সত্যি কথা বলতে কী, বেশ দোটানায় ভুগছিলাম। সাঁতার জানি না, পুরোপুরি মজা নিতে পারবো না। একজন ভ্রমণপ্রেমী বড় আপু বলেছিলেন, খুব সুন্দর জায়গা, শুধু বাথরুমের সমস্যা! কিন্তু ঠিক কী বোঝাতে চেয়েছিলেন তা বুঝতে পারিনি। তার উপরে আবার অফিস থেকে ছুটিও দিতে চাইছিল না। কিন্তু সবকিছু ছাপিয়ে ছিল অজানা একটা নতুন জায়গায় বেড়াতে যাওয়ার উপচে পড়া আনন্দ আর উত্তেজনা। সিদ্ধান্তহীনতায় আফসোস যেন করতে না হয়, এ কারণে আয়োজক গ্রুপকে আগেই বলে রেখেছিলাম, যেন আমার জায়গাটা কনফার্ম থাকে। শেষ পর্যন্ত যখন বুকিং করেই দিলাম, শুরু হলো অপেক্ষার প্রহর গোনা। গন্তব্য সিলেট বিভাগের সুনামগঞ্জ জেলার অন্তর্গত টাঙ্গুয়ার হাওর।
এ পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন ট্যুর অপারেটরদের মধ্যে মোট ৫টি গ্রুপের সাথে আমার ভ্রমণের সুযোগ ঘটেছে। তাই মোটামুটি নিশ্চিন্তই ছিলাম, অভিজ্ঞতার ঝুলি এবারেও ঠিক ভরে উঠবে। ৩ আগস্ট, ২০১৭; বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬:৩০ এ অনেক চেষ্টায় যখন শেষ পর্যন্ত অফিস থেকে বেরোতে পারলাম, তখনও বিশ্বাস হচ্ছিলো না যে, আমি আসলেই যাচ্ছি। রাত ১০:৩০ এ ফকিরাপুল থেকে বাস ছাড়ার সময় নির্ধারিত ছিল। গ্রুপের মোট সদস্য সংখ্য ৭২ জন। এর মধ্যে নিজেকে ছাড়া মাত্র ৪ জনকে এর আগের একটি ট্রিপ থেকে চিনি। কিন্তু সবাই একরকম চেনাই ছিল, কারণ যাত্রা শুরুর প্রায় ১০ দিন আগে থেকেই যাত্রীদের সক্রিয় রাখার উদ্দেশ্যে আয়োজকেরা ফেসবুকে এই ট্রিপটি নিয়ে একটি সিক্রেট গ্রুপ তৈরি করেন এবং একে একে প্রত্যেকেই সেখানে ছোট্ট করে নিজেদের সম্বন্ধে জানিয়ে দেয়।
দুটি ভিন্ন বাস ও দুটি ভিন্ন নৌকায় এই ৭২ জনের হাওর যাত্রা শুরু হয়। আর এই ট্রিপের পুরো সময়টা জুড়েই এই দুই বাহনের যাত্রীদের মধ্যে প্রায় সব বিষয়েই প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকায় এক মুহুর্তের জন্যও ট্রিপটি বোরিং মনে হয়নি। সারাদিনের বৃষ্টি আর জলাবদ্ধতার কারণে অনেকেরই বাস স্টপে পৌঁছাতে দেরি হয়ে যায়। আমি বাস স্টপে পৌঁছানোর সাথে সাথেই দুজন সহযাত্রীর সাথে পরিচয় ও বন্ধুত্ব হয় এবং জানতে পারি যে, এই যাত্রায় তারা আমার প্রতিদ্বন্দ্বী বাহনের বন্ধু।
