সম্ভবত পৃথিবীর বুকে মানবসভ্যতার ইতিহাসের আশ্চর্যতম সময়টি পার করছি আমরা। অর্থোপার্জন করা এবং বিশাল বড় ধনী হয়ে যাওয়া আজকের দিনে আর কোনো ব্যাপারই না। বয়স বিশের কোঠা স্পর্শ করার আগেই মিলিয়ন ডলারের মালিক বনে যাচ্ছে অনেকে। আবার মাত্র ২১ বছর বয়সে বিলিয়নিয়ার হওয়ার দৃষ্টান্তও প্রত্যক্ষ করেছি আমরা।
ফোর্বস ম্যাগাজিন তো প্রতি বছরই প্রকাশ করছে নবীনতম স্বনির্মিত বিলিয়নিয়ারের তালিকা। সেসব দেখেশুনে আমাদের মনে এ ধারণা আরো গভীরভাবে জেঁকে বসছে যে সাফল্য লাভের সর্বোৎকৃষ্ট সময় বুঝি তরুণ বয়সই। যে বয়সটায় অন্য অনেক তরুণ সম্পদের শীর্ষে আরোহণ করে ফেলছে, সে বয়সে আমরাও যদি ওই একই সাফল্যের পথ অনুসরণ করতে পারি, তাহলে তো আমাদের গোটা মানবজনমই বৃথা!
আর এ ধরনের মানসিকতার কারণে আমরা প্রায় সময়ই খাটো করে দেখি মধ্যবয়স্ক, কিংবা আপাত বৃদ্ধ ব্যক্তিদের কর্মপ্রয়াসকে। বিশেষত যাদের বয়স ৫০ ছাড়িয়েছে, তারা তো ইতিমধ্যেই মৃত্যুদূতের সাথে সন্ধিস্থাপনের ক্ষেত্রে অনেকটা এগিয়ে গেছে, অথচ এতদিনেও জীবনে উল্লেখযোগ্য কিছু করতে পারেনি। তাহলে জীবনের অবশিষ্ট দিনগুলোতে তারা আর নতুন কী-ই বা করতে পারবে — এমন মতামতই প্রকাশ্যে বা অপ্রকাশ্যে পোষণ করে থাকি আমরা অনেকে। তাছাড়া চিরাচরিত প্রবাদও তো রয়েছেই, “বুড়ো কুকুরকে কোনো নতুন কৌশল শেখানো সম্ভব নয়।”
কিন্তু আসলেই কি তা-ই? সত্যিই কি ৫০ পেরোনোদের পক্ষে জীবনে নতুন করে আর কিছু করা, এবং সে সুবাদে সাফল্য লাভ করা সম্ভব নয়? সাফল্যের মূল মাপকাঠি যে ধন-সম্পদ, তাদের পক্ষে কি সেই ধন-সম্পদের অধিকারী হওয়াও সম্ভব নয়? আপনি-আমি হয়তো নেতিবাচক জবাব দেব, কিন্তু বিশেষজ্ঞদের মতামত একেবারেই ভিন্ন।
লেখক স্টিভ সিবোল্ড বলছেন, “৫০ এর পর ধনী হওয়া কঠিন তো নয়ই, বরং অপেক্ষাকৃত সহজ।” আপনি হয়তো এখন বলবেন, “কোথাকার কোন সিবোল্ড, তার কথায় কী যায় আসে!” আসে যায়, কারণ ৫১ বছর বয়সী সিবোল্ড কোনো যে-সে ব্যক্তি নন। তিনি বেস্টসেলার বই “হাউ রিচ পিপল থিংক” এর রচয়িতা, এবং নিজেও একজন স্বনির্মিত মিলিয়নিয়ার। বর্তমানে বিভিন্ন করপোরেট সেলস টিমের উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করেন তিনি। পাশাপাশি বক্তৃতা দিতে ঘুরে বেড়ান যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন শহরে, এমনকি দেশের বাইরেও।
তবে এর আগে প্রায় তিন দশক ধরে সিবোল্ড কাজ করেছেন ধনী ব্যক্তিদের নিয়ে। তিনি সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেছেন ১,২০০ এরও বেশি ধনাঢ্য ব্যক্তির। ওইসব ব্যক্তির সাথে কথা বলে, জীবন ও অর্থোপার্জন সম্পর্কে তাদের দৃষ্টিভঙ্গি জানার মাধ্যমে, সিবোল্ড নিজের মতো করে তৈরি করেছেন ধনবানদের মনস্তত্ত্ব সংক্রান্ত নানা তত্ত্ব। আর তাই তিনি এখন মনে করেন, ৫০ বছর বয়সই কারো জীবনের শেষ নয়। বরং সেখান থেকেই হতে পারে এক নতুন জীবনের সূচনা।
