Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

যুক্তরাষ্ট্রের সুন্দরী প্রতিযোগিতায় কৃষ্ণাঙ্গ নারীদের আধিপত্য

মাত্র অর্ধ শতাব্দী আগেও যুক্তরাষ্ট্রে বিদ্যমান ছিল চরম বর্ণবাদ। কৃষ্ণাঙ্গদের প্রতি এতটাই বৈষম্য করা হতো যে, তা দূরীকরণের লক্ষ্যে মার্টিন লুথার কিং বলতে বাধ্য হয়েছিলেন- আই হ্যাভ আ ড্রিম। তার স্বপ্ন আসলেই কতটুকু বাস্তবায়িত হয়েছে, সে ব্যাপারে বিতর্কের অবকাশ থাকতেই পারে। কারণ এই ২০১৯ সালে এসেও, যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন জায়গাতেই নানা সময় বর্ণবাদের অভিযোগ পাওয়া যায়। তাছাড়া সম্প্রতি, বিশেষ করে ডোনাল্ড ট্রাম্প দেশটির প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে, শ্বেতাঙ্গ আধিপত্যবাদীরা আবারো মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। তাই সামগ্রিকভাবে যুক্তরাষ্ট্র কিংবা পশ্চিমা বিশ্বের দেশগুলোতে কৃষ্ণাঙ্গদের অধিকার এখনো পুরোপুরি অর্জিত হয়েছে, সেই দাবি করার উপায় নেই। তারপরও, সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রে যে বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপিত হয়েছে, তা শুধু বিস্ময়জাগানিয়াই নয়, অভাবনীয়ও বটে।

গত বছরের সেপ্টেম্বরে নিউ জার্সিতে এক আলো ঝলমলে অনুষ্ঠানে মিস আমেরিকা ২০১৯-এর মুকুট উঠেছিল ২৫ বছর বয়সী নায়া ফ্রাঙ্কলিনের মাথায়। এবং গত ২৮ এপ্রিল ১৮ বছর বয়সী কেলি গ্যারিস জিতে নিয়েছেন মিস টিন ইউএসএ খেতাব, আর ২ মে ২৮ বছর বয়সী চেসলি ক্রাইস্ট জিতেছেন মিস ইউএসএ শিরোপা। এর মাধ্যমে রচিত হয়েছে এক নতুন ইতিহাস। প্রথমবারের মতো যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ তিন সুন্দরী প্রতিযোগিতায় জয়ী নারীই এখন কৃষ্ণাঙ্গ।

একসাথে যুক্তরাষ্ট্রের তিন সুন্দরী প্রতিযোগিতার বিজয়ী; Image Source: Getty Images

ইতিহাস 

সুন্দরী প্রতিযোগিতার অতীত ইতিহাস যদি কারো কাছে জানা থাকে, তাহলে তাকে এই খবরে চমকাতেই হবে। প্রায় শত বছর পূর্বে, ১৯২০ এর দশকে যুক্তরাষ্ট্রে যাত্রা শুরু করেছিল সুন্দরী প্রতিযোগিতাগুলো। কিন্তু তখন শ্বেতাঙ্গ ভিন্ন অন্য কারো সুযোগই ছিল না সেসব প্রতিযোগিতায় নাম লেখানোর। এরপর ১৯৪০ এর দশক থেকে ধীরে ধীরে, কাগজে-কলমে এসব প্রতিযোগিতায় কৃষ্ণাঙ্গ নারীদের যোগদানের পথ প্রশস্ত হলেও বাস্তবিক খুব কম নারীই তা করতে পারতেন। কেউ যোগদান করলেও বিতর্ক তার পিছু ছাড়ত না, বরং বিভিন্ন প্রান্ত থেকে তাকে বাধার সম্মুখীন হতে হতো।

কেবল বিগত ৫০ বছরেই এসব প্রতিযোগিতায় তথাকথিত কালো নারীদের অংশগ্রহণ কিছুটা স্বাভাবিক হিসেবে গণ্য হতে শুরু করেছে। ১৯৭০ সালে প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ নারী হিসেবে মিস আমেরিকা প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেন তৎকালীন মিস আইওয়া শেরিল ব্রাউন। তবে কোনো কৃষ্ণাঙ্গ নারীর চূড়ান্ত বিজয়ী হতে আরো বেশি সময় লেগেছে। ১৯৮৩ সালে মিস আমেরিকা খেতাব জেতেন ভেনেসা উইলিয়ামস। সেটিই ছিল যুক্তরাষ্ট্রের কোনো সুন্দরী প্রতিযোগিতায় কৃষ্ণাঙ্গ নারীর জেতা প্রথম সর্বোচ্চ সাফল্য। বছর সাতেক পর, ১৯৯০ সালে প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ নারী হিসেবে মিস ইউএসএ হন ক্যারোল অ্যান-মেরি জিস্ট, এবং পরের বছর, ১৯৯১ সালে জ্যানেল বিশপ পরিণত হন প্রথম মিস টিন ইউএসএ।

