কারো কারো সামনে কোনো পথ থাকে না, নিজেরাই নিজেদের পথ তৈরি করেন; আমরা তাদেরকে বলে থাকি অগ্রদূত। গত পর্বে এমনই ৮ জন নারী অগ্রদূতের জীবনের গল্প আমরা জেনেছি। আজকে আপনাদের সামনে বাকি ৮ জন রোমাঞ্চকর অভিযাত্রা-প্রিয় নারী অগ্রদূতের জীবনের গল্প তুলে ধরা হবে।
জ্যাকুলিন কোচরান
জ্যাকুলিন কোচরান ছিলেন বিশ্বের অন্যতম গতিশীল পাইলট। এজন্য তাকে বলা হয় ‘স্পিড কুইন’ বা ‘গতির রানী’। পাশাপাশি তাকে বিবেচনা করা হয় সর্বযুগের ‘সর্বসেরা সুন্দরী’ পাইলট হিসেবে।
১৯০৬ সালের ১১ মে আমেরিকার ফ্লোরিডায় তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা ইরা পিটম্যান ও মা মেরি। মাত্র ১৩ বছর বয়সে রবার্ট কোচরানের সাথে তার বিয়ে হয়। কিন্তু বিয়ের মাত্র ৫ বছরের মাথায় স্বামী মারা যান। শোকে কাতর জ্যাকুলিন স্বামীকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য নিজের নামের শেষে স্বামীর নাম যুক্ত করে দেন।
স্বামী মারা যাওয়ায় তার দুঃসময় শুরু হয়। ফলে তিনি চুল কাটার কাজ শেখেন এবং পেন্সাকোলা শহরের একটি স্যালুনে চাকরি নেন। তারপর নিউ ইয়র্কসহ আরও অনেক শহরে এই কাজ চালিয়ে গেছেন।
তার পরিবার এসব কাজের প্রবল বিরোধিতা করতে থাকে। তারা তাকে পুনরায় বিয়ে দিতে উঠেপড়ে লাগে। কিন্তু জ্যাকুলিন পরিবারের সকল নির্দেশ অমান্য করেন। এমনকি কিছুদিনের জন্য পরিবারের সাথে সম্পর্কচ্ছেদও করেন। তখন তার একটিই স্বপ্ন, তিনি স্বনির্ভর হবেন।
কিছুদিন পর তিনি হলিউডের প্রভাবশালী ব্যবসায়ী ও শিল্পপতি ফ্লয়েড বোস্টটুইক অডলামের সাথে সাক্ষাৎ করতে সক্ষম হন। অডলাম তখন বিশ্বের শীর্ষ ১০ জন ধনীর অন্যতম ছিলেন। স্বল্প সময়ের মধ্যে তিনি জ্যাকুলিন কোচরানের প্রেমে পড়ে যান। অডলাম তাকে কসমেটিকসের ব্যবসা শুরু করার পরামর্শ দেন এবং তাতে তিনি সহায়তার আশ্বাস দেন। জ্যাকুলিন স্বল্প সময়ের মধ্যে সফল ব্যবসায়ী হয়ে ওঠেন এবং অডলামের সাথে তার বিয়ে হয়।
এমন সময় তার এক বন্ধু তাকে পাইলট প্রশিক্ষণ গ্রহণের পরামর্শ দেন। সে অনুসারে ১৯৩০ সালে মাত্র ৩ সপ্তাহের প্রশিক্ষণে তিনি সফল পাইলটে পরিণত হন। ১৯৩৬ সালে অডলামের সাথে তার বিচ্ছেদ ঘটে। পরবর্তীতে তিনি পাইলট পেশায় পূর্ণ মনোনিবেশ করেন।
পাইলট হিসেবে তিনি অসংখ্য রেকর্ড গড়েন। তিনি প্রথম নারী বোমারু বৈমানিক হিসেবে আটলান্টিক পাড়ি দেন। প্রথম ব্যক্তি হিসেবে বিমানের সাউন্ড ব্যারিয়ার অতিক্রম করার রেকর্ডটিও তার দখলে।
প্রথম ব্যক্তি হিসেবে বিমান বাহক জাহাজ থেকে তিনি বিমান উড্ডয়ন ও অবতরণের সাহসী ভূমিকাও তিনি গ্রহণ করেন। ১৯৩৭ সালের এক প্রতিযোগিতায় তিনি নিজেকে সর্বোচ্চ গতিশীল পাইলট হিসেবে প্রমাণ করতে সমর্থ হন।
