![](https://assets.roar.media/Bangla/2017/01/kota-Sarpourenx-700x357.jpg?w=1200)
এ কথা কি শুনেছেন কখনও, আইন করে মৃত্যু নিষিদ্ধ করা যায়? আপনি হয়ত অবাক হচ্ছেন, এও কি সম্ভব! যত সব আজগুবি ব্যাপার-স্যাপার। কাজ নাই তো নিত্য নতুন বিষয় নিয়ে চায়ের কাপে ফালতু ঝড় তোলা। অনেকের কাছে অবাস্তব মনে হলেও বিষয়টি কিন্তু সত্যি।
আজ থেকে অনেক অনেক বছর আগের কথা। খ্রিস্ট পূর্ব পঞ্চম শতকের গল্প। গ্রিক সাম্রাজ্য দখলের উদ্দেশ্যে এথেন্স আর স্পারটার মধ্যে গ্রিসের ডেলস দ্বীপের উপকূলে এক যুদ্ধ সংঘটিত হয়। এ যুদ্ধকে অনেকে পেলপনেশিয়ান যুদ্ধ হিসেবেও অভিহিত করে থাকেন। পেলপনেশিয়ান যুদ্ধের সময় ব্যাপক প্রাণহানি হয়েছিল ডেলস দ্বীপে। এই সেই দ্বীপ গ্রিক পুরাণ অনুযায়ী যেখানে জন্ম হয়েছিল গ্রীক দেবতা অ্যাপোলো এবং আর্টিমিসের। তাই এই এলাকার অধিবাসীরা এই অঞ্চলটিকে পবিত্রভূমি বলে মানতেন। কিন্তু যুদ্ধের সময় শয়ে শয়ে মানুষের মৃতদেহে ভরে যায় ডেলস দ্বীপ। তখন নাকি আকাশ থেকে এক দৈববাণী হতে থাকে সমস্ত মৃতদেহকে সরিয়ে নেয়ার। দৈববাণী মেনে এই নির্দেশ পালন করা হয় এবং এরপর থেকেই সেখানে জারি করা হয় এক অদ্ভুত আইন। রাজা আদেশ দেন, পবিত্র এই স্থানে জন্ম-মৃত্যু দুই-ই নিষিদ্ধ। সেই থেকে শুরু হলো এক নতুন উপাখ্যান। পরবর্তীতে পৃথিবীর আরও বেশ কিছু দেশের কয়েকটি স্থান ডেলসের মত একই তালিকায় স্থান নিয়েছে। দেখে নেয়া যাক বিশ্বের সেই জায়গাগুলো যেখানে মৃত্যুকে করা হয়েছে নিষিদ্ধ।
সারপুরেনক্স, ফ্রান্স
শহরটি ফ্রান্সের দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত। সারপুরেনক্সের প্রধান সমস্যা কবরস্থানের সীমিত জায়গা। এই সমস্যা গড়িয়েছিল আদালত পর্যন্ত। কবরস্থানের জায়গা সম্প্রসারিত করার জন্য আদালত থেকে অনুমতি চাওয়া হলে সে আবেদন খারিজ করে দেয়া হয়। কিন্তু ঐ এলাকার মেয়র জেরার্ড লেইলন আদালতের এই রায় পাওয়ার পর এক অদ্ভুত ফরমান জারি করে এলাকায় মৃত্যুই নিষিদ্ধ করে দেন এবং যারা তা অনুসরণ করবেন না তাদের কঠোর শাস্তি প্রদান করা হবে বলে ঘোষণা দেন।
![সারপুরেনক্স, ফ্রান্স](http://roarbangla.com/wp-content/uploads/2017/01/surpurenex-300x200.jpg)
সারপুরেনক্স, ফ্রান্স
লনজারঁ, স্পেন
দক্ষিণ স্পেনের গ্রানাডা শহর থেকে ৫০ কি.মি. দূরে গ্রামটি অবস্থিত। ১৯৯৯ সালে এই এলাকার মেয়রও একই সমস্যাই পড়েন। সেই মুহূর্তে ৪০০০ এর কাছাকাছি মানুষের বসবাস লনজারেঁর আন্দালুসিয়া গ্রামে। কিন্তু মৃতদেহ কবর দেওয়ার মতো পর্যাপ্ত জায়গা নেই ছোট্ট এই শহরে। তাই মেয়র অধিবাসীদের উদ্দেশ্যে ফরমান জারি করেন যে, যতদিন পর্যন্ত নতুন কবরস্থানের জন্য পর্যাপ্ত জায়গা পাওয়া যাচ্ছে না ততদিন পর্যন্ত এই এলাকায় মৃত্যু ‘নিষিদ্ধ’। তবে নতুন কবরস্থান তৈরির জন্য নতুন জায়গার ব্যবস্থা করতে এখনও সক্ষম হননি লনজারেঁর প্রশাসন। তাই এখনও মৃত্য নিষিদ্ধ করে রেখেছে প্রশাসন।
