Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

তুর্কি–পাকিস্তানি–আজারবাইজানি কৌশলগত ত্রিভুজ: নতুন সামরিক জোট না অনানুষ্ঠানিক আঁতাত?

২০২১ সালের ১৩ জানুয়ারি পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদে পাকিস্তানি পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মেহমুদ কুরেশি, তুর্কি পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেভলুত চাভুসোলু এবং আজারবাইজানি পররাষ্ট্রমন্ত্রী জেয়হুন বায়রামভ দ্বিতীয় পাকিস্তানি–তুর্কি–আজারবাইজানি ত্রিপক্ষীয় সংলাপে অংশগ্রহণ করেছেন, এবং ‘ইসলামাবাদ ঘোষণা’য় স্বাক্ষর করেছেন। মুসলিম বিশ্বের প্রথম পারমাণবিক শক্তিধর রাষ্ট্র পাকিস্তান, ন্যাটো জোটের দ্বিতীয় বৃহত্তম সামরিক শক্তি তুরস্ক এবং সাম্প্রতিক নাগর্নো–কারাবাখ যুদ্ধে বিজয়ী আজারবাইজান। মুসলিম অধ্যুষিত এই রাষ্ট্র তিনটির মধ্যেকার এই সংলাপ এবং সাম্প্রতিক সময়ে রাষ্ট্র তিনটির ঘনিষ্ঠতার পরিপ্রেক্ষিতে বহু আন্তর্জাতিক রাজনীতি বিশ্লেষক ধারণা করছেন যে, রাষ্ট্র তিনটির সমন্বয়ে ইউরেশিয়া অঞ্চলে একটি নতুন ‘কৌশলগত ত্রিভুজ’ (strategic triangle) সৃষ্টি হতে যাচ্ছে। এর মধ্য দিয়ে কি মুসলিম বিশ্বে একটি নতুন সামরিক জোট সৃষ্টি হতে যাচ্ছে?

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, পাকিস্তান, তুরস্ক ও আজারবাইজানের মধ্যেকার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক নতুন কিছু নয়। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে স্বাধীন আজারবাইজানি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে ওসমানীয় সাম্রাজ্য কর্তৃক প্রদত্ত সামরিক সহায়তা অতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর বিজয়ী মিত্রশক্তি তুরস্ককে নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নেয়ার প্রক্রিয়া আরম্ভ করলে তুর্কি স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হয়, এবং বলশেভিক–নিয়ন্ত্রিত আজারবাইজান তুর্কি জাতীয়তাবাদীদের ব্যাপক সহায়তা প্রদান করে। অনুরূপভাবে, বহুসংখ্যক দক্ষিণ এশীয় মুসলিম এই যুদ্ধের সময় স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে তুর্কি জাতীয়তাবাদীদের পক্ষে যুদ্ধ করে। পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠাতা মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ ছিলেন আধুনিক তুরস্কের প্রতিষ্ঠাতা কামাল আতাতুর্কের একজন অনুরাগী। স্নায়ুযুদ্ধ চলাকালে পাকিস্তান ও তুরস্ক উভয়েই মার্কিন–নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা ব্লকের সঙ্গে মিত্রতা স্থাপন করে, এবং উভয়েই কমিউনিজম–বিরোধী সামরিক জোট ‘কেন্দ্রীয় চুক্তি সংস্থা’র (Central Treaty Organization, ‘CENTO’) সদস্য ছিল।

১৯৯১ সালে আজারবাইজান সোভিয়েত ইউনিয়নের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভের পরপরই তুরস্ক ও পাকিস্তান আজারবাইজানকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করে। প্রথম নাগর্নো–কারাবাখ যুদ্ধ (১৯৮৮–১৯৯৪) চলাকালে তুরস্ক ও পাকিস্তান উভয়েই আজারবাইজানকে সমর্থন করে। ১৯৯৫ সালের আজারবাইজানি সামরিক অভ্যুত্থানপ্রচেষ্টায় তুর্কি সংশ্লিষ্টতা, আজারবাইজান কর্তৃক গোপনে তুরস্কের কুর্দি বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সমর্থন প্রদান ও তুর্কি–আর্মেনীয় সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের প্রচেষ্টা প্রভৃতি কারণে তুরস্ক ও আজারবাইজানের মধ্যে কিছুটা দ্বান্দ্বিক সম্পর্ক ছিল, কিন্তু পরবর্তীতে আজারবাইজান তুরস্কের সঙ্গে অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তোলে। অন্যদিকে, আজারবাইজানের প্রতি সমর্থনের নিদর্শন হিসেবে পাকিস্তান আর্মেনিয়াকে স্বীকৃতি প্রদান থেকে বিরত থাকে। বস্তুত পাকিস্তানই বিশ্বের একমাত্র রাষ্ট্র, যেটি আর্মেনিয়াকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকার করে না। এর ফলে পাকিস্তান ও আজারবাইজানের মধ্যেও সুসম্পর্ক বিদ্যমান।

