Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

মাইন্ডফুলনেস: জাপানি যে প্রথা বিশ্বজুড়ে অনুকরণীয়

বুলেট ট্রেনটি স্টেশনে পৌঁছানো মাত্রই শেষ কামরায় এক অদ্ভুত ঘটনার অবতারণা ঘটলো। ট্রেনের কন্ডাক্টর আপনমনে নিজের সাথে কথা বলতে শুরু করলেন। সেই সাথে তিনি একের পর এক কাজ করে যেতে লাগলেন। একেকটি কাজ তিনি করছেন, আর উচ্চস্বরে সেগুলোর ব্যাপারে মন্তব্য করছেন। ট্রেনের প্রতিটি জড়বস্তু স্পর্শের আগে এমনভাবে তাদের সাথে কথা বলছেন এবং অঙ্গভঙ্গি করছেন, যেন তারা তারই মতো মানুষ।

জাপানের একটি অতি পরিচিত দৃশ্য এটি। যারা কখনো জাপানে গেছেন, নিশ্চয়ই এমন দুই-একটি দৃষ্টান্ত নিজ চোখেই দেখার সৌভাগ্য লাভ করেছেন। এগুলোকে বলা যেতে পারে ‘মাইন্ডফুলনেস’ চর্চা করা। জাপানিরা অবশ্য একে ডাকে ‘শিসা কানকো’ নামে, যার আক্ষরিক অর্থ করলে দাঁড়ায়, ‘যাচাই ও আহবান’।

জাপানি রেলকর্মীদের কাছে খুবই জনপ্রিয় একটি প্রথা একটি। অযাচিত ভুল রোধ করা, কিংবা ভুলের পরিমাণ কমিয়ে আনার লক্ষ্যে, ১০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে তারা মেনে আসছে এই প্রথা। বিষয়টি খুব সহজ। ট্রেনের কন্ডাক্টররা তাদের যাচাই করতে হবে এমন প্রতিটি জিনিসের দিকে নির্দেশ করে, জোরে জোরে সেগুলোর নাম উচ্চারণ করে, তাদের সাথে কথা বলে, এবং এর মাধ্যমে তারা নিশ্চিত করে যেন কোনো কাজ করতে ভুল হয়ে না যায়।

জাপানি রেলকর্মীরা পালন করে শিসা কানকো; Image Source: Trevor Mogg/Alamy

বিশেষ এই পদ্ধতিটি সত্যিই অনেক কাজে দেয়। ১৯৯৪ সালে জাপানের রেইলওয়ে টেকনিক্যাল রিসার্চ ইনস্টিটিউটের এক গবেষণা থেকে জানা যায়, সহজ-সরল কাজ করতে গেলেও কর্মীরা প্রতি ১০০টি কাজে গড়ে ২.৩৮টি ভুল করে। কিন্তু সেই একই কর্মীদের যখন শিসা কানকোর মাধ্যমে কাজ করতে বলা হয়, তাদের ভুলের পরিমাণ ৮৫ শতাংশ হ্রাস পায়। এবার তারা প্রতি ১০০টি কাজে ভুল করে মাত্র ০.৩৮টি

সুতরাং উপরের দৃষ্টান্ত থেকে আমরা বলতে পারি, প্রতি মুহূর্তের সচেতনতার নামই হলো মাইন্ডফুলনেস। অবশ্য অনেকের কাছে এটি গ্রহণযোগ্য না-ও হতে পারে। কারণ মাইন্ডফুলনেস বলতে অনেকের কাছেই মনে হয় সেটিকে, যাকে জাপানিরা ডাকে ‘জাজেন’ নামে। জাজেন মানে হলো কুশনের উপর ক্রস-লেগড অবস্থায় বসে মেডিটেশন বা ধ্যান করা।