“(৫০ পেরোনোর) তিন, চার বা পাঁচ বছরের মধ্যেই, তারা যদি কোনো কাজের ব্যাপারে ফোকাসড থাকে এবং সেটি সম্পর্কে ভালো ধারণা তৈরি করতে পারে, তাহলে তাদের পক্ষে জীবনের অন্য যেকোনো সময়ের চেয়েও দ্রুতগতিতে অর্থোপার্জন করা সম্ভব। আসলে ৩০ বছর বয়সে ধনী হওয়া যতটা সহজ, তার থেকে ঢের বেশি সহজ ৫০, ৬০ কিংবা ৭০ বছর বয়সে ধনী হওয়া। আমার মনে হয় না এ ব্যাপারে আমার মনে আর কোনো সন্দেহ রয়েছে।
“অপেক্ষাকৃত বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তিদের সাথে থাকে তাদের সারাজীবনের অভিজ্ঞতা, যা নবীনদের সাথে থাকে না। হয়তো নবীনের প্রযুক্তি সম্পর্কে অনেক বেশি ধারণা রাখে, কিন্তু তারপরও, আমরা জীবনকে অনেক বেশি দেখেছি, তাই জীবনের নানা উত্থান-পতন সম্পর্কেও আমরা বেশি ওয়াকিবহাল। অর্থনৈতিক স্বাধীনতা বা বিপুল ধন-সম্পদ গড়ে তোলার পথে পার হতে হয় অজস্র চড়াই-উতরাই, যেগুলো মোকাবেলায় বয়োজ্যোষ্ঠ ব্যক্তিরা কিছুটা হলেও সুবিধা ভোগ করে। তাই তাদের পক্ষে অপেক্ষাকৃত দ্রুত ধনবান হওয়া সহজ।”
এদিকে দ্য সিনিয়র লিস্ট প্রকাশ করেছে “Striking it Rich After 50” নামের একটি গবেষণা প্রবন্ধ, যেখানে যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক সেনসাস ব্যুরো থেকে প্রাপ্ত উপাত্তের সাহায্যে খতিয়ে দেখা হয়েছে যে দেশটির প্রত্যেক রাজ্যে শতকরা কত ভাগ বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তি কাজ করে থাকে।
গবেষণাটিতে বেশ কিছু চমকপ্রদ তথ্য উঠে এসেছে। প্রথমত, ১৯৯০ সালে যেখানে ৫৫+ বছর বয়সী মাত্র ৩০ শতাংশ ব্যক্তি যেকোনো কাজের সাথে যুক্ত ছিল ও উপার্জনশীল ছিল, বর্তমানে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪০ শতাংশে। দ্বিতীয়ত, অন্য যেকোনো বয়স শ্রেণীর চেয়ে ৫৫+ বছর বয়সীদের মধ্যে বেকারত্বের হার সবচেয়ে কম। এবং তৃতীয়ত, ৪৫-৫৪ বয়সসীমার মধ্যে অবস্থানকারীরাই পরিবারে অর্থনৈতিক অবদানের দিক থেকে অন্য যেকোনো বয়স শ্রেণীর চেয়ে এগিয়ে রয়েছে।
এর পাশাপাশি গবেষণা প্রবন্ধটিতে এমন ১০ জন ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্বের উপরও আলোকপাত করা হয়েছে, যারা জীবনের একদম শেষ সায়াহ্নে এসে, ৫০ বছর পেরোনোর পর বিপুল পরিমাণ ধন-সম্পদের মালিক হতে শুরু করেছেন।
চলুন আমরাও জেনে নিই ভীষণ রকম অনুপ্রেরণাদায়ী সেই ১০ জন ব্যক্তি সম্পর্কে।
হারল্যান্ড স্যান্ডার্স