একটি তুর্কি–আজারবাইজানি যৌথ সামরিক মহড়ার চিত্র। তুরস্ক ও আজারবাইজান পরস্পরের ‘কৌশলগত অংশীদার’; Source: EADaily

একবিংশ শতাব্দীতে পাকিস্তান, তুরস্ক ও আজারবাইজানের মধ্যে ক্রমশ ঘনিষ্ঠ সামরিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে। ২০০৩ সালে পাকিস্তান ও তুরস্কের মধ্যে একটি উচ্চ পর্যায়ের সামরিক সংলাপ মেকানিজম স্থাপিত হয়, এবং একই বছরে পাকিস্তান ও আজারবাইজানের মধ্যে একটি প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। পরবর্তীতে ২০১০ সালে তুরস্ক ও আজারবাইজানের মধ্যে ‘কৌশলগত অংশীদারিত্ব’ (strategic partnership) স্থাপন সংক্রান্ত চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এর মধ্য দিয়ে ২০০০–এর দশকে পাকিস্তান, তুরস্ক ও আজারবাইজানের মধ্যে ত্রিপক্ষীয় সামরিক সহযোগিতার ক্ষেত্র প্রস্তুত হয়।

২০১০–এর দশকে পাকিস্তান ও তুরস্কের মধ্যে সামরিক সহযোগিতা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পায়। উদাহরণস্বরূপ, পাকিস্তানি বিমানবাহিনীর মার্কিন–নির্মিত ‘এফ–১৬’ জঙ্গিবিমানগুলোর আধুনিকায়ন করতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অস্বীকৃতি জানালে তুরস্ক এই প্রকল্প হাতে নেয়, এবং পাকিস্তানি বিমানবাহিনীর ৪১টি ‘এফ–১৬’ জঙ্গিবিমানের আধুনিকায়ন সম্পন্ন করে। পাকিস্তান তুরস্কের কাছ থেকে ১৫০ কোটি (বা ১.৫ বিলিয়ন) মার্কিন ডলার মূল্যে ৩০টি ‘টিএআই টি১২৯ আতাক’ হেলিকপ্টার ক্রয় করেছে, এবং বর্তমানে তুরস্ক পাকিস্তানি নৌবাহিনীর জন্য ৪টি ‘আদা’–শ্রেণিভুক্ত কর্ভেট নির্মাণ করছে। অন্যদিকে, তুরস্ক পাকিস্তানের কাছ থেকে ৫২টি ‘এমএফআই–১৭ সুপার মুশশাক’ প্রশিক্ষণ বিমান ক্রয় করেছে। বর্তমানে তুরস্ক পাকিস্তানের দ্বিতীয় বৃহত্তম অস্ত্র সরবরাহকারী হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে, এবং পাকিস্তান ও তুরস্ক পরস্পরের ‘কৌশলগত অংশীদার’। উভয় দেশের সশস্ত্রবাহিনী নিয়মিত দ্বিপাক্ষিক ও বহুপাক্ষিক সামরিক মহড়ায় অংশগ্রহণ করে থাকে।

অনুরূপভাবে, তুরস্ক ও আজারবাইজানের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সামরিক সম্পর্ক বিদ্যমান। উদাহরণস্বরূপ, ২০২০ সালে আজারবাইজান তুরস্কের কাছ থেকে বহুসংখ্যক ‘বায়রাকতার টিবি২’ অ্যাটাক ড্রোন ক্রয় করেছে, যেগুলো দ্বিতীয় নাগর্নো–কারাবাখ যুদ্ধে আজারবাইজানি সামরিক সাফল্য অর্জনের ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পালন করেছে। প্রথম ও দ্বিতীয় নাগর্নো–কারাবাখ যুদ্ধে তুর্কি সৈন্য, সামরিক উপদেষ্টা ও স্বেচ্ছাসেবকরা আজারবাইজানের পক্ষে যুদ্ধ করেছে। বর্তমানে তুরস্ক আজারবাইজানের দ্বিতীয় বৃহত্তম অস্ত্র সরবরাহকারী হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। রাষ্ট্র দুইটি নিয়মিতভাবে বিভিন্ন যৌথ সামরিক মহড়ায় অংশগ্রহণ করে থাকে, এবং ধারণা করা হয়, আজারবাইজানে তুরস্কের সামরিক উপস্থিতি রয়েছে। শুধু তাই নয়, দ্বিতীয় নাগর্নো–কারাবাখ যুদ্ধের পর তুরস্ক আজারবাইজানে একাধিক সেনা ও বিমানঘাঁটি স্থাপন করতে যাচ্ছে, গণমাধ্যমে এমন খবরও প্রচারিত হয়েছে।