শুধু ব্যবসা বা বৈমানিক হিসেবে তিনি নিজেকে সীমাবদ্ধ রাখেননি। নাম লিখিয়েছিলেন রাজনীতির খাতায়ও। ১৯৫৬ সালে কংগ্রেস সদস্য পদের জন্য নির্বাচন করে স্বল্প ভোটে হেরে যান। ১৯৮০ সালের ৯ আগস্ট ৭৪ বছর বয়সে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
গারটিউড বেল
ব্রিটিশ আর্মি অফিসার ‘লরেন্স অফ অ্যারাবিয়া’র কথা নিশ্চয়ই আপনাদের মনে থাকার কথা! আর হ্যাঁ, তার সেই রোমাঞ্চকর জীবনের প্রধান সহযাত্রী ছিলেন গারটিউড বেল। ১৮৬৮ সালের ১৪ জুলাই ইংল্যান্ডের ওয়াশিংটন হল এলাকায় জন্মগ্রহণ করেন বেল। তিনি ছিলেন একাধারে লেখক, পর্যটক, রাজনৈতিক পর্যালোচক, প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও নৃবিজ্ঞানী। সারা বিশ্বে ব্রিটিশ উপনিবেশ বিস্তারে তার বুদ্ধিদীপ্ত কলাকৌশল ছিল ব্রিটিশ সরকারের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
রোমাঞ্চকর অভিযাত্রায় তিনি ঘুরে বেড়িয়েছেন তৎকালীন বৃহত্তর সিরিয়া, মেসোপটেমিয়া, এশিয়া মাইনর ও আরব বিশ্বের প্রতিটি নগর। জর্ডানের হাশেমি রাজবংশের সাথে তার ছিল ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। আধুনিক ইরাক প্রতিষ্ঠায় তার ভূমিকা ছিল সবচেয়ে অগ্রগণ্য। বিশেষত, এই রাষ্ট্রটি প্রতিষ্ঠার জন্য তিনি বিবাদমান বিভিন্ন আদিবাসী জনগোষ্ঠীর নেতাদের মধ্যে সমন্বয়কের ভূমিকা পালন করেন।
গারটিউড বেলের বাবা স্যার ঝং বেল। তিনি একজন রাজনীতিবিদ ও শিল্পপতি ছিলেন। মাত্র তিন বছর বয়সে বেলের মা মৃত্যুবরণ করেন। কয়েক বছর পর তার বাবা আবার বিয়ে করেন এবং তিনি তার বিমাতার কাছে বেড়ে ওঠেন।
শিক্ষা জীবনে তিনি প্রথমে কুইন্স কলেজ ও পরবর্তীতে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা শেষ করেন। তিনি যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করতেন, তখন নারী শিক্ষার উপর নানা ধরনের নিষেধাজ্ঞা ছিল। সব বিষয়ে নারীরা পড়ালেখা করার সুযোগ পেতেন না। তিনি অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘আধুনিক ইতিহাস’ বিভাগের গ্র্যাজুয়েট ডিগ্রীধারী সর্বপ্রথম নারী শিক্ষার্থী ছিলেন।
জীবনে তিনি কখনো বিয়ে করেননি। তবে মেজর চার্লস ডোটি উইলি নামক এক ব্রিটিশ আর্মি অফিসারের সাথে তার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। যদিও সেই আর্মি অফিসার বিবাহিত ছিলেন।
কর্মজীবনে তিনি ব্রিটিশ সরকারের ঘনিষ্ঠ কর্মকর্তা ছিলেন। অনেকে তাকে ‘ফিমেইল লরেন্স অফ অ্যারাবিয়া’ বলে থাকেন। ১৯২৬ সালের ১২ জুলাই ইরাকের বাগদাদে তার মৃত্যু হয়।
হ্যারিয়েট চ্যামার্স অ্যাডামস
হ্যারিয়েট চ্যামার্স অ্যাডামস ছিলেন একজন অনুসন্ধানী লেখক, সাংবাদিক, পর্যটক ও ফটোগ্রাফার। হারপারস ম্যাগাজিনের তথ্যানুসারে, তিনিই একমাত্র সাংবাদিক, যিনি প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় ফ্রান্সের পরিখায় প্রবেশের সুযোগ পেয়েছিলেন।