![লনজারঁ, স্পেন](http://roarbangla.com/wp-content/uploads/2017/01/lanjaro-300x169.jpg)
লনজারঁ, স্পেন
বিরিটিবা-মিরিম, ব্রাজিল
ব্রাজিলের সাউ পাওলো রাজ্যের ছোট্ট একটি মেট্রোপোলিটন শহর এই বিরিটিবা-মিরিম। ৩১,১৫৮ লোকের বসবাস এই শহরে। ২০০৫ সালে শহরের বিরিটিবা প্রশাসন একটি পাবলিক বিল আনে যাতে বলা হয়, এলাকার কবরস্থান পূর্ণ হয়ে গেছে। আর কোনও মৃতদেহকে কবর দেওয়া সম্ভব নয় এই স্থানে। অন্য দিকে এই গ্রামটির চারপাশের ঘিরে রয়েছে ব্রাজিলের রেইন ফরেস্ট। কবরস্থান সম্প্রসারণের জন্য যা নষ্ট করা সম্ভব নয়। ফলে আর কোনও মৃতদেহ কবর দেওয়া যাবে না বিরিটিবা-মিরিম গ্রামে। তাই এখানে মৃত্যুও নিষিদ্ধ। ২০১০ সালের দিকে একটি নতুন কবরস্থান তৈরি করা হলেও প্রশাসনের অনুমতি সাপেক্ষে সীমিত সংখ্যক লোককে মৃত্যুর এবং কবর দেয়ার অনুমতি দেয়া হয়।
![বিরিটিবা-মিরিম, ব্রাজিল](http://roarbangla.com/wp-content/uploads/2017/01/vale-encantado-parque-300x168.jpg)
বিরিটিবা-মিরিম, ব্রাজিল
ইতসুকুশিমা, জাপান
এই শহরের ইতিহাসও অনেকটা ডেলসের মতোই। জাপানের ইতসুকুশিমা অঞ্চলে শিনতো সম্প্রদায়ের বাস। তারা এই স্থানকে পবিত্র তীর্থস্থান বলে মান্য করে। তাই এ স্থানের রক্ষণাবেক্ষণের জন্য তারা সর্বদাই সচেষ্ট। ১৫৫৫ সালের মিয়াজিমা যুদ্ধের পর থেকেই এমন নিয়মের প্রবর্তন। এই যুদ্ধেও বহু মানুষের মৃত্যু হয়েছিল। জয়ী রাজা সমস্ত মৃতদেহকে ইতসুকুশিমার বাইরে নিয়ে যাওয়ার জন্য নির্দেশ দেন। এই কাজ তিনি করিয়েছিলেন পরাজিত সেনাদের দিয়েই। শুধু তাই নয়, অত্যন্ত নির্মমভাবে ও নিষ্ঠুরতার বহি:প্রকাশ ঘটান যখন তিনি নির্দেশ দেন রক্তে ভেজা মাটিও তুলে নিয়ে যাওয়ার জন্য। পরাজিত সৈন্যদের দ্বারা পরিষ্কার করা হয়েছিল প্রতিটি বাড়ি-ঘরও। এরপর ১৮৭৮ থেকে মৃত্যু সম্পূর্ণ ভাবে নিষিদ্ধ হয়ে যায় জাপানের ইতসুকুশিমায়। অসুস্থ বা মৃত্যু পথযাত্রীদের নিয়ে যাওয়া হয় ইতসুকুশিমার বাইরে। কবরও হয় ইতসুকুশিমার বাইরের কোন এক জায়গায়।
![ইতসুকুশিমা, জাপান](http://roarbangla.com/wp-content/uploads/2017/01/3450_01.jpg)
ইতসুকুশিমা, জাপান
ফ্যালসিয়ানো দেল ম্যাসিকো, ইতালি
দক্ষিণ ইতালির ক্যাসারতা প্রদেশের ছোট্ট শহর ফ্যালসিয়ানো দেল ম্যাসিকো। নেপলস থেকে ৫০ কি.মি. দূরে এর অবস্থান। প্রায় ৩৭০০ লোকের বাস শহরটিতে। মৃতদেহ কবর দেওয়ার জায়গা নেই এখানে। আর সেই কারণেই ২০১২ সালে আইন করে মৃত্যু নিষিদ্ধ করে দেয়া হয়। কেউ অসুস্থ হলে তাকে পাশের শহরে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে মৃত্যু হলে সেই শহরেই কবর দেওয়া হয় তাকে। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী একটি নতুন কবরস্থানের জন্য এখনও চেষ্টা করে যাচ্ছে এখানকার অধিবাসীরা।
![ফ্যালসিয়ানো দেল ম্যাসিকো, ইতালি](http://roarbangla.com/wp-content/uploads/2017/01/falciano-italy-2-300x172.jpg)