পাকিস্তানি–আজারবাইজানি সুসম্পর্কের নিদর্শন হিসেবে আজারবাইজান পাকিস্তানি–নির্মিত ২৪টি ‘জেএফ–১৭’ জঙ্গিবিমান ক্রয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছে; Source: Military Watch Magazine

পাকিস্তান ও আজারবাইজানের মধ্যে সামরিক সম্পর্ক তুলনামূলকভাবে সীমিত, কিন্তু এই সম্পর্ক ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ, আজারবাইজানি বিমানবাহিনী ২৪টি পাকিস্তানি–নির্মিত ‘পিএসি জেএফ–১৭ থান্ডার’ জঙ্গিবিমান ক্রয় করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, তেলসমৃদ্ধ আজারবাইজানের পক্ষে ‘জেএফ–১৭’ এর তুলনায় উন্নততর (ও অধিক ব্যয়বহুল) জঙ্গিবিমান ক্রয় করা সম্ভব, কিন্তু পাকিস্তানি জঙ্গিবিমান ক্রয়ের সিদ্ধান্ত গ্রহণের মাধ্যমে আজারবাইজান নাগর্নো–কারাবাখ ইস্যুতে পাকিস্তানি সহায়তার প্রতিদান দিচ্ছে বলে বিশ্লেষকরা মনে করেন। এর পাশাপাশি আজারবাইজান পাকিস্তান কর্তৃক আয়োজিত বিভিন্ন সামরিক মহড়ায় (যেমন: ২০১৩ সালে আয়োজিত ‘আমান–২০১৩’ বহুপাক্ষিক নৌ মহড়া) অংশগ্রহণ করে। তদুপরি, সাম্প্রতিক নাগর্নো–কারাবাখ যুদ্ধে পাকিস্তানি মিলিট্যান্টরা আজারবাইজানের পক্ষে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছে, আর্মেনিয়া এই মর্মে অভিযোগ উত্থাপন করেছে।

অর্থাৎ, পাকিস্তান, তুরস্ক ও আজারবাইজান একে অপরের সঙ্গে সামরিক সহযোগিতায় লিপ্ত, এবং তাদের মধ্যেকার রাজনৈতিক সম্পর্ককে জোরদার করার উদ্দেশ্যে ২০১৭ সালের নভেম্বরে রাষ্ট্র তিনটির পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের মধ্যে প্রথম বারের মতো একটি ত্রিপক্ষীয় সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়। ২০২১ সালের ১৩ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত ত্রিপক্ষীয় সংলাপটি এই প্রক্রিয়ারই যৌক্তিক পরিবর্ধন। এবং এই সংলাপ চলাকালে রাষ্ট্র তিনটির পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা যে বক্তব্য প্রদান করেছেন, সেটির তাৎপর্য সুদূরপ্রসারী।

প্রথমত, এই সংলাপ চলাকালে তুরস্ক ও আজারবাইজান কাশ্মির সঙ্কট সম্পর্কে পাকিস্তানি দৃষ্টিভঙ্গির প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করেছে এবং ভারতীয়–নিয়ন্ত্রিত জম্মু ও কাশ্মির ইউনিয়ন অঞ্চলে ভারতীয় সরকার কর্তৃক মানবাধিকার লঙ্ঘনের নিন্দা জানিয়েছে। এটি পাকিস্তানি সরকারের জন্য একটি কূটনৈতিক সাফল্য, কারণ খুব কম সংখ্যক রাষ্ট্রই ২০১৯ সালে ভারতীয় কেন্দ্রীয় সরকার কর্তৃক ভারতীয়–নিয়ন্ত্রিত জম্মু ও কাশ্মির রাজ্যের সীমিত স্বায়ত্তশাসন বাতিলের বিরুদ্ধে তাদের মতামত ব্যক্ত করেছে। অনুরূপভাবে, তুরস্ক ও পাকিস্তান নাগর্নো–কারাবাখ ইস্যুতে আজারবাইজানের প্রতি পূর্ণ সমর্থন ব্যক্ত করেছে, এবং সাম্প্রতিক যুদ্ধে আজারবাইজান কর্তৃক অধিকৃত অঞ্চলের পুনর্গঠনে অংশগ্রহণের জন্য আজারবাইজান তুর্কি ও পাকিস্তানি কোম্পানিগুলোকে আহ্বান জানিয়েছে।