প্রকৃত নাম হারল্যান্ড ডেভিড স্যান্ডার্স হলেও, কর্নেল স্যান্ডার্স নামেই আজ তিনি বিশ্ব দরবারে পরিচিত। যখন তিনি তার নিজের মালিকানাধীন কেনটাকি ফিলিং স্টেশনে ফ্রাইচ চিকেন বিক্রি করা শুরু করেছিলেন, তখন সম্ভবত তিনি নিজেও ঘুণাক্ষরে চিন্তা করতে পারেননি যে তার হাত ধরেই প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে বিশ্বের সবচেয়ে সফল ফাস্ট-ফুড চেইনটি। ১৯৬৪ সালে কর্নেল স্যান্ডার্স কেন্টাকি ফ্রাইড চিকেন বা কেএফসি’তে নিজের নিয়ন্ত্রাণাধীন ইন্টারেস্ট শেয়ার বিক্রি করে দেন, তখন তিনি গড়েন ৭৪ বছর বয়সে মিলিয়নিয়ার হওয়ার এক বিরলতম রেকর্ড।
চার্লস ডারউইন
বিবর্তনবাদ ধারণা প্রবর্তনের মাধ্যমে অমর হয়ে রয়েছেন ব্রিটিশ জীববিজ্ঞানী চার্লস ডারউইন। তিনি জন্মেছিলেনও বেশ সম্পদশালী এক পরিবারেই, কিন্তু তারপরও তার কাছে থাকা সব অর্থই ছিল উত্তরাধিকার সূত্রে লাভ করা। একজন স্বনির্মিত ধনাঢ্য ব্যক্তি হয়ে ওঠার জন্য তাকে অপেক্ষা করতে হয় ৫০ বছর বয়স পর্যন্ত। শেষমেষ তিনি বিপুল অর্থের অধিকারী হয়ে ওঠেন দারুণ আলোচিত-সমালোচিত “দ্য অরিজিন অভ স্পেসিস” বইটি প্রকাশের মাধ্যমে। মৃত্যুর সময়ে তিনি সর্বমোট যে ধন-সম্পদের মালিক ছিলেন, আজকের বিচারে তা প্রায় ২০.৫ মিলিয়ন ডলার মূল্যমানের।
তাইকিচিরো মোরি
তাইকিচিরো মোরি ছিলেন জাপানের ইয়োকোহামা সিটি ইউনিভার্সিটির একজন খুবই জনপ্রিয় অর্থনীতির অধ্যাপক। কিন্তু ৫৫ বছর বয়সে অধ্যাপনার পেশাকে বিদায় বলেন তিনি। বনে যান একজন রিয়েল এস্টেট ডেভেলপার। এবং নতুন এ পেশায়ও দারুণ সাফল্য লাভ করেন তিনি। ১৯৯৩ সালে ৮৮ বছর বয়সে তিনি যখন মৃত্যুবরণ করেন, তখন তার সম্পদের পরিমাণ অন্তত ৩ বিলিয়ন ডলার, যা তাকে পরিণত করেছিল ওই সময়ে পৃথিবীর সেরা ধনীতে।
রে ক্রক
রে ক্রক শুরুতে ছিলেন রেস্টুরেন্ট ইন্ডাস্ট্রির একজন ভ্রাম্যমাণ বিক্রেতা। ঘটনাক্রমে তার পরিচয় হয় ক্যালিফোর্নিয়ার একটি বার্গার রেস্টুরেন্টের দুই মালিক ভ্রাতৃদ্বর মরিস ও রিচার্ড ম্যাকডোনাল্ডের সাথে। তাদের বানানো খাবার ও সেগুলোর জনপ্রিয়তায় মুগ্ধ হন ক্রক। তিনি ম্যাকডোনাল্ড ভাইদের রাজি করান যেন তাকে দেশের অন্যান্য শহরেও রেস্টুরেন্টটির শাখা চালু করার অনুমতি দেয়া হয়। ১৯৫৫ সালে ৫২ বছর বয়সে ইলিনয়তে তিনি ম্যাকডোনাল্ড’স এর প্রথম শাখা চালু করেন। ১৯৬১ সালে যখন তিনি ম্যাকডোনাল্ড ভাইদের কাছ থেকে পুরো রেস্টুরেন্টটির মালিকানাই কিনে নেন, ততদিনে তিনি ইতিমধ্যেই আয় করে ফেলেছেন ৩৭ মিলিয়ন ডলার।
গ্র্যান্ডমা মোজেস
