এমনতর হেঁয়ালি ছড়া কাটা একমাত্র সুকুমার রায়ের পক্ষেই সম্ভব। সুকুমার রায় তো মজার কবি। কিন্তু তখনকার সময়ে তার পক্ষে কী করে জানা সম্ভব যে আইন কানুন কখনও কখনও সর্বনেশে হয়ে যেতেও পারে! শিবঠাকুরের আপন দেশেই যে আইন কানুন গলার ফাঁস হয়ে যেতে পারে তা কিন্তু নয়, বরং এ ধরাধামেই কয়েকটি দেশ আছে যাদের ট্রাফিক আইনেই রয়েছে অবাক করা রীতিনীতি যা জানলে দু’চোখ এক্কেবারে কপালে গিয়েই ঠেকতে বাধ্য।
যারা ড্রাইভিং করেন তাদের নিশ্চয় মনটা আঁকুপাঁকু করছে জানতে যে কেমনতর সে আইন আর কোন সেই দেশের কথা বলছি যেসব আপনি জানেন না! তবে বলছি, জেনে রাখুন।
নোংরা গাড়ি ড্রাইভ করতে গেলেই হতে পারে ফাইন
আপনি বলতেই পারেন গাড়ি যার মুল্লুক তার। আইনের তাতে কী-ইবা যায় আসে। কিন্তু সেটা বললে মাফ নেই। গাড়ি পরিষ্কার করতে ভারি আলিস্যি করলেই কেস খেতে বাধ্য। আমাদের দেশের কথা বলছি না। এ আইন কেবল রাশিয়ার রাস্তায়। নোংরা গাড়ি নিয়ে রাশিয়ার রাস্তায় বেরোলেই জরিমানা দেওয়ার জন্য তৈরি থাকুন প্রায় ২,০০০ রুবল। বাংলাদেশী টাকায় যা প্রায় ২,৯০০ টাকা।
গাড়ির হেডলাইট বন্ধ করলেই জরিমানা
আপনার মেমরি হেডলাইট জ্বালিয়ে রাখুন বা না রাখুন তাতে কোনো কিছুই যায় আসে না, কিন্তু ২৪ ঘণ্টা গাড়ির হেডলাইট জ্বালিয়ে রাখতে ভুল করবেন না যেন। এমনকি সকালে রাস্তায় গাড়ি নিয়ে বেরোলেও হেডলাইট কিন্তু জ্বালিয়েই রাখা চাই, এর বেশি গড়বড় হলেই ধরবে পুলিশ। অবাক হচ্ছেন নিশ্চয় কোন সে দেশে এমন আজব নিয়ম? আজব সে দেশটির নাম হলো সুইডেন।
ড্রাইভিং এ খাওয়াদাওয়া নিষেধ
ভোজন রসিকদের প্রতিহত করতেই বোধ হয় আজব এই আইন তৈরি। ড্রাইভিং করতে গিয়ে খাওয়াদাওয়ায় মগ্ন হলেই তো ঘটতে পারে বিপদ। তাই আপনার সার্বিক নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখেই আইন তৈরি হয়েছে সাইপ্রাসে। কোনো প্রকার স্ন্যাক্স, এমনকি পানি পর্যন্ত খাওয়া নিষেধ করা হয়েছে ড্রাইভিং করা অবস্থায়। তা-ও যদি আপনি অজান্তে খুব দ্রুত কিছু খেয়েও নেন ড্রাইভিং করা অবস্থায় তবে আপনাকে গুণতেই হবে ৮৫ ইউরো যা বাংলাদেশী ৭,৩১৬ টাকার সমান।
অটোভান সড়কে গাড়ি থামালে বা ফুয়েল ফুরালেই হতে পারে জেল
কী ভাবছেন? মজা করছি? মোটেই তা নয় কিন্তু। জার্মানির রাস্তায় ‘অটোভান’ মানে হলো যে সড়কে খুব বেশি গতিতে গাড়ি চলে। অর্থাৎ অটোভানে গাড়ি নিয়ে বের হওয়ার আগেই চেক করে নিন যে ট্যাংক ভর্তি ফুয়েল আছে কিনা। রাস্তায় চলতে চলতে গাড়ি থেমে গেলে বা ফুয়েল ফুরিয়ে গেলেই কিন্তু আপনি পরিগণিত হবেন একজন আইন অমান্যকারী হিসেবে। পাশাপাশি ঘটতে পারে যেকোনো দুর্ঘটনাও।