‘জম্মু কাশ্মির মুক্তি ফ্রন্টে’র সদস্যরা ভারতীয় কেন্দ্রীয় সরকার কর্তৃক জম্মু ও কাশ্মির রাজ্যের স্বায়ত্তশাসন বিলুপ্তির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাচ্ছে; Source: Daily Pioneer

একইভাবে পাকিস্তান ও আজারবাইজান পূর্ব ভূমধ্যসাগর বিরোধ ও সাইপ্রাস সমস্যা সম্পর্কে তুর্কি দৃষ্টিভঙ্গির প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করেছে। এটি তুরস্কের জন্য একটি কূটনৈতিক অর্জন, কারণ খুব কম সংখ্যক রাষ্ট্রই এই বিষয়গুলোতে তুর্কি অবস্থানের প্রতি সমর্থন জানিয়েছে। এসবের পাশাপাশি পাকিস্তান, তুরস্ক ও আজারবাইজান আফগানিস্তানে চলমান শান্তি প্রক্রিয়ার প্রতি তাদের সমর্থন ব্যক্ত করেছে, এবং এসবের মধ্য দিয়ে বিভিন্ন আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক ইস্যুতে রাষ্ট্র তিনটির সামঞ্জস্যপূর্ণ অবস্থান ফুটে উঠেছে।

দ্বিতীয়ত, সংলাপ চলাকালে পাকিস্তান, তুরস্ক ও আজারবাইজানের প্রতিনিধিবৃন্দ বর্তমান বিশ্বে ক্রমবর্ধমান ইসলামভীতির (Islamophobia) প্রতি নিন্দা জানিয়েছেন, এবং এর মোকাবেলা করার জন্য একযোগে কাজ করার অঙ্গীকার করেছেন। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, তিনটি রাষ্ট্রের ক্ষেত্রেই তাদের ধর্মীয় পরিচিতির কারণে বিভিন্ন আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক ইস্যুতে তাদের স্বার্থ ব্যাহত হয়েছে। পাকিস্তান বিশ্বে ‘ধর্মীয় সন্ত্রাসবাদে’র একটি অন্যতম কেন্দ্রভূমি হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে, এবং এর ফলে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে পাকিস্তানের মর্যাদা যথেষ্ট ক্ষুণ্ণ হওয়ার পাশাপাশি কাশ্মির ইস্যুতেও তারা বহির্বিশ্বের কাছ থেকে উল্লেখযোগ্য সমর্থন লাভের ক্ষেত্রে ব্যর্থ হয়েছে। তুরস্ক দীর্ঘদিন যাবৎ ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য হওয়ার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে, কিন্তু খ্রিস্টান–অধ্যুষিত ইউরোপীয় ইউনিয়ন মুসলিম–অধ্যুষিত তুরস্ককে অন্তর্ভুক্ত করার ক্ষেত্রে নানারকম টালবাহান করে চলেছে।

অনুরূপভাবে, নাগর্নো–কারাবাখ দ্বন্দ্বের ক্ষেত্রে আজারবাইজানের ধর্মীয় পরিচিতি তাদের পশ্চিমা বিশ্বের সমর্থন না পাওয়ার একটি অন্যতম কারণ। এই পরিস্থিতিতে বর্তমানে পশ্চিমা বিশ্বে ও অমুসলিম রাষ্ট্রগুলোতে ক্রমবর্ধমান ইসলামভীতি এই তিনটি রাষ্ট্রের স্বার্থের জন্য প্রতিকূল, এবং স্বাভাবিকভাবেই রাষ্ট্রগুলো এই সমস্যার সমাধান করতে ইচ্ছুক।

২০২১ সালের জানুয়ারিতে পাকিস্তানি ও আজারবাইজানি বিমানবাহিনীর কর্মকর্তাদের মধ্যে অনুষ্ঠিত একটি বৈঠক; Source: Trend.az

