রুশ প্রতিরক্ষামন্ত্রী আর্মি জেনারেল সের্গেই শোইগু এবং ইউক্রেনের বিরুদ্ধে চলমান রুশ ‘বিশেষ সামরিক অভিযানে’র অধিনায়ক আর্মি জেনারেল সের্গেই সুরোভিকিন জানিয়েছেন যে, রাশিয়া দনেপর নদীর পশ্চিম তীর থেকে সমস্ত সৈন্য প্রত্যাহার করে নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর অর্থ হচ্ছে, খেরসন প্রদেশের রাজধানী খেরসন শহর থেকে রুশ সৈন্যদের প্রত্যাহার করে নেয়া হবে। রুশ সরকারের ভাষ্যমতে, দনেপর নদীর পশ্চিম তীরে অবস্থানরত সৈন্যদের রসদপত্র সরবরাহ অব্যাহত রাখা অসম্ভব, এজন্য উক্ত অঞ্চল থেকে রুশ সৈন্যদের প্রত্যাহার করে নেয়া হচ্ছে।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি রুশ–ইউক্রেনীয় যুদ্ধ শুরুর পর রাশিয়া ইউক্রেনের প্রাদেশিক রাজধানীগুলোর মধ্যে কেবল একটি প্রাদেশিক রাজধানী নিয়ন্ত্রণে নিতে সক্ষম হয়েছিল এবং সেটি হচ্ছে খেরসন। গত সেপ্টেম্বরে রাশিয়া খেরসন প্রদেশের রুশ–নিয়ন্ত্রিত অংশে একটি গণভোটের আয়োজন করেছিল এবং রুশ সরকারের ভাষ্যমতে, উক্ত গণভোটে খেরসনের সিংহভাগ অধিবাসী খেরসন প্রদেশকে রাশিয়ার সঙ্গে যুক্ত করার পক্ষে ভোট দিয়েছিল। এরপর খেরসন প্রদেশকে আনুষ্ঠানিকভাবে রাশিয়ার অংশ হিসেবে ঘোষণা করা হয়। অর্থাৎ, রুশ সরকার কার্যত রুশ ভূখণ্ড ইউক্রেনীয়দের হাতে ছেড়ে দিচ্ছে।
সুতরাং, খেরসন থেকে রুশ সৈন্য প্রত্যাহারকে স্বাভাবিকভাবেই রাশিয়ার জন্য একটি বড় মাত্রার রাজনৈতিক ও মনস্তাত্ত্বিক পরাজয় হিসেবে বিবেচনা করা হবে। বিগত এপ্রিলে কিয়েভ, চের্নিগভ ও সুমি প্রদেশ থেকে এবং বিগত সেপ্টেম্বরে খারকভ প্রদেশ থেকে রুশ সৈন্য প্রত্যাহারের পর এটি হবে একটি বৃহৎ শক্তি হিসেবে রাশিয়ার ভাবমূর্তির জন্য আরেকটি বিপর্যয়।
রুশ সরকার তাদের এই পদক্ষেপকে ন্যায়সঙ্গত হিসেবে প্রমাণ করার উদ্দেশ্যে সামরিক বাস্তবতার বিষয়টিকে তুলে ধরেছে। কিন্তু এই মুহূর্তে রুশ–সমর্থকরা রুশ সরকারের ওপর মারাত্মকভাবে ক্ষিপ্ত। রুশ সরকারের এই সিদ্ধান্তকে তারা ‘বিশ্বাসঘাতকতা’ হিসেবে আখ্যায়িত করছে এবং রুশ সরকারকে ‘ভীরুতা’ ও ‘অকর্মণ্যতা’র দায়ে অভিযুক্ত করছে। এটি স্পষ্ট যে, রুশ সরকার তাদের রণনীতির বিষয়ে রুশ জনসাধারণের ‘দেশপ্রেমিক’ অংশের আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হয়নি।
খেরসন থেকে রুশ সৈন্য প্রত্যাহারের ঘোষণা প্রদানের আগে রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে যে, তারা ইউক্রেনের সঙ্গে আলোচনায় বসতে প্রস্তুত। উল্লেখ্য, সম্প্রতি পশ্চিমা প্রচারমাধ্যম জানিয়েছে যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনায় বসার জন্য পর্দার অন্তরালে ইউক্রেনের ওপর চাপ প্রয়োগ করছে। এজন্য কেউ কেউ ধারণা করছেন যে, ইউক্রেনের সঙ্গে শান্তি আলোচনার পূর্বপ্রস্তুতির অংশ হিসেবে রুশ সরকার এই সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকতে পারে। আবার কারও কারও মতে, বিশুদ্ধ সামরিক প্রয়োজনীয়তার পরিপ্রেক্ষিতেই রুশ সরকার এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কেউ কেউ এমনও ধরে নিচ্ছেন যে, এটি রুশদের রণকৌশলের একটি অংশ। অবশ্য রুশ সরকারের এই সিদ্ধান্তের প্রকৃত কারণ কী, সেটি এখনও ধোঁয়াশাচ্ছন্ন।