Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

পররাষ্ট্রনীতি সম্পর্কে আমাদের যে ধারণাটুকু থাকা প্রয়োজন

একটি দেশ চালানো কতটা সহজ বা কতটা কঠিন কাজ? একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে প্রশ্নটা শুনে ঠোঁট ওল্টানোই স্বাভাবিক। আমরা প্রতিদিনের জীবনে বেশিরভাগ সময়েই টের পাই না যে, দেশ কীভাবে চলছে, কতটা পরিশ্রম দেশের প্রতিটি ক্ষেত্রে আমাদের খুব ছোট ছোট সুবিধাগুলো দেওয়ার জন্য প্রশাসন করে যাচ্ছে। এ তো গেল শুধু দেশের অভ্যন্তরীণ ব্যবস্থা। এর চাইতে পুরোপুরি আলাদা আরেকটি ব্যবস্থা সামলে চলতে হয় রাষ্ট্রকে। আর সেটি রাষ্ট্র প্রকাশ করে নিজের আন্তর্জাতিক কৌশলের মাধ্যমে। অভ্যন্তরীণ ও পররাষ্ট্র এই নীতিসমূহের মিশেলে গড়ে ওঠে একটি পূর্ণাঙ্গ রাষ্ট্র।

পররাষ্ট্রনীতি: কতটা গুরুত্বপূর্ণ?

অভ্যন্তরীণ ও পররাষ্ট্র এই নীতিসমূহের মিশেলে গড়ে ওঠে একটি পূর্ণাঙ্গ রাষ্ট্র; Image Source: lindasanchez.house.gov

একটি দেশকে সঠিকভাবে পরিচালিত করার জন্য থাকে আইন বিভাগ, বিচার বিভাগ ও প্রসাশনের আরো নানা অঙ্গ। তবে একটি দেশ নিমিষেই ইতিহাসের পাতায় মিলিয়ে যেতে পারে নিজের পররাষ্ট্রনীতির জন্য। আমরা রাষ্ট্রদূতের কথা শুনি, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় রয়েছে আমাদের- সে ব্যাপারে জানি। তবে এদের কাজের উপরে আমাদের রাষ্ট্র কতটা নির্ভরশীল, তা নিয়ে বেশিরভাগ সময়ই আমরা ভাবতে রাজী থাকি না।

অতীতে পররাষ্ট্রনীতি ছিল অসম্ভব সহজ একটি ব্যাপার। তখন রাষ্ট্রের অস্তিত্ব ছিলো না। রাজার মধ্যে বা সীমানার দুই পাশের শাসকের মধ্যকার যোগাযোগই ছিল আসল। এজন্য তখন দূতের ব্যবস্থাও ছিল। দূতকে তখন বর্তমান সময়ের মতো এত সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হতো না। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দূতকে নিজের জীবন বিপন্ন করেই অন্য রাজ্যে যেতে হতো।

বর্তমানে অবশ্য সময়ের বিবর্তনে রাষ্ট্র ও তার পররাষ্ট্রনীতি অনেকটা বদলে গিয়েছে। সভ্যতা তার ছাপ রেখেছে সবখানেই। তৈরি হয়েছে অনেক নিয়ম। তবে, অতীত কিংবা বর্তমান- সবসময়ই অবশ্য পররাষ্ট্রের সাথে সহাবস্থানের মাধ্যমে টিকে থাকতে হয়েছে মানুষকে। পররাষ্ট্রনীতির অন্যথা হলে ঠিক কী কী হতে পারে তার চিহ্ন হিসেবে আমাদের অতীতেই আছে দুই বিশ্বযুদ্ধ। একটি রাষ্ট্র কেমন মতাদর্শ ধারণ করে, কোন ব্যবস্থায় নিজেকে পরিচালনা করে, বাইরের মানুষ সেই রাষ্ট্রটি সম্পর্কে কী ভাবছে- এই সবকিছুই নির্ভর করে রাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতির উপরে। তাই পররাষ্ট্রনীতি যে অসম্ভব গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় তা নিয়ে সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই।

অতীতে পররাষ্ট্রনীতি ছিল অসম্ভব সহজ একটি ব্যাপার; Image Source: cdn-images-1.medium.com