তৃতীয়ত, এই সংলাপে রাষ্ট্রত্রয় নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়ে পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধি করতে সম্মত হয়েছে। এই বিষয়গুলোর মধ্যে রয়েছে সন্ত্রাসবাদ, সংগঠিত অপরাধ, মাদকদ্রব্য চোরাচালান, মানব পাচার, মাই লন্ডারিং, সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিক নিদর্শনের ধ্বংসসাধন এবং সাইবার ক্রাইম। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, নাগর্নো–কারাবাখ ও সংশ্লিষ্ট অঞ্চলে অবস্থিত আজারবাইজানি সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিক নিদর্শনগুলো ধ্বংসের দায়ে আজারবাইজান আর্মেনিয়াকে অভিযুক্ত করেছে, এবং এজন্য আর্মেনিয়ার কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ দাবি করেছে। এই সংলাপে সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিক নিদর্শন ধ্বংসের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করার মধ্য দিয়ে আজারবাইজান এই ব্যাপারে পাকিস্তান ও তুরস্কের সমর্থন লাভের প্রচেষ্টা চালিয়েছে।

সর্বোপরি, সংলাপের আগে ও পরে যে ঘটনাগুলো ঘটেছে, তার মধ্য দিয়ে পাকিস্তান, তুরস্ক ও আজারবাইজানের মধ্যে একটি ত্রিপক্ষীয় আঁতাত গড়ে ওঠার সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ, সংলাপের আগে পাকিস্তানের ইসলামাবাদে পাকিস্তানি ও আজারবাইজানি বিমানবাহিনীর প্রধানদ্বয় বৈঠক করেছেন, এবং যৌথভাবে উভয় পক্ষের বৈমানিকদের প্রশিক্ষণ ও সামরিক মহড়ার আয়োজনের ব্যাপারে একমত হয়েছেন। সংলাপের পর তুরস্কের আঙ্কারায় তুর্কি প্রতিরক্ষামন্ত্রী হুলুসি আকার, আজারবাইজানি প্রতিরক্ষামন্ত্রী জাকির হাসানভ এবং পাকিস্তানি বিমানবাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল মুজাহিদ আনোয়ার খান বৈঠক করেছেন, এবং মন্তব্য করেছেন যে, তারা ‘এক হৃদয়ে’ এবং ‘এক মুষ্টি’তে (with ‘one heart’ and ‘one fist’) কাজ করবেন। সর্বশেষ, ২০২১ সালের ১–১২ ফেব্রুয়ারি তুরস্কের কার্স প্রদেশে তুর্কি–আজারবাইজানি যৌথ সামরিক মহড়া অনুষ্ঠিত হবে, এবং এই উদ্দেশ্যে আজারবাইজানি সৈন্যরা ইতোমধ্যে তুরস্কে পৌঁছেছে।

সামগ্রিকভাবে, এই ত্রিপক্ষীয় সংলাপ ও অন্যান্য ঘটনাগুলো পাকিস্তান, তুরস্ক ও আজারবাইজানের মধ্যে একটি অনানুষ্ঠানিক ‘ত্রিপাক্ষিক আঁতাত’ গঠনের ইঙ্গিত দিচ্ছে। যদি এই প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকে, তাহলে এই তিনটি রাষ্ট্রের সমন্বয়ে ইউরেশিয়া অঞ্চলে নতুন একটি ‘কৌশলগত ত্রিভুজ’ (strategic triangle) সৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। এবং অনুরূপ কৌশলগত জোট সৃষ্টি হলে সেক্ষেত্রে জোটটি এই তিনটি রাষ্ট্রের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে না। ইতোমধ্যে তুরস্ক মধ্য এশিয়ার বৃহত্তর তুর্কি জাতিভুক্ত রাষ্ট্রগুলোর ওপর প্রভাব বিস্তারের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে এবং এক্ষেত্রে বেশ কিছুদূর অগ্রসর হয়েছে। তুর্কমেনিস্তান আজারবাইজানের সঙ্গে কাস্পিয়ান সাগরের মধ্য দিয়ে গ্যাস পাইপলাইন নির্মাণে সম্মত হয়েছে, উজবেকিস্তানের মাটিতে তুর্কি–পাকিস্তানি–উজবেকিস্তানি যৌথ মহড়া অনুষ্ঠিত হচ্ছে, এবং আফগানিস্তানে পাকিস্তানি–সমর্থিত তালিবানের প্রভাব ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে তুরস্ক থেকে পাকিস্তান পর্যন্ত একটি ‘সমভাবাপন্ন’ জোট গঠন অস্বাভাবিক নন। কিছু কিছু উৎসাহী পর্যবেক্ষক এমনকি মুসলিম বিশ্বে নতুন একটি সামরিক জোট গঠনের সম্ভাবনাও দেখতে পাচ্ছেন।

আজারবাইজান, তুরস্ক ও পাকিস্তান সকলেই মুসলিম–অধ্যুষিত রাষ্ট্র, এবং তাদের প্রত্যেকের জাতীয় পতাকাতেই ‘অর্ধচন্দ্র ও তারকা’ রয়েছে; Source: EurAsian Times