সে নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখেই তৈরি হয়েছে আইন। গাড়ি থামালেই হতে পারে পাঁচ বছরের জেল অথবা বিচারক যদি বিশেষ বিবেচনায় রাখেন তবে এমনও হতে পারে যে আপনাকে ৬ মাসের জন্য গাড়ি চালানো বন্ধ রাখার আওতায় আনবে পুলিশ প্রশাসন। জার্মানিতেই কেবল এমনটাই সম্ভব।
নো স্প্লাশিং
জাপানীরা এতোই ভদ্র জাতি যে রাস্তায় স্প্লাশিং আইন গড়ে তোলা তাদের পক্ষেই একমাত্র সম্ভব। ফুটপাতে হাঁটার সময় কর্দমাক্ত রাস্তায় গাড়ির চলাচলে নোংরা পানির ছিটে এসে পড়াটা নিশ্চয় কারোই পছন্দ নয়। তাই জাপানে একে আনা হয়েছে আইনের আওতায়। আপনি চাইলেই এমন অসভ্য ড্রাইভারকে আনতে পারেন পুলিশি হেফাজতে।
গাড়ির নাম্বারেই অশনি সংকেত
আপনার গাড়ির নাম্বার প্লেটের শেষ সংখ্যা যদি হয় ১ অথবা ২ তবে প্রতি সোমবার আপনার গাড়ি রাস্তায় বের করা নিষিদ্ধ। এই আইন কেবল ফিলিপাইনের ম্যানিলাতেই চালু আছে।
মহিলাদের ড্রাইভিং নিষিদ্ধ
অদ্ভুত হলেও সত্যি কথা যে একমাত্র সৌদি আরবে গাড়ি ড্রাইভ করার ক্ষেত্রেও মেনে চলা হয় নারী-পুরুষের বিভেদ। সৌদি আরবে মহিলাদের গাড়ি ড্রাইভ করাতে রয়েছে কড়া নিষেধ ছিল কিছুদিন আগেও। সম্প্রতি সেই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া হয়েছে।
এছাড়া মক্কার কাছাকাছি এক রাস্তায় আলাদা করে দেওয়া হয়েছে মুসলিম এবং নন-মুসলিম হাইওয়ে। আপনি যদি হয়ে থাকেন নন-মুসলিম অথবা আপনার সাথেও থাকে কোনো নন-মুসলিম, তবে অনুসরণ করুন নন-মুসলিম হাইওয়ে।
শার্ট পরেই ড্রাইভিং এ বসেছেন তো?
গরমকাল হোক বা হাল-ফ্যাশন যাই হোক, শার্ট না পরে অথবা কোনো টপ ছাড়া কিন্তু গাড়ি ড্রাইভ করার নিয়ম নেই থাইল্যান্ডের রাস্তায়। যদি নিয়ম না মেনে থাকেন তবে গুণতে হবে কয়েকশ’ বাথ জরিমানা।
টি-শার্ট পরার অনুমতি নেই যাদের
কানাডার হ্যালিফ্যাক্স ট্যাক্সি ড্রাইভারদের মেনে চলতে হয় বিশেষ ধরণের ড্রেস কোড। টি-শার্ট তো পরার অনুমতি নেই বটেই, তার উপর পরতে হবে কলার দেওয়া স্লীভ শার্ট। সাথে পরতে হবে গোড়ালি সমান ট্রাউজার বা প্যান্ট। শু এবং মোজাও বাধ্যতামূলক।
ড্রাইভিং এ মেজাজ মর্জি আইন
রাস্তায় প্রকাশ্যে চিৎকার করা আইনত অপরাধের পর্যায়েই ধরা হয় মেরিল্যান্ডে। আর যদি ড্রাইভিং করা অবস্থায় কোনো কারণে মেজাজ হারিয়ে ফেলেন, তবে তৈরি রাখুন ১০০ ডলার ফাইন। আর তা যদি পছন্দ না হয়, তবে ৯০ দিনের জন্য জেল হতে ঘুরে আসতে প্রস্তুত হোন। এক্ষেত্রে পছন্দ আপনার, প্রয়োগ প্রশাসনের।
ড্রিঙ্ক করতেই পারেন, কিন্তু ভুলেও মাতলামো নয়
আপনার ব্লাড লেভেলে কোনো ভাবেই ০.৭৫% এর বেশি অ্যালকোহল গ্রহণযোগ্য নয় যখন আপনি ড্রাইভিং করবেন কোস্টারিকার রাস্তায়। মদ্যপ হওয়া নট অ্যালাউড! তাতে গুণতে হবে ২০০ ইউরো ডলার ফাইন। রাজি তো? এর চেয়ে পানি দিয়েই গলাটা ভিজিয়ে নেওয়া ভালো নয় কি?