তিনজন বেশ কিছুক্ষণ বাস স্টপ এলাকায় হাঁটাহাঁটি করেও যখন সময় পার হচ্ছিলো না, ঠিক তখন পেটের ভিতরের মোচড়ানোটা টের পাই। আর মনে পড়ে যে, দুপুরের খাবারের পর থেকে প্রায় রাত ১২টা অব্দি আমার পেটে কিছুই পড়েনি। তিনজনে তখনই ফকিরাপুলের একটি আন্ডারগ্রাউন্ড রেস্তোরাঁ থেকে গরুর মাংস আর ভুনা খিচুড়ি খেয়ে নিই। আমার একটা বিশ্বাস (কুসংস্কারও বলা যায়) এই যে, যদি ট্রিপের শুরুতে খিচুড়ি খেয়ে যাত্রা শুরু হয়, তাহলে ট্রিপটি নিঃসন্দেহে বেশ মজার হবে। যা-ই হোক, রাত প্রায় ১২:৪৫ এ আমাদের যাত্রা শুরু হলো। সারা রাত টিপটিপ বৃষ্টির মধ্যে দিয়েই যাত্রা চলতে থাকলো। সকাল ৮টা নাগাদ সুনামগঞ্জের একটি সেতুর কাছে বাস থামে। বাস থেকে নেমে তাহিরপুরের উদ্দ্যেশে যাত্রা শুরু করি লেগুনা নিয়ে। রাস্তার অবস্থা যারপরনাই খারাপ, কিন্তু এক পাশে হাওরের একটা অংশ বয়ে চলায় সেই রাস্তার কষ্টটা সয়ে গিয়েছিল।
এখানে বলা রাখা প্রয়োজন, এই যাত্রায় বাথরুম সংক্রান্ত সমস্যাটা খুবই সাধারণ এবং সকলেরই জানা থাকায় আমরা ৭২ জন মানুষ যথেষ্ট পরিমাণ সময় নিয়ে তাহিরপুর বাজারেই একে একে এই কাজটি সেরে নিই। বাজারে বেশ কিছু ছোট-বড় হোটেল ও রেস্তোরাঁ রয়েছে। রয়েছে একটি ব্যাংক এবং ছোট আকারের একটি শপিং মলের মতো। একই সময়ে আয়োজকেরা ব্যস্ত ছিলেন পরবর্তী খাবারের জন্য প্রয়োজনীয় কাঁচাবাজার যোগাড়ের কাজে- চাল, ডাল, সবজি, মুরগি, তেল, মশলাসহ রান্না ও বিকালের নাস্তার জন্য প্রয়োজনীয় সমস্ত উপকরণ এই তাহিরপুর বাজারেই পাওয়া যায়। সেই সাথে শরীরটাকে চাঙ্গা করে নেওয়ার জন্য দলবেঁধে এক পর্ব চা হয়ে যায় এখানেই। আর ছিল হাওর থেকে সদ্য ধরে আনা তাজা মাছ।
সব যোগাড়যন্ত্র হয়ে গেলে আমাদের দুটি বজরা ধরনের নৌকা যাত্রা শুরু করে হাওরের পানির ওপর দিয়ে। কিছুদূর এগিয়ে গিয়েই একটি বাড়ির ধারে আমরা নৌকা থামিয়ে সকালের নাস্তা সেরে নিই। সকাল প্রায় ১০ঃ৩০ বেজেছিল বলে খিদেও চনমনে ছিল, আর নাস্তায় ছিল ডিম, খিচুড়ি এবং আলু ভর্তা। আর কারও কথা জানি না, কিন্তু আমি যারপরনাই খুশি ছিলাম। কিন্তু সাবধান, পরবর্তী গন্তব্য ট্যাকেরঘাট না আসা পর্যন্ত নৌকার ছোট্ট বাথরুমটিই ভরসা।
নৌকার বাথরুম বেশ ছোট- মোটামুটি আড়াই ফুট চওড়া ও তিন কী চার ফুটের মতো দীর্ঘ কিছু তক্তা দিয়ে তৈরি একটি ঘর। এখানে নদী থেকে পানি তুলে নিয়েই আপনাকে কাজ করতে হবে। আর এ ধরনের নৌকার ’নিচের তলা’র মতো যে অংশটি রয়েছে, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তা এত নিচু যে একজন গড় উচ্চতার মানুষকে হামাগুড়ি দিয়েই চলতে হবে। বাথরুমের বেলায়ও এই উচ্চতা একই রকম। তাই যাদের হাঁটু বা কোমড়ে বা পিঠে ব্যথার সমস্যা রয়েছে, তাদের জন্য এই ট্রিপটি উপযোগী নয়।