ভেনেসা উইলিয়ামস; Image Source: Wikimedia Commons

তিন পথপ্রদর্শক নারী 

চলুন পাঠক, জেনে নিই সেই তিন নারীর সম্পর্কে, যাদের হাত ধরে যুক্তরাষ্ট্রের সুন্দরী প্রতিযোগিতার ইতিহাসে যুক্ত হলো এক নতুন অধ্যায়।

চেসলি ক্রাস্ট

দুটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মোট তিনটি ডিগ্রি লাভ করেছেন বর্তমান মিস ইউএসএ ক্রাইস্ট। নর্থ ক্যারোলাইনা থেকে উঠে আসা ২৮ বছর বয়সী, পেশায় অ্যাটর্নি এই নারীর লক্ষ্য হলো যুক্তরাষ্ট্রের বিচার ব্যবস্থাকে সংস্কারের মাধ্যমে ঢেলে সাজানো।

একটি ল ফার্মের হয়ে মামলা-মোকদ্দমায় লড়েন ক্রাইস্ট, সাহায্য করেন বিনামূল্যে সেসব কারাবন্দিকে, যারা হয়তো নির্বিচারে কিংবা ভুল বিচারের ফলে সাজাপ্রাপ্ত হয়েছে। তিনি চেষ্টা করেন সেসব বন্দিদের শাস্তির মেয়াদ কমিয়ে আনার।

চেসলি ক্রাইস্ট; Image Source: CNN

দুটি রাজ্যে কাজ করার লাইসেন্স রয়েছে ক্রাইস্টের। তিনি আইন বিষয়ে ডিগ্রি এবং এমবিএ, দুই-ই লাভ করেন ওয়েক ফরেস্ট ইউনিভার্সিটি থেকে। এর আগে তিনি আন্ডার-গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্ন করেন ইউনিভার্সিটি অফ সাউথ ক্যারোলাইনা থেকে।

মিস ইউএসএ প্রতিযোগিতা চলাকালীন একটি ভিডিওতে তিনি প্রকাশ করেন এক বিচারকের কাছ থেকে তার পাওয়া এক অদ্ভূত পরামর্শের কাহিনী। সেই বিচারপতি তাকে বলেছিলেন প্যান্টের বদলে স্কার্ট পরতে, কারণ বিচারপতিরা নাকি স্কার্টই বেশি পছন্দ করেন!

স্কার্ট কিংবা প্যান্ট, যেকোনো পোশাক পরেই সাফল্য লাভ করা সম্ভব। আপনার কোনো অধিকার নেই নারীদেরকে বলা যে সে কোন পোশাক পরবে, যখন আপনি পুরুষদেরকে কেবল তাদের আইনি বক্তব্য দিয়ে বিচার করেন।

এরপর তিনি কর্মক্ষেত্রে নারীদের পোশাক সম্পর্কিত একটি ব্লগ গড়ে তুলেছেন, এবং সেটির মাধ্যমে নেতৃত্ব দিচ্ছেন ‘ড্রেস ফর সাকসেস’ আন্দোলনের।

কেলি গ্যারিস

প্রাকৃতিকভাবেই কোঁকড়া চুলের অধিকারী গ্যারিস। এবং তার এমন চুলের ধরন নিয়ে অনেকেরই আপত্তি থাকা সত্ত্বেও, কোনো কৃত্রিমতার আশ্রয় না নিয়ে সাধারণভাবেই, আত্মবিশ্বাসের সাথে প্রতিযোগিতার মঞ্চে দাঁড়িয়েছিলেন তিনি।

আমি জানি আমাকে সোজা চুল ও অন্যান্য বাড়তি সাজসজ্জায় কেমন দেখায়। কিন্তু প্রাকৃতিক চুল নিয়েই আমি বেশি আত্মবিশ্বাসী ও স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি।

প্রথম যখন কানেক্টিকাটের স্থানীয় সুন্দরী প্রতিযোগিতায় নাম লিখিয়েছিলেন গ্যারিস, তখন অনেকেই তাকে কানপড়া দিয়েছিল চুল সোজা করে ফেলতে, কারণ কোঁকড়া চুল নাকি দেখতে ভালো নয়। কিন্তু তাদের সেসব কথা আমলে না নিয়ে নিজের ঈশ্বরপ্রদত্ত সৌন্দর্যেই আস্থা রেখেছিল তিনি।