জুতো পরতে ভুলবেন না কিন্তু
যুক্তরাষ্ট্রে খালি পায়ে অথবা জুতা-মোজা ছাড়া ড্রাইভিং করতে গিয়ে যদি আপনি দুর্ঘটনায় পড়ে যান, তবে ইনস্যুরেন্সে কোম্পানিও কিন্তু আপনার সাথে থাকবে না। বাতিল হয়ে যাবে আপনার ইনস্যুরেন্স কাভারেজ।
সামনের সীটেও বসা নিষেধ যাদের
মেসিডোনিয়ার নিয়মানুযায়ী আপনি যদি সামান্যতমও মাতাল হয়ে থাকেন, তবে গাড়ির সামনের সীটে বসা থেকে বিরত থাকুন। এর ব্যাখ্যা হয়তো ইন্ডিয়ানরাই ভালো দিতে পেরেছিলেন এইভাবে, “গাড়ি তেরা ভাই চালায়েগা আব’।
শখের কুকুর গাড়িতে রাখার নিয়ম
আলাস্কায় ড্রাইভিংয়ে যদি সাথে থাকে আপনার শখের কুকুর, তবে অবশ্যই গাড়ির ভেতরে সিট বেল্ট বেঁধেই রাখুন কুকুরকে। কখনোই গাড়ির ছাদে রাখবেন না। এটা নিয়ম বহির্ভূত।
উটের স্বাধীনতা
ইউনাইটেড আরব আমিরাতে মানুষ বা গাড়ির মতনই উটদেরও রয়েছে নিজ নিজ চলার অধিকার। আর তাতে আপনার উটের কাছে বশ্যতা মেনেই রাস্তা ছেড়ে দিয়েই গাড়ি ড্রাইভ করতে হবে।
প্রাণীদের পারাপারেও আইন
দক্ষিণ আফ্রিকার রাস্তায় যদি দেখেন একদল ভেড়ার পাল বা ঘোড়া রাস্তা পার হচ্ছে, তবে তাদের সুরক্ষার জন্যেই আপনার থামিয়ে দিতে হবে গাড়ি। আগে পার হতে দিতে হবে তাদেরকেই। এই আইন গরু, ঘোড়া, গাধা, ভেড়া সকলের ক্ষেত্রেই মানতে হবে।
জিঙ্গেল বেল আইন
অন্টারিও প্রদেশে আপনি খোলা স্লেজগাড়িতে চড়তে পারেন যদি দুইয়ের অধিক ঘণ্টা অবশ্যই লাগানো থাকে। অবশ্যই দুইয়ের কম না কিন্তু।
তথ্যসূত্র
১) news.com.au/unbelievable-driving-laws-around-the-world/news-story/
২) slice.ca/travel/photos/the-weirdest-traffic-laws-in-the-world/
৩) torontosun.com/2014/07/15/top-10-weird-laws-in-canadian-cities
৪) auto.ndtv.com/news/top-10-weird-traffic-laws-around-the-world-389208
৫) confused.com/on-the-road/driving-abroad/driving-abroad-watch-out-for-these-strange-laws
৬) thrillist.com/cars/the-20-strangest-traffic-laws-in-the-united-states