ট্যাকেরঘাট পৌঁছানোর পরে, ঘাটের কাছেই বাজারের একেবারে শেষে পাহাড়ের কোল ঘেঁষে রয়েছে একটি ছোট্ট কিন্ডারগার্টেন স্কুল। এই স্কুলের নাইট গার্ডকে অনুরোধ করে আমরা স্কুলের বাথরুম ব্যবহার করার সুযোগ পাই। বলে রাখা ভাল, প্রতিটি গ্রুপের সদস্যদের পছন্দ অনুযায়ী ট্যাকেরঘাটে কটেজে থাকার ব্যবস্থা করে। এই কটেজগুলো বাণিজ্যিকভাবে নির্মিত কোনো হোটেল বা রিসোর্ট নয়, বরং স্থানীয়দের বসতবাড়ি, যার একটি বা দুটি ঘর তারা এভাবে এক-দুই রাতের জন্য ভাড়া দিয়ে থাকেন। তবে আপনার ভ্রমণের উদ্দেশ্য যদি অ্যাডভেঞ্চার ও অভিজ্ঞতা সঞ্চয় হয়ে থাকে, তাহলে নৌকায় রাত্রি যাপনের কোনো বিকল্প নেই।
হাওরের উপর দিয়ে চলতে থাকা অবস্থায় আশেপাশের সৌন্দর্য আমাদের মন ভরিয়ে তুলছিল। রীতিমত নৈসর্গিক! যতদূর চোখ যাচ্ছে স্বচ্ছ পানির ধারা। আকাশ আর পানির মিলনের মাঝে একমাত্র বাধা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে পাহাড়। মাঝে মাঝে পানি এত স্বচ্ছ যে আন্দাজে প্রায় ২০ ফুট গভীরের জলজ উদ্ভিদ খুব পরিষ্কারভাবেই দেখা যাচ্ছিল। মাঝে মাঝে বিস্তীর্ণ অংশ জুড়ে ছিল ছোট ছোট লাল শাপলা। এসবের মাঝেই একটি বিশেষ জায়গায় নিয়মিতভাবে প্রতিটি গ্রুপ যাত্রা বিরতি দেয়। এই অংশটি মূলত একটি জনপথ। কিন্তু প্রতি বছর বর্ষাকালে বন্যার পানি হাওরের পানির সাথে মিশে এই রাস্তাটি ডুবে যায়। এর সাথে রাস্তার পাশের বড় বড় গাছপালা মিলে এক অন্যরকম পরিবেশের সৃষ্টি হয়, যা অন্য কোথাও পাওয়া যায় না। এমনকি শীতকালেও এই অঞ্চলের রূপ এরকম থাকে না। এই জায়গায় সবাই যে যার মতো পানিতে নেমে দাপাদাপি করতে থাকে। এই অবস্থায় যদি আপনি সাঁতার না জানেন, তাহলে অবশ্যই লাইফ জ্যাকেট ব্যবহার করবেন। সাঁতার না জানলেও আফসোসের কিছু নেই। ছোট ছোট ছেলেরা স্কুলের ছুটির এই সময়টায় বাবাদের সাথে মিলে ছোট ডিঙ্গি নৌকায় ঘন্টা হিসেবে বেড়ানোর ব্যবস্থা করে দেয়।
পানিতে দাপাদাপি শেষ করে আমরা সবাই গেলাম আরও একটি নিয়মিত স্পট- ওয়াচ টাওয়ার দেখতে। সুউচ্চ এই টাওয়ার থেকে পুরো হাওরের একটি পূর্ণ চিত্র দেখতে পাওয়া যায়। টাঙ্গুয়ার হাওর প্রায় ১০,০০০ হেক্টর জায়গা জুড়ে বিস্তৃত এবং এর আশেপাশের প্রায় ৪৬টি গ্রামের ৪০,০০০ মানুষের কর্মসংস্থানের যোগান এই হাওর থেকে হয়ে থাকে। এই হাওর দেশের মত্স্য শিল্পে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। ওয়াচ টাওয়ার থেকে ফেরার সময়েই সূর্য পশ্চিম দিকের যাত্রায় বেশ অগ্রসর ছিল। আর সেই ম্লান হয়ে আসা সোনালি আলোর মধ্য দিয়েই আমাদের হাওর সফর চলতে থাকে। টাটকা মাছ দিয়ে দুপুরের খাবার সারার ঘন্টাখানেক পরেই আমরা পৌঁছে যাই ট্যাকেরঘাটে।