১৮৬০ সালে নিউ ইয়র্কে জন্মগ্রহণ করা অ্যানা মেরি রবার্টসন মাত্র ১৭ বছর বয়সে বিয়ে করেন থমাস মোজেসকে, এবং একে একে ১০ সন্তানের জননী হন তিনি। প্রাথমিকভাবে পরিবার ও বন্ধুবান্ধবদের জন্য শখের বশে নিডলওয়ার্ক পিকচার তৈরি করেই খুশি ছিলেন তিনি। কিন্তু বয়সের ভারে ন্যুব্জ হয়ে পড়ায় যখন তিনি আর সহজে হাত নাড়াচাড়া করতে পারছিলেন না, তখন নিরুপায় হয়ে চিত্রকর্মে মনোনিবেশ করেন। এরপর ১৯৩৮ সালে একদিন এক স্বনামধন্য শিল্প সংগ্রাহক এক দোকানে তার চিত্রকর্মগুলো ঝুলতে দেখেন। তিনি এতটাই মোহিত হন যে, সবগুলো চিত্রকর্মই কিনে নেন। ওই সংগ্রাহকই প্রথম “গ্র্যান্ডমা মোজেস” নামটি ব্যবহার করেছিলেন। এবং পরের বছর নিউ ইয়র্কের মিউজিয়াম অভ মডার্ন আর্টেও জায়গা হয় তার চিত্রকর্মের। এভাবে প্রায় ৮০ ছুঁইছুঁই বয়সে অর্থ ও যশ দুইয়ের সাথেই পরিচয় ঘটে গ্র্যান্ডমা মোজেসের।
ওয়ালি আমোস
উইলিয়াম মরিস এজেন্সিতে প্রথম আফ্রিকান-আমেরিকান ট্যালেন্ট হিসেবে ক্যারিয়ারের সূচনা করেছিলেন আমোস। কিন্তু জীবনের সবচেয়ে জনপ্রিয় উদ্ভাবনটি করেছিলেন অনেক পরে, ৩৯ বছর বয়সে, যখন তিনি লস অ্যাঞ্জেলেসে চালু করেন প্রথম আমোস কুকি স্টোর। আমোসের কুকিগুলো খুব অল্প সময়ের মধ্যেই দারুণ খ্যাতি পেয়ে যায়, এবং প্রথমবার ব্র্যান্ডটি বিক্রির মাধ্যমে ৪৯ বছর বয়সে তিনি বেশ ভালো অর্থ লাভ করেন। তবে তার ব্যাংক ব্যালান্স আরো ফুলেফেঁপে উঠতে শুরু করে মূলত ৫০ পেরোনোর পর তিনি যখন একের বই এক বই লিখতে শুরু করেন, দেশের নানা প্রান্তে গিয়ে বক্তৃতা দিতে থাকেন, এবং টিভির পর্দায়ও পরিচিত মুখ হয়ে ওঠেন।
পাবলো পিকাসো
পাবলো পিকাসো অভিহিত হন বিংশ শতকের সবচেয়ে বিখ্যাত শিল্পী হিসেবে। তার বাবা ছিলেন একজন ছবি আঁকার শিক্ষক। ফলে পিকাসোর নিজেরও ছবি আঁকার হাতেখড়ি হয় একদমই বাচ্চা বয়সে। এবং দুর্দান্ত প্রতিভার কারণে অল্প বয়স থেকেই তার চিত্রকর্মকে উঁচু নজরে দেখতে শুরু করেন শিল্প সমঝদাররা। কিন্তু প্রকৃত অর্থে যে বাণিজ্যিক সাফল্য, সেটি লাভ করতে পিকাসোকে অনেকটা সময় অপেক্ষা করতে হয়। পঞ্চাশোর্ধ বয়সে এসে তিনি স্বীকৃতির পাশাপাশি অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিও লাভ করতে থাকেন। ধারণা করা হয়, ১৯৭৩ সালে মারা যাওয়ার পূর্বে তিনি যে পরিমাণ সম্পদ রেখে গেছেন তার মূল্যমান কয়েক বিলিয়ন ডলার।
লরা ইঙ্গলস ওয়াল্ডার
হতে পারে লরা ইঙ্গলস ওয়াইল্ডারের “লিটল হাউজ অন দ্য প্রেইরি” সিরিজটি শিশুসাহিত্যের জগতে সবচেয়ে বিখ্যাত বইগুলোর কাতারে পড়ে। কিন্তু যখন তিনি বইগুলো লিখছিলেন, তখন তার অর্থনৈতিক অবস্থা একদমই স্বাচ্ছন্দ্যদায়ক ছিল না। এবং আত্মপ্রকাশের জন্যও তিনি অনেকটা সময় নিয়ে ফেলেছিলেন। তার প্রথম উপন্যাসটি যখন প্রকাশিত হয়, ততদিনে তার বয়স ৬৫ বছর। এরপরও তিনি ওই সিরিজের ১২টি বই লিখে যেতে পেরেছেন বটে, কিন্তু সেগুলোর মধ্যে কয়েকটি প্রকাশিত হয়েছে তার মৃত্যুর পর। ১৯৩২ সালে তার প্রথম বইটি প্রকাশিত হওয়ার পর থেকে এখন অবধি তার মোট বইয়ের মোট বিকোনো কপির সংখ্যা ৬০ মিলিয়নের বেশি।
