Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

কারোশি: কাজের চাপে মৃত্যুর মিছিল

কাজের চাপ তো সব দেশেই রয়েছে। বিশেষ করে আধুনিক সময়ে কর্পোরেট সংস্কৃতিই এমনভাবে গড়ে উঠেছে যে, কর্মস্থলে চাপ নিয়ে কাজ করা ছাড়া উপায় নেই। কিন্তু জাপানে সেই চাপ এতটাই বেশি যে, সেজন্য প্রচুর মানুষের মৃত্যুও হচ্ছে। আর সেই মৃত্যুকে সংজ্ঞায়িত করতে রয়েছে একটি নির্দিষ্ট শব্দ: কারোশি, যার আক্ষরিক অর্থ করলে দাঁড়ায় ‘অত্যধিক কাজের ফলে মৃত্যু’।

ভাবছেন অত্যধিক কাজ থেকে কীভাবে মৃত্যু হয়? প্রধানতম মেডিকেল কারণটি হলো অতিরিক্ত কাজের চাপ, উদ্বেগ ও না খেয়ে থাকার ফলে হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোক। এছাড়া নির্দিষ্ট সময়ে কাজ শেষ করতে না পারার ব্যর্থতা কিংবা কাজ করতে করতে জীবনের সব আনন্দ হারিয়ে ফেলে আত্মহত্যার ঘটনাও ঘটে অহরহ। এবং শুধু জাপানই নয়, এশিয়ার আরো নানা দেশেও দেখা যাচ্ছে কারোশির প্রবণতা

নির্ধারিত কর্মঘণ্টার পরও ওভারটাইম কাজ করছে অনেক জাপানি কর্মী; Image Source: Ibby Caputo/The World

দুটি দৃষ্টান্ত

২০১৩ সালের কথা। সে বছর হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মৃত্যু ঘটেছিল মিওয়া সাডো নামে ৩১ বছর বয়সী এক সাংবাদিকের। নিউজ নেটওয়ার্ক এনএইচকে-তে কাজ করতেন তিনি। যে মাসে তার মৃত্যু হয়, ওই মাসে তিনি ১৫৯ ঘণ্টা ৩৭ মিনিট ওভারটাইম করেছিলেন। এবং তার আগের মাসেও তিনি ওভারটাইম কাজ করেছিলেন ১৪৬ ঘণ্টা ৫৭ মিনিট। অবশ্য তার বাবার দাবি, মৃত্যুর মাসে আসলে তিনি ওভারটাইম করেছিলেন ২০৯ ঘণ্টার মতো। অর্থাৎ প্রতিদিন প্রায় সাত ঘণ্টা করে ওভারটাইম কাজ করেছিলেন তিনি। বাদ যায়নি এমনকি ছুটির দিনগুলোও।

আবার ২০১৫ সালে বিশ্বকে নাড়া দিয়েছিল একটি আত্মহত্যার ঘটনা। সে বছর ক্রিসমাসের দিন জাপানি বিজ্ঞাপনী সংস্থা ডেনৎসুর এক ২৪ বছর বয়সী কর্মচারী অফিসের ব্যালকনি থেকে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করেছিলেন। ওই অফিসেই কাজ করতেন তিনি, এবং যে মাসে তিনি আত্মহত্যা করেছিলেন, ওই মাসে তাকে ১০০ ঘণ্টার বেশি ওভারটাইম কাজ করতে হয়েছিল।

উপরের এই দুটি মৃত্যুই কারোশির উদাহরণ। প্রথমটিতে সাডোর শরীর অত্যধিক কাজের ধকল সামলাতে না পারেনি বলে তার মৃত্যু হয়েছিল। আর পরেরটিতে অত্যধিক কাজের চাপ তরুণ কর্মচারীর মনোজগতে এত বেশি প্রভাব ফেলেছিল যে, আত্মহত্যার মাধ্যমে মুক্তির পথ খুঁজেছিলেন তিনি।

২০১৩ সালে মারা যান মিওয়া সাডো; Image Source: Tokyo Reporter

কারোশির সরকারি সংজ্ঞায়ন

জাপানের স্বাস্থ্য, শ্রম ও কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে কারোশির একটি মানদণ্ড নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। তারা বলছে, কারোশি হলো কোনো কর্মীর আকস্মিক মৃত্যু, যখন সে এক মাসে ৮০ থেকে ১০০ ঘণ্টার বেশি ওভারটাইম কাজ করে। কারোশির কারণ হিসেবে তারাও চিহ্নিত করেছে তিনটি জিনিসকে: হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক ও আত্মহত্যা।

