Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

যেভাবে বিচারের মুখোমুখি হলেন এল চ্যাপো: প্রতিশোধ আর বিশ্বাসঘাতকতার রক্তাক্ত এক অধ্যায়

কুলিয়াকান হলো পশ্চিম মেক্সিকোর সিনালোয়া শহরের রাজধানী। এখানেই জন্ম নিয়েছিলেন হোয়াকুইন আর্কিভ্যালদো গুজম্যান লোয়েরা। স্থানীয়ভাবে তিনি পরিচিত ‘এল সেনর’ নামে। তবে বিশ্ববাসীর কাছে তার পরিচয় হলো ‘এল চ্যাপো‘। ২০০৯ সালের ফোর্বসের সেরা ধনীর তালিকায় উঠে আসা এই দুর্ধর্ষ ড্রাগলর্ড মেক্সিকোর মোস্ট ওয়ান্টেড ম্যান ছিলেন দশকের পর দশক।

এর আগে দুইবার পুলিশের হাতে ধরা পড়লেও নিজের প্রভাব খাটিয়ে বিচারের কাঠগড়াকে ফাঁকি দিয়েছিলেন এল চ্যাপো। দুইবারই সুকৌশলে জেল থেকে বেরিয়ে গিয়েছিলেন তিনি। বিশেষ করে ২০১৪ সালে ম্যাক্সিমাম সিকিউরিটি জেলখানার নিরাপত্তাকে ফাঁকি দেয়ার ঘটনাটি ব্যাপক আলোড়ন তুলেছিল। সারভেইল্যান্স ক্যামেরার চোখ ফাঁকি দিয়ে মাটির নিচের সুড়ঙ্গ দিয়ে তার পালানোর ঘটনা হয়তো অনেককেই শশ্যাঙ্ক রিডেম্পশনকে মনে করিয়ে দেবে। কিন্তু সেইসময় তার পাশে ছিলেন তার নিজের পরিবারসম সিনালোয়া কার্টেলের সদস্যেরা। ২০১৬ সালে ‘অপারেশন ব্ল্যাক সোয়ান’ দিয়ে তৃতীয়বার ধরা পড়ার পরে সেই সহযোগীরা আর তার পাশে এসে দাঁড়াননি। বরং আদালতে এল চ্যাপোর বিরুদ্ধে একের পর এক সাক্ষ্য দিয়ে  উন্মোচিত করে দিয়েছেন মেক্সিকোর মাদক জগতের ভেতরের সব ঘটনাকে। আইনের শাসনের কারণে নয়, নিজেদের কোন্দলের কারণেই অবশেষে ভেঙে পড়ে সিনালোয়া কার্টেল।

বিখ্যাত লেখক চার্লস বাউডেন তার এক বইয়ে মেক্সিকোর শহর চিউদাদ হুয়ারেজকে নাম দিয়েছিলেন ‘খুনের শহর’। কারণ মেক্সিকো থেকে সন্ত্রাসকে আলাদা করা একেবারেই দুঃসাধ্য। সেখানে কোনো কন্ট্রোল রুম নেই। তাই কোথায় কখন কী ঘটছে, তা কারো পক্ষেই ঠিকমতো বোঝার উপায় নেই আসলে।

মাদকের বিরুদ্ধে মেক্সিকোর যুদ্ধের কোনো ব্ল্যাকবক্স নেই। কোনো বিমান অজানা কারণে বিধ্বস্ত হলে পরবর্তীতে সেই বিমানের ব্ল্যাকবক্স থেকে অনেক তথ্য উদ্ধার করা সম্ভব হতো। কিন্তু মেক্সিকোর এসব ঘটনার নির্দিষ্ট কোনো প্রমাণ নেই। যত প্রতিবেদন লেখা হয়েছে, তার সবই তথ্য-প্রমাণের উপর ভিত্তি করে। তবে গার্ডিয়ান পত্রিকার অনুসন্ধানী দল ছুটে বেড়িয়েছে মেক্সিকোর উত্তর থেকে দক্ষিণে, ছুটে গেছে দেশের আনাচেকানাচের পুলিশ কর্মকর্তা, স্থানীয় সাংবাদিক, এমনকি গুপ্তচরদের কাছেও। ফলে এল চ্যাপোর কার্টেলের যে অন্ধকার অধ্যায় উঠে এসেছে, তার কাছে নেটফ্লিক্সের ড্রামাকেও পানসে বলে মনে হবে।