১৮৭৫ সালের ২২ অক্টোবর আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়ার তার জন্ম। তার বাবা আলেকজান্ডার চেলমারস ও মা ফ্রান্সিস উইলকিনস।
রোমাঞ্চকর অভিযাত্রায় অ্যাডামস ঘুরে বেড়িয়েছেন তৎকালীন দক্ষিণ আমেরিকা, এশিয়া ও দক্ষিণ প্যাসিফিকের প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ শহর। ক্রিস্টোফার কলম্বাসের ম্যাপ অনুসরণ করে তিনি তার বাবাকে সাথে নিয়ে দক্ষিণ আমেরিকা ভ্রমণ করেন। পরবর্তীতে তার সেসব ভ্রমণকাহিনী ন্যাশনাল জিওগ্রাফি ম্যাগাজিনে ছাপা হয়।
তিনি ফ্রান্সের নিস শহরে ৬১ বছর বয়সে নিহত হন। ১৯৩৭ সালের ১৭ জুলাই ওয়াশিংটন পোস্ট এক সংবাদে জানায়, “অজ্ঞাত সন্ত্রাসীরা তাকে গলা কেটে হত্যা করেছে।”
অ্যামি জনসন
অ্যামি জনসন ছিলেন আরেকজন দুঃসাহসী নারী পাইলট। ১৯৩০ সালে তিনি বিমানযোগে সবচেয়ে দীর্ঘ পথ পাড়ি দেয়ার রেকর্ড গড়েন। প্রথম নারী হিসেবে তিনি ‘সোলো ফ্লাইট’ যোগে ইংল্যান্ড থেকে অস্ট্রেলিয়া গমন করেন। তার ব্যবহৃত সেই সোলো ফ্লাইটটি এখনও লন্ডনের বিজ্ঞান জাদুঘরে সংরক্ষিত রয়েছে।
১৯০৩ সালের ১ জুলাই তিনি ইংল্যান্ডের কিংস্টন হুল শহরে জন্মগ্রহণ করেন। বুলভার্ড মিউনিসিপাল সেকেন্ডারি স্কুল থেকে প্রাথমিক ও কিংস্টন হাই স্কুল থেকে মাধ্যমিক পর্যায়ের লেখাপড়া শেষ করে তিনি শেফিল্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি নিয়ে পড়াশোনা করেন।
১৯৩১ সালে প্রথম পাইলট হিসেবে তিনি লন্ডন থেকে রাশিয়া গমন করার রেকর্ড গড়েন। সে বছরই লন্ডন থেকে জাপান গমনের রেকর্ড করেন। ১৯৩৪ সালে তিনি ও তার স্বামী জিম মলিশনকে সাথে নিয়ে প্রথম পাইলট হিসেবে লন্ডন থেকে ভারত আগমন করেন।
১৯৪১ সালের ৫ই জানুয়ারি এয়ারস্পিড অক্সফোর্ড নামক একটি বিমান উড্ডয়ন করার সময় তিনি খারাপ আবহাওয়ার মুখোমুখি হন। ফলশ্রুতিতে বিমানটি বিধ্বস্ত হয়। এই দুর্ঘটনার ফলে মাত্র ৩৭ বছর বয়সে এই দুঃসাহসী নারী পাইলটের মৃত্যু হয়।
ডেলিয়া আকিলি
ডেলিয়া আকিলির ডাক নাম ছিল মিককি। তিনি ছিলেন একজন আমেরিকান পর্যটক, আবিষ্কারক ও শিকারি।
১৮৬৯ সালের ৫ ডিসেম্বর আমেরিকার উইসকনসিনে তার জন্ম। ১৮৮৯ সালে আর্থার রিস নামক এক নরসুন্দরের সাথে তার বিবাহ হয়।
বিয়ের কিছুদিন পরেই কার্ল আকিলি নামক এক বহুমুখী প্রতিভাধর পুরুষের সাথে দেখা হয়। কার্ল ছিলেন একাধারে ভাস্কর, জীববিজ্ঞানী, উদ্ভাবক ও ফটোগ্রাফার। আমেরিকান জাদুঘরের আফ্রিকা হলের প্রতিষ্ঠাতাও তিনি। উভয়ের মধ্যে যোগাযোগের একপর্যায়ে তারা পরস্পর প্রেমে পড়েন।