ইতিহাস

কেউ যেন ভাববেন না, কারোশি জাপানের একদমই নতুন কোনো প্রবণতা। প্রথম কারোশির দৃষ্টান্ত স্থাপিত হয়েছিল সেই ১৯৬৯ সালে, যখন কাজের চাপ সহ্য করতে না পেরে স্ট্রোক করে মারা গিয়েছিলেন একটি সংবাদপত্রে কর্মরত ২৯ বছর বয়সী পুরুষ কর্মী।

অবশ্য কারোশি পরিভাষাটির জন্ম আরো পরে, ১৯৭৮ সালে। ওভারটাইম কাজ করতে গিয়ে যখন জাপানে স্ট্রোক ও হার্ট অ্যাটাকের ফলে ঘটছিল একের পর এক মৃত্যু, তখনই প্রথম ব্যবহৃত হয় কারোশি কথাটি। আর ১৯৮২ সালে এই বিষয়ের উপর প্রকাশিত একটি বইয়ের মাধ্যমে পরিভাষাটি জনপ্রিয়তা লাভ করে, এবং সাধারণ মানুষও ব্যবহার করতে শুরু করে।

১৯৮০-র দশকের মাঝামাঝি থেকে শেষের পর্যায়েই কারোশি জাপানের একটি বড় সামাজিক সমস্যায় পরিণত হয়। কারণ ওই সময়ে জাপানে চলছিল বাবল ইকোনমি, এবং পরপর মৃত্যু ঘটেছিল বেশ কয়েকজন উচ্চপদস্থ কর্পোরেট কর্মকর্তার। ১৯৮৭ সালে যখন কারোশির ব্যাপারে গণমানুষের আগ্রহ তুঙ্গে ওঠে, তখন থেকেই জাপানের শ্রম মন্ত্রণালয় প্রকাশ করতে শুরু করে কারোশি বিষয়ক পরিসংখ্যান।

১৯৮৮ সালে জাপানের শ্রম শক্তি জরিপের প্রতিবেদনে দেখা গিয়েছিল যে দেশটির এক-চতুর্থাংশ পুরুষ কর্মীই সপ্তাহে ৬০ ঘণ্টার বেশি কাজ করছে, যা তাদের সাধারণ ৪০-ঘণ্টা কাজের শিডিউলের চেয়ে ৫০ শতাংশ বেশি। কারোশি অনাগত ভবিষ্যতে যে আরো বড় সমস্যা হিসেবে আবির্ভূত হতে যাচ্ছে, তা আঁচ করে ফেলেছিলেন অনেক বিশেষজ্ঞই। তাই সেই তিন দশক আগেই একদল আইনজীবী ও চিকিৎসকের উদ্যোগে গঠন করা হয়েছিল ‘কারোশি হটলাইন’, যেখানে ফোন করে কারোশি-সংক্রান্ত বিষয়ে পরামর্শ নেয়া যাবে।

জাপানে জনসংখ্যা কম হলেও কর্মব্যস্ততা সবসময়ই তুঙ্গে; Image Source: Sean Pavone / Shutterstock.com

সাম্প্রতিক সময়ে কারোশি

নতুন করে কারোশি সমস্যাটি নিয়ে বিশ্ব গণমাধ্যমে আবারো শোরগোল শুরু হয় ২০১৫ সালে। ওয়াশিংটন পোস্টে প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, সে বছর জাপানে কারোশির ফলে মৃত্যু হয়েছিল ১৮৯ জনের। কিন্তু আদতে সংখ্যাটি যে এর চেয়েও বহুগুণ বেশি, সে ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই। যেমন জাপানি এক সরকারি জরিপে বলা হয়েছে, ২০১৫ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৬ সালের মার্চ পর্যন্তই দেশটিতে কর্ম-সংক্রান্ত সমস্যার জের ধরে মৃত্যু ঘটেছে দুই হাজারের বেশি মানুষের, যেগুলোকে কারোশি হিসেবে অভিহিত করা যেতে পারে। এছাড়া ওই একই প্রতিবেদনেই জানা যায় যে জাপানের প্রতি পাঁচজন কর্মীর মধ্যে একজনের মৃত্যুঝুঁকি রয়েছে।

জাপানের বর্তমান আইন বলছে, একজন কর্মী সপ্তাহে ৪০ ঘণ্টা কাজ করবে। এছাড়া সরকারি নীতিমালায় বলা আছে যে, কোনো কর্মী চাইলে সারা মাস মিলিয়ে ৪৫ ঘণ্টা ওভারটাইম কাজ করতে পারবে।