ফ্যালসিয়ানো দেল ম্যাসিকো, ইতালি
লে লাভান্ডু, ফ্রান্স
একই সমস্যা লে লাভান্ডুতেও। এর কবরস্থানটি রয়েছে সমুদ্রের একেবারে পাশেই। তাই কবরস্থানটি পূর্ণ হয়ে গেলেও তা সম্প্রসারিত করার কোন সুযোগ নেই বলে এলাকার প্রশাসন অধিবাসীদের জানিয়ে দেয়। এর জন্য পরে আইন জারি করে প্রশাসন। আর সেই থেকে মৃত্যু নিষিদ্ধ এই শহরে। তবে এলাকার কোন অধিবাসী যদি মারা যান তাকে অন্য কোথাও নিয়ে সমাধিস্থ করাই নিয়ম এখানকার।
![লে লাভান্ডু, ফ্রান্স](http://roarbangla.com/wp-content/uploads/2017/01/labandu-300x225.jpg)
লে লাভান্ডু, ফ্রান্স
সেলিয়া, ইতালি
আইন প্রণয়ন করে মৃত্যু নিষিদ্ধ করা হয়েছে সেলিয়াতেও। এই আইনে মৃত্যু নিষিদ্ধ করার পাশাপাশি যদি কেউ বয়স্ক ব্যক্তির শরীরের যত্ন না রাখেন তার জরিমানাও ধার্য করা হয়েছে। এই অঞ্চলের জনসংখ্যা গত কয়েক দশকে উল্লেখযোগ্য হারে কমে যাওয়ায় মেয়র ডেভিড জিচিনেলা এই আইন প্রণয়ন করেছেন বলে জানা যায়।
ষাটের দশকে সেলিয়ার জনসংখ্যা ছিল ২০০০-এর কাছাকাছি। বর্তমানে এই শহরে বসবাস করেন মাত্র ৫৬০ জন। তাদের বেশির ভাগেরই বয়স ৭০-এর কোঠায়। এ ভাবে চলতে থাকলে দ্রুত জনশূন্য হয়ে যাবে সেলিয়া। তাই এই পরিস্থিতি রোধ করতেই নাকি এমন আইন প্রণয়ন করেছেন ডেভিড।
![সেলিয়া, ইতালি](http://roarbangla.com/wp-content/uploads/2017/01/sellia-300x180.jpg)
সেলিয়া, ইতালি
লংইয়ারবেন, নরওয়ে
মৃত্যু ‘নিষিদ্ধ’ এখানেও। তবে তা এক অদ্ভুত কারণে। সম্পূর্ণ বরফাবৃত নরওয়ের এই এলাকায় কোনও মৃতদেহই ডিকম্পোজ হয় না। বহু বছর আগে কবর দেওয়া মৃতদেহও থাকে এক্কেবারে অবিকৃত। সম্প্রতি, ১৯১৭ সালে ইনফ্লুয়েঞ্জায় মৃত এক ব্যক্তির ত্বকের কোষ থেকে জীবিত ইনফ্লুয়েঞ্জার জীবাণু পেয়েছে বিজ্ঞানীরা। এই কারণেই লংইয়ারবেন-এ মৃতদেহ কবর দেওয়ার মতো আর জায়গাই নেই। ফলে এই শহরে মৃত্যু ‘নিষিদ্ধ’ করতে বাধ্য হয়েছে এখানকার প্রশাসন। অসুস্থ, বয়স্ক মানুষদের তাই মৃত্যুর আগেই নরওয়ের অন্য কোনও শহরে পাঠিয়ে দেওয়াটাই এখানকার রীতি।
![লংইয়ারবেন, নরওয়ে](http://roarbangla.com/wp-content/uploads/2017/01/maxresdefault-1-300x169.jpg)
লংইয়ারবেন, নরওয়ে
মৃত্যুকে অপরাধের চরম শাস্তি হিসেবে গণ্য করা হয়। কিন্তু বিধাতার অমোঘ বিধান যে মৃত্যু তাকে কীভাবে রোধ করা যাবে? কিন্তু অদ্ভুত হলেও সত্যি বিচিত্র নানা কারণে বিধাতার এই বিধান মানা হয় না এসব এলাকায়। মৃত্যুর প্রবেশ এখানে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। খোদার উপর খোদকারি করতে জারি হয়েছে আইনও।
তথ্যসূত্র:
http://www.odditycentral.com/pics/4-places-where-dying-is-not-allowed.html http://mentalfloss.com/article/69369/7-places-where-dying-not-allowed http://www.oddee.com/item_98792.aspx http://news.bbc.co.uk/2/hi/programmes/from_our_own_correspondent/7501691.stm