এল চ্যাপো এবং তার ছত্রিশজন সহযোগী; Image Source: AP

এল চ্যাপো ওরফে গুজম্যানের সিনালোয়া কার্টেল কোনো নির্দিষ্ট পরিসরে আবদ্ধ ছিল না। এটা ছিল অনেকটা ফেডারেশনের মতো, প্রয়োজনবোধে যে কারো সাথেই আঁতাত করতে তাদের কোনো দ্বিধা ছিল না। এদিকে মেক্সিকো সরকারের অনেকের সাথেও এই কার্টেলের ‘প্যাক্স মাফিওসা’ চুক্তি ছিল। এই চুক্তির অর্থ, সরকারের প্রচ্ছন্ন সমর্থনে অপরাধী সংগঠনগুলো বড় আকারের কোনো সন্ত্রাসী কার্যক্রম না চালিয়ে নিয়ন্ত্রিতভাবে তাদের ব্যবসা চালাতে পারবে। এর ফলে তারা তাদের প্রতিপক্ষ, যেমন- নতুন গড়ে ওঠা ড্রাগ কার্টেলগুলোর ওপর আক্রমণ চালালেও সরকারের পক্ষ থেকে কিছুই করা হত না। তাদের শাখা-প্রশাখা মেক্সিকো কিংবা আমেরিকার গণ্ডি ছাড়িয়ে ছড়িয়ে পড়েছিল গোটা বিশ্বে। কিন্তু তাদের এই শক্তির দিকটিই একসময়ে দুর্বলতায় পরিণত হয়। সংগঠনটির অনেক সদস্যই নিজেদেরকে ভালোভাবে চিনে ওঠার সুযোগ পায়নি। ফলে তাদের বিশ্বাসে ফাটল ধরে। অবশ্যম্ভাবীভাবেই এই বিষয়টি তাদের পতন ঘটাতে মূল ভূমিকা রেখেছিল।

হাত বাঁধা অবস্থায় গুলিবিদ্ধ তেরোজনের লাশ, সিনালোয়া কার্টেলের এক ড্রাগ যুদ্ধের ফলাফল; Image Source: AP

যুক্তরাষ্ট্র এবং মেক্সিকোর আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো পুরোদমেই এর সুযোগ নেয়। তারা গুজম্যানের পুরনো কিছু বন্ধুকে তার বিরুদ্ধে লাগিয়ে দেয়। এল চ্যাপোর বিচারে সবচেয়ে নাটকীয় দুই সাক্ষী জোগাড় করার পেছনে এই বুদ্ধিই কাজে লাগিয়েছেন গোয়েন্দারা। তার পছন্দের দুই লেফটেন্যান্টের বিশ্বাসঘাতকতাই অবশেষে স্বস্তির কারণ হয়েছে অনেকের। এর মধ্যে প্রথমজন হলেন ইসমায়েল জামবাদা গার্সিয়া ওরফে এল মায়ো, গুজম্যানকে পুলিশের হাতে ধরিয়ে দেবার পেছনে মূল ভূমিকাটা তারই ছিল বলে অনেকেরই ধারণা। এছাড়াও ছিলেন উচ্চশিক্ষিত দামাসো লোপেজ নুনেজ ওরফে এল লিসিয়েনসিয়াদো।

এল চ্যাপো প্রথমবার ধরা পড়ার পরে কলম্বিয়ার হাই সিকিউরিটি কারাগার পুয়েন্তে গ্র্যান্ডেতে ছিলেন। নিজের পরিচিত লোকদের কাজে লাগিয়ে তাকে সেখান থেকে পালাতে সাহায্য করেছিলেন দামাসো। কিন্তু এখন তিনি নিজেই চৌদ্দ শিকের পেছনে। তাই নিজের স্বার্থে এখন তাকে এল চ্যাপোর বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিতে দেখা যাবে।