কিন্তু এই নির্দেশনা মানা হচ্ছে খুব কমই। টোকিওর হিতোতসুবাশি ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ইয়োকো ইশিকুরা মনে করেন, এর কারণ জাপানের কর্মীরা মনে করে ওভারটাইম কাজই হলো তাদের সক্ষমতা প্রদর্শনের একমাত্র উপায়।

“অনেক কোম্পানি ও বসই কর্মীদের পারফরম্যান্স মূল্যায়ন করে তারা কতটুকু সময় কাজ করল তার উপর ভিত্তি করে। অন্য কোনোভাবে যে কর্মীদের কাজের মূল্যায়ন করা যেতে পারে, সেটি যেন তাদের জানাই নেই। আমাদের কাছে বেশ কিছু জরিপের ফলাফল রয়েছে যেখানে আমরা দেখতে পাচ্ছি, একজন কর্মী কতটা কর্মক্ষম, অর্থাৎ কতটা নিখুঁতভাবে সে একটি কাজ সম্পন্ন করেছে, তা মূল্যায়ন করা হয় না। বরং মনে করা হয়, যেসব কর্মীকে অনেক বেশি সময় কর্মস্থলে দেখা যায়, তারাই কর্মী হিসেবে শ্রেষ্ঠ কিংবা সর্বাপেক্ষা দক্ষ।”

অর্থাৎ জাপানের কর্পোরেট সংস্কৃতিই এখন এমন যে, আপনি যদি নিজের কাজে খুবই ভালো হন, একাগ্রচিত্তে পরিশ্রম করে খুব তাড়াতাড়ি কাজটি শেষ করে ফেলেন, তবুও কেউ আপনাকে বাহবা দেবে না। আপনাকে যদি নিজের চাকরি টিকিয়ে রাখতে হয় কিংবা বসদের সন্তুষ্ট করে পদোন্নতি লাভ ও বেশি বেতন নিশ্চিত করতে হয়, সেক্ষেত্রে আপনাকে অবশ্যই যত বেশি সময় সম্ভব অফিসে বসে থাকতে হবে।

এভাবে দীর্ঘ সময় অফিসে বসে থাকতে গিয়ে পারিবারিক ও সামাজিক জীবন উপভোগের সুযোগ হাতছাড়া করছে জাপানের অনেকেই। যাদের অর্থ উপার্জনের আর কোনো উপায় নেই, বিদ্যমান চাকরিটিই একমাত্র ভরসা, তারা নিতান্তই বাধ্য হচ্ছে প্রতিদিনের নির্ধারিত সময় কাজ শেষেও আরো লম্বা একটা সময় ওভারটাইমের জন্য অফিসে বসে থাকতে। এবং বলাই বাহুল্য, অফিসে বসে বসে তারা যে কাজগুলো করছে, সেগুলো কখনোই তাদের কাছে উপভোগ্য মনে হচ্ছে না। তাই খুব স্বাভাবিকভাবেই তাদের শরীর ও মনে ব্যাপক চাপ পড়ছে।

কাজের মানের চেয়ে কাজের সময় ও পরিমাণকেই বেশি প্রাধান্য দেয়া হয় জাপানে; Image Source: Financial Times 

ক্রমহ্রাসমান জনসংখ্যা ও শ্রমিক সঙ্কট

নেতিবাচক কর্পোরেট সংস্কৃতির পাশাপাশি কারোশির পেছনে একটি বড় ভূমিকা রয়েছে দেশটির ক্রমহ্রাসমান জনসংখ্যাও। দেশটিতে বয়স্ক মানুষের সংখ্যা হয়তো বাড়ছে, কিন্তু মোটের উপর জনসংখ্যা যেমন কমছে, তেমনই কমছে তরুণ ও যুবক কর্মক্ষম মানুষের সংখ্যাও। ফলে দেখা যাচ্ছে শ্রমিক সঙ্কট।

পর্যাপ্ত শ্রমিক না থাকার ফলে, অন্যান্য দেশে যেখানে একটি কাজ করার জন্য দুই-তিনজন শ্রমিক পাওয়া যায়, সেখানে জাপানে একজন শ্রমিকের উপরই চাপছে একা সেই কাজটি করার দায়ভার।

এ ব্যাপারে চিবা ইউনিভার্সিটি অভ কমার্সের প্রভাষক ইয়োহেই সুনেমি বলেন,

“জাপানে মানুষকে ওভারটাইম কাজ করতে হচ্ছে, কারণ এত বেশি কাজ জমে রয়েছে যা একজন মানুষের পক্ষে শেষ করা মুশকিল।”