পাহাড়ের কোলে ভারতীয় সীমান্ত ঘেঁষে অবস্থিত এই ছোট্ট গ্রামটি প্রথম দর্শনে ভালভাবে চিনতে পারিনি, কারণ পৌঁছাতে প্রায় সন্ধ্যাই হয়ে গিয়েছিল। রাতের আয়োজনের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল ট্যাকেরঘাট বাজারে চায়ের আসর, ঝাল করে মাখানো মুড়ি আর চানাচুর দিয়ে নাস্তা, নৌকায় গানের আসর, মুরগির ঝোল আর সবজি দিয়ে রাতের খাবার ও সবশেষে ফানুশ ওড়ানো। নৌকার ওপরের অংশে চাদর বিছিয়ে ঘুমানোর ব্যবস্থা হয়। অনেকেই নিচের অংশে ঘুমাতে চলে যান। আর বেশ কয়েকজন চলে যান স্থানীয় কটেজে। তবে নৌকার পাটাতনে ঘুমানোর উদ্দেশ্য ষোলআনা সফল হয়েছিল মাঝ রাতে চোরের আগমন ও রাতভর টিপটিপ বৃষ্টির কল্যাণে। শুধু ঘুমানোটাই হয়নি। তার উপরে ছিল প্রকৃতির ব্যাকুল ডাক, যাতে সকাল না হওয়া পর্যন্ত সাড়া দেওয়া সম্ভব ছিল না। কারণ নৌকা রাতে ঘাটে রাখা নিষিদ্ধ। ঘাট থেকে বেশ কিছুটা দূরে হাওরের ওপরেই কেটেছিল আমাদের সেই অ্যাডভেঞ্চারে ভরপুর রাত। বলে রাখা ভালো, এই এলাকায় ভ্রমণের ক্ষেত্রে বিজিবির প্রতিটি নির্দেশ পালন করতে চেষ্টা করবেন।
ভোর প্রায় ৫টা বাজলে আর স্থির থাকা সম্ভব হচ্ছিলো না। তাই একজন সহযাত্রী ভাইকে নিয়ে বাজারের ঐ স্কুলটির উদ্দেশ্যে রওনা হই। সন্দেহে ছিলাম, খোলা থাকবে কি না। খোলা ছিল। প্রয়োজনীয় কাজ সারার পরেই আমার চোখে প্রথমবারের মতো সকালের আলোয় ট্যাকেরঘাটের অপরূপ রূপ ধরা পড়লো। একটুও বাড়িয়ে বলছি না, রীতিমত প্রেমে পড়ে গেলাম। যেন ছোটবেলায় পড়া কোনো গল্পের বইয়ের পাতা থেকে তুলে আনা অথবা ইংল্যান্ডের নাম না জানা কোনো ছোট্ট গ্রাম- সকালবেলার বৃষ্টিস্নাত ট্যাকেরঘাট ঠিক এরকমই দেখতে। সবকিছু ভুলে ব্যস্ত হয়ে পড়লাম সেই সৌন্দর্য গোগ্রাসে গিলতে আর মুঠোফোন ভরে ছবি তুলতে। তবে রেইনকোট সাথে না নেওয়ায় বেশ কিছু সময় নষ্টও হয়েছে বটে। শেষ পর্যন্ত যখন বুঝলাম যে, বৃষ্টি আর থামবার নয়, তখন বড় একটি পলিথিন মাথায় জড়িয়ে বেরিয়ে পড়ি ছবি তুলতে আর পাড়া বেড়াতে।