কিন্তু ইউনিভার্সিটি অভ ম্যাসাচুসেটস মেডিকেল স্কুলের ইমেরিটাস অধ্যাপক জন কাবাত-জিন, যিনি ১৯৭৯ সালে মাইন্ডফুলনেস নির্ভর স্ট্রেস রিডাকশন ক্লিনিক প্রতিষ্ঠা করেন, মাইন্ডফুলনেসের সংজ্ঞা দেন এভাবে:

মাইন্ডফুলনেস মানে পদ্মের মতো বসে থেকে নিজেকে ব্রিটিশ মিউজিয়ামের কোনো মূর্তি বলে মনে করা নয়। সহজ কথায় বলতে গেলে, এক মুহূর্ত থেকে অন্য মুহূর্তের সচেতনতাই হলো মাইন্ডফুলনেস।

মাইন্ডফুলনেস মানেই নয় পদ্মাসনে বসে মেডিটেশন; Image Source: Mindful.org

প্রতিটি দেশের মানুষেরই জীবনাচরণ সম্পর্কে কিছু নির্দিষ্ট দর্শন রয়েছে, যা তাদের সামগ্রিক চরিত্রের ওপরও ব্যাপক প্রভাব ফেলে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় আমেরিকান শিশুদের কথা, যাদেরকে ছোটবেলা থেকেই অনুপ্রাণিত করা হয় মুক্তচিন্তা করতে, উচ্চাকাঙ্ক্ষী হতে, ভিন্ন কিছু ভাবতে এবং নতুন নতুন জিনিস চেষ্টা করতে। এভাবে ছোটবেলা থেকেই তাদের অবচেতন মনে এই বিষয়গুলো ঢুকিয়ে দেওয়া হয়, যা তাদেরকে সঙ্গ দেয় বাকিটা জীবন। আবার আমাদের ভারতীয় উপমহাদেশে শিক্ষা দেয়া হয় বড়দের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের। ফলে জীবনের যেকোনো পর্যায়েই বয়সে বড় ও ছোটদের মধ্যে একটি ব্যবধান থেকে যায়, যা জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তগুলো গ্রহণের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

অনুরুপভাবে জাপানিদের মনেও সেই ছোটবেলা থেকেই একটি জিনিস গেঁথে দেয়া হয়। তা হলো: অন্যমনস্ক হওয়া যাবে না, এক কাজের মধ্যে অন্য কাজের চিন্তা করা যাবে না। প্রতিটি মুহূর্তেই সচেতন থাকতে হবে। কোনো কাজ করার আগে একাগ্রচিত্তে সেটি সম্পর্কে ভাবতে হবে, এবং সামান্য কোনো ভুলও যাতে হয়ে না যায় তা নিশ্চিত করতে হবে। এভাবেই জাপানিদের মননে বর্তমান মুহূর্তের তাৎপর্য প্রবেশ করিয়ে দেওয়া হয়। ফলে জাপানে গেলে আপনি কাউকে সজ্ঞানে মাইন্ডফুলনেস সম্পর্কে কথা বলতে দেখবেন না, কিন্তু তাদের দৈনন্দিন জীবনের প্রতিটি কাজের মাঝেই খুঁজে পাবেন মাইন্ডফুলনেসের ছাপ।

এমনকি আপাতদৃষ্টিতে অতি সামান্য ও নগণ্য কাজগুলোকেও তারা সর্বোচ্চ মনোযোগের সাথে করে থাকে। যেমন: আমাদেরকে প্রায়ই এমন অনেক জায়গায় প্রবেশ করতে হয়, যেখানে জুতা সাথে নিয়ে ঢোকা মানা। তাই আমরা জুতা বাইরে রেখে ঢুকি ঠিকই, কিন্তু জুতা কীভাবে রেখে যাবো- সে বিষয়ে কি ভাবি? ভাবি না। কেননা বাকিরাও অগোছালোভাবে জুতা রেখেই ঢোকে, তাই তাদের পাশে আমাদের জুতাটি যদি অপেক্ষাকৃত ভদ্রভাবেও রাখা থাকে, তাতে গোটা দৃশ্যের খুব বেশি পরিবর্তন হবে না। কিন্তু এই জুতা রাখার কাজেও জাপানিরা দারুণ মনোযোগী। কোথাও প্রবেশের আগে তারা একদম সারিবদ্ধভাবে জুতাগুলো রাখবে, ঠিক যেভাবে মুসলিমরা সচেতনভাবে কাতার সোজা করে নামাযে দাঁড়ায়।