এ সমস্যার একটি সম্ভাব্য সমাধান অবশ্য রয়েছে সুনেমির কাছে। তিনি মনে করেন, এখনই উপযুক্ত সময় কোম্পানিগুলোর পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা যে তারা আরো বেশি কাজকে অটোমেশনের আওতাভুক্ত করতে পারে কি না। অর্থাৎ তিনি মনে করছেন, মানবকর্মীর বদলে যন্ত্রের সাহায্যে কাজগুলো সম্পন্ন করা গেলে মানুষের উপর চাপ অনেকটাই কমে যাবে।

পারিবারিক জীবনে পড়ছে প্রভাব

জাপানের মানুষের ওভারটাইম কাজের প্রবণতা যে তাদেরকে কেবল কারোশির দিকেই ঠেলে দিচ্ছে, তা কিন্তু নয়। ওভারটাইম কাজ জাপানিদের পারিবারিক জীবনেও ফেলছে বিশাল প্রভাব।

জাপানে বিলুপ্ত হতে চলেছে সুখী পরিবারের ধারণা; Image Source: iNews

যেসব পুরুষরা অতিরিক্ত অর্থের জন্য ওভারটাইম কাজে ব্যস্ত থাকে, তারা তাদের পরিবার নিয়ে ভাবার বা পরিবারের সদস্যদের সাথে সময় কাটানোর সময় খুব কমই পায়। এজন্য জাপানের অধিকাংশ পরিবারেই দেখা যায় উচ্চমাত্রার ‘ফ্যামিলি ডিপ্রেশন’।

তাছাড়া পরিবারের ভরণপোষণের জন্য এত খাটতে হচ্ছে, এই চিন্তা মাথায় ঘুরপাক খেতে থাকে বলে অনেক জাপানি পুরুষের মনেই নিজ পরিবারের ব্যাপারে নেতিবাচক অনুভূতি সৃষ্টি হয়। তাই সারাদিন তারা কর্মস্থলে কাজ করতে ব্যস্ত তো থাকেই, এমনকি অবসর সময়েও তারা পরিবারের সঙ্গ উপভোগ করতে পারে না। এভাবে পরিবারের সদস্যদের মধ্যে সম্পর্ক ক্রমশই তিক্ততর হতে থাকে, যে কারণে অনেক জাপানির কাছেই পরিবার নামক প্রতিষ্ঠানটিকে অপ্রয়োজনীয় মনে হতে শুরু করেছে।

এশিয়ার অন্যান্য দেশে কারোশি

যেমনটি আগেই বলেছি, কারোশির উপস্থিতি শুধু জাপানেই নয়, রয়েছে এশিয়ার আরো কয়েকটি দেশেও। এর মধ্যে সর্বপ্রধান হলো চীন। সেখানে কারোশির একটি নিজস্ব পরিভাষাও রয়েছে: গুয়োলাওসি

এই দেশটিতেও দীর্ঘ সময় ধরে কাজ করতে করতে কাজের চাপ সহ্য করতে না পেরে মারা যায় বা আত্মহত্যা করে অনেক ব্যবসায়ী, কর্মচারী ও শ্রমিক। এর মধ্যে একটি দৃষ্টান্ত গোটা বিশ্বে আলোচনার ঝড় তুলেছিল, যখন ফক্সকন ইলেকট্রনিক্স কারখানায় দিনের পর দিন বাজে পরিবেশে ওভারটাইম কাজ করতে বাধ্য করায় আত্মহত্যা করেছিল অনেক শ্রমিক। ঘটনাটি ঘটেছিল ২০১০ সালে। সেবার এভাবে অন্তত ১৪ জন শ্রমিকের মৃত্যুর খবর প্রকাশ্যে এসেছিল।

২০১০ সালে অত্যধিক কাজের চাপে আত্মহত্যা করেছিল ফক্সকনের অন্তত ১৪ জন কর্মী; Image Source: Reuters/Bobby Yip