কিন্তু আন্তর্জাতিক রাজনীতি কখনোই সরলরৈখিক পথে চলে না, এবং সেজন্য ইউরেশিয়ায় এরকম কোনো মুসলিম কৌশলগত জোট গঠন সম্ভব কিনা সেই সম্পর্কে নানাবিধ নেতিবাচক মতামত রয়েছে।

প্রথমত, বর্তমান বিশ্বে রাষ্ট্রসমূহের পারস্পরিক সম্পর্ক ক্রমশ জটিল থেকে জটিলতর রূপ ধারণ করছে। এই পরিস্থিতিতে আনুষ্ঠানিক সামরিক জোটের ধারণা পুরোপুরিভাবে পরিত্যক্ত না হলেও এর গ্রহণযোগ্যতা অনেকটাই হ্রাস পাচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ, তুরস্ক ন্যাটো জোটের সদস্য, কিন্তু ন্যাটো সদস্য গ্রিসের সঙ্গে তীব্র দ্বান্দ্বিক সম্পর্কে জড়িত। পাকিস্তান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অতি গুরুত্বপূর্ণ মিত্র, কিন্তু একই সঙ্গে চীন পাকিস্তানের প্রধান সামরিক ও অর্থনৈতিক সহযোগীতে পরিণত হয়েছে। আজারবাইজান তুরস্কের ‘কৌশলগত অংশীদার’, কিন্তু তাদের সামরিক সরঞ্জামের মূল উৎস হচ্ছে রাশিয়া, যারা একই সঙ্গে আজারবাইজানের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী আর্মেনিয়ার জন্যও অস্ত্রশস্ত্রের মূল উৎস। অর্থাৎ, আন্তর্জাতিক রাজনীতিকে এখন ‘মৈত্রী’ আর ‘শত্রুতা’ এই দুইটি সরল শ্রেণিতে বিভাজিত করা ক্রমশ কঠিন হয়ে যাচ্ছে।

এই পরিস্থিতিতে ইসলামাবাদ, আঙ্কারা বা বাকু আদৌ আনুষ্ঠানিক কোনো সামরিক জোট গঠনের পথে হাঁটবে কিনা, সেটি নিয়ে সন্দেহের যথেষ্ট অবকাশ রয়েছে।

২০২০ সালের নাগর্নো–কারাবাখ যুদ্ধের সময় একদল আজারবাইজানি সৈন্য। এই যুদ্ধে তুরস্ক ও পাকিস্তান উভয়েই আজারবাইজানকে সমর্থন করেছে; Source: The Defense Post

দ্বিতীয়ত, পাকিস্তান, তুরস্ক ও আজারবাইজান সকলেই নিজেদের সিংহভাগ প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সঙ্গে দ্বান্দ্বিক সম্পর্কে লিপ্ত। পাকিস্তানের সঙ্গে ভারত ও আফগানিস্তানের তীব্র বিরোধ রয়েছে, এবং পাকিস্তানের অভ্যন্তরে শিয়াদের ওপর নিষ্পেষণ ও বালুচিস্তান সমস্যার কারণে ইরানের সঙ্গেও পাকিস্তানের সম্পর্ক পুরোপুরি সুখকর নয়। তুরস্ক গ্রিস ও সিরিয়ার সঙ্গে তীব্র দ্বন্দ্বে লিপ্ত, ইরান ও ইরাকের সঙ্গে নানান কারণে বিরোধে জড়িত এবং আর্মেনিয়ার প্রতি খোলাখুলিভাবে শত্রুভাবাপন্ন। আজারবাইজানের সঙ্গে আর্মেনিয়ার অঘোষিত যুদ্ধাবস্থা চলছে, জর্জিয়ার সঙ্গে তাদের সীমান্ত বিরোধ রয়েছে, রাশিয়াকে তারা তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী আর্মেনিয়ার ‘মূল সঞ্চালক’ হিসেবে বিবেচনা করে, এবং ইরানের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক প্রচ্ছন্নভাবে দ্বান্দ্বিক।

এই পরিস্থিতিতে কোনো আনুষ্ঠানিক সামরিক জোট গঠন এবং এর মধ্য দিয়ে একে অপরের দ্বান্দ্বিক সম্পর্কগুলোতে জড়িয়ে পড়া এই তিনটি রাষ্ট্রের কোনোটির জন্যই যৌক্তিক নয়। পাকিস্তানের পক্ষে যেমন ঘরের কাছের কাশ্মির বা আফগান সমস্যা ছেড়ে নাগর্নো–কারাবাখ বা পূর্ব ভূমধ্যসাগরে সামরিক হস্তক্ষেপের সুযোগ নেই, তেমনি তুরস্কের পক্ষেও ঘরের কাছের সিরিয়া বা সাইপ্রাস সমস্যা ছেড়ে কাশ্মিরে সরাসরি হস্তক্ষেপের কোনো সুযোগ নেই। অনুরূপভাবে, পাকিস্তান বা তুরস্কের নিজস্ব সমস্যায় সরাসরি জড়িয়ে পড়ার কোনো আগ্রহ আজারবাইজানের নেই।