জুতা পরিপাটিভাবে সাজানোর এই শিক্ষাও জাপানিরা ছোটবেলায়ই পেয়েছে। তাদের স্কুলে জুতা রাখার যেসব বাক্স রাখা থাকে, সেগুলোতে লেখা থাকে: “অগোছালো জুতা থেকে সৃষ্টি হয় অগোছালো হৃদয়।”

অনেকের কাছেই বিষয়টি হাস্যকর মনে হতে পারে। সামান্য জুতা অগোছালো রাখার সাথে গোটা হৃদয়ের অগোছালো হয়ে যাওয়া! কিন্তু একটু সূক্ষ্মভাবে ভাবলে বোঝা যাবে, এমন চিন্তাধারায় ভুল কিছু নেই। শুধু তো আর জুতা সংঘবদ্ধভাবে রাখা না। জাপানিরা এমনটি করে থাকে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই।

ছোটবেলা থেকেই তারা এই দীক্ষা পেয়ে এসেছে বলে, বড় হয়ে তাদেরকে সচেতনভাবে সব কাজে মনোযোগ দিতে হয় না। তাদের মানসিকতাই গড়ে উঠেছে এমনভাবে যে, যেকোনো কাজ শুরুর আগে স্বয়ংক্রিয়ভাবেই তাদের মস্তিষ্ক ওই বিষয়ক সতর্কতায় সক্রিয় হয়ে যায়। তার মানে দাঁড়াচ্ছে, অগোছালো জুতা এখানে কেবলই একটি প্রতীকী ভূমিকা পালন করছে। জুতা রাখার মাধ্যমে অর্জিত শিক্ষাটি এরপর তারা বড় বড় যেকোনো কাজ করতে গিয়েই মনে রাখে।

শিশুকাল থেকেই নানাভাবে জাপানিরা পায় মাইন্ডফুলনেসের শিক্ষা; Image Source: Japan Times/KYODO

আবার চিন্তা করুন একটি রুমাল ভাঁজ করে রাখার কথা। রুমাল তো আমরা অনেকেই সাথে রাখি, এবং সেটিকে পকেটে রেখে দেয়ার আগে নিতান্ত অবহেলায় কোনো রকমে ভাঁজ করে ফেলি। কিন্তু জাপানিরা তা করে না। তারা একটি রুমালকেও ভাঁজ করে সুনিপুণভাবে। খেয়াল রাখে যেন রুমালের চারটি প্রান্তই সমান থাকে। কোনোটি বড় আবার কোনোটি ছোট হয়ে না যায়।

আমরা যদি কাউকে কোনো কাজে এতটা সাবধান হতে দেখি, মনে করি সে হয়তো কম্পালসিভ ডিজঅর্ডারে ভুগছে, কিংবা সে কাজটির ব্যাপারে অবসেসড। কিন্তু এই একই কাজ জাপানিরা করবে একদম স্বাভাবিক অবস্থায়। কারণ তারা ছোটবেলা থেকেই শিখেছে- যেকোনো কাজে সর্বোচ্চ মনোযোগ দিতে হবে, কাজটি শতভাগ নিখুঁতভাবে সম্পন্ন করতে হবে। তাই একটি রুমাল ভাঁজের ক্ষেত্রেও তারা বিন্দুমাত্র ছাড় দেবে না।