হেনরি ফোর্ড
হেনরি ফোর্ড প্রথম জনপ্রিয় নামে পরিণত হন সেই ১৯০৩ সালেই, ফোর্ড মোটর কোম্পানি প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে। এরপর একে একে তিনি বিশ্ববাসীকে উপর দেন ইতিহাসের একদম প্রথম দিককার দুর্দান্ত কিছু মোটর যান। কিন্তু মোটর জগতে তার সবচেয়ে বড় অবদানটির আগমন ঘটে আরো এক দশক পর, ৫০ বছর বয়সে। তখন তিনি গাড়ি উৎপাদনের জন্য উদ্ভাবন ঘটান প্রথম ম্যাস প্রোডাকশন মুভিং অ্যাসেম্বলি লাইনের। এর মাধ্যমে তার জনপ্রিয়তা ও উপার্জন দুই-ই বেড়ে যায় কয়েকগুণ। ১৯৪৭ সালে মৃত্যুর সময় তার মোট সম্পদের পরিমাণ ছিল ১.৮ বিলিয়ন ডলার মূল্যমানের।
জুডিথ শেইন্ডলিন
জাজ জুডি নামেই এখন বিশ্ববাসী চেনে জুডিথ শেইন্ডলিনকে। যখন তিনি আমেরিকান ইউনিভার্সিটির স্কুল অভ ল’ থেকে গ্র্যাজুয়েশন করেন, সেখানে তিনিই ছিলেন তার শ্রেণীর একমাত্র নারী শিক্ষার্থী। সংক্ষিপ্ত সময় করপোরেট আইনজীবী হিসেবে কাজ করার পর দুই সন্তানের জন্ম দিতে তিনি বেশ খানিকটা বিরতি নেন। এরপর আবার তিনি নিউ ইয়র্ক ফ্যামিলি কোর্ট সিস্টেমে চাকরি নেন। সেখানে কাজ করতে গিয়ে তিনি একজন শক্ত অথচ স্বচ্ছ মননের বিচারত হিসেবে সুনাম লাভ করেন। তবে প্রকৃত অর্থে দেশ ও বিদেশের মানুষ তাকে চিনতে শুরু করে ১৯৯৬ সালে তার টিভি শো’র মাধ্যমে, যা তার ব্যাংক ব্যালান্সকেও এক লাফে দারুণ হৃষ্টপুষ্ট করে তোলে। ততদিনে তার বয়স হয়ে গিয়েছে ৫৪ বছর।
শেষ কথা
দেখতেই পাচ্ছেন, জীবনে সাফল্য লাভ, স্বীকৃতি অর্জন ও প্রচুর ধন-সম্পদের মালিক হওয়ার জন্য নির্দিষ্ট কোনো বয়স নেই। এবং ৫০ বছরও এমন আহামরি কোনো বয়স নয় যেখানে পৌঁছে একজন মানুষের সকল সম্ভাবনার মৃত্যু ঘটবে। বরং যদি কারো মনে সত্যিকারের সদিচ্ছা থাকে, তাহলে সে ৫০ বছরের এই জাদুকরি বয়স থেকেই জীবনে সাফল্যের পর্বতে আরোহণ করা শুরু করতে পারে। এভাবে ৫০ বছরের পরও একদম শূন্য থেকে শুরু করা যেমন সম্ভব, তেমনই ইতিমধ্যেই সফল ও ধনবান ব্যক্তিরাও চাইলে নিজেকে এক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যেতে পারে। জেনে অবাক হবেন, ওয়ারেন বাফেটের মতো শীর্ষ ধনীও কিন্তু এখন যে পরিমাণ সম্পদের মালিক, ৫০তম জন্মদিনে তার কাছে ছিল এর মাত্র ১ শতাংশ। অর্থাৎ বাকি ৯৯ শতাংশ তিনি পেয়েছেন ৫০ বছরের পরে গিয়ে। তিনি যদি পঞ্চাশোর্ধ বয়সে গিয়ে জীবনকে এভাবে ঢেলে সাজাতে পারেন, তাহলে আপনি পারবেন না কেন?
একই ক্যাটাগরির আরও কিছু বই পড়তে ক্লিক করুন নিচের লিঙ্কগুলোতে
বিশ্বের চমৎকার সব বিষয়ে রোর বাংলায় লিখতে আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন এই লিঙ্কেঃ roar.media/contribute/