কেলি গ্যারিস; Image Source: Getty Images

গ্যারিসের সামনে সবচেয়ে বড় বাধার প্রাচীর দাঁড় করিয়েছিল সমালোচকরা, এবং সমাজের নির্ধারণ করে দেয়া সৌন্দর্যের মাপকাঠি। কিন্তু গৎবাঁধা নিয়মকানুনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়েছিলেন গ্যারিস, এবং তার এমন দুঃসাহসী মনোভাবই প্রথমে তাকে সাহায্য করেছিল মিস কানেক্টিকাট টিন ইউএসএ খেতাব জিততে, এবং পরবর্তীতে তিনি মূল মিস টিন ইউএসএ খেতাবও জিতে যান।

নায়া ফ্রাঙ্কলিন

ফ্রাঙ্কলিন নিজে একজন অপেরা সঙ্গীতশিল্পী। সেপ্টেম্বরে মিস আমেরিকা প্রতিযোগিতা চলাকালীন তিনি বলেছিলেন, সঙ্গীতের মাধ্যমেই তিনি নিজের আত্মপরিচয় উদ্ঘাটন করতে পেরেছেন, এবং এখন তিনি শিশুদেরকেও অনুপ্রাণিত করতে চান যেন তারাও সঙ্গীদের মাধ্যমে নিজেদের সুপ্ত সত্তার সন্ধান লাভ করতে পারে।

আমি বেড়ে উঠেছি এমন একটি ককেশিয়ান স্কুলে, যেখানে মাত্র ৫ শতাংশ শিশু সংখ্যালঘু শ্রেণীর প্রতিনিধিত্ব করত। আমি আমার গায়ের রঙের কারণে নিজেকে অন্যদের থেকে ভিন্ন বলে মনে করতাম। কিন্তু বড় হতে হতে শিল্পের প্রতি আমার অনুরাগ জন্মায়, এবং সঙ্গীত আমাকে সাহায্য করে নিজের ব্যাপারে ইতিবাচক মনোভাব সৃষ্টি করতে।

নায়া ফ্রাঙ্কলিন; Image Source: CNN

মিস আমেরিকা প্রতিযোগিতায় নিউ ইয়র্কের প্রতিনিধিত্ব করা ফ্রাঙ্কলিন তার সঙ্গীত প্রতিভার মাধ্যমে বিচারকদেরকে অভিভূত করেন। এখন তিনি কাজ করছেন ‘সিং ফর হোপ’ নামক একটি অলাভজনক সংস্থার হয়ে, যাদের কাজ শিশু ও শিল্পীদেরকে সঙ্গীতের শক্তির সাহায্যে সাহায্য করা।

প্রতিক্রিয়া

একই সময়ে তিনজন কৃষ্ণাঙ্গ নারীর সুন্দরী প্রতিযোগিতায় জয়লাভ করাকে অনেকে সৌন্দর্য বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের মনোভাবের পরিবর্তন হিসেবে চিহ্নিত করছেন। এর পেছনে তারা যুক্তি হিসেবে দাঁড় করাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘ বর্ণবাদ ও দাস প্রথার ইতিহাসকে। একই প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন মিস আমেরিকাজয়ী নায়া ফ্রাঙ্কলিনও।

ছোট ছোট বাদামি ও কালো চামড়ার মেয়েদের জন্য এই তিনজন শক্তিশালী নারী, তিনজন শক্তিশালী আফ্রিকান-আমেরিকান ব্যক্তিত্বকে দেখতে পাওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অনেক মানুষই হয়তো মনে করেন গায়ের রঙে কিছু যায় আসে না। কিন্তু আমেরিকায় এটি আসলেই যায় আসে, কারণ এখানকার ইতিহাস ও দাসত্ব।

এদিকে তিন কৃষ্ণাঙ্গ নারীর একই সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান তিন সুন্দরী প্রতিযোগিতার বিজয়ীর আসনে থাকায় ইনস্টাগ্রামে তাদেরকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন ২০২০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট পদে ডেমোক্রেটিক পার্টির মনোনয়ন প্রত্যাশী, ক্যালিফর্নিয়ার সিনেটর কামালা হ্যারিস।

ইতিহাসে প্রথমবারের মতো, মিস আমেরিকা, মিস ইউএসএ এবং মিস ইউএসএ টিনের প্রত্যেকেই কৃষ্ণাঙ্গ নারী। নায়া, চেসলি এবং কেলি: তোমরা হলে পথপ্রদর্শক, যারা নিজেদের মতো করে নিজেদের পথ তৈরি করে নিতে পেরেছ।

চমৎকার সব বিষয়ে রোর বাংলায় লিখতে আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন এই লিঙ্কে: roar.media/contribute/

This article is in Bengali language. It is about three black women winning USA's top beauty pageants. Necessary references have been hyperlinked inside.

Featured Image © Getty Images

Related Articles