যেমনটি আগেই বলা হয়েছে, জাপানিদের সরাসরি মাইন্ডফুলনেস হতে বলা হয় না। কিন্তু তাদেরকে প্রতিদিন এমন অসংখ্য রুটিন মেনে চলতে শেখানো হয়, যাতে একপর্যায়ে তারা নিজেরাই নিজেদের জীবনকে মাইন্ডফুলনেসের মাধ্যমে সুসংগঠিত করে ফেলতে পারে।

প্রতিদিন জাপানিদের স্কুল শুরু ও শেষ হয় সংক্ষিপ্ত আনুষ্ঠানিকতার মাধ্যমে, যেখানে কুশলাদি বিনিময় করা হয়, এবং প্রতিদিনের কার্যাবলি ঘোষিত হয়। আবার প্রতিটি ক্লাস শুরুর আগে এবং শেষ হওয়ার পর শিক্ষক ও শিক্ষার্থী সকলে উঠে দাঁড়ায়, মাথা নত করে, এবং পরস্পরকে ধন্যবাদ জানায়। পরের ক্লাসটি শুরুর আগে শিক্ষার্থীদেরকে বলা হয় চোখ বন্ধ করতে এবং তাদের একাগ্রতা ফিরিয়ে আনতে।

একইভাবে, যেকোনো কনস্ট্রাকশন সাইটের কর্মীরা প্রাত্যহিক কাজ শুরুর আগে একত্র হয়ে খানিকক্ষণ শরীরচর্চা করে নেয়, যাতে তাদের শরীর ভারি কাজগুলোর জন্য তৈরি হয়ে যায়। অফিসে এক সহকর্মী অপর সহকর্মীকে বলে, ‘ওৎসুকারেসামা’। এর আক্ষরিক অর্থ ‘তুমি ক্লান্ত’, কিন্তু আদতে এর মাধ্যমে তারা পরস্পরকে তাদের কৃত কাজের জন্য ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করে। আবার কোনো মিটিং শেষে কাউকে যদি বিজনেস কার্ড দেওয়া হয়, সে কখনোই সেটি সাথে সাথে তার পকেটে ঢুকিয়ে ফেলবে না। সে ভালোভাবে বিজনেস কার্ডের প্রতিটি লেখা পড়বে, এবং সেটি নিয়ে প্রাসঙ্গিক কোনো মন্তব্য করবে।

ঠিক এভাবেই, জাপানিরা ছোটবেলা থেকেই প্রতিটি কাজকে সম্পূর্ণ গুরুত্ব ও মনোযোগের সাথে করার শিক্ষা পেয়ে থাকে। তাই প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পর বিশ্বের অন্যান্য অধিকাংশ দেশের মানুষেরাই যখন মনোযোগহীনতায় ভুগতে থাকে, পর্যাপ্ত মেধা থাকা সত্ত্বেও স্রেফ ফোকাসের অভাবে কোনো কাজ করতে ব্যর্থ হয় কিংবা অনাকাঙ্ক্ষিত নানা ভুল করে ফেলে, সেখানে জাপানিরা একদম নিখুঁতভাবে কাজটি করে ফেলে। কাবাত-জিনের মতে,

মাইন্ডফুলনেস তথা উদ্দেশ্যপূর্ণভাবে কোনো বিষয়ের উপর মনোযোগ প্রদানের কারণেই, আমরা এমন অনেক কিছু লক্ষ্য করি, যা হয়তো সাধারণভাবে আমাদের নজর এড়িয়ে যেত। আর এই বিষয়গুলোই আমাদের সাহায্য করে প্রতিটি কাজে সচেতন হতে, আমরা কী করছি না করছি সে বিষয়ে নিজেদেরই স্বচ্ছ ধারণা রাখতে, এবং নির্বোধের মতো একটার পর একটা কাজ করে চলার বদলে সেগুলোকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণাধীন রাখতে।

জাপানিরা ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র কাজও করে সর্বোচ্চ মনোযোগের সাথে; Image Source: Andrew Whitehead/Alamy