ফলে ডেলিয়া আকিলি আর্থার রিসকে তালাক প্রদান করেন এবং ১৯০২ সালে কার্ল আকিলিকে বিয়ে করেন। এরপর তারা দুজনে মিলে আফ্রিকার পথেপ্রান্তরে বিভিন্ন প্রকারের পশু-পাখি শিকার করে বেড়িয়েছেন। পশুপাখির নমুনাসমূহ আমেরিকাতে নিয়ে এসেছেন। পরবর্তীতে তাদের মধ্যেও তালাক হয়ে যায়।
ডেলিয়া আমেরিকার প্রাকৃতিক ইতিহাস সংরক্ষণ বিষয়ক জাদুঘরে চাকরি গ্রহণ করেন। সেই সুবাদে আফ্রিকার বিভিন্ন অঞ্চলে তার ঘোরাফেরা আরও বৃদ্ধি পায়।
তিনি পশ্চিমা বিশ্বের প্রথম ব্যক্তি হিসেবে কেনিয়া ও ইথিওপিয়ার মধ্যখানে অবস্থিত মরুভূমি ভ্রমণ করেন। এছাড়া তানা নদীতেও প্রথম পশ্চিমা পর্যটক হিসেবে তিনি পা রাখেন। তিনি আফ্রিকার বিভিন্ন আদিবাসী জনগোষ্ঠীর সাথে পশ্চিমা গবেষকদের পরিচয় করিয়ে দেন। ডেলিয়া আফ্রিকার বনে-জঙ্গলে বসবাসরত বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর সাথে যোগাযোগ স্থাপন করেন।
১৯৭০ সালের ২২ মে ফ্লোরিডায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
জুনকো তাবেই
জুনকো তাবেই একজন জাপানি পর্বতারোহী। ১৯৭৫ সালে বিশ্বের প্রথম নারী হিসেবে তিনি মাউন্ট এভারেস্ট জয় করেন। এছাড়াও তিনি প্রথম নারী হিসেবে ‘সেভেন সামিট’ তথা বিশ্বের শীর্ষ ৭টি পর্বত বিজয়ের গৌরব অর্জন করেন।
১৯৩৯ সালের ২২শে সেপ্টেম্বর ফুকুশিমার মিহারু নামক স্থানে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। ছোটবেলায় তিনি শারীরিকভাবে খুবই দুর্বল ছিলেন। কিন্তু মাত্র ১০ বছর বয়সেই তিনি পাহাড়ে চড়তে শুরু করেন। সেই ছোট বয়সেই নাসু পর্বত বিজয় করেন।
এরপর তিনি আরও পাহাড়-পর্বত নিয়ে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন। কিন্তু পরিবারের আর্থিক প্রাচুর্য না থাকায় তারা তাকে পর্বতারোহণের জন্য অর্থ ব্যয় করতে মানা করে।
১৯৫৮ সালে শোয়া মহিলা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হলে একটি পর্বত আরোহণ ক্লাবে যোগদান করেন। তারপর একের পর এক পর্বতজয় করতে থাকেন।
তিনি ২০১২ সালে জাপান টাইমসকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন,
আমি কখনো পর্বতোরোহণ করা বন্ধ করতে চাইনি, ভবিষ্যতেও চাইবো না। এমনকি আমি যখন দেখেছি পর্বত বিজয় করতে গিয়ে অনেক মানুষ মারা যাচ্ছে, তখনও আমার এই ইচ্ছায় কোনো ফাটল ধরেনি।
২০১৬ সালের ২০ অক্টোবর জাপানের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।
হ্যারিট কুইমবাই
হ্যারিট কুইমবাই আমেরিকার প্রথম সার্টিফিকেটধারী নারী পাইলট। ১৯১১ সালে তিনি এই কৃতিত্ব অর্জন করেন।
তার জন্ম ১৮৭৫ সালের ১১ মে মিশিগান শহরে। ১৯০০ সালে তার পরিবার স্থায়ীভাবে ক্যালিফোর্নিয়া চলে আসে। ১৯০৩ সালে সাংবাদিকতা শুরু করলে তিনি নিউ ইয়র্ক চলে যান। সেখানে তিনি সাপ্তাহিক লেসলি ইলাস্ট্রেটেড পত্রিকায় থিয়েটার সমালোচক হিসেবে কাজ শুরু করেন। সেখানে তিনি দীর্ঘ ৯ বছর কর্মরত ছিলেন।