আদালতে অনেক পরিচিত চেহারাই তাই দেখতে পাবেন এল চ্যাপো ওরফে গুজম্যান, তাকে বিশেষভাবে পীড়া দেবে এল ভিসেন্তিলোর যুক্ত থাকার বিষয়টি, কারণ নিজের ছেলের মতো করেই তিনি বড় করেছেন তাকে।

এল মায়ো: ইসমায়েল জামবাদা গার্সিয়া

এল মায়ো ছিলেন সিনালোয়া কার্টেলের সহ-প্রতিষ্ঠাতা। সেই আশির দশক থেকে তিহুয়ানা এবং হুয়ারেজের সকল সিন্ডিকেট সামলাতেন তিনি। তাকে কার্টেলের অ্যাকাউন্টেন্ট এবং বিজনেস স্ট্র্যাটেজিস্ট হিসেবে ধরা হত। পঞ্চাশ বছর ধরে এসবের সাথে জড়িত থাকার পরেও তাকে কখনো জেলে থাকতে হয়নি।

বিভিন্ন কারণে তাদের সম্পর্কচ্যুতি ঘটে। ২০১৪ সালে জেলে থাকার সময় কার্টেলের উত্তরাধিকারী হিসেবে লোপেজ নুনেজকে বেছে নেবার কথা বলেন গুজম্যান। কিন্তু লোপেজের সাথে এল মায়োর রেষারেষি ছিল সবসময়। গুজম্যানের এ কাজে মানসিকভাবে আহত হন তিনি।

এল মায়ো সবসময় ছায়ায় থাকলেও গুজম্যান কখনোই এসবের পরোয়া করতেন না। বাইরের কোনো সাংবাদিক কিংবা অন্য কারো সাথে দেখা করতে কোনো দ্বিধা ছিল না তার। একপর্যায়ে একটু বাড়াবাড়ি করে ফেলেন গুজম্যান। তার নজর কেড়ে নেন অভিনেত্রী কেট ডেল ক্যাস্টিলো। এরপরেই নিজের বায়োপিক বানানোর চিন্তা মাথায় ঢোকে তার। ফলে অভিনেতা শন পেনের সাথে সাক্ষাৎকার দিতে রাজি হন তিনি, যার ফলে অবশেষে পুলিশ নাগাল পেয়ে যায় তার।

এল মায়োর কিন্তু এসব ব্যাপারে একেবারেই ইচ্ছা ছিল না। তার কাছে কার্টেলের মূল দায়িত্ব বিজনেস, শো-বিজনেস না। তিনি নাকি অনুনয় করে গুজম্যানকে বলেছিলেন, এই ব্যবসার দায়ভার নতুন প্রজন্মের হাতে তুলে দিতে। তার বুড়ো শরীর এই ধকল আর নিতে পারছিল না।

এল লিসিয়েনসিয়াদো: দামাসো লোপেজ নুনেজ

মেক্সিকোর একটি প্রধান রাজনৈতিক দল হলো ইনস্টিটিউশনাল রেভল্যুশনারি পার্টি। ২০০০ সাল পর্যন্ত টানা ৭২ বছর ক্ষমতায় ছিল এই দলটি। আবার ২০১২ নির্বাচনের পরেও পুনরায় ক্ষমতায় আসে তারা। এই দলের এক উর্ধ্বতন কর্মকর্তার ছেলে হলেন লোপেজ নুনেজ। আইনে স্নাতক করা লোপেজ সিনালোয়া স্টেট প্রসিকিউটরের অফিসে পুলিশ অফিসারের চাকরি করতেন। বিভিন্ন জেলখানার তদারকি করা, বিশেষ করে হাই সিকিউরিটি জেলগুলোর দায়িত্ব ছিল তার ওপরে। ২০০০ সালের দিকে গুজম্যান বিখ্যাত বিগ ব্রিজ কারাগারে বন্দী ছিলেন। সেখান থেকে তাকে ২০০১ সালে পালাতে সাহায্য করার পরে কার্টেলের অংশ হয়ে যান লোপেজ। এই কুখ্যাত পলায়ন ঘটনার পরেই এই জেলখানার নাম হয়ে যায় পুয়ের্তা গ্র্যান্ডে, যার অর্থ ‘বড় দরজা’।