তৃতীয়ত, আজারবাইজানি রাষ্ট্রবিজ্ঞানী তোফিগ আব্বাসভের মতে, পাকিস্তান, তুরস্ক ও আজারবাইজানের মধ্যবর্তী অনানুষ্ঠানিক জোটের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে ‘সন্ত্রাসবাদ’ দমনের ক্ষেত্রে পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধি। এক্ষেত্রে অবশ্য সন্ত্রাসবাদ বলতে এই রাষ্ট্র তিনটি কী বোঝে সেটি মুখ্য বিষয়। পাকিস্তানি সরকার খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের অঞ্চলগুলোতে সক্রিয় ধর্মভিত্তিক মিলিট্যান্ট গ্রুপগুলোকে ‘সন্ত্রাসবাদী’ হিসেবে বিবেচনা করে। তুর্কি সরকার তুরস্ক ও সিরিয়ায় সক্রিয় কুর্দি বিচ্ছিন্নতাবাদীদেরকে ‘সন্ত্রাসবাদী’ হিসেবে বিবেচনা করে। আজারবাইজানি সরকার নাগর্নো–কারাবাখকেন্দ্রিক আর্তসাখ রাষ্ট্রের সশস্ত্রবাহিনীকে ‘সন্ত্রাসবাদী’ হিসেবে বিবেচনা করে।

সিরীয় কুর্দি বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন ‘ওয়াইপিজি’র দুইজন যোদ্ধা। তুরস্ক এই সংগঠনটিকে ‘সন্ত্রাসবাদী’ হিসেবে বিবেচনা করে; Source: Pinterest

এই পরিস্থিতিতে সন্ত্রাসবাদ দমনের ক্ষেত্রে এই তিনটি রাষ্ট্রের মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতার অর্থ তাদের নিজ নিজ অভ্যন্তরীণ সমস্যা মোকাবেলায় কূটনৈতিক ও প্রযুক্তিগত সহায়তা লাভ। এবং এ ধরনের সহযোগিতার জন্য তাদের মধ্যে আনুষ্ঠানিক সামরিক জোট গঠনের প্রয়োজনীয়তা নগণ্য।

চতুর্থত, রাষ্ট্র তিনটির বৈদেশিক মৈত্রীব্যবস্থা ভিন্ন ধরনের, এবং এজন্য তাদের মধ্যে একটি আনুষ্ঠানিক জোট গঠন পরস্পরবিরোধী হয়ে দাঁড়াবে। পাকিস্তান বর্তমানে সুদৃঢ়ভাবে চীনা প্রভাব বলয়ের অন্তর্ভুক্ত, এবং সৌদি–তুর্কি ভূরাজনৈতিক দ্বন্দ্বের প্রেক্ষাপটে স্থিরভাবে কোনো এক পক্ষ অবলম্বন করা পাকিস্তানের স্বার্থবিরোধী। অন্যদিকে, তুরস্ক এখন পর্যন্ত মার্কিন–নেতৃত্বাধীন ন্যাটো জোটের অতি গুরুত্বপূর্ণ সদস্য, এবং তাদের পররাষ্ট্রনীতি এখনো মূলত ইউরোপমুখী (এশিয়ামুখী নয়)। আজারবাইজান বর্তমানে ‘জোট নিরপেক্ষ আন্দোলনে’র সভাপতি হিসেবে অধিষ্ঠিত আছে, এবং কোনোপ্রকার সামরিক জোটে যোগদান তাদের জোট নিরপেক্ষ অবস্থানকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে এবং রাশিয়ার সঙ্গে তাদের সূক্ষ্ম ভারসাম্যপূর্ণ সম্পর্কে ব্যাঘাত ঘটাবে।