১৯১০ সালে নিউ ইয়র্কের বেলমন্ট পার্কে একটি আন্তর্জাতিক আকাশযান প্রদর্শনী অনুষ্ঠানে ঘুরতে গেলে তার মধ্যে পাইলট হওয়ার স্বপ্ন জাগে। স্বপ্ন পূরণের আশায় সে বছরই তৎকালীন প্রখ্যাত বৈমানিক জন মইসান্টের সাথে তিনি দেখা করেন। তখন জন মইসান্টের একটি পাইলট প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ছিল। হ্যারিট কুইমবাই সেখানে ভর্তি হন।
১৯১১ সালের ১লা আগস্ট তিনি আমেরিকার প্রথম নারী পাইলট হিসেবে সার্টিফিকেট অর্জন করেন। বিমান চালনার পাশাপাশি তিনি হলিউডের জন্য প্রায় ৭টি চিত্রনাট্য নির্মাণ করেন। একটি চলচ্চিত্রে তিনি নিজেও অভিনয় করেন।
১৯১২ সালের ১৬ এপ্রিল প্রথম নারী পাইলট হিসেবে তিনি ইংলিশ চ্যানেল অতিক্রম করেন। ইংলিশ চ্যানেল অতিক্রম করতে তার সময় লেগেছিল ৫৯ মিনিট। এই সময়ের মধ্যে তাকে ৪০ কিলোমিটার আকাশপথ পাড়ি দিতে হয়েছিল। এই অর্জনের সময় তিনি মিডিয়ায় তুলনামূলক কম আলোচিত হন, কেননা তার আগেরদিন টাইটানিক ডুবে যায়। মিডিয়া সেই বিষয় নিয়ে ব্যাস্ত ছিল। কিন্তু পরবর্তীতে তিনি তার এই অর্জনের জন্য বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত হন।
১৯১২ সালের ১ জুলাই তিনি একটি অভিযান শেষে বিমানের মধ্যে অবস্থান করছিলেন, এমন সময় একদল সন্ত্রাসী তাকে গুলি করে হত্যা করে। তখন তার বয়স হয়েছিল মাত্র ৩৭ বছর।
লোইস প্রাইস
লোইস প্রাইসের রোমাঞ্চকর অভিযাত্রার গল্পটি একটু অন্যরকম। প্রথমে তিনি ছিলেন একজন পেশাদার চাকরিজীবী। কিন্তু চাকরিজীবন তার কাছে ‘বিরক্তিকর’ মনে হলো। তাই তিনি চাকরি ছেড়ে দিলেন। তারপর একটি মোটরসাইকেল কিনলেন। আর সেই মোটরসাইকেলে চড়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন বিশ্বের নানা প্রান্তর।
১৯৭৩ সালের ১৩ জানুয়ারি ইংল্যান্ডে জন্মগ্রহণ করেন লোইস। পেশাগত জীবনে তিনি প্রথমে একটি গানের দলে যোগদান করেন। ২০০৩ সালে তিনি যখন চাকরি ত্যাগ করেন, তখন তিনি ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসির সঙ্গীত বিভাগে কর্মরত ছিলেন।
২০১৩ সালে মোটরসাইকেল যোগে তিনি সমগ্র ইরান ভ্রমণ করেন। সেখান থেকে সমগ্র আফ্রিকা ঘুরে বেড়ান। ১০ মাস সময় ব্যয়ে তিনি আলাস্কা থেকে আর্জেন্টিনা পর্যন্ত প্রায় ২০ হাজার মাইল পথ মোটরসাইকেলে অতিক্রম করেন।
তিনি ভ্রমণপিপাসুদের সব সময় দীর্ঘ পথ পাড়ি দেওয়ার পরামর্শ দেন। তিনি বলেন,
সত্যিকার অর্থে আপনি কখনোই এজন্য প্রস্তুত থাকবেন না। শুধুমাত্র কেউ যদি রোমাঞ্চকর অভিযাত্রা উপভোগ করতে চায়- তার দ্বারাই এমন ভ্রমণ সম্ভব।
বিশ্বের রোমাঞ্চকর অভিযাত্রা প্রিয় এ নারী অগ্রদূতদের জীবনের গল্প আপনাদেরকেও বিশ্বজয়ে আগ্রহী করে তুলবে- এটাই আমাদের প্রত্যাশা।