জাপানি অন্য অনেক নিয়ম-নীতি ও সংস্কৃতির মতো, মাইন্ডফুলনেস প্রথাও নিহিত রয়েছে জেনে। এবং শত শত বছর ধরেই বৌদ্ধ ধর্মের ঐতিহ্যের সাথে মিশে রয়েছে মাইন্ডফুলনেস।

কামাকুরা যুগে (১১৮৫-১৩৩৩) জেন দারুণ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে সামুরাই অনুশীলনে। এছাড়া অভিজাত শ্রেণীর বিভিন্ন শিল্পের উপরও তৈরি হতে থাকে এর প্রচ্ছন্ন প্রভাব। হোক তা কোনো চা পানের অনুষ্ঠান, বাগান করা, কিংবা ফুল সাজানো। এরপর এদো যুগে (১৬০৩-১৮৬৮) জেন প্রবেশ করে সাধারণ মানুষের শিক্ষাব্যবস্থায়ও।

জেন পালনকারীদের কাছে, এটি হলো এমন একটি দৃষ্টিভঙ্গি, যা তাদের সকল কাজকেই প্রভাবিত ও পরিচালিত করে। যেমন: গোসল করা, রান্না করা, পরিষ্কার করা ইত্যাদি। বলা যেতে পারে, একটি মানুষ সকাল থেকে রাত অবধি যা যা কাজ করবে, সেগুলো সবই জেনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। জেনের বাইরে গিয়ে তার পক্ষে কিছু করা অসম্ভব।

জেন সম্পর্কে প্রচলিত রয়েছে খুব চিত্তাকর্ষক একটি গল্প। গল্পের নায়ক তেনো। বহু বছর ধরে সে সাধনা করেছে জেনের, যেন একদিন হতে পারে একজন জেন শিক্ষক। যখন সে মনে করল তার সাধনা শেষ হয়েছে, সে গেলো তার বৃদ্ধ জেন শিক্ষক নান-ইনের কাছে। সেদিন ছিল ভারি বৃষ্টি। খড়ম ও ছাতা বাইরে রেখে সে নান-ইনের ঘরে প্রবেশ করলো।

প্রাথমিক কুশলাদি বিনিময় শেষে নান-ইন তেনোকে জিজ্ঞেস করলেন, “তুমি তোমার ছাতাটি কি তোমার খড়মের ডানে রেখেছ না বাঁয়ে?” তেনো উত্তর দিতে পারলো না। কারণ সে খুব সামান্য সময়ের জন্য হলেও অন্যমনস্ক হয়ে পড়েছিল, ফলে খানিকক্ষণ আগে ঘটা একটা ঘটনাই সে মনে করতে পারছে না। তখন সে উপলব্ধি করলো, প্রকৃত জেন শিক্ষা থেকে সে অনেক পিছিয়ে রয়েছে। তাই সে চলে গেলো, এবং আরো ছয় বছর সাধনা অব্যাহত রাখলো।

অনেকের কাছেই হয়তো এই বিষয়টি অনেক বাড়াবাড়ি মনে হতে পারে। কিন্তু নিজেকেই জিজ্ঞেস করুন তো, খানিক আগে আপনি কী কী করেছেন। দেখবেন, অনেক কিছুই আপনি ভুলে গেছেন। কেননা আপনি তখন অন্য কোনো চিন্তায় এত বেশি মশগুল ছিলেন যে, নিজের আশেপাশে কী হচ্ছে না হচ্ছে, সেটিই আপনি খেয়ালই করেননি। আর প্রতি মুহূর্তে এমন আত্মবিস্মৃত হওয়াকেই আধুনিক বিজ্ঞানীরা মানুষের মনোযোগহীনতা ও ব্যর্থতার পেছনে প্রধানভাবে দায়ী হিসেবে মনে করছেন।

