- গুগলের ‘ক্লিপস’ একটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন স্মার্ট ক্যামেরা, যা নিজে নিজেই সিদ্ধান্ত নেয় কোন মুহূর্তের ছবি সুন্দর এবং ধারণ করার উপযোগী।
- এটি মানুষের হাসি, আনন্দদায়ক অনুভূতি, পোষা প্রাণীদের মজার কান্ড, খেলাধুলার আকর্ষণীয় অংশ প্রভৃতি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তগুলো চিনতে পারে এবং সেগুলো নিজে নিজেই ধারণ করে।
- এর ধারণ করা দৃশ্যগুলো মূলত সাত সেকেন্ডের অডিওবিহীন ভিডিও, যেগুলোকে GIF হিসেবে অথবা সেখান থেকে নির্দিষ্ট মুহূর্তের স্থিরচিত্র পৃথক করে সংরক্ষণ করা যায়।
- ক্যামেরাটি অ্যান্ড্রয়েড, আইফোন সহ বিভিন্ন স্মার্টফোনের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
ধরুন, আপনি চমৎকার একটি দৃশ্য দেখলেন। সেটা হতে পারে কোনো শিশুর চমৎকার হাসি অথবা আপনার পোষা বিড়ালটির মজার কোনো কান্ড। আপনি সিদ্ধান্ত নিলেন সেই মুহূর্তটি ক্যামেরাবন্দী করবেন। কিন্তু খুব বেশি সম্ভাবনা এই যে, মোবাইল ফোন বের করে ক্যামেরা চালু করতে করতেই মুহূর্তটি শেষ হয়ে যাবে এবং আপনি চমৎকার একটি দৃশ্য ধারণ করা থেকে বঞ্চিত হবেন।
ঠিক এ সমস্যাটির সমাধান করতেই গুগল বাজারে এনেছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন নতুন ধরনের একটি স্মার্ট ক্যামেরা, যার নাম ‘ক্লিপস’। ২৫০ ডলার মূল্যের এই ক্যামেরাটি গতকাল মঙ্গলবার প্রথম বাজারে ছাড়া হয়েছে। এই ক্যামেরাটির বৈশিষ্ট্য হলো, চালু করে রাখা অবস্থায় এটি সার্বক্ষণিকভাবে এর দৃষ্টিসীমার মধ্যের ঘটনাবলির উপর নজর রাখবে, কিন্তু কেবলমাত্র যখনই মজাদার বা আকর্ষণীয় কোনো কিছু ঘটবে, তখনই স্বয়ংক্রিয়ভাবে সে মুহূর্তের ছবি ধারণ করে ফেলবে।
Google’s new camera uses AI to automatically take photos of your life pic.twitter.com/ihkRZz16sL
— The Verge (@verge) October 7, 2017
গুগলের এই ‘ক্লিপস’ ক্যামেরাটি মানুষের হাসিমুখ, বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ অভিব্যক্তি, নড়াচড়া এবং বিভিন্ন পোষা প্রাণী; যেমন কুকুর, বিড়াল চিনতে পারে এবং নিজেই সিদ্ধান্ত নিতে পারে কোন মুহূর্তটি ধারণ করা উচিত। মানুষ কী ধরনের ছবি তুলতে পছন্দ করে সে ব্যাপারেও গুগলের প্রকৌশলীরা দীর্ঘ তিন বছর ধরে ক্যামেরাটির সফটওয়্যারকে প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। এরপর গুগল একজন ডকুমেন্টারি ফিল্ম নির্মাতা, একজন চিত্রগ্রাহক এবং একজন চারুশিল্পীকে নিয়োগ করেছে সফটওয়্যারটির অ্যালগরিদমকে আরো উন্নত করার জন্য, যার ফলে ‘ক্লিপস’ এখন অনেকটাই সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারে।