কিছুদূর হেঁটেই পেয়ে গেলাম অপরূপ নীলাদ্রি লেক, যা বাংলার কাশ্মীর নামেও পরিচিত। তবে এই লেকে সাঁতার কাটতে চাইলে সাবধান- কারণ এর স্বচ্ছ সবুজ পানি যেমন টানে, তেমনি এর রহস্যময় গভীরতায় প্রাণহানীর সম্ভাবনা ও দুর্ঘটনাও কম নয়। গত সন্ধ্যায় এর এই রূপ চোখে পড়েনি। কিন্তু এখন হাতে সময়ও বিশেষ ছিল না। তাই অল্প সময়ের জন্য ছোট্ট একটি ডিঙি নৌকা ভাড়া করে নিলাম। বৃষ্টির কারণে সকালের নাস্তা তৈরিতে দেরি হওয়ায় আমরা নিজেরাই ট্যাকেরঘাট বাজারে এক পর্ব নাস্তা সেরে নিই। নৌকায় ফিরে বৃষ্টির মাঝেই ছাতার নিচে বসে খিচুড়ি আর ডিম দিয়ে চলে দ্বিতীয় দফায় সকালের নাস্তা।
সকাল প্রায় এগারোটার দিকে বৃষ্টি কমে যায়। ততক্ষণে আমাদের নৌকা বয়ে চলেছে জাদুকাটা নদীর স্বচ্ছ সবুজ পানির ওপর দিয়ে। ভারতের মেঘালয়ের পাহাড় থেকে সৃষ্ট এই জাদুকাটা নদী থেকে প্রাপ্ত কাঁচবালি দেশের খনিজ শিল্পে এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই নদীর পাড়েই প্রায় ১৫০ ফুট উঁচুতে অবস্থিত বারিক্কা টিলা থেকে নদীর অপরূপ দৃশ্য মন ভরিয়ে দেয়। এই এলাকাতেই রয়েছে দেশের সবচেয়ে বড় শিমুল বাগান, যদিও এবারের যাত্রায় আমরা সেই বাগান দেখতে যাইনি। শীতকাল সেই দৃশ্য উপভোগের আদর্শ সময়।
দুপুরে কাঠফাটা রোদে জাদুকাটা নদীর পানিতে দাপাদাপি করে হাঁসের মাংস দিয়ে দুপুরের খাবার সেরে আমাদের ফিরতি যাত্রা শুরু হয়। নৌকার যাত্রা চলাকালের দুদিনই চলন্ত নৌকার ওপরেই চলেছিল প্রাণখুলে নাচ আর গানের আসর। সেদিন ছিল পূর্ণিমা। আমরা তাহিরপুর বাজারে ফিরতে ফিরতেই চাঁদের আলো আমাদের ফিরতি পথকে মায়াময় করে তুলেছিল। তাহিরপুর পৌঁছে বাজারের একটি রেস্তোরাঁয় সবাই দলে দলে নতুন করে তৈরি হওয়া বন্ধুদের সাথে চা-নাস্তা করতে বসে যাই। তারপরই শুরু হয় ঢাকার উদ্দ্যেশ্যে আমাদের ফিরতি যাত্রা।
সুনামগঞ্জের সেই ব্রিজটিতে পৌঁছানোর একটু আগেই আমাদের দলের জন্য নির্দিষ্ট লেগুনাটির একটি চাকা পাংচার হয়ে সেটি বিকল হয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে। বাকি পথ অন্য উপায়ে পেরিয়ে এসেই বাস ধরতে হয়। বাসের ভেতর বসে প্যাকেট-ডিনার সেরে নিই। ডিনার শেষ হওয়ার আগেই আবার বৃষ্টি শুরু হয়। আর এক ঘুমে রাত পার করে ভোর ৬টার দিকে যখন আমার চোখ খুললো, তখন আমরা সবে ঢাকার সীমানায় প্রবেশ করেছি। এক রাতের মধ্যেই পারিপার্শ্বিকতার পরিবর্তনে কেমন যেন লাগতে লাগলো। মনে পড়লো, স্বল্প সময়ের ছুটিটা শেষ। এবার আবার ফিরে চলা দৈনন্দিন জীবনে!
এই ট্রিপের গড় খরচ ছিল ৪ হাজার টাকারও নিচে। উল্লেখ্য, এই ট্রিপে পুরো সময়টা জুড়েই দুটো নৌকাতেই ছিল ময়লা-আবর্জনা ফেলার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা। নদীর পানিতে কোনোরকম আবর্জনা যেন ফেলা না হয় সেই বিষয়ে আমরা সবাই সচেষ্ট ছিলাম।