মনোযোগ ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে অনেকেই মেডিটেশন করার কথা ভাবেন। হ্যাঁ, এ কথা অনস্বীকার্য যে মেডিটেশন খুবই কার্যকরী কোনো কাজে মনোযোগ ফিরিয়ে আনতে। কিন্তু মেডিটেশনের প্রয়োজনই পড়তো না, যদি আমরাও ছোটবেলা থেকে জাপানিদের মতো মাইন্ডফুলনেসের চর্চা করতে পারতাম।

জাপানের মাইন্ডফুল লিডারশিপ ইনস্টিটিউটের সিইও জুনিয়া ওজিনো মাইন্ডফুলনেস সম্পর্কে বলেন,

মেডিটেশন শুরুর জন্য আপনার ইয়োগা ম্যাট বা কুশনের কোনো প্রয়োজন নেই। আপনি মনোযোগী হয়ে উঠতে পারেন শাওয়ার নেয়ার সময়, কিংবা কম্পিউটারে কাজ করার সময়, রান্না করার সময়, কিংবা আপনার জামাকাপড় ভাঁজ করার সময়। মেডিটেশন ও মাইন্ডফুল দুটি এক জিনিস নয়। মনোযোগী হওয়ার জন্য আপনার মেডিটেট করতে হবে না। আপনি যদি আপনার বর্তমান মুহূর্তের উপর ফোকাস করেন, তাহলে আপনি ইতিমধ্যেই মনোযোগী হয়ে উঠেছেন। চারপাশে দেখুন। সর্বত্রই সুযোগ আপনার অপেক্ষায় রয়েছে।

বর্তমানই হলো জীবনের সবচেয়ে বড় উপহার; Image Source: thequotes.me

সহজ কথায় বলতে গেলে, মাইন্ডফুলনেস মানে হলো বর্তমানের উপর গুরুত্বারোপ করা। অতীতের স্মৃতি রোমন্থন করা, কিংবা ভবিষ্যতে কী হতে চলেছে তা নিয়ে দুশ্চিন্তা করার চেয়ে, বর্তমান সময়কে প্রাধান্য দেওয়াই সবচেয়ে জরুরি। কেননা অতীতে যা হওয়ার তা হয়েছে, আমরা চাইলেই অতীতে ফিরে গিয়ে ভুল সংশোধন করতে পারবো না। আবার ভবিষ্যতে কী হবে- তা নিয়ে ভাবতে গিয়ে যদি বর্তমানের কাজটিও ভুল করে ফেলি, তাতে সমস্যার পরিমাণ আরো বাড়বে বৈ কমবে না।

তাহলে চলুন, জাপানিদের মতো আজ থেকে আমরাও চর্চা শুরু করি মাইন্ডফুলনেসের। এজন্য খুব বেশি কিছু কিন্তু করতে হবে না। স্রেফ বর্তমান সময়টির উপর মনোযোগ দিই। এই মুহূর্তে আমরা যে কাজটি করছি, সেটিকেই খুব ভালোভাবে করার চেষ্টা করি, আমাদের সকল চিন্তা-ভাবনা ও সচেতনতা সেই কাজটির জন্যই উৎসর্গ করি।

পরিশেষে স্মরণ করা যাক মাস্টার উগওয়ের সেই অমর বাণী:

Yesterday is history,
Tomorrow is a mystery,
And today is a gift…
That’s why they call it present.

জাপানের সংস্কৃতি সম্পর্কে আরও জানতে পড়তে পারেন এই বইগুলো:

১) জাপান কাহিনিঃ ১ম-৫ম খণ্ড
২) দূর পরবাস জাপান 
৩) যেমন দেখেছি জাপান 

বিশ্বের চমৎকার সব বিষয়ে রোর বাংলায় লিখতে আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন এই লিঙ্কেঃ roar.media/contribute/

This article is in Bengali language. It is about Mindfulness, a Japanese tradition that should be followed by the entire world. Necessary references have been hyperlinked inside.

Featured Image © DreamWorks Animation

Related Articles