গ্রেপ্তারের পরে দামাসো লোপেজ নুনেজ; Image Source: Ted Soqui/Corbis via Getty Images

কার্টেলে তাকে ডাকা হত ‘দ্য গ্র্যাজুয়েট’ নামে। এই কিংপিন ছিলেন গুজম্যানের অন্যতম এক ডানহাত। গুজম্যান যখন ২০১৪ সালে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন, তখন কার্টেলের উত্তরাধিকারী হবার লোভ পেয়ে বসেছিল লোপেজকে। তিনি গোপনে গুজম্যানের ছেলে ইভান এবং জেসাসের বিরুদ্ধে অনলাইনে ক্যাম্পেইন শুরু করেছিলেন তখন। এমনকি তাদেরকে একবার অপহরণও করিয়েছিলেন তিনি। পরে এল মায়ো তাদের ছাড়ানোর ব্যবস্থা করেন। ২০১৬ সালের জুনে দেড়শ জনের সশস্ত্র হামলা চালিয়ে গুজম্যানের মায়ের বাড়ি আক্রমণ করেছিলেন লোপেজ।

মেক্সিকোতে দুবার ধরা পড়ার পরেও জেল থেকে বেরিয়ে গিয়েছিলেন তিনি। অবশেষে ২০১৬ সালে লোপেজকে গ্রেপ্তার করে যুক্তরাষ্ট্রে নিয়ে আসা হয়। তারপর থেকেই তিনি পুলিশ এবং গোয়েন্দাদের সহায়তা করতে থাকেন। ২০১৩ সালের বড় আকারের একটি মাদক পাচারের ঘটনা ফাঁস করে দেন তিনি। এই ঘটনায় প্রায় ২৮০ মিলিয়ন ডলার মূল্যমানের কোকেন পাচার হয়েছিল। সেই বছরেরই আগস্ট মাসে ধরা পড়েন তার ভাই অ্যালভারো লোপেজ। তার আগের মাসে লোপেজের ছেলে দামাসো লোপেজ ওরফে মিনি লিস স্বেচ্ছায় ধরা দেন পুলিশের কাছে। এই দুজনের সাক্ষ্যও অনেক গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে মিনি লিক নাকি সিনালোয়া কার্টলের একজন ‘ভার্চুয়াল বিশ্বকোষ’।

এল ভিসেন্তিলো: ভিসেন্তে জামবাদা নিয়েবলা

ভিসেন্তিলোকে গ্রেপ্তার করা হয় ২০০৯ সালের মার্চে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে তার পরিচয় ছিল ‘নার্কো জুনিয়র’। সিনালোয়া কার্টেলের শিকাগো সাম্রাজ্যের মূল চালিকাশক্তি ছিলেন তিনি। ২০১৩ সালের এক হিসেব অনুযায়ী, তিনি প্রায় এক বিলিয়ন ডলার সমমূল্যের মাদক কলম্বিয়া থেকে পাচার করে নিয়ে এসেছেন। উত্তর ইলিনয়ের প্রসিকিউটররা বলেছেন, “ভিসেন্তের কারণে শিকাগো শহর হিরোইন এবং কোকেন দিয়ে ভেসে গেছে।”

সেই নব্বইয়ের দশক থেকে নিজের বাবা এবং গুজম্যানের পাশাপাশি কাজ করতেন তিনি। কলম্বিয়া সরকারের উচ্চপর্যায়ে তার ভালো যোগাযোগ ছিল। সেই সুযোগ নিয়ে তিনি জাহাজ এবং সাবমেরিন ভর্তি কোকেন অনায়াসেই বর্ডার পার করিয়ে ফেলতেন। সেই সাথে অস্ত্রশস্ত্র এবং টাকাপয়সা পাচারের ব্যাপারগুলোও দেখাশোনা করতেন।

২০০৯ সালে গ্রেপ্তারের পর মিডিয়ার মুখোমুখি এল ভিসেন্তিলো; Image Source: Daniel Aguilar/Reuters

আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর সাফল্যের একটি বড় ধাপ ছিল ভিসেন্তেকে ধরতে পারা। ধরা পড়ার পরে ভিসেন্তিলো এল চ্যাপোর বিরুদ্ধে এত বেশি তথ্য সরবরাহ করেছিলেন যে, তার জেলের মেয়াদ মাত্র দশ বছরে নেমে আসে। তার বাবা জামবাদা সিনিয়রও ছেলের স্বার্থ রক্ষায় একই কাজ করেছিলেন। এল চ্যাপোর গ্রেপ্তারের পেছনে তাদের ভূমিকাই ছিল সবচেয়ে বেশি।

এল চ্যাপোর পতন

এল চ্যাপো যে মেক্সিকান রাজনীতিবিদ, সেনাবাহিনী এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর কাছ থেকে অর্থের বিনিময়ে ব্যাপক সুযোগ-সুবিধা ভোগ করতেন, তা নিয়ে সন্দেহের অবকাশ নেই। দুর্নীতিবাজ এবং স্বার্থপর এসব মানুষের সহযোগিতায় নিজের প্রতিপক্ষদের সমূলে উৎপাটন করে মেক্সিকোর সীমানা পেরিয়ে ইউরোপ-আমেরিকার ড্রাগ মার্কেটগুলোয় একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করে ফেলেন তিনি। এদিকে মেক্সিকো কিন্তু ২০০৬ সালের পর থেকেই সন্ত্রাসের আগ্রাসনে একেবারে তলিয়ে যাচ্ছিল। নিজের পরিচিত নেতাদের স্বার্থেই এল চ্যাপো কখনো কখনো বিভিন্ন উঠতি সন্ত্রাসীর কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রাখার চেষ্টা করতেন, মন্দের ভালো আর কী।

এদিকে লস জেটাস নামের এক উঠতি কার্টেলের চেয়ে দিনে দিনে পিছিয়ে পড়ছিল সিনালোয়া কার্টেল। এ নিয়ে ক্যাস্টিলোর কাছে অসন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন গুজম্যান। লস জেটাস নিজেদের উন্নতি করছিল তেলের ব্যবসা করে, বিশেষ করে গালফ এলাকায় তাদের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ ছিল। ফলে গুজম্যান তেলের ব্যবসা শুরুর প্রস্তাব দেন, সেই কোম্পানির নাম ঠিক করেন ‘চ্যাপোয়েল’।

মেক্সিকোর এই অ্যাটর্নি জেনারেল অফিসের আভ্যন্তরীণ সূত্রমতে, গুজম্যানের ২০১৪ সালে জেল থেকে পালানোর ঘটনাটির চেয়েও গুরুতর ছিল তেল ব্যবসার সাথে তার জড়িয়ে পড়ার ইচ্ছাটা। তেলের ব্যবসায় তার নাক গলানোর ব্যাপারটি যুক্তরাষ্ট্রের কাছে একটু বাড়াবাড়ি মনে হয়েছে বলেই বিচার ত্বরান্বিত করেছে তারা।

গুজম্যানকে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের হাতে হস্তান্তর করা হয় ওবামা সরকারের মেয়াদের শেষ দিনে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানের মাত্র কয়েকঘন্টা আগে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচারণা এর পেছনে বড় ভূমিকা রেখেছিল।

মেক্সিকান গবেষক জর্জ চাবাত বলেছিলেন, “এই দিনে এল চ্যাপোকে যুক্তরাষ্ট্রের হাতে হস্তান্তরের মাধ্যমে আমরা একটা বিষয় পরিষ্কারভাবে চেয়েছি। ভবিষ্যতে আমাদের দুই দেশের মধ্যে সুসম্পর্ক না থাকলে যুক্তরাষ্ট্র আর আমাদের কাছ থেকে এরকম সহযোগিতা পাবে না। অন্যান্য ক্ষমতাশীল ড্রাগলর্ডেরা তখন আমেরিকান সরকারের নাগালের বাইরেই রয়ে যাবে।