এদিকে দক্ষিণ কোরিয়ায়ও রয়েছে কারোশির নিজস্ব পরিভাষা: গোয়ারোসা। এই দেশটিতে কাজের চাপ এমনকি জাপানের থেকেও বেশি। একজন কর্মী বা শ্রমিক এখানে সপ্তাহে গড়ে ৬৮ ঘণ্টা কাজ করে। এই কাজের চাপ প্রভাব ফেলে দক্ষিণ কোরিয়ানদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের উপর। ইতিপূর্বে বেসরকারি কোম্পানিগুলোর কর্মীরাই গোয়ারোসার ফলে মারা যেত বলে এটি নিয়ে খুব একটা কথা হতো না। কিন্তু সাম্প্রতিক অতীতে অনেক সরকারি অফিসের কর্মচারীও এর মাধ্যমে মারা যাওয়ায় বিষয়টি নিয়ে বেশ কথাবার্তা হচ্ছে। ইতিমধ্যেই সরকারের পক্ষ থেকে আইন জারি করা হয়েছে সাপ্তাহিক কর্মঘণ্টা ৬৮ থেকে ৫২-তে নামিয়ে আনার লক্ষ্যে।

কারোশি সমাধানে মাইক্রোসফট

২০১৬ সালে সিএনবিসি প্রকাশ করেছিল, ২৫ শতাংশ জাপানি কোম্পানিতে নাকি সপ্তাহে ৮০ ঘণ্টা কাজ করতে হয়, যা বাড়িয়ে দিচ্ছে কারোশির প্রবণতা। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে এর একটি বাস্তবসম্মত সমাধান বের করার চেষ্টা করেছে মাইক্রোসফট জাপান। গত আগস্টে তারা সপ্তাহে পাঁচদিনের পরিবর্তে চারদিন অফিস খোলা রেখেছিল। এই পরীক্ষার তারা নাম দিয়েছিল ‘ফোর ডে ওয়ার্ক-উইক’। আর তাতে মিলেছে প্রত্যাশাতীত সাফল্য।

সপ্তাহের পাঁচদিনের পরিবর্তে চারদিন কাজ করার ফলে সামগ্রিকভাবে কাজের পরিমাণ তো কমেইনি, বরং উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে পুরো ৪০ শতাংশ। এছাড়াও ৯২ শতাংশ কর্মী জানিয়েছে, তারা সপ্তাহে চারদিন কাজ করাকেই বেশি পছন্দ করছে।

আগস্টে মাইক্রোসফট জাপান গ্রহণ করেছিল ফোর ডে ওয়ার্ক-উইক প্রকল্প; Image Source: Everett Kennedy Brown/EPA

সপ্তাহে মাত্র চারদিন কাজের ফলে কর্মীদের মানসিক উন্নতি ও উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি আরো কিছু সুফল মিলেছে। যেমন: বিদ্যুৎ খরচ কমেছে ২৩ শতাংশ, কাগজ প্রিন্ট হয়েছে ৫৯ শতাংশ। তাছাড়া অন্যান্য মাসের চেয়ে এই মাসে কর্মীরা কাজের ফাঁকে ঐচ্ছিক বিশ্রাম নিয়েছে ২৫ শতাংশ কম, যে কারণে তাদের কাজের গতিও অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে।

এ থেকে একটি জিনিস পরিষ্কার হয় যে জাপানিদের ‘বেশিক্ষণ কাজ করা মানেই ভালো ফল পাওয়া’ এমন ধারণা সর্বৈব ভুল। বরং মাইক্রোসফট জাপান প্রমাণ করে দিয়েছে, কর্মীদের উপর কাজের চাপ যদি কম দেয়া হয় এবং তাদেরকে অপেক্ষাকৃত বেশি সময় অবসর উপভোগের সুযোগ দেয়া হয়, তাহলে তাদের সামগ্রিক কাজের পরিমাণ কমার বদলে হু হু করে বেড়ে যাবে। সেই সাথে কমবে অন্যান্য খরচও। ফলে কোম্পানিগুলোর বাজেট সাশ্রয়ও হবে।

এখন দেখা যাক, মাইক্রোসফটের পথ অনুসরণ করে জাপানের অন্যান্য কোম্পানিগুলোও সংক্ষিপ কর্মসপ্তাহের প্রচলন ঘটায় কি না। 

প্রিয় পাঠক, রোর বাংলার ‘বিশ্ব বিভাগে এখন থেকে লিখতে পারবেন আপনিও। সমৃদ্ধ করে তুলতে পারবেন রোর বাংলাকে আপনার সৃজনশীল ও বুদ্ধিদীপ্ত লেখনীর মাধ্যমে। আমাদের সাথে লিখতে চাইলে আপনার পূর্বে অপ্রকাশিত লেখাটি সাবমিট করুন এই লিঙ্কে: roar.media/contribute/

This article is in Bengali language. It is about Karoshi, death due to workload. This is a common phenomenon in Japan and many other Asian countries. Necessary references have been hyperlinked inside.

Featured Image © Forbes

Related Articles