পররাষ্ট্রনীতি: এক নজরে

  • নিজের স্বার্থরক্ষায় একটি রাষ্ট্র অন্য রাষ্ট্রের সাথে যে পন্থা ও কৌশলে যোগাযোগ স্থাপন করে, তাকে পররাষ্ট্রনীতি বলে।
  • পররাষ্ট্রনীতির অর্থ যেমন খুব সাধারণ কূটনৈতিক আলোচনা হতে পারে, তেমনি সামরিক শক্তি ব্যবহার করার মতো আগ্রাসনমূলক ব্যাপারও হতে পারে।
  • জাতিসংঘ সাধারণত দেশের মধ্যকার শান্তি স্থাপনের কাজ করে থাকে। দুই বা ততোধিক দেশের মধ্যকার সম্পর্ক খারাপ দিকে এগোলে বা কোনো দেশ নিয়মের বাইরে কোনো কাজ করলে সেক্ষেত্রে এই সংঘটি যথাযথ ব্যবস্থা নিয়ে থাকে। জাতিসংঘ সবসময় চেষ্টা করে যেন আবার কোনো বিশ্বযুদ্ধের মতো ঘটনা না ঘটে। এর আগে জাতিসংঘের পূর্বসূরী ‘লিগ অব ন্যাশন’স’ এর জন্মও হয় একই কারণে। তবে এটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ আটকাতে না পারায় পরবর্তীতে ভেঙে পড়ে।
  • বেশ কয়েকটি পরিচিত পররাষ্ট্রনীতির সাথে সংশ্লিষ্ট মতবাদ রয়েছে। সেগুলো হলো- রিয়ালিজম, আইডিয়ালিজম, স্ট্রাকচারালিজম, সাইকোলজিক্যাল থিওরি এবং কন্সট্রাক্টিভিজম।

পররাষ্ট্রনীতির কিছু উদাহরণ

পররাষ্ট্রনীতির নানা রকম উদাহরণ রয়েছে। এই যেমন- ২০১৩ সালে চীন ‘বেল্ট এন্ড রোড ইনিশিয়েটিভ’ নামক একটি নীতি স্থাপন করেন, যেটির মূল উদ্দেশ্য ছিল আফ্রিকা, উত্তর আমেরিকা ও ইউরোপের সাথে চীনের সম্পর্ক আরো জোরদার করা। অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের মতো একটি দেশ, যেটিকে আন্তর্জাতিক মহলে ইমপেরিয়ালিজমের বাহক বলে মনে করা হয় ক্ষমতার একীভূতকরণের জন্য, সেটিও এর আগে কয়েকটি দেশের সাথে সহাবস্থানে আসতে ‘মনোরো ডক্ট্রিন’ এর মতো নীতি স্থাপন করেছেন। আবার পররাষ্ট্রনীতি বলতে অনেকসময় সমস্ত চুক্তি এবং সংশ্লিষ্টতা থেকে সরে আসাকেও বোঝায়। এই যেমন- উত্তর কোরিয়া নিজেদের অনেকটা বিচ্ছিন্ন অবস্থানে রাখতে পছন্দ করে।

কূটনীতি ও পররাষ্ট্রনীতি

কেনেডি ও নিকিতা ক্রুশ্চেভের মধ্যকার বৈঠক; Image Source: s-i.huffpost.com

যেমনটা শুরুতেই বলা হয়েছিল, পররাষ্ট্রনীতিতে কূটনীতি ও রাষ্ট্রদূত অসম্ভব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তবে অনেক রাষ্ট্রে এই ব্যাপারটি কম গুরুত্ব দিয়ে ধ্বংসাত্মক ব্যাপারটিকেই এগিয়ে রাখা হয়। সামরিক চাপ এবং তুলনামূলকভাবে কম কূটনীতির উপর এক্ষেত্রে নির্ভর করে দেশগুলো। এর খুব ভালো উদাহরণ হতে পারে ১৯৬২ সালে হওয়া কিউবান মিসাইল ক্রাইসিসের সময় কূটনীতির কার্যকরী ভূমিকা।

স্নায়ুযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডি গোয়েন্দা মারফত খবর পান, তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের শাসক নিকিতা ক্রুশ্চেভ কিউবায় নিজেদের মিসাইল স্থাপন করছেন যুক্তরাষ্ট্রকে আঘাত করার জন্য। কেনেডি খুব দ্রুত কূটনৈতিক সিদ্ধান্ত নিলেন এবং কিউবার চারপাশে ব্লকেড স্থাপন করলেন। তিনি শত্রুপক্ষকে হুমকি দিলেন, যদি এই দেয়াল ভেঙে কোনো রাশিয়ান মিসাইল কিউবায় যায়, তাহলে যুক্তরাষ্ট্র কিউবায় আক্রমণ শুরু করে দেবে। ফলে নিকিতা ক্রুশ্চেভ কিউবা থেকে মিসাইল সরিয়ে আনেন। আর অন্যদিকে, কেনেডিও নিজেদের স্থাপিত মিসাইল তুরস্ক থেকে সরিয়ে নেন। একইসাথে কিউবা থেকে ব্লকেডও সরিয়ে ফেলেন তিনি। ব্যাপারটি অনেক খারাপ হতে পারতো। তবে কেনেডির বিচক্ষণ কুটনীতি পুরো সমস্যাটির শান্তিপূর্ণ সমাধান করে দেয় সেসময়।

