহনীয়তার মাত্রা হিসেবে ১ থেকে ১০ পর্যন্ত কয়েকটি মাত্রা থাকে যেখানে ১ সর্বনিম্ন এবং ১০ সর্বোচ্চ হিসেবে ধরা হয়। এই স্কেলে ৫ম প্রজন্মের গোরিলা গ্লাসের ক্ষেত্রে সহনীয়তার মাত্রাটি ৫-৬’এর মধ্যে পাওয়া যায়। স্যাফায়ার গ্লাসের ক্ষেত্রে এই মাত্রাটি ৭ থেকে ৯ এর মধ্যে। পর্দার সুরক্ষায় গ্রাহক পর্যায়ে ব্যবহৃত বিভিন্ন ধরণের টেম্পারড গ্লাসের ক্ষেত্রে এই মাত্রাটি ২ থেকে ৪’এর মধ্যে হয়ে থাকে।

Mohs স্কেলে সহনীয়তার পরীক্ষা; Image Source: JerryRigEverything

সাম্প্রতিক সময়ের করনিং গোরিলা গ্লাস এবং ড্রাগনট্রেইল গ্লাস প্রায় একই রকম প্রতিঘাত সহনশীল। মোস স্কেলে এই দুই ধরনের গ্লাসের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কোনো পার্থক্য দেখা যায় না।  

Featured Image Source- Corning.com

Related Articles