২০১৭ সালের মার্চে এক শুনানিতে আসার পথে এল চ্যাপো; Image Source: AP

এত নাটকীয় ঘটনার মাধ্যমে এই কুখ্যাত ব্যক্তিকে গ্রেপ্তারের পরেও কিন্তু মেক্সিকোবাসীর শান্তির আশা দূরাশাই রয়ে গেছে। বরং আইন-শৃঙ্খলা ব্যবস্থার আরো অবনতি ঘটে তার পরে। গুজম্যানকে গ্রেপ্তারের পরের তিনদিনের সহিংসতায় শুধুমাত্র তার শহর কুলিয়াকানেই নিহত হয় ২০ জন। ২০১৮ সালটাও শুরু হয় একেবারে দুঃস্বপ্নের মতো। বছরের প্রথম তিনদিনেই চিউদাদ হুয়ারেজ শহরে নিহত হয় ২৭ জন, আর বছরের তিন সপ্তাহ যাবার পরে তিহুয়ানায় লাশের সংখ্যা দাঁড়ায় ৯০টিতে।

গুজম্যানের বিচার যেখানে বসবে, তার ঠিক উল্টোপাশেই এইচএসবিসি ব্যাংকের নিউ ইয়র্ক শাখার হেডকোয়ার্টার। সেখানে তার শত কোটি ডলার কালো থেকে সাদা করা হয়েছে। সতর্ক করে জরিমানা করা ছাড়া এইচএসবিসি ব্যাংককে কিছু করা হয়নি। তাদের কোনো কর্মকর্তাকেই জেলের অন্ধকারে বসে দিন কাটাতে হচ্ছে না। মেক্সিকোর মানি-লন্ডারিং বিশেষজ্ঞ এডগার্দো বুচেলিয়া হিসাব করে বলেন, “চার মহাদেশের প্রায় সাড়ে তিন হাজারের মতো কোম্পানির সাথে লেনদেন ছিল গুজম্যানের। আজ তারা কোথায়?

ব্রুকলিনের এক কোর্টহাউজ থেকে বেরোবার পথে এল চ্যাপোর স্ত্রী এমা করোনেল; Image Source: Timothy A. Clary/AFP/Getty Images

এল চ্যাপোর গ্রেপ্তারের পরে মেক্সিকো কিংবা কলম্বিয়ার অধিবাসীদের অনেকেই খুশি হবেন কি না, তা নিয়ে দ্বিধায় আছেন। অনেকের মতে, সাদা চামড়ার মানুষেরা একজন বাদামি চামড়ার কলম্বিয়ানের বিচার করতে উঠে পড়ে লেগেছে। কিন্তু নিজেদের সন্ত্রাসীদের দমন করার ব্যাপারে তাদের তেমন কোনো মাথাব্যথা নেই।

একটা জিনিস অবশ্য নিশ্চিত। এল চ্যাপো গুজম্যানই “শেষ নার্কো” নন। তিনি গ্রেপ্তার হবার পরে খুন-খারাবি, অপহরণ, সাংবাদিকদের হত্যাকাণ্ড কিংবা সাধারণ জনগণের হয়রানি সবই বেড়ে গেছে। এদিকে ইউরোপ-আমেরিকাতে কোকেন, মেথ কিংবা হেরোইনের পাচার কিন্তু চলছে ঠিক সেই আগের মতো করেই। সত্যি বলতে, ব্যবসা বরং আগের থেকেও ভালো চলছে, সমানে আমদানি হবার কারণে দামও আছে নাগালের মধ্যে।

এল মায়ো জামবাদা গার্সিয়া এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছিলেন, “সারাজীবন ধরেই ধরা পড়ার ভয়ে ছিলাম। তবে মাঝে মাঝে মনে হয়, ওদের কাছে ধরা দিয়ে বলি, আমাকে গুলি করে মেরে ফেলতে। তাহলে এ দেশ একদম স্বর্গে পরিণত হবে। কিন্তু দিনশেষে আমরা সবাই জানি, এই পরিস্থিতি কোনোদিনই পাল্টাবে না।” অভিনেতা শন পেনের সাথে সাক্ষাৎকারেও এল চ্যাপো জানিয়েছিলেন, এর কোনো শেষ নেই।

This article is in Bengali Language. It is about the prosecution of famous druglord El Chapo. For more informations, please check out the hyperlinked texts.
Featured Image: Ronaldo Schemidt/AFP/Getty Images

Related Articles