পররাষ্ট্রনীতি এবং কূটনৈতিক সংস্থাগুলোর ইতিহাস

পররাষ্ট্রনীতি মানব সমাজে সবসময়েই ছিল। কখনো ছোট আকারে, কখনো বড় আকারে। ১৮১৪ সালে নেপোলিওনিক যুদ্ধের পর হওয়া দ্য কনসার্ট অব ইউরোপে ব্যাপারটি আরো কাঠামোগত একটি অবস্থা ধারণ করে, যেটি ইউরোপের গুরুত্বপূর্ণ কিছু শক্তি, যেমন- রাশিয়া, ফ্রান্স, প্রুশিয়া, অস্ট্রিয়া ও গ্রেট ব্রিটেনকে এক করে। বিংশ শতকে হওয়া প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পররাষ্ট্রনীতির প্রয়োজনীয়তা আরো বাড়িয়ে দেয়। লিগ অব ন্যাশনস তৈরি হয় এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ রুখতে ব্যর্থ হয়। পররবর্তীতে ১৯৫৪ সালে নতুন করে ইউনাইটেড ন্যাশনস বা জাতিসংঘ তৈরি করা হয়। উল্লেখ্য, পশ্চিমা দেশগুলো রাজতন্ত্র এবং কলোনি তৈরির ক্ষেত্রে এগিয়ে থাকায় সেখানেই এই কূটনৈতিক সংস্থাগুলো বেশিরভাগ ক্ষেত্রে জন্ম নিয়েছে। তবে বর্তমানে এশিয়া, আফ্রিকা এবং অন্যান্য আঞ্চলিক দেশগুলোরও নানা কূটনৈতিক সংঘ রয়েছে।

জাতিসংঘ ও লিগ অব ন্যাশন্সকে নিয়ে আঁকা কার্টুন; Image Source: blogs.eui.eu

রাষ্ট্র যে নীতির উপরে নির্ভরশীল

রাষ্ট্র যে কাজগুলোই করুক না কেন, তার পেছনে এর বিশ্বাস নির্ভর করে। রিয়ালিজম, আইডিয়ালিজম, কন্সট্রাক্টিভিজম, ইকোনোমিক স্ট্রাকচারালিজম, লিবারেলিজম এক্ষেত্রে জোরদার কাজ করে।

বর্তমানে আইডিয়ালিজমের উপরে ভিত্তি করে কোনো রাষ্ট্র কাজ করছে এমনটা খুব একটা দেখা যায় না। রিয়ালিজম বলতে শক্তির উপরে বিশ্বাস করাকে বোঝায়। ১৬ শতকে এটি ছিল ক্লাসিক্যাল রিয়ালিজম নামে। এরপর লিবারেল রিয়ালিজম এবং আরো নানা রকম রিয়ালিজম এসেছে। যার শক্তি বেশি সে টিকে থাকবে। ব্যাপারটি অনেকটা এরকম। অন্যদিকে, লিবারেলিজম বলতে বোঝায় সবার সহাবস্থানকে। ইকোনোমিক স্ট্রাকচারালিজম ছিল কার্ল মার্ক্সের ধারণা, যেখানে তিনি ধনী দেশগুলো গরীব দেশকে বাড়তি সম্পদ দিয়ে দেবে এমনটা মতামত জানান। অন্যদিকে কন্সট্রাক্টিভিজম ভাবে- সম্পদ নয়, মানুষের চিন্তা-ভাবনা পরিবর্তন হলে তাহলেই পুরো ব্যাপারটির পরিবর্তন সম্ভব।

বর্তমানে শুধু কোনো একটি ব্যবস্থাকে সঠিক মনে করে কোনো রাষ্ট্র নিজের পররাষ্ট্রনীতি ঠিক করেছে এমনটা দেখা যায় না। বেশিরভাগ রাষ্ট্রই সবকিছুর মিশ্রণে নিজেদের মতো করে পররাষ্ট্রনীতি নির্ধারণ করে। একটি রাষ্ট্র, অন্য রাষ্ট্রের সাথে তার যোগাযোগ- ব্যাপারটি কতটা জটিল, নিশ্চয় একটু হলেও আঁচ করতে পেরেছেন?

The article is written in Bengali language. It is on foreign policy and diplomacy. All the information sources are hyperlinked inside the article.

Feature Image: foreignpolicymag.files.wordpress.com

Related Articles