এই পরিস্থিতিতে রাষ্ট্র তিনটির জন্য একক সামরিক জোট গঠনের সুযোগ সীমিত। ত্রিপক্ষীয় সংলাপে রাষ্ট্র তিনটি কাশ্মির, আফগানিস্তান, নাগর্নো–কারাবাখ, সাইপ্রাস ও পূর্ব ভূমধ্যসাগর ইস্যুতে একমত হয়েছে, কিন্তু এমন অনেক ইস্যু রয়েছে যেগুলোর বিষয়ে তাদের দৃষ্টিভঙ্গি একে অপরের চেয়ে ভিন্ন। যেমন: সিরীয় গৃহযুদ্ধে তুরস্ক সরাসরি সিরীয় সরকারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন মিলিট্যান্ট গ্রুপকে সমর্থন দিচ্ছে, কিন্তু পাকিস্তান ও আজারবাইজান এই যুদ্ধের বিষয়ে সাধারণভাবে নিরপেক্ষতা অবলম্বন করেছে। রুশ–তুর্কি ভূরাজনৈতিক দ্বন্দ্বের ক্ষেত্রেও পাকিস্তান ও আজারবাইজান নিরপেক্ষ অবস্থান বজায় রাখার চেষ্টা করেছে, এবং পাকিস্তান এমনকি ২০১৬ সালে রুশ–নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট ‘যৌথ নিরাপত্তা চুক্তি সংস্থা’য় পর্যবেক্ষক হিসেবে যোগদানের প্রচেষ্টাও চালিয়েছে (যদিও আর্মেনিয়ার ভেটোর কারণে তাদের সেই প্রচেষ্টা সফল হয়নি)। আবার, পাকিস্তান ইসরায়েলকে স্বীকৃতি প্রদান করতে নারাজ, কিন্তু তুরস্ক ও আজারবাইজানের সঙ্গে ইসরায়েলের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বিদ্যমান।

২০২০ সালের নাগর্নো–কারাবাখ যুদ্ধে আজারবাইজানের প্রতি তুর্কি ও ইসরায়েলি সহায়তার কৃতজ্ঞতাস্বরূপ তিনজন আজারবাইজানি নাগরিক আজারবাইজানি, তুর্কি ও ইসরায়েলি পতাকা পরিধান করেছে; Source: Twitter/The Jerusalem Post

এই পরিস্থিতিতে রাষ্ট্র তিনটির সমন্বয়ে একটি আনুষ্ঠানিক সামরিক জোট গঠন অন্ততপক্ষে স্বল্প মেয়াদে বাস্তবিক নয়।

সর্বোপরি, পাকিস্তান, তুরস্ক ও আজারবাইজানের মধ্যে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিশেষ মজবুত নয়। ২০১৯ সালে পাকিস্তান ও তুরস্কের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল মাত্র ৮০ কোটি (বা ৮০০ মিলিয়ন) মার্কিন ডলার। অনুরূপভাবে, পাকিস্তান ও আজারবাইজানের মধ্যেকার অর্থনৈতিক সম্পর্কও বিশেষ শক্তিশালী নয়। এমনকি ‘এক জাতি, দুই রাষ্ট্র’ হিসেবে খ্যাত বৃহত্তর তুর্কি ভ্রাতৃদ্বয় তুরস্ক ও আজারবাইজানও পরস্পরের প্রধান বাণিজ্য অংশীদার নয়। অর্থনৈতিক সম্পর্কের দুর্বলতা রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে সামরিক বা অন্য যেকোনো ধরনের জোট গঠনের ক্ষেত্রে অন্যতম অন্তরায়।

সামগ্রিকভাবে, পাকিস্তান, তুরস্ক ও আজারবাইজানের সমন্বয়ে সহসাই ‘মুসলিম ন্যাটো’ ধাঁচের কোনো আনুষ্ঠানিক সামরিক জোট সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা নিতান্তই কম। কিন্তু বর্তমান আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে সামরিক সহযোগিতা ও কূটনৈতিক যোগাযোগ আরো সুদৃঢ় হবে, এবং এর মধ্য দিয়ে রাষ্ট্র তিনটির মধ্যে একধরনের অনানুষ্ঠানিক কিন্তু ভূরাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে তাৎপর্যপূর্ণ একটি ‘কৌশলগত ত্রিভুজ’ সৃষ্টি হবে, যেটির সদস্যরা নিজ নিজ রাষ্ট্রীয় স্বার্থ অনুসারে ক্ষেত্রবিশেষে একে অপরকে সহযোগিতা করবে– এই সম্ভাবনা প্রবল। এবং তিনটি রাষ্ট্রই যেহেতু প্রচ্ছন্নভাবে অস্থিতিশীল অঞ্চলে অবস্থিত, তাদের মধ্যেকার এই ‘আঁতাত’ ইউরেশিয়ায় নতুন সংঘাতের জ্বালামুখ সৃষ্টি করবে, এমন সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেয়া যায় না।

Related Articles