‘ক্লিপস’ বিরক্তিকর স্থির মুহূর্তগুলো কিংবা শিশু বা পোষা প্রাণী যখন হাত দিয়ে একে ঢেকে রাখে, তখনকার আংশিক অস্পষ্ট মুহূর্তগুলো ধারণ করে না। বরং যখন শিশু হাসে, মজার কোনো আচরণ করে, কিংবা পোষা প্রাণীদের সাথে খেলা করে, সে দৃশ্যগুলো এটি সহজেই বুঝতে পারে এবং সাথে সাথেই তা ধারণ করে। ক্যামেরাটি এর থেকে তিন ফুট দূরে এবং এর দৃষ্টিসীমার মধ্যে থাকা বস্তুগুলোর ছবিকেই বেশি প্রাধান্য দিয়ে থাকে।
Google Clips, a hands-free camera that learns to help capture spontaneous moments of family, friends, pets and yourself. Available now — learn more at: https://t.co/1rMFsl8PeU pic.twitter.com/kxBWJtpZRo
— Made by Google (@madebygoogle) February 27, 2018
ক্যামেরাটির ‘ক্লিপস’ নামকরণের কারণ, এটি মূলত সাত সেকেন্ডের একেকটি ভিডিও ক্লিপ রেকর্ড করে। অবশ্য একে ভিডিও ক্লিপ না বলে অনেকগুলো স্থিরচিত্রের সমষ্টি বলাই ভালো। কারণ এতে কোনো সাউন্ড থাকে না, বরং সেকেন্ডে ১৫টি করে ফ্রেম এতে রেকর্ড করা হয়। পরবর্তীতে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ক্লিপগুলো ডাউনলোড করে গিফ GIF ফরম্যাটের এনিমেশন হিসেবে ব্যবহার করা যায়, অথবা ইচ্ছে করলে নির্দিষ্ট কোনো মুহূর্তের ছবিকে পৃথকভাবেও সংরক্ষণ করা যায়।
‘ক্লিপস’ স্বয়ংক্রিয়ভাবেই ছবি তোলে, কিন্তু এতে একটি বাটনও আছে, যার উপর ক্লিক করেও ছবি তোলা সম্ভব। কিন্তু এর কার্যকারিতা কম, কেননা ‘ক্লিপস’ এর সাথে কোনো স্ক্রিন নেই, ফলে তোলা ছবি মোবাইল ফোনে স্থানান্তর করার পূর্ব পর্যন্ত ছবিটি কেমন হয়েছে, তা জানা সম্ভব না। এই বাটনটির উদ্দেশ্য হচ্ছে ক্যামেরাটিকে আরো একটু ভালো ধারণা দেওয়া যে, ক্যামেরাটির মালিক ঠিক কী ধরনের ছবি বেশি পছন্দ করেন।
Review: Google Clips pic.twitter.com/Qh5DKpptty
— TechCrunch (@TechCrunch) February 27, 2018
গত অক্টোবর মাসে গুগল ‘ক্লিপস’ নামের এই ক্যামেরাটি বাজারে আনার ঘোষণা দিয়েছিল। গুগল জানিয়েছে, তাদের গবেষণা অনুযায়ী মানুষ ক্যামেরার সামনে পূর্ব প্রস্তুতি নিয়ে ছবি বা সেলফি তোলার চেয়ে ক্যান্ডিড বা অকৃত্রিম সাদাসিধে ছবি তুলতেই বেশি পছন্দ করে। গুগল ক্লিপসের প্রধান জুস্টন পেইনের মতে, সাধারণ ক্যামেরার মাধ্যমে আমরা যে ছবিগুলো তুলি, সেরকম একাধিক ছবি তোলার মধ্যবর্তী সময়ের মধ্যেই সোনালী মুহূর্তগুলো লুকিয়ে থাকে। আর এই ক্যামেরাটি ঠিক সেই মুহূর্তগুলোই খুঁজে বের করবে।
গুগলের ক্লিপস ক্যামেরাটি আকারে ছোট, সহজে বহনযোগ্য এবং সাথে থাকা স্ট্যান্ডের দ্বারা একে মেঝেতে বা টেবিলের উপরে রাখা ছাড়াও চেয়ারের হাতল, জ্যাকেটের পকেট, কিংবা হ্যান্ডব্যাগের সাথে আটকে রাখা সম্ভব। একবার চার্জ দিলে এটি একটানা তিন ঘণ্টা পর্যন্ত চলতে পারে।
ফিচার ইমেজ- Google